#ভালোবাসি
#পর্ব_১
#সুমাইয়া_জাহান
আমার সঙ্গে এখন পৃথিবীর সবচাইতে বিরক্তিকর ঘটনা ঘটছে।একটা ছেলে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে একটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলছে,
—- ” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি ”
এটা নতুন নয়!প্রতিদিনই এরকম দুই তিনটা প্রপোজ করতে থাকে আর আমি প্রত্যেক টাকেই রিজেক্ট করতে থাকি।যা আমার কাছে বিরক্ত নয় চরম বিরক্ত লাগে।এক কথায় বলতে গেলে একদম অসহ্য। এদেরকে আমি প্রতিদনই ফিরিয়ে দেই আর এরা প্রতিদিনই গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে থাকবে “ভালোবাসি”। উফ!একদম অসহ্য!আমি বুঝিনা এরা জানে আমি প্রতিদিন এদের রিজেক্ট করবো তারপরও গোলাপ হাতে নিয়ে হাজির হয়ে যাবে।বিশেষ করে এই ছেলেটা!এ প্রতিদিন নিয়ম করে আমি ভার্সিটি ঢুকলেই এমন হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করবে।ইচ্ছা তো করছে এক লাথিতে উগান্ডা পাঠিয়ে দেই কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আর এর সৌভাগ্য বাবাকে কথা দিয়ে এসেছি যে কারো সাথে কোনো রকম ঝামেলায় জড়াবো না।তাই মনের ইচ্ছে টাকে মনেই মাটি চাপা দিয়ে মনটাকে একটু শান্ত করে সামনে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,
—- ” আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমি আপনার প্রপোজাল টা এক্সেপ্ট করবো না।তারপরও কেন বারবার আমাকে এভাবে বিরক্ত করেন।প্লিজ সরুন আমি ক্লাসে যাবো আমার দেরি হচ্ছে। ”
ছেলেটা মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়েই উঠে দাড়িয়ে আমার পাশে এসে বললো,
—- ” জানেমান তুমি যতোই বিরক্ত হওনা কেন আমি প্রতিদিনই তোমার সামনে এসে এভাবে প্রপোজ করতে থাকবো।আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন তুমি ঠিক আমায় এক্সেপ্ট করবে।আর এটা খুব শীগ্রই হবে মিলিয়ে নিও। ”
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
—- ” আপনার এই বিশ্বাস সারাজীবন আপনার কাছেই থেকে যাবে।সেটা কখনোই বাস্তবে ফলবে না।আমার কথাটাও মিলিয়ে নিবেন।”
কথাটা বলেই আমি হাটা ধরলাম আমার ক্লাসের দিকে।আর পিছন থেকে ছেলেটা বলতে লাগলো,
—- ” সেটা সময়ই বলে দেবে। ”
ও এরকম আরো অনেক কিছু বলতে লাগলো।আমি ওর কথা গায়ে মাখলাম না।আমি আমার আমার মতো করে হেঁটে যাচ্ছি।
ওহ্ আপনাদের তো পরিচয় টাই দেওয়া হয়নি!আমি মিহি এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি।আমি মধ্যবৃত্ত পরিবারের মেয়ে।আমার বাড়ি এই ঢাকার শহর থেকে অনেকটাই দুরে।এই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর এইখানেই একটা হোস্টেলে থাকি কয়েকজন মেয়ের সাথে।
আর এতোক্ষণ যেই ছেলেটার সাথে কথা বলছিলাম ওর পরিচয় এককথায় বলতে গেলে ভার্সিটির কিং।ওর ভয়ে পুরো ভার্সিটি কাঁপে।ওর একটা দল আছে যাদের কাজ হলো রেগিং করা।প্রত্যেক টা জুনিয়র স্টুডেন্টই ওদের রেগিং এর শিকার হয়েছে।আমার দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত ওদের রেগিং এর শিকার হইনি।হয়তো ওদের দলের লিডার মানে রেহান আমায় পছন্দ করে তার জন্য।
হাঁটতে হাঁটতে আমি কখন যে ক্লাসে চলে এসেছি খেয়ালই করিনি।তিহার ডাকে আমার হুস ফিরলো।
—- ” মিহু! এই মিহু! দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি এতো ভাবছিস?এখানে এসে বস।সেই কখন থেকে তোর জন্য জায়গা নিয়ে বসে আছি।তুই জানিস না আআমি কতো কষ্টে এই জায়গাটা ধরে রাখি।সব শকুন গুলোর নজর এই বেঞ্চের উপর।আর তোর এতোক্ষণে সময় হলো আসার!”
তিহা কথাটা বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।তিহা হচ্ছে আমার বেস্টু।একেবারে আমরা দুজন হরিহরাত্মা। একজন আরেক জন কে ছাড়া চলতেই পারি না।তিহাও আমার সাথে হোস্টেলে একসাথে থাকে। ও প্রতিদিন সবার আগে ভার্সিটি এসে ফাস্ট বেঞ্চে জায়গায় নিয়ে বসে থাকবে।ওর মতে ফাস্ট বেঞ্চে না বসতে পারলে পড়ালেখায় একদমই মন বসবে না।তাই নিজেও বসবে আর আমার জন্যও জায়গা নিয়ে বসে থাকবে।কেউ যদি এই বেঞ্চে বসতে আসে তাহলে সে পানি ছাড়াই ধোলাই হয়ে যাবে।তাই ভয়েও কেউ এই বেঞ্চের দিকে পা বাড়ায় না।ওর এমন কান্ড গুলো আমি ভিষণ এনজয় করি।আমার ভাবনার মধ্যেই ও আবারও বললো,
—- এই তুই বসবি নাকি জামাইয়ের স্বপ্ন দেখতে দেখতেই সারাদিন কাটিয়ে দিবি!”
ওর কথায় আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর পাশে বসলাম।ও একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
—- “এতোক্ষণ কই ছিলি?তুই তো আরো আধা ঘণ্টা আগে বের হয়েছিস!”
—- ” তিহা তুই তো জানিসই প্রতিদিন ভার্সিটি ঢোকার সাথে সাথেই রেহান ওর সিনেমার শুটিং শুরু করে দেয়।”
খুব বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললাম।তিহা আমার কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
—- ” মিহু আমার মনে হয়কি রেহান ভাই তোকে সত্যিই ভালোবাসে।দেখ পুরো ভার্সিটি যার ভয়ে কাঁপে সেকিনা প্রতিদিন তোর সামনে হাটু গেড়ে প্রপোজ করে।”
আমি ওর কথা শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম,
—- ” আমার মতে কারো সামনে গোলাপ হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বললেই কেউ কাউকে সত্যি কারে ভালোবাসা হয় না।সত্যি কারে ভালোবাসা হয় মন থেকে যা লোক দেখানো হয় না।আর যুগের কয়টা ভালোবাসা সত্যি কারে হয়?যেগুলো উপর থেকে দেখে মনে হয় সত্যি কারে ভালোবাসা। সেগুলোইর ভিতরে ঢুকে দেখবি ভালোবাসার নাম দিয়ে নোংরামি করা ছাড়া আর কিচ্ছু না।এ-যুগের কিছু কিছু মানুষ ভালোবাসার মতো পবিত্র শব্দ টাকে অপবিত্র বানিয়ে দিয়েছে। তাই আমি এ-যুগের ভালোবাসায় বিশ্বাস করিনা।তার থেকেও বড়ো কথা আমি ঠিক করেছি বাবার পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।সো এসব রেহান ফেহান কি করলো না করলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না।”
তিহা গালে হাত দিয়ে বললো,
—- ” বোইন তোর সাথে আমি জীবনেও পারবো না।একটা কইছি কি তাতেই ইতনা বড়ো ভাষন শুনাইয়া দিলি!বোইন আমার মাফ চাই তোর কাছে আর ভাষন দিস না।”
ওর কথায় ফিক করে হেসে দিলাম।কোনো সিরিয়াস কথার মধ্যেও এমন কথা ওর দ্বারাই সম্ভব।মানুষ কে হাসাতে ওর দুমিনিটও লাগে না।ও এমনই।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে গেলো।
ওদিকে রেহান মন খারাপ করে ওর বন্ধুদের কাছে গেলো। রেহান আসছে দেখে ওর বন্ধুরাও এগিয়ে আসলো।ওদের মধ্যে শিহাব বললো,
—- ” কি রে ভাই কাজ হলো?”
রেহান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নেরে বললো,
—- ” নাহ আজ ও এক্সেপ্ট করেনি।”
রেহানের আরেকজন বন্ধু রনিত বিরক্ত হয়ে বললো,
—- ” রেহান আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনা তুই ওই মেয়ের পিছনে এতো সময় নষ্ট করছিস কেনো?তোর পিছনে হাজার হাজার মেয়ে লাইন দিয়ে আছে আর তুই কিনা……”
আরেক জন বন্ধু বললো,
—- ” হ্যাঁ ভাই তুই শুধু একবার বল আমরা মেয়েটাকে নিয়ে এসে তোর পায়ের কাছে ফেলবো।কত্তো বড়ো সাহস তোকে বারবার রিজেক্ট করে!এই মেয়ের এতো দেমাক! শুধু মাত্র তোর কথায় আমরা এখনো চুপ করে আছি। নাইলে ওকে বুঝিয়ে দিতাম আমরা কি জিনিস!”
রেহান ওদের সবার কথায় বিরক্ত। সবসময়ই ওরা এমন কথা বলতে থাকে।যা শুনতে রেহানের একদমই বিরক্ত লাগে।
—- ” হয়েছে ওদের কথা শেষ! কোথায় আমায় ভালো ভালো বুদ্ধি দিবি কিভাবে মিহিকে পটানো যায়।তা না এসব উল্টো পাল্টা বকে যাচ্ছিস তোরা আমার বন্ধু না শত্রু বুঝতেই পারছি না।”
কথা গুলো বিরক্ত নিয়ে বললাম রেহান।ওর কথা শুনে রনিত বললো,
—- ” তোর কি মনে হয় ও তোকে কোনোদিনও তোর হবে?তুই এভাবে সময় নষ্ট করতে থাক আর ওদিকে দেখবি এই মেয়ে একদিন অন্য কারো হাত ধরে চলে যাবে। ”
রেহান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” এতোই সহজ!রেহানের নজর একবার যখন ওর উপর পরেছে তখন তো ওকে নিজের করেই ছাড়বে।”
।
।
।
ক্লাস শেষ করে আমি আর তিহা হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।ভার্সিটি থেকে হোস্টেল বিশ মিনিটের পথ।বিশ মিনিটের মধ্যেই হোস্টেলে পৌঁছে গেলাম।রুমে গিয়েই তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে একনাগারে বলতে লাগলো……
চলবে,,,,,,