#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৮
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
নিলা খাবার অডার দিতে চলে গেল।নিরা আর সায়রা বসে আছে।কিছুসময় পর নিলা এসে বলল
“আপু আয়ান ভাইয়া।”
হঠাৎ আয়ানের কথা শুনে নিরা কিছুটা চমকে গেল।নিরা বলল
“কোথায় আয়ান?তুই আয়ানকে কোথায় দেখেছিস নিলা?”
“আপু ওইদিকে আয়ান ভাইয়াকে দেখিছি।একজনের সাথে কথা বলছে।”
নিরা আর কিছু না বলে নিলার দেখিয়ে দেয়া জায়গাতে ছুটে চলে গেল।সেইখানে গিয়ে দেখে আয়ান কারো সাথে কথা বলছে।নিরা কিছুটা দূর থেকেই বলল
“আয়ান!”
রেস্টুরেন্টে একজনের কিছুটা সমস্যা হয়েছে।তাই ম্যানেজারকে কথাটা বলা হয়।আর এইখানের নতুন ম্যানেজার ছিল আয়ান।তাই আয়ান গিয়ে তার সমস্যার কথা নিয়ে কথা বলছিল।তখন হঠাৎ আয়ান বলে কেউ ডাক দেয়।আয়ান পাশে তাকিয়ে দেখে নিরা দারিয়ে আছে।আয়ান নিরাকে এইখানে আশা করে নি।হঠাৎ করেই নিরা দৌড়ে গিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।আয়ান তো ভেবাচেকা খেয়ে যায়।পাবলিক প্লেসে এইভাবে নিরা আয়ানকে জড়িয়ে ধরবে সেটা আয়ানের ধারনা ছিল না।জড়িয়ে ধরা অবস্থাতে নিরা বলছে
“আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না আয়ান।আমাকে তোমার সাথে রাখো নাহলে আমি মরে যাবো।প্লিজ আয়ান।”
আশেপাশের সবাই আয়ান আর নিরা দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ানের পাশে যে লোকটা ছিল সেও কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওদের সামনে থেকে চলে গেল।আয়ান কিছুটা লজ্জায় পরে গেছে।তাই নিরাকে বলল
“আপনি পাবলিক প্লেসে এইসব কি শুরু করে দিয়েছেন?আমাকে ছাড়েন সবাই দেখছে আমাদের।”
“দেখলে দেখুক।আগে বলো তুমি আমাকে ছেড়ে আর যাবে না।”
“আগে আমাকে ছাড়ুন।আমরা অন্য কোথাও গিয়ে এই সব নিয়ে কথা বলি।এখন ছাড়ুন।”
আয়ান আর নিরা সামনাসামনি বসে আছে।নিলা আর সায়রা পাশের টেবিলে আলাদা বসেছে।নিরা বলল
“আয়ান প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা।তুমি যা বলবে আমি তাই করতে রাজি?”
“তার আগে বলেন আপনি এইখানে কি করছেন?”
“আসলে এইখানে নিলার খালার বাসা।নিলা আমাকে জোড় করে এইখানে ঘুরতে নিয়ে এসেছে।”
“বাসার সবাই কেমন আছে?”
“সবাই তোমাকে খুঁজছে।আম্মু তো প্রায় সময় তোমার জন্য কান্না করে।”
“আমার সাথে এই অবস্থাতে থাকতে পারবেন?”
“হ্যা হ্যা পারবো।তুমি যেইভাবে বলবে সেইভাবেই আমি থাকতে রাজি।তাও আমার ছেড়ে যেও না আয়ান।”
“আপনি এখন আপনার বোনদের সাথে বাসায় চলে যান।আমি আগামীকাল আপনাকে গিয়ে নিয়ে আসবো।”
“নাহ আমি কোথাও যাবো না।তোমার সাথেই থাকবো।”
“এখন আমার সাথে থাকবেন কিভাবে?এইখানে আমি কাজ করি।আর যেইখানে থাকি সেটাতে শুধু ব্যাচেলার থাকে।রাতের মধ্যে নতুন বাসা ঠিক করে আগামীকাল আপনাকে নিয়ে একেবারে উঠবো।”
“নাহ সেটা হবে না।আমি তোমাকে আর একা ছাড়ছি না।”
আয়ান শুধু নিরার দিকে তাকিয়ে আছে।ভালো করে বুঝিয়ে বলল তারপরেও কি শুরু করে দিয়েছে নিরা।পাশের টেবিলে সায়রা নিলাকে বলল
“আপু এই ভাইয়াটা বুঝি নিরা আপুর হাজব্যান্ড?”
“হ্যা কেনো? কি হয়েছে?”
“না মানে ভাইয়াটা অনেক হ্যান্ডসাম আবার কিউটও।আমার যদি এমন একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে বিয়ের জন্য আর টেনশন হত না।”
“ওই তুই এখনো ঠিক মত কলেজও শেষ করিস নি তার আগেই বিয়ে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে দিয়েছিস?আজ বাসায় চল আমি খালাকে বলছি তোকে যেন বিয়ে দিয়ে দেয়।”
“বইলো সমস্যা নেই।যদি এমন একটা ছেলের সাথে আম্মু বিয়ে দিতে চায় তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই।”
নিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।নিলা ভাবছে
“এই মেয়ের মাথাটা গেছে আয়ান ভাইয়াকে দেখে।আল্লাহ ভালো জানে ওর এখন কি হবে।”
আয়ান ভাবছে একদিনের মধ্যে বাসায় কোথা থেকে পাবে।নিরাকে তো বলে দিয়েছে নতুন বাসা নিয়ে তারপরে নিরাকে সেই বাসাতে নিবে।কিন্তু এখন বাসা পাওয়া তো মুখের কথা না।আয়ান আর কিছু না ভেবে এইখানের কয়েকজন ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে বাসার কথা বলল।
নিরা নিলা আর সায়রা বাসায় চলে এসেছে।নিরা তো আয়ানকে ছাড়া আসতেই চাচ্ছিল না।আয়ান অনেক বুঝিয়ে নিলাকে বলে নিরাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।নিলা আজ কি মনে করে আয়ানের সাথে কথা বলেছিল।কেনো বলেছিল সেটা নিলা ঠিক জানে না।বাসায় এসে প্রথমে আয়ানকে কল দিলো নিরা।রেস্টুরেন্ট থেকে আসার আগে আয়ানের থেকে ওর নতুন নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিল।
এই দিকে নিলা বাসায় এসে ওর আম্মুকে কল দিয়ে বলে দিলো আয়ানের কথা।নিলার আম্মু এই কথা শুনে খুব খুশি।আয়ানদের বাসায় সবাই খেতে বসেছে।তখন আকাশ বলল
“আব্বু আয়ানের কোনো খোজ পেলে?”
“আমি ওকে খুজি নি।তাই ওর খোজ আমার কাছে নেই।”
“আব্বু আয়ান যা করেছিল সেটা আমার সাথে করেছিল।আমি তো ওকে সেটার জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি।এখন তুমি আয়ানকে বাসায় নিয়ে এসো।”
আয়ানের আব্বু কিছু না বলে খাবার শেষ করে রুমে চলে গেল।আকাশ ওর আম্মুকে বলল
“আম্মু তুমি টেনশন করো না।আমি আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসবো।”
“কত দিন হয়ে গেল আয়ানকে দেখি না।তুই একটু ভালো করে আয়ানের খোজটা বের কর না আকাশ।”
“আম্মু আমি তো চেষ্টা করতেছি।কিন্তু আয়ান যে কোথায় গেছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
আয়ান অনেক কষ্টে একটা বাসা ঠিক করতে পেরেছে।বেশি বড় না আবার বেশি ছোট না।আয়ান আর নিরার জন্য বাসাটা মোটামুটি ঠিক আছে।পরের দিন আয়ান ছুটি নিয়েছে।সকালে উঠে নতুন বাসায় গেল সব ঠিক করতে।দুপুরে নিরা আয়ানকে কল দিলো।
“হ্যালো আয়ান! বাসায় কি ঠিক করতে পেরেছো?”
“হ্যা একটা বাসা তো পেয়েছি কিন্তু আপনার কি সেটা পছন্দ হবে কি না সেটা নিয়েই কিছুটা টেনশনে আছি।”
“আমরা ওই বাসাতে থাকতে পারলেই হবে।আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবো।”
“আচ্ছা তাহলে বিকালে রেডি হয়ে থাইকেন।আপনাকে নিতে আসবো।”
“আচ্ছা।”
রিয়াদ কয়েকবার নিলাকে কল দিচ্ছে কিন্তু নিলা কলটা রিসিভ করছে না।গত তিনদিন নিলার সাথে হয় নি রিয়াদের।রিয়াদ আবার কল দিলো নিলাকে।এবার নিলা কলটা রিসিভ করে বলল
“আপনি আজ এতবার কল দিচ্ছেন কেনো?দেখছেন যে কলটা ধরছি না।তার পরেও কেনো কল দিচ্ছেন।”
“আসলে কয়েকদিন ধরে তো আপনার সাথে কথা হয় নি।তাই আজ কথা বলার জন্য কল দিয়েছি।আচ্ছা আজ কি আপনি দেখা করতে পারবেন একটু?”
“নাহ।”
“কেনো?কি হয়েছে?”
“আমি ঢাকাতে নেই।সিলেটে এসেছি খালার বাসাতে।”
“ওহ।তা কবে আসবেন?”
“ঠিক জানি না।আপুর বাসাতে কিছুদিন থাকবো মনে হয়।তারপরে আসবো।”
“আপুর বাসাতে মানে?নিরা ভাবি কি আপনার সাথে?আর ভাবি কি ওইখানে আলাদা বাসা নিয়েছে নাকি?”
পরে নিলা আয়ানের কথা রিয়াদকে বলে দেয়।আয়ান যে এইখানে আছে সেটা শুনে রিয়াদ অনেকটা শক।রিয়াদ আর কিছু কথা বলে নিলার সাথে আবার পরে কথা বলবে বলে কলটা কেটে দিলো।নিলার সাথে কথা শেষ করে রিয়াদ ওর আপুকে রিয়াকে কল দিলো।রিয়া এখনো ওর ফুপির বাসাতেই আছে।রিয়া রিয়াদের কল রিসিভ করে বলল
“হ্যা রিয়াদ বল।”
“আপু আয়ান ভাইয়ার খোজ পাওয়া গেছে।”
“সত্যি!কোথায় এখন আয়ান?তোর সাথে ওর কোথায় দেখা হয়েছে?”
“আপু আমার সাথে দেখা হয় নি।কিন্তু নিরা ভাবি নাকি এখন আয়ান ভাইয়ার সাথেই আছে।”
“তা আয়ান এখন কোথায়?”
“সিলেটে।”
“আচ্ছা রিয়াদ আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি। আগে ফুপিকে খবরটা দিয়ে আসি।ফুপি আয়ানের কথা শুনে খুব খুশি হবে।”
“আচ্ছা আপু।”
বিকালে আয়ান সায়রাদের বাসার সামনে এসে নিরাকে কল দিয়ে নিচে আসতে বলল।নিরা রেডি হয়ে আয়ানের সাথে চলে গেল।নতুন বাসাটা নিরার কাছে খারাপ লাগে নি।নিরা বলল
“বাসাটা কিন্তু খারাপ হয় নি।আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।”
“তাড়াহুড়াতে এই বাসাটা নিয়েছি।কিছুদিন পরে ভালো একটা বাসা ঠিক করবো।ততদিন এইটা থাকেন।”
“আমার কাছে এই বাসাটাই ভালো লাগছে।”
আকাশ অফিসে বসে কাজ করছিল।তখন বাসা থেকে আকাশের কাছে কল আসলো।আকাশ কিছু না ভেবেই কলটা রিসিভ করে বলল
“হ্যা আম্মু বলো।”
“আকাশ আয়ানের খোজ পেয়েছি।তুই জলদি বাসায় আয়।”
#চলবে…