#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ৫]
লেখক – আবির চৌধুরী
আমি গাড়িটিকে ফলো করতে শুরু করে দিলাম। একটু পরে দেখি দিয়ার গাড়ি একটা হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আমি তাড়াতাড়ি করে নেমে হাসপাতালের ভিতরে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি দিয়া একটা মহিলা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। আমি দিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে আমার দিকে ফিরিয়ে আনলাম তখনই দিয়া আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিল সবার সামনে। দিয়ার থাপ্পড়ের শব্দ শুনে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।
— তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার? তোর কি যোগ্যতা আছে আমাকে স্পর্শ করার?
আমি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি।
হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে বলল — দিয়া কি হয়েছে? (ছেলেটার নাম মিরাজ)
— এই ছোটলোক টার কতো বড় সাহস আমার হাত ধরেছে।
— এই ছেলেকে চেনো তুমি?
— হুম এই সেই ছেলে যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আর আমি তারপর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি।
মিরাজ একটা হাসি দিয়ে হলল — ওহ আচ্ছা এই সেই ছেলে? ছেলেটা কতটা বোকা বুঝতেই পারেনি।
— এই ছোটলোকের বাচ্চাটাকে এখান থেকে যেতে বলে বল।
তারপর দিয়া ডাক্তার কে বলল — ডাক্তার এই বাচ্চা নষ্ট করার ব্যবস্থা করুন।
আমি — দিয়া প্লিজ এমন করোনা তুমি। আমি তোমার কাছে কিছু চাইনা শুধু আমার বাচ্চাটাকে নষ্ট করোনা। আমি এই বাচ্চা নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবো। কোনো দিন আমি তোমার সামনে আসবো না। প্লিজ দিয়া তোমার কাছে এটা আমার অনুরোধ। দিয়ার হাত ধরে কথাটা বললাম।
দিয়া এক জটকা দিয়ে আমার হাত সরিয়ে নিল।তারপর মিরাজ আমার কলার চেপে দরে বলল
— তুই দিয়াকে স্পর্শ করার সাহস ফেলি কোথা থেকে?
এই কথা বলে মিরাজ আমার নাকে একটা ঘুসি দিল। সাথে সাথে আমার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে দিল। আমি দিয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু দিয়া কিছুই বলল না। যে দিয়া আমার হালকা হাত কেটে গেলেও সহ্য করতে পারতো না আজ সেই দিয়া আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তারপর ডাক্তার দিয়াকে নিয়ে ভিতরে চলে যাবে এমন সময় আমি আবার দিয়ার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। আমার নাকের রক্ত টপটপ করে পড়ছে।
— দিয়া আমি তোমার পায়ে পড়চি আমার বাচ্চাটাকে তুমি নষ্ট করে দিয় না। আমি এই বাচ্চা কে নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো কখনও তোমার মুখোমুখি হবোনা। শুধু আমার বাচ্চাটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
কিন্তু দিয়া আমার কোনো কথা শুনল না। মিরাজ কয়েকজন লোক নিয়ে এসে আমাকে হাসপাতালে থেকে বাহিরে ফেলে দিল। রক্তে আমার কোট লাল হয়ে গেলো। আমি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পরে দিয়া মিরাজের হাত ধরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এসে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আমি দিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর চোখের পানি ফেললাম৷ এখন চোখে পানি ফেলা ছাড়া যা আমার আর কিছুই করার নাই। হাসপাতালে পাসের একটা দোকানে গিয়ে এক লিটার পানি নিয়ে রক্ত পরিষ্কার করছি এমন সময় আমার বন্ধু রাসেল এসে হাজির।
— ঈশান তোর এই অবস্থা কি ভাবে হলো? কে তোর এই অবস্থা করছে?
— কেউ না এমনি নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো।
— তুই তো হাসপাতালে যেতে পারতি। তুই আমার সাথে হাসপাতালে আই।
— লাগবেনা এমনি ঠিক হয়ে যাবো৷
— কোনো কথা বলবি না তুই আমার সাথে চল।
রাসেল আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে টেনে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। হাসপাতালের সেই মহিলা ডাক্তারের কাছে আমাকে নিয়ে গেলো রাসেল। ডাক্তার আমাকে দেখেই বলে ফেলল,
— ওই মহিলা টা আপনার কে ছিল? আর ছেলেটা কে যে আপনার গায়ে হাত তুলল?
রাসেল — কি! কোন ছেলে ঈশানের গায়ে হাত তুলছে? ঈশান তুই আমাকে বল্লিনা কেন? ছেলেটার নাম বল কে সেই ছেলে?
আমি — আরে ভাই বাদ দে এসব।
ডাক্তার — আপনি তো আমার কথার উত্তর দিলেন না মেয়েটা কে?
— মেয়েটা আমার স্ত্রী।
— তা হলে যে সন্তান,,,
এই কথা বলতেই আমি ডাক্তার কে থামিয়ে দিয়ে বললাম — আমার চিকিৎসা করুন।
তারপর ডাক্তার আর কিছু না বলে আমার নাকের রক্ত বন্ধ করে কিছু ওষুধ দিয়ে দিল। রাসেল কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আমি আর রাসেল বের হয়ে গেলাম। রাসেল আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেলো।
— ঈশান এই বার সব আমাকে বল কি হইছে? আর তোকে ও কেমন জানি লাগছে আমাকে সব বল তুই।
তারপর আমি রাসেল কে সব কিছুই খুলে বললাম। রাসেল আমার সব কথা শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিল।
— তোর আম্মু যানে এসব?
— না আমি আম্মুকে কিছু বলিনি। আম্মু জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে আম্মুকে কিছু বলি নাই।
— ওহ, কিন্তু ভাবি এমন করছে কেন? ভাবি তো তোকে অনেক ভালোবাসতেন তা হলে?
— হয়ত আমার টাকা পয়সা নাই তাই এমন করছে।আর আগে যা ছিলো তা হয়তো দেখানো ভালোবাসা ছিল। কিন্তু এটা আমি কখনও ভাবি নি দিয়া আমার সন্তান টাকে নষ্ট করে ফেলবে। জানিস আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই। দিয়া এমনটা কি করে করতে পারল!
রাসেল কে এসব বলছি আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। এবার রাসেল আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
— চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি কিছু না বলে শব্দ বিহীন কান্না করছি। ছেলেরা যে চাইলেও চিৎকার করে কান্না করতে পারে না। কারণ ছেলেদের কান্নাতে মানায় না। একটা ছেলে কখনও চিৎকার করে কান্না করতে পারে না শত কষ্ট বুকে নিয়েও তাদের হাসতে হয় এই সমাজের মানুষের সামনে।
কিছুক্ষণ পরে রাসেল আমাদের জন্য খাবার অর্ডার করল। একটু পরে খাবার আমাদের সামনে চলে আসলো। কি খাবার খাবো খাবার আমার ঘোলা দিয়ে নামছে না।
— কিরে খাচ্ছিস না কেন? খেয়ে নে এই খাবার। দেখে তো মনে হচ্ছে সকাল থেকে না খাওয়া তুই!
— দোস্ত খাবার আমার ঘোলা দিয়ে নামছে না। আমি খাবো না তুই খেয়ে নে।
— এতো কথা শুনতে চাই না তুই এই সব খাবার খেয়ে নে।
তারপর আমি কোনো ভাবে হালকা করে খাবার খেয়ে নিলাম।
— ঈশান চল আমি তোকে বাসায় দিয়ে আসি।
— না আমি একাই যেতে পারবো। সমস্যা হবে না আমার।
— ঠিক আছে সাবধানে যাবি কিন্তু৷ আর এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর রাসেল রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে দিয়ে আমার বের হয়ে গেলাম। রাসেল তার নিজের বাসার দিকে চলে গেলো। আমি গিয়ে আমার গাড়ি তে উঠে বসলাম। শরীর টা কেমন জানি খারাপ লাগছে। তাও আমি গাড়ি ড্রাইভিং করা শুরু করে দিলাম। চোখের সামনে বার বার দিয়ার মুখ ভেসে উঠছে আমার চোখের সামনে। আর চোখ দিয়ে অজস্র ভাবে পানি পড়ছে। এক হাতে ড্রাইভিং করছি অন্য হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিচ্ছি। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলাম। রাস্তা জেনো কোনো ভাবেই শেষ হচ্ছেনা। হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম সামনে থেকে একটা বড় গাড়ি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়িতা আমার থেকে তেমন একটা বেশি দুরে না। গাড়ি টি অনেক জোরে এগিয়ে এসে আমাকে একটা ধাক্কা মেরে দিলো সাথে সাথে আমার গাড়ি উল্টে পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেলো । আমার শরীর রক্তে লাল হয়ে গেলো।
চলবে,,,,