#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৪]
লেখক – আবির চৌধুরী
মেয়েটার কথা শুনে আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । কারণ আমার সামনে থাকা মেয়েটা আর কেউনা। আমার প্রাক্তন স্ত্রী দিয়াই ছিল। দিয়ার চোখ আমার চোখে পড়তেই দিয়া একটা দৌড় দিয়ে আমার সামনে থেকে চলে গেল। আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দিয়া আমার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেলো। এবার আমি দিয়ার পিছনে ছুটতে লাগলাম। কিন্তু অন্ধকারের ভিড়ে আমি দিয়াকে হারিয়ে ফেললাম।দিয়াকে এবার আমি আসেপাশে খুজতে লাগলাম কিন্তু দিয়াকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। হতাশ হয়ে ফিরে আসলাম সেই চা দোকানের সামনে। এসে বসে ভাবতে থাকলাম। কি এমন হলো যে আজকে দিয়াকে এমন একটা যায়গায় আসতে হলো। কেন যানি খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু দিয়ার আগের কথা গুলো মনে পড়ে রাগ ও হচ্ছে৷ কারণ মেয়েটা তো টাকার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। হয়ত টাকার জন্য এই কাজে নেমেছে। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছিনা বলল আজকে প্রথম আর তার নাকি অনেক টাকার প্রয়োজন। কি হয়ে গেলো যে ওর অনেক টাকার প্রয়োজন হলো! আমার আর রাইসার বিয়ের পর থেকে দিয়ার সাথে আমি আর কোনো যোগাযোগ রাখিনি। দিয়াকে আমি মন থেকে অনেক ঘৃণা করি। কিন্তু দিয়াকে আজকে এই যায়গায় দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি আমার পকেট থেকে ফোন বের করে রাসেল কে কল দিলাম। কিন্তু রাসেল আমার কল রিসিভ করল না। হয়তো ঘুমিয়ে আছে। রাত তো অনেক হয়ে গেলো। একটু পরে আমি একটা রিকশা নিয়ে গেরেজে চলে গেলাম। তারপর ওখান থেকে একজন কে নিয়ে এসে আমি গাড়ি টা সারিয়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে অনেক্ষন চাপ দিতে থাকলাম। কিন্তু কেউ দরজা খুলছেই না হয়তো সবাই গভীর ঘুমে আছন্ন। তারপর রাইসার ফোনে ফোন দিতে থাকলাম। একটু পরে রাইসা ফোন রিসিভ করল। তারপর সে এসে দরজা খুলে দিলো। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। খুব খারাপ লাগছে আমার।
রাইসা হয়তো সেটা বুঝতে পারছে।
— ঈশান কি হইছে তোমার? তোমাকে দেখে আজ কেমন জানি লাগছে৷ কিছু হইছে নাকি তোমার?
— নাহ, কিছু হয়নি আসলে শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে। আমাকে একটু ঘুমাতে দাও।
তারপর আমি অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম যেনো আমার চোখ থেকে উড়ে চলে গিয়েছে। বার বার দিয়ার কথা টাই কানে বেজেই যাচ্ছে। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা যে দিয়া শেষে কিনা এমন যায়গায় আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো রাসেলের কল পেয়ে। আমি সাথে সাথে কল রিসিভ করলাম।
— কিরে কাল এতো রাতে কল দিলি আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই কল রিসিভ করতে পারিনি দোস্ত।
— আচ্ছা সমস্যা নাই তোর সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে। তুই আমার সাথে দেখা কর এক্ষুনি।
— কোথায় দেখা করতে হবে?
— ক্লাবে আয় আমি এখনই বের হচ্ছি।
এই কথা বলে আমি কল কেটে দিলাম। তখন রাইসা আমার রুমে এলো।
— এখন আবার তুমি কোথায় যাবে ঈশান?
— আমার একটা কাজ আছে বের হতে হবে আমাকে।
— নাস্তা করে যাও। নাস্তা রেডি করে রেখেছি আমি।
— আজকে আর নাস্তা খেতে পারবোনা আসি আমি।
এই কথা বলেই আমি রাইসার সামনে থেকে চলে এলাম। তারপর আমি ক্লাবের দিকে রওনা দিলাম।
অন্যদিকে আমার এমন আচরণ দেখে রাইসা অনেক কষ্ট ফেলো। রাইসা খাটের উপরে বসে ভাবতে থাকল কি হয়ে গেলো ঈশানের? ঈশান তো এর আগে এমন ব্যবহার করে নাই কখনও তা হলে হঠাৎ কি হয়ে গেলো! রাইসা রুমে বসে বসে এসব ভাবছে তখন আম্মু রুমে এসে দেখে রাইসা খাটের এক কোণে বসে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। সেটা আম্মু খেয়াল করতে পারলো।
— কিরে মা কি হইছে তোর? এই ভাবে বসে আছিস কেন? আর ঈশানকে ও দেখতে পারছিনা? ঈশান কই গেলো?
তারপর রাইসা আম্মুকে সব কিছুই বলল।
— মা তুই চিন্তা করিস না ঈশান হয়তো কোন জরুরী কাজেই গিয়েছে তাই এমন করছে৷ এ নিয়ে এতো চিন্তা করিস না।
— হুম কিন্তু আম্মু ঈশান তো এর আগে আমার সাথে এমন করে নাই। কখনও কোনো সমস্যা হলে আমাকে আগেই জানাত তা হলে এখন কি এমন হলো?
— আচ্ছা হয়তো পরে বলবে তোকে এসব বাদ দে মা। চল নাস্তা করতে আয়। এখন তুই এবার তোর শরীরের কথাটা একটু ভাব। এখন কিন্তু তুই একা না আরেকজন আছে তোর সাথে।
ওহ আপনাদের তো একটা খুশির খবর দেওয়া হয়নি। রাইসা মা হতে চলছে। ঈশানের সন্তান রাইসার পেটে। ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট রাইসা।
এবার গল্পে ফিরে আসি। আম্মু রাইসাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে নাস্তা করালো। এই দিকে ঈশান ক্লাবে পৌছে গেলো। কিন্তু রাসেল এখনও এলো না। ঈশান রাসেলের জন্য অপেক্ষা করে বসে রইল। একটু পরে রাসেল ক্লাবে আসলো।
— কিরে এতো জরুরী তলব কেন?
— তোর সাথে আমার খুব জরুরী একটা কথা আছে তোকে আমার জন্য একটা কাজ করতে হবে।
— কি কাজ?
— আমাকে দিয়ার ঠিকানা টা এনে দিতে হবে যে করেই হোক।
— হঠাৎ দিয়ার খোঁজ করছিস কেন তুই? যে মেয়ে টা তোর সাথে এমন করল তুই এখনও তাকে ভুলতে পারিসনি? এই মেয়ের কথা ভুলে যা তুই।
— আরে ওই রকম কিছু না আসলে কাল রাতে,,,
— কাল রাতে মানে?
তারপর আমি রাসেলকে সব কিছুই খুলে বললাম। কাল রাতে কি কি হইছে। রাসেল আমার কথা শুনে থ মেরে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
— এই মেয়ের সাথে এমন টাই হওয়ার কথা ছিল। যে মেয়ে তোকে টাকার জন্য ছেড়ে চলে গেছে। সে মেয়ে টাকার জন্য সব কিছুই করতে পারে। এসব নিয়ে তোকে এতো মাথা ঘামাতে হবেনা। ওর যা ইচ্ছে তাই করুক তাতে তোর কি?
— দেখ রাসেল আমার কেন জানি মনে হচ্ছে দিয়া খুব বিপদে আছে তাই এমন যায়গায় এসে দাড়াতে হলো। প্লিজ ভাই তুই আমাকে দিয়ার ঠিকানা টা একটু ম্যানেজ করে দে।
— ঈশান আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই একটু বেশিই ভাবছিস এটা নিয়ে। এই মেয়ের উপরে আমার কোনো বিশ্বাস নেই।
— তোকে আমি যেটা বলছি তুই সেটা কর। আর করতে না পারলে বল আমি নিজেই বের করবো।
— আরে ভাই এতো রেগে যাওয়ার কি আছে আমি কি বলছি আমি পারবোনা? ঠিক আছে আমি দেখছি। আর আমি তোকে সব জানিয়ে দেব।
— হুম দিয়ার ব্যাপারে সব ডিটেইলস চাই আমার। তুই যে ভাবে পারিস আমাকে জোগাড় করে দিবি।
— ঠিক আছে, তোকে দেখে মনে হচ্ছে-না তুই সকালে নাস্তা খেয়েছিস! চল নাস্তা খেয়ে নি আগে আমিও খাইনি।
তারপর আমি আর রাসেল একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা খেয়ে নিলাম। তারপর রাসেলের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে আমি বাসায় চলে গেলাম। বাসাত গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখি রাইসা মন খারাপ করে বসে আছে। আমি গিয়ে রাইসার পাসে বসলাম।
— আরে আমার পাগলি টার কি হয়েছে? মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
রাইসা আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলনা। বুঝতে পারলাম সকালে রাইসা আমার ব্যবহারে কষ্ট পাইছে৷ আমি সরি বলে যেই রাইসার হাত ধরতে গেলাম। তখনই রাইসা এক জাটকা দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিল।
— আমাকে স্পর্শ করবে না তুমি।
— আরে রাগ করে আছো কেন? আসলে একটা জরুরী কাজ ছিল তাই ওই ভাবে চলে গিয়েছিলাম। সরি আর হবে না এমন।
রাইসা এবার কান্না করে দিল।
এই হোলো এক জ্বালা এই মেয়েটা সামান্য কিছুতেই কান্না করে দেয়।
— উফফফ আবার কান্না করছো কেন তুমি?
— কান্না করলে তোমার কি হুম? আমি তো তোমার কেউ হইনা।
— তুমি তো আমার সন্তানের আম্মু। আমার কিছু হতে হবে না। দেখি তো আমার বাবা টা কিছু বলছে কিনা।
এই কথা বলেই আমি রাইসার পেটের উপরে কান পেতে শুনতে চাইলাম। রাইসা এবার আমাকে সরিয়ে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — আমার সন্তান তোমার সাথে কথা বলবেনা সে রাগ করছে।
— কেন?
— কারণ তুমি তার আম্মুকে কষ্ট দিয়েছো।
— আচ্ছা সরি আর কষ্ট দেবোনা। এই দেখো কান ধরলাম।
এবার দিয়া খিলখিল করে হেসে দিল। যাক বাবা অবশেষে রাগ কমাতে পারলাম। দেখতে দেখতে আজকের দিন কেটে গেলো কিন্তু রাসেল আমাকে এখনও কোনো খোঁজ দিতে পারল না।
চলবে,,,