#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_08
” মা আমি থানায় যোগাযোগ করেছি , ওরা তদন্ত করছে আর কারা তানজিম এর এরকম একটা এক্সিডেন্ট করিয়েছে সেটা অতি শীঘ্রই ধরা পড়বে , টেনশন করো না ”
মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে হসপিটালের কেবিনের দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কথা গুলো কেউ বলল ,
ইলমি দরজার দিকে তাকিয়ে ই আস্তে আস্তে বলল,
” মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার ”
আমি কথা টা স্পষ্ট শুনতে না পেলেও দেখে উনাকে ঠিক ই চিনতে পেরেছি , আর মন্ত্রী দের সাংবাদিক গন চিনবে না সে টা কস্মিনকালে কালেও সম্ভব না কি , কারণ উনাদের নিয়েই তো আমাদের ঘাটাঘাটি , আমাদের যত খবর থাকে বেশির ভাগ অংশ জুড়েই মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতারা ”
কিন্তু উনি এখানে কি করছে সেটাই ভাববার বিষয় , আর মা ! মা কাকে ডাকছে , আমি ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করছি , পুরো ব্যপার টা বুঝতে আমার মিনিট দুই সময় লাগলো , তার মানে তানজিম , মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর ভাই!.
” তাহরিম তুমি একটু ডক্টর নূর এর সাথে কথা বলো , তানজিম কে কি আজ বাসায় নিতে পারব ? না কি আরো দু একদিন থাকতে হবে ”
মেহেরিন শিকদার এর কথা শুনে তাহরিম চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো , মোবাইল পকেটে ভরতে ভরতে বলল ,
” আমি এক্ষুনি ডক্টর এর সাথে কথা বলেই এসেছি , কয়েক টা দিন থাকলে ই ভালো হবে ”
কথা টা বলে তাহরিম ঘাড় ঘুরিয়ে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকালো ,
” আপনি ? ”
আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই তাপস তালুকদার বলে উঠলেন ,
” আরে ও ই তো তানজিম কে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে আর নিজের ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে, সেবা করেছে , এই যুগে অচেনা অজানা একটা ছেলের জন্য এমন কেউ করে আমার জানা ছিলো না অন্য কেউ হয়তো করতো না ”
তাহরিম ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে মেয়ে দুটোর অভিব্যক্তি কি ! আর কি উদ্দেশ্য তাদের ?
আমার দিকে এভাবে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতে বেশ অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল ,
তাহরিম তালুকদার আমার কাছে এসে বলল ,
” উদ্দেশ্য কি আপনাদের ? ”
উনার কথা শুনে বেশ অবাক হলাম , চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাহরিমের দিকে তাকালাম ,
” মানে ? কি বলতে চাইছেন তা স্পষ্ট করে বলুন তো মন্ত্রী সাহেব ”
আমার কথা যেন উনার কাছে খুব মজার বিষয় মনে হলো , বা এটা ভেবেই রেখেছেন যেন আমি ঠিক এমন একটা প্রশ্নই তার দিকে ছুড়ে দিবো , উনি হাত দুটো ভাজ করে বুকের উপর রেখে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল ,
” না , আমার কাছে ব্যপার টা কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে , রাতের বেলা দু দুটো মেয়ে একজন মন্ত্রীর ভাইকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাচিয়েছে , আবার তার ভাই বলেও সম্বোধন করছে , তাকে সেবা করছে , কোন না কোন কারণ তো আছেই ! কারণ টাই জানতে চাচ্ছি , না কি টাকার জন্য ? ”
তাহরিম তালুকদারের কথা শুনে আমি অবাকের চেয়ে বেশি অপমানিত বোধ করলাম , তবে আমাকে কেউ অপমান করবে আমি তাকে ছেড়ে দেবো সেটা কি করে হয় , হোক সে এমপি , মন্ত্রী যা মনে চাই তা , তাতে আমার কি!
আমি ঢের বুঝতে পারছি উনি কিছু একটার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনটা সেটা বুঝতে পারছি না ,
” ফাস্ট অফ অল আমি মোটেও জানতাম না তানজিম আপনার ভাই ”
আমার কথার মাঝখানে দিয়ে উনি বলে উঠলো ,
” হেই গার্ল , লিসেন , এখন আবার বলো না যেন , যদি জানতাম তানজিম আপনার ভাই তাহলে কখনোই ওকে আমি হসপিটালে নিয়ে আসতাম না , প্লিজ এটা বলবে না , এটা তো কমন ডায়লগ সবাই বলে . ইউনিক কিছু বলেন ”
আমি হাসলাম ,
” আমাকে দেখে কি আপনার গর্ধব মনে হয় ? আর তাও আবার ঠিক , যে যেমন সে তো সবাই কে তেমন ই ভাববে , নিজে গর্ধব হয়ে তো অন্য কে ক্লেভার মনে করবে না , তাই না ? বাই দা ওয়ে , আমি যদি জনতাম ও যে তানজিম আপনার ভাই তবুও আমি আমার কর্তব্যে পিছ পা হতাম না , পূর্ণা কখনো বিপদ কে ভয় পাই না , আর জার্নালিসম পেশায় রাত দিন বলতে কোন ওয়ার্ড নেই , নিরলস শ্রম দিতে হয় , তা আপনারা কি বুঝবেন ? আপনারা সেলিব্রিটি রা তো জার্নালিস দের মানুষ ই মনে করেন না , কুকুর বেড়াল মনে করেন আপনারা মিডিয়ার লোকদের ”
কিছু টা থেমে ,,
” পৃথিবীতে যার কেউ নেই , পুরো পৃথিবী ই তার পরিবার , পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ তার আপন জন , স্পেসিফিক কোন আপনজন নেই তাদের , সে ক্ষেত্রে তানজিম আমার ছোট ভাই ই , আর ছোট ভাইয়ের অসুখ হলে নিশ্চয়ই কোন বোন ই বসে থাকবে না , আর আরেকটা কথা , আমাকে দেখে কি কোন এঙেল এ আপনার ভিক্ষুক মনে হয় ? অতি শীঘ্রই আপনি চোখের ডক্টর দেখান , চোখে মনে হয় কম দেখেন , যা হোক, আমার পেশা যথেষ্ট ভালো, প্রতি মাসে খেয়ে দেয়ে অনেক টা ই বেশি হয় টাকা , অন্য কোন মানুষের কাছে হাত পাতার মতো খারাপ পরিস্থিতি এখনো আমার আসে নি , সো আপনার টাকা আপনার কাছে ই রেখে দেন টাকার গরম আর যাই হোক মিফতাহুল পূর্ণাকে দেখাতে আসবেন না , আমি যা কিছু করেছি আমার ভাইয়ের জন্য করেছি , আমি আশা করি আপনি আর আমার ব্যপারে নাক না গলালেই বোধ হয় ভালো হবে ”
বলেই আমি তাহরিম কে পাশ কাটিয়ে কাঁধে র ব্যগটা নিয়ে বেডের কাছে গেলাম , তানজিমের কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করে বললাম ,
” জ্বর টা এখন আর নেই ! আমি বরং আজ আসি তানজিম , তুমি তোমার মা বাবার কাছে থাকো আমি আবার পরে আসবো নে , আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবে আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে আর সময় মতো ঔষধ নিবে সমস্যা হলে জানাবে ”
আমার কথা শুনে তানজিম হাসলো, আমিও মুচকি হেসে আঙ্কেল এর কাছে গেলাম ,
ব্যগ থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে তাপস তালুকদার এর হাতে দিয়ে বললাম ,
” আঙ্কেল এই হলো আমার ভিজিটিং কার্ড , কখনো কোন প্রয়োজনে অবশ্য ই কল করবেন , আজ আসি আল্লাহ হাফেজ ”
বলেই আন্টি থেকে বিদায় নিয়ে ইলুকে সাথে নিয়ে বের হয়ে গেলাম,
” তুমি মেয়েটার সাথে এমন বিহেভ করলে কেন তাহরিম ? মেয়েটা তোমার ভাইকেই তো বাচিয়েছে, সে না থাকলে হয়তো তুমি তোমার ভাইকে এখানে দেখতে ই পেতে না ”
তাপস তালুকদার এর কথা শুনে তাহরিম মুচকি হেসে তানজিম এর পাশে বসলো ,
তানজিমের কপালে আর গালে হাত দিয়ে ভালো ভাবে চেক করে উঠতে উঠতে বলল ,
” তুমি সেটা বুঝবে না ডিয়ার ফাদার , তুমি বরং তোমার বউকে নিয়ে চিন্তা করো , দিনে দিনে মা ইয়ং হচ্ছে আর তুমি বুড়ো হচ্ছো আর বসে থাকতে থাকতে ভুড়ি বাড়ছে , কয়েকদিন পর তোমাকে আর মা কে একসাথে দেখলে বাপ বেটি ও বলতে পারে , সোওও আগে থেকে ই সাবধান মিস্টার তাপস তালুকদার ”
বলেই গাড়ির চাবি আঙুলের ডগায় ঘুরাতে ঘুরাতে বেরিয়ে গেলো ,
তানজিম ভাইয়ের যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে , সে ঢের বুঝতে পারছে তাহরিম এর মনে কিছু তো একটা চলছেই যার কারণে সে পূর্ণা কে এভাবে খোঁচা দিলো , অযথাই , আর বাবার কথা ও কাটিয়ে গেলো , তবে কি চলছে তার মনে ?
” শুনেছো মেহু শুনেছো তোমার অসভ্য ছেলের কথা শুনেছো ? বাবা কে তো মান্য করেই না উল্টো কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলে শুনেছো তুমি ? বাবা কে পিঞ্চ মেরে কথা বলে ,
মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল ,
নাহ্ এই ছেলে আর শুধরাবে না , অসভ্য নির্লজ্জ কোথাকার ”
তাপস তালুকদার এর কথা শুনে মেহেরিন শিকদার বিরবির করে বলে উঠলেন ,
” বাপ গুনে ছেলে হলে যা হয় আর কি ? যেমন নির্লজ্জ বাপ তার তেমন ছেলে তো হবেই ”
কথাটা তাপস তালুকদার এর কানে না গেলেও তানজিম স্পষ্ট ই শুনতে পেলো , আর মনে মনে হাসলো ।
এমন সার্কাস তার পরিবারে প্রতি নিয়ত ই হয় , এ আর নতুন কি!
চলবে..