#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_36
_____________________________
সকালের সূর্যের তীর্যক আলো চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুললাম। আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে গভীর ঘুমে মগ্ন মন্ত্রী সাহেব। মনে হচ্ছে আমি তার কোলবালিশ! এত জোরে চেপে ধরে আছে। না আমি হাত ধরাতে পারছি আর না শরীর, কেমন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাটা ছয়টার ঘরে গিয়ে টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এখন সকাল ছয়টা।
আমি খানিকটা নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, এখন সত্যি সত্যি ই নিজেকে বালিশ বালিশ ফিল আসছে।
আমি উনার হাত টা সরাতে যাবো কিন্তু উনি ঘুমের মধ্যে ই চেপে শক্ত হয়ে আছেন যার কারণে হাত সরাবো কি, নড়াতেও পারলাম না, অগত্যা ই চুপ করে শুয়ে রইলাম। কখন যে আবার ঘুমিয়ে গেছি বলতেই পারব না।
ফের আবার যখন ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট, সাইডে তাকিয়ে মন্ত্রী সাহেব কে খুঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু আশে পাশে তাকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে উঠে বসলাম।
আশেপাশে নজর যেতে ই ওয়াসরুম থেকে পানির শব্দ আসছে মানে উনি গোসল করছেন কিন্তু ভাবনা তো এটা না, উনি গোসল করছেন ঠিক আছে কিন্তু পরবেন টা কি? কাপড় তো নাই!
আমি এটা ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুমের দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। উনার দিকে চোখ যেতেই আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নাকে মুখে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কারণ উনার পরনে একটা সাদা টাওয়াল ছাড়া কিচ্ছু নেই। উনি কিছু ক্ষন ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা এগিয়ে এসে কাঁথা ধরে টান দিয়ে বলল,
” কি হয়েছে ঘুম শেষ হয়নি? আবার শুয়ে পড়লে কেন? তাড়াতাড়ি উঠো বাসায় যেতে হবে ”
আমি কাঁথা খিঁচে ধরে আছি, বিরবির করে বলতে লাগলাম,
” অসভ্য, নির্লজ্জ, লজ্জা টজ্জা আল্লাহ কিচ্ছু দেয় নি লোকটাকে”
উনি আরেকটু জোরে টান দিয়ে বলল,
” কি হলো যাচ্ছো না কেন পূর্ণ? আর কি বিরবির করছো আজব! ”
” আমি উঠবো না যান তো এখান থেকে, আর উ*লঙ্গ ঘুরছেন কেন নির্লজ্জ, আপনার লজ্জা নাই বা থাকতে পারে আমার আছে, যান তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করেন ”
আমার কথা শুনে তাহরিম নিজের দিকে তাকালো,
সে এতক্ষণে বুঝতে পারলো পূর্ণার এ অদ্ভুত বিহেভিয়ার এর কারণ,
সে বাঁকা হেসে কাঁথা ধরে আরেকটু জোরে টান দিলো, যার ফলে কাঁথা টা তাহরিমের হাতে চলে আসে,
” উফফ কি শুরু করছেন, যান তো আর চেঞ্জ করে আসেন ”
” তুমি এমন করছো কেন পূর্ণ? আমি তো তোমার হাসবেন্ড তাই না? দেখার অধিকার আছে তোমার, তুমি বললে টাওয়াল টাও খুলে দিতে পারি ”
বলেই টাওয়াল টা আমার মুখে ছুড়ে মারে,
আমি দুই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে আছি,
” ছিইই, নির্লজ্জ মন্ত্রী সাহেব যান না এখান থেকে ”
তাহরিম বিছানার উপর বসে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,
” চোখ থেকে হাত সরাও”
আমি আরোও জোরে চেপে ধরে বললাম,
” না কিছুতেই না ”
তাহরিম এবার ধমকে উঠে বলল,
” সরাও বলছি! ”
আমি চোখ থেকে হাত সরিয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম,
সামনে তাকিয়ে আমি হতবাক! এই লোক তো দেখি পুরো রেডি, ব্লু পাঞ্জাবি আর সাদা রঙের পাজামা আর চুল গুলো এলোমেলো, ফর্সা শরীরে নীল রঙ টা যাস্ট অসাধারণ লাগছে যদিও তাকে যেই রঙ পরে সেই রঙেই অসাধারণ লাগে!
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,
” আপনি? ”
উনি এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
” কি আমি? ”
আমি আমতাআমতা করে বললাম,
” আপনি পাঞ্জাবি কোথায় পেলেন? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমাকে কি তোমার মতো মাথা মোটা মনে হয়? আর এমন মাথা মোটা থাকলে আমার আর রাজনীতি করতে হতো না, কাল রাতে আপনি যখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন আমি তখন বাইরে থেকে আপনার আর আমার ড্রেস আনিয়ে ছিলাম ”
বলেই আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ গুজে দিলেন,
আমাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন ,
” কি? ”
আমি আমতাআমতা করে,
” আবব নাহ্ কিছু না ” বলেই শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লাম। এই লোক এমন অদ্ভুত কেন? আর সব অদ্ভুত গীরি আমার সাথে ই কেন দেখাতে হবে? হুয়াই মি?
বেশ অনেক ক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু পূর্ণা এখনো ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না দেখে তাহরিম গিয়ে ওয়াসরুমের দরজাই টোকা দিলো,
” পূর্ণা তোমার হয় নি? এতক্ষণ লাগে নাকি? আমরা বের হবো না? লেট হয়ে যাচ্ছে তো!”
তৎক্ষনাৎ ওয়াসরুম থেকে উত্তর এলো,
” আপনার এতো তাড়া থাকলে আমি চলে যান। আমি রাস্তা চিনি, বাসায় যেতে পারব ”
তাহরিম ভ্রু কুচকে এক পলক ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকালো,
বিরবির করে বলতে লাগলো,
” মেয়েটা এমন ঘাড় ত্যাড়া! এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়েকে কিভাবে সামলাবো আল্লাহ ই জানে! কোন সুখে যে এই মেয়েকে ভালোবাসতে গেলাম! ”
দরজা খুলার আওয়াজে তাহরিম সেদিকে তাকালো,
নীল রঙের কুর্তি সাথে সাদা রঙের প্যান্ট আর ম্যাচিং ওরনা বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে।
তাহরিম এগিয়ে আসলো আমার দিকে,
আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাতেই সে হাসি মুখে বলল,
” সুন্দর লাগছে তোমাকে ”
উনার এটুকু কথায় কি ছিলো জানি না তবে আমার মন ভালো করতে যথেষ্ট ছিলো…
_________________________
ঘুৃমের মাঝে ই ইলুর মনে হচ্ছে সে কারো পেট জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে , ইলু ঘুমের মধ্যে ই ভাবতে লাগলো তার ঘরে তো সে একাই থাকে তাহলে কে আসলো তার রুমে? তার ভাই?
তবে নিশ্চিত হবার জন্য পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো ইলু, মুখ উঁচু করে উপরের দিকে তাকাতেই রুদ্রের চোখে চোখ পড়ে তার। রুদ্র তার দিকেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
ইলু হুট করে উঠে বসলো, সে দেখলো এতো ক্ষন রুদ্রের কোলে মাথা রেখে তারই কোমড় জরিয়ে শান্তি তে ঘুমিয়ে ছিলো, বেচারা রুদ্র না পেরেছে হেলান দিতে আর না পেরেছে শুইতে। সারারাত বসে বসে মশা মেরেছে।
ইলু মাথা চুলকে আমতাআমতা করতে লাগলো,
” আবব সসরি, কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি, আপনি ডাকতে পারতেন! ”
রুদ্র কিছু ক্ষন ভ্রু কুঁচকে ইলুর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি কি ঘুমের মাঝে ফুটবল খেলো? নাকি সাইকেল চালাও? ”
” হ্যা? ”
” মানে ইলমী আই কান্ট বিলিভ দিস, একজন মানুষ ঘুমের মাঝে কত ছটফট করতে পারে? সারাদিন যে পাগলামী করো ঘুমের মাঝে সেগুলো ই ফের রিপিট করো! ওহ মাই গড! ”
ইলু চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” মানলাম আমি ওই একটু চুর দৌড়াই, তাই বলে এভাবে অপমান করা ঠিক না ”
ইলমীর কথা শুনে রুদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
” কি? কি করো? ”
ইলু ভাবলেস হীন ভাবে বলল,
” চুর দৌড়াই! ”
ইলুর কথা শুনে রুদ্র কিছু ক্ষন বোকার মতো ইলুর দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে ই হু হা করে শরীর কাপিয়ে হেসে উঠলো,
বেচারা হাসতে হাসতে চোখ থেকে পানিই বের হয়ে গেছে ,
ইলু এক নজর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকালো , মনে মনে ভাবতে লাগলো, সে কি এমন হাস্যোকর কথা বলেছে যে এভাবে ভ্যাবলার মতো হাসতে হবে আজব তো!
” এইই আপনি এভাবে হাসছেন কেন আজব! আমি কি কোন হাসার কথা বলেছি? ”
রুদ্র কোন ভাবে তার হাসি টা থামিয়ে বলল,
” উহুম একদম না, তুমি কেন হাসির কথা বলবে? আমি তো এমনি হাসছি, চলো বাসায় যাবে, অনেকটা সময় হয়ে গেছে ”
রুদ্র কথা টা বলতে দেরি হয়েছে ইলুর উঠে যেতে দেরি হয়নি, ইলু ডানে বামে না দেখেই সোজা গাড়ির দিকে হাটতে লাগলো ,
রুদ্র বেচারা তার পিছনে পিছনে গেলো।
চলবে….
#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_37
_____________________________
“বড্ড বেশি পেঁকে গেছো মেয়ে তুমি! ”
তালুকদার বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে কথা টা বলল তাহরিম তালুকদার। আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম, সারাটা রাস্তা ঝগড়া করতে করতে এসেছে এখন আবার বাসায় এসেও খুচাচ্ছে!
আমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম,
” আমাকে কোন এঙ্গেলে ফল মনে হয় আপনার? যে পেঁকে যাবো? ”
উনি খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো, পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললেন,
” আমি ফলের কথা বলি নি কথার কথা বলেছি ”
” হুম, কথা বলার আগে সাবধানে বলবেন, বুঝে শুনে বলবেন! ”
কথাটা বলে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আমার পা দুটো থমকে যায়, ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার পিছনে পিছনে মন্ত্রী সাহেব মোবাইল দেখতে দেখতে এসে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি হয়েছে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? ”
আমার থেকে কোন রুপ উত্তর না পেয়ে আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকালো,
উনি কাউকে সোফায় বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরলো,
” কেমন আছো সুইটহার্ট? ”
মহিলাটি পান চিবুতে চিবুতে বলল,
” ভালো আর থাকতে দিলে কই মন্ত্রী মশাই! বউ কে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলে তুমি? ”
মহিলার কথা কানে যেতেই তাহরিম মুচকি হেসে উনার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো,
” কি যে বলো না জান! তোমাকে আমি ভুলতে পারি নাকি? তুমি তো আমার প্রথম ভালোবাসা, তোমাকে ভুলা তো অসম্ভব ! ”
” হে হে সেইই আর কি, পাম মারার জন্য তো তুমি উস্তাদ! তো আমার সতিন কোথায় তাকে দেখছি না যে! ”
বুড়ী মহিলার কথায় উনি আমাকে ইশারা করে ডাকতেই আমি বাদ্ধ মেয়ের মতো উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম,
বুড়ি মহিলা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর গলাটা ঝেড়ে বলল,
” তাহু তোমার বউ তো দেখি একেবারেই বাচ্চা! শেষ মেষ কি না বাচ্চা বউ বিয়ে করলে? ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে একবার মহিলার দিকে একবার আমার দিকে তাকালাম,
আমাকে কোন এঙ্গেল এ উনার বাচ্চা মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি না, আর উনার সম্পর্ক তাহরিমের সাথে কেমন সেটাও বুঝতে পারছি না। সম্পর্কে উনি আমার কি হয়?
” দাদিমা, তোমার কাছে আমার বউ কে বাচ্চা মনে হচ্ছে? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম, বুড়ী মহিলা উনার দাদিমা? আগে বললে কি হতো? খচ্চর পোলা, না জানি দাদিমা আমাকে কি মনে করছে! প্রথম দেখায় না দাদি মা কে সালাম দিলাম না কুশলাদি বিনিময় করলাম, বোবার মতো দাঁড়িয়ে ই রইলাম।
আমি মুচকি হেসে দাদিমা কে বললাম,
” আসসালামু আলাইকুম দাদিমা, কেমন আছেন? ”
উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” হুম ভালো ”
” দাদিমা আমার নাম হচ্ছে মিফতাহুল পূর্ণা, আমি একজন সাংবাদিক, বাচ্চা নই ”
উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” বাড়ির বউ কি এই বাচ্চাদের কাপড় পরে রাখে নাকি? তোমার শাশুড়ী তোমাকে শাড়ি দেয় নি? ”
আমি এক পলক নিজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
” না দাদিমা, মা তো আমাকে শাড়ি দিয়েছে আমি পরতে পাড়ি না তো তাই”
” ঠিক আছে ঠিক আছে আর অজুহাত দিতে হবে না, বাইরে থেকে এসেছো বিশ্রাম নাও পরে কথা হবে ”
আমি আর কিছু না বলে দোতলায় চলে এলাম, আমার পিছু পিছু মন্ত্রী সাহেব,
রুমে এসে আমি চোখ ছোট ছোট করে তাহরিম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে বুকের উপর হাত গুজে দাড়িয়ে বললাম,
” আপনার দাদিমা আসবে আপনি আমাকে বলেননি কেন? আমি কি আপনার দাদিমা কে চিনি? ”
উনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বিছানার উপর বসে বলল,
” সেটা তোমার দায়িত্ব, বাসা তোমার, সংসার তোমার, এখানে কে আসবে না আসবে সেটা দেখার দায়িত্ব ও তোমার, আমি কেন বলব? ”
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেল,
এটা কোন কথা! ফালতু যুক্তি আর ফালতু যুক্তি হবেই বা না কেন? ফালতু মানুষের ফালতু যুক্তি, কোন পাগলে যে উনাকে ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানাইছে আল্লাহ ই জানে!
উনি বেশ খানিক্ষন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” কিছু বলবে? ”
” আপনি কি? ”
” আমি কি? ”
আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না, ফোসফাস করতে করতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলাম, রাগের মাথায় একবার ফিরে ও দেখলাম না! উনি ভ্রু কুচকে আমার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করছিলেন। করুক তাতে আমার কি! হুহ।
বিকেলের দিকে,
আজ মন টা বেশ একটা ভালো না, কেন ভালো না ঠিক বুঝতে পারছি না, মানে মন খারাপ এর কোন কারণ ই খুঁজে পাচ্ছি না।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি, বেশ কালো করেছে আকাশ, মেঘের ঘর্ষনের আওয়াজ দুর আকাশের থেকে শোনা যাচ্ছে হয়তো কিছু ক্ষনের মাঝে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে মাটি, সেটার ই অপেক্ষা করছি,
শাড়ির আঁচল টা ছেড়ে দেওয়া , দুপুরে মূলত দাদিমার কথায় শাড়ি পরেছি, গাঢ় নীল রঙের শাড়ি, নীল টা আমাকে কেমন লাগে আমি ঠিক জানি না, আসলে শ্যাম রঙের মেয়ে তো আমি, কোন রং ই যেন খাপ খাওয়াতে চায় না।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কেউ পিছনে থেকে এসে জরিয়ে ধরলো, আমি বেশ চমকে উঠলাম,
” কি ব্যপার মন খারাপ? ”
” নাহ্ ”
” তাহলে একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছো? ”
” কিছু না ”
উনি আমাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে, আমার হাত টেনে ধরে বলল,
” চলো”
” কোথায়? ”
উনি আমাকে টেনে নিচে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
” আরে চলোই না, আজকে রিকসা দিয়ে ঘুরবো”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
” এখন বৃষ্টি হবে, বাইরে যাওয়াটা ঠিক হবে না মন্ত্রী সাহেব! ”
উনি আমাকে টেনে রাস্তায় এনে দাড় করিয়ে বললেন,
” বৃষ্টি হবে বলেই তো বাইরে আনলাম তোমাকে,
বৃষ্টির মাঝে ই রিকসা দিয়ে ঘুরবো ”
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি একটা রিকসা দাড় করানো, বুঝলাম উনি সব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে, অগত্যা ই আমাকে রিকসায় উঠে বসতে হলো, উনিও বসলেন আমার পাশে,
রিকসা কিছু দুর সামনে এগুতেই ছন্দময়ী বৃষ্টি তে ভিজে উঠলো চারপাশ,
আমি রিকসার হুড তুললাম, সামনে থেকে বৃষ্টির ঝাপটা এসে চোখে মুখে পড়ছে, অনুভতি ভিন্ন রকম!
আমি মুচকি হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে।
আমি মুখে হাসি বিদ্যমান রেখে উনার দিকে আরেকটু চেপে বললাম,
“মন্ত্রী সাহেব? ”
” হুম? ”
” আপনি নাকি খুব ভালো গান করেন? ”
উনি ভ্রু কুচকে বলল,
” কে বলল তোমাকে? ”
” জানি আমি ”
উনি হেসে মাথা চুলকে বললেন,
” ওই আর কি একটু আকটু, তেমন ভালো পারি না ”
” বেশি ভালো লাগবে না, একটু আকটু হলেই হবে”
উনি বাঁকা হাসলো, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম, কিন্তু উনার বাঁকা হাসার মানে না বুঝলাম না।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলেন,
_______________
“”হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো হুড তোলা এক রিকশায়
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে, তুমি দেখলে না
রোদে পোড়া এ রোমিও চেহারা
তুমি বুঝলে না আমার ইশারা
মন বলে যদি থামতে, তুমি থামলে না
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না
কোনো কাক ডাকা এক সকালে
তুমি বারান্দা এসে দাঁড়ালে
আমি ছিদ্র খুঁজছি দেয়ালে
তোমায় দেখব বলে
তুমি অদ্ভুত এক খেয়ালে
গাঢ় লাল টিপ দেখি কপালে
হঠাৎ আমার দিকে তাকালে
আজ আমি ভয় পেলাম না
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না
নামি চলো আজ পথে
হাত রাখো এই হাতে
দু’জনে চলো যাই বহুদূর
আমার গিটারের সুরে
দোলা লাগে তোমার নূপুরে
উত্তাল ঢেউ তোলে, দোলে হৃদয়-সমুদ্দুর
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
ডাকো একবার ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকাব, পলক পড়বে না
আজ আমার প্রেমিক শরীরে
তোমার হাওয়ায় উড়ছি ফুরফুরে
প্রেম আর পাগলামি, তাকে লুকাব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না””
____________
” বেশ ভালো গান তো আপনি বাট বর্তমানের সাথে পুরোপুরি মেলেনি গান টা”
” কেন কেন? ”
” ওই যে আপনি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম না! ”
” আরে ওইটা তো প্রেমিকার জন্য গাওয়া কিন্তু আমার তো বউ আছে তাই একটু ডিফারেন্ট তো থাকবেই ”
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
” আমাকে ভালোবাসেন মন্ত্রী মশাই? ”
আমার কথাটা কর্ন গোচর হতেই উনি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন, হয়তো এই মূহুর্তে আমার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেন নি,
আমি সামনে তাকিয়ে আছি,
উনি আমার দিকে আরোও চেপে বসে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরলেন, আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“”শূন্যতা অনুভব করা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে, আমি তোমাকে প্রতিটা মূহুর্তে ভালোবাসি বউজান !'””
চলবে….
[ সরি জনগন… ]