#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব- ৮]
লেখিক – আবির চৌধুরী
— ঈশান তোকে একটা কথা বলার ছিল?
— হুম আম্মু বলো কি কথা?
— বাবা এই ভাবে আর কতো দিন?
— মানে?
— তুই আবার বিয়ে কর আমি চাই তুই রাইসাকে বিয়ে কর মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে।
— আম্মু তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? আমাকে এই অবস্থায় আবার বিয়ে করতে বলছ! আমি আর কখনও বিয়ে করবোনা।
— এই ভাবে বললে হবে না। তোকে বিয়ে করতে হবে এটাই আমার শেষ কথা।
— এর আগেও তো তোমার কথায় আমি বিয়ে করছি। কি হলো আমার সাথে? আমি আর কাওকে বিশ্বাস করতে পারছিনা আম্মু। সবাই আমাকে ধোঁকা দেওয়া জন্যই আসে ভালোবাসার জন্য না আর আমার কারো ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন নেই আমি এই ভাবে ঠিক আছি। আমি আর বিয়ে করতে চাইনা।
আমি আর খাবার না খেয়ে হাত ধুয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বলিয়ে দিলাম। আম্মু একটু পরে আবার আমার রুমে আসলো। তারপর আবার শুরু করল বিয়ে কর বিয়ে কর বলে। আর আম্মু গুলাও এমন এরা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে দিল।
— তোর কাছে আমার কোনো কথার দাম নেই তাইনা? এই মেয়েটা তোকে ভালোবাসে বলেই এই বাড়িতে পড়ে আছে আর তুই!
— আমি কি বলছি এই বাড়িতে ওঁকে পড়ে থাকিতে? চলে গেলেই তো হয়।
— তোকে আমি শেষ বার বলছি তুই যদি রাইসাকে বিয়ে করতে রাজি না থাকিস তা হলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি৷
এই হলো মায়েদের কমন একটা ডায়লগ। কি আর করার আম্মুর কথায় রাজি হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই৷ আমি আম্মুকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলাম। আম্মু তো অনেক খুশি হয়ে গেছে। আসলে কাছের মানুষ গুলো অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। আম্মু আমার কষ্ট দেখে হয়তো ভাবছে আমি বিয়ে করলে দিয়াকে ভুলে যাবো তাই আমাকে বিয়ে করানোর জন্য এতো কিছু। দিয়ার জন্য আমার মনে আর কোনো ভালোবাসা নেই যা আছে সেটা হলো ঘৃণা আর কিছুই নেই। তবে রাইসা কেও আমি ভালোবাসতে পারবোনা। যদি রাইসা ও আমার সাথে এমন করে আমাকে ছেড়ে চলে যায় তখন আমি কি করব? আমি তো জিন্দা লাশ হয়ে পড়ে থাকব। বসে বসে এসব ভাবছি তখন হঠাৎ করে রাইসা আমার কাছে এসে আমাজে জড়িয়ে ধরলো। আমি রাইসাকে সরিয়ে দিলাম।
— এখনও আমাদের বিয়ে হয়নি মনে রাখিস।
— হয়নি তো কি হইছে হবে তো তাইনা? আমি সত্যি অনেক খুশি যাকে নিয়ে আমি আমার স্বপ্ন সাজিয়েছি তাকে আমি আমার করে পাবো। তোকে আমি খুব ভালো বাসবো কখনও দিয়ার মতো কষ্ট দেবো না।
— রাইসা শোন! আমি আম্মুর কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছি তার মানে এই না যে তোকে আমি ভালো বাসবো। বিয়ের পরে আমি তোকে স্বামীর অধিকার দিতে পারবোনা। আর তুই কখনও স্ত্রীর অধিকার আমার উপরে খাটাতে আসতে পারবি না বলে দিলাম।
— হুম আমি জোর করবো না। তুই নিজেই আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবি। কারণ আমার ভালোবাসার উপরে আমার বিশ্বাস আছে। আমার ভালোবাসায় কোনো মিথ্যা নেই। তোকে আমি ঠিক নিজের করে পাবো।
এই কথা বলে রাইসা আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুমে বসে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম। দুপুরে খাবার খাবার খাইনি দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে শুয়ে ছিলাম। বিকালে রাসেল এসে আমার রুমের দরজা ধাক্কাতে শুরু করে দিল। আমি দরজা খুলে রাসেল কে ভিতরে নিয়ে আসলাম।
— কি অবস্থা এখন তোর?
— ভালো। তুই হঠাৎ এই সময় আমার বাসায়?
— কেন আমার কি আসা বারণ নাকি?
— সেটা বলছি নাকি! কিন্তু তুই আমাকে না জানিয়ে হঠাৎ চলে আসলি তাই জিজ্ঞেস করলাম।
— আসছি তোর সাথে কিছু কথা বলতে।
— ওহ আচ্ছা বল কি কথা?
— দোস্ত তুই দিয়াকে ভুলে গিয়ে রাইসাকে মেনে নে মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে।
— হুম আমি জানি কিন্তু আমি পারবো না। রাইসা কেন আমি আর কোনো মেয়েকেই বিশ্বাস করতে পারবোনা। আমি রাইসাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি আম্মুর জন্য।
— বুঝলাম কিন্তু তোকে একজন কষ্ট দিছে তাই বলে তুই আরেকজনকে কষ্ট দিবি?
— আমি কাওকে কষ্ট দিতে চাইনা কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছে করে কষ্ট নিতে চায় আমার কিছু করার নাই।
— দেখ ভাই মেয়েটা তোর এতো অবহেলা সহ্য করে পড়ে আছে শুধু তোকে ভালোবাসে বলে আর তুই এমন করবি? এটা কি ঠিক?
— ঠিক বেঠিক আমি জানিনা। আমি আগেও বলছি এখনও বলছি আমি আর কাওকে ভালোবেসে ঠোকটে চাইনা। একবার অনেক কষ্ট পেয়েছি দ্বিতীয় বার কষ্ট পেলে আমি আর সহ্য করতে পারবোনা।
— আমি আর কি বলব আমার আর কিছু বলার নাই। একটা কথা বলি ভালোবাসা অন্যরকম হয়। কখন কার জন্য কি ভাবে চলে আসে বলা যায়না। হয়তো তুই যাকে এতো অবহেলা করছিস তাকে তুই একদিন অনেক ভালো বাসবি। আসি দোস্ত ভালো থাকিস৷ তোর জন্য শুভকামনা রইল।
রাসেল কথা শেষ করে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তারপর আমি খাটের উপরে বসে থেকে আরেকটা সিগারেট জ্বালিয়ে দিলাম। কিছু ভালো লাগছে না। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। আমি আমার রুমের লাইট অফ করে শুয়ে আছি। হঠাৎ আমার রুমের লাইট জ্বলে উঠতে আমি তাকিয়ে দেখি রাইসা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।
— রাইসা কিছু বলবি তুই?
— অনেক রাত হইছে খেতে আয়। খালামনী বসে আছে তোর জন্য।
— আমার খিদে নেই আম্মুকে খেয়ে নিতে বল। আমি খাবোনা৷
— তুই না খেলে খালামনী ও খাবে না বলছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।
তারপর খাবার খেতে চলে গেলাম। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আম্মু খাবার রেডি করে বসে আছে। আমি একটা চেয়ার টান দিয়ে বসলাম।
— কিরে এতক্ষণে আসার সময় হলো তোর? কখন থেকে বসে আছি আমি তোর জন্য সেই দিকে খেয়াল আছে?
— আমি কি বলছি আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে? খেয়ে নিলেই তো পারতে!
— ঈশান তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া কখনও খাবার খাইনি। আর আজকে তুই আমাকে এই ভাবে বলতে পারলি।
এই কথা বলে আম্মু কান্না করে দিল। কান্না করতে করতে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
রাইসা — তুই কাজটা ঠিক করিস নাই খালামনী অনেক কষ্ট পেয়েছে তোর কোথায়।
— হুম আমি জানি আমার এই ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আচ্ছা তুই খাবার রেডি কর আমি আম্মুকে নিয়ে আসছি।
তারপর আই উঠে আম্মুর রুমে চলে গেলাম। আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি আম্মু কান্না করছে। সত্যি আম্মুর সাথে এই ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আমি গিয়ে সোজা আম্মুর পায়ে পড়ে গিলাম।
— আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ আমি আর কখনও এমন ব্যাবহার করবোনা তোমার সাথে। এই বারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আম্মু আমাকে কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে। আম্মুর কান্না দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। আম্মুকে কখনও এই ভাবে কান্না করতে দেখি নাই। আজকে আমার এমন কথায় আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছে।
— আম্মু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ আমি জানি আমার এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি কি করবো আমি যে আর এসব নিতে পারছিনা।
এই কথা বলে আমি আম্মুর পায়ের উপরে পড়ে কান্না,শুরু করে দিলাম। এবার আম্মু আমাকে হাত দিয়ে তুলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরল। তারপর মা ছেলে অনেক্ষন কান্না করলাম।
— এবার চল খেতে যাই আমার খুব খিদে পেয়েছে বাবা।
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে আম্মুকে নিয়ে খাবার খেতে চলে গেলাম। আজকে আম্মুর হাতে খাবার খেলাম। খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো রুম থেকে বের হয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভালো করে চোখ মুছে দেখি দিয়া আর তার আব্বু আম্মু আমাদের বাসায়।
চলবে,,,,