ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০৭

0
757

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব -৭]
লেখক – আবির চৌধুরী

ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার রুম সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে কেউ। এতো সকাল সকাল কে আসছে আমার রুমে! এসব ভাবতে ভাবতে আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রাইসা আমার জন্য না নিয়ে এসে বসে আছে।

— চা,খেয়ে নে,

— আমার রুম কে ঘুছিয়ে দিয়েছে?

— কে দিবে আবার! আমি দিয়েছি।

— তোকে না বলছি আমাকে না বলে আর আমার রুমে আসবি না। তার পরেও কেনো আসিস?

— তোকে ভালোবাসি তাই আসি। তুই বার বার নিষেধ করলেও আমি আসবো আর তোকে আমি আমার করে নেবো।

এই কথা বলে রাইসা দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো আর আমাকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপরে শুইয়ে দিল। রাইসা আমার উপরে শুয়ে আমার ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করে দিল। এসব দেখে আমার খুব রাগ উঠে গেল। রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। রাইসা গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিল।

— এসব কি হুম? কিছু বলছিনা দেখে যা ইচ্ছে তাই করবি নাকি? শোন একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। তুই যেটা চাইছিস সেটা,কোনো দিন ও হবে না। আমি আর,কাওকে কোনো দিন ভালো বাসতে পারবোনা।

রাইসা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে।

— এসব আজাইরা ঢং বাদ দিয়া আমার সামনে থেকে চলে যা। তুই আর আমার সামনে আসবি না কখনও বলে দিলাম।

রাইসা আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আমি খাটের উপরে বসে রইলাম কিছু ভালো লাগছে না। অনেক দিন হলো বাহিরে যাইনি। তাই বের হয়ে গেলাম। হেটে হেটে আমাদের ক্লাবের দিকে যাচ্ছি। সামনে দেখি রাসেল দাঁড়িয়ে আছে। রাসেল কে দেখে আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম।

— কিরে তুই এখানে কি করিস?

— কিছু না এমনি বের হইলাম। তুই কই জাস?

— চল ক্লাবের দিকে যাই সবাইকে ফোন দে আড্ডা দেবো।

— আজকে ক্লাবে না চল পার্ক থেকে ঘুরে আসি।

তারপর আমি আর রাসেল পার্কের দিকে চলে গেলাম। পার্কে ভিতরে যেতেই আমার চোখ পড়লো একটা কাপলের দিকে তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কিস খাচ্ছে। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে হাটা শুরু করে দিলাম একটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই মনে হলো মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। কারণ মেয়েটা আর কেউ না এটা আমার স্ত্রী দিয়া। দিয়া আমাকে দেখে ছেলে টার থেকে একটু দূরে সরে গেল।

— দোস্ত চল এখান থেকে। এখানে থাকা আমাদের ঠিক হবে না।

এই কথা বলে রাসেল আমাকে টানতে শুরু করে দিল। আমি রাসেলের হাত সরিয়ে দিলাম একটা জাকি দিয়ে।

— বাহ খুব সুন্দর একটা সিন ছিল। ছি আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে তোর মতো একটা মেয়ে কে আমি ভালো বাসতাম। আজকে নিজের উপরে ঘৃণা হচ্ছে। মানুষ টাকার জন্য আর কি করতে পারে? সেটা তোকে দেখে বুঝতে পারছি।

— ঈশান চল ভাই প্লিজ। এই সব মেয়েদের সাথে কথা না বলাই উচিৎ।

রাগে আমার পুরো শরীর আগুন হয়ে যাচ্ছে। এই দিকে রাসেল আমার হাত ধরে টানাটানি করছে। রাসেল কে একটা ধাক্কা দিয়ে দিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে দিয়ার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলাম।

— তুই শুনে রাখ আমার সাথে তুই যেমন টা করলিনা ঠিক তেমন টা তোর সাথেও হবে দেখিস। তুই আমাকে অনেক বড় দোকা দিয়েছিস। আল্লাহ এসব সহ্য করবেনা। তুই একদিন ঠিক কাঁদবি। আমাকে যেমন কাঁদিয়েছিস তুই। তুই তার থেকে বেশি কাঁদতে হবে।

এই কথা বলে নিজের চোখের পানি মুছে আমি হাটা শুরু করে দিলাম। আমার পিছনে রাসেল ছুটে আসলো। আমি পার্ক থেকে বের হয়ে একটা দোকানে গিয়ে এক পেকেট সিগারেট নিলাম। এর আগে কখনও সিগারেট খাইনি। আজকে প্রথম সিগারেট নিলাম। রাসেল আমার হাতে সিগারেট দেখে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল।

— ঈশান সিগারেট কার জন্য নিলি?

— আমার জন্য এখন ক্লাবের দিকে চল ভালো লাগছে না আমার।

তারপর আমি আর রাসেল ক্লাবের ভিতরে চলে গেলাম। একটা চেয়ারে বসে একের পর এক সিগারেট টেনে শেষ করতে লাগলাম। রাসেল আমার সিগারেট খাওয়া দেখে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

— ভাই আর খাইস না তুই তো মরে যাবি এই ভাবে সিগারেট খেলে।

— এই জীবন রেখে ও বা কি লাভ আছে বল? যে খাবে মানুষ আজকাল টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। কি দোষ ছিল আমার কেন আমার সাথে এমন করলো দিয়া? আমি তো ওঁকে খুব ভালোবাসতাম। ও যেটা বলত সেটাই করতাম কখনও ওর কোনো চাহিদা আমি অপুর্ণ রাখি নি। তা হলে কেন আমার সাথে এমন করলো?

— চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবি সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

আমি আর কিছু না বলে আবার সিগারেট খেতে শুরু করে দিলাম।

— চল বাসায় চলে যাই অনেক রাত হয়ে গেছে।

— হুম চল।

তারপর বের হয়ে আমি আমার বাসায় চলে গেলাম। দুপুরে আর খাবার খাইনি। সারাদিন না খেয়ে ছিলাম। শুধু খাবার বলতে সিগারেট ছিল। বাসায় গিয়ে দরজা কলিং বেলে চাপ দিতে আম্মু এসে দরজা খুলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

— কি হইছে তোমার কান্না করছ কেন?

— তুই আমাকে না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলি? আর তোর ফোন বন্ধ কেন? দুপুর থেকে তোকে ফোন দিচ্ছি বার বার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।

— আমি সাথে করে ফোন নিয়ে যাইনি ফোন বাসায় আছে হয়তো ফোনে চার্জ নেই।

— আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আয়।

— আমি খাবোনা তোমরা খেয়ে নাও।

তারপর আমি আমার রুমে গিয়ে আরেকটা সিগারেট জ্বলিয়ে দিলাম। খাটের উপরে বসে সিগারেট খাচ্ছি এমন সময় রাইসা আমার রুমে আসলো। রাইসা কে দেখে সিগারেট লুকিয়ে ফেলার আগেই ও সিগারেট দেখে নিছে তাই আর লুকাতে হলো না ওর সামনেই টানতে শুরু করলাম।

— ঈশান তুই সিগারেট খাচ্ছিস?

— হুম।

— তুই এখনি এই সিগারেট ফেলে দে। আর যেনো কোনোদিন তোর হাতে আমি সিগারেট না দেখি।

— আমাকে জ্ঞান দিয়ে আসিস না।

রাইসা এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিল। রাগের চোটে রাইসা কে ধাক্কা দিলাম। রাইসা গিয়ে খাটের সাথে বাড়ি খেয়ে মাথায় আঘাত ফেল।সাথে সাথে রক্ত বের হয়ে গেলো।

আমার শরীর পাথর হয়ে গেছে নিজের কষ্ট সহ্য করতে করতে। এখন আর কারো কষ্ট দেখলে আর খারাপ লাগেনা। রাইসা মাগো বলে একটা চিৎকার দিল। রাইসার চিৎকারে শব্দ শুনে আম্মু চলে আসলো। আম্মুকে আসতে দেখে আমি সিগারেট নিভিয়ে নিলাম।

— রাইসা মা কি ভাবে হলো এমন তোর?

— পা স্লিপ করছে কিছু হইনি সেরে যাবে। এটা কোনো ব্যাপার না খালামনী।

— ঈশান তুই দেখিস নাই ও যে পড়ে গেছে কতো খানি কেটে গেছে মেয়েটার। আয় মা তোকে আই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছি।

— খালামনী এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি এমনি রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।

— বেশি কথা বলিস না চল আমার সাথে।

তারপর আম্মু রাইসাকে নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাইসা যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কিছুই বললাম না। আম্মু আর রাইসা চলে যাওয়ার পরে আমি আমার রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বালিশে মাথা রেখে শব্দহীন কান্না করতে থাকলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বার বার পার্কের ঘটনা তা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কি ভাবে পারলো দিয়া! এসব ভাবতে ভাবতে আমার বুকের ভিতর কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। দিয়া তো খুব ভালোই আছে তা হলে আমি কেম পারছিনা? এসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে গিয়ে খেতেই বসতেই আম্মু বলে উঠল।

— ঈশান বাবা তোকে একটা কথা বলার ছিল!

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে