#ভালোবাসি
#পর্ব_১০
#সুমাইয়া_জাহান
কাল আর কারো সাথে কারো দেখা হয়নি। এমনিতেই সবাই জার্নি করে এসেছি তাই সবাই ক্লান্ত ছিলাম। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য শুধুই একটা কারণই না আমি তো রেহানের সামনে পরতে চাইনি যা রেগে ছিলেন সকাল ভাইয়া ডাকাতে না জানি সামনে পেলে কি করতেন!তাই ইচ্ছে করেই আর ঘর থেকে বের হইনি।দুপুরের আর রাতের খাবার কোনো একটা বাহানা বানিয়ে মাহিকে দিয়ে ঘরে এনে খেয়েছি।আমার অবশ্য রাতে একদম খেতে ইচ্ছে করে না কিন্তু মা জননীর বকা খাওয়ার থেকে খাবার খেয়ে নেওয়াই ভালো তাই রাতে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও খেতে হয়েছে। তারপর এক ঘুম রাত পার করে দিয়েছি।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এ কয়দিন আমি রাতে চোখের পাতা দুটো হাজার চেষ্টা করেও এক করতে পারিনি কিন্তু আজ শোয়ার সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখ ভর করলো।
সকাল হতে না হতেই চোখের উপর সুর্যে আলো এসে পরলো।আলো চোখ পরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি তিহা জানালার পর্দা সরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এর জন্যই এতো সকালে সুর্য মামার আমার সাধের ঘুমটার বারোটা বাজাতে পেরেছে।উফ এতোদিন পর একটু শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম সেটা আমার সখির পরানে সইলো না!ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বললাম,
—- ” এতো সকালে সুর্যি মামাকে ঘরে ঢুকানোর কি খুব প্রয়োজন ছিলো?”
—- ” আলবাত দরকার ছিলো!শুনেছি গ্রামের সকাল নাকি খুব সুন্দর হয়!আর তুই কিনা আমাকে সেই দৃশ্য দেখার থেকে বঞ্চিত করতে চাস কেমন বন্ধু রে তুই! কোথায় নিজের গ্রামে এনে সকাল বেলা উঠে বন্ধু কে নিয়ে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবি তা না পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস!”
তিহা দুই হাত ভাজ করে খুব সিরিয়াস মুডে কথা গুলো বলে আমার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে আছে। আর আমি হাই তুলতে তুলতে ওর কথা শুনে বললাম,
—- ” নিজের জলজ্যান্ত দুইটা পা থাকতে আমাকে তোরে কোলে করে গ্রাম ঘুরাতে নিতে হবে কেন?ইচ্ছা যেহেতু তোমার তাই ঘুরতে যাওয়ার দায়িত্ব টাও তোমারই! ”
ওর দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো এখনো হাত দুই টা৷ ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।আসলে গ্রামের সকাল দেখার খুব ইচ্ছা। ও কখনো গ্রামে আসে নি তাই গ্রামের সকাল গুলো কেমন হয় ও জানে না।আমাকে বলেছিলো আমার সাথে গ্রামে আসলে সকাল বেলা গ্রাম ঘুরবে।তাই এতো রেগে আছে।ওর অবস্থা দেখে আমার ভিষণ হাসি পাচ্ছে। কপাল কুঁচকে একটু ভেবে বললাম,
—- ” তোর যখন এতোই ইচ্ছা গ্রামের সকাল দেখার তাহলে তুই বরং একটা কাজ কর আমাদের বাড়ির বাগানেই একটু ঘুরে আয়!কাল কে মাহি বা কাউকে বলে তোর গ্রাম ঘুরানোর একটা ব্যবস্থা করবো একদম পাক্কা! ”
তিহা চোখ বন্ধ করে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
—- ” তুই আমায় বলেছিলি তোর গ্রামে আসলে তুই নিজে আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবি এখন এতো খারাপ কি করে হইলি?”
আমি মুখ আঙুল দিয়ে কিছুক্ষন ভেবে বললাম,
—- ” আমি ভালো কবে ছিলাম যে আজ হঠাৎ খারাপ হইলাম?”
—- ” তুই জীবনে শোধরাবি না!”
বিরক্ত হয়ে তিহা কথাটা বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আর এদিকে ওকে রাগাতে পেরে হাসতে হাসতে শেষ। তারপর উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
রনিত ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রেহান এখনো ল্যাপটপ কাজ করছে।রেহান পড়াশোনার পাশাপাশি ওর বাবার বিজনেসও জয়েন করছে। এই কয়দিন কোনো কাজই করতে পারেনি তাই আজ সকাল সকাল উঠে কয়েকটা কাজ করে নিচ্ছে।রনিত বিরক্ত হয়ে বললো,
—- ” তোর কি সারাক্ষণ কাজ করতেই ভালো লাগে?এখানে আমরা মাত্র কয়েক দিনের জন্য এসেছি একদিন তো কাজ টা বন্ধ রাখতে পারিস!”
রেহান ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই বললো,
—- ” কাজ বন্ধ করে কি করবো? তোর সাথে ঘুরে বেড়াবো?”
রনিত নিরাস হয়ে রেহানের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
—- ” তুই তাহলে আজ সারাদিন কাজই করবি?তুই কাজ নিয়েই থাক আর ওইদিকে তোর মিহু পাখি অন্যের হয়ে যাবে!”
কথা গুলো বলে বাইরের দিকে চলে গেলো রনিত।আর রেহান ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে রনিতের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” কে কার হবে সেটা সময়ই বলবে! ”
।
।
।
তিহা বেরিয়ে মিহিদের বাগানের দিকে গেলো।বাগানে এসেই ওর মনটা দারুণ ফুরফুরে হয়ে গেলো।কারণ এখানে অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে আর প্রত্যেকটা গাছেই রঙ বেরঙের ফুলে ভরা।তিহার আর বুঝতে বাকি নেই মিহি কেন এখানে পাঠিয়েছে।ও মনে মনে মিহিকে হাজার টা ধন্যবাদ দিলো এতো সুন্দর একটা জায়গায় আসতে পেরে। চারিদিকে এতো ফুল যে তিহার পুরো পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আসলে তিহা ফুল ভিষণ পছন্দ করে।তাই মিহি ইচ্ছে করে ওকে এখানে পাঠিয়েছে।তিহা কয়েকটা ফুল নিয়ে ওর খোলা চুলে গুঁজে দিলো তারপর বাগানের ভিতর ঘুরে ঘুরে ফুল দেখতে লাগলো।
রনিতের চোখ আটকে গেলো বাগানের দিকে। কারন ওখানে একটা হলুদ থ্রিপিস পরা মেয়ে এদিক ওদিক ফুলের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেয়েটার চুলগুলো খোলা তাতে কয়েকটা ফুল গুঁজে দেওয়া আছে।পুরোই এক বসন্ত পরি মনে হচ্ছে। রনিত হাত দিয়ে ওর বুকের বাম পাস টা চেপে ধরে বিরবির করে বলতে লাগলো,
—- ” ওহ্ মাই গড! এ গ্রামে তো দেখি পরির দেখা পাওয়া যায়।”
মেয়েটা কে ভালো করে দেখে আবার বিরবির করে বললো,
—- ” এটা তো মিহির বান্ধবী! আমি এতোক্ষণ ওকে দেখে বসন্ত পরি ভাবছিলাম! যেই আমি মেয়েদের দেখতেই পারি না আজ হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে আমার এমন অবস্থা হচ্ছে কেন?আর ওকে তো আগেও দেখেছি তখন তো এমন হয়নি।উমমম তখন হয়তো ভালো করে তাকাইনি! আমি কি এখন রেহানের মতো ওর প্রেমে পরে গেলাম নাকি?হয়তো হ্যাঁ!”
রনিত আস্তে আস্তে তিহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিহার সেই দিকে খেয়াল নেই ও তো এখন ফুল দেখতেই ব্যাস্ত।তিহা পিছোতে গিয়ে হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা লাগে।হাতে হালকা ব্যাথা পেয়েছে।হাত ডলতে ডলতে বললো,
—- ” কোন খাম্বারে এখানে?একটু আগে তো কোনো কিছু ছিলো না!হঠাৎ করে খাম্বা এলো কি করে?”
সামনে তাকাতেই রনিতকে দেখতে পেয়ে চোখ জোড়া একদম ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বললো,
—- আপনি এখানে কি করছেন?আর এমন খাম্বার মতো দাড়িয়েই বা কেন ছিলেন?আপনার কারনে আমি হাতে ব্যাথা পেলাম।
রনিত এখন নিজের মধ্যে নেই আনমনেই বলে ফেললো,
—- ” তুমি যে আমার হার্ট অ্যাটাক করে দিয়েছো বসন্ত পরি তার কি হবে?”
তিহা রনিতের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
—- কিহহহহহ????
তিহার চিৎকারে রনিতের হুস ফিরলো একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” আমি কি কিছু বলে ফেলেছি নাকি?তুমি কিছু শুনেছো? আচ্ছা বরং যাই রেহান ডাকছে!”
রনিত কথাগুলো বলেই কোনো রকমে ওখান থেকে কেটে পরলো।আর এদিকে তিহা কিছুই বুঝতে পারছে রনিত এগুলো কি বলে গেলো।বারবার কথা গুলো ভাবছে কিন্তু কোনো আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না।
।
।
।
আমি ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মাহিকে খুঁজতেছি কিন্তু কোথাওই পাচ্ছি না।কি ব্যাপার! কোথায় গেলো মেয়েটা?রেহানের রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম ওই রুমের দিকে একবার তাকাতেই চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।কারন ওখানে মাহি রেহানের সাথে বসে খেজুরি আলাপে মেতে উঠেছে।দুজনে কি হাসা হাসিই না করছে।এদের দেখে মনে হচ্ছে কতোদিনের পরিচিত। কিন্তু উনি মাহিকে এতো তারাতাড়ি পটালেন কিভাবে মাহিতো এতো সহজে কারো সাথে মিশে না।সম্ভব! সম্ভব! উনার দ্বারা সবই সম্ভব! আমার ভোলা ভালা বোনটাকেও এই ব্যাটা হাত করে নিলো।একে এবার ছাড় দেওয়া যায় না!আমি হনহন করে রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম।মাহির দিকে তাকিয়ে বললাম,
—- ” মাহি তোকে মা ডাকছে!তারাতাড়ি যা!”
—- ” কেন ডাকছে মা?”
মাহি প্রশ্ন করায় আমি একধমক দিয়ে বললাম,
—- ” তোকে ডাকছে মানে ডাকছে!এখুনি যা এখান থেকে!”
মাহি ধমক খেয়ে তারাতাড়ি বেরিয়ে গেলো।ওর দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে একটা শ্বাস নিলাম।
চলবে,,,,