#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৬]
লেখক – আবির চৌধুরী
এবার দিয়া আমাকে সব কিছু বলতে শুরু করে দিল।
— আমি যখন প্রথম অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যাই। তখনই আমাদের অফিসের বস আমাকে দেখে তার ভালো লেগে যায়। তারপর থেকে আমি অফিস শুরু করে দেই। আমাকে তেমন কাজ করতে দিতেন না। একটু পর পর আমাকে ওনার কেবিনে নিয়ে যেতেন। আমি তখন তেমন কিছু বুঝতাম না। আমি তাকে জিগ্যেস করলে আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতেন না। হঠাৎ করে একদিন আমাকে প্রপোজ করে বসেন তারপর আমি তাকে বললাম আমি বিবাহিত আমার হাসবেন্ড আছে। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। আমি বস কে বল্লাম–
স্যার আপনি যেটা চাইছেন তা কখনও সম্ভব না আমাকে ক্ষমা করবেন।
বস — দিয়া আমি তোমার ব্যাপারে সব খবর নিয়েছি। তোমার হাসবেন্ড তো একটা কোম্পানির সামান্য একজন কর্মচারী তার আয় বা কতো টাকা? এই টাকা দিয়ে তো তোমাদের সংসার চালাতে কষ্টকর হয়ে যাবে। তুমি কি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা কোরো না?
দিয়া — ভবিষ্যতের টা তখন দেখা যাবে। আমি এখন আসি স্যার।
এই কথা বলে আমি বস কে সব সময় এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু উনি আমাকে সব সময় টাকার লোভ দেখাতেন। আর উনি কোথাও গেলে আমাকে নিয়ে যেতেন। তারপর আমি আঁচতে আঁচতে লোভে পড়ে যায়। তারপর থেকে আমি তোমার সাথে খারাপ আচরণ করা শুরু করি। কারণ আমি তখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তোমার পাসে ঘুমিয়েও লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতাম। একটা সময় আমি ভাবলাম যে তোমার সাথে থাকলে আমি ভবিষ্যতে কিছুই করতে পারবোনা। আমার সন্তান হলেও তারা তোমার মতই হবে। আমি তখন বুঝতে পারি নি যে লোভ মানুষ কে এতো টা খারাপ বানিয়ে দেয়। মনে আছে তোমার তুমি আমাকে রাস্তায় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দেখেছিলে? সেইটার পিছনেও আমার বস জড়িয়ে ছিলো। কিন্তু আমি এতোটাই বোকা ছিলাম যে আমি সেটা বুঝতেই পারিনি। যখন সব জানতে পারি তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তখন আমি আমার সব কিছুই হারিয়ে ফেলছি। আমার বস আমাকে অনেকবার তার সাথে সহবাস করার জন্য প্রপোজাল করে। আমি বার বার না করেই দিতাম। আমাকে অনেক ভাবে চেষ্টা করতেন আমার সাথে রাত কাটানোর। কিন্তু আমি কখনও রাজি হতাম না। উনি আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম তারপর আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের পথের কাটা তুমি ছিলে। তারপর প্ল্যান করলাম আমরা তোমার থেকে কি ভাবে ডিভোর্স নেওয়া যায়। তারপর থেকে তোমাকে আমি ইগ্নোর করা শুরু করে দিলাম।
আমি দিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললাম — আমি রাস্তায় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় তোমাকে দেখলাম সেই টা ঠিক বুঝতে পারলাম না। আর তুমি বা কি করে জানলে এটা তোমার স্যারের চক্রান্ত ছিল?
— আমার অফিস খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় সেদিন। সবাইকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয়। তারপর আমি অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালাম গাড়ির জন্য তখন আমাদের ম্যানেজার এসে আমাকে বলল — ম্যাম, আপনি কি ফ্রী আছেন?
— জ্বী, কেন কিছু বলবেন?
— আসলে ম্যাম আমি আপনার সাথে এক কাপ কফি খেতে চাই। প্লিজ না করবেন না।
তারপর আমি আর ম্যানেজার কে না করতে পারলাম না। অনার সাথে কফি খেতে চলে গেলাম। কিন্তু আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর আমার আর কিছুই মনে ছিলনা।তারপর যখন আমার জ্ঞান ফিরছে তখন আমি নিজেকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি তখন বুঝতে পারি আমার সাথে খুব খারাপ কিছুই হয়েছে। আমার কোনো কিছুই আমার গায়ে ছিলনা। যেটুকু হাতের কাছে পেলাম সে টুকু নিয়ে বের হয়ে গেলাম। তারপর তো তুমি সবি জানো।
এই কথা বলেই দিয়া কান্না করে দিল। আমি কিছুই বলতে পারছিনা আমি শুধুই দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর বললাম — পরে তুমি কি ভাবে জানতে পারলে? আর তোমি নাকি আবার বিয়ে করেছিলে?
— হুম আমার বসের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাদের বিয়ের সম্পর্ক ছিল মাত্র ৬ মাস।
— কেন? কি হইছে যে ডিভোর্স হয়ে গেলো আবার? নাকি অন্য কেউ আবার টাকার লোভ দেখিয়েছে?
দিয়া মাথা নিচু করে বলল — আসলে সেটা নয়। মানুষ একবার ধোকা খায় বার বার না। আমি বুঝতে পারিনি যে ছেলেটা ভালো না। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পরেই সে অন্য মেয়েদের উপরে আসক্ত ছিল।বাসায় মাঝে মাঝে মেয়ে দের নিয়ে আসতেন। আমি কিছু বললেই আমার গায়ে হাত তুলতেন। আমি চুপচাপ সব সহ্য করে যেতাম কিছুই বলতাম। তোমার কথা খুব মনে পড়ত। তারপর নিজেকে বোঝাতাম যে নিজের লোভে আজ এমন হলাম। ওখানে আমার কোনো কিছুরই অভাব ছিলনা। শুধু ভালোবাসার অভাব ছিল। আর আমাদের ডিভোর্স এর পরে সেই ম্যানেজারের সাথে আমার দেখা হয় আর ম্যানেজার আমাকে সব বলল যে তাকে দিয়ে সব করিয়েছে।
— আচ্ছা তুমি এই রাস্তায় কেন নেমে আসলে? কি এমন হলো যে তোমাকে এমন একটা পথ বেচে নিতে হয়েছে?
— আমাদের পরিবারের উপরে অনেক বড় একটা ঝড় নেমে আসে। আমি বাবাকে এসে সব বলার পরে বাবা স্টক করেন। আর সে এক বছর ধরে কোমায় আছে৷ বাবার চিকিৎসার খরচ। আমাদের খাওয়া দাওয়ার খবচ। সব আমাকে দেখতে হচ্ছে। বাবার চিকিৎসার জন্য আমাদের বাসা বিক্রি করে দিয়েছি। বাবার অপারেশন করতে হবে তার জন্য আরো অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি অনেকের কাছে গিয়েছি টাকার জন্য কিন্তু কেউ আমাদের পাসে এসে দাঁড়ায়নি। সবার দরজা থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে আমাকে। তাই বাদ্য হয়ে এই কাজে নেমেছি আমি।
এই সব বলে দিয়া কান্না করতে করতে বসে গেল। আমি দিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম — যা হইছে ভুলে যাও এসব।
— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়। আমার জন্য তোমাকে অনেক কষ্ট পেতে হলো। আমার লোভের জন্য আমি তোমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলছি। তোমার কথা খুব মনে পড়ত আমার। তখন অনেক কান্না করতাম কিন্তু আমার কান্না শোনার মতো কেউ আমার পাসে ছিলনা।
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। দিয়ার কথা গুলা শুনে অনেক খারাপ লাগছে আমার। কি বলব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এবার আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দিয়া আমার পায়ের উপরে পড়ে গেলো।
— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও ঈশান। আমি জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য তাও আমি ক্ষমা চাইছি আমাকে তুমি প্লিজ ক্ষমা করে দিয়৷
তারপর আমি দিয়াকে হাত দিয়ে তুলে বললাম — আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তোমার রেস্ট এর দরকার তুমি রেস্ট নাও এখন।
— না আমার আম্মু হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে আমাকে এখনই যেতে হবে।
— এই অবস্থায় কি ভাবে যাবে তুমি?
— আমি যেতে পারবো আমার কিছু হবেনা।
এই কথা বলেই দিয়া বাহিরের দিকে চলে যাবে এমন সময় দিয়া আবার মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন সময় আমি দিকে ধরে কোলে তুলে বেডের উপরে শুয়ে দিয়ে ডাক্তার কে ডাক দিলাম। ডাক্তার দিয়াকে দেখে বলল — রোগী আপনার কি হয়?
আমি অনেক্ষন চুপ থেকে বললাম — আমার স্ত্রী।
তারপর ডাক্তার আমার কথা শুনে বললেন — ওনাকে বাসায় নিয়ে যান। এখানে না রেখে বাসায় নিয়ে গেলেই বেশি ভালো হবে। আর আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি তিন-চারদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
এই কথা বলেই ডাক্তার চলে গেলো। আমি গিয়ে সব ওষুধ নিয়ে আসলাম। তারপর দিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ও এখনও অজ্ঞান হয়ে আছে। বুঝতে পারছিনা ওঁকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো! ও তো আমাকে কিছুই বলল না। দিয়াকে কি আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে? যা হবার হবে আমি দিয়াকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। মেয়েটা এই অবস্থায় কোথায় যাবে তার কোনো ঠিক নাই পরে যদি আরও খারাপ কিছু হয়ে যায় তখন আমি নিজেকে কি ভাবে ক্ষমা করবো?
সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি দিয়াকে নিয়ে আমার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় পৌছে গেলাম। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু দরজা খুলে আমার দিকে একবার দিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আম্মুকে দেখেই বুঝতে পারছি আম্মু আমাদের দেখে কিছুতেই খুশি হতে পারলো না।
চলবে,,,