ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১৩

0
917

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৩]
লেখক – আবির চৌধুরী

অনেক্ষন পরে রাইসা রুমে আসলো। রাইসা কে দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।

— কিরে এতোক্ষণ কই ছিলি তুই?

— আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম। আর আম্মু ঘুমিয়েছে পরে আসলাম। তুই এখনও জেগে আছিস! আমি তো ভেবে ছিলাম তুই ঘুমিয়ে গেছিস।

— এই আমি না তোর হাসবেন্ড তুই আমাকে তুই তুই করে কেন বলিস হুম? জামাইকে কেউ তুই করে বলে?

— তুইও তো আমাকে তুই করে বলিস!

— ঠিক আছে আজ থেকে তুই শব্দটা বাদ তুমি করে বলবে ঠিক আছে?

— হুম ঠিক আছে। চলো জেগেই যখন আছো আজকে বাসর টা সেরে ফেলা যাক কি বলো?

— একদম না বাসর হবে আমার বাসায় গিয়ে ওকে? এখানে কিছুই হবেনা।

— ঠিক আছে তোমার বুকে মাথা রেখে আমাকে ঘুমাতে তো দিবে?

— হুম সেটা দিতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে।

— আবার কিসের শর্ত!

— আমাকে ১০ টা চুমু দিতে হবে তারপর।

— এতো কেন?

— কেন আবার আমাকে না বলে চলে আসার শাস্তি।

— ঠিক আছে দিচ্ছি।

তারপর রাইসা আমাকে ৯ টা চুমু দিয়ে থেকে গেল। আমি জিগ্যেস করলাম — আরেকটা কিন্তু এখনও বাকি আছে।

আমি এই কথা শেষ করার আগেই রাইসা আমার টি-শার্টের কলার টান দিয়ে আমার মুখ তার দিকে টেনে নিয়ে আমার ঠোঁটে রাইসার ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।রাইসার চোখে আমার চোখ পড়তেই সে লজ্জায় আমার বুকে মাথা লুকিয়ে নিল। আমি রাইসার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার বুকের সাথে রাইসাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো রাইসার ডাকে।

— এই ঈশান উঠো না কেন আর কতক্ষণ ঘুমাবে? আম্মু আমাদের জন্য নাস্তা রেডি করে বসে আছে।

আমি ঘুমঘুম চোখে রাইসাকে বললাম তুমি যাও আমি আসছি। এই বলে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। একটু পরে ঘুম ভেঙে গেলো চোখের উপরে পানির ছিটকে পড়ে। বাসার ছাদের দিকে তাকিয়ে বললাম — এই সময় বৃষ্টি এলো কই থেকে? ছাদ কি ফুটা হয়ে গেলো নাকি? নাহ ছাদ তো ঠিকি আছে তা হলে পানি এলো কই থেকে। পাশে তাকিয়ে দেখি রাইসা হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

— ওহ তুমি পানি দিয়ে আমার ঘুম ভেঙে দিলে আমি তো ভাবছি তোমাদের বাসার ছাদ ফুটা হয়ে গেছে।

— তুমি কি এখন উঠবে নাকি এখন সব পানি তোমার গায়ের উপরে ডেলে দিতে হবে?

— নাহহহহ দাড়াও আমি এখনই উঠে যাচ্ছি।

এবার তাড়াতাড়ি করে উঠে আমি খাটের উপরে উঠে বসে গেলাম।

— রাইসা তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— হুম আমি যাই আর তুমি আবার ঘুমিয়ে যাও। এটা হবেনা সোনা। আমি এখানেই আছি তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

কি আর করার বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে আবার নিজের রুমে চলে এলাম। রুমে এসে বসে আছি রাইসার জন্য একটু পরে রাইসা আসল।

— তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও আমরা বাসায় যাবো।

— ঠিক আছে।

তারপর রাইসা রেডি হতে চলে গেলো। রাইসা রেডি হয়ে চলে এলো। কিছুক্ষণ পরে রাইসার আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাসার দিকে রওনা দিলাম। আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভিং করছি হঠাৎ একটা নদীর পাস দিয়ে যেতেই রাইসা আমাকে বলল — ঈশান গাড়ি দাড় করাও প্লিজ।

আমি সাথে সাথে গাড়ি দাড় করিয়ে দিলাম।

— হঠাৎ কি হলো আবার তোমার? গাড়ি দাড় করাতে বললে কেন?

— চলোনা আমরা একটু নদীর পাড়ে গিয়ে বসি। বেশিক্ষণ না একটু থাকব প্লিজ প্লিজ।

— আচ্ছা ঠিক আছে চলো।

তারপর আমি রাইসাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম। হালকা হালকা বাতাস আসছে। শরীরে শীতল বাতাস অনুভব করতে পারছি খুব ভালোই লাগছে রোমান্টিক একটা ওয়েদার। রাইসা আমার কাধের উপরে মাথা রেখে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে আছে।

— ইশান আমাকে তুমি একটা কবিতা শুনাবে প্লিজ? তুমি তো আগে খুব সুন্দর সুন্দর কবিতা বলতে। খুব মিস করি তোমার সেই কবিতা গুলো। প্লিজ শোনাবে?

আমি অনেক্ষন চুপ থেকে বললাম — ঠিক আছে।

— নির্জন টলমল জলভরা একটি নদী
বয়ে চলে নিরবধি ।
নদীর উপর নীল আকাশের ছায়া
তাইতো আকাশের প্রতি নদীর এতো মায়া ।
নদী ছুটে যায় কখনো ধুসুর মেঘলোকে ,
নীল আকশের প্রাণের মনোলকে ।
আকশের হরেক রঙ ,
ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় ,
কখনো আকাশ ফিরে আসে
নিজের রুপে ,
কখনো আকাশ ছায়া ফেলে ,
নদীর বুকে ,
আকাশ নিজেকে দেখে
—— নদীর চোখে ।
আকাশের ও বুকে কখনো সাদা –
কালো মেঘে যায় ঢেকে ।
কখনো আবার দুঃখের ঝড় উঠে ,
কখনো আবার রোদেলা সূর্য হাসে ।
আকাশ যখন অঝোর ধারায় কাঁদে
আকাশের বেদনার মেঘগুলো ,
দুঃখের বৃষ্টি হয়ে
ঝরে পড়ে নদীর বুকে ।
আকাশ অঝর বৃষ্টির ধারা ছড়িয়ে দিয়ে
নদীর বুকে তুলে আলোড়ন ।
তাইতো নদী আকাশকে ভালোবেসে
নদীর বুকে বাঁধে ।
আকাশের ও কান্নায় …
নদীর বুকে বয়ে যায় বন্যায় ।
আকাশ তো বুঝে না
নদী ও যে আকাশকে ভালোবাসে ।
আকাশের ও বুকে
কখনো রংধনু উঠে
কখনো নীলিমায় যায় ঢেকে,
কখনো আবার চাঁদ,
তারা ভাসে ,
দুরের ঐ রাতের আকাশে ।
আকাশ ও নদী
দুই দিগন্তে দুই জন
কেঁদে মরে আমরণ ,
নদীর ও যে ইচ্ছে জাগে
দূরের আকাশ টাকে ছুঁতে ।
নদীর উপর আকাশের অনুরাগের ছায়া
তাইতো আকাশের প্রতি নদীর এতো মায়া ।
মায়ার হাওয়ায় , মায়ার ডানায় ,
নদীর বুকে যখন পড়ে
আকাশের নীল আলো
নদীর ও তো লেগেছিলো ভালো।

রাইসা আমার কবিতা শুনে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল — বাহ সত্যি খুব সুন্দর হইছে। কতো দিন পরে তোমার মুখে কবিতা শুনলাম।

তারপর আমরা আরো কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে বসে থেকে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে খাটের উপরে শুয়ে পড়লাম। শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে কেন জানি। এক ঘুমে রাত হয়ে গেলো। রাইসার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।

— খাবার খেতে আসো।

তারপর আমি হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে চলে গেলাম। খাবার খেয়ে এসে নিজের রুমে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে রাইসা ফ্রেশ হয়ে এলো। রাইসাকে দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছে আমার সামনে একটা পরি দাঁড়িয়ে আছে।

— কি ব্যাপার এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

— দেখছি আমার মায়াবী মুখের সেই মায়াবতী টাকে। যার মায়াতে এখন আমি দিসে হারা।

— কে সেই মায়াবতী?

— কে আবার যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যার মায়াভরা মুখের থেকে সরাতে পারিনা আমার দুটি চোখ।

— বাহ আজকে কি কবির মনে রঙ লেগেছে নাকি?

— না নেশা হয়েছে আমার। তোমাকে স্পর্শ করার নেশা। তোমাকে কাছে পাওয়ার নেশা।

রাইসা আমার কথা শুনে অনেকটাই লজ্জা মাখা মুখে বলল — তুমি আসলেই অনেক দুষ্ট। এবার ঘুমাও তো।

— আজকে আর ঘুম হবেনা। চলো শুরু করি।

— কি শুরু করবে?

— বাসর।

তারপর আমি লাইট অফ করে দিলাম। বাকিটা ইতিহাস। দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দুবছর পার হয়ে গেলো। রাইসার সাথে খুব ভালোই দিন কেটে যাচ্ছে আমার। আমরা দুজনেই অনেক হ্যাপি।
হঠাৎ করে একদিন অফিসের কাজের খুব চাপ বেড়ে গেছে৷ কাজ করতে করতে রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাইসা অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু আমি কল রিসিভ করার সময় ও পাইনি। কাজ শেষ করে আমি রাইসাকে কল দেওয়ার সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে কান্না করে দিল। বুঝতে আর বাকি রইল না যে রাইসা কান্না করছে। হয়তো আমার ফোনের আসায় বসে আছে মেয়েটা।

— কি হইছে তোমার ফোন রিসিভ করছিলে না কেন? কতো চিন্তা হচ্ছিলো আমার তুমি যানো?

— আরে পাগলি কান্না করছ কেন আসলে কাজের অনেক চাপ ছিলো তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি সরি।

— সরি বলতে হবেনা বাসাত আসো তারপর দেখবে।

— আচ্ছা আমি এখনই চলে আসছি।

তারপর ফোন রেখে দিয়ে গাড়িতে বসে ড্রাইভিং করতে শুরু করে দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎ করে আমার গাড়ি টা অফ হয়ে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। নেমে দেখি গাড়ি চাকার হাওয়া চলে গেছে। মনে হচ্ছে চাকা লিক হয়ে গেছে। রাইসাকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম ঘুমিয়ে যেতে। এখান থেকে গাড়ির গেরেজ অনেক টায় দূরে। তাই একটা রিকশার জন্য অপেক্ষা করে দাড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো একটা চায়ের দোকানের দিকে। আমি দোকানে গিয়ে একটা চায়ের জন্য বললাম। তারপর আমার হাতে চা চলে এলো আমি বসে বসে চা খাচ্ছি তখন পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠল — ভাইয়া আমাকে দিয়ে কাজ করাবেন? আমি এই কাজে আজকে প্রথম এসেছি। আমি আপনাকে সুখ দিতে পারব।

মেয়েটার কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা কোনো পতিতা মেয়ে। আমি মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে বললাম — না আমার লাগবে না আপনি যান।

মেয়েটা আবার বলল — প্লিজ আসেন আমার অনেক টাকার প্রয়োজন। বিশ্বাস করুন আমি এই কাজে আজকে নতুন এসেছি।

মেয়েটার কথা শুনে আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো,,,,

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে