ভালোবাসি পর্ব-০২

0
1129

#ভালোবাসি
#পর্ব_২
#সুমাইয়া_জাহান

—- ” কিরে এতোক্ষণ লাগে একটা ফোন ধরতে? কোথায় কোথায় থাকিস?বারবার বলি যেখানে যাবি ফোনটা হাতে নিয়ে যাবি!আমার কোনো কথা কানেই নিস না।দাঁড়া এবার বাড়ি এলে আর যেতে দিবো না।জানিস কতো চিন্তায় থাকি সারাদিন! এই একটা সময়ই তোর সাথে কথা হয়।তারপরও তুই তাড়াতাড়ি ফোন ধরিস না!”

—- ” শেষ হয়েছে?”

একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম।এতোক্ষণ যিনি একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন উনি আমার মা জননী।ফোন ধরতে এক সেকেন্ডও দেরি হলে এমন শুরু করে দেন।আর কথায় কথায় হুমকি দিতে থাকবেন বাড়ি নিয়ে যাওয়ার।ফোনের ওপাস থেকে অভিমানী সুরে মা আবারও বলে উঠলেন,

—- ” হুম! তোর কাছে তো আমার দুশ্চিন্তার কোনো দামই নাই!আমি এখানে চিন্তায় চিন্তায় মরে যাই আর তুই ওখানে বসে বসে মজা কর!”

—- ” মা তুমি কিন্তু শুধু শুধু এতো চিন্তা করছো।ফোন টা ধরতে একটু তো টাইম লাগে!এইটু সময় তো দিবা।”

—- ” হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো আমার কথা খারাপ লাগবেই! যখন বিপদে পড়ি তখন বুঝবি এতো চিন্তা কেন করি!ওসব এখন বাদ দে আগে বল আজ কারো সাথে কোনো ঝামেলা করিস নি তো!তুই কিন্তু তোর বাবাকে কথা দিয়েছিস ওখানে কারো সাথে কোনো ঝামেলা করবি না সেটা ভুলে যাস না কিন্তু!”

আমার মা জননী মনে করেন আমি কারো না কারো সাথে সব সময় ঝামেলা করতে থাকি।তাই বাড়ি থেকে এখানে আসার আগে বাবাকে দিয়ে কথা দিয়ে নিয়েছেন এখানে কোনো ঝামেলা না করি।তাই তো কিছু বলে প্রতিবাদ টুকুও করতে পারি না।যেমন আজ সকালে রেহান কে এক লাথিতে উগান্ডা পাঠানোর ইচ্ছে টা মাটি চাপা দিতে হয়েছে।কি৷ আর করার বাবা কে কথা দিয়েছি বলে কথা রাখতে তো হবে!আর মাও প্রতিদিন নিয়ম করে এই কথাটা জিজ্ঞেস করবেই করবে।নিজের খাবার খেতে ভুলে যাবেন কিন্তু এই কথাটা কোনোদিন জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না!তাই আজও সেই নিয়মের অন্যথা হলো না! বিরক্ত হয়ে ঠোঁট উল্টে বললাম,

—- ” তোমার মেয়ের উপর কি একটুও বিশ্বাস নেই?আমায় দেখে কি তোমার মনে হয় সবসময় ঝামেলা করতে থাকি? ”

—- ” কি জানি বাপু!আমি কাল সাপকেও বিশ্বাস করতে পারি কিন্তু তোকে কেন জানি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।সবসময়ই মনে হয় তুই কোনো না কোনো ঝামেলা ঠিক করবি!কি করবো বল মন তো আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই যে তাকে বলবো তোকে একটু বিশ্বাস করতে!”

একটা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললাম,

—- ” তোমার মনকে আর বলতে হবে না!এবার বলতো বাবা ঠিক মতো ঔষধ খেয়েছে কিনা?

—- হ্যাঁ তা খেয়েছে।না খেলে তো তোর পেট ভরা বকা খেতে হবে তাই ঠিক সময়ের আগেই ঔষধ খেয়ে বসে থাকেন।”

মায়ের কথা শুনে মৃদু হাসলাম।তারপর আবার জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” মা মাহি এখনো কোচিং থেকে ফেরেনি?”

—- ” তুই নাম নিলি মহারানীর আর হাজির না হয়ে পারেন! এই নে কথা বল!”

মাহি হলো আমার দুষ্টু মিষ্টি ছোট্ট বোন।এবার ক্লাস নাইনে পড়ে।আমি বলতে ও পাগল।এইতো যখন আমার এখানে আসার কথা হয়েছিলো তখন পুরো বাড়ি কেঁদেই ভাসিয়ে দিয়েছে। ও কিছুতেই আমাকে ছাড়া থাকবে।যদি যেতে হয় তাহলে দুজন এক সাথো আসবে। নাহলে কেউ আসতে পারবে না! অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলে এসেছি যে ওর এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমার সাথে এখানে নিয়ে আসবো।তারপর থেকে যে মেয়ে জীবনে বইয়ের পাতা উল্টে দেখে না সে মেয়ে এখন বই ছাড়া কিছুই বোঝে না সারাক্ষণ বই নিয়েই বসে থাকে।

—- ” আপুই আমাদের মা টা না দিনদিন কেমন স্টার জলসার শ্বাশুড়ি দের মতো হয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস আমাদের কোনো ভাই নেই নাহলে আমাদের না হওয়া ভাবি অকালেই উপরে চলে যেতো!”

মাহির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম।তারপর মনে হলো মায়ে পাশে দাড়িয়ে এমন কথা বলে আস্ত দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে?এতোক্ষণে তো তুলকালাম কান্ড হয়ে যাওয়ার কথা।কিন্তু পরিস্থিতি এতো শান্ত কেন?একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” এই মা কি এখনো তোর পাশেই আছে?”

মাহি ভাব নিয়ে বললো,

—- ” আমি মাকে ভয় পাই নাকি! ”

—- ” তাই!”

মাহি আস্তে আস্তে বললো,

—-” মা একটু আগে রান্না ঘরে গেছি। নাহলে তো এতোক্ষণে আমার ভোলা ভালা মাথা টা মাটিতে পরে হামা গড়ি খেতো।”

—-” তাই তো বলি মেয়ের এতো সাহস হলো কি করে মা জননী কে নিয়ে কথা বলার!যে মেয়ে মায়ের সামনে সামান্য একটা কথা বলতে গেলো হাত পা কাঁপতে থাকে সে বলবে এমন কথা!”

কথাটা বলেই হাসতে লাগলাম।আর ওপর পাস থেকে মাহি ইনোসেন্ট ভাবে বললো,

—- ” আপুই একটু মানসম্মান তো রাখ! ভুলে যাচ্ছিস কেন আমরা এখন ফোনে কথা বলছি! ”

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” ফোনে কথা বলছি তো কি হয়েছে?”

—- ” আরে আপুই তুই তো দেখি কিছুই জানিস না! তুই কি করে যে আমার বড়ো হলি আল্লাই ভালো জানে?শুনেছি ফোনে আমরা যা বলি সব নাকি রেকর্ড হয়।আর ওই অফিসের লোকজনরা সব শুনতে পায়।এখন ওদের সামনে আমার প্রেস্টিজ এবাবে ধুলোই মিশিয়ে দিলে পরে আর আমার জামাই খুঁজে পাওয়া যাবে?একটু ভাব!”

ওর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না।এই বলে কি এসব?মাহি আবারও বলে ওঠলো ওঠলো,

—- ” যাগগে বাদ দে ওসব তোর ওই মাথায় ঢুকবে না!এখন বল কবে আসবি?”

—- ” এখন কোনো ছুটি নেই রে বোন আমার! তাই এখন আর আসা হবে না।”

এবাবে আরো কিছু কথা বলে ফোন কাটলাম।এর মধ্যেই তিহা বই হাতে নিয়ে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

—- ” কথা শেষ হলো অবশেষে?”

আমি মাথা নেরে বললাম ” হুম “।তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি উঠে গিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলাম।তিহাও আমার পিছু পিছু রান্না ঘরে ঢুকলো। এসেই আমরা দুজন রাতের জন্য রান্না করতে লাগলাম।কথা বলতে বলতে কখন যে রাত হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।

ওদিকে রেহান নিজের ফোনে মিহির একটা ছবি নিয়ে বারবার দেখছে আর বলছে,

—- ” মিহু পাখি কদিন আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবা?ধরা তো পরতেই হবে তোমায়!দেখা হচ্ছে কাল তৈরি থেকো মিহু পাখি!”

কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দিলো রেহান।ফোন থেকে কাকে যেন একটা কল করে বললো,

—- ” সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে করছিস তো?”

ফোনের ওপাস থেকে কিছু একটা বলতেই রেহানের ঠোঁটের কোনায় মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আর মুখে বললো,

—- ” গুড!একদম নিখুঁত ভাবে যেন সব কাজ হয়।”

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো। তারপর ফোনটা খাটের এক কোনায় ছুরে ফেলে খাটের উপর ওপর হয়ে শুয়ে পরলো।

সকাল বেলা উঠে তিহা আজ তারাতাড়ি ভার্সিটি না গিয়ে আমাকে শাড়ি পরাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমি বারাবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছি সুর্য আজ ঠিক জায়গাতে উঠেছে কিনা?কিন্তু বারবারই দেখছি সুর্য ঠিক জায়গাতেই আছে!

—- ” বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই সুর্য প্রতিদিন যেই দিক থেকে উঠে আজও সেই দিক থেকেই উঠেছে।”

শাড়ি সিলেক্ট করতে করতেই কথাটা বললো তিহা।কিন্তু ও আমার মনের কথাটা বুঝলো কি করে?মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখছি।বিছানার দিকে এগোতে এগোতেই বললাম,

—- ” তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি তারপর এই স্বপ্ন থেকে জেগে আবার ভার্সিটি যেতে হবে! ”

তিহা আমার হাতটা খপ করে ধরে একটা চিমটি কেটে রাগী গলায় বললো,

—- ” এবার বিশ্বাস হয়েছে এটা স্বপ্ন নয় সত্যি! ”

মুহূর্তেই আমার চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেলো। সে মেয়ে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে হলেও আগে সকাল বেলা ভার্সিটি গিয়ে সামনের বেঞ্চ দখল করবে।এ কাজ থেকে ঝড় বৃষ্টি আজ অব্দি থামতে পারনি সেই কাজ বাদ দিয়ে আমাকে শাড়ি পরাতে ব্যস্ত আজ এটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।জাস্ট ইম্পসিবল!

আমি ভালো করে তিহা কে একবার পরক করে।ওর গায়ে তাপমাত্রা চেক করে বললাম,

—- ” সব তো ঠিকই আছে! তাহলে এমন বিহেভ কেনো করছিস?”

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে