#ভালোবাসি
#পর্ব_১২
#সুমাইয়া_জাহান
মানুষ অল্পতেই একজন আরেক জন কে বিশ্বাস করে নেয়।আবার বিশ্বাস যদি একবার ভাঙ্গে তাহলে তা পুনরায় ফিরিয়ে আনা ভিষণ কঠিন।
ঘরের এক কোনা থেকে আরেক কোনায় পায়চারি করেছে আর ভাবছে কি করে মিহির ভুল টা ভাঙ্গাবে।কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।মিহি এখন কারো মুখের কথাই বিশ্বাস করবে না খুব ভালো করেই জানে রনিত।তাই ওকে এখন এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে সত্যি টা মিহি নিজেই বুঝতে পারে।কিন্তু কি করবে রনিত?সেটাই ভেবে চলেছে এতোক্ষণ পর্যন্ত!
রেহান গ্রামটা একবার ঘুরতে বের হয়েছে তবে সেটা শুধু অজুহাত আসলে ও এখন অর্কের সাথে দেখা করতে গেছে।তাই এখন ঘরে শুধু রনিতই আছে।রনিত আরো কিছুক্ষণ এভাবেই ভাবতে লাগলো কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না!এবার মনে হচ্ছে সত্যি মিহির ভুল আর ভাঙ্গাতে পারবে না!তাই মনমরা হয়ে বসে পরলো।তখনই ফোনে একটা মেসেজ টুংটুং শব্দ ভেসে আসলো ওর কানে।ফোনটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো রনিতের!আর এক মিনিটও দেরি না করে বেরিয়ে পরলো মিহির উদ্দেশ্যে।
বাড়ির লোকদের কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো মিহি ছাদে গেছে।তাই ও ছাদের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।ছাদে উঠতেই মিহিকে পেয়ে গেলো।মিহি ছাদে থাকা কয়েকটা ফুল গাছে পানি দিচ্ছিলো।ওকে দেখেই ওর দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই ওকে ডাক দিলো,
—- ” মিহি! মিহি!”
আমাদের বাড়ির ছাদে আমি কয়েকটা ফুল গাছ লাগিয়েছিলাম।এতোদিন আমি বাড়ি না থাকায় ওগুলোর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ছিলো মাহির উপর! কিন্তু মাহি গাছ গুলো ঠিক মতো যত্ন নেয়নি তাই বেচারা গাছগুলোর একদম নেতিয়ে গেছে।আমার এমনিতে ফুল তেমন একটা ভালো লাগে না।কিন্তু ফুল গাছ লাগাতে ভিষণ ভালো লাগে।তাইতো বাড়ির বাগানে অনেক ধরনের ফুল গাছ লাগিয়েছি। আর এই কয়টা টবে করে ছাদে লাগিয়েছি।নেতিয়ে যাওয়া ফুল গাছ গুলো দেখে মনে মনে মাহিকে কয়েকটা জারি দিয়ে ফুল গাছ গুলোকে যত্ন নিতে লেগে পরলাম।গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছি তখনই কেউ একজন আমায় ডাক দিলো।পিছন ফিরে দেখি রনিত ভাইয়া। ভ্রু কুঁচকে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
—- ” রনিত ভাইয়া আপনি এখানে? কিছু বলবেন?”
—- ” হুম বলবো !রেহান কে নিয়ে বলবো। ও……”
রনিত ভাইয়ার মুখে রেহানের কথা শুনেই উনার কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে উঠলাম,
—- ” প্লিজ ভাইয়া আমি উনার সম্পর্কে একটা কথাও শুনতে চাই না!উনার কথা ছাড়া যদি অন্য কিছু বলার থাকে তাহলে বলতে পারেন নাহলে বলবেন না প্লিজ!”
—- ” প্লিজ একটা বার আমার কথাটা শোনো! তুমি অনেক বড়ো ভুল করছো। প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যেই ভুলবোঝাবুঝি হয় তাই বলে কি সম্পর্ক টাকে একে বারে শেষ করে দিতে হবে।একবার তো ভুলটা ঠিক করার সু্যোগ দেওয়া উচিৎ! ”
—- ” ভুল কিসের ভুল!ওহে ভুল আমি করেছে উনাকে বিশ্বাস করে উনাকে ভালোবেসে।উনাকে সুযোগ দিবো?সুযোগ তখনই পাওয়া উচিৎ যখন মানুষ ভুল করে উনিতো কোনো ভুল করেননি।উনি শুধু একটা বাজি জেতার জন্য একটা মেয়ের পুরো জীবন টাই তছনছ করে দিয়েছেন। এটা ভুল নয় এটা হলো অপরাধ। আর অপরাধীর সুযোগ নয় শাস্তি পাওয়া উচিৎ!নেহাৎ আমি উনাকে মন থেকে সত্যিকারে ভালোবেসেছি তাই আমি উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি কোনো শাস্তি আমি দেইনি।আর এখনো আপনারা আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আবার আমাকে ঠকাতে এসেছেন।একবার চুপ থেকেছি বলে কি বারবার চুপ থাকবো এটা ভাববেন না।”
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে একটা দম নিয়ে ছাদ থেকে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগলাম।পিছন থেকে রনিত ভাইয়া বললেন,
—- ” মিহি আজ আমার কথাটা না শুনলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক গুলো জীবন শেষ হয়ে যাবে।আমাকে দুটো মিনিট সময় দেও প্লিজ!”
কথাটা বলেই রনিত মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।তাহলে কি রেহান আর মিহির সম্পর্ক টা আর জোড়া লাগবে না?একটা ভুল বোঝাবুঝিই ওদের সম্পর্কের ইতি টানবে?আর রনিতেরও কি ওর বসন্ত পরিকে পাওয়া হবে না।সসব কি তাহলে এখানেই শেষ হয়ে যাবে?
এদিকে রেহান অনেক খুঁজে অর্কের বাড়ি এলো।কিন্তু এখনানে এসেও নিরাস হতে হলো।কারণ অর্ক এখন বাড়ি নেই। আর ওর বাড়ির কেউ জানেও না ও কোথায় গেছে!কালকেই মিহির গায়ে আর তারপরের দিনই বিয়ে।হাতে এখন কোনো সময়ই নেই।যে করেই হোক আগে বিয়েটা ভাঙ্গতে হবে তারপর মিহির ভুলটা ভাঙ্গানো যাবে।তা ভেবেই আজ বিকেলে অর্কের সাথে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু এখন অর্ককে পাবে কই!কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর পর বাড়ির লোকেদের থেকে অর্ক কোথায় কোথায় যেতে পারে তা জেনে নিলো।ওরা যেকয়টা জায়গার কথা বলেছিলো সবকয়টাতেই গিয়ে তন্ন করে খুঁজেও অর্ক কে খুঁজে পেলো না।তাই ক্লান্ত হয়ে মিহিরদের বাড়ির রাস্তার দিকে এগোতে লাগলাম।
।
।
।
অর্ক আজ হুট করেই মিহিদের বাড়ি চলে এসেছে।এসেই মিহির বাবার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।আর বারবার আড় চোখে বারবার এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে মিহিকে একটিবার দেখার জন্য। এখানে আসার কারণই মিহিকে দেখার! কিন্তু এসে থেকে একটিবারের জন্যও মিহিকে দেখতে পায়নি।তাই ওর মনটা ভিষণ খারাপ। এর মধ্যেই মিহির বাবা বলে উঠলেন,
—- ” তা বাবা তুমি হঠাৎ এখানে আসলে যে!না মানে তুমি তো সচরাচর এখানে আসো না!বিয়ের ব্যাপারে কি কিছু বলতে এসেছো?”
উনার কথায় অর্ক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।একটু হাসি হাসি ভাব নিয়ে বললো,
—- ” না আংকেল তেমন কিছু না! আসলে কাল তো গায়ে হলুদ তো তাই মিহির সাথে একটু কথা বলতে এসেছি ওর কোনো কিছু বলার আছে কিনা!”
অর্কের কথায় মিহির বাবা বেশ খুশি হলেন।
এদিকে মা জননী আমাকে রান্না ঘরে নিয়ে এসে এক ট্রে খাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওড়না টা দিয়ে মাথায় ভালোভাবে কাপড় টেনে দিয়ে এক গাল হেসে বললেন,
—- ” যা এবার যা!”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
—- ” কোথায় যাবো?আর আমাকে এই ট্রে টাই বা কেন ধরিয়ে দিয়েছো?”
মা আমার কথা শুনে চিন্তিত ভাবে বলেন,
—- ‘ ওহ্ তোকে তো বলাই হয়নি !আসলে অর্ক এসেছে।তোর বাবার সাথে কথা বলছে। তুই গিয়ে খাবার গুলো ওদের দিয়ে আয়।”
—- ” আমি কেন দিবো?এতোদিন যেমন তুমি দিয়েছো এখনো তুমি দিলেই তো পারো। আর না হলে মাহি কে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।আমি এসব খাবার টাবার কাউকে দিয়ে আসতে পারবো না।সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো।”
কথাগুলো বলেই ট্রে টা পাশে রাখতে লাগলাম।তখনি মা রাগী গলায় বলে উঠলো,
—- ” তোকে আজ বলেছি তুই দিবি তাহলে তুই দিবো আমি বা মাহি কেউ দিবো না।আর একটা কথাও বাড়াবি না সোজা গুয়ি ভদ্র ভাবে ট্রে টা দিয়ে আসবি।”
এমনিতেও মনটা আজ ভিষণ খারাপ তাই আর কথা না বাড়িয়ে ট্রে টা নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।শুধু ট্রে টাই তো দিতে হবে!সোজা গিয়ে ট্রে গিয়ে টেবিলে রেখে আবার চলে আসবো।যেই ভাবা সেই কাজ। তবে পুরোটা আর হলো না।সোজা গিয়ে ট্রে টা টেবিলে ঠিকই রেখেছি কিন্তু চলে আসার আগেই বাবা ডেকে বললেন,
—- ” মিহি মা এখানে আয় অর্ক তোর সাথে একটু কথা বলতে চায়!”
এমনিতে এই অর্কের সাথে কথা বলার আমার একদম ইচ্ছে নেই তারপরও আমারও একটু কথা আছেউনার সাথে। তাই বাবার কথায় সাই দিয়ে ওনাদের কাছে গেলাম।আমি কাছে যেতেই বাবা বললেন,
—- ” ঠিক আছে তোমরা কথা বলো আমি একটু আমার ঘরে যাই একটা ঔষধ খাওয়ার আছে!”
কথাটা বলেই চলে গেলেন বাবা।আর এদিকে অর্ক তো ভিষন খুশি এতোক্ষণ এটার অপেক্ষায়ই ছিলো।আমি অর্কের সামনে এসে বললাম,
—- ” বলুন ভাইয়া কি বলবেন।আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে!”
প্রতি বারের মতো এইবারও আমার মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা শুনে বেচারার মুখ টা কালো হয়ে গেলো।তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না আমি ভাইয়া বলেই ডাকবো।বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম রেহানের উপর রাগ করে।তাই বলেকে উনাকে ভাইয়া বলা বন্ধ করে দিবো নাকি?কিছুতেই না!আমি ডাকলে ভাইয়াই ডাকবো তাতে খারাপ লাগলে আমার কিছু করার নেই।অর্ক আর কথা না বাড়িয়ে বললেন,
—- ” ঠিক আছে চলো আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলি!”
আমি মাথা নেরে সম্মতি জানিয়ে উনার সাথে বাইরে চলে এলাম।আমাদের পুকুর পাড়ে এসে বললাম,
—- ” এবার বলুন ভাইয়া আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন!”
—- ” তেমন কিছু না!কাল তো গায়ে হলুদ তারপরের দিন আবার বিয়ে তো তোমার কোনো ইচ্ছে আছে কিনা কিছু করার সেটাই জানতে আসলাম।আসলে আমি তোমার কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে চাই না।তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করতে চাই! ”
—- ” নাহ্ ভাইয়া আমার এসব বিষয় নিয়ে কোনো ইচ্ছে নেই। ”
—- ” ওহ্! তুমি কি যেন বলবে বলছিলে এবার তোমার টা বলো।”
আমি কিছু বলার আগেই দেখতে পেলাম রেহান কোথা থেকে যেন আসছে।আর আমাদের দিকেই আসছে।তাই পেটের কথা পেটেই রেখে দিলাম আর অর্কের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললাম,
—- ” আপনি বিয়েটা যেমন ভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই করতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই। এখন থেকে তো আপনার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা! ”
কথাটা আমি ইচ্ছে করেই রেহান কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম।আমার কথা শুনে উনি যে খুব রেগে গেছেন তা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রেহান আমাদের কাছে এসে জোরপূর্বক হেসে অার্কের সাথে হাত মিলিয়ে বললো,
—- ” আপনি তো অর্ক তাই না!”
—- ” হুম! কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না!”
—- ” আমি মিহির বন্ধু। ”
—- ” ওহ্ নিশ্চয় বন্ধু বিয়েতে এসেছেন?”
অর্ক হেসে কথা টা বললো।রেহানও একটু হেসে বললো বললো,
—- ” হুম তা তো বটেই! আমি না থাকলে বিয়েটা হহবে কি করে আফটার অল আমি হচ্ছি এ বিয়ের প্রধান অতিথি। আমাকে ছাড়া কি বিয়ে সম্পুর্ন হবে!”
কথাটা বলে একবার আড়চোখে আমার দিয়ে তাকালো।অর্ক ভাবছে বন্ধু হিসেবে বন্ধুর বিয়ে নিয়ে একটু মজা করছে তাই অর্কও হেসে বললো,
—- ” হ্যাঁ আপনাকে ছাড়া আমাদের বিয়েটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”
কিন্তু বেচারা অর্ক তো আর জানে না রেহান ঠিক কি বলতে চাইছে।কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি রেহানন কি বুঝিয়েছে।কিছুক্ষণ আরো কিছু কথা বলার পর অর্ক চলে যেতেই……..
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]