#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_03
পূর্ণা বাসায় ঢুকে লাইট অন করতেই দেখে লাইট টা জ্বলছে না চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে হঠাৎ কিছু একটা পরার শব্দে চমকে পিছনে তাকালো পূর্ণা ,
” কে ? কে ওখানে ? ”
হঠাৎ নিজের পায়ের কাছে কোন কিছুর আভাস পেয়ে ছিটকে দুরে সরে গেলো ঠিক তখনই কানে ভেসে আসলো ” মিউউ মিউউ ” শব্দ যা শুনে পূর্না খানিকটা হাফ ছেড়ে বাচলো ,
” ওফফ মিনি তুই তো আমাকে ভয় পাইয়েই দিয়েছিলি রে ”
বলেই পায়ের কাছ থেকে নিজের পোষা বিড়াল টাকে কোলে তুলে নিলো , পূর্ণা মিনি নামক বিড়াল পোষে সেই চার বছর আগে থেকে , অবসর সময় টা সে মিনির জন্য ই বরাদ্দ থাকে ,
” কি রে মিনি আজকে আবার বিদ্যুৎ ভাইজানের কি হলো রে? ”
পূর্ণার কথা শুনে মিনি কেবলই মাথা নাড়ায়, পূর্ণা মুচকি হেসে মিনি কে নিচে নামিয়ে মোবাইল বের করে মোমবাতি খোঁজার চেষ্টা করে , এই বিদ্যুৎ টাও যে কি , আকাশের অবস্থা খারাপ করলেই ঠাস করে বিদ্যুৎ চলে যায় ,
মোমবাতি জ্বালিয়ে পূর্ণা ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে লেপটপ নিয়ে বসলো , বহুত কাজ জমা হয়ে আছে তার উপর আবার নতুন আর্টিক্যাল সব মিলিয়ে প্যারাময় জীবন ,
লেপটপ অন করে নেট কানেকশন দেওয়া মাত্র ই কিছু ই-মেইল এসে জমা হলো পূর্ণার আইডি তে, পূর্ণা ধীরে ধীরে সব গুলো ই-মেইল চেক করছে, হঠাৎ করে একটা ই-মেইল এ এসে তার চোখ আটকে গেলো চোখ দুটো ছোট ছোট করে পুরো ই-মেইল টা পড়লো কিন্তু ই-মেইল টা কে পাঠালো তার বোঝার উপায় নেই ,
ই-মেইল এ লেখা ছিল ,
” পূর্ব থেকে ই সাবধান হয়ে যান মিফতাহুল পূর্ণা, রাজনীতি নিয়ে বেশি কিছু খুজতে যাবেন না , খুব খারাপ জিনিস এই রাজনীতি সেটা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবেন না, কোন কিছু র ই বেশি গভীর ভালো না, যা জানেন তাই নিয়ে শুক্রিয়া আদায় করেন আর এই সম্পর্কে আর্টিক্যাল লেখা অফ করে দেন না হলে পরবর্তী তে বিপদে পড়বেন , বিপদ আপনার খুব সন্নিকেটে মিস মিফতাহুল পূর্ণা ”
ই-মেইল টা চেক করে পূর্ণা মুচকি হাসলো ,কারণ এমন থ্রেট আজ পূর্ণার জন্য নতুন না , এমন থ্রেট কত এসেছে এসবের ধার পূর্ণা ধারে না তবে অবাক করা বিষয় হলো যেই একাউন্ট থেকে ই-মেইল টা এসেছে সেটা ডিজেবল করা হয়তো লোকটা চায় নি পূর্ণা তাকে চিনোক,
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার টাইপিং এ মনোযোগ দিলো , এই ছোট্ট জীবনে কত কিছু ই না দেখলো কত মানুষের কত রুপ, কত কথা, কত ধরনের দৃষ্টি ,
কাজ শেষে লেপটপ অফ করে বারান্দায় যায় পূর্ণা কোলের উপরে মিনি গুটিশুটি মেরে বসে আছে মিনির গায়ের উপর বার কয়েক হাত বুলিয়ে বারান্দায় রাখা টুলের উপর বসে পরে ,
আজ মা বাবার কথা বেশ মনে পড়ছে পূর্ণার হয়তো কখনো দেখা হয় নাই , হয়তো কারো পাপের ফসল কিংবা অন্য কিছু ও হতে পারে তবে একটা কথা কি , যত যায় ই হোক না কেন এই জন্মদাত্রী আর জন্মদাতা কে কখনো ঘৃণা করা যায় না , গল্প টা এমন না হলেও পারতো , একটা সুন্দর সংসার হতে পারতো একটা সুন্দর ভবিষ্যত হতে পারতো, কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ই গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে জল টুকু মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু ক্ষন ,
বিদ্যুৎ এখনো আসে নি , পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে আছে ,
আর বেশিক্ষণ বারান্দায় না থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরে চলে আসলো ,
পুরো ঘরে একটু হাটাহাটি করে বিছানা করে মিনি কে নিয়ে শুয়ে পড়লো পূর্ণা , চোখ টা শুধু লেগে আসবে অমনি ঘুমের তেরো টা বাজিয়ে স্ব শব্দে মোবাইল টা বেজে উঠলো , চোখ বন্ধ করেই হাতরাতে হাতরাতে মোবাইল টা হাতে নেয় পূর্ণার বিরক্তি তে ভ্রু কুচকে গেলো কোন মতে একটা চোখ খুলে স্ক্রিনে ইলু নামটা দেখে রিসিভ করে নেয় ,
” এতো রাইতে কি তোর? ”
পূর্ণার কথা শুনে ইলমি মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো ,
” ডিস্টার্ব করলাম দোস্ত ? ”
” তুই কি এইডা জিগাইবার লাইগা ফোন দিসোস ফহিন্নি? ”
” না না দোস্ত , শোননা? ”
” শুনতাছি বল জলদি আমার ঘুম পাইছে ”
” দোস্ত কালকে তো পহেলা ফাল্গুন! ”
” তো আমি কি করমু ? ”
পূর্ণার কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল ইলমি,
” আমি কি করমু মানে? তুই এমন পাংসা কেন রে? আমি কিছু জানি না তুই কালকে সাড়ি পড়বি আমিও পড়মু তাও বাসন্তী রঙের ”
” আমার কেন বাসন্তী সাড়ি নাই সো তুই পড় আমি না ”
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে , রাখি ”
বলেই ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো ইলমি যার দরুন বেশ অনেক টায় অবাক হলো পূর্না , এত সহজে মেনে নেওয়া র মেয়ে তো ইলমি না কে জানি কি তালগোল পাকাচ্ছে মনে মনে ,
পূর্ণা আর কিছু চিন্তা না করেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো,
কিছু ক্ষনের মাঝেই আবার ফোন আসাতে মেজাজ বেশ খারাপ হলো পূর্ণা , চোখ বন্ধ করে ই ভাবলো এখন ইচ্ছে মতো ঝাড়বে সে ইলুকে মনে মনে কথাটা ভেবেই রিসিভ করে কানে ধরলো , অপর পাশ থেকে কেউ কিছু বলার আগেই পূর্ণা বলতে লাগলো ,
” ওই কালা শামসুর বউ , শাঁকচুন্নি কোথাকার , এই তোর জামাই কি আরেক বেডির লগে ভাইগা গেছেগা? নাকি তোর সতিন রে বাইত লইয়া আইছে, কোনডা ? ফহিন্নি তুই আমরা সাধের ঘুমটার চব্বিশ টা বাজাইতাছোস অহন তোরে আমার মনে কইতাছে ওই বুড়ী গঙ্গার পঁচা পানিতে চুবানি দিতাম , বেদ্দপ বেডি এক থাপড়ানি দিমু সাত দিন কানে হুনবি না, আবার যদি ফোন দেস তোর নাক বরাবর এক ঘুষি দিমু মুখের মানচিত্র বদলাইয়া লামু নিজেরেই নিজে চিনবার পারবি না , তুই যদি বেডি আমার সামনে থাকতি! তোর সাত জনমের ভাগ্য তুই আমার সামনে নাই , নাইলে তোরে আমি বুঝাইয়া দিতাম এই পূর্ণার ঘুমের জন্য পূর্ণার কি করতে পারে , ঘুমের লগে নো সেক্রিফাইজ, আবার যদি ফোন দেস তুই তাইলে ফোনের মধ্যে দিয়া গিয়া কানের দুই আঙুল নিচে একটা চড় দিমু বিটিভির মতো ঝিরঝির করবি , বেদ্দপ, ”
বলেই ঠাস করে ফোন টা কেটে দিয়ে পূর্না আবার ঘুমিয়ে পড়লো , মেজাজ এতো খারাপ হতো না যদি না এতো সুন্দর স্বপ্নের মধ্যে ফোন কল ব্যঘাত ঘটাতো , মাত্রই একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করছিলো তারমধ্যে আবার ফোন…
ফোন হাতে নিয়ে কুশন বেক্কেল এর মতো দাঁড়িয়ে আছে, এতক্ষণ কি থেকে কি হয়েছে তার ঠিক মাথার উপর দিয়ে গেছে , কুশন তার সামনে বসে থাকা তাহরিমের দিকে তাকালো ,
তাহরিম ভ্রু কুচকে কুশনের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো,
কোথা থেকে শুরু আর কোথায় শেষ তার ঠিক বুঝে আসছে না,
তাহরিম খবর পেয়েছিলো মিডিয়ায় কাজ করা একজন মেয়ে সব রাজনীতি বিদ দের নিয়ে আর্টিক্যাল লিখছে তাই মেয়েটার নাম্বার বের করে কল দিয়েছিলো যেন কোন কিছু না জেনে উল্টো পাল্টা কথা না লিখে কারণ সে নতুন এমপি হয়েছে এর মাঝে গুজব ছড়ালে ক্যারিয়ারে বেড ইফেক্ট পড়তে পারে ,
কিন্তু তাকে তো কোন কথায় বলতে দিলো না মেয়েটা, মুখের উপর হাবিজাবি কতকিছু বলে ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো, এটাকে কি ম্যানার বলে,
কথা টা মনে মনে চিন্তা করে ই তাহরিম বিরবির করে বলে উঠলো ,
” ম্যানারলেস মেয়ে কোথাকার! ”
চলবে,,