ভালোবাসি পর্ব-০৯

0
1027

#ভালোবাসি
#পর্ব_৯
#সুমাইয়া_জাহান

আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা একটু রেস্ট নিতে যাবো এরমধ্যেই একজন এসে হাজির।আমি তার দিকে তাকাতেই অবাক।অবাক কন্ঠে বলে উঠলাম,

—- ” আপনি এখানে?”

আমার সামনে থাকা লোকটা আমার প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গেছে।তারপরও নিজে সামলে ভ্রু কুঁচকে আমাকে বললো,

—- ” আমি একটা কাজে এখানে এসেছি! কিন্তু তুমি এখানে কি করছো মিহি?”

আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- ” এটা আমার বাড়ি রনিত ভাইয়া তাই আমি এখানে!কিন্তু আপনি আমার গ্রামে আমার বাড়িতে কি করছেন?”

সামনে থাকা রনিত ভাইয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার আমার দিকে একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বললো,

—- ” ব ব বললাম তো একটা কাজে এসেছি এখানে।”

** আপনারা তো এতোক্ষণে বুঝে গেছেন মিহির সামনে থাকা লোক টা রনিত।যারা বলেছেন লোকটা রেহান তাদের জন্য এক বালতি ঠান্ডা পানির সমবেদনা।😁**

আমি এখনো সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” এখানে আমার বাড়িতে? তো কি কাজ করতে এসেছেন এখানে?”

আমার কথার মাঝেই বাবা কারো একটার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে আসছেন।এটা দেখে রনিত ভাইয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।একটা নিশ্বাস নিয়ে বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বললো,

—- ” ছাড়বো তোকে রেহান!নিজের হবু বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে এসেছিস ভালো কথা এর মধ্যে আমাকে পাটার বলি বানাইলি কেন?সময় আমারও আসবে তখন এর হিসেব তোকে দিতে হবে বলে রাখলাম!”

রনিতের বিরবির করে বলা কথাগুলো আমার কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।আমি তো বাবার সাথে থাকা লোকটাকে দেখতে ব্যাস্ত!বারবার উঁকি মারতে কিন্তু বাবার কারনে লোকটার মুখ টা দেখতে পারছি না।বাবা লোকটা কে বাড়ির ভিতর ঢুকাতেই লোক মুখ টা স্পষ্ট দেখতে পেলাম।লোক টাকে দেখেই আমার মাথায় রাগে ফেটে যাচ্ছে কারণ লোকটা আর কেউ না ওয়ান এন অনলি রেহান।আমার পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছে।আর দেখ বাবা উনার সাথে কিভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।দেখে৷ মনে হচ্ছে কতো জনমের চেনা!কিন্তু বাবা তো জানে তার আদরের মেয়েকে এই ব্যাটা ভালোবাসার নাম দিয়ে ঠকিয়েছে!যার থেকে পালানোর জন্য এতো কিছু করছি আমি!

উনারা আসতে আসতে আমার সামনে এসে পরেছে।আমি তো রাগে ফুঁসছি। আর রেহান আমার সামনে এসে আমাকে একবার ভালো করে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,

—- ” তুমি তো মিহি তাই না!তা তুমি এখানে কি করছো?”

মহাশয় এমন একটা ভান করছে যেন আমাকে ভালো করে চিনেনই না।আহা কি অভিনয় টাই না পারেন!আহা দেখে চোখ টা জুড়িয়ে যায়।ব্যাটা বদের হাড্ডি একটা!কিন্তু এখন চাইলেও কিছু বলতে পারবো না বাবা সামনে আছে।তাই বাবার সামনে ভদ্রতার খাতিরে মুখ খুলে জবাব দিবো তার আগেই বাবা বলে উঠলেন,

—- ” আরে ও তো আমার বড়ো মেয়ে।কিন্তু তুমি ওকে কি করে চিনো? ”

বাবার কথায় রেহান একটু কপাল কুঁচকে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- আংকেল আমরা তো এক ভার্সিটিতেই পড়ি।ও আমার জুনিয়র। তাই না মিহি!

ইচ্ছা তো করছে এক ঘুসি দেই।হাতে কিছু করতে পারবো না তো কি হয়েছে কথা দিয়ে তো ব্যাটাকে শায়েস্তা করতে পারি।একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” হ্যাঁ বাবা এই ভাইয়া আর আমি এক ভার্সিটিতেই পরি উনি আমার সিনিয়র। ভাইয়া আপনি হঠাৎ এখানে কি করছেন?”

আমার ভাইয়া ডাকাতে রেহানের মুুখ টা দেখার মতো হয়ে গেছে। ভিষন রেগে গেছে। রাগে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলাম।আমি ভয় পাই নাকি উনাকে?কিন্তু উনাকে দেখে মনে হচ্ছে একটু বেশিই রাগিয়ে দিয়েছি। মুখে প্রকাশ না করলেও ভিতরে ভিতরে ঠিক ভয় করছে উনার এমন রুপ দেখে।মিহিরে একটু সাবধানে থাকিস এই ব্যাটা তোকে একলা পেলে পুরো কাঁচা চিবিয়ে খাবে!এইজন্য বলে ” ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না ” কিন্তু এখন তো যা করার করেই ফেলেছি যা কপালে আছে তাই হবে।এর মাঝে বাবা আবার বলে উঠলেন,

—- ” মিহি মা রেহান বাবা এখানে একটা প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে আমাদের গ্রামের জন্য ওইটার জন্যই এখানে এসেছে।(রেহানের দিকে তাকিয়ে) তা রেহান বাবা তুমি এখানে আমাদের বাড়ি থেকে যাও।আর পাঁচ দিন পরই মিহি মার বিয়ে একসাথে বিয়ে টাও খেয়ে যাবে!কি বাবা থাকবে তো?”

আমি ওদের কথার মাঝে মানে মানে কেটে পরলাম এখানে থাকলেই বিপদ।ওদিকে রেহানের মিহির বিয়ের কথা শুনে বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। হৃদপিণ্ড টা ওর খান খান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিহির বাবার শেষের কথাটা বেশ পছন্দ হয়েছে এই টার অপেক্ষাই তো ছিলো।প্রজেক্ট তো শুধু বাহানা এখানে ও মিহির জন্যই এসেছে।তবে প্রথমেই হ্যাঁ বললে তো খারাপ দেখায়।মনে মনে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” শ্বশুর মশাই আমি এখানে থাকার জন্যই এসেছি।আর বিয়েটা তো অবশ্যই হবে তবে সেটা আমার সাথে।জামাই হই আপনার একটু খাতির যত্ন ভালো করে কইরেন।”

মুখে একটু গম্ভীর ভাব এনে বললো,

—- ” না থাক আংকেল আপনাদের অসুবিধা হবে!আমরা নাহয় এখানে কোনো একটা হোটেলে উঠবো। আপনাদের শুধু শুধু অসুবিধায় ফেলতে চাই না।”

—- ” আরে কি বলো বাবা!আমাদের আবার কিসের অসুবিধা? তোমরা এখানে নিশ্চিন্তে থাকে পরো আমাদের বিন্দু মাত্রও অসুবিধা হবে না।আমি আর কোনো কথা শুনবো না তোমরা এখানে থাকছো এটা ফাইনাল!”

মিহির বাবার জোরাজোরিতে রেহান থাকতে রাজি হয়।অবশ্য এটা ওর নাটক ছিলো। তারপর উনি ওদের কে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যান বাজার করতে।

রেহান রুমে এসেই ব্যাক টা মেঝেতে ছুরে মারে।রাহ একটু কমেনি ওর। একে তো এই কয়দিন মিথ্যে ভুল বুঝে মিহি এতো কিছু করছে তার উপর আজ ভাইয়া ডাকলো ওকে!এতো কিছু মেনে নিলেও এই ভাইয়া ডাক টা কিছুতেই মানতে পারছে না।এমনিতে রেহান রেগে গেলে ঘরে সব জিনিস ভাঙ্গচুর করে কিন্তু এখানে তো আর তা করতে পারবে না।তাই খাটের উপর বসে চোখ বন্ধ করে নিজের চুল নিজেই টানছে আর বলছে,

—- ” মিহু পাখি আজকাল তোমার বড্ড বড্ড সাহস বেড়ে গেছে।অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেলে?আবার আমাকে ভাইয়া বলে ডাকলে?আজকে যা করলে তার জন্য অনেক বড়ো মুল্য তোমায় দিতে হবে!তৈরি থেকো মিহু পাখি!”

রনিত রেহানের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো।রেহানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে।কিন্তু কোনো ভাঙ্গচুর করছে না দেখে একটা ছোট্ট করে শ্বাস নিলো যাক এ বাড়িতে এসে এইটুকু সম্মান অন্তত রাখলো।তারপর আস্তে আস্তে রেহানের পাশে গিয়ে বসলো।

—- ” রেহান মাথা ঠান্ডা কর! দেখ এখন মিহি তোর উপর রাগ করে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে।আমাদের হাতে কিন্তু একদম সময় নেই। বিয়ে পাঁচ দিন পর এর মধ্যে সব কিছু ঠিক করতে হবে।মিহির ভুল টা শোধরাতে হবে আর বিয়ে টাও আটকাতে হবে।তাই এখন রাগলে চলবে না মাথা টা একটু ঠান্ডা কর।”

—- ” ছেলেটার নাম অর্ক আহমেদ এই গ্রামেই বাড়ি মিহির থেকে আগে জেনেছিলাম।আধা ঘন্টার মধ্যে ছেলেটার সব ডিটেইলস আমার চাই!”

কথাটা বলেই একটা তোয়ালে নিয়ে রেহান হনহন করে ওয়াস রুমে ঢুকে পরলো।আর রনিত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেরিয়ে পরলো অর্কের খোঁজে। ও খুব ভালো করেই জানে এই আধা ঘণ্টার মধ্যে সব খবর না পেলে কি হতে পারে!

এদিকে আমি ওখান থেকে মানে মানে কেটে পরে নিজের রুমে ঢুকে তারাতাড়ি দরজা আটকে একনাগাড়ে শ্বাস নিচ্ছি। মনে হচ্ছে এতোক্ষণ দম আটকে ছিলো।তিহা রুমেই ছিলো তাই ও এতো কিছু জানে না।আমাকে এমন করতে দেখে কিছুক্ষণ পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে ভ্রু কুঁচকে বললো,

—- ” এমন করছিস কেন তুই? মনে হচ্ছে কোনো ভুত দেখে এসেছিস!”

আমি ভালো করে দম নিয়ে খাটে গিয়ে বসে ঘাম মুছতে মুছতে বললাম,

—- ” ভুত না ভুত না!তার থেকেও ভয়ংকর কিছু দেখেছি আমি! ”

আমাকে এমন ঘামতে দেখে আর আমার এমন অদ্ভুত কথা শুনে তিহা আমার কাছে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখে চিন্তিত হয়ে বললো,

—- ” জ্বর তো নেই তাহলে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছিস কেন রেহান ভাইয়ার শোকে পাগল হয়ে গেলি নাকি!”

আমি ওর কথা চরম বিরক্ত একে তো ওই রেহান নামক টেনশন তারপর আবার তিহার এমন কথা বার্তা! আমি উঠে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,

—- ” চুপ করবি তুই! এখনো পাগল হইনি তবে সত্যিই পাগল বানানোর জন্য ওই রেহান নামক পাগল বানানোর ডাক্তার টা চলে এসেছে।”

—- ” কিহহহহহ!!!রেহান ভাইয়া এখানে চলে এসেছে?”

অবাক হয়ে তিহা বললো।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

—- ” আগগে হ্যাঁ উনি চলে এসেছেন!”

—- ” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমাদের! রেহান ভাইয়া তোকে মনে হয় সত্যি ভালোবাসে।তুই একটু ভালো করে ভাবতো সেদিন ঠিক শুনেছিলি তো!নাকি এর পিছনেও কোনো ব্যাপার আছে?”

তিহা আমার পাশে বসে কথা গুলো বললো।আমি গম্ভীর ভাবে বললাম,

—- ” এখানে ভাবার কিছু নেই আমি নিজের কানেই সব শুনেছি। এখন এসব নিয়ে একদমই ভাবতে চাই না”

তিহা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো,

—- ” তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর!”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে