ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০৯

0
868

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব- ৯ ]
লেখক – আবির চৌধুরী

দিয়া আর তার আব্বু আম্মু কে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আর ভাবতে থাকলাম এরা এতো সকালে আমার বাসায় কেনো। হঠাৎ করে দিয়া আমার দিকে তাকাতেই রাগে আমার শরীর জ্বলতে শুরু করে দিল। এবার আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আমি — আম্মু ওনারা আমাদের বাসায় কি করে?

আমি আম্মুকে এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে দিয়ার আব্বু বলে উঠল — ঈশান তুমি এমন আমি কখনও ভাবি নাই। তোমাকে আমি ভালো ছেলে মনে করছি আর তুমি এমন ছিহ,,

আমি ওনার মুখে এমন কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— আংকেল সরি আপনার কথা আমি বুঝতে পারছিনা কি বলতে চাইছেন আপনি?

— এখন বুঝবে কি করে! আমার মেয়ের উপরে মানুষিক অত্যাচার করলে দিনের পর দিন। কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারতে। আমার মেয়ের সাথে এমন করার কি দরকার ছিলো? আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিয়ে কি আমরা ভুল করছি যে আমার মেয়েকে অন্য যায়গায় চাকরি করতে হবে!

— আমি আপনার মেয়েকে চাকরি করতে বলছি? এটা কে বলছে?

— কে আবার দিয়া বলছে। আর তুমি দিয়ার গায়ে হাত তুলোনি কাল? ও তো তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাইছে তার জন্য তুমি ওঁকে থাপ্পড় দিবে? আমি আমার মেয়ের গায়ে কখনও হাত তুলিনি আর তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুললে।

ওনার কথা শুনে আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম। তারপর বলতে শুরু করে দিলাম — আমার ভাবতেও অবাক লাগছে যে একটা মেয়ে কি ভাবে পারে এতো মিথ্যা কথা বলতে? আসলে আপনাদের ও দোষ আছে কারণ আপনারা আপনাদের মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন নাই তাই আজকে আপনার মেয়ের এই অবস্থা। আপনারা এখানে আসার আগে আপনার মেয়েকে ভালো ভাবে জিগ্যেস করার প্রয়োজন ছিলো আপনার মেয়ে যা বলছি তা কি আসলেই সত্যি কিনা? যাইহোক এবার আমি সত্যি টা বলি। আমি হয়তো এতোটা বড়লোক নই তাই বলে নিজের স্ত্রীকে কাজ করার জন্য চাপ বেব! এমন ছেলে আমি নই। কেউ যখন নিজে থেকে বলে সে কাজ করতে চায়। আমি বার বার নিষেধ করার পরেও সে কাজ করতে চায় তখন আমার আর কি করার আছে? আর কি বলছেন আমি আপনার মেয়েকে অত্যাচার করছি? কথাটা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে। আমি দিয়াকে ভালোবাসতাম কখনও তাকে কষ্ট দেওয়ার কথাও ভাবি নাই। আর অত্যাচার তো অনেক দূর। এটা সত্যি যে আমি পার্কে ভিতরে দিয়ার গায়ে হাত তুলছি। কেন তুলছি সেটা শুনলে হয়তো আপনারা লজ্জায় কাওকে মুখ দেখাতে পারবেন না। আমিও বলতে চাইনা ওই সব কথা। আর হ্যা দিয়া তোমাকে বলছি। তুমি সব সময় আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করলে। এসব মিথ্যে না বল্লেও পারতে। কি লাভ এসব মিথ্যে বলে?

আমার কথা শুনে দিয়া মাথা নিছু করে দাঁড়িয়ে আছে।

দিয়ার আব্বু দিয়াকে প্রশ্ন করল– কিরে দিয়া কথা গুলা কি সত্যি?

দিয়া,কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।

— আংকেল যখন সত্যি টা সবার সামনে চলে আসে তখন মিথ্যে বলা মানুষটা এই ভাবে চুপ হয়ে থাকে। আপনারা কি একটা কথা যানেন? দিয়া এমন একটা কাজ করছে যে সে আমার সন্তান কে দুনিয়াতে আনিতে দেয়নি। আমার সন্তান টা দুনিয়ার আলো দেখার আগেই তাকে নষ্ট করে ফেলছে আপনাদের মেয়ে। আমি তাকে অনেক অনুরোধ করছি কিন্তু সে আমার কথার মূল্য দেয়নি আমি তার পায়ে পড়েছি আমার সন্তানের জন্য কিন্তু সে আমার সন্তানকে দুনিয়াতে আসতে দেয় নি। কি দোষ ছিল আমার অবুঝ নিস্পাপ বাচ্চাটার? আপনার মেয়ে টাকার জন্য সব কিছু করতে পারে। টাকার জন্য সে সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলছে।

এসব বলতে বলতে আমার চোখে পানি চলে আসলো। আম্মু আর রাইসা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দিয়ার আব্বু দিয়ার কাছে গিয়ে দিয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আর বলতে লাগলো — দিয়া ছি তুই যে আমার মেয়ে সেটা ভাবতেও আমার লজ্জা হচ্ছে। তুই ঈশানের মতো একটা ছেলের সাথে এমন করতে পারলি আর ওর নামে আমাদের কাছে মিথ্যে বললি? তোকে ছোট বেলা থেকে কোলেপিঠে করে,মানুষ করছি কখনও কোনো চাওয়া অপুর্ন রাখি নাই। সেটাই আমাদের দোষ ছিল।

দিয়া — আব্বু,আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি টাকার জন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছি।

— আমার কাছে ক্ষমা ছেয়ে কি হবে যার সাথে অন্যায় করেছিস তার কাছে ক্ষমা ছেয়েনে।

আমি — আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না। দিয়া তুমি আমাকে বলেছিলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না আমি দুই একদিনের ভিতরে তোমার বাসায় ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব।

দিয়া আমার মুখে এমন কথা শুনে সাথে সাথে আমার পায়ের উপরে পড়ে গেল।

— ঈশান আমাকে তুমি প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমি জানি আমি অনেক বড় অন্যায় করছি তাও আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।

— ক্ষমা! হাহাহা, ক্ষমা করতে পারি তার আগে আমার সন্তান কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

দিয়া আমার এই কথা শুনে আমার পা ছেড়ে দিয়ে আবার মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।

— কি হলো? পারবে আমার অবুঝ নিস্পাপ শিশু কে এনে দিতে? আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছো তা কি ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমার চোখ থেকে যতটা পানি বের হয়েছে তোমার জন্য আমার সব চোখের পানি ফিরিয়ে দিতে পারবে? যদি পারো আমি ক্ষমা করে দেবো নয়তো আই এম সরি। আর হে আর কয়েক দিন পরে আমার বিয়ে রাইসার সাথে বিয়ের আগেই আমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো।

দিয়ার আব্বু আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল — বাবা আমার আর কিছু বলার নাই। আমাকে ক্ষমা করে দিয়। তোমাকে ভুল বুঝে ছিলাম।

— আংকেল আমাকে লজ্জা দিবেন না আপনি আমার গুরুজন আমার জন্য দোয়া করবেন।

— হুম বাবা দোয়া করি তুমি সুখী হও। আমরা আসি।

এই বলে দিয়ার আব্বু দিয়াকে নিয়ে আমার বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আমি গিয়ে সোফায় বসে পড়লাম খুব খারাপ লাগছে কি ভাবে একটা মেয়ে এতো মিথ্যা কথা বলতে পারে ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে। একটু পরে আম্মু আমার দিকে এগিয়ে আসলো।

— বাবা এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। এই মেয়েটা এতোটা নিচু মনের আমি কখনও ভাবতে পারিনি। মেয়েটা কি ভাবে পারল এমন করতে?

— আম্মু বাদ দাও আমার ভালো লাগছে না আমি আমার রুমে যাচ্ছি কেউ যেনো আমার রুমে না আসে বলে দিলাম।

এই কথা বলে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম খুব খারাপ লাগছিলো। এক ঘুমে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে দরজা খুলেই দেখি রাইসা আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— তুই এখানে কিছু বলবে নাকি?

— হুম, তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

— কি কথা বল?

— দিয়া তোকে অনেক কষ্ট দিছে তাইনা?

— ওই মেয়ের কথা আমার সামনে আর নিবি না বলে দিলাম। ওর কথা শুনলেই আমার গায়ে আগুন ধরে যায়।

— আমাকে বিশ্বাস করে দেখ আমি তোকে কখনও কষ্ট দেবোনা। খুব ভালো বাসবো তোকে।

— আর কিছু বলবি তুই?

— তোকে আমি একটা কথা বলতে চাই!,,,

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে