ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-৩৪+৩৫

0
717

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_34
_____________________________

বেশ অনেক্ক্ষণ হয়ে গেলো সামনে কোন আওয়াজ পাচ্ছি না, চোখ বন্ধ করে বসে বসে মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছি আর চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে মন্ত্রী সাহেব এর হাস্যোজ্জল মুখখানি,

এবার ভীষণ সন্দেহ হলো প্রায় মিনিট ৪-৫ হয়ে গেলো এখনো কোন শব্দ পাচ্ছি না , পিটপিট করে চোখ খুললাম, কিন্তু সামনে যা দেখলাম আমার চোখ অটোমেটিক বড়ো হয়ে গেলো, টাসকি খেয়ে গেলাম সামনের মানুষ টার দিকে তাকিয়ে,ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম, খানিকটা ভয় ও লাগলো,

মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই লোক এখানে কেন? কি করে ঢুকলো এখানে? আমার মুখ থেকে যেন কথায় বের হচ্ছে না, কথাগুলো যেন গলায় দলা পাকিয়ে আসছে আর গলাতে ই থেমে যাচ্ছে, মুখ পর্যন্ত আর আসছে না!

বহুকষ্টে আমতাআমতা করে বললাম,

” আআপনি? ”

আমার সামনে রাখা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছেন মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার। আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি এখন। উনার এমন দৃষ্টির সাথে আমি পরিচিত নই। তার পাশেই দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে ইলু একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মন্ত্রী সাহেব এর দিকে। দুরে চেয়ারে বসে রুদ্র ভাইয়া মোবাইল ঘাটছে।

” আআপনি কখন এলেন? ”

উনি কোন কথায় বলছেন না কেবল আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে,

হঠাৎ উনি চেয়ার থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালেন, ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

” ইলমী তুমি একটু বাহিরে যাও, তোমার বান্ধবীর সাথে আমার কথা আছে”

ইলু যেতে না চাইলে ও রুদ্র ভাইয়া ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো,

ইলমী অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো, আমি মাথা নাড়িয়ে ইশারা করলাম ওকে না যেতে, ও কি সুন্দর আমাকে অল দা বেস্ট জানিয়ে চলে গেলো বাহিরে,

আমি বিরবির করে বললাম,

” মীর জাফরের ফিমেল ভার্সন! ”

উনি এবার আমার দিকে তাকালো, আমার হাত পা তখন ও বাধা, উনি কিছু করলেও আমি কিছু করতে পারব না,

উনি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে আসলো, উনার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুঝলাম, মারাত্মক লেভেলে রেগে আছেন উনি!

উনি এগিয়ে এসে ঠাস করে আমার গালে থাপ্পড় মারলেন, থাপ্পড় টা এতো জোড়েই ছিলো আমার গাল টা চিনচিন করে উঠলো,

ব্যথা পেয়েছি অনেক! উনি আরেক হাত উঠাতেই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম, কিন্তু গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শ পেয়ে ফট করে চোখ খুলে তাকালাম,

কি করছেন উনি? কিসস!

উনি যেই গালে থাপ্পড় দিয়েছেন ঠিক একই গালে কিস করলেন,

আমি গালের ব্যথার কথা ভুলে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি উনার দিকে,

উনি ঝুঁকে আমার হাতের বাধন খুলে দিলো,

তারপর সোজা টান দিয়ে দাড় করিয়ে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলেন, কিন্তু হেটে তো রাস্তা পর্যন্ত যেতে হবে তাই ফট করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা লাগালেন, রাস্তার কাছে এসে গাড়ির সামনে আমাকে নামিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি তে বসিয়ে নিজে চালাতে শুরু করলো, আমি এতটা সময় ঘোরের মধ্যে ই কাটিয়ে দিলাম, গাড়ি চালানোর শব্দে আমার রেস টা পুরোপুরি কাটলো, এতক্ষণ কি হলো কিছু ই বুঝলাম না,

আমি লাফ দিয়ে সোজা হয়ে বসলাম,

” এইই আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ”

উনি সামনের দিকে তাকিয়ে ই থমথমে গলায় বলল,

” জমের বাড়ি”

” এইই না না এখন কারো বাড়ি টাড়ি যাবো না আমার প্রমান গুলো অফিসে জমা দেওয়া লাগবে”

উনি খুব জোরে ব্রেক করে আমার দিকে তাকালো,

দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” থাপ্পড় কি আরেকটা খেতে চান মিসেস মিফতাহুল পূর্ণা? ”

আমি হাত দুটো অটোমেটিক দুই গালে চলে গেলো, আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম,

” খেতে না চাইলে চুপচাপ বাসায় চলো, বড্ড বেশি সাহস বেড়ে গেছে তোমার! তোমার সাহস আমি ছোটাচ্ছি! ”

আমি আর কোন কথা বললাম না, চুপ চাপ সিটে হেলান দিলাম , খুব বেশি রাত হয়ে গেছে এদিকে সারাদিনের ব্যস্ততায় বড্ড বেশি ই ঘুম পাচ্ছে, তাই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের ই পাই নি।

তাহরিম ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকালো পূর্ণার দিকে, পূর্ণা ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে ওর মাথা টা নিজের কাঁধের উপর নিলো, কপালে পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে একটা কিস দিয়ে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভে মন দিলো,

তখন কার দৃশ্য মনে হতেই তাহরিম এর শরীর কাটা দিয়ে উঠছে, আর একটু দেরি করলে হয়তো তার পূর্ণা কে সে জীবিত পেতো না, কি করে থাকতো সে তার পূর্ণ ছাড়া, এই পূর্ণ ছাড়া তো সে অপূর্ণ!

তাহরিম প্রায় শতাধিক পুলিশ নিয়ে একেবারে ভেতরে ঢুকেছিলো সে আর লোকেশন তাকে ইলু দিয়েছে, বাইক দিয়ে পূর্ণার সাথে আসতে আসতে ই সে তাহরিম কে মেসেজ করেছিলো,

পুলিশ সবাইকে নিয়ে সন্তোর্পনে বেরিয়ে গিয়েছিলো আর তাহরিম পূর্ণার সামনে বসে ছিলো, থাপ্পড় টা পূর্ণার প্রাপ্য ছিলো , সব কাজে এমন মাতব্বরি ভালো না মেয়েটা তা বুঝতে ই চায় না!

______________________

” আপনি আমাকে ওভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন রুদ্র ভাইয়া? ”

রুদ্র গাড়ি তে বসে সিটবেইল লাগাচ্ছিলো, ইলুর কথা শুনে সে তার দিকে তাকালো,

” তো কি ওরা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চেয়েছিলে নাকি? ”

ইলু নাক কুচকে বলল,

” কাবাব মে হাড্ডি হতে যাবো কেন? তাহরিম ভাই যদি এখন ওকে কিছু করে বসে তাহলে? ”

রুদ্র ইলমীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভালোবাসার মানুষ কে আর যায় হোক কষ্ট দেওয়া যায় না, কেউ তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে সে তোমাকে সবসময় খুশি দেখতে পছন্দ করবে আর তাহরিম তো পূর্ণা কে প্রচন্ড ভালোবাসে তাই ওকে কষ্ট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না, বুঝলে? ”

ইলমী ছোট করে উত্তর দিলো,

” হুম ”

রুদ্র কিছু একটা ভেবে বলল,

” ওয়েট অ্যা সেকেন্ড! তুমি আমাকে ভাইয়া বললে কেন? আমি কি তোমার ভাইয়া হই? ”

ইলু ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকালো,

” তো? ”

” তো মানে? আমি কি তোমার ভাইয়া? ”

” আপনি তো পূর্ণর ভাসুর আই মিন ভাইয়া! আর পূর্ণা আমার ফ্রেন্ড মানে বোন, তার মানে বোনের ভাই মানে তো আমার ও ভাই, ঠিক না? ”

ইলুর কথা শুনে রুদ্র বিরবির করে বলল,

” হুয়াট অ্যা লজিক! ”

ইলু খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,

” কি কিছু ভুল বললাম ভাইয়া? ”

রুদ্রের ইচ্ছে করছিলো ইলুকে ঘুড়িয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলতে,
আমি তোর ভাইয়া না জামাই হই জামাই, জামাই ডাক!

কিন্তু মুখ দিয়ে বের করলো না, মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,

” ভুল বলবে কেন? তোমার লজিক কি ভুল হতে পারে নাকি? ”

ইলু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

” এক্সেক্টলি তাই! ”

বলেই ইলু বাইরের দিকে তাকিয়ে রুদ্রের আড়ালে মুখ টিপে হাসল,

মনে মনে বলল,

” দেখি কত দিন আপনি নিজের মনের কথা মনে ই চেপে রাখতে পারেন! আমি ও ইলমী কি করে মনের কথা বের করতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে”

রুদ্র কে আরোও জালানোর জন্য ইলু হঠাৎ রুদ্র কে ডেকে উঠলো,

” ভাইয়া? ”

রুদ্র ইলুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো,
যা দেখে ইলু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,

” এভাবে তাকাচ্ছেন কেন ভাইয়াআআ? ভাইয়া, আমি কি কিছু ভুল করেছি ভাইয়া? ভাইয়া আপনি কি কিছু বলবেন ভাইয়া? ”

রুদ্র ইলুর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” এই দুই লাইনে পাঁচ বার ভাইয়া ডেকেছো তুমি? তোমার সমস্যা কি হে? চুপচাপ বসো! ”

” ভাইয়া আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন ভাইয়া? ”

রুদ্র রাগে ফুসছে, কোন কথা বলল না,

” কি হলো ভাইয়া? কথা বলছেন না কেন ভাইয়া? ”

রুদ্র এবার স্টিয়ারিং এ হাত রেখে ব্রেক করে ইলুর দিকে এগিয়ে গেলো,

এবার ইলু আর রুদ্রের মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব, ইলুর হার্ট বিট যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো,

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” তুমি যদি আরেকবার ভাইয়া ডাকো তাহলে এই জানালা দিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দিবো, চুপচাপ বসে থাকো”

কথা টা বলেই রুদ্র সোজা হয়ে বসে মন দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো,

চলবে…

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_35
_____________________________

পূর্ণাদের গাড়ি টা আপাতত দাঁড়িয়ে আছে তালুকদার বাড়ির সামনে, তাহরিম এক পলক পূর্ণার দিকে তাকালো, পূর্ণার পরনে জ্যাকেট আর প্যান্ট, এই অবস্থায় কি করে বাসার ভেতরে নিয়ে যাবে সেটাই ভাবছে সে,

তাহরিম কিছু একটা ভেবে আমাকে গালে চাপড় দিয়ে ডাকলো,

” পূর্ণ? শুনতে পাচ্ছো? ”

আমি খানিকটা নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে গেলাম,
তাহরিম আবার ডাকলো,

” এই পূর্ণ? ”

আমি খানিকটা সময় নড়েচড়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম,

উঠে বসতে বসতে বললাম,

” কি হয়েছে ডাকছেন কেন? ”

তাহরিম খানিকটা ভাবুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

” তুমি ড্রেস কোথায় চেঞ্জ করেছো? ”

আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালাম,

” মানে? ”

তাহরিম গাড়ির স্টেয়ারিং এ হাত রেখে আমার দিকে ঘুরে তাকালো,

“তুমি যে গোয়েন্দা গীরি করতে গেছো এই ড্রেস পরে, কোথায় চেঞ্জ করেছো? তোমার শাড়ি কোথায় ? হোটেলে? এই ড্রেস পরে তো আর শ্বশুর বাড়ি তে যেতে পারবে না! তাই আগে ড্রেস টা চেঞ্জ করে কাল সকালে বাসায় আসবো ”

আমি এবার নিজের দিকে তাকিয়ে পুরোপুরি কথার মানে টা বুঝতে পারলাম,

” আরে ওই নাম টা ভুলে গেছি, আপনি চলেন রাস্তা চিনি আমি! ”

তাহরিম ভ্রু কুচকালো,

” এই ব্রেইন নিয়ে তুমি গেছো রাজনৈতিক নেতাদের সাথে পাঙ্গা নিতে, হাউউ ফানি!”

উনার কথা শুনে আমি বেশ রেগে আঙুল উচিয়ে বললাম,

” দেখুন অপমান করবেন না বলে দিলাম, আমি কিন্তু সব প্রমান জোগাড় করে ফেলেছিলাম কিন্তু হঠাৎ হাত লেগে ফুল দানি টা পড়ে যেতেই সবাই বুঝে গিয়েছিল, এতে আমার কি দোষ ”

উনি স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন,

” নাআআ নাহ্ তোমার কি দোষ! তোমার কি কোন দোষ থাকতে পারে! এত এত মিথ্যা বলে তুমি বের হয়েছো, আবার এত রিস্কের একটা কাজ নিজের ইচ্ছে তে করেছো, এটা তো দোষ না! এটা একটা অন্যায়, এত মাতব্বরি করতে কে বলেছে তোমাকে? আমি বলেছি তোমাকে? এটলিস্ট আমাকে তো জানাতে পারতে! ”

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,

” আপনাকে বললে আপনি যেতে দিতেন আমায়? কক্ষনও যেতে দিতেন না, আপনাকে আমি ভালো করেই চিনি! ”

আমি লোকেশন বলে দিচ্ছি উনি গাড়ি চালাচ্ছে আর ঝগড়া করছে।

গাড়ি এসে থামলো একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে, উনি গাড়ি থেকে নামার পূর্বে মাস্ক টা ভালো ভাবে পরে নিলেন যাতে কোন সমস্যা না হয়,

রিসিপশন থেকে চাবি নিয়ে রুমে এসে আমি পূর্বের পরা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলাম,

প্রায় মিনিট বিশের পর শাড়ি ঠিক করে বের হলাম,
উনিও ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় বসলেন, আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছিলো সারাদিনের ঝামেলায় ভীষণ ক্লান্ত আমি,

উনি আমার পাশে এসে বসে বললেন,

” তোমার শ্বাশুড়ি ফোন দিয়েছিলো আমাকে! তোমাকে ফোন দিয়ে পায়নি ”

আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

” কেন? ”

” কারণ টা তো জানি না, তবে তোমাকে বলেছে কাল তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে”

আমি উঠে বসলাম,

” কেন কাল কি কোন অনুষ্ঠান? ”

উনি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন,

” আমি কি জানি? ”

আমি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়তেই উনি হঠাৎ করে বলে উঠলেন,

” পূর্ণ শোননা! ”

” হুম? ”

” কাল তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে মিট করাবো!”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

” গার্লফ্রেন্ড? ”

” হুমম, তোমাকে বলেছিলাম না আমার গার্লফ্রেন্ড আছে! কাল একবার সময় করে তোমার সাথে দেখা করাবো, তুমি রেডি হয়ে থেকো”

আমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম,

” আপনার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করলে আমার আবার রেডি হতে হবে কেন আজব! যান সরেন তো, দেখানোর সময় দেখাইয়েন, এখন ডিস্টার্ব করবেন না ”
বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে উঠিয়ে আমি কাথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম,

আমার বুকের মধ্যে কোথাও না কোথাও জ্বলন অনুভব করছি, আর জেলাস হবো না কেন, প্রথমত তাহরিম তালুকদার আমার হাসবেন্ড, দ্বিতীয়ত আমি তাকে ভালেবাসি আর ভালেবাসার মানুষের মুখে অন্য কোন মেয়ে মানুষের কথা শুনতে কার ভালো লাগে তার উপর তাকে যদি নিজের গার্লফ্রেন্ড দাবি করে!

মনে তো বলছিলো ঠাস ঠুস করে কয়েকটা কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলি, বউ থাকতে তোর কিসের গার্লফ্রেন্ড রে? বেদ্দপ পোলা,!

কিন্তু আফসোস কিছু ই বলতে পারলাম না!

_____________________

” ভাইয়া শুনছেন? ”

রুদ্র বিরক্ত, ভীষণ বিরক্ত এই মেয়েটার উপর, প্রতিটি লাইনে পাঁচ বার ভাইয়া না ডাকলে মনে হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে এমন ভাব,

রুদ্র রাগী দৃষ্টি তে ইলুর দিকে তাকালো,

” তোমাকে না বললাম চুপচাপ সিটে বসে থাকতে, এত কথা বলো কেন? আরেকটা কথা বলবে তো মাইর ও খেতে পারো!”

ইলু তো ইলুই, ইলু হঠাৎ খেয়াল করলো রুদ্র ইলুদের বাড়ির রোডে না গিয়ে তার বিপরীত দিকে যাচ্ছে, ইলু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,

” এইই রুদ্র ভাইয়া কি করছেন? আপনি বামে যাচ্ছেন কেন? আমার বাসা তো ডানে! ”

রুদ্র নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,

” আমি তো তোমার বাসায় যাচ্ছি না যে তোমার ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী যাবো! আমি যাচ্ছি আমার ইচ্ছে মতো, চুপচাপ বসো আর দেখো কোথায় যাই! ”

” দেখুন রুদ্র ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমি নামবো, নামান আমাকে! ”

রুদ্র না কোন কথা বলছে আর না ইলুর কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে,

ইলু নিজের করা একটা প্রশ্নের উত্তর ও না পেয়ে বেশ হতাশ। হতাশ হয়ে চুপচাপ বসে রইলো, রুদ্র আড়চোখে এক পলক ইলুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,

রুদ্র দের গাড়ি এসে থামলো একটা বিলের পাশে,

রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ইলুর দিকের দরজা খুলে দিলো,

” নামো”

ইলু হাত গুটিয়ে বসে আছে মানে সে কিছু তেই গাড়ি থেকে নামবে না..

” আপনার ইচ্ছে হলে আপনি যান আমি যাবো না, আমি বাসায় যাবো”

রুদ্র ভ্রু কুচকে কিছু ক্ষন নিরব দৃষ্টিতে ইলুর দিকে তাকিয়ে, খানিকটা ঝুঁকে ইলুকে হুট করে ই কোলে তুলে নেয়,

হঠাৎ এমন হওয়াতে ইলু বেশ চমকে উঠলো,

” এইই কি করছেন নামান আমাকে! নামান আমি যাবো আপনার সাথে তাও নামান আমাকে”

রুদ্র সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে বলল,

” সুন্দর ভাবে বলেছিলাম নামতে, নামো নি তাই আমি আমার টেকনিক টা এপ্লাই করলাম, এখন তুমি মুখ টা বন্ধ রাখো নয়তো আমি আমার টেকনিক এপ্লাই করে তোমার মুখ টা বন্ধ করবো! নাউ ইউর উইস!”

রুদ্রের কথা শুনে ইলু চুপ করে গেলো আর মনে মনে নিয়ত করলো কেয়ামত হয়ে গেলেও সে কথা বলবে না আর না মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের করবে, একদম চুপপ!

রুদ্র ইলুকে নিয়ে বিলের তীরে এসে ইলুকে বসিয়ে প্যান্ট টা একটু উপরে তুলে পানিতে পা দিয়ে নিজেও বসে পড়ল,

আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আজ আকাশে অর্ধচন্দ্রিমা, আর আকাশ ভরা তারার মেলা,

ইলুর বেশ ভালো লাগলো এখন, তার কাছে কেন জানি অর্ধ চন্দ্র টাই বেশি ভালো লাগে, সবার তো পূর্ণিমা ভালো লাগে কিছু ইলুর আলাদা, সবার পছন্দ যে এক রকম হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই!

আকাশ টা পরিষ্কার হওয়ায় চারপাশে মৃদু আলোটা ভালোই লাগছে, তার সাথে হালকা ঝিরঝিরে বাতাস.

” ভালো লাগছে? ”

” হুমম ”

ইলু চারপাশে নজর বুলিয়ে পাশে রুদ্রের দিকে তাকালো,

রুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে, ইলু ভ্রু কুচকে বলল,

” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কিছু বলবেন? ”

” হুমম আজকের চাঁদ টা ভীষণ সুন্দর তাই না? ”

ইলু মুচকি হেসে বলল,

” হুমম অর্ধ চন্দ্র আমার ভালো লাগে ”

” তোমাকেও আমার ভালো লাগে ”

ইলুর কথার প্রেক্ষিতে হঠাৎ রুদ্রের এমন কথায় ভ্রু কুচকে বলল,

” আমাকে কিছু বললেন? ”

রুদ্র হকচকিয়ে উঠে বলল,

” নাআআ নাহ্ বললাম আজকের ওয়েদার টা ও খুব সুন্দর ”

ইলু মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,

“হুম”

তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

” গর্ধব কোথাকার! ”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে