গল্পঃ- ভালোবাসি।
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০১
আমি প্রেগনেন্ট জেনেও আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?
আমার সামনে থাকা মানুষটি বেশ শান্ত গলায় বললো,
-জি.
-কিন্তু কেন?আপনি জানেন না যেসব মেয়েরা বিয়ের আগে প্রেগনেন্ট হয় সেই সব মেয়েদেরকে সমাজ কটু চোখে দেখে.দেখুন আমাকে বিয়ে করে আপনি সুখী হতে পারবেন না.আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আর আমার পেটে তারই সন্তান।
-সমস্যা নেয় আমি আপনার আর আপনার সন্তান উভয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি আছি.আর বিয়ের আগে এমন সবারি প্রেম ভালোবাসা থাকে সেটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।
কথাটা বলে উনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যায়.আমি মাথায় হাত দিয়ে বসি পড়ি.মনে মনে বলি এবার বোধ হয় বিয়েটা হয়েই যাবে.না না কিছু একটা করতে হবে.আমি টেবিল থেকে আমার মোবাইলটা নিয়ে সাবাকে কল দেই.
-হ্যালো! কিরে এই বিয়েটাও নির্ঘাত শেষ.
-নারে এইবার বোধ হয় হয়ে যাবে .
আমার কথায় সাবা লাফিয়ে উঠে বলে.
-সত্যি!যাক এবার তাহলে তোর বিয়েটা খেতে পারবো.
আমি রেগে গিয়ে বললাম.
-ওই কুত্তি তোকে কি আমি বিয়ে খাওয়ানোর জন্য কল দিয়েছি.শোন আমি বিয়ে করবো না আর এখন কিভাবে বিয়েটা বেসতে দিবো সেই প্লেন দে .
-আমি কি প্লেন দিবো.আর তুইতো বললি যে ছেলে দেখতে আসবে তাকে তুই মিথ্যে কথা বলবি .বলবি যে তোর অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক আছে আবার তার বাচ্চাও তোর পেটে.তা এসব বলেছিস তুই?
-হুম বলেছি তো কিন্তু কোনো লাভ হয়নি ওই ছেলে তবুও আমাকে বিয়ে করতে রাজি .
-কি বলিস.দোস্ত শুন তুই আর তেড়ামি করিস না, এবার প্লিজ রাজি হয়ে যা আজ কাল এমন ছেলে কোথায় পাওয়া যাবে বল যে কিনা প্রেগনেন্ট জেনেও সেই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে যদিও সবটা সাজানো তবুও আমার মনে হয় ছেলেটা ভালো।
সাবার কথা শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেলো. আমি ক্ষেপে গিয়ে বলি.
-তোর যদি এত ভালো লাগে তাহলে তুইই বিয়েনা করেনে যত সব ফালতু.
রাগে ফোনটা কেটে দেই.তখনি আম্মু আমার রুমে আসে.
-প্রত্যাশা মা চল.ড্রইং রুমে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে
.
আমি একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললাম
.
-আবার কোন নতুন নাটক করতে ডাকছে বলোতো?
আম্মু আমার মাথায় কাপড় টেনে দিয়ে বলে .
-কিসের নাটক.তোর বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গিয়েছে.উনারা চাচ্ছেন আজই তোকে আংটি পরিয়ে দিতে .
আমি চিল্লানি দিয়ে বললাম .
-কিহহ!
-আরে আস্তে.এত চিল্লা চিল্লি করছিস কেন .উনারা শুনবে তো.
-শুনলে শুনুক.আর কি দেখতে এসে আংটি পড়িয়ে ফেলবে.মগের মুল্লুক নাকি .আমার একটা প্রিপারেশনের প্রয়োজন আছে এভাবে বললেই কি সব কিছু হয়ে যায় নাকি.
আম্মু এবার ব্রু কুঁচকে বলে .
-প্রিপারেশন আবার কিসের এখানে তো আর বিয়ে হচ্ছে না সামান্য আংটি বদল.এটার জন্য এত প্রিপারেশনের প্রয়োজন নেয়.
-কিন্তু আম্মু সাবা নেয় যে ওকে ছাড়া কি করে আংটি বদল হবে .ওকে ছাড়া আজ পর্যন্ত কিছু করেছি বলো.ও শুনলে অনেক কষ্ট পাবে.
-এক কাজ কর ও যেহেতু এখন ওর গ্রামের বাড়িতে আছে তাই তো আর আসতে পারবে না তুই বরং ওকে ভিডিও কল দে.তাহলে ও সবটা দেখতে পাবে.
-ভিডিও কলে কি আর সব বুঝা যায় নাকি .ও ২ দিন পর চলে আসবে তো তখনি না হয় সব কিছু হোক।
-না ২ দিন পর না আজই হবে.আমার সাবার সাথে এক্ষনি কথা হয়েছে ও বলেছে ওর কোনো আপত্তি নেয় ও বরং খুশি হয়েছে.
পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজে পেছনে ফিরে দেখি বড় ভাইয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভাইয়াকে দেখা মাত্র আমার গলা শুকিয়ে উঠলো,হায় খোদা আর বোধ হয় কোনো উপায় নেয় এই বিয়েটা আটকানোর।মনে মনে ভাবছি আমার বেস্টুর মতো যদি একটা বেস্টু থাকে না তাহলে তার আর কোনো শত্রুর প্রয়োজন হবে না.একবার পাই শুধু তোকে তোর ২০৭টা হাড়কে আমি ভেঙ্গে ৩০৭টা হাড়ে পরিণত করবো.
-কিরে কি ভাবছিস?এখন তো আর কোনো সমস্যা নেয়.নাকি তোর আরও কোনো প্রব্লেম আছে ?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম.
-না.
-হুম তাহলে ড্রইং রুমে চল উনারা সবাই অপেক্ষা করছেন।
আস্তে করে বললাম .
-চলো।
এক পর্যায়ে আমাকে আংটি পরিয়ে.বিয়ের ডেট ফিক্সট করে তবেই উনারা গেলেন.আর এই দিকে রাগে আমার গায়ে আগুন জ্বলছে.ইচ্ছে করছে এই আগুনে ওই ছেলেটাকে ভস্ম করে দেই .কি অদ্ভুত লোক!এত মিথ্যে বলেও কোনো লাভ হলো না সেই বিয়েটা ফিক্সট হয়ে গেলো.এর আগের দুটো বিয়ে আমি এইভাবে ভেঙে দেয় কিন্তু আজ আর হলো না,কি করে আমার মা আর ভাইয়াকে বুঝায় আমি এখন এই বিয়ে নামক প্যারাতে নিজেকে জড়াতে চাই না।ধুরর!
রাত ১১.৩০ টা,,
রাতের খাবার শেষে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছিলাম.তখনি আমার ফোনে একটা আননোন নাম্বারে কল আসে.আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করি না.কিন্তু এ ও তো দেখি নাছোড় বান্দা ফোন দিয়েই যাচ্ছে.আমি ফোনটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে আমি বলতে শুরু করি.
-হ্যালো কে! এত রাতে কি ভীমরতি ধরেছে নাকি দেখছেন না বার বার কলটা কেটে দিচ্ছি তাও কল দিয়েই যাচ্ছেন এটা কেমন ধরণের অভদ্রতা.সমান্য মেনার্সটুকু নেয় না.খবরদার যদি আর একটা কলও এসেছে তো আমি এবার পুলিশ কমপ্লেইন করবো.
এবার ওপাশ থেকে হালকা আওয়াজ ভেসে আসে .
-আপনি তো দেখছি খুব ডেঞ্জেরাস.সামান্য কল করতে আপনি আমাকে পুলিশে দিবেন.আপনার থেকে তাহলে তো নিজেকে সেইফ রাখতে হবে .কখন আবার রেগে গিয়ে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন বলা তো যায় না.
আমি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি.
-কে আপনি?
উনি কিছুটা চুপ থেকে বলেন.
-আমান বলছি.
আমি শুয়া থেকে দ্রুত উঠে বসে বলি.
-আপনি? আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
-আপনার ভাইয়া দিয়েছিল.
উফফ ভাইয়া!ইচ্ছে করছে ভাইয়ার রুমে কোটি কোটি মশা ছেড়ে দিয়ে আসি আর এই মশা গুলো ইচ্ছে মতো ভাইয়াকে কামরড়াক তবে আমার শান্তি হতো.(মনে মনে)
-আপনাকে ভাইয়া নাম্বার দিয়েছে বলে আপনিও কল দিয়ে দিবেন!আর এখন আমার বয়ফ্রেন্ডের কল দেয়ার সময় হয়েছে ও যদি এখন কল দিয়ে দেখে আমার নাম্বার ওয়েটিং এ আছে তাহলে আমাকে সন্দেহ করবে.তাই আমি আর আপনার সাথে কথা বলতে পারছি না সরি.
উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে.
-যে সম্পর্কে সন্দেহ আছে ওই সম্পর্কের কোনো মূল্য থাকে না জানেন তো!
আমি মনে মনে ভাবছি নিজের কথার পেঁচে নিজে পরে যায়নি তো!আমি আমতা আমতা করে বললাম.
-সসব সম্পর্কেই একটু আধটু সন্দেহ থাকে এতে করে সম্পর্ক মজবুত হয় ।
প্রত্যাশার এমন বোকা মার্কা কথায় আমান হেসে ফেলে.
-এই আপনি হাসছেন কেন?
-না আসলে আমি এই প্রথম শুনলাম সন্দেহও কোনো সম্পর্ককে মজমুত করে.
-মানুষ সব কিছু প্রথমই শুনে.সবাই তো আর সব কিছু জানে না .আপনার জানা নায়ই থাকতে পারে তাই বলে আরেক জনের উপর হাসবেন!
-আচ্ছা আচ্ছা আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ।আমি জাস্ট একটু মজা করছিলাম.আচ্ছা তো আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলুন আমি রাখছি .আল্লাহ হাফেজ।
আমি কিছু বলার আগেই উনি কলটা কেটে দেয়.কি অদ্ভুত লোকরে বাবা.আমাকে বিকেলে আংটি পরিয়ে দিয়ে রাতে বলে কিনা আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলুন.এর কি মাথায় কোনো সমস্যা টমস্যা আছে নাকি.আমি আজ অবধি কোনো ছেলেকে দেখিনি যে কিনা নিজের হবু বউকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বলে.কি জানি উনি কেমন লোক.এত কিছু বললাম তাও উনি বিয়েতে রাজি.উনি কি বুঝে গেলেন নাকি যে এইসব কিছু মিথ্যে তাই হয়তোবা উনিও উল্টো আমার সাথে মজা নিচ্ছে.উম্ম হতে ওতো পারে.কিন্তু বুঝবো কি করে উনি সবটা বুঝে গিয়েছেন কি না?
‘
আচ্ছা যাকগে কালকে সকালে এসব নিয়ে ভাববো এখন প্রচুর ঘুম আসছে.চোখে একরাশ ঘুম নিয়ে বিছানায় ঢলে পড়ি.
.
চলবে…