#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪১
.
আমি বেডে হেলান দিয়ে হাতে বই নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে আর আদ্রিয়ান আমার পায়ের নখ কেটে দিচ্ছে। আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। ও ওর কোলের ওপর আমার পা রেখে একহাতে পা ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে খুব যত্ন সহকারে নেইল কাটার দিয়ে নখ কেটে দিচ্ছে। আমার ব্যপারটাতে যেমন লজ্জা লাগছে ঠিক তেমনই অস্বস্তিও হচ্ছে। কারণ ও তো আমার স্বামী হয়। আর ও আমার পায়ে হাত দিচ্ছে ব্যপারটা মোটেও ভালো লাগছেনা আমার। কিন্তু ও তো ওই, যেটা একবার ঠিক করে সেটাই করে ছাড়ে। তাই আমি নিতান্তই একটা অবলা বাচ্চা। যার এখন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোন কাজই নেই।
আসল ব্যপারটা হলো ডিনার করে এসে আমি পড়ছিলাম। বেশ ঘন্টাখানেক পর আদ্রিয়ান এসে আমার ওপর এক গ্লাস দুধ খাওয়ানো নামক অত্যাচার টা চালানোর পর ও বলল,
— ” বেশ ঠান্ডা পরেছে এখন। টেবিলে বসতে হবেনা। বেডে এসে কম্বলের নিচে এসে পড়।”
আমি বইয়ের দিকে তাকিয়েই বললাম,
— ” সমস্যা নেই। খুব বেশি পড়া বাকি নেই আমি টেবিলেই পড়তে পারব।”
বলে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম। হঠাৎ করেই ও আমায় কোলে তুলে নিতেই আমি বেশ অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও আমায় বেডে বসিয়ে দিয়ে বইটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
— ” সবসময় আমি যেটা বলি ঠিক তার উল্টোটা বলে আমায় না রাগালে তোমার রাতের ঘুম হয়না তাইনা?”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
— ” আসে নাই তো। তুমি জানো তোমার ওই রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা না দেখা অবধি সবকিছু একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগে।”
ও আমার নাকটা টিপে দিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ অনেক দুষ্টুমি হয়েছে এবার ভালো ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ পড়াটা কম্প্লিট করো। ঘুমাতে হবে তো।”
বলে আমার গায়ে কম্বল দিতে গিয়ে ওর চোখ পরল আমার পায়ে। ভ্রু কুচকে ফেলে বলল,
— ” নখ কাটোনা কতদিন হলো?”
ওর কথা শুনে আমিও তাকালাম পায়ের দিকে। সত্যিই নখগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে। ইদানিং পড়াশোনার চাপ এতোটাই বেড়ে গেছে যে নিজের দিকে খেয়াল রাখার সময়টা খুব কমই পাচ্ছি। আমি ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললাম,
— ” এই ফ্রাই’ডে তেই কেটে ফেলবো। প্রমিস।”
— ” আজকে মান’ডে আর তুমি ফ্রাই’ডেতে নখ কাটবে তাইনা?”
বলে আদ্রিয়ান উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে নেইল কাটার বের করে এসে আমার পায়ে হাত দিতে গেলেই আমি সাথে সাথেই পা সরিয়ে ফেলে উত্তেজিত কন্ঠে বললাম,
— ” আরে কী করছো টা কী? প্ পায়ে হাত দিচ্ছো কেন? আমি নিজেই কেটে নিতে পারব।”
আদ্রিয়ান বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— ” চুপচাপ পড়তে থাকো। আমায় আমার কাজ করতে দাও।”
বলে ও আমার পা ধরে নিজের কোলের ওপর নিয়ে নিল। আমি আর কী বলবো। জানি কিছু বলে লাভ নেই তাই চুপচাপ শুধু দেখে যাচ্ছি ওর কান্ড। হঠাৎ ওর কথায় হুস এলো আমার। ও গম্ভীর কন্ঠে বলল,
— ” আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে পড়াটা শেষ করো।”
আমিও মুখ ফুলিয়ে রেখে পড়ায় মনোযোগ দিলাম। পড়াটা কম্প্লিট হতে হতে আমার পড়াটাও শেষ হয়ে গেল। আমি একটা হাই তুলে ওকে কিছু বলব তার আগেই ও আমার হাত ধরে সামনে নিয়ে নখ কাটতে নিলেই আমি বললাম,
— ” আদ্রিয়ান প্লিজ! প্লিজ! বা হাতেরটা কেটো না। অনেক কষ্টে বড় করে ডিজাইন করে কেটে রেখেছি।”
আদ্রিয়ান পাত্তা না দিয়ে আমার হাত চেপে ধরে রেখে বলল,
— ” এসব ফাল্তু স্টাইল কে শিখিয়েছে তোমাকে? এরপর জেনো হাত বা পায়ের নখ একটুও বড় না দেখি।”
বলে আমার এত সাধের নখগুলো সব কেটে দিলো। রাগে দুঃখে কিছু বলতেও পারছিনা আর সহ্যও করতে পারছিনা। শুধু কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। নখ কাটা শেষ হতেই আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
— ” হয়ে গেছে তোমার? এবার ঘুমোই?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
— ” রাগ হয়েছে আমার ওপর?”
আমি এবার একটু রেগে গেলাম। আমি ওর বুকে একটা কিল মেরে বললাম,
— ” সবসময় জ্বালাও তুমি আমায়। যতখুশি এখন জ্বালিয়ে নাও। যখন আমি থাকবোনা তখন দেখবো কার ওপর এসব টর্চারগুলো করো তুমি। যেদিন চিরকালের মতো হারিয়ে যাবো সেদিন বুঝবে।”
এটুকু বলার সাথে সাথেই ও আমার হাত ধরে একটানে বেডে ফেলে দিয়ে দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরল বেডের সাথে। ওর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম আমি, চোখ লালচে হয়ে আছে, ঠোঁট কাঁপছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মারাত্মক রকমের রেগে আছে আমার ওপর। ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ” আজ বলেছ বলেছ। ভবিষ্যতে এরকম কথা উচ্চারণ করলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবেনা। সারাজীবনের জন্যে কথা বলাটাই বন্ধ করে দেব তোমার যদি এরকম কথা মুখ দিয়ে বেড় হয়। মাইন্ড ইট।”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার এই সামান্য কথায় ও এতোটা ডেস্পারেট হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। আমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম,
— ” আদ্রিয়ান আমিতো জাস্ট…”
আর কিছু বলার আগেই ও আমার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে তারপর বলল,
— ” এতো ভয়ংকর কথা বলোনা জানপাখি। আমার সহ্য হয়না। তুমি ধারণাও করতে পারবেনা কতটা ভালোবাসি তোমাকে। কতোটা ডেস্পারেটলি চাই আমি তোমায়। তোমাকে ছাড়া মুহূর্তগুলো কল্পনা করাটাও আমাকে মৃত্যুসম যন্ত্রণা দেয়। তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে প্রতি মুহূর্তে তাড়া করে বেড়ায়। তোমাকে ছাড়ার বাঁচা তো দূরে থাক সে কথা কল্পণাও করতেও আমার আত্মা কেঁপে ওঠে। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা জানপাখি। আমি পারবোনা সেটা মানতে। শেষ হয়ে যাবো আমি। একদম শেষ হয়ে যাবো।”
এটুকু বলে ও আমার কপালে গভীরভাবে একটা চুমু দিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। ওর সারা শরীর হালক কাঁপছে। আমিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। ও একটু পরপর ওর উষ্ণ স্পর্শে ভরিয়ে দিচ্ছে আমাকে আর আমি চোখ বন্ধ করে ওর সেই ভালোবাসা সাদরে গ্রহন করছি। হঠাৎ আমার কী হলো জানিনা আমি ওর উন্মুক্ত কাধে আলতো করে খুব চুমু দিলাম। ও সাথেসাথেই থেমে গেল। তারপর আমাকে আরো জোরে জরিয়ে ধরে ওভাবেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলো। কান্না পাচ্ছে এই মুহূর্তে আমার। জানিনা কেন? কিন্তু চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এতো ভালোবাসে কেন ও আমাকে। যদি সত্যিই কোনোদিন আমার কিছু হয়ে যায়। বাঁচতে পারবেনা ও। একেবারেই পারবেনা। কিন্তু ওর কিছু হয়ে গেলেও তো আমি ঠিক থাকতে পারবোনা। অথচ কোনো একজনকে আগে যেতেই হবে তাইনা? প্রকৃতি এতো নিষ্ঠুর কেন? এই নিয়ম এতো নিষ্ঠুর কেন? কেন না চাইতেও নিজের আপন লোকেদের চির বিদায় দিতে হয় আমাদের? কেন?
___________________
আরও দুটো দিন কেটে গেল। আমি একয়েকদিন ইচ্ছে করেই আদ্রিয়ানকে আমার অনুভূতি নিয়ে কিছুই বলিনি। বলিনি যে ভালোবাসি আমি ওকে। যদিও নিজের ডায়রির পাতায় অনেক আগেই ওকে ভালোবাসার কথা লিখেছি। কিন্তু সরাসরি তো আর ওকে বলিনি। কারণ আমি চাই যে আমাদের সিক্স মান্হ এনিভার্সেরিতেই ওকে নিজের মনের কথাটা বলব। আর সেটি শুনে ও কতটা খুশি হবে তা ভাবলেই আমার মনও খুশিতে ভরে ওঠে। আজ আমাদের সিক্স মান্হ এনিভার্সিরি। জানিনা আদ্রিয়ানের মনে আছে কি না কারণ ও আমায় এখনও উইশ করেনি। তবে আজ রাতে আমি আদ্রিয়ানকে আমার মনের কথা বলবো। জাবিন, আপিদের বলে প্লান করিয়ে রেখেছি ওরাই আজ আমাদের রুমটা সুন্দরভাবে ডেকোরেট করে রাখবে। কারণ আজ আমার ক্লাস সন্ধ্যার পর আছে। আর আদ্রিয়ানের ল্যাবে যাবো। অনেকদিনের শখ ছিল আদ্রিয়ানের ল্যাবটা ঘুরে দেখার। কিন্তু সেই সুযোগটা আর হয়নি। কারণ আদ্রিয়ান আমায় নিতেই চাইতোনা ওর ল্যাবে। এমন কী মহামূল্যবান জিনিস আছে ওখানে কে জানে? অনেক ড্রামা করে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে রাজি করিয়েছি। প্রথমে ওখানে যাবো তারপর ওখান থেকে সোজা মেডিকেল। সুতরাং দুজনেই আজ বাড়িতে থাকবোনা। খাওয়ার টেবিলে হঠাৎ বাবা বললেন,
— ” ইফাজ, আদ্রিয়ান?”
ওরা দুজনেই একসাথে তাকালো বাবার দিকে। বাবা বললেন,
— ” তোমাদের বিয়ের পর তো তোমরা এখনও কোথাও ঘুরতে যাওনি। তাই আমি চাই তোমরা ঐসম বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসো। তোমাদের কী মত?”
ইফাজ ভাইয়া বললেন ওনার কোনো সমস্যা নেই। আর আদ্রিয়ান বলল ওরও সমস্যা নেই। আমরা দুজনেই খাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে পরলাম। বেড়োনোর আগে ইশারায় জাবিন আর আপিকে থামস আপ দেখিয়ে এসছি। আমি জানি ওরা ঠিক সুন্দরভাবে এরেঞ্জমেন্ট করে ফেলবে। গাড়িতে আদ্রিয়ান আমাকে বলল,
— ” অনি তুমি জেদ করছিলে তাই নিয়ে আসলাম। কিন্তু শর্ত মনে আছে? আমার পার্মিশন ছাড়া কোনো কিছুতে হাত দেবেনা।আর ভুল করেও এদিক ওদিক যাবেনা।”
— ” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। ল্যাবে তো না জেনো এমাজনে যাচ্ছি।”
সারাটাদিন আদ্রিয়ান আর আদিব ভাইয়ার সাথে ল্যাবে ভালো সময়ই কাটিয়েছি। ল্যাব থেকে আদ্রিয়ান আমাকে সোজা মেডিকেলে ড্রপ করে দিলো। ওর রাত অবধি কাজ আছে তাই গার্ডরাই আমাকে নিয়ে যাবে। তবে ওকে আজ ছাড়তে মন চাইছিল না। মনে হচ্ছিল এখন ছেড়ে দিলে হয়তো আর কোনোদিন ধরতে পারবনা। কিন্তু সবসময় কী আর মনের কথা শোনা যায়? আমি ক্লাসে যেতেই অরু, ইশু, ঐশি ওরা সবাই মিলে একেএকে আমায় জরিয়ে ধরে কনগ্রাচুলেট করলো সিক্স মান্থ এনিভার্সিরির। অরু বলল,
— ” কিরে ভাইয়া কী গিফট দিল?”
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
— ” এখনও উইশও করেনি খবিশটা। কী জানি মনে আছে কী না?”
ইশু বলল,
— ” আরে আছে আছে। এটা ভোলার মানুষ জিজু না। দেখ কোন সারপ্রাইজ এরেঞ্জ করছে হয়তো। ”
ঐশি বলল,
— ” তুই কী দিবি জিজুকে?”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
— ” ও অনেক দিন যাবত বলছিল কালো ঘড়ির কথা। তাই সেটাই কিনেছি। আর তার সাথে একটা লাভ লেটারের কার্ড যেখানে আমি আমার মনের সব কথা লিখেছি, আর ওর ফ্যাবরেট লাল গোলাপ ফুল। সব রুমে বেডের ওপর সাজিয়ে রেখে এসছি। ”
অরু খোঁচা মেরে বলল,
— ” আরে বাহ। আজ রাত তো ফুল রোমান্টিক হবে হ্যাঁ?”
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। এরপর স্যার এলো। ক্লাস শেষ করার পর আমরা থার্ড ফ্লোরে গিয়ে একটু রেস্ট করছি। স্যারের কাছে কাজ আছে তারপর চলে যাবো।একটু অস্হির লাগছে তাই এপ্রোন খুলে ওদের ওখানে বসতে বলে আমি ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর ব্যালকনিতে গেলাম। ব্যালকনি বললে ভুল হবে ছোটখাট ছাদই বলা যায়। ওখানে গিয়ে একটু হেটে নিজেকে রিফ্রেশ করছি। একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। আজ আদ্রিয়ান জানবে আমার মনে কথা। কী বলবে ও সব শুনে? কী করবে? শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরবে? আজ আমাকে সম্পূর্ণরুপে নিজের করে নেবে? কতটা খুশি হবে ও? এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান কল করেছে।মুচকি হেসে রিসিভ করে রেলিং এর কাছে গিয়ে দাড়ালাম। আদ্রিয়ান বলল,
— ” ক্লাস শেষ?”
— ” হ্যাঁ এক্ষুনি চলে আসবো?”
— ” তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেও জানপাখি। আমিও তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো। ”
আমি কিছু বলার আগেই কেউ আমার পিঠে হাত রাখল। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই কালো পোশাক পরে হুডি আর মাস্ক পরা দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল,
— ” সারপ্রাইজ। হ্যাপি সিক্স মান্থ ম্যারেজ এনিভার্সিরি।”
ওপাশ থেকে আদ্রিয়ান ক্রমশ “হ্যালো” বলে যাচ্ছে। আমি কাঁপা গলায় বললাম,
— ” ক্ কে আপনি..?”
আমার কথার উত্তর না দিয়ে সে বলল,
— ” তোমার গিফট নেবে না?”
বলে আমার গলা ধরে রেলিং এ চেপে ধরলো। আমি ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম,
— ” ন্ না না প্লিজ। ডোন্ট ডু দিস প্লিজ। আদ্রিয়ান..”
আদ্রিয়ান ওপাশ থেকে কিছু বলছে কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছি না। ভয়ে আমার শরীর অসার হয়ে আসছে। আরেকবার আদ্রিয়ান নাম নেওয়ার সাথেসাথেই লোকটা জোরে ধাক্কা মারলো আমায়। আর আমি ছিটকে নিচে পরে গেলাম মুখ দিয়ে আদ্রিয়ান শব্দটাই গগন কাঁপিয়ে বেড়িয়েছিল। কয়েক সেকেন্ড পর প্রচন্ড জোরে আঘাতে আমার নিশ্বাস আটকে গেল। সবটাই অন্ধকার লাগছে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। হয়তো এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো আমি। আদ্রিয়ানের বলা সেই কথাটাই বাজছে, “আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা জানপাখি। আমি পারবোনা সেটা মানতে। শেষ হয়ে যাবো আমি। একদম শেষ হয়ে যাবো।” আমি যেতে চাইনা আদ্রিয়ান। যেতে চাইনা আমি। প্লিজ আমাকে ধরে রাখো শক্ত করে ধরে ধরে রাখো। আমি হারিয়ে যাচ্ছি। আমি মরতে চাইনা। তোমাকে একা ছেড়ে যেতে চাইনা আমি। আমাকে বাঁচিয়ে নাও আদ্রিয়ান প্লিজ বাঁচিয়ে নাও।
#চলবে…
#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব: ৪২
.
স্তব্ধ ভোরে চারপাশটা একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে, সে এক অদ্ভুত নিরবতা, হৃদয়গ্রাসী নিস্তব্ধতা। তারমধ্যে হঠাৎ হঠাৎ পাখি কিচিরমিচির আওয়াজ করে উঠছে। বাইরে হালকা কুয়াশায় সবকিছুই ঝাপসা হয়ে আছে। সবকিছুই জেনো ভার ভার লাগছে এই মুহূর্তে। আদ্রিয়ান এক দৃষ্টিতে গভীরভাবে এই কুয়াশা পর্যবেক্ষণ করছে ও। দুটো হাত রেলিং এর ওপর। একটু পর পর ধোঁয়া ওঠা কফির মগটা হাতে নিয়ে একটা করে চুমুক দিয়ে আবার রেলিং এর ওপর রেখে দিচ্ছে। এই ঠান্ডাতেও গায়ে শুধু একটা চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি পরে আছে। ওর কী ঠান্ডা লাগছে না? নাকি সকল অনুভূতির উর্ধ্বে চলে গেছে ছেলেটা? আদ্রিয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সে কথাই ভাবছি আমি। কিন্তু ওকে কিছু বলতেও পারছিনা। চুপচাপ বসে আছি ব্যালকনিতে রেখে দেওয়া ওই চেয়ারটাতে। বেশ অনেকক্ষণ পর আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকাতেই আমি ইশারা করে বললাম গায়ে কিছু পরতে। কিন্তু আদ্রিয়ান মলিন একটা হাসি দিয়ে আমার সামনে এসে বসল। তারপর নরম গলায় বলল,
— ” ভোর দেখা হয়ে গেছে না? এবার ভেতরে যাই?”
আমি মাথা নাড়লাম। ও আমাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে সাবধানে বেডে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিলো। তারপর কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল
— ” এতো সকালে না উঠলে হতোনা? আরেকটু ঘুমোতে পারতেতো।”
আমি ইশারাতে বোঝালাম যে ঘুম আসছিল না। আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা বসো আমি একটু ওয়াসরুম থেকে আসছি।”
আমি মাথা নাড়লাম। ও ওয়াসরুমে চলে গেল। আর আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেললাম। মূত্যু! প্রকৃতির একটা চিরন্তন ও অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। “মানুষ মরনশীল” “Man is mortal” ছোটবেলা থেকেই এই চিরন্তন সত্যিটা জেনে বড় হই আমরা। মৃত্যু এমন একটা জিনিস যেটার সাধ সবাইকেই গ্রহণ করতে হয়। আর সবাই সেটা জানেও। কিন্তু মজার ব্যপার হলো সবটা জেনেও মৃত্যুকে ভয় পায় এড়িয়ে চলে। আবেগের বসে, রেগে বা অহংকার করে মানুষ যতই বলুকনা কেন যে ‘ আমি মরতে চাই বা মরতে ভয় পাইনা।’ সত্যি তো এটাই শেষমেষ কেউই মরতে চায়না, মৃত্যু সবার কাছেই ভয়ের। আবেগে ভেসে গিয়ে সুইসাইড করে ফেলা মানুষটাও যখন বুঝতে পারে সে সত্যিই মারা যাচ্ছে তখন সেও বাঁচতে চায়, বাঁচার জন্যে কাতরাতে থাকে। বীর সৈনিক দেশের জন্যে যখন বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে থাকে তখন তারমনেও মরার জন্যে আফসোস হয়তো থাকেনা কিন্তু বাঁচার একটা ইচ্ছা ঠিকই থাকে। বাঁচার আকাঙ্ক্ষা আর মৃত্যুভয় সকল মানুষের মধ্যেই থাকে। আর আমিও প্রায় মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ করেই এসছিলাম বলতে গেলে। সেই ভয়ংকর যন্ত্রণার কিছুটা উপলদ্ধি করতে পেরেছিলাম। সেদিন যন্ত্রণায় মিনিটের মতো কাতরানোর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমিতো ভেবেছিলাম মরেই যাচ্ছি কিন্তু না সেটা আর হয়নি। এযাত্রায় আদ্রিয়ানের আর আমার সকল কাছের মানুষের ভালোবাসার জোরে বেঁচে ফিরে এসছি আমি। এসব ভাবতে ভাবতে হসপিটালের দিনগুলোর স্মৃতিতে ডুব দিলাম-
শরীর প্রচন্ড ভার লাগছে। অনেক চেষ্টা করেও চোখ খুলে তাকাতে পারছিনা। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। এতোটাই দুর্বল লাগছে যে মনে হচ্ছে একটা আঙ্গুল নাড়াতেও আমার অনেক শক্তির প্রয়োজন। মুখের ওপর কিছু একটার উপস্হিতি অনুভব করছি। অনেকটা সময় নিজের শরীরের সাথে যুদ্ধ করে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। সবকিছুই ঝাপসা লাগল কিছুক্ষণ। এরপর আস্তে আস্তে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেল। চোখ খুলেই একজনকে দেখার ইচ্ছেই সবার আগে জাগলো মনে। সেটা হলো আদ্রিয়ান, কিন্তু চারপাশে অজস্র যন্ত্রপাতি চোখে পড়ল শুধু। এইমুহূর্তে অবাক হওয়ার মনোস্হিতি নেই আমার। সবটাই কেমন ঘোলাটে লাগছে। অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আছে মুখে। পাশে তাকিয়ে দেখি একজন মহিলা ঝিমছে আমার পাশে বসে। নার্সেদের মতো পোশাক। তাহলে কী এটা হসপিটাল? আমি কী হাসপাতালে আছি। ওপর পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আদ্রিয়ান আমার হাত শক্ত করে ধরে ফ্লোরে হাটু ভেঙ্গে বসে বেডে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। আমি আরেকহাত ওঠানোর চেষ্টা করতেই টান লাগল। ব্যাথায় ‘আহ’ করে উঠলাম। বুঝতে পারলাম যে হাতে স্যালাইনের ক্যানেল লাগানো। আমার শব্দে আদ্রিয়ান আর নার্স দুজনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। আদ্রিয়ান চোখ ঝাপটে আমার দিকে তাকিয়ে বেডে উঠে বসে আমার গালে হাত রেখে বলল,
— ” জানপাখি। তুমি উঠেছো? এই তাকাও আমার দিকে একটু কথা বলো?”
নার্স হেসে দিয়ে বললেন,
— ” স্যার এবার তো শান্ত হন। ম্যামের জ্ঞান ফিরে এসছে দেখুন? আমি ডক্টর ডাকছি।”
বলে উনি চলে গেলেন। আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে। কী অবস্থা করেছে ও নিজের? চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে, চোখ লালচে হয়ে আছে, চুলগুলো উস্কোখুস্কো হয়ে আছে। সারা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি হয়ে আছে। যদিও এভাবেও খুব কিউট লাগছে ওকে কিন্তু এরকম চেহারা করেছে কেন নিজের? ও আমার হাত নিজের দুটো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে নিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। আমি চেয়েও কিছু বলতে পারছিনা, শ্বাস জোরে জোরে নিতে হচ্ছে, শরীর অনেকবেশিই দুর্বল লাগছে, মনে হচ্ছে অনেকদিন পর চোখ খুলেছি আমি। ওকে কিছু বলতে নেবো তার আগেই ডক্টর চলে এলো। ডক্টর এসে মুখে হাসি রেখেই বললেন,
— ” মিস্টার জুহায়ের এবার তো একটু সরুন ওনাকে একটু চেক করতে দিন প্লিজ।”
আদ্রিয়ান আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
— ” ন্ না আমি ছাড়বোনা ওকে।”
ডক্টর মুচকি হেসে বলল,
— ” ডোন্ট ওয়ারি মিস্টার জুহায়ের আই হোপ উনি ঠিক আছেন উনি। চেক না করলে তো আমি কিছু বুঝতে পারবোনা।”
আদ্রিয়ান একটু চেঁচিয়ে বলল,
— ” বললাম তো না? ওকে আর ছাড়বোনা আমি। যেতে দেবোনা আমি ওকে আর কোথাও। কাউকে আসতে দেবোনা ওর কাছে।”
আমি নিরব দর্শকের মত দেখছি সবটা। জ্ঞান ফিরে এলেও কিছু বলার বা করার মত ক্ষমতা নেই আমার। তখনই ইফাজ ভাইয়া এলেন এসে বললেন,
— ” আদ্রিয়ান? আমাকে একটু দেখতে দে? আর কেউ যাবেনা ওর কাছে। শুধু আমি যাবো।”
ইফাজ ভাইয়ার কথায় হয়তো আদ্রিয়ান স্বস্তি পেলো হয়তো ও বাধ্য ছেলের মত সরে দাঁড়ালো। ইফাজ ভাইয়া আমাকে চেক করে বললেন,
— ” থ্যাংক গড ও এখন টোটালি আউট অফ ডেঞ্জার। কেবিনে শিফট করা যাবে তবে কাল সকালে।”
আমি আবার চোখ বন্ধ করে রাখলাম। খোলা রাখার শক্তি পাচ্ছিনা এখন। এরপর আর কিছু মনে নেই আমার।
হসপিটালের কেবিনে চুপচাপ শুয়ে আছি আমি হাতে, পায়ে, মাথায় শরীরের বিভান্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে আছি। কালকের মতো অতোটা দুর্বল লাগছেনা যদিও। তবুও যথেষ্ট ক্লান্ত। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এটা জেনে যে আজসহ আমি চারদিন হল হসপিটালে আছি। মানে প্রায় দুদিন অজ্ঞান ছিলাম আমি? ডক্টর নার্সরাও কীভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে। যেনো আমি খুব বড় কিছু জয় করে ফেলেছি কিন্তু করেছিটা কি? বাড়ির সবাই, আমার বাড়ির সবাই এসেছে। আম্মু, মামনী দুজনেই কান্নাকাটি করলো। কিন্তু আমি ওদের শান্তনা দিয়ে কিছু বলতে পারছিনা। আমাকে সবাই অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কিন্তু আমি কারো কথার উত্তর দিতে পারিনি। কারণ কথা বলতে নিলেই গলায় ব্যাথা পাচ্ছি। ইফাজ ভাইয়াকে ইশারায় সেটা বলতেই ভাইয়া বললেন যে আমি প্রচন্ড জোরে চিৎকার দেওয়ার ফলে ভোকাল কর্ডে আঘাত লেগেছে। যার জন্যে কিছুদিন কথা বলতে পরবোনা আমি। তাই কেউ আর আমার সাথে কথা বলল না। তবে ওদের চোখে মুখে আমার জন্য চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ছিলো।সকালে চোখ খুলে আদ্রিয়ানকে দেখতে পাইনি এখনও। সকালে গড়িয়ে দুপুর চলে এলো আদ্রিয়ান এখনও আসেনি। আপি আর ইফাজ ভাইয়া থেকে বাকি সবাই বাড়ি চলে গেল। এরপর আমাকে খাওয়ানোর জন্যে আপি সুপ নিয়ে এলো। আমি আপির দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম ও কোথায়? আপি মুচকি হেসে আমার মুখে সুপ দিয়ে বলল,
— ” ছোট আব্বু আর বাবা অনেক কষ্টে ধরে বাড়িতে নিয়ে গেছে আজ। গোসল করিয়ে খাইয়ে তারপর পাঠাবে এখানে। কিন্তু এতোসময় লাগছে কেন? হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। তুই জানিস এই তিনদিন কী কী করেছে ও? পুরো পাগলই হয়ে গেছিল। বাড়িতো যায়ই নি। জোর করে মুখে একটুকরো পাউরুটি আর এক গ্লাস পানি খাইয়েছি কাল। আর একটা দানাও কাটেনি। সারাদিন রাত হসপিটালে পরে ছিলো। নাওয়া,খাওয়া,ঘুম সব বাদ দিয়ে।”
আমি অবাক হয়ে শুনছি আপির কথা। ইফাজ ভাইয়াও এসে একটা চেয়ারে বসে ছোট্ট শ্বাস ফেলে আবার বলল,
— ” আমরা যখন হসপিটালে আসি তখন তুই ইমার্জেন্সিতে ছিলি। আদ্রিয়ানও ভেতরে ছিল। যদিও কেউ এলাউড নয় কিন্তু আদ্রিয়ানের জেদতো জানিস। তারওপর আমিও ডক্টরদের মানিয়েছে। কিন্তু ইমার্জেন্সিতে ওকে ধরে রাখতে হয়েছে কারণ বারবার ও তোর কাছে যাচ্ছিল, তোকে ডাকছিল। বার বার বলছিল, ” এই জানপাখি কথা বলো আমার সাথে, দেখো ওরা কীসব বলছে, তুমিতো বলেছিলে না আমায় ছেড়ে যাবেনা? প্লিজ তাকাও।” এরপর যখন তোকে ওটিতে নেওয়া হল। আদ্রিয়ানও যেতে চেয়েছিল কিন্তু ওকে যেতে দেয়নি। ছেলেতো শুনবেই না চারপাঁচজন ওয়ার্ডবয় মিলে ওকে ধরে রেখেছিল। এমনিতেই তোর অবস্থা এতো খারাপ ছিল তারওপর আদ্রিয়ানের পাগলামো। ওটির দরজা বন্ধ হবার পরেও ও থামেনি দৌড়ে ভেতরে যেতে চাইছিল কিন্তু আদিব অর্ণব আর সজীব মিলে ওকে ধরে আটকে নিয়েছে ওকে। কিন্তু এতো মানুষ মিলেও ওর সাথে পেড়ে উঠতে বারোটা বাজছিল। একটা কথাই বলছিল, ” ছাড়ো আমাকে। যেতে দাও ওর কাছে। আমার জানপাখির কিচ্ছু হবেনা, কিচ্ছু হয়নি ওর, কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে, ওর যদি কিছু হয় তো হসপিটাল জ্বালিয়ে দেবো আমি, সব শেষ করে দেব, সবাইকে খুন করে ফেলবো আমি। জাস্ট লিভ মি ড্যাম ইট।” শেষমেশ বাধ্য হয়ে ডক্টরকে বলে ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে একটা কেবিনে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল নাকি ওকে। আমি ওটিতে ছিলাম তাই জানিনা হিয়াই বলল। ”
আপি আমার মুখে আরেক চামচ সুপ দিয়ে বলল,
— “ওটির ভেতরে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে টেনশনে ছিলাম। এরপর ইফাজ বলল অপারেশন সাকসেসফুল হলেও এখনও তুই সেফ নস। জ্ঞান ফেরার আগে কিছু বলতে পারবেনা। এরপর তোকে আইসিইউ তে নেওয়া হল। আটচল্লিশ ঘন্টা বলেছিল ডক্টর। আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে আবার পাগলামো শুরু করলো। আইসিইউতে কারো থাকাই নিষেধ কিন্তু বাধ্য হয়েই আদ্রিয়ানকে রাখতে হয়েছে। ওখানে গিয়ে চুপচাপ তোর হাত ধরে বসে থাকত আর হঠাৎ করেই একবার ডেসপারেট হয়ে তোকে ঝাকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করল। আদ্রিয়ানকে ওভাবে কাঁদতে এর আগে দেখিনি আমি । তখন ডক্টর আবারও ওকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছিল। কিন্তু পাগলটা উঠে আবারও তোর কাছেই গেছে। অনেক জোর করে তোর দোহাই দিয়ে এক পিস পাউরুটি আর পানি খাইয়েছিলাম। একদিন পুরো সেন্সলেস থাকার পর পরের দিন রাতে আল্লাহর রহমতে তোর জ্ঞান ফিরল। শুধু আমরা না গোটা হসপিটাল তোর প্রতি আদ্রিয়ানের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল।”
আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে আছি। আমার প্রতি ওর ভালোবাসা যে অনেক গভীর সেটা জানতাম আমি। কিন্তু আমার জন্যে ও এতোটা ডেসপারেট হতে পারে, পাগলামো করতে পারে না শুনলে অনুমানও করতে পারতাম না। এতো ভালোবাসে কীকরে কেউ? আদোও সম্ভব? ওর এই সীমাহীন ভালোবাসার সীমাহীনতা ধারণ করার ক্ষমতা আছে তো আমার মধ্যে?
#চলবে…
#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৩
.
আমার চোখ দিয়ে ধীর গতিতে একফোটা জল গড়িয়ে পরল ওদের মুখে এসব কথা। কেমন একটা অদ্ভুত গিল্টি ফিল হচ্ছে। আমার জন্যে, শুধুমাত্র আমার জন্যে ছেলেটা এতো কষ্ট পেয়েছে। নিজেকে ভাগ্যবতীও মনে হচ্ছে যে আমার স্বামী আমায় এতোটা ভালোবাসে। আর তারসাথে লজ্জাও লাগছে সবার সামনে আমার জন্যে এরকম পাগলামো করছিল ও? সবাই কী ভাবছিলো কে জানে? ইফাজ ভাইয়া বলে উঠল,
— ” আরে কাঁদছিস কেনো তুই? এইজন্যই এখন তোকে কিছু না বলাই ভালো ছিল। তুই অসুস্থ। কান্নাকাটিটা তোর জন্যে ভালো নয় প্লিজ চুপ কর এখন।”
আপি আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,
— ” হুম এবার চুপচাপ শেষ করতো সুপটা। তারপর রেস্ট কর।”
আমি কিছু বললাম না। যদিও চাইলেও কিছু বলতে পারতাম না। ওদের ইশারা করে আমি যা বলি বেশিরভাগই ওরা বোঝেনা। না আপি আর না ইফাজ ভাইয়া তাই বিরক্ত হয়ে আমি চুপ হয়ে গেলাম। আপি আমায় খাইয়ে দেওয়ার পর আমি বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। কিন্তু ঘুম এলোনা কারণ বেশ অনেকটা সময় ঘুমিয়েই ছিলাম। ইফাজ ভাইয়া ওনার কাজে চলে গেল আর আপি কিছক্ষণ বসে থাকার পর বলল,
— ” তুই রেস্ট কর আমি আসছি হ্যাঁ?”
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়লাম। আপি চলে যেতেই আমি আবারও বালিশে হেলান দিলাম। আমার হাতে এখনও স্যালাইন এর ক্যানেল লাগানো। বিরক্ত লাগছে এটাকে। হাউ ডিসগাস্টিং! হঠাৎ করেই সেদিন রাতের ঘটনা মনে পরতেই কেঁপে উঠলাম। মেরে ফেলতে চেয়েছিল আমাকে ওরা? হ্যাঁ মারতেই তো চেয়েছিল! এতোটা উঁচু থেকে ফেলে দিল তো মারার জন্যেই? কিন্তু আমায় মেরে কী লাভ ওদের? ওরাকি জানে যে ফাইলটা নেই আমার কাছে? আর সেজন্যই? এ যাত্রায় তো বেঁচে গেছি কিন্তু এভাবে আর কতদিন বাঁচতে পারব? আমার নিজের চেয়ে বেশি এখন আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভয় করে। ও একদম শেষই হয়ে যাবে যদি আমার সাথে নূন্যতম খারাপ কিছু ঘটে তো। খুব বেশিই ভালোবাসে আমাকে ও।
দুপুর পেরিয়ে বিকেলে হয়ে গেলেও আদ্রিয়ানের কোনো দেখা পেলাম না। চোখ বন্ধ করে নানারকম কথা ভাবছি হঠাৎ কপালে কারো উষ্ণ স্পর্শে ঝট করে চোক খোলে তাকালাম। তাকিয়ে আদ্রিয়ান আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে মুখে সেই মলিন ভাব এখনও আছে। আমি কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে একটু হাসলাম উত্তরে ওও একটা মলিন হাসি দিলো। আমি হাতের ইশারায় ওকে পাশে বসতে বললাম। ও আমার পাশে বসে আমার দিকে ঝুকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” কেমন আছো এখন?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম ভালো আছি আর হাতের ইশারায় বোঝালাম আমি কথা বলতে পারছিনা। আদ্রিয়ান আবারও ধীর গলায় বলল,
— ” আমি জানি। ভাইয়া বলেছে আমায় চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।”
কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানের মুখটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। এই চারদিনে ওর মুখের পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করলাম। তারপর আস্তে আস্তে ওর গালের ওপর হাত রাখলাম। ওর খোঁচা খোঁচা বেড়োনো দাড়িতে কিছু সময় হাত বুলিয়ে। তারপর হাত আর মুখের ইশারায় বোঝালাম যে নিজের এ অবস্থা করেছো কেন? আদ্রিয়ান আমার গালে হাত রেখে বলল,
— ” আমি একদম ঠিক আছি। তুমি যতোক্ষণ ঠিক থাকো ঠিক ততোক্ষণ আমিও ঠিক থাকি। রুপকথার গল্পে পড়নি একটা ভোমরাতে প্রাণ নিহিত থাকে। ঠিক আমার প্রাণও তোমার মধ্যেই নিহিত। আমার সেই প্রাণভোমরা তুমি। তুমি যতক্ষণ ঠিক থাকো আমিও ঠিক থাকি আর তোমার কিছু হয়ে গেলে আমিও সেই দহনে পুড়ে যাই জানপাখি।”
আমি একটু অবাক হলাম। আমার ইশারায় বলা কথা এতো সহজেই বুঝে গেল। তারওপর ওর এই আবেগ মিশ্রিত কথা। সত্যিই হৃদয়স্পর্শি। আমার কী হলো জানিনা আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবারও কেঁদে দিলাম ও আমার চোখের জল খুব যত্ন সহকারে মুছে দিয়ে বলল,
— ” কেঁদোনা প্লিজ। তোমাকে কাঁদতে দেখলে যে আমার কষ্ট হয়। আমাকে কষ্ট দিকে ভালোলাগে তোমার?”
আমি মাথা নেড়ে না করলাম। তারপর ওকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম ও খেয়েছে কী না? ও মুচকি হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। এরপর কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ঘাড়ের কাছে মুখ গুজে দিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
— ” আ’ম সরি। আমি তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনি। আমি বলেছিলাম তোমার কিচ্ছু হতে দেবোনা কিন্তু.. এইজন্যই ঠিক এইজন্যই তোমাকে আমার জীবনে জড়াতে চাইনি আমি। নিজের থেকে দূরে রাখতে কষ্ট হতো কিন্তু এটা ভেবে তো স্বস্তি পেতাম যে তুমি সুরক্ষিত আছো ভালো আছো কিন্তু এখন তো প্রতি মুহূর্ত তোমাকে হারানোর ভয়ে কাটে আমার। ইশরাক কে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা সহ্য করে নিতে পারলেও। তোমাকে হারানোর ভয়টাও যে আমার সহ্য হয়না। কেনো এলে আমার জীবণে? কেনো শুনলেনা আমার কথা? কেনো?”
আমার খুব খারাপ লাগছে। ওর কথার কিছু না বুঝলেও বলতে ইচ্ছে করছে যে এতে তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ যদি কারো থাকে সেটা আমারই। কিন্তু চেয়েও বলতে পারছিনা। ওকে ওকে আকড়ে ধরে আশ্বাস দিলাম যে আমি ঠিক আছি।
অরু, ঐশি, ইশু এসে দেখে গেছে। এরপর আরও তিনদিন হসপিটালেই ছিলাম। রূপও একবার দেখতে এসছিল কিন্তু ওকে দেখে আদ্রিয়ান ভীষণই বিরক্ত হয়েছেন। কোনোরকম কথা বলিয়ে একপ্রকার তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ এরকম ব্যবহার কেন সেটাই বুঝলাম না। আগের ঘটনার জন্যে তো সরি বলেছে ও। যাই হোক এই তিনদিন সবাই পালাক্রমে থাকলেও আদ্রিয়ান টুইন্টিফোর সেভেন আমার কাছেই ছিল। ওকে কেউ চেষ্টা করেও সরাতে পারেনি। আর একয়েকদিনে আমি আদ্রিয়ানের কেয়ারিং, ভালোবাসা, পাগলামোর নতুন রুপের সাথে পরিচিত হয়েছি। এরপর বাড়িতে আনার পর আরো দুদিন কেটে যায়। পুলিশ এসছিল জিজ্ঞাসাবাদ করতে কিন্তু আদ্রিয়ান ওদের আমার সাথে কথা বলতে দেয়নি। বরং বলেছে যে আমি পরে গেছিলাম। ইট ওয়াজ জাস্ট এন এক্সিডেন্ট। আমি অবাক হলেও কিছু বলিনি কারণ আদ্রিয়ান যা বলছে নিশ্চয়ই কিছু ভেবেই বলছে? আমি এখনও হাটতে পারিনা। ইফাজ ভাইয়া বলেছেন মিনিমাম আরও একমাস লাগবে। ভাগ্যভালো যে মারাত্মক কিছু হয়নি তাহলে তিনচার মাস লাগতে পারত বা হয়তো এই ডান পা দিয়ে সুস্হভাবে কোনোদিন হাটতেও পারতামনা আমি। আর কথাটাও বলতে পারছিনা এখনও। এটা নিয়ে কেউই কিছু বলতে পারছেনা। তবে কিছু ব্যায়াম, ঔষধ দিয়েছে, খুব শীঘ্রই কথা বলতে পারব বলেই ডক্টরদের বিশ্বাস। তবে অদ্ভুত ব্যাপার আমার ইশারায় বলা কথাগুলো বুঝতে সবাই হিমশিম গেলেও আদ্রিয়ান সহজেই বুঝে যায় সবকিছু। জেনো ও আমার চোখের ভাষা সহজেই পড়তে পারে। ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার। আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” সকালে তো এখনও চুল বাধা হয়নি তাইনা? ওয়েট।”
বলে চিরুনি নিয়ে আমার পেছন দিকে বসে খুব সুন্দর করে চুলগুলো আচড়ে বেধে দিলো। এইসব কাজ এখন ওকেই করতে হয় কারণ আমার হাতেও ব্যান্ডজ। তাই খাইয়ে দেওয়া, চুল বাধা, শরীরে লোশন লাগিয়ে দেওয়া, ব্রাশ করানো, তবে গোসরে গোসলে আর চেঞ্জিং হেল্প করার কাজটা আপিই করে। আমার চুল বাঁধা শেষ করে আমায় আস্তে করে ঘুরিয়ে নিজের বুকে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
— ” তুমি খুব বাজে জানো? ভীষণই বাজে। আমার এতটা কাছের হতে কে বলেছিল? কাউকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসার যে কী জ্বালা সেটা এখন বুঝতে পারি। অতিরিক্ত ভালোবাসি আমি তোমাকে। সীমাহীন ভালোবাসি আর এই সীমাহীন ভালোবাসার সীমাহীনতায় আমি নিজেই জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।”
আমি একটু অবাক হলাম ওর এসব কথায়। তবুও ওর বুকের সাথে মিশে থেকেই ওর কথা মন দিয়ে শুনছি। ও একটা শ্বাস নিয়ে আবারও বলল,
— ” জানো ফোনে যখন তুমি চিৎকার করছিলে তখন আমার অবস্থা কী হয়েছিল। আমি মেডিকেল গেইটের বাইরের ছিলাম। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে। আমাদের ছিক্স মান্থ এনিভার্সিরি ছিলো সেদিন। কতো প্লানিং ছিল জানো? আদিব, ভাইয়া, বউমনি, জাবিন ওদের দিয়ে খুব সুন্দর করে ছাঁদটা সাজানোর প্লান করেছিলাম। তোমার সাথে সময় কাটাবো বলে। তোমার জন্যে একটা শাড়িও কিনেছিলাম আমি। যেটা তুমি লাস্ট টাইম মলে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দিখছিলে, নেভি ব্লু এর ওপর হোয়াইট স্টোনের কাজ? ওটাই।”
আমি বেশ অবাক হয়েছি। অবাক দৃষ্টিতেই বুক থেকে মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম।প্লানিং তো আমিও করেছিলাম। রুম সাজিয়েছি, ঘড়ি, ফুল, কার্ড কিনেছি। সব কোথায়? আদ্রিয়ান দেখতে পেলেতো আমাকে বলতো না? ওর হাতে তারমানে এসব যায়ই নি। কিন্তু কোথায় সব? আমার হুস এলো আদ্রিয়ানের কথায়,
— “ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল আমার। তোমাকে হারানোর ভয়ে। আর যখন তুমি আমার নাম নিয়ে সেই বিকট চিৎকারটা দিয়েছিলে তখন আমার হাত থেকেও ফোনটা পরে গেছিল। কয়েক মুহূর্তের জন্য পাথর হয়ে গেছিলাম আমি। হাটু ভেঙ্গে ওখানেই বসে পরেছিলাম। এরপর যখন তোমার কথা মনে পরলো তখন দৌড়ে ভেতরে গিয়ে কিছু লোকের ভীর দেখে থমকে গেছিলাম। আমার অবচেতন মন আমাকে টেনে ওখানে নিয়ে গেছিল। কিন্তু ওখানে গিয়ে তোমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে অবস্থা হয়েছিল আমার আই জাস্ট কান্ট এক্সপ্লেইন ইউ। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে সামলে ভেতরে নিয়ে গেছিলাম তোমাকে। আর এরপর এতোকিছু হয়েছে যে নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। বুঝতে পারছিলাম না কী করছি কী বলছি। আমার মাথায় শুধু এটুকুই চলছিলো আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ। জাস্ট ইউ। আমার প্রাণটাই চলে যাচ্ছিলো। তোমার কিছু হয়ে গেলেতো আমি মরেই যাবো। বারবার একটাই প্রার্থনা করি আল্লাহ জেনো তোমার আগে আমাকে…”
আমি সাথেসাথেই আদ্রিয়ানের মুখ চেপে ধরলাম। ছলছল চোখে মাথা নেড়ে না বললাম। আদ্রিয়ান কিছু না বলে আমায় বুকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। আমিও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখের জ্বল ছেড়ে দিলাম। এতো স্বার্থপর কেনো ছেলেটা? শুধু নিজের কষ্টটাই দেখছে? ওর কিছু হয়ে গেলে যে আমিও শেষ হয়ে যাবো সেটা কেন বোঝেনা ও?
____________________
আদ্রিয়ান ল্যাবে গেছে। বিকেলে আপির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। জাবিন গেছে টিউশনিতে। আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে আছে এখন। কারণ আমার সেই ফুল, কার্ড, ঘড়ি বেডে ছিল। আর আমার এক্সিডেন্টের পর এই রুমে ছিলোনা কেউ তাই বেড পরিষ্কার করার সময় মনি এগুলো সরিয়ে রেখেছে কোথাও একটা। আপির কাছে এটা শুনে মনিকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিলাম কিন্তু কোথায় রেখেছে মনে করতে পারছেনা। কতো অনুভূতি আর ভালোবাসা নিয়ে রেখেছিলাম ওগুলো। এভাবে হারিয়ে গেল? দূর। আপি মাথার চুল নাড়তে নাড়তে বলল,
— ” সত্যি কথা বলতো অনি? তুই কী সত্যিই পরে গেছিলি নাকি তোকে কেউ ধাক্কা দিয়েছিল? আমার তো মনে হচ্ছে ওরাই..”
আমি আপির দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লাম। আপি চমকে গিয়ে বলল,
— ” কী বলছিস কী? কিন্তু তুই তো হারিয়ে ফেলেছিস ফাইলটা? তাহলে তোর পেছনেই পরেছে কেনো? আর মার্ডার?”
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। আপি বলল,
— ” অনি এবার তুই আদ্রিয়ানকে সবকিছু বলেই দে। বড় সর কোনো অঘটন ঘটার আগেই।”
আমি কিছু না বলে আপির পেট জরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আর সেই অতীতে ফিরে গেলাম যার দ্বায় আমাকে এখনও নিতে হচ্ছে। ২ আগস্ট ২০১৮। যা আমার জীবনের এক অভিশপ্ত দিনও বলা যায়। যার দ্বায় আমি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি।
#চলবে…