ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১৪+১৫

0
1199

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা দেখতে পেলো শুভ্র একদল লোক নিয়ে স্বরগোল করতে করতে হেটে যাচ্ছে। শুভ্র লোক গুলো কে লিড করছে। নীলা আরও ভালো করে দেখলো শুভ্র ওদের সাথে কিছু জরুরি আলোচনা করছিল। হইতো বিজনেস বিষয়ে আলোচনা হবে।

শুভ্রর দীর্ঘ রিজু দেহ দেখে নীলার মনে হলো এক পাল মুরগীর বাচ্চা আগে একটা সারস হেটে যাচ্ছে। তার নীডলি টেইলার প্যান্টস দিয়ে তার লম্বা পা দুটো ঢেকে ছিলো। আর তার বড় বড় পদক্ষেপ গুলো ছিলো স্মুদ আর এলিগেন্স!

শুভ্রর চলাফেরার মধ্যে একটা নিজস্বতা এবং চোখে উদাসীন ভাব ছিলো! যেটা শুভ্রর সুঠাম চেহেরাকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলেছিলো। যাকে বলে অন্যমাত্রায় সুন্দর দেখতে লাগছিলো!

শুভ্র ধীরে সুস্থে ডাবল ডোর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।নীলার মনে হলো শুভ্র এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে।

নীলা তারাতাড়ি করে ছুটে আসছিলো আর শুভ্রকে ডাকতে থাকে জোরে জোরে মিস্টার চৌধুরী দাঁড়ান,,, দাঁড়ান— আমার জন্য একটু দাঁড়িয়ে যান প্লিজ!

নীলার ডাক শুনে শুভ্রর কঠোর এক্সপ্রেসন চেঞ্জ হয়ে গেলো। শুভর আই ব্রু দুটো এক সাথে জোরো হয়ে কুচকে গেলো!

শুভ্র পিছনে ঘুরে দেখতে পেলো নীলা তার দিকে দৌঁড়ে আসছে। নীলা কোমরে ফিতে বাধা একটা চোটপদার পোশাক পরেছে। সে পাগলের মতো তার দিকে ছুটে আসছিলো।

শুভ্রর ভ্রু দুটো আরও বেশি কুচকে গেলো। সে দেখতে পেলো নীলার রেশমি কালো লম্বা চুল গুলো তার ফর্সা স্কিনে এমন ভাবে উছলে পরছিলো যেনো দেখে মনে হচ্ছিল সে কোনো রুপকথার রাজকন্যা!! নীলাকে আরও বেশি সুন্দরী আর পরিপাটি দেখাচ্ছিলো।

শুভ্র একটা লম্বা শ্বাস টানলো। অন্যদিকে নজর ঘুরিয়ে নিলো এবং হেটে বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকলো।

ততক্ষনে নীলা চলে এসেছে। নীলা শুভ্রর পিছনে হেটে হেটে যেতে যেতে বললো— মিস্টার চৌধুরী আমাকে একটু কলেজ ড্রপ করে দিবেন প্লিজ। গত কয়েক দিন আমি কলেজ যায়নি।

আমি কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাকে ওখানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। শুভ্র সামনের দিকে তাকিয়ে ভদ্র ভাবে উত্তর দিলো।

ওহ ওকে। আপনি কি আমাকে যাস্ট বাস স্টপ অব্দি নিয়ে যেতে পারেন। আমার গাড়ির কোনো দরকার নেই।

শুভ্র আবার ভ্রু কুচকে পিছনে ফিরে তাকালো।

তা দেখে নীলা দাঁড়িয়ে গেলো।মাথা নিচু করে আছে সে।

চৌধুরী ফ্যামিলি এতোটা গরিব নয় যে তাদের বাড়ির বউ কে ট্রান্সপর্টের পয়সা বাচানোর জন্য পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে হবে।

তার পর শুভ্র কিছুক্ষন নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো—গাড়িতে বসো আমি নামিয়ে দিচ্ছি। শুভ্র গাড়ির দরজার লক খুলে দিলো।

নীলা উঠে পরলো। শুভ্র উঠে গাড়ির সীট বেল্ট বাধতে বাধতে দেখলো নীলা সীট বেল্ট বাধে নি।
তাই বললো সীট বেল্ট পড়ে নাও।

নীলা শুভ্রর কথা শুনে নিজের সীট বেল্ট পড়ে নিলো। ছোট বেলায় যখন নীলার বাবা তাকে গাড়িতে করে স্কুল দিয়ে যেতো তখনও সে ভুলে যেতো সীট বেল্ট পরতে। ভুলে যেতো না বরং নীলা ইচ্ছা করেই নিজের সীট বেল্ট বাধতো না। যাতে নীলা তার বাবার থেকে একটু ভালোবাসা আর কেয়ারিং পেত।

তখনি শুভ্র দেখলো নীলা কিছু একটা ভাবছে। তার বললো তাহলে যাওয়া যাক!

নীলার ঘোর কাটলো সেও বললো —হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন

শুভ্র মনে মনে এটাই চাইছিলো। যেনো নীলা ওর সাথেই যায়।কিন্তু নীলাকে কোনো ক্রমেই বুঝতে দিচ্ছিলো না।

শুভ্রর গাড়িটা ছিলো বিরাট বিলাস বহুল নজর কারার মতো। যার ভেতরের সীট গুলো লেদারের তৈরি ছিলো! আর গাড়িতে সুন্দর ফ্রেশ একটা স্মেল ছিলো।

শুভ্র হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে নীলার ময়লা লাগানো জুতোর দিকে খেয়াল করলো!
তোমার জুতো গুলো এতো নোংরা কেনো? ( শুভ্র খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো)

নীলাও নিচে তাকালো আর সে একটা বিচ্ছিরি পায়ের দাগ দেখতে পেলো নিজের জুতোর উপর।

তারপর নীলা একটা এম্বারেসমেন্টে হেসে ফেললো আর বললো আমার তো এই একটাই জুতো আর কোনো জুতো নেই!!

শুভ্র বুঝতে পারলো । তাই তো নীলার আর জুতো থাকারও কথা না। সে তো এক পাটি জুতো নিয়েই এসেছে।

নীলা আবারও আপনার কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে মিস্টার চৌধুরী । এটা আমার কি দোষ আমি তো এটা ইচ্ছে করে পরিনি।এটা আমার অনলি প্যায়ার অফ সুজ!

শুভ্র নীলার দিকে তাকালো। নীলা অগোছালো ভাবে পোশাক পরে ছিলো এবং সে শুভ্র নীলার পোশাকটা ভালো করে দেখলো। এটা সেই সেইম জামাটা যেটা নীলা সেদিন বৃষ্টিতে পড়ে ভিচ্ছিলো।এবং তাকে ক্রীটিকিউলাসলী হ্যাভি দেখাচ্ছিলো।

শুভ্র নীলাকে বললো আমি তোমাকে আগে কিছু জামা কাপড় কিনে দিতে নিয়ে যাবো।

এটা শুনে নীলা সঙ্গে সঙ্গে বললো না না আমার জামা কাপড় একদম ঠিক আছে নতুন জামা কাপড়ের দরকার নেই।ইটস যাস্ট দ্যাট আমি আমার জামা কাপড় গুলো সব সঙ্গে আনতে পারিনি। দুটো এনেছি তো অতেই হয়ে যাবে।

হোয়াট? দ্যা গ্রেট বিজনেস ম্যান শুভ্র চৌধুরীর ওয়াইফ কিনা দুটো ড্রেস পরবে। হ্যাভ ইউ লস্ট ইউর সেন্স। ভ্রু কুচকে বললো শুভ্র।

বাট শুভ্র অলরেডি ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় শপিংমলে নিয়ে চলো। মেডামের জন্য ড্রেস কিনতে হবে।

ড্রাইভার ইমিডিয়েটলি গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে নিলো।

নীলা খুবই লজ্জিত বোধ করছিল। এসবের কিন্তু কোনো প্রয়োজন ছিল না মিস্টার চৌধুরী। এসব আপনার জন্য খুবই ঝামেলার হয়ে যাচ্ছে আর তাছাড়া আমার কলেজ লেট হয়ে যাচ্ছে তো।

শুভ্র নীলার জামা কাপড়ের উপর দিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।সে জানতো না নীলা কোথা থেকে এই ড্রেস কিনেছিলো।কিন্তু এটা যে বহু পুরনো আর বহু বার কাচা হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছিলো। সেটা এই ড্রেস টা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ও নিশ্চয়ই এই জামা টা প্রচুর বার পরেছে।

তোমার জামাটা ভীষণ নোংরা আমি তাকাতে পারছি না। না মানে আমি দেখেই আনকম্ফোর্টেবল ফীল করছি।

ওকে ফাইন দ্যান এতে যদি উনি আনকম্ফোর্টেবল ফীল করেন উনি যা খুশি কিনুক আমার জন্য। নীলার মনে হচ্ছিল শুভ্র হইতো ভালো ভাবছে।

হুম হুম একে বলা হয় হিসেবি হয়ে চলা বুঝলেন। এর আপনি কি জানেন।

তো তুমি সাবি হয়ে চলাফেরা করা কে হিসেবি বলে ট্রিট করছো। কিন্তু সেটা আমার হ্যাবিট নয়। শুভ্রর চোখ গুলো এজ ইউজুয়ালি নির্বিকার।

নীলা বললো ইয়েস অফকোর্স বড় লোক হওয়া তো ভালো। তাই তো এভরিডে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করতে পারেন। আমার তো আর এতো জামা কাপড় নেই। তাই আমার যা আছে আমি সেগুলোই একেক দিন ধরে অনেক দিন পরি। এটা আমি কতবার পরেছি বলে আপনার মনে হয়।

এটা দের হাজার টাকা দাম নিয়েছিল। আর আমি এটার পুরো দাম উসুল না করে তো আমি পরা ছেড়ে দিবো না। তাছাড়া এই ড্রেস টা আমাকে আমার দাদি কিনে দিয়েছিলো। তাই আমি ভালোবেসেই পরি।

শুভ্র নীলার দিকে তাকালো। আমি তো জানতাম খান ফ্যামিলি এতোটা গরিব নয়।

নীলা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হেসে বললো তাহলে আপনি আমার ব্যাপারে ভালোই খোঁজ খবর নিয়েছেন দেখছি।

ন্যাচারালি! তোমার কি মনে হয় আমি একটা মেয়েকে এমনি এমনি বিয়ে করে নিবো।তার কোনো খোঁজ খবর নেবো না।

কিহ তার মানে আপনি আমার ব্যাপারে সবটা জানতেন। আমি যে বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলাম এটাও জানতেন।

শুভ্র এবার বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছে। শুভ্র নিজের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো তোর মুখে কি কিছুই আটকায় না।বিড়বিড় করে।

কিছু বললেন মিস্টার চৌধুরী?

না না কি বলবো। আচ্ছা তুমি কি চুপ করে থাকতে পারো না।

কিন্তু আপনি কি এটা জানতে পারেন নি আমি খান বাড়ির যাস্ট একটা অবৈধ সন্তান। আমার বাবা আমাকে খান ফ্যামিলির একজন মেম্বার হিসেবে কখনো ট্রিট করেন নি।

হুম জানতাম না আগে তবে খোঁজ নিয়ে নিয়েছিলাম। আর তোমার ব্যাপারে জানা টা শুভ্র চৌধুরীর কাছে কোনো ব্যাপারই না।

জানেন মিস্টার চৌধুরী ছোট বেলা থেকে আমি আমার দাদির কাছেই থাকতাম। আমার দাদিই একমাত্র যিনি আমাকে মন থেকে স্নেহ করতেন ভালো বাসতেন।

আর একটা কথা কি জানেন ছোট বেলায় আমার সৎ বোন জীনিয়ার পুরনো জামা কাপড় পরতে দেওয়া হতো।

অই জামা কাপড় গুলো অনেক বার কাচার ফলে ছিড়ে যেতো সেগুলো দাদি আমাকে সেলাই করে দিতেন। আর যখন বড় হলাম দাদিই নিজে যা টাকা জমিয়ে রাখতেন তা দিয়ে আমার জামা কাপড় কিনে দিতেন।

ইভেন আমার যখন একটা প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছিল দাদিই আমাকে পালাতে সাহায্য করে।

কথা গুলো বলে নীলা লম্বা একটা শ্বাস ফেললো। নীলার চোখে পানি ছলছল করছিল যা সে শুভ্রর থেকে আড়াল করতে চাইছিলো।

বিস্ময়ে শুভ্রর চোখ কপালে উঠে গেলো। শুভ্রর চোখেও পানি চলে এসেছে। নীলার দিকে তাকিয়ে অর দৃষ্টি আস্তে আস্তে সেটল হলো।

শীঘ্রই তারা একটা ব্র‍্যান্ডের ফ্যাশন সো এর সামনে চলে আসলো। তারপর গাড়ি থেকে অরা দুজনেই নেমে ভেতরে প্রবেশ করলো। ——————————————————–

ড্রইংরুমে বসে আছে ইমরান খান আর রিশিকা।

রিশিকা মিস্টার খানকে বলছে নীলা যদি তোমার সম্মান এর কথা না ভেবে পালিয়ে যেতে পারে তাহলে তুমি কেন অর কথা ভাবছো ইমরান।

আহ তুমি বেশি কথা বলবে না। একটা মেয়ে তো আর এই ভাবে রাতারাতি উধাও হয়ে যাবে না।আর নীলা তো ঠিক করেছে পালিয়ে গিয়ে। তুমি একটা প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে অর বিয়ে কি করে ঠিক করলে। জীনিয়া আর মুন্নির সাথেও কি তুমি এটা করতে পারতে।

বাহ ইমরান। তোমার তো দেখছি অর জন্য একে বারে দরদ উতলে পরছে।এর আগে তো তুমিই অকে দেখতেই পারতে না।হঠাৎ এত দরদ।

হুম ঠিক বলেছো তুমি আমি মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছি।তা শুধু মাত্র তোমার কথায়। আজ যদি আমি তোমার কথা না শুনতাম তাহলে আজ এই দিন টা দেখতে হতো না।

মিস্টার খান খুবই অনুতপ্ত এই দুই মিস্টার খান নীলাকে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি।

মিসেস শাহানা খান সবটাই শুনছেন। আর টেনশনে আছেন। মেয়েটার কোথায় আছে কেমন আছে একটু যদি জানতে পারতাম। আল্লাহ মেয়েটাকে তুমি দেখো। যাতে ভালো থাকে সব সময়।

চলবে——

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৫
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা আর শুভ্র দুজনেই একটা বড় ব্র‍্যান্ডেড ফ্যাশন স্টোর এর ভেতরে প্রবেশ করলো।
ভেতরে ঢুকেই শুভ্র চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।

এবং তাদের পিছন পিছন আসা সেলসপার্সনকে বললো উনার সাইজের সমস্ত জামা কাপড় নিয়ে আসুন।
শুভ্রকে এতো খানি সিদ্ধান্ত মুলক দেখে
সেলস পার্সনের চোখ আনন্দে চকচক করে উঠলো।

সেলসপার্সন কুইকলি নীলাকে আরও ভেতরে নিয়ে গেলো।

নীলা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। এটা ওর জীবনের প্রথম বার যখন ও এক্সপেরিয়েন্স করছে বড় লোকরা কিভাবে শোপ করে। এই প্রথম নীলা এতো বড় শপিং মলে এসেছে।

নীলা ওর ড্রেস টা চেঞ্জ করে একটা বিউটিফুল স্কার্ট পরে নিলো।ওটা নীলার বডির চারপাশ টা ঘিরে রেখেছিলো!!!খুবই দারুন ভাবে অর শরীরে ড্রেস টা স্যুট করেছিলো!!! আর ইন্সটেন্টলী তার এপিয়ারেন্সটাকে দারুন ভাবে উজ্জ্বল করে তুললো।

ভেতরে গিয়ে নীলা একটা একটা করে সব গুলো জামা পড়ে দেখছিল।

সেলসপার্সনটি খুবই ভালো ব্যবহারের সাথে তাকে এসিস্ট করতে থাকলেন।

ওপর পাশে শুভ্র এলিগেন্টলি একটা চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছিলো এবং নিউস পেপার পড়ছিলো।

যদিও নীলা প্যুলাইটলি অস্বীকার করেছিলো তবুও এটা ক্লিয়ার যে সে জীবনে কখনো এরকম দৃশ্য দেখে নি!!!সে অবাক হয়ে স্টোরের চার পাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।
দেখে মনেই হচ্ছিল যে সে জীবনে কখনো ভালো জামা কাপড় পড়ে নি।

হাউ-ইভার শুভ্র যখন মাথা তুলে তাকালো নীলা তখন একটা পান্না সবুজ গাউন পড়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেটা নীলার ধবধবে ফর্সা স্কিনে খুবই সুন্দর ভাবে মানিয়েছিলো।এবং ওই ড্রেস টা প্রায় ওর গায়ের সঙ্গে মিশে গেছিলো। ওকে বর্ষার জলে ভরা একটা নদীর মতো দেখাচ্ছিলো!!! সতেজ আর উজ্জ্বল!! নীলার লম্বা কোমল পা দুটো প্রায় এক্সপোস্ট ছিলো। সবটা মিলিয়ে ওকে সুন্দর আর আকর্ষণীয় লাগছিলো। উইথ এ হিন্ড অফ কিউটনেস!!!

সেলসপার্সন মহিল টি কম্পলিমেন্ট দিতে গিয়ে হেসে বললেন এই পিস টা আপনার জন্য একদম পারফেক্ট মেডাম! আপনাকে দারুন দেখাচ্ছে।

নীলা প্রশংসা শুনে লজ্জিত বোধ করলো!!

শুভ্র এখনো নীলার দিকে তাকিয়েই আছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে ওকে এই ড্রেসটাই সত্যিই অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।

যদিও নীলা খুবই সিম্পল ভাবে চলাফেরা করে। সাধারণত ওকে অগোছালো আর আনকালচার দেখায় কিন্তু কারেন্টলী নীলা সত্যিই গ্রেসফুল আর ন্যানিসুলভ কমনীয়তায় ভরপুর দেখাচ্ছিলো!!
শুভ্র আরও বার দুয়েক নীলার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারলো না! শুভ্র যেনো আবারও নীলার প্রেমে পড়ে গেলো।

শুভ্র যখন নীলাকে মাথা ঘুরাতে দেখলো তখনী শুভ্র চট করে নিজের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিলো। শুভ্র খুবই সেটিসফায় হয়েছিলো। নীলাকে কিছুতেই বুঝতে দিলো না শুভ্র যে সে নীলার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।

সেই স্টোরের অপর পাশেই জুতা দেখতে পেলো। নীলা নিজের গাউন এর সাথে ম্যাচ করে এক জোরা জুতা নিয়ে নিলো। নীলা যথেষ্ট লম্বা তাই সে হাই হীল নিলো না।

তারপর শুভ্র একজনকে ইশারা করে বীল টা পাঠাতে বললো। এই স্টোরের যা যা জিনিস উনাকে স্যুট করে তার সব গুলো ড্রেস র‍্যাপ করে দিন আর চৌধুরী বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। শুভ্র চৌধুরী এর আগে সব সময় এই শপিং মল থেকেই শোপ করে।

নীলা পুরো দমে শকড হয়ে গেছিলো। সে শুভ্রর দিকে তাকালো। তার চোখ থেকে আলো ঠিকরে বেরচ্ছিল।

শুভ্র চৌধুরী খুবই রিচ ছিল। ন্যাচারেলী সেলসপার্সনটি খুবই খুশি ছিলেন। তিনি প্যুলাইটলি তাদের দরজা অব্দি এগিয়ে দিলেন।

তারপর সোজা নীলা কে তার কলেজ নামিয়ে দিলেন। নীলা নামতেই শুভ্র নীলার দিকে না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেন ড্রাইভারকে।।

শনশন করে গাড়ি চলে গেলো।
নীলা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এ কেমন লোক রে বাবা একটা বার তাকালো না অব্দি।ভালো মন্দ কিছুই বললো না।

নীলা আর কিছু না ভেবে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে সবাই তার দিকে তাকালো। সবাই যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা একটা পরি দেখছে আর সাথে খুবই অবাক হয়েছে। কারণ এর আগে নীলা কখনোই এরকম সোজন্যমুলক ড্রেস পরে কলেজ আসে নি।
নীলা সবার নজর উপেক্ষা করে ক্লাসে গেলো।

গিয়েই দেখলো প্রাপ্তি মন খারাপ করে বসে আছে। নীলা প্রাপ্তি কে ডাকলো।প্রথমে প্রাপ্তি অতোটা খেয়াল করেনি।যখন সে খেয়াল করলো নীলাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গেলো। এবং আনন্দে তার চোখ চিকচিক করে উঠলো। প্রাপ্তি দোঁড়ে এসে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

নীলাও প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।
কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে তারপর নীলা প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিলো।

প্রাপ্তি নীলাকে খুব নিখুঁত ভাবে দেখছিল। আর ক্লাসের বাকি সবার নজর ছিলো নীলার দিকে।কারণ তাকে আজ অন্যান্য দিনের থেকে অনেকটা মহনীয় লাগছে যা ছিলো খুবই মনোমুগ্ধকর। সবাই কে নীলার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলা কিছু টা লজ্জা পেলো!

তারপর দুজনেই বসে পরলো নিজেদের সীটে। প্রাপ্তিকে সবকিছু বললো নীলা এতো দিনে কি কি হয়েছে।

প্রাপ্তিকে দেখে মনে হচ্ছিল যেনো প্রাপ্তি আগে থেকেই সব কিছু জানতো

কারণ নীলা প্রাপ্তির মধ্যে অবাক হওয়ার মতো কোনো ভাবান্তর দেখতে পেলো না। প্রাপ্তিকে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।

প্রাপ্তি কিছু একটা ভাবছে সেটা দেখে নীলা অকে একটা ধাক্কা দিতেই প্রাপ্তির ধ্যান ফিরলো।

নীলাঃ কি রে কি ভাবছিস এতো। আমি এতো কিছু বললাম তুই তো কিছুই বললি না।

প্রাপ্তিঃ হ্যাঁ না মানে আমি তো সবটা শুনছি।তুই বল না।কি বলছিলি।

নীলাঃ সবটা তো শুনলি।এই কারণে কলেজ আসতে পারিনি।তোর নোটস গুলো দিস তো আমাকে। আর সাত দিন পর এক্সাম।জানি না কেমন হবে।

প্রাপ্তি এখনো কিছু একটা ভাবছে। অকে দেখে নীলার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না

কিরে কি হয়েছে তোর প্রাপ্তি তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে আপসেট।

নীলাকে কিছুই বুঝতে দিলে চলবে না যে আমি আগে থেকেই সব টা জানতাম।।আর কি নিয়ে আপসেট।

প্রাপ্তি নিজেকে সামলে নিয়ে বললো আরে না না তেমন কিছু না। আমি খুব খুশি হয়েছি তোর যে শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন ভালো মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে। উনাকে কে চেনে না বলতো। এই নে নোটস গুলো তুই কাভার করে নিস।

নীলাঃ ঠিক আছে। তোর ফোন টা একটু দে তো বাড়ির লেন্ড লাইনে ফোন দিব।দাদির সাথে কথা বলাটা খুব জরুরি। এসময় বাড়িতে কেউ থাকে না তাই যদি ফো্নটা ধরার সম্ভাবনা দাদির ই বেশি।আর স্যার আসতে এখনো দেরি আছে ১০ মিনিট।

প্রাপ্তি স্বাভাবিক ভাবে আলতো হেসে নীলাকে ফোন টা এগিয়ে দিলো। তারপর নীলা বাড়ির লেন্ড লাইনে ফোন দিলো একবার রিং হয়ে কেটে গেলে নীলা আবার দেই।এরপর ফোন রিসিভ হয়।

হ্যালো বলার সাথে সাথেই নীলা বুঝতে পারে যে দাদিই ফোন টা তুলেছে।

কিছুক্ষন কথা বলে দাদিকেও সবটা বললো। নীলা। দাদি খুব খুশি হয়েছে আমি ভালো আছি শুনে।

কিছুক্ষন পর স্যার ক্লাসে চলে আসলো।
তারপর প্রাপ্তি আর নীলা দুজনেই ক্লাসে মনোযোগ দিলো।

এক্সাম এর জন্য ফিজ এর কথা বললেন স্যার। নীলা আর প্রাপ্তির দুজনেই ফিজ এর কথা শুনে চিন্তায় পরে গেছে।অনেকটা ফিজ ধরেছে।

প্রাপ্তি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অর এতো টাকা ফিজ দেওয়া খুবই কষ্টের। আর তাছাড়া ওর ছোট দুজন ভাইবোন আছে।

নীলা ভাবছে কি ভাবে কি করবো।

তারপর বাকি ক্লাস গুলো করে দুজনেই বেরিয়ে আসলো।

বাইরে আসার পর নীলা আবারও খেয়াল করলো প্রাপ্তি কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে।
এবার নীলা প্রাপ্তিকে জোর করে ধরে।

নীলাঃ কি হয়েছে বলবি তুই। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুই কিছু একটা নিয়ে টেনশনে আছিস কি হয়েছে বল আমায় তুই কি আমাকে এতটা পর ভাবিস।

এইবার প্রাপ্তি আচমকা নীলাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

নীলা প্রাপ্তিকে শান্তনা দিচ্ছে কি হয়েছে তুই কাদছিস কেন বল আমায়।

প্রাপ্তি নীলাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে নিলো।

প্রাপ্তিঃ বাবা খুব অসুস্থ রে নীলা। এই স্যার এক্সাম এর জন্য এতো টাকা ফিজ কিভাবে জোগাড় করবো। আর তুই তো জানিস বাবা যে টুকু রোজগার সেটা বাবা করে । হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পরে বাবার ঔষধ কিনতে হচ্ছে কত টাকার।

এক দমে কাদতে কাদতে বললো প্রাপ্তি।

নীলাঃ ধুর পাগলি এই জন্য তুই কাদছিস। আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো। তুই কোনো চিন্তা করিস না। আর আংকেল কেমন আছেন এখন।

প্রাপ্তিঃ তুই কিভাবে ব্যবস্থা করবি তোরও তো ফিজ দিতে হবে। আর বাবা কিছু টা ভালো আছেন।

নীলাঃ তুই চিন্তা করিস না আমি সবটা ব্যবস্থা করবো।

নীলা প্রাপ্তি দুজনেই গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল তখনি অদের সামনে একটা বড় বিলাস বহুল গাড়ি এসে থামলো —-

নীলা আর প্রাপ্তি দুজনেই চমকে তাকালো। তাকিয়েই অবাক হয়ে যায় দুজনেই ——

চলবে——

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে