#ভালোবাসি
#পর্ব_১১
#সুমাইয়া_জাহান
দুহাত কোমরে রেখে চোখ ছোটো ছোটো করে আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে তাকিয়ে আছি। আর রেহান খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে গেম খেলতেছেন আর এমন একটা ভাব করছেন যেন আমাকে তিনি দেখতেই পাননি।আমিও উনাকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ নজরে দেখতে লাগলাম তারপর রাগী গলায় বললাম,
—- ” আমার সাদাসিধা বোনটাকে কি বলেছেন আপনি? ও তো সবার সাথে কথা বলে না!সত্যি সত্যি বলুন কি বলেছেন ওকে? ”
রেহান ফোন দিকে তাকিয়েই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
—- ” সেটা আমার আর আমার ছোট শালি সাহেবার ব্যাপার!বাইরের মানুষ কেন বলতে যাবো আমাদের ভেতরের কথা! আমার ছোট্ট শালি সাহেবার কথা শোনার তুমি কে ? ”
উনার কথা শুনে হা হয়ে গেছি।বলে কি এই লোক আমার বোনের কথা শোনার আমি কে?আবার ওকে শালি সাহেবাও বানিয়ে দিয়েছে!এবার রাগ আমার সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে।উনার হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলাম,
—- ” আমি কে মানে?আমি ওর একমাত্র বড়ো বোন আর আমাকে বলছেন আমি বাইরের মানুষ! বারবার শালি সাহেবা সাহেবা করছেন কেন হ্যাঁ?”
আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবার ভান করে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
—- ” তুমি আমার ছোটো শালি সাহেবার একমাত্র বড়ো বোন? ”
আমি চোখ ছোটো ছোটো করে বললাম,
—- ” সন্দেহ আছে আপনার? ”
রেহানের মুখে মুহূর্তে হাসি ফুটে উঠলো।যেন উনি এতোক্ষণ ধরে এই কথাটার অপেক্ষায়ই ছিলেন।
—- ” আমার ছোট্ট শালি সাহেবার তুমি একমাত্র বড়ো বোন। তুমি নিজের মুখেই শিকার করেছো মিহু পাখি! তাহলে এবার বলো তুমি আমার কে?”
কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে এগোতে লাগলেন উনি।কি বজ্জাৎ লোক রে বাবা আমাকে কথার জালে ফাঁসিয়ে ফেললেন?এইজন্যই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন ” ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না”।এরপর থেকে কবির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করমো। কিন্তু এখন তো বলেই ফেলছি এ লোক তো এটার সুযোগ নেবে।উনি আমার দিকে যতো এগোচ্ছেন আমি ততোই পিছচ্ছি। উনি আসতে আসতে একদম আমার কাছে এসে পরেছেন।এবার আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে!আমি এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।ভাগ্যিস পিছনেই দরজাটা ছিলো!নাহলে এতো সহজে৷ আসতে পারতাম না।
রেহান মিহির কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। তখনই রুমে রনিত ঢুকলো। ও এখনো ওর বসন্ত পরি কে নিয়ে ভাবতেই ব্যাস্ত!রেহান রনিতের দিকে একবার তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বললো,
—- ” ওই কি এতো ভাবছিস?”
রনিত আনমনেই বলে ফেললো,
—- ” বসন্ত পরি!”
রেহান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে আরেকবার ভালো ভাবে তাকিয়ে বললো,
—- ” ওই ব্যাটা কি বলছিস কি তুই? বসন্ত পরি আবার কি?”
রেহানের কথায় হুস ফিরলো রনিতের তারপর তখনকার সব খুলে বললো রেহানকে।রেহান সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রেহান কে এভাবে হাসতে দেখে রনিত ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—- ” হাসছিস কেন?আমি কি তোকে কোনো জোকস শুনালাম নাকি?”
রেহান কিছুক্ষণ ওভাবেই হেসে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—- ” জোকস মানে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো জোকস আমি আজ শুনলাম আর হাসবো না!”
—- ” আমি কখন তোকে জোকস শুনালাম? ”
—- ” ও মাই গড! তুই শুনাসনি তাহলে কি এখানে রনিত নামের কোনো৷ জ্বিন আমাকে জোকসটা শুনালো?”
মুখে দুই হাত রেখে রেহান অবাক হওয়ার ভান করে কথাটা বললো।রনিত ভ্রু কুঁচকে বললো,
—- ” তোর কাছে আমার এই সিরিয়াস ব্যাপার টা জোকস মনে হচ্ছে। দেখ ভাই তোর ভালোবাসা মিলিয়ে দেওয়ার জন্য আমি তোর সাথে এতো দূর এসেছি।আর সেই তুই কিনা আমার ব্যাপার টাকে জোকস বলছিস!”
—- ” তো কি বলবো হ্যাঁ!যে ছেলে প্রেম ভালোবাসায় এক বিন্দু বিশ্বাস করে না। আবার মেয়েদের সহ্যই করতে পারে না সেই ছেলে যদি এসে বলে আমি এক দেখায় একটা মেয়ে কে ভালোবেসে ফেলেছি তখন সেটা জোকস নয় তো কি?”
রেহান কথা গুলো বলে আবারও হাসতে লাগলো।আর রনিত খুব সিরিয়াস ভাবে বললো,
—- ” দেখ ভাই আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস। সত্যি আমি ওকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি! ”
রেহানও হাসি থামিয়ে খুব সিরিয়াস ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—- ” তুই সত্যি ওকে একবেরই ভালোবেসে ফেলেছিস?”
রনিত মাথা নেরে সম্মতি জানাতেই রেহান আবার বললো,
—- ” তাহলে যা ওকে এখন গিয়ে মনের কথাটা বলে আয়!”
রেহানের কথায় রনিত এবার চুপসে গেলো।মুখে দুই হাত দিয়ে মনমরা হয়ে বললো,
—- ” আমি কি আর তোর মতো যে মনের কথা গিয়ে ভালোবাসার মানুষ টাকে বলে দিবো!আমি আর যাই করতে পারি না কেন কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কিছুতেই বেরোবে না ” আমি তোমায় ভালোবাসি “!ইম্পসিবল! আমার দ্বারা এইটা হবে না!”
রেহান রনিতের কাঁধে হাত দিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
—- তোমার দ্বারা যে এটা সম্ভব না সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি!তুই বরং একটা কাজ কর তুই ওকে সরাসরি ভালোবাসার কথা না বলে ঘুরিয়ে কথাটা বল!
রেহানের কথায় রনিত খুশিতে লাফিয়ে ওঠে চিৎকার দিয়ে বললো,
—- ” ঠিক বলেছিস!এইজন্যই তো তোকে আমি এত্তো ভালোবাসি। আচ্ছা আমি এখুনি গিয়ে ওকে প্রপোজ টা করে আসি!ওকে বাই!”
।
।
।
আমি রেহানের ঘর থেকে তারাতাড়ি বেরিয়ে এসে মাহিকে খুজতেছি।এই মেয়েটার জন্য আমাকে আজকে উনার সামনে এভাবে অপদস্ত হতে হলো।ওকে তো আমি ছাড়বো না।এমনিতে তো কারো সাথে কথাই বলেন না!এখননি কি দরকার ছিলো রেহানের সাথে ভাব করার।শুধু একবার পাই হাতের কাছে তারপর মজা বুঝাবো ওকে!হাঁটতে হাঁটতে মাহির ঘরের দিকে গেলাম।বাহ!উনি তো দেখি খুব শান্তিতেই বসে বসে চকলেট খাচ্ছেন! আমি ওর কাছে গিয়ে রাগী গলায় বললাম,
—- ” তুই ওখানে কেন গেলি?”
মাহি চকলেট খেতে খেতেই বললো,
—- ” জিজুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম।আমার এরকম জিজু বলে কথা দেখবো না উনি ঠিকঠাক আছি আছে কিনা!তুমি তো আর উনার খেয়াল রাখছো না তাই আমিই গেলাম!এতে কোথায় আমাকে ধন্যবাদ দিবে তা না…”
এতোক্ষণ মাহির কথা গুলো চোখ বন্ধ করে হজম করছিলাম।এবার থামিয়ে দিয়ে জোরে চিৎকার বললাম,
—- চুপপপপপ!একটা থাপ্পড় খাবি! তুই উনাকে জিজু কেন বললি?
—- ” ওমা জিজু কে জিজু বলবো না তো কি বলবো?আর জিজু আমাকে সব বলেছে তুমি আর জিজু দুজন দুজনকে ভালোবাসো। এখন তোমাদের মধ্যে একটা প্রবলেম হয়েছে তাই তো তুমি অর্ক ভাইয়া কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো।কিন্তু চিন্তা করো না বিয়েটা তোমার হবেই তবে সেটা আমার জিজুর সাথেই! ”
—- মাহিহিহিহিহি!!!
আমার চিৎকারে মাহি দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো।আর আমি রাগে ওর যাওয়ার দিকে একটা বালিশ ছুড়ে মারলাম।আমার বোনটাকেও শেষে উনার দলে নিয়ে গেলো।যে মেয়েটা আমার হ্যাঁ তেই হ্যাঁ আর আমার না তে না মিলাতো সে কিনা এখন উনার হয়ে কথা বলো!রাগে বসে বসে নিজের চুল নিজেই টানছি!
ওইদিকে তিহা এখনো বাগানেই হাঁটছে। হাঠাৎ করে রনিত এসে তিহার সামনে দাড়ালো।হঠাৎ করে আসাতে তিহা অনেকটাই চমকে গেছে।রনিত তিহার সামনে এসেই একহাত দিয়ে মাথা চুলকে বললো,
—- ” ইয়ে মানে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই!”
তিহা সকাল থেকেই রনিতের কর্ম কান্ডে অবাক।যে লোকটা আগে কখনো ওর সাথে একটা কথাও বলতো না সে কিনা আজ নিজে থেকেই এতোবার করে কথা বলতে আসছে! আবার কথা বলার জন্য অনুমতিও চাইছে!ভাববার বিষয় তো!তিহা বিস্ময়করতা নিয়েই মাথা নেরে বললো,
—- ” হ্যা বলনু কি বলতে চান।”
তিহার সামনে এসে সব ভুলে গেছে কি বলতে হবে।সকাল থেকেই ওর সামনে আসলে সবকিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে রনিতের।তারপরও তো কথাটা বলতে হবে।ও কিছুতেই দেড়ি করতে চায় না।ওর আগে অন্য কেউ এসে যায়।না না না রনিত আর ভাবতে পারছে না তাই এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললো,
—- ” শুনেছি তুমি খুব ভালো স্টুডেন্ট তো আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেও তো এখন!”
—- ” হুম বলেন!”
রনিত নিজেকে প্রস্তুত করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো,
—- ” আমি তোমার ছোটো ভাই কে ভালোবাসি।আর তোমার ভাই তোমাকো ভালোবাসে।অতএব,যুক্তিবিদ্যার নিয়মে কি হয়?? বাকিটা তুমি বলো!!”
তিহা বুঝতে পারছে রনিত ঠিক কি বোঝাতে চাইছে!তারপরও একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বললো,
—- ” সরি আসলে আমার কোনো ছোটো ভাই নেই। তাই আমি আপনাকে কিছু বলতে পারছি না!”
—- ” নো প্রবলেম বড়ো ভাই কে ধরে নেও!”
—- ” আসলে বড়ো ছোটো কোনো ভাই বোনই নেই।”
তিহার উত্তরে রনিত চুপসে গেলো।কোথায় ভেবেছিলো সরাসরি প্রপোজ না করে এভাবে করবে।কিন্তু তিহার কোনো ভাই বোনই নেই তাহলে এবার কিভাবে বলবে ভালোবাসার কথা।তিহা রনিতের চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে সিউর হয়ে গেলো ওকে ভালোবাসার কথাই বলছে।তাই নিজেই বলে উঠলো,
—- ” আমি বুঝতে পারছি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন।কিন্তু আমি তাতে রাজি নই। আপনার বন্ধু বিশ্বাস করে মিহি অনেক বড়ো ভুল করেছে।এমনকি আমিও রেহান ভাইয়াকে বিশ্বাস করেছিলাম।তাই ওই ঘটনা আর আমি দ্বিতীয় বার রিপিট হতে দিবো না।আপনাকে কি করে বিশ্বাস করবো আপনিও আপনার বন্ধুর মতো বাজি ধরে আমাকে আমাকে প্রপোজ করতে আসেননি!”
কথাটা বলেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ওখান থেকে দ্রুত চলে গেলো তিহা।আর রনিত কিছু বলার সুযোগই পেলো না।ও ভালো করেই বুঝতে পারছে আগে মিহি আর রেহানের প্রবলেম টা সল্ভ না হলে ওকেও তিহা বিশ্বাস করবে না। তাই আগে মিহির ভুল টা ভাঙ্গাতে হবে!
চলবে,,,,,