#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_09
আকাশ টা মেঘলা , বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব, হয়তো যেকোনো সময় আকাশের বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি কণা ,প্রকৃতির সকল ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তা সব কিছু ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবে , ইসস বৃষ্টির মতো কেউ যদি আমার ডিপ্রেশন গুলোকে নিয়ে যেত , কিন্তু এটা কখনো ই সম্ভব নয় , এতিমদের জন্য কেউ কখনো আসে না , আসতে পারে না , একজন নাম পরিচয়হীন মেয়ের জন্য কেই বা আসবে ,
বিকেল টা আজ বড্ড বেশি শান্ত মনে হচ্ছে , ছাদের রেলিঙের কোন ঘেষে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি , আজ আকাশের মতো আমার মনে ও ভারি মেঘ জমেছে কিন্তু কি তার কারণ সেটা অজানা , হুটহাট মন খারাপের কারণ থাকে না , কিছু মন খারাপ এর কারণ থাকতে নেই যে ,
আমার জীবন টা কখনো ই সহজ ছিলো না , ছোট বেলায় আশ্রমে মাদারের কাছে মানুষ হলাম , বয়স আঠারো পেরুতে না পেরুতে ই আশ্রম থেকে বিদায় দিয়ে দিলো , শুরু হলো জীবন নিয়ে আরেক যুদ্ধ , তখন তো সবে পাবলিকে চান্স পেয়েছিলাম , টিউশনি ও ছিলো না , প্রথম দু এক মাস খুব কষ্টে কেটেছে , ম্যাচে উঠেছিলাম , ম্যাচ ভাড়া ও দিতে পারি নি , মাদার যা কিছু টাকা দিয়ে দিয়েছিলো তাতে দু বেলা ও খাওয়া যেত না , ম্যাচের মালিক এসে দু তিন বার ওয়ার্নিং ও দিয়েছিলো , ম্যাচ থেকে বের করে দেবে , ঠিক তার পরের মাসেই নতুন টিউশনি পেলাম , সেই টিউশনি করে ভাড়া , নিজের খাবার খরচ , চলা ফেরা খুব ভালো ভাবে না গেলেও চলে যেতো কোন ভাবে ,
তারপর হঠাৎ ই আমার জীবনে আসে ইলু নামক একটা এঞ্জেলের, হ্যা তো এঞ্জেল ই তো ও আমার জীবনে , আমার সকল দুঃখ কষ্ট সব কিছু তে ভাগ বসাতে শুরু করলো , আমার ভালো লাগা , খারাপ লাগা সব কিছু তে তার নজর , কখনো আমাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে , কখনো বাবার মতো শাসন করেছে , কখনো ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে আবার কখনো বা বোনের মতো ছায়া হয়েছে , বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে আবার শত্রু হয়ে ঝগড়া ও করেছে ,
কি হয়নি সে আমার জন্য ! সব কিছু হয়েছে ..
আমি অন্ধকার ভয় পাই বলে , রাতে যখন ই বিদ্যুৎ চমকায় সাথে সাথে তার কল থাকবে সবার আগে , রাতের পর রাত পেরিয়ে যায়, কখনো ফোন কানে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি দুজনেই , এ কেমন বন্ধন! আমার জানা নেই , এই বন্ধনের কোন নাম দিয়ে ছোট করতে চাই না আমি কখনো , নাম না জানা সম্পর্ক , ও আমার জীবনে ডানা কাটা সেই পরী হয়েই থাক আজীবন,
হঠাৎ শরীরে পানির স্পর্শে আমার ধ্যান ভঙ্গ হলো , চারপাশে তাকিয়ে দেখি আকাশ টা মেঘে ঢেকে অনেকটাই অন্ধকার হয়ে এসেছে , বৃষ্টি নামার আগের মূহুর্তের ঠান্ডা বাতাস টা হীম শীতল থাকে , খুব ভালো ও লাগে ,
” কিরে ভুতনী , এই অবেলায় এখানে কি করিস ? আমি আরোও তোকে রুমে খুঁজে আসলাম ”
ইলুর কথা শুনে আমি সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে ই বললাম ,
” প্রশ্ন তো আমার করার কথা ইলু , তুই এই অসময়ে আমার বাসায় কি করিস ? আর আমাকে দেখে কোন এঙ্গেলে ভুতনী মনে হয় তোর কাছে ? ”
কথাটা বলেই ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,
ইলু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল ,
” ভুতনী বলব না তো কি বলব হে ? তুই যে ড্রেস আপ করছিস , ভুত ছাড়া তো আর কিছু মনে আসছে না , সাদা সালোয়ার , সাদা কামিজ , সাদা ওরনা সব সাদা , আর সাদা তো ভুতে রাই পড়ে ”
আমি দুম করে ইলুর পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ,
” কেন রে সাদা কি ভুতের জন্য বরাদ্দ করা নাকি যে সাদা শুধু ভুতে রাই পড়তে পারবে ? যতসব আউল ফাউল কথা বার্তা ”
আমার কথায় ইলু হাসলো , হঠাৎ করে বলে উঠলো ,
” পূর্ণ , তোর জন্য একটা গিফট আছে ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম .
” গিফট ? ”
” হ্যা হ্যা তুই চোখ বন্ধ করে দুই মিনিট দাড়া আমি যাব আর আসব
বলেই ইলু দৌড়ে চলে গেলো আর আমি চোখ বন্ধ করে ইলুর অপেক্ষা করতে লাগলাম ,
প্রায় মিনিট দুই এর মাঝে ই ইলু এসে হাজির , আমার হাতে ভারি কোন বস্তু রেখে বলল ,
” নে এবার চোখ খুল ”
আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে হা হয়ে আছি , আমার হাতে একটা গিটার , গিটার টা বেশ নামি-দামি ব্রেন্ডের সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ,
আমি কিছু ক্ষন গিটারের দিকে তাকিয়ে পরবর্তী তে ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,
ইলু ইশারা ই জিজ্ঞেস করলো পছন্দ হয়েছে কি না !
আমার মুখ দিয়ে যেন কথায় ই বের হচ্ছে না , আশ্চর্য হয়ে গেলাম , তবু ও কষ্ট করে বললাম ,
” গিটার ? ”
আমার কথা শুনে ইলু বলল ,
” পছন্দ হয়েছে ? ”
ওর চোখে মুখে উৎকন্ঠা , উৎসুক দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ,,
আমি গিটার টা সাইডে দাড় করিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম ,
” পছন্দ অপছন্দ পরের কথা , আগে তুই বল অযথা টাকা গুলো নষ্ট করলি কেন ? গিটার এর ব্যপারে তুই কিভাবে জানলি ? ”
আমার কথা শুনে ইলু হেসে আমার দিকে চেপে এসে ছাদের রেলিঙে পিঠ ঠেকিয়ে বলে উঠলো ,
” আসলে ওইদিন তোকে জিজ্ঞেস না করে তোর পার্সোনাল ডায়রি পরেছিলাম তাতে তোর গিটারিস্ট হবার সখ টা হাইলাইট করা তা ই ভাবলাম তোর সব সখ তো আর পুরন করতে পারব না আমি তো আর যাদুকর না , যাদুকর হলে তোর কোন ইচ্ছে ই অপূর্ণ রাখতাম না , বিলিভ মি তাই আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করছি ”
আমার মুখে কোন ভাষা নেই ওকে বলার মতো , আমি এখন রাগ করব নাকি কান্না করব বুঝে উঠতে পারছি না , গিটার টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলাম ,
” কি হলো বললি না যে পছন্দ হয়েছে কি না ? আর এটা কিন্তু আমার ইনকামের টাকা আমার বাবার না কিন্তু , কয়েক টা টিউশনি করিয়েছিলাম যে ওই টাকা ”
আমি গিটার এক হাতে নিয়ে হুট করে ওকে জরিয়ে ধরলাম , কেন জানি না খুব কষ্ট হচ্ছে , কান্না ও পাচ্ছে খুব , কিন্তু আমি তো কান্না করতে পারি না , শেষ কবে মন খুলে কান্না করেছিলাম মনে নেই ,
ইলু আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে বলল ,
” হয়েছে বাবা , আমি কিন্তু গিটার টা তোকে এমনি এমনি দেই নি , শর্ত আছে ! ”
ইলুর কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ,
” শর্ত ? কিসের শর্ত? ”
” এই যে তোকে গিটার গিফট করলাম , সেটা কি এমনি এমনি নাকি , আমার শর্ত হলো , তুই প্রতিদিন আমাকে একটা গান শুনাবি ”
” এই এর মানে কি ? আমার কি খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নেই নাকি , আর আমি কি গান পারি না কি ? ”
” আহহ মরন , ভার্সিটিতে তুমি গিটার ও বাজাতে আর গান ও করতে, সেটা তুমি ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলি নাই , আমার সাথে নাটক করতে আইসো না বেবি ”
কথা বলতে বলতেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলো আমি আর ইলু নিজ জায়গা থেকে এক চুল ও নড়লাম না , দুজন ই আজ ভিজব ,
গিটার টা হাতে নিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুললাম , বৃষ্টি র ঝাপটায় সামনের কিছু ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে না ,
ইলু ধপ করে নিচে বসে আমাকে ও টেনে বসিয়ে দিলো ,
” পূর্ণ একটা গান ধর তো , বহু দিন তোর গান শুনি না , ভার্সিটি ফাংশন তো পুরা কাঁপাইয়া দিতি , আজ আবার ধর ”
“এখন ? ”
” হ্যা এখন ই তো ”
আমি আর কিছু বললাম না ,
গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলে গাইলাম ,
Dua bhi lage na mujhe
Dawa bhi lage na mujhe
Jabse dil ko mere tu laga hai
Neend raaton ki meri
Chaahat baaton ki mari
Chain ko mere toone yun thaga hai
Jab saansein baroon main band
Aankhein karun main
Nazar tu yaar aaya kar
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara
Har roz puchhein yeh hawayein
Hum to bata ke haare
Kyun zikar tera karte hain
Humse taare
Har roz poochhein yeh hawayein
Hum to bata ke haare
Kyun zikra tera karte hain
Humse taare
Ab is se hain tere in
Hothon pe mere izhaar aaya yaara
Dil ko karar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara
চোখ বন্ধ করে গান গেয়ে , গনা শেষ হতেই চোখ খুলে তাকালাম , এত ক্ষনে কাক ভেজা আমি আর ইলু ,
ইলু গদগদ কন্ঠে বলে উঠলো,
” ব্যপার কি বলতো পূর্ণ ? এতদিন পরে গান গেয়েও মনে হচ্ছে তোর গানের গলা আগের থেকে আরো দারণ হয়েছে ! ”
আমি হাসলাম ,
ও আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল ,
” বিশ্বাস করলি না তো , সত্যি বলছি তো ইয়ার ”
” হুম হয়েছে , এবার চল নিচে , না হলে আবার জ্বর বাধাবি ”
” জ্বর আমার না বরং তোর হবে ”
” হুম ”
বলেই আমি গিটার নিয়ে উঠে দাড়ালাম , ইলু নিজের হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো ওকে টেনে উঠাতে ,
আমি এক হাত দিয়ে টান দিতেই ও উঠে পড়লো ,
রুমে এসে একে একে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসতেই আমার ফোন টা বেজে উঠলো ,
আমার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি , স্যারের কল ,
আমি ভ্রু কুচকে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ফোন টা হাতে নিতে নিতে পুনরায় ইলুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
” ইলু তুই কি আজ স্যার কে কল করে ছুটি নিস নি ? আমি না তোকে বলেছিলাম আজকের দিন টা ছুটি নিতে ”
ইলু দুম করে বিছানায় সুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল ,
” আমি তো ছুটি নিয়েছি আর ওই টাকলা ও তো ছুটি দিসে আবার ফোন দিলো ক্যা ? ”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফোন পিক করলাম ,
” হ্যালো , আসসালামু আলাইকুম স্যার ”
“…………
” জি স্যার আলহামদুলিল্লাহ , আপনি ? ”
“……………
” স্যার কোন দরকার ছিলো ? ”
“…………..
” স্যার আমি ই কেন ? আমার থেকে অনেক সিনিয়র রাও তো আছে ! ”
“…………….
” জি স্যার , আমি পৌঁছে যাবো সময় মতো , ”
“………….
” আচ্ছা স্যার , আল্লাহ হাফেজ ”
আমি ফোন টা রেখে বিছানায় বসলাম ,
ইলু আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” কি রে স্যার কি এমন বলল যে তোর মুখ টা বাংলা ভাদ্র মাসের মতো হট হট হয়ে গেলো ”
আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম ,
” ইন্টারভিউ নিতে হবে ”
” তো নিবি , এটা তো আর তোর কাছে নতুন না , মুখ এমন করে রাখছিস কেন ? ”
” ইন্টার ভিউ নিবো সেটা বড় কথা না , কথা টা হলো কার ইন্টার ভিউ নিবো ! ”
” কার ? ”
“মন্ত্রী তাহরিম তালুকদারের ইন্টার ভিউ ”
” তো নিবি , এতে এত ঘাবড়ানোর কি আছে , তুই তোর প্রশ্ন করবি আর সে উত্তর দিবে , চাইলে অনেক কিছু ই জিজ্ঞেস করতে পারিস ”
ইলুর কথা শুনে হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই আমি মনে মনে হাসলাম , কালকের জন্য প্রস্তুত তো মন্ত্রী সাহেব? ”
চলবে…