#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_01
” এই যে শুনুন মিস্টার নব নির্বাচিত মিনিস্টার সাহেব, নিজেকে এমন আহামরি কিছু মনে করার কিছু হয় নি যে মানুষ কে বিড়াল শাবক বলে মনে করবেন,
চলার সময় একটু দেখে শুনে হাঁটবেন, এই আমাদের মতো জনগনের ভোটেই কিন্তু আপনি নির্বাচিত হয়ে এমপি হয়েছেন, আকাশ থেকে ঠুস করে পরে ঠাস করে এমপি হন নি কিন্তু, আপনি যদি মনে করে থাকেন এমপি হয়েছেন তো রাস্তা ঘাট কিনে নিয়েছেন তাহলে আগেই বলে রাখছি এটা সরকারি সম্পদ আপনার ব্যক্তিগত নয়, যদিও আপনি সরকারি মানুষ তবে এটা জেনে রাখা ভালো সরকারের শক্তি ই জনগন, আর আমি দেশের একজন নিষ্ঠাবান নাগরিক ”
পিছনে থেকে এক নাগারে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে কানে থাকা মোবাইল ফোন টা কান থেকে নামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো তাহরিম তালুকদার,
কয়েকদিন হলো নির্বাচন শেষ হলো আর সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে তাপস তালুকদারের বড় ছেলে তাহরিম তালুকদার,
আজ তার ই একটা জন সম্মেলনে এসেছিলো সে, বক্তৃতার মাঝে ই হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ কল আসায় স্টেজের থেকে খানিকটা দুরে আসতে হলো তাকে, সেখানে মাইকের আওয়াজে ফোনের ওপাশে র কারো কথা ই ভালো ভাবে শোনা যাচ্ছিল না, ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে এগুতেই হঠাৎ পিছন থেকে এক নাগারে কারো কথা শুনতে পেলো,
পিছনে তাকাতেই তার চোখের সামনে দৃশ্য মান হলো একটা মেয়ে যে কিনা কোমরে হাত দিয়ে মাটিতে বসে আছে,
তাহরিম তালুকদার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে,
” এই যে নব নির্বাচিত এমপি, এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে একটু উঠতে সাহায্য করুন তো মশায়, এমনি তেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার কোমরের বারো টা বাজালেন তার উপর আমার খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কোন প্রকার সাহায্য না করেই, কেমন মানুষ আপনি হে? দয়া মায়া কিছু নাই নাকি? আমার মতো মাসুম কিউট একটা বাচ্চাকে আপনার মতো খাম্বা ধাক্কা মারলেন বেঁচে আছি যে এটাই শুকরিয়া
আপ…….”
” হেই ইউ স্টপ ইট, কখন থেকে দেখছি পাগলের মতো বকবক করেই যাচ্ছেন তো করেই যাচ্ছেন, পাগল আপনি? কখন আপনাকে আমি ধাক্কা দিলাম? কি সমস্যা আপনার আর আপনি এভাবে মাটিতে বসে আছেন কেন? এটা কি ভিক্ষা করার জায়গা? ভিক্ষা করতে হলে গেইটে র বাহিরে যান ”
বেশ জোরেই কথা গুলো বলে উঠলো তহরিম,
তাহরিমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিচে থেকে কাপড়ের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাড়িয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাহরিমের দিকে তাকালো পূর্ণা,
” ওমাআআ এতো দেখি ভুতের মুখে রাম রাম, নিজে ধাক্কা দিয়ে আবার নিজেই বলছে নিচে বসে আছি কেন? আপ….”
পূর্ণা আরও কিছু বলতে নিবে হঠাৎ ই তার পাশ দিয়ে কেউ একজন দৌড়ে তাহরিমের দিকে এগিয়ে গেলো,
” কি হয়েছে স্যার? কোন সমস্যা স্যার? ”
নিজের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি কুশনের আগমনে খানিকটা ভরসা পেলো বলে মনে হলো তাহরিম কে, নারী সঙ্গ বরাবর ই এভয়েড করে সে,
” মেয়েটা বোধ হয় পাবনা মানসিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে এসেছে , তুমি বরং কতৃপক্ষ কে খবর টা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করো কুশন ”
বেশ গম্ভীর কন্ঠে কথা টা বলেই বিপরীত দিকে ঘুরে সেখান থেকে হন হন করে চলে গেলো, বেচারা কুশন একবার স্যারের চলে যাওয়া দেখে আরেকবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটকে দেখে,
স্যার যে কি আদেশ দিলো সে আগামাথা কিছু ই বুঝতে পারলো না, মেয়েটাকে দেখে তার মোটেও পাগল বলে মনে হচ্ছে না , অগত্যা ই সে জড় বস্তুর মতো দাঁড়িয়ে রইলো,
” কিরে পূর্ণা তুই এখানে? আমি কখন থেকে খুঁজে চলেছি তোকে? ”
নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ইলমির কন্ঠ শুনতে পেয়ে গাল ফুলালো পূর্ণা,
পূর্ণার গাল ফুলানো দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো ইলমি,
” কি হয়েছে তোর ? এতক্ষণ তো ভালোই ছিলি হঠাৎ বিধবা ওয়ালা লুক দিচ্ছিস কেন? ”
” ইলু ও তুই জানিস, ওই মিনিস্টার সাহেব আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে বললাম সরি বলতে তা ও বলল না, বদ লোক একটা, অকৃতজ্ঞ কোথাকার, আরেকটু হলে আমার কোমর টা ই ভেঙে ফেলতো, তখন কি হতো বল তো, আমার ভবিষ্যত জামাই একটা কোমর ভাঙা বউ পেতো, আমার বাচ্চা গুলা একটা কোমর ভাঙা মা পেতো, আর আমা … ”
” আর তোর নাতি নাতনী রা কোমড় ভাঙা দাদি পেতো সেটা ই তো বলবি, তোর টা আমি ই বলে দিলাম তবু ও তোর ভাঙা ক্যাসেড চালু করিস না ”
বিরক্ত সহকারে কথাটা বলেই পাশে তাকালো ইলমি, একটা অপরিচিত ছেলেকে নিজেদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্যপার টা স্বাভাবিক ই নিলো সে কারণ এসব অবাক মার্কা লুকে অভ্যস্ত সে যেহেতু পাশে একটা সেন্টি মেন্টাল ফ্রেন্ড আছে এই লুক গুলো স্বাভাবিক,
ইলমি খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল,
” এভাবে তাকানো র কিছু নেই, ও এমন ই, ভাঙা রেকর্ডার অন করলে অফ করতে ইচ্ছে করে না ”
বলেই পিছনে ঘুরে পূর্ণার হাত ধরে গেইটে র দিকে এগিয়ে গেলো ইলমি ,
ইলমির কথায় খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কুশন,
__________________
” আপনার গাড়িতে উঠবেন না ”
” গাড়ি তে বোমা রাখা আছে ” ,
” ক্ষতি হবে আপনার ”
সম্মেলন শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ি তে উঠতে নিবে হঠাৎ এক নাগাড়ে তিনটে মেসেজের শব্দে বেশ কৌতুহল বশত হাতে থাকা মোবাইল অন করে মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ গুলো দেখেই ভ্রু কুচকে গেলো তাহরিমের,
উঠতে গিয়ে ও থেমে গেলো সে,
” স্যার কোন সমস্যা ? ”
কুশনের প্রশ্নের উত্তরে মুখে কিছু না বলে হাতে থাকা মোবাইল টা ই কুশনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আশেপাশে তাকালো তাহরিম তালুকদার,
চারপাশে বেশ লোক সমাগম, যদি ও গাড়ি তে বোমা থাকে এখানে ব্লাস্ট হলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে এটা নিশ্চিত,
তাহরিম একটু ঝুঁকে বোমা টা খোঁজার চেষ্টা করলো হয়তো তাহরিমের ভাগ্য সহায় ছিলো বলে সে বোমা টা দেখতে পেলো, সেটা সেট করা ছিলো গাড়ির ঠিক নিচে, কিন্তু সময় কেবল ই ঘনিয়ে আসছে, বোমা ব্লাস্ট হবার আর মাত্র ৪ মিনিট বাকি,
তাহরিম আর কিছু চিন্তা না করেই হুট করে গাড়িতে ঢুকে দরজা অফ করে চাবি ঘুরিয়ে চালানো শুরু করলো,
পিছনে থেকে কুশানের আতংকিত গলার স্বর স্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে লাগলো, কিন্তু নিজের কথা এখন ভাবলে চলবে না, সে এখন দেশের একজন দায়িত্ব বান লোকদের মধ্যে সে একজন, দেশের মানুষ কে রক্ষা করা তার কর্তব্য,
তাহরিম ভিষন স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে, সম্মেলনের জায়গা থেকে বেশ খানিকটা দুরে নদীর পাড়ে একটা খোলা জায়গা দেখে গাড়ি টা পার্ক করে দ্রুত সে গাড়ি র বাইরে চলে আসে দৌড়ে খানিকটা পথ আসার পর হঠাৎ পিছন থেকে বিকট শব্দে বোমা ব্লাস্ট হয়,
তাহরিম পাঞ্জাবি র হাতায় নিজের ঘাম মুছে মুখে হাত দিয়ে নিচে বসে পরে আর মনে মনে আল্লাহ আর সেই অচেনা লোকটাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়, আজ সেই লোকটা র জন্য ই এত গুলো প্রান সে বাচাতে পেরেছে,
তার কিছু ক্ষনের মাঝে ই প্রায় বিশ পঁচিশ টা গাড়ি এসে জড়ো হলো সেই ঘটনা স্থলে,
গাড়ি থেকে নেমেই কুশন দৌড়ে এলো তাহরিমের দিকে,
বেশ আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠলো,
” ভাই! ভাই আপনি ঠিক আছেন তো? কিছু হয় নি তো আপনার? ”
কুশনের কন্ঠ শুনতে পেয়ে মুখ থেকে হাত সরালো তাহরিম, উঠে দাড়িলো,
মুচকি হেসে বলল
” খোদার দয়ায় এ যাত্রা ই বেচে আছি ”
ততক্ষণে প্রেস মিডিয়া ঘিরে ধরলো তাকে,
হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো তাহরিম তালুকদার এর দিকে,
কিন্তু আবাদত কারোর প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই সে,
প্রশ্ন গুলো এড়িয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলো সে
” আপনি কি জন্মগতভাবে ই কি এতো সাহসী মিস্টার নব নির্বাচিত এমপি সাহেব?
চেনা কন্ঠ শুনতে পেয়ে পা গুলো থমকে গেলো তার ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো তাহরিম,
চলবে…