#ভালোবাসা অন্যরকম
[৩য় পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী
সকালে বুকের উপরে ভারি কিছু অনুভব করতে পারলাম। চোখ খুলে দেখি দিয়া আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। চোখে অনেক ঘুম, অনেক রাতে ঘুমিয়েছি তাই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে চোখের উপরে টপটপ করে পানি পড়তেই তাকিয়ে দেখি দিয়া তার চুলের পানি আমার চোখের উপরে ফেলছে।
— আর কতো ঘুমাবেন? অনেক বেলা হইছে উঠুন। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন।
ঘুমঘুম চোখে দিয়াকে একটা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম।
— কি করছেন এসব? মাত্র গোসল করে আসছি ছাড়ুন।
— একদম চুপ দরকার হলে আবার গোসল করবে।
— ইসসসস সখ কতো!
এবার দিয়াকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলাম। তারপর দিয়ার কপালে একটা চুমু খেলাম।
— উঠুন তো ফ্রেশ হয়ে নিন নাস্তা করে নিন।
এই কথা বলে দিয়া আমার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য নাস্তা নিয়ে বসে আছে। তারপর সবার সাথে নাস্তা করে আবার রুমে চলে এলাম। এই ভাবে দুই দিন কেটে গেলো। দুই দিক পরে আমি বাসায় বসে বসে ফোন টিপছি হটাৎ আমার বন্ধু রাসেল আমকে কল দিয়ে বলল আমাদের ক্লাবে যেতে। আমি বের হব তখন দিয়া রুমে আসলো।
— কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
— একটু বের হব আমার ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
— ঠিক আছে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন কিন্তু।
— আচ্ছা।
তারপর আমি রুম থেকে বেরিয়ে ক্লাবের দিকে এগিয়ে গেলাম। ক্লাবে গিয়ে দেখি আমার সব বন্ধুরা এসে বসে আছে৷
— দোস্ত বিয়ে করলি আমাদের ট্রিট দিবি না?
তারপর আমি সবার জন্য খাবার অর্ডার দিলাম। কিছুক্ষণ পরে খাবার চলে আসলো। সবাই খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর আড্ডা দিতে থাকলাম। আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত ১১ টা বেজে গেলো বুঝতেই পারি নি। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।
— কিরে এতোক্ষণ কই ছিলি তুই?
— বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে এতো রাত হয়ে গেলো বুঝতেই পারি নি।
— এই দিকে নতুন বউ না খেয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। আর তুই এতো রাত করে বাসায় ফিরলি!
— তোমরা খেয়ে নিলেই তো পারতে।
— আমি বউমা কে অনেক বার বলছি খেয়ে নিতে কিন্তু ও তোকে ছাড়া খাবেনা বলছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খাবার রেডি করে রাখো আমি ওঁকে নিয়ে আসছি।
তারপর আমি রুমে চলে গেলাম রুমে গিয়ে দেখি দিয়া খাটের এক কোণে বসে আছে। আমি গিয়ে ওর পাসে এসে বসতেই ও অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকলো।
— আমার বউটা আমার উপরে রাগ করে আছে কেন? কি হইছে?
দিয়া কোনো কথা বললনা এবার আমি দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম — সরি দিয়া বুঝতে পারিনি কখন এতো রাত হয়ে গেলো। আর এমন হবে না।
দিয়া এবার কান্না করে দিল।
— আরে কান্না করার কি হয়েছে? কান্না করছ কেন তুমি?
— আপনার ফোন কোথায়?
— এই তো কেন কি হইছে।
এই কথা বলে ফোন পকেট থেকে বের করে দেখি ফোন বন্ধ হয়ে আছে।
— ওহ সিট সরি খেয়াল করি নাই ফোন কখন বন্ধ হয়ে গেছে।
— জানেন আমার খুব চিন্তা হচ্ছিলো আপনার জন্য।
— আর এমন হবে না এবার চলো আমরা খেয়ে নি।
দিয়া কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল। এবার আমি নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আসলাম। তারপর নিজ হাতে দিয়াকে খাইয়ে দিতে থাকলাম। দিয়া ও আমাকে খাইয়ে দিতে থাকল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা শুয়ে পড়লাম।
দিয়া হঠাৎ করে বলে উঠল — আমি আপনার বুকে মাথা রেখে সারাজীবন ঘুমাতে চাই।
— ঠিক আছে।
— আপনি কি কাল থেকে অফিসে যাবেন?
— হুম কাল থেকে অফিসে যাবো।
— হুম। একটা কথা!
— কি কথা?
— অফিসে যাওয়ার সময় কিংবা অফিসে গিয়ে কোনো মেয়ের দিকে আপনি তাকাতে পারবেন না একদম।
— যার ঘরে এমন সুন্দরী বউ আছে সে কি অন্য কারো দিকে তাকাতে পারে?
— হুম, মনে থাকে যেন!
এবার আমি দিয়ার কপালে একটা চুমু খেয়াল। তারপর দুজনে হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার ভুবনে।
তারপর আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম। দিয়া আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো দিয়া ধাক্কা খেয়ে।
— আরে কি হয়েছে? এই ভাবে ধাক্কা দিচ্ছ কেন?
— আপনি ইচ্ছে করে আমাকে আপনার বুক থেকে নামিয়ে দিলেন কেন?
— আমি কখন নামালাম?
— আপনি নামিয়ে না দিলে আমি বালিশের উপরে কি ভাবে চলে গেলাম?
— মনে হয় ঘুমের মধ্যে চলে গেছো।
তারপর দুজনে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আজকে অফিসে যাবো তাই নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিলাম একটা ব্লাক কোট পড়লাম।
দিয়া এসে বলল — আপনাকে অফিসে যেতে হবে না।
দিয়া কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম — কেন কি হইছে?
— আপনি এই কালো কোট পড়ে অফিসে যেতে পারবেনা।
— কেন? এই কোটের সমস্যা কি?
–সমস্যা আছে যদি কোনো মেয়ে আপনার প্রেমে পড়ে যায়! তখন তো আমাকে ভুলে যাবেন।
দিয়া কথা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে। আমি দিয়াকে বসলাম — পাগলি বউ একটা।
এই কথা বলে দিয়ার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে অফিসে চলে গেলাম।
এই ভাবে অফিস বাসা করতে করতে কেটে গেলো ৪ মাস এর মধ্যে আমাদের ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো। আমি বাসা না আসা অব্দি দিয়া আমার জন্য সব সময় না খেয়ে বসে থাকে। একদিন রাতে আমি আর দিয়া খাবার খেয়ে এসে খাটের উপরে এসে শুয়ে থাকলাম তখন দিয়া আমাকে বলল,
— আমার বাসায় এই ভাবে থাকতে খুব বোরিং লাগছে। সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছে না আর।
— তো!
— ভাবছি আমিও একটা চাকরি করবো। এতে আমাদের জন্য ভালো হবে। তোমাকে একাই এই পরিবার দেখতে হয় আমি যদি একটা চাকরি করি এতে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে।
— তোমাকে কষ্ট করে চাকরি করতে হবে না। তুমি বাসায় থাকো।
দিয়া অনেক জোরাজোরি করতে থাকলো এক সময় আমি দিয়ার কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
— দিয়া তুমি চাকরি করবে ঠিক আছে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে সেটা তোমাকে মেনে নিতে হবে!
— ঠিক আছে বলো কি শর্ত?
— তুমি প্রতিদিন আমার আগে বাসায় ফিরে আসতে হবে। আর রোজ রাতে আমি তোমার হাতে খাবার খাবো।
— ঠিক আছে।
তারপর আমরা দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর পর দিন থেকে আমি আর দিয়া এক সাথে বের হয়ে যাই দিয়া আমার আগেই বাসায় ফিরে আসে সব সময় আর আমাকে দিয়া নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। এই ভাবেই চলছিলো আমাদের দিন কাল এই ভাবে কেটে গেলো আরো ৬ মাস। হঠাৎ করে দিয়া কেমন জানি হয়ে গেলো। এখন সব সময় আমার পরে বাসায় ফিরে আসে৷ আমার সাথে আগের মতো কোনো কথা বলে না। এসেই ঘুমিয়ে যায়৷ আগের মতো আমার কেয়ার করেনা। এখন দিয়াকে দেখলে খুব খুব খারাপ লাগে। যে মেয়ে আমার সাথে কথা না বললে তার ঘুম আসে না সে এখন আমার আগেই ঘুমিয়ে যায়।
পরের দিন রাতে আমি অফিস থেকে এসে খাটের উপরে শুয়ে আছি। তখন রুমে দিয়া আসলো।
দিয়া রুমে এসেই,,,,,
চলবে,,