#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৪
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বলল রানা।আয়ান বলল
“নাহ তেমন কিছু না।এখন বল কি জন্য আমাকে ডেকেছিস?”
“তুই যে কাজটা ঘটিয়েছিস সেটাতে তুই কোনো সমস্যায় পড়তে নাও পাড়িস।কিন্তু বাকি যারা তোকে হেল্প করেছে তারা কিন্তু ঠিকই সমস্যাতে পরবে।”
খাবার টেবিলে নিরার আব্বু আম্মু আর নিলা বসে আছে।নিলা এইখানে খেতে আসতে চাচ্ছিল না কিন্তু নিরার জোরাজুরিতে আসতে হল।নিরার আব্বু বলল
“নিরা মা আয়ান খেতে আসতে বল।আমরা সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছি।”
“আব্বু আয়ান একটু বাইরে গেছে তোমার সবাই খেয়ে নেও।ওর আসতে মনে হয় দেড়ি হবে।”
এবার নিরার আম্মু বলল
“সে কি কথা নিরা?আয়ান আবার কখন বাইরে গেল?”
“কিছুসময় আগেই বের হয়েছে।তোমরা এখন খেয়ে নেও।”
“আগে তুই আয়ানকে ফোন দিয়ে কথা বলে জেনে নে।ওর আসতে কতক্ষণ লাগবে?”
এবার নিরা কি করবে?নিরার কাছে তো আয়ানের নাম্বার নেই।নিরা কিছু না বলে ওর আম্মুর রুমে গেল।আম্মুর ফোন থেকে যদি আয়ানের নাম্বারটা পাওয়া যায়।কিন্তু আয়ানদের বাসার শুধু একজনের নাম্বার আছে সেটা আয়ানের আম্মুর।কি করবে সেটা আর না ভেবে শাশুড়ি মার কাছে কল দিলো নিরা।
আকাশ ছাদে দারিয়ে আছে।রিয়া আকাশকে বাসার সব রুমে খুজে এবার ছাদে খুঁজতে এলো।আকাশকে ছাদে দেখে একটু দম নিয়ে নিলো।অনেকটা হাপিয়ে পরেছে রিয়া।আকাশের সামনে গিয়ে বলল
“আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা হাপিয়ে গেছি।আর আপনি এইখানে দারিয়ে আকাশ দেখেছেন?”
আকাশ একবার রিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার আগের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো।রিয়া আকাশকে অনেক কথাই বলছে কিন্তু আকাশ কিছুই বলছে না।মনে হচ্ছে রিয়া নিজের সাথেই নিজে একা একা কথা বলছে।এবার রিয়া কিছুটা রেগে গিয়ে বলল
“আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না নাকি?আমি কত কি বলছি আর আপনি একটা কথাও বলছেন না।আমার সাথে কথা বলতে মন না চাইলে বলে দিলেই পারেন।এইভাবে এড়িয়ে যাওয়ার তো কোনো মানে হয় না।”
রিয়া এতক্ষণ সামনের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিল কিন্তু যখনি আকাশের দিকে তাকালো দেখলো আকাশের চোখে জল।
রিয়াদের কাজ আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।রিয়াদ ঠিক করেছে ও নিরা ভাবির সাথে এইটা নিয়ে কথা বলবে।কারন একমাত্র নিরা ভাবিই পারবে ওকে এই বিষয়ে হেল্প করতে।এটাই রিয়াদের ধারনা।তাই ঠিক করেছে আজ কাজ শেষ করে রিয়াদ আগামীকাল ওর ফুপির বাসায় যাবে।
নিরা শাশুড়ি মার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তার থেকে আয়ানের নাম্বারটা নিয়ে নিলো।আয়ানের সাথে কথা বলে জানতে পারলো আয়ানের আসতে রাত হবে।নিরা আর তেমন কিছু বলে নি।
রাতে আয়ান বাসায় আসে।ফ্রেশ হয়ে কিছুসময় রেস্ট নিয়ে খাবার খেতে বসে সবার সাথে কিন্তু খাবার টেবিল একজন নেই।সেটা হল নিলা।নিরা নিলাকে টেবিলে না দেখতে পেয়ে বলল
“আম্মু নিলা খাবে না?ও আসছে না কেনো?”
“নিলার নাকি শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই আজ ও ডিনারটা ওর রুমেই করবে।আমি ওর খাবার রুমে দিয়ে এসেছি।এই নিয়ে তোকে টেনশন করতে হবে না।”
“তোমরা খাওয়া শুরু করো।আমি একটু নিলাকে দেখে আসি।”
নিরা খাবার রেখেই নিলার রুমে চলে গেল।কেউ আর খেলো না।সবাই চুপ করে বসে আছে।নিরা আসলে তারপরে খাবে।হঠাৎ করেই নিরার মা বলল
“বাবা আয়ান যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা বলতে পারি?”
“হ্যা আম্মু বলেন।এতে জিজ্ঞাস করার কি আছে।”
“তোমার আর নিরা মধ্যে সব কি ঠিক আছে?না মানে হঠাৎ করেই তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেল।তার মধ্যে আরো কত কি হলো।এই সব নিয়ে কি তোমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“আম্মু আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা আমি বুঝেছি।কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমাদের মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।হতে পারে একটু সময় লাগবে আমাদের নিজেদের গুছিয়ে নিতে কিন্তু তার মানে এই না আমাদের মধ্যে সমস্যা আছে।”
“কথাটা শুনে খুব ভালো লাগলো আয়ান।”
রিয়া ওর ফুপির রুমে বসে আছে।আকাশের বিষয়ে ফুপিকে কিছু বলবে।কিছুসময় পরে রিয়ার ফুপি আসলো।রিয়াকে বলল
“হ্যা রিয়া বল কি বলবি?”
“ফুপি তুমি আকাশ ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেও।”
“হঠাৎ আকাশের বিয়ের কথা বলছিস কেনো?কিছু কি হয়েছে নাকি রিয়া?”
রিয়া বিকালে ছাদে কি কি হয়েছে সেই সব কথা বুঝিয়ে বলে ফুপিকে।সব শুনে আকাশের মা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে
“আমি জানি তুই আকাশকে নিয়ে অনেক ভাবিস।আর আকাশের এই বিষয়ে আমিও ভেবেছি।ভেবেছিলাম কিছুদিন পরে তোর ফুপাকে বলল আকাশের বিয়ের কথা কিন্তু এখন দেখছি এইটা নিয়ে আগেই কথা বলতে হবে।কিন্তু মেয়ে পাবো কোথায় রিয়া?ভালো একটা মেয়েরও খোজ লাগবে নাকি?”
“খুঁজলেই আশেপাশে পেয়ে যাবে।যদি একটু ভালো করে খুজে দেখো।আর এমন মেয়েকেই নিয়ে আজবে যে তোমার ছেলেকে নিয়ে ভাবে।”
নিরা নিলার রুমে গিয়ে দেখলো নিলা শুয়ে আছে।আর খাবার গুলো টেবিলের উপর রাখা।নিরা নিলার পাশে গিয়ে বলল
“কিরে নিলা তোর নাকি শরীর খারাপ?আমাকে বলিস নি কেনো?”
“তেমন কিছু না আপু।একটু মাথাটা ব্যথা করছিল তাই শুয়ে আছি।”
“খাবার গুলো এখনো খাস নি কেনো?”
“পরে খাবো আপু।তুমি এখন খাবার খেতে যাও।”
নিরা আর কিছু না বলে হাত ধুয়ে এসে খাবার নিয়ে নিলার মুখের সামনে ধরে বলল
“নে হা কর।”
“আমি পরে খেয়ে নিবো আপু।”
“ও বুঝেছি আমি তো তোর বোন না।তাই আমার হাতে খাবি কেনো?”
খাবারটা মুখে নিয়ে নিলা বলল
“পরের বার থেকে এই কথা বললে খাওয়া অবস্থায় বলছি তোমার সাথে আর কথা বলবো না।”
“তাহলে আমার বলার সাথেসাথেই খাবারটা খেয়ে নিতে পাড়তিস।আমিও তাহলে এই কথা বলতাম না।”
মুখ গোমরা করে নিলা শুধু বলল
“হুম।”
নিলাকে খাইয়ে দিয়ে নিরা আবার ড্রয়িংরুম রুমে গেল।নিরা বলল
“আম্মু নিলাকে খাইয়ে দিয়ে আসলাম।রাতে আর ওর রুমে যাওয়া লাগবে না।”
নিরার আব্বু বলল
“আমার বড় মেয়ে না থাকলে ছোট মেয়েটার কি যে হতো আল্লাহ ভালো জানে।ওদের মা তো শুধু নিরাকে নিয়েই থাকে।”
এবার নিরার আম্মু বলল
“নিরার আব্বু এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।”
নিরা বলল
“আম্মু আব্বু এবার তোমরা থামো।বাসায় যে কেউ এসেছে সেটা মাথায় রেখো।”
নিরার আব্বু আম্মু আর কথা বলল না।খাবার খেয়ে সবাই রুমে চলে গেল।নিরা ওর রুমের সামনে ঘুরঘুর করছে কিন্তু ভিতরে যেতে চাচ্ছে না।কারন নিরা এখনো আয়ানের সামনে যেতে লজ্জা পাচ্ছে।খাবার টেবিলে আব্বু আম্মু ছিল তাই লজ্জাটা তেমন করছিল না।কিন্তু এখন তো আয়ান রুমে একা।ওর সামনে কিভাবে যাবে সেটাই ভাবছে।
আকাশের মা আকাশের আব্বুকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না।আরিফ মাহমুদ তার স্ত্রী অবস্থা বুঝতে পেরে বলল
“তুমি কি কিছু বলবে নাকি?”
“না মানে হ্যা।একটা কথা বলার ছিল।”
“হ্যা বলো কি বলবে।”
“আসলে আমি চাচ্ছিলাম রিয়াকে আকাশের বউ করতে।এখন এইখানে তোমার মতামত কি?”
“তোমার ভাই কি আকাশের সাথে রিয়ার বিয়ে দিতে রাজি হবে?”
“নিরা তুই এইভাবে রুমের বাইরে দারিয়ে আছিস কেনো?”
হঠাৎ কারো কথাতে নিরা কিছুটা চমকে গেল।পিছনে তাকিয়ে দেখে নিরার আম্মু দারিয়ে আছে।আম্মুকে দেখে আমতা আমতা করে বলল
“আস..লে আম্মু আমি আমি এক..টু পরেই..”
“তুই কি বলছিস?আর তোর কথা এইভাবে আটকিয়ে যাচ্ছে কেনো?”
“না মানে আম্মু..”
“হয়েছে আমাকে আর কিছু বলতে হবে না।এখন রুমে যা।”
নিরা মনে মনে বলছে
“কিন্তু আম্মু আমার তো রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না।আয়ানের সামনে কিভাবে যাবো।আমার তো লজ্জা করছে ওর সামনে যেতে।”
“কিরে এখনো দারিয়ে আছিস কেনো?এখনি রুমে যা।”
এবার নিরা না চাইতেও ভিতরে চলে গেল।রুমে আয়ান বসে ছিল।নিরাকে আসতে দেখে আয়ান বলল
“আপনি কি এখনো সেই বিষয়টা নিয়ে আমার উপর রেগে আছন?”
#চলবে…