#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৫]
লেখক – আবির চৌধুরী
রাসেল এখনও আমাকে কোনো খোঁজ দিতে পারলোনা দিয়ার। কল ও দিলনা। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি অফিসে চলে গেলাম। অফিসে গিয়ে কাজ করছি তখন হঠাৎ রাসেল আমাকে কল দিল।আমি খুব তাড়াতাড়ি করে কল রিসিভ করলাম।
— হ্যালো! রাসেল কিরে কোনো খোঁজ পেয়েছিস?
— হুম, তুই কখন ক্লাবে আসতে পারবি?
— কলে বল সমস্যা নেই।
— অনেক কথা আছে কলে এতো কিছু বলতে পারবোনা তুই কখন ফ্রী হবি সেটা বল আমাকে।
— আমি অফিস শেষ করে ক্লাবের দিকে চলে যাবো তুই ওই খানে থাকিস৷
— ঠিক আছে এখন তা হলে রাখি।
রাসেল কল কেটে দিলো। তারপর আমি আবার কাজ শুরু করে দিলাম। কাজে তেমন একটা মন দিতে পারছিনা। কোনো রকম ভাবে আমি কাজ শেষ করলাম। কাজ শেষ করে আমি ক্লাবের দিকে চলে গেলাম। ক্লাবে গিয়ে দেখি রাসেল আমার আগে এসে বসে আছে৷
— এতো লেট হলো কেন তোর? কখন থেকে এসে বসে আছি আমি।
— সরি দোস্ত।
— আর সরি বলতে হবেনা শোন।
— বল!
— দোস্ত তোর সাথে দিয়ার ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরে দিয়ার আবার বিয়ে হয় একটা ছেলের সাথে। কিন্তু বিয়েটা বেশিদিন টিকে নাই। দিয়া ওই ছেলেকে বিয়ে করছে যার সাথে দিয়ার সম্পর্ক ছিল। আর ছেলেটা ছিলো দিয়ার অফিসের বস। আর কিছু আমি জানি না দিয়ার বাসা টা তারা বিক্রি করে দিয়েছে।এখন কোথায় আছে কেউ জানে না। আমি অনেকের কাছে ঠিকানা ছেয়েছি কিন্তু আমাকে কেউ দিয়ার বর্তমান ঠিকানা দিতে পারেনি।
— কি বলিস এসব!
— হুম আমি যেটা ধারণা করেছি সেটাই হয়েছে। মেয়েটা টাকার জন্য পতিতা মেয়ে দের দলে নাম লিখিয়াছে। তুই এই মেয়েকে নিয়ে অযথা চিন্তা করছিস বাদ দে ওর কথা।
— হুম কিন্তু আমার কেন জানি অন্য কিছু মনে হচ্ছে। যাইহোক ও আমাদের এই খানেই আছে আমি খুঁজে বের করবই।
— আমার আর কিছু বলার নাই, তুই যা ইচ্ছে কর। তুই তো আর আমার কথা রাখ বিনা তোর যেটা ভালো মনে হয় তুই সেটাই কর।
তারপর আমি আর কিছু বললাম না। আমি আর রাসেল অনেক্ষন চুপচাপ বসে রইলাম। কেউ কোনো কথা বলছেনা। হঠাৎ রাসেল বলল সে বাসায় চলে যাবে৷ তাই আমরা দুজনেই যে যার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে আমি খাটের উপরে বসে রইলাম। তখন রাইসা আসলো আমার রুমে।
— কখন আসলে? আর এখনও ফ্রেশ হওনি কেন?
— একটু আগেই আসলাম। এখন ফ্রেশ হতে যাবো। তুমি আমার জন্য খাবার এখানে নিয়ে আসো।
— ঠিক আছে যাও।
তারপর আমি চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি রাইসা খাবার নিয়ে চলে আসছে। তাই খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর খাটের উপরে নিজের শরীর হেলিয়ে দিলাম। বার বার কেন জানি মনে হচ্ছে দিয়া খুব বিপদে আছে। যে ভাবে হোক আমি দিয়াকে খুঁজে বের করতে হবে আর আমাকে জানতে হবে দিয়া কেন এই পথ বেচে নিল। মনে মনে ভাবছি রাতে দিয়াকে খুজতে বের হবো।দেখতে দেখতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। তাই আমি উঠে বের হতে যাবো তখন রাইসা আমাকে ডাক দিল।
— এতো রাতে এখন তুমি কোথায় যাচ্ছ ঈশান?
— আমি একটু বের হবো কাজ আছে আমার।
— কি কাজ এতো রাতে?
— পরে বলব তোমাকে সব প্লিজ আমাকে এখন যেতে দাও তুমি। এখন আমাকে কোনো প্রশ্ন করোনা। আমি পরে তোমাকে সব বলব।
এই কথা বলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। তারপর আমি গাড়ি নিয়ে পুরো শহর ঘুরতে থাকলাম। কিন্তু দিয়াকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। গাড়ি ড্রাইভিং করছি আর আশেপাশে তাকে আমি খুজতে থাকলাম। হতাশ হয়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি রাইসা এখনও ঘুমায় নি।
— কি হলো রাইসা তুমি এখনও জেগে আছো কেন? তোমার শরীর এখন ঠিক নেই আর এই অবস্থায় তুমি এখনও ঘুমাও নি।
— ঘুম আসছিলনা। বাদ দাও এবার বলো তুমি এতো রাত পর্যন্ত বাহিরে ছিলে কেন? কোথায় গিয়েছিলে?
— এখনও আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারবোনা। এখনও সময় হয়নি।
— কিসের সময়?
— কিছুনা আসো ঘুমিয়ে যাই। আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।
এই কথা বলেই আমি খাটের উপরে শুয়ে পড়লাম। রাইসা এসে আমার পাসে শুয়ে পড়ল। রাইসা আর কোনো কথা বললনা। রাইসা হয়তো আমার উপরে রাগ করে আছে৷ কিন্তু আমি রাইসাকে এখন কিছু বলতে চাইনা। আমি আগে ক্লিয়ার হবো তারপর রাইসাকে বলব। এসব ভাবতে ভাবতে আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসে আবার বের হয়ে গেলাম রাইসাকে খুজতে। অনেক্ষন ঘুরলাম কিন্তু তার দেখা আজও পেলাম না। অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করছি। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে আমার গাড়ির সামনে এসে পড়ল। আমি গাড়ি ব্রেক করার চেষ্টা করলাম তাও মেয়েটা আমার গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। দেখি মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি এখনও মেয়েটার মুখ দেখতে পেলাম না। তারপর মেয়েটাকে আমি কোলে তুলে মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতেই আমার পায়ের তোলা থেকে মাটি সরে গেলো। কারণ মেয়েটা যে দিয়া। আমি তাড়াতাড়ি করে দিয়াকে গাড়িতে শুইয়ে দিয়ে অকে নিয়ে একটা কাছের হাসপাতালে চলে গেলাম। হাসপাতালের সামনে গিয়ে আমি দিয়াকে কোলে তুলে হাসপাতালের ভিতরে চলে গেলাম। দিয়ার মাথা পেটে রক্ত বের হচ্ছে। দিয়াক নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে যেতেই একটা ডাক্তার এগিয়ে আসলো। তারপর দিয়াকে একটা কেবিনে রাখা হলো। দিয়া অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে। তারপর ডাক্তার ভালো করে দিয়ার মাথা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলল — ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হালকা মাথায় একটু চোট পেয়েছে ঠিক হয়ে যাবে। আর তাকে কয়েকদিন রেস্টে রাখতে হবে।
— ধন্যবাদ ডাক্তার।
তারপর ডাক্তার আমাকে ওয়েলকাম বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। আমি দিয়ার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরে দিয়া চোখ খুলে তাকাল। দিয়া আমাকে দেখে চমকে উঠল হয়তো। হয়তো দিয়া এখানে আমাকে আসা করে নাই। আমাকে দেখে দিয়া বলে উঠল।
— আমি এখানে কি করে আসলাম? আর আমার কি হয়েছে?
— তেমন কিছুই হয়নি। একটু রেস্ট করেন ঠিক হয়ে যাবেন।
— না আমার রেস্ট করলে চলবেনা। আমি উঠি।
— আপনার শরীর তেমন একটা ভালো না। ডাক্তার বলছে আপনাকে রেস্ট করার জন্য।
— নাহ, আমার বের হতে হবে আমি এখানে থাকলে অন্যদিকে আমার,,,
এই কথা বলেই দিয়া থেমে গেল।
— আপনার কি হইছে আমাকে বলবেন? আর আপনাকে আমি ওই দিন ওখানে দেখে অবাক হলাম কিন্তু আপনি আমার কথা না শুনেই চলে গেলেন৷ কিছু তো একটা হইছে বলেন আমাকে।
— অনেক কথা বাদ দেন সেসব। আমি ওই দিন ওখান থেকে বের হয়ে চলে আসি। আর যায়নি কখনও।
— ওহ আচ্ছা। এখন আমাকে সব কিছু খুলে বলুন কি হইছে। আর আপনি কেন বা আমার সাথে এমন করছেন? আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করি নাই। তা হলে কেন আমার সাথে এমন করলে। আর আপনি আজকে এই যায়গায় এসে দাড়ালেন কেন?
— শুনবেন সব?
— হুম বলুন।
চলবে,,,,,