ভালোবাসি তোকে পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
5005

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৯
.
রাতের পরেই ভোর আসে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আর বলা হয় যে রাত যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় ভোর নাকি ঠিক ততটাই ঝলমলে আর উজ্জ্বল হয়। কথাগুলো কতটা সত্যি আমি জানিনা কিন্তু আজকের সকালটা আমার কাছে খুব বেশিই স্পেশাল ছিল। এমন মনে হচ্ছে যেন ঘোর অন্ধকারের পর আজ ঝলমলে আলো এসছে আমার জীবনে। এখনও ওনার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি আমি। ওনার এখনও ঘুম ভাঙেনি আমার আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ঘুমন্ত এই মুখটা দেখে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা লাগছে। ওনার কপালে পরে থাকা এলোমেলো চুলগুলো নেড়ে দিলাম। পাতলা একেবারে হালকা পিংক আফা ছড়ানো ঠোঁটটা জেনো কেউ এঁকে বসিয়ে দিয়েছে। চেহারার সাথে একদম পার্ফেক্ট, সোজা সুন্দর নাক, হালকা লালচে কান, ঘন ভ্রু। সবমিলিয়ে আস্ত একটা কিউটের ডিব্বা। এতো কিউট হতে আছে? আয়নার নিজেকে দেখলে নিজেরই নিজর প্রতিবিম্ব নিয়ে জেলাস ফিল হয়। এতো কিউট হাজবেন্ট কেনো আমার? হোয়াই? মাত্র তিনটে ওয়ার্ড, আই লাভ ইউ। এটুকুই আমার মনটাকে এতো ভালো করে দিলো? আমার দিনটাকে এতো চমৎকার সুন্দর করে তুলল? নাকি যার মুখ থেকে শুনেছি সেই মানুষটাই আমার কাছে খুব বেশিই স্পেশাল ছিল? কী জানি? আচ্ছা কাল উনিতো বললেন শুরু থেকেই ভালোবাসেন। ভালোই যখন বাসতেন তাহলে বিয়ের পর আমায় মানতে কেনো চান নি? যাই হোক এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাবোনা শুধু এই সময়গুলো উপভোগ করব, ওনার ভালোবাসা উপভোগ করবো। এসব ভাবতে ভাবতেই চুলে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখলাম উনি মুচকি হাসছেন আমার দিকে তাকিয়ে। আমার মাথায় হালকা করে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,

— ” সবসময় এতো কী ভাবো বলোতো? প্রায়ই চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাও?”

আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। কীকরে বলব আমার সব চিন্তা ভাবনার জায়গাতো উনিই দখল করে নিয়েছেন। উনি আমার থুতনি ধরে মুখটা একটু উঁচু করে বললেন,

— ” এমনিতেতো তোমায় পড়ার জন্যে ডেকে তুলতে তুলতে আমি হাফডেট হয়ে যেতাম। আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠলে যে।”

আমি নিচু গলায় বললাম,

— ” আসলেই এমনিই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।”

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” আমার বুকে ঘুমাতে তোমার ঘুমাতে প্রবলেম হয়েছে?”

আমি তাড়াতাড়ি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম,

— ” নাহ নাহ আমার তো খুব ভালো লেগেছে।”

বলে সাথে সাথে চুপ হয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি আমার চুলে আঙুল নাড়াতে নাড়াতে বললেন,

— ” সত্যি? তাহলে তো আজ থেকে রোজ রাতে তোমাকে বুকে নিয়েই শুতে হবে।”

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

— ” উঠুন তো! ল্যাবে যাবেন না নাকি?”

বলে আমি উঠে বসে বললাম,

— ” আপনি যান ফ্রেশ হয়ে নিন আমি কফি আনছি।”

উনি একটা হাই তুলে উঠে বসে বললেন,

— ” না আমি একবারে নিচে থেকে ব্রেকফাস্ট করে চলে যাবো। আজ তো ফার্স্ট ক্লাস তাইনা?”

আমি চুলে কাঠি লাগাতে লাগাতে বললাম,

— ” হ্যাঁ কেনো?”

— ” যাওয়ার সময় আমি তোমাকে ড্রপ করে দেবো কিন্তু আসার সময় গার্ড পাঠিয়ে দেবো ওরাই নিয়ে আসবে তোমাকে।”

আমি একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে বললাম,

— ” আদ্রিয়ান আমি একাই আসতে পারবো। গার্ডের দরকার নেই। আমি সিএনজি তে চলে আসবো।”

আদ্রিয়ান এবার চোখমুখ শক্ত করে বলল,

— ” এটা আমার ওর্ডার। না মানে না। একা কোনোভাবেই বেড়োনো যাবেনা। যদি এর নড়চড় হয় দেন ইউ নো এজ ভেরি ওয়েল হোয়াট ক্যান আই ডু।”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। মুখ গোমড়া করে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলেই উনি হাত ধরে আটকে নিলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন আমি মাথা নিচু করে আছি। উনি আমার দুগালে হাত রেখে বললেন,

— ” আচ্ছা একাই আসবে। হ্যাপি?”

আমি মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনিও হেসে দিয়ে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,

— ” পিচ্চি একটা। যাও ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও আমি আসছি। ”

আমি মাথা নেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলাম। আমি ফুরফুরে মেজাজেই আছি আমি। কারণটা হয়তো উনি। নিচে যেতে না যেতেই আমার হাসিখুশি মুখটা দেখে দাদি পিঞ্চ করতে ভোলেন নি। কিছুক্ষণ পর ওপরে গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান রেডি হয়ে গেছেন। আমায় দেখে আমাকেও রেডি হয়ে নিতে বললেন। আমিও রেডি হয়ে বেড়িয়ে এলাম। দুজনে একসঙ্গে রেডি হয়ে নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম। খেয়ার করলাম সবাই আমাদের দেখে মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছেন। আজব। হাসার কী আছে? খাওয়া শেষে সবার কাছে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। মেডিকেলের সামনে গাড়ি থামিয়ে উনি আমার সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বললেন,

— ” কি হতো গার্ড পাঠালে?”

— ” আমি পারবো ফিরতে।”

— ” সাবধানে বাড়ি ফিরবে। আর হ্যাঁ একদম রাস্তাঘাটে লাফালাফি করবে না। সাইডে থেকেই সিএনজি নেবে।”

আমি মাথা নাড়লাম। উনি আমার কানের ওপর হাত রেখে গালে একটা কিস করে বললেন,

— ” বাই।”

আমি নিজেকে সামলে কোনোরকম বাই বলে চলে এলাম।

____________________

বিকেলে বাড়িতে ফেরার পরেই সবাই জিজ্ঞেস করলো প্রথম দিন কেমন ছিলো। আপি, জাবিন এক্সাইটেড হয়ে সব জানতে চাইলো আমিও সবটা বললাম। সন্ধ্যার দিকে আদ্রিয়ান এলেন সাথে আদিব ভাইয়াও। আমাকে দেখে বললেন,

— “প্রথম দিন কেমন ছিলো?”

আমি হেসে বললাম,

— ” ভালো ভাইয়া”

এরপর কিছুক্ষণ গল্প করে ওনারা দুজন ওপরে চলে গেলো। আমি নিচে আপি জাবিনের সামনে গল্প করছি তখন মামনী এসে বলল,

— ” অনি কফি দুটো ওদের রুমে দিয়ে আয় না মা।”

আমি মাথা পেড়ে ট্রে টা নিয়ে ওপরের দিকে পা বাড়ালাম। কফি নিয়ে রুমের দরজার কাছে এসে ওনাদের গলার আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলাম। আদ্রিয়ান বলছেন,

— ” অনিকে আমি আমাদের বিয়ের একসপ্তাহ পর থেকেই নিজের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছি। ভালোতো আমি ওকে শুরু থেকেই বাসি। যেদিন ঐ পিংক গাউন পরে আমার সামনে ভীত মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেদিন থেকেই মায়ায় পরে গেছিলাম। বাচ্চাদের মতো আমার অল্প ধমকেই কেঁদে দিয়েছিলো। এরপর আস্তে আস্তে ওর বাচ্চামো, দুষ্টুমি, সরলতা সব আমাকে ক্রমশ দুর্বল করেছে ওর প্রতি। এতো মায়া আছে মেয়েটার মধ্যে যে প্রথম দেখা থেকেই ভালোবেসেছি আর সেটা ক্রমশ গভীর হয়েছে। ভেবেছিলাম ভাইয়ার বিয়ের পরেই বাবাকে বলব। কিন্তু ভাইয়ার রিসিপশনের দিনটাই সব এলোমেলো করে দিলো। এরপর ওকে নিজের থেকে দূরে রেখেছি। কিন্তু ভাগ্যের কী খেলা দেখ ওর সাথেই আমার বিয়ে হলো। যাকে এতোটা ভালোবাসি সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও খুশি হতে পারিনি। অার তারপর কেনো ওকে বউ হিসেবে মানতে চাইনি সেটা তোর চেয়ে ভালো কে জানে?”

আদিব ভাইয়া বললেন,

— ” হ্যাঁ তাতো জানি কিন্তু তাহলে এই তিনমাস কেন ওকে দূরে রেখেছিলি। শুধু দায়িত্ব বলে চালিয়ে দিয়েছিলি? যেখানে মেয়েটাকে তুই এতোটা ভালোবাসিস? এভাবে কষ্ট কেন দিয়েছিলি?”

উনি আবার বললেন,

— ” কী করতাম বল? মেয়েটা বাচ্চা। আজকের যুগে আঠারো বছরের একটা মেয়েকে বড় বলা চলেনা। টিনেজের এই সময়টা আমরা পার করেছি আমরা তো জানি এই সময়টা কেমন। এসময় একটা মেয়ে সবসময় চায় যে ওর লাইফে যে আসবে সে ওকে সবসময় স্পেশাল ফিল করাবে, ভালোবাসবে। নিজেদেরকে কোন গল্প বা সিনেমার হিরোয়িনদের মতো করে কল্পনা করে। আর এটা ভাবে পুরো গল্পটাতেই ওর রাজত্ব থাকবে। একটা ফ্যান্টাসি একটা কল্পনার জগতে বাস করে ওরা। আমি যেদিন প্রথম ওর সাথে একটু ফ্লার্ট করেছি সেদিন থেকেই খেয়াল করলাম অনির মধ্যেও সেসবই হচ্ছে। নিজে নিজেই একটা কল্পনার রাজ্য বানাচ্ছে। যেখানে সবটা জুড়ে আমি আছি। পড়তে বসেও আমায় নিয়ে ভাবছে, সারাক্ষণ আমার চিন্তা ওর মাথায় ঘুরছে। এই সময়ে ওর মনে হাজারও কল্পনা জল্পনা করে চলেছে। এরফলে ওর স্টাডিতে মারাত্মক এফেক্টও পড়ছে। পড়া গুলিয়ে ফেলছে। পড়তে দিলে পড়ছে কম ভাবছে বেশি। আর সেটা ভালো করে বুঝলাম সেদিন যেদিন ও তোদের সবার সামনেই আমার ডিফেক্ট আছে কীনা, নিরামিষ এন্ড অল বলছিল। কারণ ও সেটা পাচ্ছিল না যেটা ওর মন এস্পেক্ট করছে। আর পেতো তাহলে নিজের কল্পনার জগৎ আরো প্রসারিত করতো। দোষটা ওর নয় ওর বয়সের। কিন্তু আমিতো ম্যাচিউর। তাই সেদিন রাতে ওর প্রতি একটু রুড হয়ে হলেও ওকে বোঝালাম যে কল্পনা কল্পাতেই সুন্দর। বাস্তবটা অনেক ভিন্ন। ভাবতে যতটা ভালোলাগে বাস্তবে সেটা ঘটলে সবসময় এটাচড হওয়া যায়না। আর বারবার আমার ভালোবাসাকে দায়িত্ব বলে ওকে সেই কল্পনা সেই ফ্যান্টাসি থেকে বার করে আনতাম। আর এই কারণেই ও আবার স্টাডিতে কনসেন্ট্রট করতে পেরেছে। এন্ড রেসাল্ট তোর সামনে। র‍্যাংকিং ফিফট পজিশন করে নিয়েছে।”

— ” তুই এতোকিছু ভেবেছিস। সত্যিই ভাই তোর পা ধরে সালাম করতে ইচ্ছা করছে। একমাত্র তোর দ্বারাই এটা সম্ভব।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

— ” আমি চাইলে শুরুতেই নিজের মনের ভেতরের ভালোবাসাটা উজার করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। ওর স্বপ্ন ছিল একজন ডক্টর হবে। যেখানে ওর সম্পূর্ণটাই আমার বলে মেনে নিয়েছি সেখানে ওর স্বপ্ন মানেই তো আমার স্বপ্ন। নিজেই নিজের স্বপ্ন ভাঙার কারণ কীকরে হতাম বল? নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি ওকে আর এমনভাবে তৈরী করব যাতে কোনোদিন যদি আমি ওর পাশে নাও থাকি ওকে জেনো নূরের মতো অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে না হয়।”

আমি চোখ দিয়ে নিরবে জল পরছে। আব্বুর প্রতি মাঝেমাঝে অভিমান হতো যে কেনো আমার কাছে একটাবার জিজ্ঞেস না করেই অন্য একজনের হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু আজ আব্বুর কাজে কৃতজ্ঞ যে এমন একজনকে আমার জন্যে বেছেছেন। আজ আব্বুর বলা কথাটা খুব মনে পড়ছে, ” আজ তোমার মনে হচ্ছে আমরা তোমার সাথে অন্যায় করেছি কিন্তু দেখবে একদিন আমাদের এই সিদ্ধান্তের জন্যেই তুমিই নিজেই নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করবে।” সত্যিই আজ নিজেকে অনেক বেশিই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আজকের দিনে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে এভাবে কজন ভাবে? সবাই তো নিজের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত। এরকম একজন স্বামী পাওয়া সৌভাগ্য নয় পরম সৌভাগ্যের বিষয়।

#চলবে…

( রি-চেইক করা হয়নি। টাইপিং মিস্টেকগুলো বুঝে নেবেন।)

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩০
.
চোখের নিরব ধারায় পরতে থাকা জল কিছুতেই থামাতে পারছিনা। কান্না অনেক সময় সুখেরও হয়, এটা শুনেছিলাম কিন্তু আজ তার প্রমাণ নিজেকে দিয়েই পেলাম। আমি এক হাতে চোখ মুছে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজায় নক করলাম। ওনারা চুপ হয়ে গেলেন। আদ্রিয়ান বললেন,

— ” কে?”

আমি দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বললাম,

— ” আমি অনিমা।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” রুমটা তোমারও অনি। পার্মিশন নেওয়ার কী আছে?”

— ” ন্ না আসলে আপনারা কথা বলছিলেন তাই।”

— ” সে যাই হোক নেক্সট টাইম যেনো এমন না হয়।”

আমি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে ভেতরে গিয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। আদিব ভাইয়া হেসে আমার হাত বললেন,

— ” বাহবা। ভাবিজির হাতে বানানো কফি খাবো। কী সৌভাগ্য আমার।”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” তুই সেই আসাতেই ঘুমো। ও করবে কফি? সেই কফি আবার আমরা খাবো। তাহলেই হয়েছে। নিজের বউয়ের হাতের রান্না খাওয়ার কপাল করে কী আমি এসেছি?”

ওনার কথাটা শুনে একটু খারাপ লাগলো। সত্যিই তো এ বাড়ির বউ কিন্তু কোনো কাজই করতে পারিনা। আমি মুখ গোমড়া করে ওনার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিতে দিতে নিচু গলায় বললাম,

— ” আমার কী দোষ? অামাকে কিছু করতেই দেয়না ওনারা, আমিতো শিখতেই চাই।”

উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— ” আরে পাগলি আমি মজা করছিলাম। তোমার এখন এসব কিচ্ছু করার দরকার নেই। যখন দরকার হবে তখন নিজের হাতে সব শিখিয়ে দেব আমি।”

আদিব ভাইয়া একটা সিটি বাজিয়ে বললেন,

— ” জিও! ইয়ে হুয়ি না বাত। কী প্রেম, কী প্রেম।”

আদ্রিয়ানও আদিব ভাইয়ার কথা শুনে হেসে দিলেন। আমিও লজ্জা পেয়ে ওনাকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তুতলিয়ে বললাম,

— ” অব্ আমায় মামনী নিচে ডাকছে আমি গেলাম।”

বলে ওনাদের দিকে না তাকিয়ে দ্রুতপদে ওখান থেকে চলে এলাম। এমন কেনো ওনারা? এভাবে ইচ্ছে করে আমায় লজ্জায় ফেলেন।

_________________

আদ্রিয়ান আদিব ভাইয়ার সাথে একটু বাইরে গেছেন। এই সুযোগে আমি আরামে বেডে উপর হয়ে শুয়ে একমনে গেমস খেলছি। একদম মনোযোগ দিয়ে খেলছি কারণ আরেকটু হলেই নেক্সট লেবেলে পৌছে যাবো। হঠাৎ কেউ মাথায় টৌকা মারলো। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” ডোন্ট ডিস্টার্ব। খেলতে দাও তো?”

কিন্তু আবারও মাথায় টোকা পরতে বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” আরে ভাই লেভেলটা কম্প্লিট করতে দে।”

— ” ভাই না বড় হই তোমার।”

সাথে সাথে চমকে উঠলাম আমি। এটা তো আদ্রিয়ান। আমি হকচকিয়ে উঠে বসে ওনার দিকে তাকালাম। তারপর থতমত খেয়ে বললাম,

— ” অ্ আপনি চলে এসছেন?”

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

— “গেমস খেলছিলে তুমি? পড়া সব কম্প্লিট?”

আমি একটু হেসে তারপর একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,

— ” না আসলে একটু বোর লাগছিল তাই..”

তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম গেম ওভার হয়ে গেছে। ইস্ একটুর জন্যে লেভেলটা কম্প্লিট হয়নি। দূর ভাল্লাগেনা। কত কষ্ট করে আমি মুখ ফুলিয়ে তাকালাম ওনার দিকে। উনি ফোনটা আমার হাতে নিয়ে ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললেন,

— ” কাম অন অনি। মেডিকেল স্টুডেন্ট তুমি। এখনও তোমার বাচ্চামোটা ছাড়তে পারলেনা। যাও টেবিলে যাও। গো!”

আমি ছোট্ট একটা শ্বাস নিয়ে উঠে টেবিলে গিয়ে বসলাম। আগে রাগ হলেও এখন ওনার এসব শাসনে আর রাগ হয়না আমার। কারণ আগে না জানলেও এখন খুব ভালোকরে জানি ওনার এই ছোট ছোট শাসনে অনেক অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। ওনার ‘ভালোবাসি তোকে’ কথাটা যে এখনও আমার কানে বাজে। আমি বই খুলে টেবিলে বসলাম আর উনি ওয়াশরুমে গেলেন। আমি যতক্ষণ পড়েছি ততক্ষণ উনি ল্যাপটপ কাজ করছিলেন। রাতে ডিনার করে আপির সাথে একটু গল্প করে রুমে গিয়ে দেখি উনি শুয়ে পযেছেন আর আমার ফোন ঘাটছেন। আমি অবাক হয়ে বললাম,

— ” আমার ফোন দিয়ে আপনি কী করছেন?”

আদ্রিয়ান ফোন দেখতে দেখতেই বললেন,

— ” চুপচাপ এসে শুয়ে পরো।”

আমি অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লাইট অফ করে শুয়ে পরলাম ওনার পাশে। কিন্তু ম্যাসেঞ্জার এর টুংটাং শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম যে ডেটা অন করা। কিছুক্ষণ পর উনি বললেন,

— ” রূপ মেসেজ করেছে তোমায়? জিজ্ঞেস করছে কেমন আছো? কী বলব?”

আমি অবাক হয়ে গেলাম। রূপ মানেতো ঐ ছেলেটা। সে আমার আইডি কোথায় পেলো? আমায় মেসেজ করেছেন কেনো? আমি এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান বললেন,

— ” কী হলো বলো? কী বলবো?”

ওনার কন্ঠে রাগের আভাস স্পষ্ট পাচ্ছি আমি। তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। কী বলবো সেটাই এখনও বুঝতে পারছিনা। উনি হঠাৎ করেই একটানে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বেডের সাথে চেপে ধরে শক্ত কন্ঠে বললেন,

— ” তোমার আইডি কোথায় পেলো ও? আর মেসেজ করার সাহস কীকরে পেলো?”

আমি ওনার এমন হঠাৎ রেগে যাওয়াতে ঘাবড়ে গেছি। তাই তুতলিয়ে বললাম,

— ” অ্ আমি জানিনা তো।”

উনি আমায় আরেকটু চেপে ধরে বললেন,

— ” জানোনা মানে কী? জানতে হবে।”

আমি অবাকের ওপর অবাক হচ্ছি ওনার আচরণে এতো রেগে যাওয়ার কী আছে সেটাই বুঝতে পারছিনা এখনও। উনি আবার বললেন,

— ” আর প্রোফাইলে এতো ছবি দিয়ে রেখেছো কেনো? সবাইকে দেখাতে লুক হাউ বিউটিফুল আই এম?”

— ” ন্ না ওটাতো এম্ এমনিই..”

উফফ এই ছেলের ভয়ে ভয়ে আমিও একদিন শিউর তোতলা হয়ে যাবো। উনি ধমকের সুরে বললেন,

— ” নাহ দেবে না। এমনি ওমনি কোনোভাবেই দেবেনা। আর প্রোফাইলে সিকিউরিটি লক নেই কেনো? হ্যাঁ?”

উনি প্রতিটা কথা এভাবে ধমকে ধমকে বলছেন যে আমি কিছু বলার সাহসই পাচ্ছি না। উনি এবার লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” যাই হোক আমি সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছি। আর প্রোফাইলেও সিকিউরিটি লক দিয়ে দিয়েছি।এন্ড এরকমটাই জেনো থাকে।”

আমি অসহায়ভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” প্রোফাইল পিকটাও ডিলিট করে দিয়েছেন?”

— ” হ্যাঁ? কেনো কষ্ট হচ্ছে? কেউ আর দেখতে পাবেনা। ওয়াও, গর্জিয়াস, লুকিং গুড কমেন্ট করবেনা তাই। কিন্তু কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। যেভাবে আইডিটা সেট করে রেখেছি সেভাবেই জেনো থাকে নইলে ফোনটা যেমন আমি দিয়েছি নিয়ে নিতেও বেশি সময় লাগবেনা। ”

আমি কিছু বললাম না কিছু বলা মানেই এখন আগুতে ঘি ঢালা। তাই চোখ নামিয়ে রেখে দিয়েছি। উনি আমার কপালে সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে আমার চুলগুলো কানে গুজে দিতে দিতে বললেন,

— ” তুমি আমার জন্য কতটা অমূল্য তুমি জানো? তুমি তো পুরোটাই আমার। আমি জানি হয়তো এগুলো একটু বেশিই করছি। কিন্তু আমি হেল্পলেস। তোমাকে দেখে প্রশংসা করার অধিকারটাও তুমি ছাড়া আর কাউকে দিতে পারবোনা আমি। সেটাও মেনে নেওয়ার ক্ষমতা নেই আমার মধ্যে। কী করবো?”

বলে উনি আমার গালে নিজের নাক দিয়ে হালকা করে স্লাইড করতে করতে বললেন,

— ” একটা সময় ভেবেছিলাম তোমাকে নিজের থেকে দূরে রাখবো কিন্তু এখন ভাবছি যে যদি সত্যিই তোমাকে দূরে সরাতে পারতাম আর তুমি অন্যকারো হয়ে যেতে তাহলে? তাহলে অন্যকারো সাথে তোমাকে কীকরে সহ্য করতাম আমি? তুমি অন্যকারো হয়ে গেছো সেটা কীকরে মানতাম। ভাগ্যিস বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছিল। নাহলে কোনো একদিন হয়তো আমাকে সুইসাইডই করতে হতো। তোমাকে ছাড়া একমুহূর্তও থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না এখন আর। আই ক্ কান্ট আই জাস্ট কান্ট।”

আমি চোখ বন্ধ হালকা জোরে শ্বাস নিচ্ছি। হঠাৎ উনি আমার গলায় মুখ গুজে দিয়ে ধীরে ধীরে কয়েকটা শ্বাস নিলেন। আমি সাথে সাথেই বিছানার চাদরটা খামচে ধরলাম, নিশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে আমার, এমন মনে হচ্ছে যেনো সম্পূর্ণ অবস হয়ে গেছি আমি, পুরো স্হির হয়ে আছি। ওনার এরকম ভয়ংকর একেকটা বাক্যই তো আমাকে ঘায়েল করে দেয় তারওপর ওনার এই ভালোবাসায় পূর্ণ স্পর্শগুলো শেষ করে দিতে যথেষ্ট । বেশ অনেকটা সময় পর উনি মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। যদিও আমি চোখ এখনও বন্ধ করে আছি কিন্তু ওনার নিশ্বাস আমার মুখে পরায় সহজেই বূঝতে পারলাম সেটা। উনি আমার কপালে আবারও একটা চুমু দিতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম ওনার দিকে। উনি পাশে শুয়ে আমাকে টেনে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। এতোটা শক্ত করে ধরেছেন যে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি হারিয়ে যাবো। আমিও কিছু না বলে চুপ করে চোখ বন্ধ করে লেপ্টে রইলাম ওনার বুকে। কেনো জানিনা এই জায়গাটাতেই অনেক বেশি শান্তি পাই আমি নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হয়। মনে হয় এরচেয়ে সুরক্ষিত কোনো জায়গা আমার জন্যে হতেই পারেনা।

_________________

আদ্রিয়ান ড্রপ করে দেওয়ার পর মেডিকেলে ঢুকে আমাদের ক্লাসের বিল্ডিংটার সামনে গিয়ে দেখি সিড়ির ওখানে বসে আমার বান্দরনী মানে বান্ধবীরা বসে বসে বই পড়ছে। আমি গিয়ে ওদের কাছে বসে বসতেই অরু বলল,

— ” কী ব্যপার বলতো? লেট কুমারী এখন এতো টাইমলি পৌছে যাচ্ছে?”

ঐশি বলল,

— ” পৌছবে না কেনো বল, আমাদের জিজু যেই পরিমাণ পাঞ্চুয়াল। যে কেউ ওনার কাছে গেলে সুধরে যাবে।”

ইসু হেসে দিয়ে বলল,

— ” সবই কপাল। আমাদের জিজুর পাল্লায় পরে একদম ঠিক হয়ে গেছে। এতোদিন ছিলো ধনুকের মতো সোজা এখন তীরের মতো সোজা হয়ে গেছে।”

সবাই হেসে দিলো। আমি মুখ ফুলিয়ে কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিজের কোলে রেখে ব্যাগ থেকে এপ্রোন বের করে গায়ে দিতে দিতে বললাম,

— ” হ্যাঁ হ্যাঁ তোমরাতো মজা লুটবেই। আমি তো জানি কী জ্বালা। সেই সাত সকালে টেনে ঘুম থেকে তুলবে। জীবণেও এতো ভোরে উঠিনি আমি। তারওপর ওনার পড়া নিয়ে শাসন, খাওয়া নিয়ে শাসন, ঘুম নিয়ে শাসন। কী প্যারায় আছি আমিই জানি।”

ইশু অবাক হয়ে বলল,

— ” তুই এটাকে প্যারা বলছিস? জিজু কত্তো কেয়ারিং ইয়ার।”

অরু বলল,

— ” এক কাজ কর আমার শান্তি তুই নিয়ে বিনিময়ে তোর বরটাকে দিয়ে দে।”

আমি রেগে কপাল কুচকাতেই ওরা আবারও হেসে অরু বলল,

— ” দেখ কী পসেজিভ। জেলাসি দেখেছিস? এ আবার জিজুর বদনাম করছে।-

আমি কথা ঘোরাতে বললাম,

— ” এই ক্লাসের দেরী হচ্ছেনা? চল?”

এরপর ক্লাস শেষে বাইরে আসতেই ওরা সবাই বুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে যাবে বলে ঠিক করল। প্রথমে রাজি না হলেও পরে ভাবলাম একটু সময়ই তো লাগবে ঘুরে আসি। বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে ভালোই লাগলো। এর আগে আসিনি। ছোট হলেও বেশ সুন্দর করে সাজানো সব। হাটতে হাটতে অরু বলল,

— ” নবীন বরণের কথা মনে আছে তো?”

ইশু বলল,

— ” হ্যাঁ এই ফ্রাই ডে তেই তো। অনি তুই আসবি তো?”

আমি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললাম,

— ” যদি আমার বর মহাশয় আসতে দেয়।”

ওরা কিছু বলবে হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে ডেকে উঠল,

— ” হেই অনিমা?”

আমি ভ্রু কুচকে পেছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। এ তো সেই কূপ না মানে রূপ। আমি বিড়বিড়িয়ে ওনার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে রূপ এসে বললেন,

— ” কেমন আছো?”

আমি মেকি হেসে বললাম,

— ” ভালো।”

— ” ওরা তোমার ফ্রেন্ড বুঝি? ইসরাতের সাথে তো কথা হয়েছে। তোমাদের পরিচয়টা বলো?”

হ্যাংলার মতো জেচে সবার সাথে আলাপ করে বলল,

— ” কোথায় আছো এখন?”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

— ” ঢাকা মেডিকেল।”

রূপ হেসে বললেন,

— ” ওয়াও গ্রেট। বাই দা ওয়ে তোমাকে তো এমনিতেই সুন্দর লাগে। হোয়াইট এপ্রোনে নিশ্চয়ই আরও ভালো লাগে। একটু পরে দেখাবে?”

— ” কেনো? এতো সুন্দর লাগা দিয়ে কী হবে? ওর জন্যে পাত্র ঠিক করবি?”

আমি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। উনি এখানে কীকরে? তবে ওনার ঠোঁটে হালকা হাসি থাকলেও চোখ দেখেই বুঝে গেছি খুব রেগে গেছেন। রূপ হেসে বলল,

— ” আরে এতো খোজাখুজির কী আছে। যখন আমার মত রত্ন চোখের সামনেই থাকে।”

আমি ভয়ে চুপ করে আছি। আজ হয় এই ছেলের কপালে দুঃখ আছে নইলে আমার কারণ উনি যখন কারো ওপর রাগ ঝাড়তে না পারেন তখন সেটা আমার ওপর এসেই পরে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

— ” তাই নাকি?”

— ” একদম। কিন্তু তুই এখানে কী করছিস?”

আদ্রিয়ান ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” ওকে নিতে এসছিলাম।”

রূপ একটু ভেবে বলল,

— ” ওহহ আচ্ছা। ওই কী তোর ছোট বোন নাকি? সেদিন পার্টিতেও তোদের সাথে এসছিল?”

আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” ও আমার..”

আদ্রিয়ান কথাটা শেষ করা আগেই কেউ পেছন থেকে রূপকে ডাকলো। রূপ বলল,

— ” আচ্ছা ভাই আসছি আজকে। আবার কথা হবে।”

আমার দিকে তাকিয়ে আলাদা করে বাই বলে চলে গেলো। আমি এবার মাথা তুলে ভয়ে ভয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম। আদ্রিয়ান চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। অরু ওরা একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আমি একটা ঢোক গিলে মনে মনে বললাম ” আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও। জীবনেও আর বুয়েটে আসবো না।”

#চলবে…

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩১
.
গাড়িতে মাথা নিচু করে বসে আছি আমি আর আদ্রিয়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, এমন মনে হচ্ছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে নেবেন আমাকে। পুরো নিরব পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে, বেশ বুঝতে পারছি আজ উনি আমার ভালোমতোই ক্লাস নেবেন। উনি স্টেয়ারিং এর ওপর দিয়ে আঙ্গুল নাড়াতে নাড়াতে ঠান্ডা গলায় বললেন,

— ” আজকাল মেডিকেল এর ক্লাসগুলো কী বুয়েটে হচ্ছে নাকি? বুয়েটে কী করতে গিয়েছিলে?”

এই ঠান্ডা গলায় বলা কথাগুলো আমাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিল। আমি মাথা নিচু করে কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,

— ” না আসলে ওরা সবাই বলল একটু ঘুরে দেখবে তাই..”

আদ্রিয়ান এবারও ঠান্ডা গলায় বললেন,

— ” আর আমি কী বলেছিলাম?”

আমি আবারও মাথা নিচু করে ফেললাম। আসলেই একটা ব্লান্ডার করে ফেলেছি সেটা বেশ বুঝতে পারছি । উনি এবার জোরে ধমক দিয়ে বললেন,

— ” কী বলেছিলাম?”

— ” ক্ কলেজ থেকে বেড়িয়ে স্ সোজা বাড়ি যেতে। আর যদি অন্য কোথাও যাই তাহলে ফ্ ফোন করে জানাতে।”

উনি রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” তুমি কী করেছো?”

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলে যাচ্ছি। কী বলবো? আসলে কাজের চাপের জন্যে উনি আমায় নিতে আসতে পারেননা, এতোদিন একদম ভদ্র হয়েই ছিলাম। আজই একটু এদিক ওদিক করলাম আর আজই যে উনি হুট করে চলে আসবেন কে জানতো? উনি এবার আমার হাতে চাপ দিয়ে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়ে বললেন,

— ” তোমাকে এমনিতেই খুব ভালো লাগে হোয়াইট এপ্রোনে আরও ভালোলাগবে তাইনা? আর কী জেনো হ্যাঁ তোমার বর হিসেবে রূপ একজন রত্ন? আমি তোমার বড় ভাই? ভাই হই আমি তোমার?”

আমি হালকা কেঁপে উঠলাম ওনার ধমকে কোনরকম কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,

— ” এগুলো কী আমি বলেছিলাম নাকি?”

— ” ও বলার সাহস পেলো কেনো? কেনো কথা বলছিলে ওর সাথে? ও তোমার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ পেলো কেনো?”

আমি এখন আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। এখন ওনাকে আর রাগীয়ে দিয়ে লাভ নেই। উনি আমার হাতের বাহু দুটো চেপে ধরে বললেন,

— ” সবসময় আমাকে টেনশনে না রাখলে তোমার হয়না রাইট? আমি তোমাদের ক্লাস শেষ হওয়ার আধ ঘন্টা আগে থেকে সামনের গেইটটাতে ওয়েট করছি অথচ তোমার দেখা নেই। পরে যখন ভেতরে গিয়ে জানতে পারলাম যে ক্লাস বিশ মিনিট আগেই শেষ আর তুমিও ওখানে নেই? তখন আমার কী অবস্থা হয়েছিল জানো তুমি? কে জানতো যে তুমি ঐ সাইডের গেইট দিয়ে বেড়িয়ে বুয়েট চলে যাবে? মানে খুব ভালো লাগে না আমায় এভাবে টেনশনে দেখতে, ডেসপারেট দেখতে?”

— ” আ’ম সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি?”

উনি আমাকে ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে বললেন,

— ” তা কেনো বুঝবে? আমাকে বোঝার তো তুমি চেষ্টাই করোনা। এক্চুয়ালি আমার কী মনে হয় তুমি আমাকে নিজের হাজবেন্ড মনেই করোনা জাস্ট একটা গন্ডি মনে করো তাইনা? যে তোমাকে সবকিছুই করতে বাধ্য করে।”

আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে ওনার দিকে তাকালাম এবার আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এভাবে কেনো বলছেন উনি? আমিতো ওনাকেই নিজের সবচেয়ে কাছের অভিভাবক বলে মেনে নিয়েছি। ওনার বলা প্রতিটা কাজ খুব খুশি মনে করি। আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে বললাম,

— ” সরি বলছিতো। আর কখনও এমন হবেনা। প্রমিজ।”

কিন্তু উনি কিছু বলছেননা সিটে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে আছেন। হয়তো বেশিই রাগ করেছেন। দূর সবসময় উল্টোপাল্টা কাজ করি। এবার চাইতেও ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম আমি। আমার কান্নার আওয়াজ পেয়ে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকালেন। তারপর তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বললেন,

— ” এই পাগলী এভাবে কাঁদছো কেন? আচ্ছা আ’ম সরি। আমি আর বকবোনা। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।”

আমি ওনার টিশার্ট খামচে ধরে এখনও কেঁদে যাচ্ছি। উনি আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— “অনি প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। প্লিজ। আমার কষ্ট হচ্ছে তো। আর এমন হবেনা কান্না থামাও।”

উনি ওভাবেই আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে বসে রইলেন। বেশ অনেকক্ষণ পর আমি স্বাভাবিক হলাম। আদ্রিয়ান আমায় সোজা করে বসিয়ে আমার চোখ দুটো মুছে দিয়ে কপালে চুমু বললেন,

— ” তুমি আসলেই একটা বাচ্চা।”

বলে হেসে দিয়ে আমার চুলগুলো হাত দিয়ে সেট করে দিয়ে বললেন,

— ” কিছু খাবে?”

আমি খুশি হয়ে গিয়ে বললাম,

— ” আইসক্রিম।”

উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হেসে দিলেন। আমি বললাম,

— ” আচ্ছা আপনি জানলেন কীকরে আমি বুয়েটে আছি?”

— ” সেটা তুমি না জানলেও চলবে।”

বলে উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমিও আর কিছু বললাম না। ওখান থেকে প্রথমে আইসক্রিম পার্লারে। ওখান থেকে আইসক্রিম খেয়ে তারপর দুজন মিলেই বাড়ি চলে এলাম।

_________________

আজ বাড়ি পুরো ফাঁকা। মানে আমি আর আদ্রিয়ান ছাড়া কেউ নেই। বাড়ির বড়রা সবাই দেশের বাড়ি গেছে ইনভেটেশনে চারদিনের জন্যে। আর আপি ইফাজ ভাইয়া একটু টাঙ্গাইল গেছে। ভাইয়ার কাজ ছিল। কাল চলে আসবেন। জাবিনও দেশের বাড়ি গেছেন। আদ্রিয়ান ওনার কাজের জন্য যেতে পারেনি তাই আমিও যাইনি। আমি টেবিলে বসে পড়ছি। রাত খুব বেশি না হলেও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আদ্রিয়ানও ল্যাপটপে নিজের কাজ করছেন। কিছুক্ষণ পর আর ভালো লাগছেনা তাই টেবিলে মাথা এলিয়ে দিলাম।

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকালাম। চোখ লেগে গেছিলো। একটা হাই তুলে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান হাতে এক গ্লাস দুধ নিয়ে বসে আছেন। সাথে সাথেই আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো। এই অত্যাচারটা উনি রোজ আমার ওপর করেন। আমি অসহায় কন্ঠে বললাম,

— ” আদ্রিয়ান। আজ থাকনা? আজ খেতে ইচ্ছে করছেনা আমার।”

উনি বরাবরেই মতই কঠোর হয়ে বললেন,

— ” নো এক্সকিউস। এক নিশ্বাসে শেষ করো।”

আমি করুন স্বরে বললাম,

— ” বমি পেয়ে যাবেতো আমার।”

আদ্রিয়ান আমার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” পেলে করবে। তারপর আবার খাওয়াবো। এখন শেষ করো এটা।”

— ” প্লিজ।”

— ” ফিনিস ইট।”

আমি আর কী করবো? এটা শিউর যে এইসব ক্ষেত্রে আমার ইমোশনাল ড্রামা ওনার ওপর এফেক্ট ফেলবে না। তাই বাধ্য মেয়ের মতো নাক মুখ কুচকে গ্লাসটা হাতে নিলাম। তারপর নাক চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে একঢোকে খেয়ে নিলাম। দুধটা খেয়ে গ্লাসটা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি হেসে আমার নাকের নিচটা মুছে দিতে দিতে বলল,

— ” গুড গার্ল। এখন আর পড়তে হবেনা এসো শুয়ে পরো। কালকেতো অফ ডে।”

কিন্তু আমার এতোটা উইক লাগছে আর ঘুম পাচ্ছে যে আমি চোখ বন্ধ করে টেবিলে মাথা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম উনি আমায় কোলে তুলে নিলেন। কিন্তু ঘুম আর ক্লান্তির জন্যে তাকিয়ে আর দেখতে ইচ্ছে করছেনা। তাই চোখ বন্ধ করে আছি। উনি আমায় বেডে শুইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পর শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও আর চোখ না ওনার বুকেই পুরোপুরি ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

_________________

সকালে রোদের আলো চোখে এসে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। আস্তে আস্তে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান থাই গ্লাস খুলেছেন। আমি শুয়ে শুয়ে ওনাকে দেখতে। একটা ব্লু টু কোয়ার্টার প্যান্ট আর কালো চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি পরে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, মুখে হালকা খোঁচা দাঁড়ি সব মিলিয়ে অনন্য লাগছে। উনি আমার পাশে এসে আমার সাইড দিয়ে হাতের ভর দিয়ে ঝুকে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,

— ” গুড মর্নিং।”

আমি মুচকি হেসে ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললাম,

— ” ভেরি গুড মর্নিং।”

উনি হেসে আমার নাকে নাক ঘষে বললেন,

— ” তোমার এই ঘুম ঘুম কন্ঠে কতোটা মাদকতা আছে তুমি জানো? সেই মাদকতা ক্রমশই গ্রাস করে যায় আমাকে। হারিয়ে ফেলি নিজেকে তোমার মধ্যে।”

আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। এমন করে বলতে হয়? ওনার কথাগুলো এতো ভয়ংকর কেনো হয়? উনি আলতো গলায় বললেন,

— ” চলো এবার ওঠো। কফি বানিয়ে এনেছি ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

বলে আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন। আমিও আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আমি রুমে আসতেই উনি বললেন,

— ” ব্যালকনিতে চলো।”

আমিও মাথা নেড়ে ওনার পেছন পেছন গেলাম। গিয়ে দেখি উনি ব্যালকনির ফ্লোরে বসেছেন আমিও ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। হালকা বাতাস, শীতল আবহওয়া। সব মিলিয়ে মনকারা পরিবেশ। উনি আমার দিকে কফি মগটা এগিয়ে দিলেন। আমি কফি মগটা হাতে নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। আমার কী হলো জানিনা ওনার কাধে আস্তে করে মাথা এলিয়ে দিলাম। উনিও কিছু বললেন না। দুজনেই চুপচাপ কফির মগে চুমুক দিচ্ছি। বেশ অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর উনি বললেন,

— ” জানো অনি এটা আমার ইচ্ছে ছিলো যে বিয়ের পর তোমার সাথে ব্যালকনিতে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কফি খাবো। আর তোমার মাথাটা আমার কাধে থাকবে।”

আমি একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,

— ” আজ ল্যাবে যাবেন না আপনি?”

— ” নাহ। কিন্তু আবার আপনি? অনি প্লিজ তিন মাস হয়ে গেছে বিয়ের এবার আপনি বলাটা বন্ধ করো?”

আমি একটু অবাক হয়ে ওনার কাধ থেকে মাথা সরিয়ে বললাম,

— ” তাহলে কী ডাকবো?”

উনি আমাকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বললেন,

— ” তুমি বলবে?”

আমি অবাক হয়ে বললাম,

— ” কীহ? আপনি আমার কতোটা বড়। তারওপর..”

— ” লিসেন। জেনারেলি হাজবেন্ডরা বড়ই হয়। তাই তুমি আমাকে ‘তুমি’ করেই বলবে। আর সেটা এখন থেকে। এন্ড আমি কোনো এক্সকিউস শুনতে চাইনা।”

আমি এবার একটু অসহায় কন্ঠে বললাম,

— ” আচ্ছা হুট করে কীকরে হবে বলুন। একটু সময় দিন।”

আদ্রিয়ান একটু ভেবে বললেন,

— ” আচ্ছা যাও আজকের দিনটা দিলাম। কাল থেকে আমাকে তুমি করেই বলবে। মনে থাকবে? আমি কিন্তু কোনো বাহানা শুনবোনা।”

আমি অসহায় ভাবে মাথা নাড়লাম ঠিকই কিন্তু কীকরে তুমি করে বলব ওনাকে সেটাই ভাবছি। উনি আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললেন,

— ” আচ্ছা আজনা রান্নার জন্যে কেউ নেই। মনির মেয়ে অসুস্থ আর কাকাও নেই। তাই আমাকেই রান্না করতে হবে। তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।”

— ” আমিও যাবো। আমি তো এমনিতেও কিছু পারিনা তাই আপনাকে হেল্প করব আর আপনার কাছে শিখবো।”

উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টেডি স্মাইল দিয়ে বললেন,

— ” আচ্ছা চলো।”

দুজনে মিলেই কিচেনে গেলাম। প্লান হলো কাজ ভাগাভাগি করে নেবো। একটা উনি তো একটা আমি। আদ্রিয়ান বললেন,

— ” কী খাবে?”

আমি একটু ভেবে বললাম,

— ” পরোটা আর আলুর দম। খুব ভালো হবে।”

তো সেই অনুযায়ী সব নামানো হলো। আদ্রিয়ান কাজ শুরু করবেন তার আগেই আমি বললাম,

— ” আমিও কিছু করবো।”

— ” তুমি পারবেনা অনি অভ্যেস নেই।”

— ” নাহ আমি করবোই।”

আমার জেদ দেখে আদ্রিয়ান একটু ভেবে বললেন,

— ” সবজি কাটতে দিলে তুমি হাত কেটে ফেলবে এক কাজ করো তুমি আটা ছানাও।”

আমি খুশি হয়ে সম্মতি দিলাম। আদ্রিয়ান একমনে পেয়াজ কাটছেন। আর এদিকে আমি আটা আর পানি মিক্সট করে বোকা হয়ে গেলাম। কারণ পানি বেশি পরে গেছে। ল্যাদা ল্যাদা হয়ে গেছে। আবার আটা দিতে আটা বেশি হলো তাই আবার পানি ঢালতেই এবার আবার পানি বেশী হলো। আমি অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। আদ্রিয়ান আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঁকি দিয়ে আটা দেখে শব্দ হেসে দিলেন। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। আমি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি বললেন,

— ” মন খারাপ করার কিচ্ছু নেই। ফার্স্ট টাইম এমন হয়। দাও আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।”

এরপর আদ্রিয়ান ওগুলো সরিয়ে নতুন বলে কতটুকু আটা, কতোটা পানি দিতে হবে সেটা শিখিয়ে দিলেন। এরপর আমার হাতের ওপর হাত রেখে আটা ছানানো দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখন উনি শেখানোর চেয়ে দুষ্টুমি বেশি করছেন। আমার কাধে কানে আলতো করে মাঝে মাঝে ঠোঁট ছোয়াচ্ছেন, মাঝে মাঝে কানে ফু দিচ্ছেন, আর হাত ধরার নাম করে হালকা করে সুরসুরি দিচ্ছেন। আমি ওনার এসব দুষ্টুমিতে কেঁপে কেঁপে উঠছি। হঠাৎ আমার মাথাতেও দুষ্টুমি ভর করল। আমি একটু আটা নিয়ে ওনার নাকে লাগিয়ে দিলাম। উনি সাথে সাথেই চমকে উঠলেন অবাক হয়ে আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে ঠোঁট কামড়ে হেসে দুহাতে আটা নিতেই আমি ওনাকে সরিয়ে ওনার থেকে দূরে সরে গেলাম। কিন্তু বেশিদূর যাওয়ার আগেই উনি অামার দুইগালেই আটা মাখিয়ে দিলেন। আমি মুখ ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম সাথে উনিও হেসে দিলেন। এরপর পরোটা বেলতে গিয়েও তিনটে নষ্ট হয়েছে। সবগুলোরই বাংলাদেশের ম্যাপ হচ্ছে। অবশেষে ওনাকেই বানাতে হলো। হাসি আর খুনশুটির মধ্য দিয়েই রান্নার কাজ শেষ হলো।

__________________

দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে আদ্রিয়ান বেডে হেলান দিয়ে শুয়েছেন আর আমি ওনার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। উনি আমার চুল নাড়তে নাড়তে বললেন,

— ” মন খারাপ?”

— ” না তো?”

— ” তাহলে চুপ করে আছো কেনো?”

— ” জানেন অফ ডে গুলোতে আমরা সব ভাই বোনেরা মিলে অনেক মজা করতাম। খেলা, পিকনিক সব হতো। খুব বেশিই মিস করি এসব।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

— ” আচ্ছা ঘুমাও এবার।”

আমিও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করলাম। কতোটা ভালোবাসে ছেলেটা আমায়। আচ্ছা উনি বললেন শুরু থেকেই ভালোবাসতেন। এতোটাই যখন ভালোবাসতেন তখন কেনো আমায় বিয়ে করতে চান নি? আর কেনই বা নিজের থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। কী কারণ হতে পারে এর? এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম।

ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে চোখ খুলে উঠে বসে একটা হাই তুলে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আমি। এতোবড় ঝটকা খাবো ভাবিনি। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে