#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব -৪]
লেখক – আবির চৌধুরী
দিয়া রুমে এসে আমার সাথে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। আমি না খেয়ে শুয়ে আছি। দিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেতে চলে গেলো। খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ পরে দিয়া রুমে এসে খাটের উপরে শুয়ে পড়ল।
— দিয়া তুমি খেয়ে এলে এই দিকে যে আমি না খেয়ে আছি সেই দিকে খেয়াল আছে?
— আমি কি আপনাকে খেতে নিষেধ করছি নাকি? খেয়ে নিলেই তো পারতেন!
— আমাদের মধ্যে কথা ছিল তুমি এসে আমাকে তোমার হাতে,খাইয়ে দিবে।
— আপনি কি বাচ্চা নাকি যে আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে?
দিয়ার মুখে এমন কথা শুনে খুব কষ্ট লাগলো। আমি দিয়াকে আর কিছুই বললাম না। না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। দিয়ার কথা ভেবে অনেক খারাপ লাগছে৷ দিয়া কি ভাবে এতোটা পরিবর্তন হয়ে গেল?
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মোবাইল ফোন বেজে উঠতেই আমি বর্তমানে ফিরে আসলাম। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু কল দিছে৷ আমি তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলাম।
— হ্যালো আম্মু কি হইছে?
— বাবা তুই কই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আয় দিয়া কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।
আম্মুর কথাটা শুনেই বুকের ভিতর টা নড়ে উঠল।
— কি বলছো দিয়া আবার কোথায় চলে গেছে? তুমি কই ছিলে?
— তুই আগে হাসপাতালে আয় তারপর তোকে সব বলছি।
এবার আমি ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম। দিয়ার জন্য খুন চিন্তা হচ্ছে এই শরীর নিয়ে মেয়েটা আবার কই চলে গেলো? আমি খুব জোরে গাড়ি ড্রাইভিং করছি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি হাসপাতালে পৌছে গেলাম। হাসপাতালে পৌছে আম্মুর কাছে চলে গেলাম।
— আম্মু দিয়ার কোনো খোঁজ পেয়েছ?
— না বাবা।
— তুমি দিয়ার সাথে থাকতে ও আবার কই চলে গেলো?
— আমি দিয়ার পাসে বসে ছিলাম কিন্তু হঠাৎ আমি ঘুমিয়ে গেলাম। চোখ খুলে দেখি দিয়া নাই। হাসপাতালের সব কিছুই খুঁজে দেখলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।
— কাওকে জিগ্যেস করোনি? কেউ তো দেখবে ও হাসপাতাল থেকে বের হলে!
— আমি জিগ্যেস করছি কিন্তু কেউ নাকি ওঁকে হাসপাতাল থেকে বের হতে দেখে নাই।
— এটা কেমন কথা? ও কি হাওয়া হয়ে গেছে নাকি?
— আমি কিছু জানিনা তুই গিয়ে দেখ ও কোথায় চলে গেছে।
— ঠিক আছে তুমি বাসায় চলে যাও আমি দেখছি।
আম্মুকে এই কথা বলে আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলাম গাড়ি নিয়ে। আশেপাশে ভালো করে দেখতে থাকলাম কিন্তু দিয়াকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। দিয়ার ছবি আমার মোবাইলে আছে। ছবি দেখিয়ে অনেক জনকে জিগ্যেস করছি কিন্তু কেউ দিয়ার কোনো খোঁজ দিতে পারলোনা। এই দিকে আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার শরীর দিয়ে ঘাম বের হতে শুরু করে দিল৷ আমি এক হার দিয়ে ঘাম মুছে ড্রাইভিং করছি। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনও দিয়াকে পেলাম না। আমার পুরো শহর ঘুরলাম কিন্তু দিয়ার কোনো খোঁজ মিলল না। হতাশ হয়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।
— কিরে তুই একা কেন দিয়া কই? ওঁকে কি খুঁজে পেলিনা?
আমি মাথা নিচু করে না বললাম।
— মেয়েটা কোথায় চলে গেলো এই ভাবে? আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটা আবার কিছু করে বসে নাইতো?
— এসব কি বলছ আম্মু! দিয়ার কিছু হতে পারেনা ও যেখানেই থাকুক না কেন,আমি দিয়াকে খুঁজে বের করবই।
— বাবা তুই একটু পুলিশ কে খবর দে। যদি আবার খারাপ কিছু হয়ে যায়!
— আজকে রাত টা অন্তত দেখি যদি দিয়া ফিরে আসে৷ না আসলে কাল পুলিশ কে খবর দেব।
তারপর আমি আম্মুর সামনে থেকে চলে আসলাম। দিয়ার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটা এই অবস্থায় কোথায় যেতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজে ও জানিনা। হঠাৎ করে মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলো কারো কল এর শব্দ শুনে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৩ টা বাজে। আমি ফোন রিসিভ করলাম। ফোন রিসিভ করে ওপাশের ভয়েস শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ কলটা আর কেউ না দিয়াই কল দিয়েছে।
— হ্যালো তুমি হাসপাতাল থেকে কোথায় চলে গেলে কাওকে কিছু না জানিয়ে? তোমার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো তুমি এখন কোথায় আছো?
— আমার জন্য চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি যেখানে আছি ঠিক আছি। আর অনেক ভালো আছি।
— কিন্তু তুমি হাসপাতাল থেকে এই ভাবে কেন চলে গেলে?
— সেটা কি তোকে বলতে হবে?
দিয়ার মুখে তুই শব্দটা শুনে আমি থমকে গেলাম। যে দিয়া আমাকে আপনি ছাড়া কথা বলে না সে দিয়া আমাকে তুই করে বলল! আমি ওই সব নিয়ে না ভেবে দিয়াকে বললাম — তোমার কি হয়েছে? তুমি এমন কেন করছো? তুমি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় চলে গেলে?
— আমি তোকে এতোকিছু বলার জন্য বাধ্য নই। আর শোন আজকের পর থেকে তুই তোর মতো থাকবি আমি আমার মতো থাকব। কিছুদিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপার চলে যাবে তোর বাসায়।
দিয়ার মুখে এসব কথা শুনে আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। মনে হচ্ছে আমি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছি একটু পরে আমার ঘুম ভেঙে যাবে আর সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
— দিয়া এসব কি বলছ তুমি? আমি তো তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমিও তো আমাকে ভালোবাস!
দিয়া একটা হাসি দিয়ে বলল — ভালোবাসা! হাহাহা। তোর থেকে আমি কখনো কিছু পাইনি। আরে তুই তো নিজেই ঠিক ভাবে চলতে পারিস না। শোন আমি এখন অন্য একজন কে ভালোবাসি আর তার অনেক টাকা। সে আমাদের অফিসের বস উনি আমাকে পছন্দ করে। ভালো ও বাসে। তোর সাথে থাকলে আমি কোনো দিন কিছুই করতে পারবোনা। সে আমাকে নিয়ে সিংগাপুর যাবে ঘুরতে। আর তুই আমাকে কখনও কোথাও ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলি? তুই তো আমার জন্য রোজ ৫ টাকার ফুল নিয়ে আসতি। আর ও আমাকে ফুলের দোকান দিয়ে দিছে। আর শোন আমার পেটে যে সন্তান আছে। ওটা তোরই সন্তান। ওটা আমি নষ্ট করে দেবো। তোর কোনো কিছুই আমার কাছে থাকবেনা।
দিয়ার কথা শুনে আমার বুক পেটে কান্না আসছে। নিজেকে অনেক কষ্ট করে কন্ট্রোল করলাম।
দিয়া — আমার সন্তানকে নষ্ট করোনা প্লিজ। আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটা কি দোষ করছে তাকে কেনো তুমি দুনিয়ায় আলো দেখতে দিবেনা। তুমি আমাকে যা ইচ্ছে বল, আমার সন্তান কে নষ্ট করোনা প্লিজ দিয়া, তোমাকে হাত জোর করে বলছি।
— আমি তোর এতো কথা শুনতে চাইনা। আমি কাল ডাক্তারের কাছে যাবো।
এই কথা বলে দিয়া কল কেটে দিল। আমি সাথে সাথে আবার কল দিলাম কিন্তু ফোন অফ। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। দিয়া আমার সাথে এমনটা কি করে করতে পারলো? (আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি এই সংসারের হাল ধরলাম) দিয়া টাকার জন্য আমার সাথে এমন করলো! এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।
— ঈশান বউমার কোনো খোঁজ ফেলি বাবা?
— হুম কাল রাতে কল দিয়েছে।
— দিয়া এখন কোথায় আছে?
— দিয়া ওর বান্ধুবীর বাসায় আছে।
আম্মুকে এই প্রথম মিথ্যে কথা বললাম। কারণ আম্মু যদি সত্যি টা জানতে পারে কখনও সহ্য করতে পারবেনা।
— ওহ, এই ভাবে চলে গেলো কেন? আমাকে না বলেই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে চলে গেলো!
— তোমাকে ডেকে ছিল কিন্তু তুমি নাকি ঘুমিয়ে চিলে তাই না বলেই চলে গেছে৷ ও ঠিক আছে বাদ দাও আমি অফিসে যাবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি নাস্তা রেডি করে দিচ্ছি৷
— না,আম্মু আমি খাবনা তুমি খেয়ে নিয়।
তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি গাড়ি ড্রাইভিং করছি হঠাৎ রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল পড়ে গেল। আমি পাসের গাড়িতে তাকিয়ে দেখি দিয়া একটা ছেলের সাথে গাড়িতে বসে আছে। আমি দিয়াকে ডাকতে যাবো তখনই ট্রাফিক সিগনাল ছেড়ে দিল।
আমি গাড়িটির পিছু করতে থাকলাম,,,
চলবে,,,,,