#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_02
” স্যার কাউকে খুঁজছেন? ”
কুশনের কথায় খানিকটা চমকে পাশেই কুশনের দিকে তাকালো তাহরিম,
পিছনে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ই পিছনে তাকিয়েছিলো সে কিন্তু তেমন কাউকে ই নজরে এলো না তার, এছাড়া চারপাশে প্রেস মিডিয়া সাথে পুলিশ রয়েছে এখানে বেশিক্ষণ থাকাটা ভালো হবে না
কখন যে আবার পুলিশের বাধা অতিক্রম করে আবার মিডিয়ার লোকজন জেঁকে ধরে বলা তো যায় না , এটা চিন্তা করে ই সামনের দিকে অগ্রসর হলো সে, কম ধকল তো আর গেলো না নিজের উপর দিয়ে তাই বাড়ি তে গিয়ে রেস্ট নেওয়া টাই বেটার অপশন বলে মনে হলো তাহরিমের দরকার পড়লে কাল প্রেস কনফারেন্স করবে সে তবুও আজ আর না,
তাহরিম গিয়ে বসলো কুশনের আনা আরেকটা গাড়িতে , গাড়ি তে বসেই মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে দিলো সে,
কপালে হাত দিয়ে কোন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন তাহরিম, লুকিং গ্লাস দিয়ে একবার নিজের স্যার কে পর্যবেক্ষন করলো কুশন,
” স্যার কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত? ”
” তোমাকে কতবার বলেছি কুশন আমাকে স্যার না ভাই বলে ডাকবে ”
কপলাে হাত রেখেই কথাটা বলে উঠলো তাহরিম,
” আবব ঠিক আছে স্যার ,, ইয়ে না মানে ভাই ”
” ঠিক আছে চলো আর আমার কিছু হয় নি ”
প্রায় বিশ মিনিটের মধ্যে ই তালুকদার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো তাহরিম তালুকদার এর গাড়ি , গাড়ি থামতেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো তাহরিম তালুকদার ,
বাড়ির সদর দরজা খোলা দেখে খানিকটা ভ্রু কুচকালো ,
সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করা মাত্র ই তার নজরে এলো সোফায় বসে থাকা একজন মহিলার উপর , চুল গুলো হালকা লাল দেখা যাচ্ছে , ছেলেকে দেখা মাত্র ই ধীর পায়ে ছেলের কাছে এলেন মেহেরিন শিকদার, মুখে কিছু বললে ও চোখ মুখ ঠিক ই জানান দিচ্ছে তার চিন্তার বিষয় টা,
মেহেরিন শিকদারের জায়গায় অন্য কোন মা থাকলে হয়তো এতক্ষণে কেঁদে কেটে এক সার করে ফেলতো কিন্ত মেহেরিন শিকদার তার কিছু করেননি আর কখনো করে ও না , মনের দিক দিয়ে তিনি খুব বেশি ই শক্ত প্রকৃতির ঠিক এই জিনিস টাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তাহরিমের ,
কথা গুলো ভেবেই মুচকি হেসে খানিকটা এগিয়ে গেলো মায়ের দিকে ,
মেহেরিন শিকদার ছেলেকে আপাদমস্তক ভালো করে পর্যবেক্ষন করার পর বললেন
” ব্যথা পেয়েছো কোথাও ? ”
তাহরিম হাসলো ,
” না আম্মাজান ব্যথা পাই নি , ভাগ্যের জোরে বেচে গেলাম ”
ছেলের কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেহেরিন শিকদার গম্ভীর কন্ঠে বললেন ,
” ঠিক আছে সব কথা পরে শুনব এখন যাও রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ নিচে নামার দরকার নেই রেস্ট করো যা লাগবে আমি পাঠিয়ে দিবো ”
” ঠিক আছে ”
বলেই তাহরিম ফ্রেস হতে রুমে চলে গেলো ,
মেহেরিন তাহরিমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার দুই ছেলের মাঝে বড় ছেলেটা একটু বেশিই একরোখা স্বভাবেরই যা বলবে তাই করবে এবার সেই কাজে যত রিস্ক ই থাক না কেন!
রাজনীতি তে ছেলেকে জড়ানোর কোন ইচ্ছে ছিলো না মেহেরিন শিকদারের তবুও ছেলের জেদের কারনেই যেতে দিতে হয়েছে তার ,
কথা গুলো চিন্তা করে ই রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন মেহেরিন শিকদার , উদ্দেশ্য ছেলের জন্য খাবার তৈরি করা ,
তাহরিম মাত্র ই গোসল শেষ করে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হলো হঠাৎ ই তার নজর গেলো নিজের মোবাইলের উপর কিছুক্ষন আগের সেই মেসেজের কথা মনে হতেই তাহরিম দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে সেই নাম্বারে কল করলো কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে নাম্বার টা বন্ধ বলছে,
তাই সে আর ফোন দেওয়ার চেষ্টা করল না, একজন মন্ত্রী হিসেবে তার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে তাহরিম তালুকদার চাইলেই সেই সিমের মালিক কে আধা ঘণ্টা র মাঝে ই বের করতে পারবে কিন্তু তাহরিম তা করবে না, কিছু জিনিস অজ্ঞাত ই সুন্দর , তহরিম জানে না নাম্বার টা কার? সে ছেলে না মেয়ে? কি উদ্দেশ্য তার ?
জানার আগ্রহ থাকলে ও এই মূহুর্তে জানতে ইচ্ছে করছে না তার , তাই মোবাইল টা যেখানে ছিলো সেখানেই রেখে দিলো, মাথাটা ব্যথা করছে আবাদত রেস্ট করা টা মাস্ট বি ইম্পর্টেন্ট ।
____________________
” কিরে পূর্ণ আর্টিকেল লেখা শেষ হলো তোর? ”
ইলমির কথায় কম্পিউটার থেকে মুখ তুলে তাকালো পূর্ণা, মুখ কুচকে বলল,
” ইলু ডোন্ট কলড মি পূর্ণ, ইট’স পূর্ণা, মিফতহুল পূর্ণা, আর আমার লেখা প্রায় শেষ আর ২ মিনিট অপেক্ষা কর আমি সেভ করে বন্ধ করছি ”
পূর্ণার কথা শুনে ইলমি মুখ বেকিয়ে পূর্ণার পাশের চেয়ারে বসে বলল,
” আহহ মরনন, আসছে আমার ব্রিটিসদের উত্তরসরী, পূর্ণা হোক আর যায় হোক আমি পূর্ণ ই ডাকবো আর তুই যে আমার এত সুন্দর একটা নাম ইলমি, শাহরিন ইলমি কে ইলু ডাকিস আমি কি কিছু বলছি তোকে ? ”
পূর্ণা কম্পিউটার অফ করতে করতে বলল,
” আররে ইয়ার , ইলু তো মেয়েদের নাম কিন্তু পূর্ণ তো ছেলেদের, তুই পূর্ণ ডাকলে কেমন যেন একটা ছেলে ফিল আসে ”
” তুই কি মেয়ে নাকি পূর্ণ ? আমার যুক্তিতে তো তুই ছেলেই , আচ্ছা তুই তোর মাঝে একটা মেয়েসুলভ আচরণ দেখা তো আমাকে? তুই যদি দেখাতে না পারিস আমি তোকে তোর মাঝে হাজার টা ছেলে সুলভ আচরন দেখাবো ”
” দেখ ইলু আজাইরা কথা বলবি না , অফিস তো ছুটি সেই কখন তুই গেলি না কেন ?
জনালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে পুনরায় বলল
” সন্ধ্যা তো হয়ে এলো এতক্ষণ বসে রইলি কেন? তোর বাসার সবাই চিন্তা করবে না? আমার তো দুনিয়ায় কেউ নেই তাই কেউ চিন্তা করবে না কিন্তু তোর তো আছে ”
পূর্ণার কথা শুনে ইলমি মুচকি হেসে উঠে দাড়িয়ে পূর্ণার ব্যাগ টা পূর্ণার কাঁধে ঝুলাতে ঝুলাতে বলল,
” হুসস মেয়ে বাজে কথা বলছিস কেন ? আমি কি তোর কেউ না? বোকা মেয়ে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নস তুই আমার বোন আর বোন বোনের জন্য অপেক্ষা করবে তাতে কার কি আসে যায় , চল তো এখন খালি বেসতি কথা ”
বলেই ইলমি পূর্ণার হাত ধরে অফিসের বাইরে নিয়ে আসে ,
পেশায় দুজন ই জার্নালিস্ট মাত্র কয়েকদিন ই হলো জয়েন করেছে সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে পূর্ণা আর ইলমির জুটি অনন্য , ইলমি সফল ব্যবসায়িক বাবা ইসতিমুল হকের আর মা সুফিয়া বেগমের ২য় সন্তান, ইলমির বড় এক ভাই আছে ইসতিহাদ হক সে বর্তমানে কানাডা আছে পড়াশোনার জন্য , আর পূর্ণা ছোট বেলা থেকে ই এতিম খানায় মানুষ পৃথিবীতে আপন বলতে শুধু এতিমখানার কেয়ারটেকার অর্থাৎ মাদার আর এখন ইলমি , ছোট থেকে ই ইলমির শখ জার্নালিসম নিয়ে পড়ার , এবং ভার্সিটিতে সে জার্নালিসম নিয়েই পড়েছে ,
” আচ্ছা পূর্ণ ! তুই সকালে মন্ত্রী তাহরিম তালুকদারের সাথে এমন অদ্ভুত বিহেভ করেছিস কেন? তুই তো এমন না! ”
ইলমির কথার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ণা হাসলো ভ্রু উচিয়ে বলে উঠলো ,
” আমার পেশা কি? ”
ইলমি ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
” জার্নালিসম ”
” আর তাহরিম তালুকদার কে? ”
” মন্ত্রী ”
” উনার সাথে আমার সম্পর্ক নিশ্চয়ই মধুর না! এক কথায় বলা যায় রাজনীতি রিলেটেড সবার সাথে ই আমাদের জার্নালিস দের শাপে নেউলে সম্পর্ক, আর তুই তো জানিস আমি যে আর্টিকেল নিয়ে কাজ করছি সেটা রাজনীতি রিলেটেড বেশ কিছু ক্রিমিনাল আর নারী পাচার সম্পর্কে, আমি তো নতুন এই পেশায় তাই রাজনীতিবীদ সম্পর্কে আমার জ্ঞান শুন্য তাই তাহরিম তালুকদারকে একটু বাজিয়ে দেখলাম আর কি ”
আমার কথা শুনে ইলমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো,
” সিরিয়াসলি পূর্ণ? এতকিছু ভেবে ফেললি? হাউ ইন্টেলিজেন্ট ইউ আর! পেটে পেটে এত কিছু ? ”
ইলমির কথায় পূর্ন পুনরায় হাসলো,
” আচ্ছা চল তাড়াতাড়ি পা চালা , বাসায় গিয়ে কাজ আছে , ভাড়া বাসায় থাকি দোস্ত তাও একা , বাড়ি ওয়ালা মুখে যত আদর ই দেখাক না কেন কার মনে কি আছে কে জানে ! ”
ইলমিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে পূর্ণা ও বাসায় চলে আসলো , পূর্ণা একাই একটা ভাড়া বাসায় থাকে , ইলমির বাসা থেকে পূর্নার বাসা প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা ,
পূর্ণা বাসায় ঢুকে লাইট অন করতেই দেখে লাইট টা জ্বলছে না চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে হঠাৎ কিছু একটা পরার শব্দে চমকে পিছনে তাকালো পূর্ণা…
চলবে..