#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১
আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। যেই নামটা চিরকালই আমার কাছে একটা অসহ্য বস্তু সেই নামটাই আমার জীবনের সাথে এভাবে জুড়ে যাবে কখনো ভাবতেও পারিনি। ভারী শাড়ি আর একগাদা গয়না পরে বউ সেজে বসে আছি বিভিন্ন রকম ফুল দিয়ে সাজানো একটা ঘরে। আমার জানা মতে এটাকে বাসর ঘরই বলে। কিন্তু যার জন্যে এভাবে বসে আছি তারই কোনো খবর নেই। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে, রাত যে অনেকটা হয়েছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। আবছা অন্ধকার রুমটাতে দেয়াল ঘরিটার ওপর ছায়া পরে আছে তাই সময় দেখতে পারছিনা। বাসররাতে মেয়েরা নাকি লজ্জা, ভালোলাগা, শিহরনের মতো কিছু অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে বসে থাকে কিন্তু আমি বসে আছি একটা চাপা টেনশন আর ভয় নিয়ে। আদ্রিয়ান ভাইয়ার কথাটা ঐ মুহূর্তে না শুনে জেদ দেখিয়ে যেই কাজটা করেছি সেটাকি ঠিক হলো? মানবেতো উনি আমাকে নিজের বউ হিসেবে? যদি না মানে তাহলে কোন দিকে মোড় নেবে আমার জীবন? আমি অনিমা। সবাই ভালোবেসে ছোট করে অনি বলে ডাকে। আর হ্যাঁ আজ যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তার নাম আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। হঠাৎ করেই যে এরকম কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারিনি। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। সেইজন্যে অনেক আদর যত্নেই বড় হয়েছি। মাত্র এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসবো সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো। আমার জানা মতে বাবা মাও এমন কিছু ভাবেন নি তাহলে? হঠাৎ কী হলো? এরকম কেনো করলেন ওনারা আমার সাথে? দরজা লাগানোর শব্দে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। আবছা অন্ধকার তাই দেখতে না পেলেও বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান ভাইয়া এসছেন। তখন জেদ করে অনেক সাহস দেখিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু এখন হৃদপিণ্ড তীব্র গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে, ভয়ে গলা শুকিয়ে অাসছে। নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলে যাচ্ছি। আমি না তাকিয়েও বুঝতে পেরেছি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব থাকার পর উনি বলে উঠলেন,
— ” এখানে আমি ছাড়া কেউ নেই। তাই এই ভয় বা লজ্জা পাওয়ার ন্যাকামো টা বন্ধ করো। তুমি দেখতে যতোটা ভোলাভালা তার একবিন্দুও তুমি নও সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো আর আমিও জেনে গেছি। তাই এই ড্রামা বন্ধ করো।”
ওনার এরকম কর্কশ বাণী শুনে ওনার দিকে তাকালাম আমি। কথাগুলোতে কষ্ট পেলেও চেহারায় সেটা প্রকাশ করলাম না। আবারও মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি এবার আমার হাত ধরে টেনে বেড থেকে নামালেন আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার হাত চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললেন,
— ” এবার বলোতো এক্সক্টলি কেনো বিয়ে করেছো আমাকে? আমাদের এতো বিশাল প্রপার্টি দেখে? ছেলে এতো বড় একজন ইঞ্জিনিয়ার। কোনো কিছুরই অভাব হবেনা জীবনে। এসব ভেবেই বিয়েটা করেছো রাইট? তোমাদের মতো মিডেলক্লাস মেয়েরা এরকম ওফার পেলেতো লুফে নেবেই তাইনা? টাকার জন্যে তো সব করতে পারো তোমরা।”
আমি জানতাম যে আমি নিজের জেদ রাখতে যেটা করেছি তারপর ওনার আমার ওপর রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তার বদলে যে আমাকে এধরণের কথা শোনাবেন উনি সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। তবে সেই জল ওনার চোখে পরেছে কী না জানিনা। উনি আমার হাতটা ধরে সামনে নিয়ে গিয়ে হাতে কাগজ টাইপ কিছু একটা ধরিয়ে দিলেন আমি ভ্রু কুচকে ওটা সামনে আনলাম। একটা চেক কিন্তু রুমটা অন্ধকার তাই ভেতরে কী লেখা আছে জানিনা। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি বললেন,
— ” এভাবে তাকানো কিছু নেই। তোমার রেট ঠিক জানা নেই আমার। এই টাইপের মেয়েদের ডিমান্ড তো কখনো শেষ হয়না। তাই এই ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে দিয়ে দিলাম। ঠিক ততোটাই এমাউন্ট বসিয়ে নিয়ো যতোটা পেলে আমাকে মুক্তি দিতে পারবে।”
আমার এবার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে। জীবণের পরিধি খুব একটা বেশি নয় আমার। এই অল্প বয়সে নিজেকে এতো ছোট কোনোদিন মনে হয়নি যতোটা আজ মনে হচ্ছে। আমি নিজেকে সামলে হালকা ভাঙা আর রাগী গলায় বললাম,
— ” দেখুন আপনি কিন্তু এবার আমাকে অপমান করছেন? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আমার রেট কতো হ্যাঁ ? আপনি কী বলছেন আপনি জানেন?”
আদ্রিয়ান ভাইয়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
— ” অপমান? তোমার মান বলে কিছু থাকলে তো অপমান করবো তাইনা? যদি তোমার সামান্যতম আত্মসম্মান থাকতো তাহলে আমাকে বিয়ে করতে না।”
আমার এবার বুক ফেটে কান্না আসছে। এভাবে কেউ কোনোদিন আমাকে অপমান করেনি। বিয়ের প্রথম রাতে নিজেরই স্বামীর দ্বারা এভাবে অপমানিত হবো ভাবতেও পারিনি। বাংলা সিনেমা আর ইন্ডিয়ান সিরিয়ালগুলোতে এরকম ঘটনা অহরহ দেখতাম আর ভীষণই বিরক্ত হতাম। ফালতু কাহিনী। কিন্তু সেটাই যে বাস্তবে আমার সাথেও ঘটে যাবে ভাবতেও পারিনি। আমি চাইলে ওনার প্রত্যেকটা কথার জবাব দিতে পারতাম। কিন্তু এইমূহুর্তে তেমন কোনো ইচ্ছে বা মানসিকতা নেই আমার। আমিই সেই অনি যাকে কেউ সামান্য কটু কথা বললে কেঁদেকেটে অস্হির হয়ে যেতাম। কিন্তু পরিস্থিতি নিজেকে সামলাতেও শিখিয়ে দিলো। এখন আমি কাঁদবোনা, কেঁদে নিজেকে ওনার সামনে দুর্বল প্রমাণ করতে পারবোনা। ওনারা কথাগুলো মনে চরমভাবে আঘাত করলেও এমন একটা ভাব করলাম যেনো আমার কিছু যায় আসেনা। চেকটা টেবিল রেখে একটা হাই তুলে বেডে শুতে যাবো তখনি উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘোরালেন। হাত টা এতোই শক্ত করে ধরেছেন যে হাত জ্বলে যাচ্ছে আমার মনে হয় চুড়ি ভেঙ্গে হাতে ঢুকে গেছে। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি বললেন,
— ” আমার বেডে কেনো আমার বেডরুমেও তোমার কোনো জায়গা হবে না।”
এটুকু বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে ব্যালকনিতে নিয়ে যাচ্ছেন আমি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। সত্যিই আমি আমার সদ্য বিয়ে করা স্বামীর কাছ থেকে এতোটা খারাপ ব্যবহার ডিসার্ব করি? উনি আমাকে ব্যালকনিতে ছুড়ে মারলেন একটুর জন্যে পরে যাইনি। উনি ব্যালকনির দরজা লাগাতে যাবেন আমি কিছু একটা ভেবে হাত দিয়ে বাধা দিলাম। এরপর ওনাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে নিজেও ভেতরে গিয়ে বললাম,
— ” এটাকে কী বাংলা সিনেমা পেয়েছেন? নাকি আমাকে দেখে নায়িকা সাবানা বা মৌসুমী টাইপ কিছু মনে হচ্ছে? কোনটা?”
উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে। ওভাবে তাকিয়েই বললেন,
— ” কী বলতে চাইছো?”
আমি গিয়ে বেডে বসে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” বাসর ঘরে আমি বসে বসে আপনার জন্যে ওয়েট করবো, আপনি বাংলা সিনেমার বা সিরিয়ালের নায়কদের মতো এসে আমাকে যা ইচ্ছা বলে অপমান করবেন, বউ হিসেবে মানি না বলবেন, একবেডে থাকতে পারবেন না বলে সোফায়, ফ্লোরে বা ব্যালকনিতে পাঠিয়ে দেবেন। আর আমিও অবলা অতি ভোলাভালা নায়িকাদের মতো চলে যাবো? আপনিই তো একটু আগেই তো বললেন যে আমাকে যতোটা ভোলা দেখতে আমি তা নেই। তাহলে আপনি ভাবলেন কীকরে যে আমি সব মেনে নেবো?”
উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে চোয়াল শক্ত করে বলল,
— ‘ আমি তোমার সাথে বেড শেয়ার করতে পারবোনা বুঝেছো?”
আমি আরেকটা হাই তুলে বললাম,
— ” সেটা আপনার ব্যাপার। যেহেতু আপনার বাবা-মা আমাকে বউ করে এই বাড়িতে এনেছেন, আপনার স্ত্রী হিসেবে এনেছেন সেহেতু এইরুমের সবকিছুর ওপর আমার অর্ধেক অধিকার আছে। সে অনুযায়ী অর্ধেক বেড আমার।”
বলে শুতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,
— ” বেশি বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু।এসব করে ভেবোনা আমাকে ফাসাতে পারবে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের এতো স্বস্তা না। আমি তোমাকে নিজের বউ হিসেবে মানি না আর না ভবিষ্যতে মানবো।”
আমি হাত ছাড়িয়ে আবারও মেকি হেসে বললাম,
— ” হ্যাঁ আর আমি সেই দুঃখে মরে যাচ্ছি? বয়ে গেছে আমার। যাই হোক অনেক রাত হয়েছে। খুব ঘুম পাচ্ছে আমার আমি ঘুমোবো। ”
বলে বেডের এক সাইডে শুয়ে পরলাম। একটু সময় পর বললাম,
— ” বাকি অর্ধেকটা কিন্তু আপনার। আপনি ওখানে যা খুশি করতে পারেন। গুড নাইট।”
বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সাহস করে এসব তো করে ফেললাম কিন্তু এখন ওনার রিঅ্যাকশনটা দেখার মতো সাহস আমার নেই তাই চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছি। হঠাৎ আলাপ পেলাম উনি আমার পাশ থেকে একটা বালিশ আর চাদর নিয়ে সোফায় চলে গেলেন। আর বিড়বিড় করে ” ডিসগাস্টিং” শব্দটা বলতে ভোলেন নি। আমি ওনার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবলাম। আজ আরাম করে সোফায় ঘুমিয়ে নিন চান্দু। কালকে থেকে আপনাকে এই বেডে আমার পাশেই শুতে হবে। কাল আপনাকে বেডে আনতে না পারলে আমিও অনি না। প্রায় অনেকটা সময় চোখ বন্ধ করে ছিলাম। ওনার সারাশব্দ না পেয়ে পেছনে ঘুরে দেখলাম উনি ঘুমিয়ে পরেছেন। শেরওয়ানি খুলে ফেলেছেন। গায়ে একটা সাদা চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি আছে। এক পা নিচে পরে আছে চাদরটাও ঠিক করে জড়ানো নেই গায়ে। আমি ভাবলাম গিয়ে ঠিক করে দিয়ে আসবো? তারপর আবার ভাবলাম আমার কীসের ঠেকা? একটু আগে তো এত্তো এত্তো ভাব নিচ্ছিলেন, কত্তো অপমান করলো আমাকে । এবার যা খুশি হোক, ঠ্যাং নিচে পরে থাক, দরকারে উনিই সোফা থেকে পরে যাক, সোফা কেনো মাউন্ট এভারেস্ট থেকে পরে যাক, তাতে আমার কী? হু কেয়ারস? আবার ভাবলাম আমারই তো হাজবেন্ট, একটু ঠিকঠাক করে দিয়ে আসলে সমস্যা কী? উনি তো আর দেখতে আসছেন না। এরকম যাবো কী যাবোনা ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম না যাই গিয়ে ঠিক করে দিয়ে আসি। আমি গিয়ে ওনার পা টা সোফায় তুলে দিলাম, এরপর ওনার গায়ে চাদরটা ওনার ভালোকরে দিয়ে ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তারপর বেডে শুয়ে পরলাম এবার ওনার দিকে মুখ করেই শুয়েছি। একনজরে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। অন্ধকার তাই পুরোপুরি দেখা না গেলেও অাবছা দেখতে পাচ্ছি। চুড়ি ঢুকে কেটে যাওয়া হাতটার দিকে তাকালাম। এই আমি একটা সুচের খোচার ব্যাথা সহ্য করতে পারতাম না সেই আমি আজ এতোটা ব্যাথা পেয়েও টু শব্দও করিনি। দেখো আম্মু তোমার চিনির পুতুল ব্যাথা সহ্য করতেও শিখে গেছে। না চাইতেও চোখের কার্নিশ বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে। কিন্তু কেনো? আমিতো ওনাকে ভালোবাসি না, আর না ওনার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি আছে। বিয়ের দুদিন আগে উনি আমায় যা যা বলেছিলেন আর সেসব শুনেও আমি যা করেছি, তারপর তো এটাই স্বাভাবিক। আর আমি জেদের বসে ওনার কথা না শুনে ওনাকে আরো রাগীয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি ওসব কথা সবার সামনে বললে বাবা মা অনেক কষ্ট পেতেন, ওনাদের কীকরে কষ্ট দিতাম আমি? কিন্তু আমি পরে তো একটা চেষ্টা করেছিলাম বিয়েটা ভাঙ্গার কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়া সেটা জানেন না। আচ্ছা আমি তো জানতাম এরকম কিছুই হবে তাহলে আমার এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে এই অশ্রু কেনো? আদ্রিয়ান ভাইয়া আমাকে মেনে নেয়নি বলে? নাকি ওনার বাজে ব্যবহারে জন্যে? নাকি নিজের সব স্বপ্ন এভাবে ভেঙ্গে যাওয়াতে? আমার কষ্ট পাওয়ার আসল কারণটা কী? আমিও তো নিরুপায় ছিলাম কিন্তু সেটাকি কোনোদিন উনি বুঝবেন? খুব ক্ষতি হতো যদি মানিক আঙ্কেল আব্বুর বন্ধু না হতেন? যদি উনি মানিক আঙ্কেলের ছেলে না হতেন? যদি ওনার সাথে কোনোদিন আমার দেখাই না হতো? যদি আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের নামক কোনো মানুষ আমার জীবণে না আসতো ?
এসব ভাবতে ভাবতেই সেইদিনটা কথা মনে পড়লো যা আমার জীবণের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিয়েছে।
টেস্ট এক্সাম দেওয়া হয়ে গেছে। এখনো রেসাল্ট দেয়নি। কলেজের পাট শেষ। এবার টেষ্টের রেসাল্টের পর স্পেশাল ক্লাস শুরু হবে। তো আপাতত কলেজ, প্রাইভেট কিছুই নেই। স্যাররা বলেছেন এই ছোট বন্ধের মধ্যে প্রাকটিকেল গুলো শেষ করে নিতে। সাইন্সের স্টুডেন্ট তাই ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজি, হাইয়ার ম্যাথ, আইসিটি সেকেন্ড পার্ট গুলো নিয়ে মোট নয়টা প্রাকটিক্যাল কম্প্লিট করতে হবে। তারওপর একেকেটা এক্সপেরিমেন্ট এর নাম দেখলেই চোখে জল চলে আসে করতে গেলে কী অবস্হা হয় সেটা একমাত্র এইচ এস সি সাইন্সের ক্যান্ডিডেটরাই বোঝে। তাই বাড়িতে বসে বসেই সেই প্রাকটিক্যালগুলোই করেই ছুটি পার করছিলাম। আযানের সময় আম্মু তুলে দিয়েছিল। নামাজ পরে খাটে আধশোয়া হয়ে প্রাকটিকেল করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ আপির আচমকা ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ ডলে আপির দিকে কুচকে তাকিয়ে বললাম
— ” কী হলো এভাবে ডাকলে কেনো?”
আপি একটু তাড়াহুড়ো করে হন্তদন্ত কন্ঠে বলল,
— ” তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বাইরে আয়। মেহমান এসছে। আর হ্যাঁ এসব টিশার্ট আর প্লাজো চেঞ্জ করে স্যালোয়ার সুট পর। আর মাথায় ওরনা দিবি।”
আমি বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এমন কোনো মেহমান এলো যে আমাকে মাথায় ওড়না দিয়ে ওনাদের সামনে যেতে হবে? আর এইসময় হঠাৎ করে কারাই বা আসবে? আমি বিরক্ত মাথা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
— ” কী ব্যাপার বলোতো? আমাকে বিদায় করার পরিকল্পনা করছো নাকি?”
আমার কথাটা শুনে আপি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।
চলবে…
#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২
.
আপির হাসি দেখে আমার ভ্রু আরো কুচকে গেলো। সত্যিই সত্যিই আমায় বিদায় করার প্লান করেছে নাকি? আমার ওমন চাহনী দেখে আপি হাসতে হাসতে কাবার্ড থেকে একটা সালওয়ার সুট এনে বেডে রেখে বলল,
— “সেই আসায় ঘুমাও তুমি। এখনো এইচ এস সি দাও নি। এতো তাড়াতাড়ি তোমার সেই আশা পূরণ হবেনা। তাছাড়া তোমার আগে যে আমাকেই বিদায় করবে সেটা শিউর। তাই চিল করো।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ” তাহলে কোন মেহমান আসছে বলবে তো?”
আপি মুখে হাসি রেখেই বলল,
— ” মানিক আঙ্কেল আর ওনার বড় ভাই নিজেদের পরিবার নিয়ে এসছেন।”
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম,
— ” মানিক আঙ্কেল? আব্বুর সেই বন্ধু যার কথা আব্বু প্রায়ই বলে?”
— ” হ্যাঁ ফুপার বন্ধু মানিক আবরার।”
আপি কেমন একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে যার কারণ বুঝতে পারছিনা আমি। তবুও আমি আর বেশি কথা না পেঁচিয়ে স্যালওয়ার সুট নিয়ে রেডি হতে চলে গেলাম। শাওয়ার নিতে আমার যে এক ঘন্টা লাগবে সেটা শিউর। শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। আম্মু আর মামী মিলে আপিকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে আর সাজিয়েও দিচ্ছে। মামীকে দেখে আমি আরো অবাক। আমি চুল মুছতে মুছতে অবাক হয়ে বললাম,
— ” কখন এলে মামী? আর আম্মু? আপিকে তোমরা এভাবে সাজাচ্ছো কেনো?”
মামী একটু হেসে বলল,
— ” আরে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হচ্ছে আমি আসবোনা?”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আপির দিকে। আপির বিয়ে ঠিক হচ্ছে? সিরিয়াসলি? আমাকে ওভাবে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু ধমক দিয়ে বলল,
— ” যাও তাড়াতাড়ি চুল শুকিয়ে তৈরী হয়ে নাও।”
আমি হ্যাবলার মতো ওনাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম,
— ” কেস টা কী একটু বলবে আমাকে?”
মামী আপিকে ছেড়ে আমার কাছে এসে গাল টেনে বলল,
— ” আরে ওরা তোর আপির সাথে মানিক আঙ্কেলের বড় ভাইয়ের ছেলে ইফাজ এর বিয়ের কথা পাকা করতে এসছে।”
আমি তো অবাকের পুরো শেষ পর্যায়ে। মামীর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম,
—” মানে ডিরেক্ট বিয়ের কথা পাকা করতে চলে এলো? কেমনে কী?”
আম্মু এবার একটা রাম ধমক দিয়ে বলল,
— ” তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও। এসব কথা পরেও বলা যাবে।”
আমি মুখ ফুলিয়ে হেয়ার ড্রায়ারটা বার করে চুল শুকাতে শুকাতে ভাবছি। বিয়ে পাকা তো আপির হবে আমার রেডি হওয়া নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কীসের সেটাই বুঝতে পারছি না। আর কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ আপির বিয়ের ডেট ফিক্সট হয়ে যাবে? যাই হোক মামা মামী এসছে মানেতো সজীব ভাইয়া অর্নব ভাইয়াও এসছে, দারুণ মজা হবে। এসব ভাবতে ভাবতে আম্মু আবার চেচিয়ে বলল,
— ” অনি তাড়াতাড়ি করো।”
বলে আপিকে নিয়ে বাইরে সোফার রুমে চলে গেলো। আম্মুর ডাকে আমি হাত চালানোর গতি বাড়িয়ে দিলাম। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে মাথায় ওড়নাটা দিয়ে আস্তে আস্তে গিয়ে সোফার রুমে উঁকি দিলাম। আপি সোফার মাঝখানে বসে আছে। আপির দুপাশে মধ্যবয়স্ক দুজন বসে আছে। অনুমান করতে পারছি একজন হয়তো মানিক আঙ্কেল আর আরেকজন মানেক আঙ্কেলের বড় ভাই হবে। তারপাশের সিঙ্গেল সোফায় একজন সুর্দশন যুবক বসে আছে। এটাই কী ইফাজ ভাইয়া? হতে পারে। আরেকপাশের সোফার পাশে প্রায় আমার বয়সী একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর সোফাতে মধ্য বয়স্ক দুইজন মহিলা বসে আছেন। আর আব্বু, আম্মু, মামা, মামী আর সজীব ভাইয়া আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মেহমানদের মধ্যে কাউকেই চিনিনা আমি। কারণ কাউকেই আগে দেখতে পাইনি। হঠাৎ করে আব্বু বলে উঠল,
— ” মামনী এদিকে এসো?”
আমি একটু চমকে গিয়ে আস্তে ওনাদের সামনে গেলাম। তারপর ওনাদের সালাম দিলাম। ওনারাও হাসি মুখে সালামের জবাব দিলেন। তারপর আপির ডানপাশে বসে থাকা লোকটা আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” এটাই তোর মেয়ে।”
আব্বু হেসে বলল,
— ” হ্যাঁ এটাই আমার মেয়ে অনিমা। আর অনি উনি তোমার মানিক আঙ্কেল।”
আমি মানিক আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম। মানিক আঙ্কেল চারপাশে তাকিয়ে বলল,
— “হ্যাঁ কিন্তু তোর ছেলেটা কোথায়?”
আব্বু বললেন,
— ” কাব্য? কাব্য তো অর্নবের সাথে একটু বাজারে গেছে। চলে আসবে এখনি।”
এরপর সবার সাথেই আব্বু আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। সিঙ্গেল সোফায় যেই ছেলেটা বসে আছেন উনিই ইফাজ ভাইয়া, মধ্যবয়স্ক অন্য লোকটি হলো ইফাজ ভাইয়ার বাবা। আর যেই দুইজন মহিলা আছেন ওনারা একজন হলেন ইফাজ ভাইয়ার মা আরেকজন মানিক আঙ্কেলের স্ত্রী। আর মেয়েটা হলো মানিক আঙ্কেলের মেয়ে জাবিন। মানিক আঙ্কেলের স্ত্রী উঠে এসে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন,
— ” বাহ ভারী মিষ্টি দেখতে হয়েছে তো।”
আমার বেশ লজ্জা লাগছে এভাবে বলার কী আছে? তখনি আব্বু মানিক আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” কীরে আদ্রিয়ান কোথায় ?”
আদ্রিয়ান নামটা শুনেই বুকের ভেতরে ধক করে উঠল, মনের মধ্যে একগাদা বিরক্তি ভর করল। যদিও ঐ ছেলেটাকে কোনোদিন দেখিনি। কিন্তু বাড়িতে ঐ ছেলের এত্তো এত্তো বেশি প্রশংসা শুনতে শুনতে এখন সে আমার কাছে চরম বিরক্তির কারণ হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই মানিক আঙ্কেল বললেন,
— ” একেবারে সন্ধ্যায় এনগেইজমেন্ট পার্টিতেই আসবে।”
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আজ সন্ধ্যায় এনগেইজমেন্ট ও হবে? আমি ছিলাম কোথায়? কিছুই জানিনা? নিজেকে কেমন একটা এলিয়েন এলিয়েন মনে হচ্ছে। মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এরমধ্যে কাব্য আর অর্নব ভাইয়াও চলে এলো। এরপর অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলার পর সবাই মিলে ডাইনিং এ গেলাম লাঞ্চ করতে। লাঞ্চ শেষে একটু রেস্ট করার পর। আঙ্কেলরা মামু আর আব্বু বাইরের সব ডেকোরেশন দেখছেন। আন্টিরা, মামী আর আম্মু রুমে গিয়ে গল্প করছেন। আমরা সব ভাইবোনেরা মিলে একটা রুমে বসে আছি।আপি আর ইফাজ ভাইয়াকে ছাদে পাঠানো হয়েছে কথা বলার জন্যে। আমরাও গেছিলাম লুকিয়ে কথা শুনতে কিন্তু আম্মুর কানমোলা খেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে একটা ভয়াবহ কথা জানতে পেরে আমরা সবাই শকড হয়ে বসে আছি। সেটা হলো ইফাজ ভাইয়া আপিকে দুইমাস ধরে ভালোবাসে। যদিও আপি সেটা জানতোনা। আসলে দুইমাস আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসছিলো নিজের কাছে তখনই দেখছিলো আপিকে। বাড়িতে বলতেই ওনারা খোজ নিয়ে জানতে পারেন যে মেয়ে ওনাদের পরিচিত। এরপর মানিক আঙ্কেল আব্বুকে ফোন করে আর আব্বুও মামুকে ফোন করে ডাকে। সব খোজ নিয়ে মামুও রাজী হয়ে যায়। আর তারপরেই হুট করে এসব আয়োজন। যদিও আপির এতে কোনো আপত্তি নেই। আমরা আমাদের শক কাটিয়ে উঠতে উঠতেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, শুধু ঘনিষ্ট আত্মীয় আর প্রতিবেশিদের ডাকা হয়েছে তবুও অনেক লোকজন হয়েছে। আপুকেও সাজানো কম্প্লিট আমিও একটা পিঙ্ক কালার গাউন পরে নিয়েছি। নিজেকে ঠিকঠাক করে আড্ডা দিচ্ছি তখনই দেখলাম আমার কাজিন সিস্টারস আর প্রতিবেশিদের মধ্যেও কিছু আপুরা পুরা ফিদা টাইপ হয়েছে গেছে। মানে ক্রাশ খেয়ে উল্টে গেলে যা হয় আরকি এমন কী দেখলো যে একেকজনের অবস্থা এমন ফিট টাইপ হয়ে গেছে। আমি ভ্রু কুচকে ওনাদের দিকে তাকিয়ে তারপর ওনাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম। শুধু শুধুই আপুদের দোষ দিচ্ছিলাম। যদিও ওনাদের মতো বিশাল মাপের ক্রাশ খাইনি, কিন্তু ছোটখাটো একটা ক্রাশ নিশ্চয়ই খেয়েছি। একটা কালো পাঞ্জাবী পরা ছেলে ফোন দেখতে দেখতে এগিয়ে আসছে। ফর্সা সুঠাম দেহে কালো পাঞ্জাবীটা পুরো ফুটে উঠেছে। হাতে কালো ঘরি, কালো জিন্স। সিল্কি চুলগুলো কপালে পরে আছে অনেকটা। মুখে একেবারে হালকা খোঁচা দাঁড়ি, সব মিলিয়ে এর ওপর ক্রাশ খাওয়াটা অসম্ভব কিছু না। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও আপুদের দিকে তাকালাম ওনারা এখনো হা করে গিলে খাচ্ছে ছেলেটাকে। আমার এবার খুব হাসি পাচ্ছে নিশ্চিত ছেলেটার আজ ডায়রিয়া হয়ে যাবে এতো মেয়ের নজরে। ঠিকই আছে হওয়াই উচিত এতো সুন্দর হয়েছে কেনো? কিন্তু কে উনি? আমাদের কেউ তো না। তাহলে কী ইফাজ ভাইয়াদের পরিচিত কেউ? এসব ভাবতে ভাবতে ওখান থেকে চলে গেলাম। বেশ অনেকটা সময় কেটে গেছে। সবার সাথে মজা করছি কথা বলছি হঠাৎ আম্মু একটা জুসের গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
— ” ওকে গিয়ে দিয়ে এসো। তাড়াতাড়ি, ছেলেটা একটু জুস খেতে চেয়েছে। ক্লান্ত মনে হয়। আমার হাতে কাজ আছে।”
বলে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো। আমিও অবাক হয়ে ওদিকে তাকিয়ে দেখলাম সেই ছেলেটা যেই ছেলেটার ওপর সবাই ক্রাশ নামক বাশ খেয়ে বসে আছে। কে এই ছেলেটা? আম্মু চেনে? যাই হোক তাতে আমার কী? আমার জুস দেওয়ার দরকার দিয়ে আসি। বলে জুসটা নিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি উনি আরো দুজনের কথা বলছেন। আমি ওনার প্রায় কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ নিচে পরে থাকা ইটের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে গেলাম আর জুসের কিছুটা অংশ ঐ লোকটার গায়ে পড়লো। কিন্ত খবিশটা নায়কদের মতো আমাকে ধরলোতো নাই উল্টে আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের পাঞ্জাবীটা ঝাড়তে শুরু করলো। ওনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাই টেনে তুলল আমাকে। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে জোরে ধমক দিয়ে বলল,
— ” স্টুপিড। চোখ কী কপালে নিয়ে হাটো নাকি? ড্রেসটাই নষ্ট করে দিলো ইডিয়ট।”
ওনার ধমকে হালকা কেঁপে উঠলাম। চোখ ছলছল করে উঠলো আমার। পাশের সেই লোকটা বলল,
— ” আহ ছাড়না বাচ্চা মেয়ে টাল সামলাতে পারেনি।”
উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,
— ” যেটা সামলাতে পারোনা সেটা করতে যায় কেনো? ডিসগাস্টিং।”
বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম, নিশ্চয়ই মারবে আমাকে এখন। আল্লাহ বাঁচাও আর জীবণের ইটের সাথে হোচট খাবোনা। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি আমার দুই হাত ধরে সামনে এনে ভালোভাবে চেক করে নিলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে আবারও ধমকের সুরে বললেন,
— ” গাউনটা একটু উচু করো।”
আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। উনি আবারও জোরে ধমক দিয়ে বললেন,
— ” গাউন ওঠাও।”
আমি একটু কেঁপে উঠলাম। কেঁদেই দিয়েছি পুরো তারপর গাউনটা একটু উঁচু করে ধরলাম। উনি ভালোকরে আমার পা চেক করে বললেন,
— ” হাটুতে জ্বালা করছে?”
আমি ভদ্রভাবে না বোধক মাথা নাড়লাম। উনি এবার শক্ত কন্ঠে বললেন,
— ” এখন থেকে আশেপাশে দেখে চলবে। তাহলে আর অন্যের পোশাক নষ্ট হবেনা।”
বলে ওখান থেকে চলে গেলেন। ওনার সাথে সাথে ঐ দুজনও চলে গেলেন। হুহ একটু ড্রেস নষ্ট হয়েছে বলে ওমন ব্যবহার করে কেউ কারো সাথে? বদলোক একটা, আমাকে ডিসগাস্টিং বলা? তোর কপালে এমন একটা ডিসগাসটিং বউই জুটবে দেখে নিস। এসব ভেবে মুখ ফুলিয়ে ওখান থেকে চলে এলাম আপির কাছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আংটি পরানোর জন্যে ডাকা হলো আপি আর ইফাজ ভাইয়াকে আর তখনি জানতে পারলাম যে ঐ ছেলেটাই আদ্রিয়ান ভাইয়া। মানিক আঙ্কেলের একমাত্র ছেলে। যখন পরিচয় করাচ্ছিলো তখন শুধু আমার দিকে তাকিয়ে একটা সৌজন্যতার হাসি দিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। হুহ ভাব। সারা অনুষ্ঠানে আর আমার দিকে ঘুরেও তাকায়নি । যাওয়ার সময় ওনাদের এগিয়ে দিতে গিয়ে আবারও হোচট খেয়ে আদ্রিয়ান ভাইয়ার ওপরেই পরেছিলাম। উনি এবার কিছু না বললেও একটা বিরক্তিমাখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন আমার ওপর। আমিও নিজেও বিরক্ত নিজের ওপর। আমি এতো ক্লামজি কবে থেকে হলাম? আর পরি তো পরি ওনার ওপরে গিয়েই পরি? যত্তোসব। দুনিয়াতে ওনার বুক ছাড়া পরার মতো আর কোনো জায়গা নেই আমার কাছে?
______________________
এমনিই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারিনি। আলো দেখে বুঝলাম সবে ভোর হয়েছে। পাখিদের হালকা কিচিরমিচির শব্দ এখনো শোনা যাচ্ছে। আমি একটা হাই তুলে উঠে বসলাম। কালকে রাতের কথা আর আদ্রিয়ান ভাইয়ার ব্যবহার মনে পরতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই একটু অবাক হলাম। আমি ঘোমটা আর গয়নাগুলো কখন খুললাম ? হয়তো খুলেছি কিন্তু ভুলে গেছি। আমার এরকম হয় প্রচন্ড ঘুম চোখে নিয়ে কিছু করলে পরে সেটা ভুলে যাই। সোফায় তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান ভাইয়া নেই। দরজাটাও ভেতর দিয়ে লক করা ওয়াসরুমের লাইট ও অফ। তাহলে কী ব্যালকনিতে আছেন? আস্তে করে উঠে ব্যালকনিতে উঁকি দিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠলো। উনি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার জানামতে উনি এতো ভোরে ওঠেন না। ওনার চোখেমুখে একরাশ বিষণ্নতা। দেখে মনে হচ্ছে প্রবল কোনো বিষাদ গ্রাস করেছে ওনাকে। ওনাকে ওভাবে দেখে আমার বুকের ভেতরেও ভারী হয়ে উঠলো।
#চলবে…