গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৭
কলিং বেল চাপতেই সাবা এসে দরজা খুলে.ওকে দেখে মৃদু হেসে আমি আমার রুমে চলে আসি.আমার পেছন পেছন সাবাও আমার রুমে আসে.খুশিতে গদ গদ হয়ে সাবা আমাকে প্রশ্ন করে ,
-জানু কেমন কাটলো আজকের দিনটা?কোথায় কোথায় ঘুরলি আর কি কি কথা হলো?
আমি আলমারি খুলে কাপড় নিচ্ছিলাম সাবার প্রশ্নে ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলি ,
-ভালোই কেটেছে.আর তুই তো আমানকে আমার সম্পর্কে সবই বলে দিয়েছিস আর নতুন করে কি জানার থাকতে পারে বল!
আমার কথায় সাবা ব্রু কুচকায়.হয়তোবা আমার কথাটা ওর বেশ একটা পছন্দ হয়নি, আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত কণ্ঠে বলে ,
-কি হয়েছে বলতো ?
একটা প্লাজু আর টি শার্ট হাতে নিয়ে সাবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি ,
-কি হবে?কিছুই হয়নি
সাবা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়.ও আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ি.জানি ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে ও ঠিক গুতিয়ে গুতিয়ে আমার পেট থেকে কথা বের করে নেবে.কিন্তু আমি ওকে কিছু বলতে চাই না নয়তো ওর ও মন খারাপ হয়ে যাবে.
‘
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি সাবা বেডের এক কোনায় আসন পেতে বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে.ওকে এইভাবে দেখে আমি ওর মাথায় চাটি মেরে জিজ্ঞেস করি ,
-কিরে কি ভাবছিস ?
পেত্নীটা আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আগের মতোই বসে আছে.আমি এবার ওকে খুশি করার জন্য বললাম,
-জানিস সাবু আমান আজকে আমাকে এত সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে গেছে না কি বলবো.উফফ!মারাত্মক রকমের সুন্দর রে .একবার সেখানে গেলে আর আসতে মন চাইবে না .আমারও না খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আসার সময়.
সাবা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো তারপর মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো ,
-আর রোমান্স সেটা কেমন করলি?
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম ,
-আমি এত লুচু টাইপ মেয়ে না যে বিয়ের আগেই তোর মতো রোমান্স এর চিন্তা করবো.ছি! তোর চিন্তা ভাবনা কি খারাপ .ভাবা যায় আমার মতো এমন কিউট ভদ্র একটা মেয়ের কিনা তোর মতো লুচু একটা ফ্রেন্ড জুগিয়েছে.আর কি দুনিয়ায় কেউ ছিল না.বল তো !এটা ঠিক.আমি আর কোনো মেয়েকে আমার বেস্টি বানাতে পারলাম না তোকেই কেন বানালাম .উফফ!এখন আফসোস হচ্ছে!
কথা গুলো বলে আমি মুখ টিপে হাসছি.আর সাবা বালিশের পাশের কুশনটা নিয়ে আমাকে উরা ধুরা মার শুরু করলো আমিও বসে থাকবো নাকি অন্য একটা কুশন নিয়ে আমিও শুরু করলাম .শুরু হয়ে গেলো আমাদের পিলো ফাইট.ধুমসে মারামারি চলছে .আমাদের যুদ্ধের মাঝেই আম্মু রুমে এসে ঢুকলো .আম্মুকে দেখা মাত্র আমরা দুজন ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়ি .এক্কেবারে ভেজা বেড়াল .মনে হয় আমাদের থেকে ইনোসেন্ট এই পৃথিবীতে আর কেউ নেয়.আমাদের এইভাবে চুপসে যেতে দেখে আম্মু মুখ টিপে হাসলেন.আমি আড় চোখে আম্মুর সেই নূরানী হাসিটা একবার দেখে নিলাম .আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
-কিরে প্রত্যাশা আমানের সাথে যে বাইরে গিয়েছিলি কথা বলতে তা আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলিসনি তো.তোর তো আবার মুখ পাতলা কি বলতে কি বলে ফেলিস!
আমি অভিমানী সুরে আম্মুকে বললাম ,
-মোটেও না আম্মু.হে আমি একটু বেশিই বলি তার মানে এই না যে আমি মানুষ বুঝে কথা বলতে জানি না.আমি উনার সাথে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করেছি.
-হুম শুনে খুশি হলাম.আর শোন তোর বিয়ের তো আর বেশি দিন নেয়.ভাবছি কাল থেকে বিয়ে শপিং শুরু করবো .তুই কি বলিস ?
আমি লজ্জা মাখা কণ্ঠে বললাম ,
-ঠিক আছে ।
আমাকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে আম্মু আমার থুতনিটা হাত দিয়ে একটু নাড়িয়ে দিয়ে বলে ,
-আমার মেয়ে তা দেখি লজ্জাও পাচ্ছে.
আম্মু কথায় আমি হেসে ফেলি .আম্মুও হেসে বলে ,
-দোআ করি সারাজীবন যেন তোর মুখে এই হাসিটা বজায় থাকে
পাশ থেকে সাবা বলে উঠে,
-আমিন।
‘
দেখতে দেখতে অনেক দিনগুলো কেটে যায়.কাল আমার বিয়ে আর আজ গায়ে হলুদ.চারপাশে বিয়ের বেশ তোর জোর চলছে.বাসার প্রতিটা কোনায় কোনায় মানুষ গিজগিজ করছে.আম্মু পুরো বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে .মাঝে মাঝে এসে আমাকে তাড়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার জন্য আবার দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না দেখছে তার মাঝেই ডেকোরেশনের লোকদের ডেকে বলছে এটা এখানে রোখো ওই তা ঐখানে রাখো.এক মিনিটের জন্যেও বসে রেস্ট নিচ্ছে না.এত দৌড় ছাপেও বিন্দু মাত্র কষ্টের ছাপ নেয় মুখে বিন্দাস হাসি মুখে আবার মেহমানদের আপ্পায়ন করছে .হুম এটাই মায়ের গুণাবলী.সকাল থেকে ভাইয়াওকে একবারের জন্য চোখে পড়েনি.তার এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা একটুও খুত থাকলে চলবে না .নিশ্চয় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব কাজ করাচ্ছে.আর আমার বেস্টু সাবু তার যে আজ কি হয়েছে কে জানে.রুমের বাইরে একটু উঁকিঝুঁকি মারছে তো আবার এসে রুমে পায়চারি করছে.পায়চারি থামিয়ে আবার আমাকে বলছে দোস্ত তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে কিন্তু আমি সাজিয়ে দিবো .কথাটা বলে মুখটা বোকার মতো করে বলে আচ্ছা দোস্ত আমি কি দেখতে খুব বাজে .আবার নিজে নিজেই বলছে বাজে হলেই বা কি আমাকে কারো দেখার প্রয়োজন নেয় সবাই তো আজ খুব বিজি আমাকে দেখার মতো টাইম কারো নেয়.কথাগুলো বলে আবার পায়চারি করছে। এই পেত্নীর কথার আগা মাথা কিছুই আমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকছে না তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছি নিশ্চয় ভাইয়ার সাথেই আবার লেগেছে.আমি গালে হাত দিয়ে বসে বাড়ির মানুষগুলোর কাজকর্ম দেখছিলাম.তখনি সাবা চোখ লাল করে বললো ,
-এই মেয়ে তোকে আর কত বার বলবো ফ্রেশ হয়ে আয় কথা কি কানে যায় না?নাকি তোর তো তোর ভাইয়ার মতো সমস্যা আছে .তোর ভাইয়া চোখে দেখে না আর তুই কানে শুনিস না.
আমি এবার রাগি গলায় বললাম ,
-এই তুই আমাকে ঠিক ভাবে বলতো কি হয়েছে ?তখন থেকে দেখছি তুই এরকম উল্টা পাল্টা বকে যাচ্ছিস.আসল কাহিনীটা কি?
আমার প্রশ্নে সাবা আমার আমার পাশে এসে বসে তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ,
-আচ্ছা প্রত্তু আমায় কি এই হলুদ শাড়িতে খুব বাজে লাগছে?
আমি ওর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম ,
-কই না তো তোকে তো পুরো হলুদ পরীর মতো লাগছে!
সাবা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ,
-তাহলে তোর ভাইয়া আমার দিকে ভালভাবে তাকাচ্ছে না কেন.বিকেল থেকে কারণে অকারণে এটা সেটা বাহানা দিয়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি বরাবর আমাকে ইগনোর করেই যাচ্ছে.
ওহ আচ্ছা এইটাই আসল কাহিনী .সাবার কাঁদো কাঁদো মুখটা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে.কোনোরকমে হাসি আটকিয়ে ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম ,
-আরে পাগলী এইটুকু ব্যাপারে তুই এত হাইপার কেন হচ্ছিস বলতো .আসলে ভাইয়া তো খুব বিজি তাই হয়তোবা তোর দিকে মনোযোগ দিতে পারছে না ।
-তাই বলে আমার সাথে সারাদিন একটাও কথা বলবে না ।
-আহারে আমার জানুটার কি কষ্ট .থাক জানু কান্না করে না ।
কথাটা বলে ওর মাথাটা আমার কাঁধে চেপে ধরলাম.সাবা ঠাস করে মাথাটা উঠিয়ে বলে ,
-ওই একদম মজা নিবি না বুঝলি .আর একটাও কথা না বলে জলদি ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে সাজাতে হবে .
আমি মুখ ভেঙচিয়ে বললাম ,
-হুম যাচ্ছি ।
ফ্রেশ হয়ে এসে আমি সাজতে বসে পড়লাম.
‘
চলবে,,