ভালোবাসি তোকে পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
5082

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৬
.
আমি ছলছলে চোখে ল্যাপটপের স্ক্রিনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানে দিকে। আদ্রিয়ান একটা টেডি স্মাইল দিয়ে আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললেন,

— ” কনগ্রাচুলেশন। মাই উড বি ডক্টর ওয়াইফ।”

সবাই একসাথে বলে উঠল,

— ” কনগ্রাচুলেশন।”

বলে সবাই একসাথে হেসে উঠল। তারমানে আমি যখন চোখ বন্ধ করে ছিলাম তখন সবাই রেসাল্ট দেখে নিয়েছে। আমি অবাক চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই উনি হেসে দিলেন। আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,

— ” ওটা স্ সত্যি..”

আদ্রিয়ান আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন,

— ” শুধু মেডিকেলে চান্স হয়েছে তাই না। গোটা র‍্যাংকিং ফিফত্ পজিশনে আছো। সো অবভিয়াসলি ডিএমসি।”

আমি অবাক দৃষ্টিতে আবারও ল্যাপটপের দিকে তাকালাম। তারপর দুহাতে মুখ চেপে ধরে হেসে দিলাম। আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

— ” এবার ফোন করে সবাইকে জানাই। সকাল থেকে বাবা মামনী, আমার বাবা-মা কতবার ফোন করেছেন।”

বলে প্রথমে আমার আব্বুকে কল করলেন। উনি কিছুক্ষণ কথা বলে আমার সাথেও আব্বু আম্মুর কথা বলিয়ে দিলেন। ওনারা খুব বেশিই খুশি হয়েছেন। এরপর বাবা মামনী, আরও সব আত্মীয়দের সাথে কথা বললাম। মামা বাড়িতে সবাই খুব খুশি। মামাতো খবরটা শুনেই চলে গেছেন মিস্টি আনতে। বাড়িতে এখন একটা উৎসব উৎসব ভাব। সবাই মিলে হই হুল্লোড় করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেঝ মামা মিষ্টি নিয়ে এলো। মামারা, সজীব ভাইয়া, অর্ণব ভাইয়া, কাব্য মিলে পুরু এলাকায় মিষ্টি বিলি করতে গেলো। নিজের কাছেই নিজেকে এখন খুব হালকা লাগছে আমার। সবার এই আনন্দের মাঝে আমি শুধু আদ্রিয়ানকে দেখছি। ওনাকে সবচেয়ে বেশি খুশি লাগছে আজ। ওনার চোখে মুখে খুশির ছাপটা স্পষ্ট। এমন মনে হচ্ছে যেনো বিশ্বজয় করে ফেলেছেন। অথচ আমার যখন এইচ এস সি রেসাল্ট দিলো তখন উনি কতটা ভাবলেশহীন ছিলেন যেনো ওনার এতে কিছুই যাচ্ছে বা আসছে না। উল্টে আমাকে ধমকে বলেছেন, ‘এতো আনন্দের কিছু নেই আসল পরীক্ষাটাই এখনও বাকি।’ অথচ আজ ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো এই জয়টা আমার নয় পুরোটাই ওনার। সবার সাথে মজা করছে। একটু পর পর ফোন করে নিজের সব পরিচিতদের বলছে। আমি অবাক আর মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওনাকে দেখছিলাম। উনি কেমব্রিজে চান্স পাওয়ার পরেও এতোটা খুশি হয়েছিলেন কী না সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। তারসাথে আমার পরিবারটাকেও দেখছি। আমার এই সাফল্যে ওনারাও কতো খুশি। এটাই হয়তো একটা পরিবারের একসঙ্গে থাকার অানন্দ হয়। কোনো একজনের খুশিতে সবার খুশি হয়ে যাওয়া, কারও কষ্টে সবাই কষ্ট পাওয়া, কারো বিপদে সবাই মিলে একসাথে এগিয়ে আসা এসবের নামই তো পরিবার। যেখানে আমি বলে কিছুই হয়না সবটাই আমরা।

__________________

সারাদিন সেলিব্রেশন এর পর রাতে রুমে এসে দেখি আদ্রিয়ান নেই। কোথায় গেল? নিশ্চয়ই ছাদে আছে। আমার মন এখন খুব ভালো। আজকে সারাটা দিন এতো এতো ভালো কেটেছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আর কেউ জানুক আর না জানুক আমিতো জানি আজ যা হয়েছে তার পেছনে ওনার অবদান অনেকটা জুড়ে। এসব ভাবতে ভাবতে ছাদে গিয়ে দেখি যা ভেবেছি তাই উনি রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। কারো আওয়াজে পেছনে তাকিয়ে আমায় দেখে একটা হাসি দিলেন উনি। একটু এগিয়ে এসে বললে,

— ” কিছু বলবে?”

আমার কী হলো আমি নিজেই জানিনা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। আমার কেনো জানিনা এটা করতেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ইচ্ছা করল। আমি টাইট করে জড়িয়ে ধরে ওনার বুকে মাথা দিয়ে রেখে দিয়েছি ওনার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকা হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি আমি। আচ্ছা ওনার চেহারার এক্সপ্রেশনটা এখন কেমন? অবাক হয়ে আছেন? নাকি মুচকি হাসছেন? চোখ বন্ধ করে এসব ভাবছি। তখন হুট করে জড়িয়ে ধরলেও এখন লজ্জায় ওনাকে ছাড়তে পারছিনা। এখন ওনার দিকে তাকাবো কী করে আমি? এসব যত ভাবছি ওনাকে জড়িয়ে ধরা হাতদুটো ততই শক্ত হয়ে আসছে। হঠাৎ অনুভব করলাম ওনার দুটো হাত আমার পিঠের ওপর আলতো করে রাখলেন। আমি চোখদুটো আরও খিচে বন্ধ করে বললাম,

— ” থ্যাংক ইউ সো মাচ।”

উনি আস্তে করে নরম সুরে বললেন,

— ” কেনো?”

— ” আমি হওয়ার জন্যে আর আমায় আপনি বানানোর জন্যে।”

উনি বাহু ধরে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাহু ধরে দাঁড় করালেন আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি হাসিমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

— ” মানে?”

আমি নিচের দিকে তাকিয়েই না বোধক মাথা নাড়লাম। অর্থাৎ কিছুনা। উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” তুমি খুশি তো?”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললাম,

— ” খুব। আর সবকিছু আপনার জন্যে হয়েছে। আগে যা যা হয়েছে তাতে আমি যেই পরিমাণ ডিপ্রেসড ছিলাম তাতে আমি পড়াশোনায় এতোটা কনসেনট্রেট করতেই পারতাম না যদিনা আপনি রোজ দায়িত্ব নিয়ে রেগুলার আমাকে এভাবে না পড়তেন। আমাকে এভাবে সাপোর্ট না করতেন।”

উনি ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,

— ” তোমার জন্যে কিছুই করিনি আমি। যা করেছি নিজের জন্যে।”

আমি একটু ভাবুক হয়ে বললাম,

— “সেটা কীভাবে?”

আদ্রিয়ান আমায় ছেড়ে একটু গলা ঝেড়ে বললেন,

— ” দেখো আমাকে কম বেশি সবাই একটুআধটু চেনে। আফটার আল দা গ্রেট আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। এখন যদি তার বউ মেডিকেলেও চান্স না পায় তাহলে আমার মাথা হেট হয়ে যেতো। আমিতো জানতাম তুমি একটা গাঁধামার্কা স্টুডেন্ট তাই কাঠখড় পুড়িয়ে তোমায় পড়াশোনা করিয়েছি যাতে তুমি চান্স টা পাও আর আমার সম্মান টা বাঁচে। বুঝেছো?”

আমি কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে ওনার দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে থেকে বললাম,

— ” তাইনা?”

উনি ঠোঁট চেপে একটু হেসে বললেন,

— ” হ্যাঁ তাইতো।”

আমি হাত ভাজ করে মুখ ফুলিয়ে বললাম,

— ” আচ্ছা? ফাইন দেন। আপনি আপনার ঐ রেপুটেশনের সাথেই গিয়ে কথা বলুন গিয়ে আমার কাছে একদম আসবেন না। আর আমার সাথে কথাও বলবেন না।”

বলে আমি চলে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। তারপর একটানে নিজের বুকের ওপর ফেলে কানের পিঠে চুলগুলো গুজে দিতে দিতে ফিসফিসে গলায় বললেন,

— ” এতো রাগ? এতো রাগ শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। আর তাছাড়াও বাচ্চাদের এতো রাগ দেখাতে নেই।”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” এই সারাদিন এতো বাচ্চা বাচ্চা কেনো করেন হ্যাঁ? আমি কী বাচ্চা?”

— ” বাচ্চা নও বুঝি?”

— ” প্রুভ লাগবে আপনার?”

বলে সাথে সাথেই জিবে কামড় দিলাম। ইস! কী বলছিলাম এসব? উনি কী ভাবলেন? আমি আসলেই একটা গবেট। কথা বলার সময় একটু ভেবে বলিনা যে ঠিক কী বলছি। ওনার দিকে তাকাতেই উনি ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে কানে কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল,

— ” সত্যিই প্রুভ দিতে চাও?”

আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,

— ” ছাড়ুন আমার ঘুম পাচ্ছে রুমে যাবো।”

— ” এমা ঘুমাবে মানে কী? তুমি যে বললে প্রুভ দেবে?”

আমি ভ্রু কুচকে ওনার দিকে তাকাতেই উনি আমার নাকটা টিপে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা চলো।”

বলে উনি আমার হাত ধরে নিচে রুমে নিয়ে গেলেন। রাতে আমাদের মধ্যে বিশেষ আর কোনো কথা হয়নি। দুজনেই রুমে গিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরেছিলাম।

_________________

পরেরদিন সকালে আমরা ঢাকা ব্যাক করলাম। সজীব অর্ণব ভাইয়া আর কাব্য আমাদের সাথে আদ্রিয়ানদের বাড়িতেই এলেন কারণ আব্বু আম্মু ওখানেই আছে আর আজ সবার লাঞ্চের দাওয়াত ওখানে। বাড়িতে গিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে রুমে গিয়ে প্রথমে আদ্রিয়ান পরে আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। পরে দুজনেই নিচে গেলাম। সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতেই লাঞ্চ করলাম। বিকেলের দিকে আম্মু, আব্বু, ভাইয়ারা সবাই চলে গেলেন। বাবা, মামনী, বড় আব্বু, বড় আম্মু ওনারাও ভীষণ খুশি আমি মেডিকেলে চান্স পাওয়াতে। সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে বসে কবে ভর্তি হবো, গ্রান্ড সেলিব্রেশ কীভাবে কী হবে সবনিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে আলোচনা করতে করতেই ডিনারের টাইম হয়ে গেলো।

আমি আয়নার সামনে বসে চুল আচরাচ্ছি আর আদ্রিয়ান বেডে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছেন। আমি কিছু একটা ভেবে চুল বেধে উঠে গিয়ে ওনার পাশে গিয়ে বেডে হেলান বসে বললাম,

— ” আচ্ছা নূর আপুর সাথে কথা হয়েছে আপনার কেমন আছেন উনি?”

আদ্রিয়ান কাজ করতে করতেই বললেন,

— ” হুম হয়েছে। মুখেতো বলে ভালো আছি। কিন্তু কতোটা ভালো আছে আমার চেয়ে ভালো কে জানে? তবে তোমার সেদিনের বলা কথাগুলো খুব কাজে দিয়েছে। এখন আর অযত্ন করেনা নিজের।”

— ” এইসময় অযত্ন করাটা ঠিকও না। ওনার ডেলিভারির দিন তো এগিয়ে আসছে তাইনা।”

— ” মাসখানেক আছে এখনও।”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,

— ” ইশরাক ভাইয়া থাকলে কতো এক্সাইটেড থাকতেন তাইনা? বেবি আসবে শুনেই যা করছিলেন। কতো স্বপ্ন ছিলো এই বাচ্চাটা নিয়ে ওনার আর নূর আপুর। একটা ছোট্ট ভালোবাসাময় পরিবারের স্বপ্ন দেখেছিলেন ওনারা। অথচ একটা দমকা হাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল।”

আদ্রিয়ান কাজ থামিয়ে বললেন,

— ” দমকা হাওয়াগুলো এমনি হয় অনি। হঠাৎ করে সব শেষ করে দেয়। সব সুখ, স্বপ্ন, আনন্দ নিমেষেই এলোমেলো করে দেয়। তখনই শুধু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাসই বেঁচে থাকে আর কিচ্ছুনা।”

— ” কিন্তু ভাবলেই খুব খারাপ লাগে। এতো অল্প বয়সে এতোটা কষ্ট কীকরে সহ্য করতে পারে কেউ? নিজের ভালোবাসার মানুষটার মৃত্যু কেউ কীকরে সহ্য করতে পারে? নিজেরই চোখের সামনে নিজের স্বামীর লাশ দেখে কেউ কীকরে ঠিক থাকতে পারে। এভাবে চলে যাওয়াটা কীভাবে মানতে পারে যখন সেই মানুষটার সন্তান তার গর্ভে থাকে? এতটা যন্ত্রণাও সহ্য করা যায়? ”

উনি সামনের দিকে তাকিয়েই স্হির কন্ঠে বললেন,

— ” তুমি পারবেনা?”

আমি চমকে তাকালাম ওনার দিকে। পুরো চুপ হয়ে আছি আমি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” বলো? নূরের সাথে যা হয়েছে সেটা তোমার সাথেও যদি হয় তাহলে? এতোটাই ভেঙ্গে পরবে? এরকমটাই হয়ে যাবে তুমি?”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ এসব কেনো বলছেন? এধরণের কথার মানে কী? আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,

— ” ক্ কী বলছেন এসব?”

উনি হালকা হেসে ল্যাপটপটা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” বাদ দাও। তবে একটা কথা জানো? তোমার আচরণ বাচ্চা বাচ্চা হলেও তোমার কিছু কিছু কথায় ম্যাজিক থাকে। তুমি তোমার কথা আর আচরণ দিয়েই নূরকে স্বাভাবিক করেছো আর আমাকেও।”

আমি কিছুই বুঝলাম না আমি আবার কী করলাম? আমি ওনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

— ” আমি কী করলাম?”

উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বললেন,

— ” এইজন্যেই তোমাকে এতো.. পছন্দ করি।”

আমি একটু হেসে বললাম,

— ” যাক আপনার পছন্দের কেউ তো হতে পারলাম?”

আমার কথা শুনে উনি কিছুই বললেন না শুধু ওনার সেই ভুবন ভোলানো হাসিটা দিলেন আর আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই হাসি দেখতে লাগলাম।

#চলবে…

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৭
.
কয়েকদিন যাবত আদ্রিয়ান বেশ ব্যস্ত আছেন। আসলে এতোদিন আমার এডমিশন, তারপর আমাকে মামা বাড়ি থেকে আনতে গিয়ে তিনটে দিন থাকতে হয়েছে। এতে করে ওনার কাজে নাকি অনেক গ্যাপ পরেছে। এখন বেশি বেশি কাজ করে পুশিয়ে নিচ্ছেন। আজকে সকালেও খুব তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেছেন উনি। আমি রুমে একা একা বসে বোর হচ্ছি। এতোদিন তো তবুও আদ্রিয়ানের দিয়ে যাওয়া পড়াগুলো কম্প্লিট করে করে টাইম পাস করতাম। এখন তেমন কোনো কাজও নেই। সবে এডমিশন নিয়েছি ক্লাস শুরু হয়নি। যদিও আদ্রিয়ান একটা ফোন কিনে দিয়েছেন টাইম পাসের জন্যে। ভাবলাম এখন নিশ্চয়ই আপি নিচে থেকে চলে এসছে আপির সাথে গল্প করে আসি সেটাই ভালো। বেড থেকে নামবো তখনই দরজা থেকে কেউ বলল,

— ” হ‍্যালো ম্যম? আসবো?”

আমি তাকিয়ে দেখলাম আপি দুই হাতে দুটো ধোয়া ওঠা কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— ” তুমি আবার কবে থেকে আমার রুমে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে শুরু করলে।”

আমি হেসে দিয়ে ভেতরে আসতে অাসতে বলল,

— ” না মানে এখন তো আর তুমি আমার সেই অনি নেই। এখন তোমার বিয়ে হয়েছে। এখন রুমও তোমার একার নয় আমার দেবরেরও। তাই আর কী?”

বলে বেডে এসে বসল। আমিও হেসে দিয়ে বললাম,

— ” তোমার দেবরের কী রুমে থাকার সময় আছে? বলো? সে তো ল্যাব টু বাড়ি টু ল্যাব এটাই করছে এখন।”

আপি বেডে আসম করে বসে বলল,

— ” ওর কী দোষ বল? বেচারা বেশ অনেকটা দিন সময় দিয়েছে তোকে কিন্তু ওর ও তো কাজ আছে? সব রিকভার হয়ে এলে ঠিক আবার সময় দেবে।”

আমি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে আপির হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে বললাম,

— ” হুমম। ইফাজ ভাইয়া কী হসপিটালে গেছেন।”

— ” হ্যাঁ অনেক আগেই।”

আমি আর কিছু বললাম না আপিও আর কিছু বলল না। একটু পরেই দরজায় নক করে গলা ঝেড়ে কেউ বলল,

— ” আসতে পারি?”

আপি আর আমি দুজনেই তাকিয়ে দেখলাম যে ওটা জাবিন কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,

— ” তোমাদের ব্যপারটা কী বলবে? আমি আবার কবে থেকে এতো সম্মানীয় ব্যাক্তি হয়ে গেলাম যে তোমরা সবাই নক করে করে রুমে ঢুকছো।”

জাবিন একটু অবাক মুখভঙ্গি করে বলল,

— ” কী বলছো কী ভাবীমনি ? এটা দি গ্রেট আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের এর রুম। আর তুমি তার একমাত্র বউ। আমাদের কী সেটা ভুলে গেলে চলবে না কী?”

বলে বেডে এসে বসল। আমি অবাক হয়ে বললাম,

— ” বউ আবার কয়মাত্র হয়?”

জাবিন হেসে দিয়ে বলল,

— ” বাহ রে এখন যদি ভাইয়া আবার একটা বিয়ে করে তখন তো তুমি দুইমাত্র বউ হয়ে যাবে না?”

আমি কফিতে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

— ” আবার বিয়ে করবে মানে কী হ্যাঁ?”

জাবিন মুখটা সিরিয়াস করে বলল,

— ” নাহ মানে করতেই পারে যদি ভাইয়ার কাউকে পছন্দ হয়ে যায় তো? কী বলো বউমনি হতেই তো পারে তাইনা?”

আপিও সম্মতি দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ তাইতো। বিয়েটা যেভাবে হলো তাই অন্যকাউকে পছন্দ হয়ে যাওয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক কিছু না।”

আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে একবার আপির একবার জাবিনের দিকে তাকালাম। তারপর অসহায় গলায় বললাম,

— ” উনি এমন কিচ্ছু করবেনা। উনিতো বলেছেন আমায় আর কোনোভাবে কষ্ট দেবেননা।”

আপি কফির মগটা রেখে বলল,

— ” হ্যাঁ দেবে নাই তো। কষ্ট কেনো দেবে? আর ও আরেকটা বিয়ে করলে তুমি কেনো কষ্ট পাবে?”

জাবিনও নিজের মুখভঙ্গি দিয়ে একই প্রশ্ন করল। আমি আপির দিকে বিরক্তির দৃষ্টি দিয়ে বললাম,

— ” কষ্ট পাবো না কেনো হ্যাঁ? ইফাজ ভাইয়া যদি আরেকটা বিয়ে করলে তুমি কষ্ট পাবেনা?”

আপি একটু ভাব নিয়ে বলল,

— ” জ্বী না। কারণ তোর ভাইয়া আমায় ভালোবাসে। তাই সেই চান্স নেই। কিন্তু আদ্রিয়ান কী তোকে ভালোবাসে?”

জাবিনও তাল মিলিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ ভাবিমনি। বলো! বলো! ভালোবাসে?”

আমি কিছু না বলে কফি খাওয়ায় কনসিনট্রেট করলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। আচ্ছা উনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছেন ঠিকি কিন্তু উনি কী আমায় ভালোবাসেন? ওনার আচরণেও তো ঠিকভাবে কিছুই বুঝতে পারছিনা। মুখ গোমড়া করে এসব ভাবছি। হঠাত করেই আপি আর জাবিন একসাথে শব্দ করে হেসে দিলো। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওদের দিকে। আপি হাসতে হাসতে বলল,

— ” আরে পাগলি মজা করছিলাম আমরা। আদ্রিয়ান তোকে যথেষ্ট ভালোবাসে। মন থেকে ভালো না বাসলে কেউ এতো কিছু করেনা।”

জাবিনও হাসি থামিয়ে বলল,

— ” এক্সাক্টলি, ভাইয়া সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসে।”

আমি একটু মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,

— ” কচু। সেরকম কিছু হলে নিশ্চয়ই বলে দিতো।”

আপি আমার মাথায় একটা চাটা মেরে বলল,

— ” এতো অধৈর্য হচ্ছিস কেনো? সময় কী চলে যাচ্ছে না কী? ঠিক বলে দেবে।”

আমি কিছু না বলে কফি খাওয়াতেই মনোযোগ দিলাম। এরপর আপি আর জাবিনের সাথে বসে বসে আড্ডা দিলাম। সারাদিনে আদ্রিয়ান বাড়ি আসেন নি তাই বাড়ির সবার সাথে আড্ডা দিয়ে, দাদির সাথে দুষ্টুমি করে আর বাকি সময়টা মোবাইলে গেমস খেলে কাটিয়ে দিলাম।

____________________

প্রতিদিনের তুলনায় আজ আদ্রিয়ান একটু বেশিই লেইট করছেন ফিরতে। উনি রোজ দশটার মধ্যে ফিরে আসেন কিন্তু আজকে সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে এখনও এলোনা। আমাকে ফোন করে বলে দিয়েছেন আমি যাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। কিন্তু আমার কেনো জানিনা সেটা করতে ইচ্ছা করলো না। তাই এখনও বসে বসে ঝিমছি। হঠাৎ করেই দরজা খোলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখি উনি চলে এসছেন। আমি একটা হাই তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব ক্লান্ত। চুল এলোমেলো হয়ে গেছে, শার্টের ওপরের তিনটা বোতাম খোলা, হালকা ঘেমে আছেন। এই ক্লান্ত এলোমেলো রুপেও কতটা সুন্দর লাগছে দেখতে। উনি ভ্রু কুচকে ব্যাগটা রাখতে রাখতে বললেন,

— ” কী ব্যাপার? তোমাকে না বললাম খেয়ে শুয়ে পরো?”

আমি পিটপিটে চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” আপনি টায়ার্ড হয়ে এসছেন তো। নিচ থেকে খাবার ওপরে নিয়ে এসে খেতে ইচ্ছে করতোনা। শেষে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরতেন।”

উনি শার্ট খুলতে খুলতে মুচকি হেসে বললেন,

— ” বাহ। একয়েকদিনেই খুব ভালো চিনেছোতো আমায়। বাট তাই বলে এতো রাত জাগতে হবে?”

আমি আরেকটা হাই তুলে বললাম,

— ” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

উনি মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলেন আর আমিও নিচে গেলাম খাবার আনতে। ট্রে তে করে ‍দুজনের খাবার নিয়ে ওপরে এসে দেখি উনি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে গেছেন। একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট পরে বেড়িয়েছেন।এতো ফাস্ট কেনো এই ছেলেটা? আমি খাবারটা টি-টেবিলে রাখলাম। উনি চুল আচড়ে বেডে এসে আসাম করে বসলেন। আমি ওনাকে ওনার প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে নিজের নিয়ে বসলাম। উনি চুপচাপ খাচ্ছেন আর আমিও। দুজনেই কোনো কথা বলেই খাওয়া শেষ করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে সব গুছিয়ে এসে দেখি উনি শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাকে দেখে বললেন,

— ” দাঁড়িয়ে আছো কেনো? অনেক রাত হয়েছে তো? শুয়ে পরো?”

আমি কিছু না বলে শুয়ে পরলাম। কিন্তু আমার তো আপি আর জাবিনের বলা কথাগুলোই মনে খচখচ করছে। তাই কিছু একটা ভেবে বললাম,

— ” আচ্ছা আপনি যদি আপনার পছন্দের কাউকে পান তাহলে আবার বিয়ে করবেন?”

উনি একটু জোরেই বললেন,

— ” হোয়াট?”

আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। তারপর কোনরকম তুতলিয়ে বললাম,

— ” ন্ না মানে করতেই পারেন।”

উনি কুনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে আমার দিকে আধশোয়া হয়ে বলল,

— ” হঠাৎ এসব চিন্তা মাথায় ঢুকলো কেনো?”

আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,

— ” না মানে আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তাই করতেই পারেন আরেকটা বিয়ে। তাই না?”

উনি একটু চিন্তিত ফেস করে বললেন,

— ” তাইতো? এটা তো এতোদিন ভাবিনি? বেস্ট আইডিয়া। শুধু শুধুই এতদিন সেন্টি হচ্ছিলাম।”

আমি মুখ ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” সত্যিই বিয়ে করবেন আপনি?”

— ” কেনো না? তেমন কাউকে পেলে অবশ্যই করবো।”

— ” যা খুশি করুন।”

বলে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান পেছন থেকে আমার পেট জড়িয়ে ধরলেন। আমি ছাড়াতে নিলে উনি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— ” কাবার্ডে একটা প্যাকেট আছে। প্যাকেটে যা আছে কাল বিকেলে পরে রেডি হয়ে থেকো। বেড়োবো তোমাকে নিয়ে।”

আমি একটু অভিমানী গলায় বললাম,

— ” কেনো? আপনার জন্যে নতুন বউ খুজতে?”

— ” সেটা কালকেই দেখতে পাবে।”

আমি কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। বললেই হলো নাকি যে বিয়ে করবো? এতো সহজ? মেয়ে ঠিক করে দেখাক না এমন ভাঙ্চি দেবো যে সাত জন্মেও আর বিয়ে হবেনা। এসব নানারকম কথা ভাবতে ভাবতে আর ওনার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম।

____________________

আদ্রিয়ানের দেওয়া ড্রেসটা পরে আয়ানায় নিজেকে দেখছি। উনি একটু আগেই মেসেজ করেছেন যে আধঘন্টার মধ্যে আসবেন আমায় নিতে। ওনার কথামতো কাবার্ড খুলে দেখি একটা প্যাকেট। প্যাকেটটা নিয়ে বেডে বসে খুলে বের করে দেখি একটা কালো লং গ্রাউন, তারসাথে গ্রে একটা ওড়না। জামাটার ওপর গ্রে স্টোনের হালকা কাজ আছে, গলাটাও রাউন্ড গলা, ফুল হাতা। একটা বক্সও পেয়েছি বক্সটা খুলে দেখলাম একটা গ্রে স্টোনের মিডিয়াম সাইজের কানের দুল। আপিদের বলেছিলাম আজ বিকেলে আদ্রিয়ানের সাথে বেড়োবো। তাই ওরা দুপুর থেকেই এক্সাইটেড হয়ে আছে। আমি ড্রেসটা পরে বেড়িয়েই দেখি ওরা সাজানোর জিনিস বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,

— ” এগুলো কী করছো তোমরা?”

জাবিন হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে ভাবিমনি কী বলছ? ভাইয়ার সাথে আজ প্রথম ডেট এ যাচ্ছো। একটু সাজগোজ তো করবেই না?”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— ” তাই বলে এতো?”

আপি মেকাপ গোছাতে গোছাতে বলল,

— “আরে একটুই সাজাবো টেনশন করিস না। আয় তাড়াতাড়ি আয়।”

ওরা আমাকে ধরে বসিয়ে অনেকটা জোর করেই একটু সাজিয়ে দিল। চোখে আইলাইনার, একটু কাজল, ঠোঁটে হালকা করে নুড কালার লিপস্টিক, মুখে হালকা ফেসপাউডার পাফ করে দিলো। ওড়নাটা সাইডে মেলে দিয়ে নিয়েছি। আর চুলগুলো খুলে দিয়েছি। আপি এয়ারিং পরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কী ব্যাপার? আদ্রিয়ান ইয়ারিং দিলো অথচ কোনো পেন্ডেন্ট বা লকেট দিলো না কেনো?”

জাবিন কিছু বলবে তার আগেই আমার ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ফোন করেছেন। অামি আপিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,

— ” এই দেখো উনি ফোন করে ফেলেছেন। আমি যাই হ্যাঁ?”

বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে দরজার কাছে যেতেই আপি ডাকলো। আমি পেছনে তাকাতেই আপি আর জাবিন একসাথে বলে উঠল,

— ” অল দা বেস্ট।”

বলেই ওনারা হেসে দিলেন। আমি হেসে দিয়ে চলে এলাম। নিচে যেতে যেতে হাতের রিংটা দেখতে লাগলাম যেটা উনি আমাকে এনগেইজমেন্টের দিন পড়িয়ে দিয়েছিলেন। নিচে গিয়ে দেখলাম উনি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার পরনে গ্রে কালার একটা ফুল হাতা গেঞ্জি, আর কালো জিন্স পরে আছে, পায়ে হোয়াইট কেডস্। সকালে তো এগুলো পরে বেড়োন নি? আমার জানা মতে ওনার এমন কোনো পোশাকও নেই তাহলে? নতুন কিনেছেন? এসব ভাবতে ভাবতে ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি ফোন দেখছিলেন। আমি ওনার সামনে দাঁড়িয়ে গলা ঝাড়লাম। আমার গলার আওয়াজ পেয়ে উনি আমার দিকে তাকালো। তাকানোর সাথে সাথেই ওনার দৃষ্টি স্হির হয়ে গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই ফোনটা পকেটে রাখলেন। উনি আমার পা থেকে মাথা অবধি স্কান করে ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললেন,

— “ওঠো।”

আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। উনিও গাড়িতে বসে আমার সিটবেল্ট বেধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন। কিছক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম,

— ” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

আদ্রিয়ান ড্রাইভ করতে করতে বললেন,

— ” গেলেই দেখতে পাবে।”

আমি বিরক্ত হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” এমন কেনো আপনি? সবসময় থ্রিল থ্রিল ভাব রাখেন সবসময়। সবসময় মনের মধ্যে চলতে থাকে এরপর কী হবে? এরপর কী হবে?”

আমার কথায় উনি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন,

— ” মাঝে ভাবা ভালো। মস্তিষ্কচর্চা হয়।”

আমি মুখ ভেংচি কেটে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। প্রায় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে গাড়ি চলল। আমি ওনাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি কারণ জানি কিছুই বলবেন না। হঠাৎ একটা জায়গায় গাড়ি এসে থামলো। আমি দেখলাম একটা বাড়ির সামনেই গেইটেই গাড়িটা থেমেছে হয়তো ফার্মহাউজ। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকাতেই উনি পকেট থেকে একটা রুমাল বার করে আমার চোখ বেধে দিলেন। আমি অবাক হয়ে বললাম,

— ” ক্ কী করছেন কী? এমন একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে এসছেন। মেরে গুম করে দেবেন নাকি? যাতে নতুন বউ আনতে সুবিধা হয়? ”

আদ্রিয়ান আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন,

— ” বাহবা তোমার মাথায় এতো বুদ্ধি জানতাম না তো? ঝট করে বুঝে গেলাম।”

আমি হাসলাম না দেখেই বুঝতে পারলাম উনিও হাসছেন। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও উনি হেটেই যাচ্ছেন। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” এতক্ষণ ধরে কোথায় যাচ্ছেন বলুন তো? হাটছেন তো হাটছেনই।”

— ” আসলে পেছনে একটা নদী আছে। মেরে সেখানেই ফেলবো তোমাকে।”

আমি ঠোঁট চেঁপে হেসে বললাম,

— ” ওহ আচ্ছা।”

কিছুক্ষণ মধ্যেই উনি আমায় একটা জায়গায় দাঁড় করালেন। আমার দুইকাধে হাত রেখে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

— ” আর ইউ রেডি টু ডাই?”

আমি ঠোঁটে হাসি রেখেই বললাম,

— ” কমপ্লিটলি।”

উনি আলতো করে আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলেন। আমি হেসে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আবছা লালচে অন্ধকারে সামনে বয়ে চলা নদীটা খুব বেশি সুন্দর লাগছে। নদীর পারটা ফুল, রঙ বেরঙ এর মোটবাতি, আর ছোট ছোট কালারফুল লাইটস দিয়ে সাজানো। চারপাশটা এতোটা সুন্দর করে সাজানো যে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে আমার। আমার সরাসরি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কারণ সামনে একটা বড় বোর্ডে গোলাপ ফুল দিয়ে মোটা করে ইংলিশে লেখা আই লাভ ইউ। আমি সাথেসাথেই শক্ত হয়ে গেলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। উনি আমার দুই বাহু ধরে নিজের ধরে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। উনি মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললেন,

— ” ইয়েস আই লাভ ইউ। আজ থেকে নয় এখন থেকেও নয় শুরু থেকেই ভালোবাসি। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি। আমি নিজেও জানিনা কেনো, কীভাবে ভালোবেসেছি তোমাকে। শুধু এটুকু জানিযে ভালোবাসি। তোমার হাসি, বাচ্চামো, হঠাৎ কেদে দেওয়া, মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকা, ভ্রু কুচকানো এইসবকিছু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আরও গভীর করেছে। অন্যদের মতো উইল ইউ ম্যারি মি বলতে পারবোনা কারণ বিয়ে হয়ে গেছে। হাটু ভেঙ্গে বসে আই লাভ ইউ বলবোনা কারণ আমি শুধু তোমায় আমার ভালোবাসার কথা জানাচ্ছি। আমাকে তুমি ভালো সেদিনই বাসবে যেদিন তোমার মন চাইবে।”

আমি কাঁপা গলায় বললাম,

— ” আ্ আপনি..”

উনি আমার দুই কানের ওপর হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,

— ” হ্যাঁ ভালোবাসি তোকে। এতোটা ভালোবাসি যে সেই ভালোবাসার মাপটাও করা সম্ভব নয় আমার কাছে। করতে চাইও না। আর না এই ভালোবাসার কোনো সঙ্গা চাই আর না মানে। শুধু এটুকু জানি ভালোবাসি, ভালোবাসি শুধুই ভালোবাসি।”

#চলবে…

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৮
.
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সারা শরীর মৃদু কম্পিত হচ্ছে আমার। ওনারা প্রতিটা কথা আমার হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে। নিজের চোখ কান অনুভূতি কোনো কিছুকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। নিজের হাজবেন্টের কাছ থেকে এরকম লাভ কনফেশন পাওয়া যেকোন মেয়ের কাছেই ভাগ্যের বিষয়। ওনার প্রতিটা শব্দের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমার এরকম মনে হচ্ছে আমি কোনো স্বপ্নের রাজ্যে আছি।উনি মাথা সরিয়ে আমার চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললেন,

— ” কী হলো? কিছু বলছো না যে?”

আমি স্হির দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে। আমি কী বলবো? আমার সব কথা গলাতেই আটকে গেছে। আমি ভাবতেও পারিনি আজকে এমন কিছু হবে। উনি মুচকি হেসে বললেন,

— ” আচ্ছা কিছু বলতে হবেনা। জাস্ট ওয়েট আ মিনিট।”

এটুকু বলে উনি পকেট থেকে একটা গ্রে রং এর চেইন বের করলেন যেটাতে গ্রে রং এর একটা লাভ শেপের সুন্দর লকেট, লকেটের ওপর হোয়াইট স্টোনের ডিজাইন করা। এগুলো ডায়মন্ড না কী? আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি লকেটটার দিকে। উনি আমার দিকে ঝুকে আলতো করে কাধ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে লকেটটা পরিয়ে দিলেন। লকেটটা পড়িয়ে উনি সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আমার হাত অটোমেটিক গলায় চলে গেলো। উনি মুখে সেই মোহনীয় হাসি ফুটিয়ে বললেন,

— ” চেক ইট?”

আমি লকেটটা উঁচু করে ধরে দেখলাম লকেটটার গায়ে ছোট ছোট হোয়াইট ডায়মন্ড দিয়ে ইংলিশ এ আর ও ওয়ার্ড দিয়ে ডিজাইন করা আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। উনি ইশারা করে লকেটটা খুলতে বললেন। আমি লকেটটা খুলে আবারও অবাক হলাম। কারণ ডান পাশে ওনার একটা ছবি আর বামপাশে আমার ছবিটা আছে। ছবিটা আপির এনগেইজমেন্টের দিনের। সেই পিংক গাউন পরা। ছবিটাতে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছি। আমি অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” এই ছবিটা? ”

আদ্রিয়ান আমার দুকাধে হাত রেখে বলল,

— ” ছিলো আমার কাছে। তোমার পছন্দ হয়েছে?”

আমি লকেটটার দিকে একবার তাকিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। এখনও শক থেকে বেরোতে পারছিনা আমি। কোন কথায় কীভাবে রিয়্যাক্ট করবো বুঝতে পারছিনা। উনি হঠাৎ করেই আমায় আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এরআগেও একদিন নিজে থেকে হাগ করেছেন আমায় সেটাতো শুধু আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই। কিন্তু আজ এমন মনে হচ্ছে যেনো ওনার ভেতরের সমস্ত আবেগ অনুভূতি ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন উনি আমায়। আমি আস্তে আস্তে ওনার পিঠে হাত রেখে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভালোবাসাময় একটু ছোঁয়ায় যে এতো সুখ লুকিয়ে থাকে আজকের আগে কখনও বুঝিনি। এতো ভালো কেনো লাগছে আমার? বেশ অনেকটা সময় পর উনি আমায় ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করালেন। নদীর পার থেকে আসা বাতাসে আমার মুখে উড়ে আসা চুলগুলো সরিয়ে দুই কানের ওপর দিয়ে হাত রেখে কপালে বেশ সময় নিয়ে একটা চুমু দিলেন। আমি চোখ বন্ধ করেই ওনার গেঞ্জি খামচে ধরলাম। এটাই ওনার আমার কপালে ভালোবেসে এঁকে দেওয়া প্রথম স্পর্শ ছিলো। সারাজীবনেও হয়তো এই স্পর্শটা ভুলতে পারবোনা আমি। আমি চোখ বন্ধ করে আছি এখনও। উনি বললেন,

— ” অনি, আমি তোমার জন্যে এতো কষ্ট করে এতো সব কিছু ডেকোরেট করলাম অথচ তুমি ভালো করে দেখছোও না। নট ফেয়ার।”

আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকাতেই উনি ইশারা করে বললেন চারপাশটা দেখতে। আমি চারপাশে তাকিয়ে এবার সব দেখতে লাগলাম চারপাশে দড়ি টানিয়ে তাতে বিভিন্ন রঙের বেলুন বাঁধা, আর রঙিন কাগজের বিভিন্ন ডিজাইন টানানো, কালারফুল লাইটস, নিচে মোমবাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো আমি হাটতে হাটতে বেলুন, লাইটস, কাগজ নেড়ে নেড়ে দেখছি পুরোটাই নদীর পার দিয়ে মানে দুকদম এগোলেই নদী। নদীর পার দিয়ে পানির ওপর দিয়েও ফুল সাজানো। লাইটের আলোতে যা চমৎকার লাগছে। সব দেখে আমি হেসে দিয়ে পেছন ফিরে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার পেছন পেছনই এসেছেন। আমি ওনাকে কিছু বলবো তার আগেই উনি আমাকে ধরে আবার নদীর দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। এরপর ফোনে কী জেনো করলেন সাথে সাথে নদীর মাঝদিয়ে এক এক করে একটু দূরে দূরে আলো জ্বলে উঠলো। আমি অবাক হয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম এগুলো সব নৌকা। প্রায় পঁচিশ ত্রিশটা নৌকা। আর নৌকার মধ্যেই আলো জ্বলছে। আমি অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার দিকে উনি আবারও সামনে তাকাতে বললেন। আমি আবার নদীর দিকে তাকাতেই উনি থ্রি টু ওয়ান কাউন্ট করলেন। ওয়ান বলার সাথে সাথেই এরকমই পঁচিশ ত্রিশটা ফানুস ওপরে উঠে গেলো আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উপরে উঠতে থাকা ফানুসগুলোর দিকে। উনি আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বললেন,

— ” এসব জিনিস, ন্যাকামো আমি কখনো পছন্দ করিনা আমার কাছে ভালোবাসা ভালোবাসাই সেটা জাহির করার দরকার হয়না, এভাবে তো একদমই না। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তোমার কোনো দোষ ছিলোনা তবুও তোমায় বারবার কাঁদিয়েছি। তাই তোমার মনটা ভালো করার জন্যে এতোদিনের দেওয়া কষ্ট একটু হলেও পুশিয়ে নেওয়ার জন্যে, তোমার মুখের এই মায়াবী মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্যে এটুকু তো করতেই পারি তাইনা?”

আমি স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ওনাকে ভালোবাসি কী না জানিনা কিন্তু নিজের স্বামীর এটেনশন, ভালোবাসা সব মেয়েরাই চায়। আমিও চেয়েছি। আর আজ সেটা পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, সবচেয়ে সুখী মনে হচ্ছে। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,

— ” আজ এতো চুপ কেনো? এমনিতেতো বকবক করে আমার মাথাই ধরিয়ে ফেলো।”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে মুচকি হাসলাম। রোজ রেগে গেলেও আজ ওনার এই টিজ করা কথাগুলোও খুব বেশিই ভালোলাগছে। উনি আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,

— ” জানো কখনও ভাবিনি কাউকে ভালোবাসবো। আর যখন বাসলাম তখন এতোটা ভালোবাসলাম যে তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারছিনা আমি। এতোটা জড়িয়েছি যে নিজের থেকে কোনোদিন আলাদা করতে পারবোনা।”

আমি শুধু তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এই আদ্রিয়ান বাসররাতে বলেছিল আমায় কোনোদিনও বউ বলে মানবেনা। অথচ আজ সেই আদ্রিয়ানই আমায় ভালোবাসি বলছে। বারবার বলছে। উনি বললেন,

— ” নদীর মাঝখানে একটা চর আছে চলো যাই। নৌকাতেও ওঠা হয়ে যাবে তোমার?”

আমার অনেকদিন যাবত নৌকায় ওঠা হয়ে ওঠেনা তাই খুব এক্সাইটেড হয়ে বললাম,

— ” সত্যি? নৌকায় চড়বো?”

উনিও হেসে দিয়ে বললেন,

— ” হ্যাঁ চলো।”

উনি ফোন করতেই একটা নৌকা এসে পারে ভিরলো। প্রথমে উনি উঠে হাত ধরে আমাকে ওঠালেন। প্রায় আধঘন্টার নদীপথ ছিলো। ততোক্ষণ আমি আর আর একটা কথাও বলিনি। চুপচাপ ঠান্ডা হাওয়া আর অন্ধকারাচ্ছন্ন চারপাশের পরিবেশটাকে উপভোগ করেছি। চরে নেমে দেখলাম চরটা খুবই নিরিবিলি পাশে একটু বাগান বাগান। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললাম,

— ” কী ব্যাপার বলুনতো? সত্যি সত্যিই কী আমায় মেরে টেরে ফেলে দিয়ে যাবেন নাকি?”

উনি বাঁকা হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে এগোতে এগোতে বললেন,

— ” হ্যাঁ। মারবোই তো।”

বলে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি পেছানোর ভুলটা করছিনা কারণ পিছিয়ে আর যাবোটা কোথায়? ঘুরে ফিরে তো ওনার কাছেই আমায় আসতে হবে। উনি আমার কোমর চেঁপে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে বললেন,

— ” তবে মেরে ফেলে রেখে যাবোনা। সাথে করে নিয়েও যাবো।”

আমি ওনাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালাম। একেবারে নদীর পারেই দাঁড়ালাম। উনি পেছন থেকে আমার দুই হাতের ওপর হাত রেখে বললেন,

— ” অনি? কখনও একটু মুক্ত স্বাধীন হাওয়াকে চোখ বন্ধ করে দু হাত ছড়িয়ে উপভোগ করেছো?”

আমি মাথা নেড়ে না বললাম। উনি আমার দুহাত ছড়িয়ে ধরে বললেন,

— ” এখন করে দেখো নিজেকে মুক্ত উড়ন্ত পাখি মনে হবে।”

আমি ওনার কথা মতো ঠিক তাই করলাম কিছুক্ষণ পর ফিল করলাম হ্যাঁ একদম ঠিকই বলেছেন উনি। সত্যিই আমার নিজেকে মুক্ত উড়ন্ত পাখিই মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ এই হাওয়া উপভোগ করার পর উনি হাত নামিয়ে আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে বললেন,

— ” তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা কতোটা হালকা লাগছে নিজেকে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তি মনে হচ্ছে। কারণ আজ তোমাকে নিজের মনের কথা বলতে পেরেছি। তোমাকে ভালোবাসতে পারছি। এন্ড তোমাকে নিজের কাছে পাচ্ছি, নিজের সাথে পাচ্ছি।”

বলে আবারও জড়িয়ে ধরলেন আমায়। আমিও চোখ বন্ধ করে আজ ওনার দেওয়া ভালোবাসা গুলো উপভোগ করছি। এরপর আমরা বেশ অনেক্ষণ ওখান দিয়ে হেটেছি, চারপাশটা ফিল করেছি। কেনো জানিনা আজ সবকিছুই ভালো লাগছে আমার। খুব বেশিই ভালো লাগছে। নৌকা দিয়ে ফেরার সময় দুজনে একটু দূরত্ব নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করে উনি আমাকে পানির ছিটা দিলেন। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে আমিও রেগে গিয়ে আমিও ওনাকে পানি ছুড়ে মারলাম। উনি আবার মারলেন আর আমিও। এমন করতে করতে কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম মাঝি আমাদের দেখছেন আর হাসছেন। তাই দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। একটু পর একে ওপরের দিকে তাকিয়ে দুজনেই ফিক করে হেসে দিলাম। ওপারে নেমে একটূ এগিয়ে গিয়ে উনি বললেন,

— ” রাত দশটা বেজে গেছে। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? চলো একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকি।”

আমি একটু ভেবে বললাম,

— ” কিন্তু বাড়িতে সবাই..”

— ” ওদের বলে দিয়েছি ফিরতে রাত হবে।”

— ” আচ্ছা চলুন তাহলে।”

এরপর দুজনে ওখানকার একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করলাম। ওখান থেকে বেড়িয়ে দুজনেই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। হালকা ফুরফুরে হাওয়ায় মিডিয়াম স্পিডে চলতে থাকা গাড়ি, পাশে মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে আমার। হুট করেই উনি গান প্লে করলেন ‘ এগিয়ে দে।’ কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আমি ভ্রু নাচাতেই উনি চোখ সরিয়ে নিতে ড্রাইভিং এ মন দিলেন। আমিও হেসে দিয়ে বাইরে তাকালাম।

বাড়ি ফিরতেই মিনু দরজা খুলে দিলো। বাকি সবাই ঘুম। দুজনেই সোজা রুমে গেলাম। প্রথমে উনি ফ্রেশ হয়ে এলেন এরপর আমি গেলাম। আমি বেড়িয়ে এসে দেখি উনি বেডে আধশোয়া হয়ে ফোন দেখছেন। আমার তাকিয়ে বললেন,

— ” খুব টায়ার্ড নিশ্চয়ই? এসো ঘুমাবে।”

এতোদিন যেমন তেমন ছিল। উনি আমায় ভালোবাসে জেনে ওনার কাছে যেতে বা আশেপাশে যেতে কেমন যেনো লাগছে এখন। এটা কী সংকোচ নাকি লজ্জা জানিনা কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছে। উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” কী হলো এসো?”

আমি আস্তে করে বেডে এককোণে গুটিয়ে শুয়ে পরলাম। উনিও লাইট অফ করে শুয়ে পরলেন। বেশ কিছুক্ষণ পুরো ঘরটা নিরব ছিলো। হঠাৎ উনি বললেন,

— ” জানপাখি?”

আমার শরীর সাথে সাথে হালকা কেঁপে উঠল। জানপাখি ডাকটা কেনো জানিনা আমার বুকে গিয়ে খুব জোরেই লাগলো। হঠাৎ এই নামে আমায় ডাকলেন কেনো? আমাকেই ডেকেছেন তো? আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি, চুপচাপ শুয়ে আছি। উনি আবার বললেন,

— ” আমার বুকে মাথা রেখে শোবে প্লিজ?”

আমি অনেক বেশিই অবাক হলাম কিন্তু ওনার এই মিষ্টি করে করা অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। তাই আস্তে করে গিয়ে ওনার বুকে মাথা রাখলাম। উনি সাথে সাথেই একহাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়। আর আমি আজ সারাদিনে ঘটা ঘটনাগুলো ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসলাম তারপর চোখ বন্ধ করে ওনার হার্টবিট শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে