ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-৩২+৩৩

0
705

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_32
_____________________________

সেই কখন থেকে সং সেজে স্টেজে বসে আছি! না দেখা মিলছে ইলুর আর না দেখা যাচ্ছে ওই মন্ত্রী সাহেব এর। বিরক্ত হচ্ছি ক্ষনে ক্ষনে তার উপর মাথায় চলছে আরেক চিন্তা আদৌও কাজ টা ঠিক ভাবে করতে পারব তো? আজ কাজ টা যদি না পারি তাহলে হয়তো মরব নয়তো বাঁচবো। তবে ভাববার বিষয় আরেকটা, এই অনিশ্চিত কাজে ইলুকে নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হচ্ছে?

” হেইই বান্ধবী দেখ তো কেমন লাগছে আমাকে? ”

চেনা কোন কন্ঠ শুনতে পেয়ে আমার ধ্যান ভাঙ্গে সামনে তাকিয়ে দেখি কালো কাতান শাড়িতে নিজেকে জড়িয়েছে ইলু। মেয়েটা এমনি ই উজ্জ্বল ফর্সা তার উপর কালো টা যেন অন্ধকারের আলো। চুল গুলো স্ট্রেইট করে পিছনে ছেড়ে দেওয়া। অনুষ্ঠানে তেমন মানুষ দাওয়াত দেওয়া হয় নি এই টুকটাক ঘরোয়া আয়োজন।

” মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আমার জানু পরীকে ”

আমার কথা শুনে মেয়েটা লাজুক হাসলো, কাঁধে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলল,

” লজ্জা দিচ্ছিস কেন? আমি ফর্সা হলেও তোর মতো মায়াবতী নই, ফর্সা মেয়েদের অবজ্ঞা করা যায় তবে মায়াবতী কে না! ”

” হে হে বুঝছি তোর কবি গিরি, পাম মারার তো উস্তাদ আপনি, তবে রাতের কথা টা ভুলিস না যেন! যে করেই হোক আমাদের আজকেই যেতে হবে ”

” হুম ”

বলেই ইলু উঠে বাহিরে চলে গেলো, ইলু বাগানের মধ্যে বুকের উপর হাত গুজে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো ,

” কি ব্যাপার আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে? মন খারাপ? ”

ইলু হাসলো সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

” মানুষ তো একাই ভালো থাকে, একাকিত্বের মাঝে তারা নিজেকে খুঁজে পায় ”

” বাহ্ আজ বেশ আধ্যাত্মিক কথা বলছেন ব্যপার কি? ”
ইলু ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকালো, যে ছেলের পেট থেকে বোমা মারলেও কথা বের হয় না সে ছেলে নিজে থেকে এসে কথা বলছে, ব্যপার টা অদ্ভুত!

” কি ব্যপার বেহাই মশাই, আজ মনে হচ্ছে মন টা বেশ ভালো, অন্য দিন তো বোমা মারলেও কথা বের হয় না আজ নিজে থেকে এসে কথা বলছেন! ”

রুদ্র অন্য দিকে তাকিয়ে হাসলো,

” হুমম আসলে দেখলাম, আমার দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বেহাইন সাহেবা একা দাঁড়িয়ে গাছের পাতা গুনছে তাই ভাবলাম একটু সঙ্গ দেওয়াই যায় ”

” ভালো বলেছেন ”

বলেই ইলু আবার সামনে তাকালো,

” চলেন হাটি ”

ইলু মাথা দুলিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো , রুদ্র ও পাশাপাশি হাঁটছে..

__________________

” বউজান.. এই বউ জান ”

স্টেজে বসে তাহরিম পূর্ণার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ঝুঁকে তাকে ডাকলো,

আমি বিরক্তি তে ভ্রু কুচকে বললাম,

” কি সমস্যা আপনার? এমন ফিসফিস করে কথা বলছেন কেন? ”

” আরে শোনো না ”

তখন তাদের ফটোসেশান চলছে,

আমি তাহরিমের দিকে খানিকটা ঝুঁকতে ই তাহরিম ফটোগ্রাফার কে কিছু একটা ইশারা করে পূর্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে গালে একটা কিস করে বসে,

আর ফটোগ্রাফার ও সেই সুযোগে বেশ কয়েক টা ছবি ক্লিক করে নেয়,

এর থেকে খানিকটা দুরেই ইলু পূর্ণা আর তাহরিমের ফটোসেশান দেখছিলো হঠাৎ তাহরিমের এমন কাজে ইলু চোখ বড়ো বড়ো করে মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,

আমি হতবুদ্ধির ন্যায় বোকা হয়ে গেলাম৷ , পুরো ব্যপার টা আমার মগজে ঢুকতে বেশ কিছু সেকেন্ড সময় লাগলো,

আমি চোখ বড়ো বড়ো করে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাহরিম এর দিকে তাকালাম , তাহরিম তখন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বসে মোবাইল ঘাটছে ,

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

” আপনি কবে থেকে এমন নির্লজ্জ হয়েছেন মন্ত্রী সাহেব ? ”

তাহরিম মোবাইলের থেকে চোখ তুলে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,

” মিস পূর্ণা তুমি কি আমাকে কিছু বলছো? ”

আমি নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম,

” আপনি না এক কাজ করতে পারেন এসব রাজনীতি ফাজনীতি বাদ দিয়ে হলিউড, বলিউড, টলিউডে অভিনয় করতে পারেন, ট্রাস্ট মি হেব্বি হিট হবে ”

বলেই অন্য দিকে তাকালাম , আমার কথা শুনে তাহরিমের মনে হলো সে খুব ভালো একটা জোক্স শুনেছে , শব্দ করে হেসে বলল,

” তুমি চাইলে আমি বলিউড অভিনেতা হতেই পারি তবে তোমার আবার জ্বলবে না তো? ”

আমি ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলাম,

” আমার আবার জ্বলবে কেন? ”

” না মানে এত এত ফিমেল এক্ট্রেস এর সাথে কাজ করবো কত সুন্দরী সুন্দরী অভিনেত্রী তারা , কোথাও গিয়ে তোমার আবার জ্বলবে না তো? ”

আমি মুখ বেকিয়ে বললাম,

” ইসস কক্ষনো না , হুদাই ”

” আর ইউ সিউর ? ”

” ইয়াহ ”

” না থাক পরে তুমি মনে মনে কষ্ট পাবা মুখে না বললে ও আমি জানি আর আমি আবার মহান ব্যক্তিত্ত সম্পন্ন পুরুষ, নিজের বউ কে কষ্ট দেবার কথা চিন্তা ও করতে পারি না, যা হোক তোমাকে এ যাত্রাই বাচিয়ে দিলাম ”

” আমাকে বাচিয়ে দিলেন! হাউউ ফানি ”

বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আয়োজন শেষ হলো৷, সব শেষ করে বাসায় ফিরতে বেশ অনেক টায় দেরি হয়ে গেছে , আমার ইচ্ছেতেই অনুষ্ঠান টা দিনের বেলায় হয়েছিল , যার ফলে শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ,

সবাই বের হতেই ইলু এসে আমার পাশে দাড়ালো, আমি ওকে ইশারা করতেই ও আমাকে ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করলো ,

আমার পাশে ছিলো মা , ইলুর এমন কান্না দেখে মা বলল ,

” ইলমী কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন,? ”

ইলু আমার হাত ধরে নাক মুছতে মুছতে বলল ,

” দেখুন না আন্টি, আজ আমার জন্মদিন অথচ পূর্ণ বলছে ও নাকি যাবে না , ও যাবে না এটা কি কখনো হয়? ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না? ওকে ছাড়া আমি কি করে কেক কাটি ? ”

ইলুর কথা শুনে মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ও কি কথা পূর্ণ, তুমি ইলমীকে মানা করছে কেন? ওর সাথে যাও, বেচারী যখন এত আশা নিয়ে বলছে তুমি আর রিজেক্ট করো না যাও ”

” আপনি যখন বলছেন, ঠিক আছে মা ”

আমার কথা শুনে ইলু লাফ দিয়ে উঠে বলল,

” আন্টি আজ পূর্ণ একটু আমাদের বাসায় থাকুক! কাল সকালে আমি ওকে আবার দিয়ে যাবো, আন্টি প্লিজ না করবেন না প্লিজ আন্টি ”

মা অমত থাকা সত্তেও ইলুর এতো রিকোয়েস্ট ফেলতে পারলো না অগত্যাই সে মত দিয়ে দিলো , আমি আর ইলু দ্রুত পায়ে ক্যাব ভাড়া করে চলে এলাম একটা হোটেলে,

তখন ভাগ্যিস মন্ত্রী সাহেব ছিলো না, না হলে কিছু তেই আসতে দিতেন না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি,

হোটেলের রুমে গিয়ে সকল ফাইল, পেন ড্রাইভ এক জায়গায় রেখে ,

কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমের চলে গেলাম, ফ্রেস হয়ে ফরমাল ড্রেসআপ করে বের হলাম ,

একটা কালো লং স্যুট আর কালো প্যান্ট মাথায় ক্যাপ আর মুখে মাস্ক , পায়ে ক্যাডস , কেউ চেনার উপায় নেই, আমার মতোই সেইম সাজে ইলমী ,

” ইলু তুই সব জিনিস পত্র রেডি কর আমি বাইক নিয়ে আসছি , তারপর একসাথে বেরিয়ে যাবো , দশটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে ”

“কোথায় যাবি সেটা তো বললি না”

” যেতে যেতে সব বলব ”

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ,

কাউকে ফোন করে বললাম বাইক টা যেন রেডি রাখে আমি আসছি সেটা নিতে,

বলতে বলতে বেরিয়ে গেলাম হোটেল থেকে ,

প্রায় আধাঘন্টার মাঝে পুনরায় ফিরে এলাম হোটেলে ,

বাইক টা পার্ক করে হোটেলের রুমে ঢুকলাম , ইলু সব কিছু রেডি করে বসে আছে ,

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা ত্রিশ বাজছে ,

দুজন মিলে বেরিয়ে গেলাম , সেই জায়গাটার উদ্দেশ্যে,

আদৌও জানি না কাজে কতটুকু সফল হতে পারব , আদৌ তেও কি বেঁচে ফিরতে পারবো কি না , এক অনিশ্চিত জীবন…

চলবে…

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_33
_____________________________

” আমরা কোথায় যাচ্ছি পূর্ণ? ”

আমি বাইক চালাতে চালাতে উত্তর দিলাম,

” কাশিমপুর ”

ইলু বেশ অবাক হলো , এতো রাতে কাশিমপুর যাবার মানে টা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে , ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

” এই এতো রাতে কাশিমপুর তোর কি কাজ রে পূর্ন? ”

আমি বাইকের আয়না দিয়ে ওর দিকে তাকালাম যদিও অন্ধকারে ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না।

” কাশিমপুরে পুরনো বাংলো টা আছে যেটা একদম সমুদ্রের তীর ঘেষে আর জঙ্গলের শেষ প্রান্তে? ”

” হুমম ”

” ওখানে ই যাচ্ছি ”

ইলু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

” কেন? কেন যাচ্ছি সেটাই তো জিজ্ঞেস করলাম? ”

” আমি খবর পেয়েছি আজ রাতেই ওদের সবচেয়ে বড় ডিল টা কমপ্লিট করবে, আর তার প্রমান জোগাড় করার জন্য ই ওখানে যাওয়া ”

ইলু পুরো ব্যাপার টা শুনে বলল,

” কিন্তু পূর্ণ আমার না কেমন জানি খটকা খটকা লাগছে, তুই সিউর তো? যে তোকে এসব খবর দিয়েছে সে কোন ভুল ইনফরমেশন দেয় নি তো? এটা ফাঁদ পাতে নি তো আমাদের ধরার জন্য? ”

আমি হাসলাম,
মেয়েটা অল্পতেই খুব বেশি ঘাবড়ে যায়,

” যদিও আমি সব খবর নিয়েই এসেছি তবুও আমরা যেই পেশায় আছি সেটা মোটেও শান্তি জনক পেশা না, জীবন মরনের লড়াই হয় এখানে, আমি নিজের জীবন টাকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েই এসেছি ”

ইলু কিছু টা ভেবে বলল,

” আমরা তাহরিম তালুকদার কে না বলে এসে কোন ভুল করিনি তো? উনাকে কি জানানো উচিত ছিলো না পূর্ণ? ”

আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম,

” উনাকে জানালে কি হতো শুনি? সেই আসতে দিতেন না, হয়তো আসতে দিলেও টেনশনে হার্ট অ্যাটাক ই করে বসতেন, আর আমার পেশাটাই এমন ভয় পেলে চলবে না, সমাজের চোখে সত্যি টা প্রকাশ করতে হবে, এটাই তো আমাদের লক্ষ্য ”

” পূর্ণ? ”

” হুম বল, সাম হাউ তুই কি ভয় পাচ্ছিস? দেখ ইলু ভয় পেলে বল আমি এমনিতেও তোকে নিয়ে যেতে চাইছিলাম না, তবে দুজন যেতে ই হতো, শোন তোকে একটা কথা বলি! ”

” হুম বল ”

” ওখানে যাচ্ছি তবে কি হবে সেটা কিন্তু জানি না , শুনেছি শাফিন মিয়াজি লোকটা ভীষণ ধুরন্ধর, একবার যদি টের পায় কিংবা ধরতে পারে তবে কিন্তু আর রক্ষে নেয়, তোকে একটা কথা দিতে হবে! ”

ইলু ভ্রু কুচকে বলল,

” কি কথা? ”

” ধর কোন ভাবে আমি ধরা পরে গেছি তখন তুই আমাকে রেখেই পালিয়ে আসবি সব প্রমান সহ, আমার যা হয় হোক তুই নিরাপদে চলে আসবি! ”

ইলু থমকালো, চমকিত নজরে আমার দিকে তাকালো, থমথমে গলায় বলল,

” আমাকে দেখে কি কোন এঙ্গেল এ তোর কাছে সার্থপর মনে হয় পূর্ণ? মরলে দুজন একসাথে মরব আর বাচলে একসাথে, কিন্তু তোকে বিপদে রেখে আমি যেতে পারব না, সরি”

আমি খানিকটা রেগে বললাম,

” ইলু বোঝার চেষ্টা কর ইলু, এটা পাগলামির সময় নয়, আমি না পারলে তোকে যে পারতেই হবে ”

” না বললাম না, পরের টা পরে দেখা যাবে এখন সাবধানে বাইক চালা তুই ”

বুঝলাম মেয়েটাকে বুঝিয়ে কাজ নেই, সে যা বলবে তাই করবে তাই আর বেশি কথা বললাম না!

কাশিমপুর আমাদের শহর থেকে বেশি একটা দুর নয় এই মাইল ৪-৫। আমাদের পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টার মতো সময় লেগেছে, আমি ইলু বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি ওই জঙ্গলের মাঝে কোন দিকে যাবো ঠিক বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ মনে হলো বা দিকে দুরে কোথাও একটু আলোর রেস দেখা যাচ্ছে তাই আমি আর ইলু সেদিকেই এগুলাম,

কিছু দুর এগুতেই দেখলাম বেশ কিছু লোক একটা কাঠের তৈরি বাড়ির চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আর ইলু লোক গুলোর ছবি তুলে নিলাম,

ইলু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

” কিরে পূর্ণ ভেতরে ঢুকবি কি করে? ”

” পিছন দিক দিয়ে ”

আমার কথা শুনে ইলু ভ্রু কুঁচকে বলল,

” মানেহ ”

” মানে হলো এখন আমরা ঠিক বাড়ি টার পিছনে দিকে যাবো,”

” তারপর? ”

আমি ব্যাগ থেকে একটা ছোট বোমা টাইপ কিছু বের করে বললাম ,

” তারপর এটা ঢিল দিয়ে সামনের দিকে ফেলব, তখন আওয়াজে সবাই যখন সামনের দিকে যাবে আমি ভেতরে ঢুকবো, বুঝলি? ”

” হুম বাট ইলু আমার টা কেমন জানি লাগছে! আমরা কি পারবো? ”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

” তোকে কে ভেতর যেতে বলল? যাবো তো আমি আর তুই এভাবে এখানে লুকিয়ে থাকবি আমি যা প্রমান জোগার করব সাথে সাথে ই তোর ফোনে আর আমার লেপটপে চলে আসবে ”

” মানে কি? তুই একা যাবি মানে? আমি ও যাবো ”

” না ইলু তুই এখানে থাকবি! আমার কসম এক পা ও নড়বি না”

বলেই আমি আর ইলু বাড়ি টার পিছনে দিকে এসে সামনের দিকে বোমার পিন খুলে তা ছুড়ে মারি,

আর প্রচন্ড শব্দে তা বিস্ফোরিত হয়, আর পিছন দিকের যত লোক ছিল সবাই দৌড়ে সামনে চলে যায় কিসের আওয়াজ তা দেখার জন্য, এই সুযোগে আমি বাড়ির পিছনে দিকের একটা ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই, যদিও পিছনে থেকে ইলু হাত ধরে রাখছিলো তাই পর হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে এলাম, এছাড়া আর যে কোন উপায় ছিলো না ,

আমি হাটতে হাটতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম, বেশ অনেক গুলো মশাল জ্বলানো, একটা ঘর থেকে বেশ অনেক মানুষের আওয়াজ আসছে, আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সে দিকে,

ক্যামেরা সেট করে এক ফাঁক দিয়ে বেশ অনেক গুলো ভিডিও করলাম আর ছবি ও তুললাম তাদের। শাফিন মিয়াজি লোকটা থেকে টাকা নিচ্ছে, তাদের কথা বার্তা, দাম দর সব কিছুই প্রমান জোগার করলাম, যা পেয়েছি তাতেই হয়ে যাবে , এর থেকে বড় প্রমান দরকার নেই।

ক্যামেরা ঠিক করে পিছনে ঘুরে আসতে যাবো অমনি আমার ধাক্কা লেগে একটা ফুল দানি পরে যায় সাথে তাল সামলাতে না পেরে আমি ও,

শব্দ শুনে ভেতর থেকে শাফিন মিয়াজি সহ সবাই চলে এলো, আমি পালাতে গিয়েও পারলাম না সবাই এসে ঘিরে ধরলো আমায়! আমার যেন নিঃশ্বাস টা আটকে আসছে!

আমাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে সামনে শাফিন মিয়াজি বসা,

” তুই কে হে মাইয়া? এত সাহস তোর? এই ডেরার ভিতরে ঢুকলি কিবা কইরা? মানতে হইবো তোর বুদ্ধি আছে ”

শাফিন মিয়াজি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে এক টানে আমার মুখের মাস্ক খুলে ফেলল,

কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,

” আয় হায় তুই মাইয়া আমাগো নতুন মন্ত্রী সাহেবের সাংবাদিক বউ টা না? এতো দেহি মেঘ না চাইতেই জল! ”

আমি শব্দ করে হেসে দিলাম,

শাফিন মিয়াজি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” মরার শুকে পাগল টাগল হইয়া গেলি নাকি মাইয়া? হাসতাছোস কেন? ”

” হাসছি না ভাবছি! ”

” কি ভাবতাসোস? ”

” ভাবছি.. পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে, তুই শাফিন মিয়াজির ও একই দশা আর কি ”

” তুই মেয়ে কি আমারে ভয় দেখাইতাছোস? ”

আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম,

” তুই কি ভয় পাচ্ছিস? এমা কি কথা এসব? ভয় পাচ্ছিস কেন? ”

শাফিন মিয়াজি আমতাআমতা করে বলল,

” কোথায় ভয় পাচ্ছি ”

বলেই উঠে একজন লোককে বলল,

” ওই কালুও আমার হাড্ডি কোপানোর ছু*ড়ি টা নিয়াই তো, আজ এট চামড়া ছিলামু আমি, আমার সাথে লাগতে আসার ফল ভোগ করবি মেয়ে তুই ”

কালু বলে লোকটা একটা ধারালো ছু*ড়ি এনে দিলো শাফিন মিয়াজির হাতে,

শাফিন মিয়াজি এক পলক ছু*ড়ির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো আমার দিকে ,

আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম, চোখের সামনে ভেসে উঠলো মন্ত্রী সাহেব এর মুখ, হয়তো আর কখনোই দেখা হবে না আমাদের!

বিরবির করে বলতে লাগলাম,

” আপনাকে বলা হলো না সেই কথাটা যেটা নিজে উপলব্ধি করতে পারছি হয়তো আর কখনো বলা হবে না আপনাকে ভালোবাসি মন্ত্রী সাহেব, খুব বেশি ভালোবাসি,

আমি যা লিখতে পারি না, তার সমান আপনাকে ভালোবাসি…

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে