ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-২+৩

0
3383

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০২_০৩
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আয়ান আর নিরা রুমের বাইরে আসতেই থমকে গেল।কারন ড্রয়িংরুমে আকাশ দারিয়ে আছে।আয়ানের রুম থেকে আয়ান আর নিরাকে একসাথে বের হতে দেখে আকাশ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ বলল

“আয়ান তোর রুমে নিরা কি করছিলো?আর তোরা একসাথে কেনো?”

আয়ান কিছু বলবে তার আগেই আকাশের মা বলল
“আয়ানের সাথে নিরার বিয়ে হয়েছে গতকাল।”

মার কথা শুনে আকাশ হতভম্ব হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ কোনো দিন ভাবেও নি ওর হবু বউের সাথে আয়ানের বিয়ে হবে।এবার আকাশ কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বলল

“আম্মু এইটা তোমরা কেনো করলে।আমার সাথে তো নিরার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।তাহলে আয়ানের সাথে কেনো নিরার বিয়ে হলো?”

এবার আকাশের আব্বু কিছুটা রেগে বলল
“তাহলে নিরার সাথে কাকে বিয়ে দিবো তোকে?তুই তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে কোথায় চলে গেলি।তখন নিরার কথা মনে ছিল না?এখন কেনো এই কথা বলছিস?”

“আব্বু আমি ইচ্ছে করে যাই নি।কেউ আমাকে কিডন্যাপ করেছিল।”

আকাশের কথা শুনে আয়ান আর নিরা অনেকটা শক।সেটা ওদের দেখেই সেটা বুঝা যাচ্ছিল।কিন্তু আরিফ মাহমুদ মানে আকাশের আব্বু বলল

“আমি এটা মানতে পারছি না তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।কিডন্যাপ করলে তো আমাদের থেকে কেউ টাকা চাইবে কিন্তু আমাদের থেকে তো কেউ টাকা চায় নি।আর তোকে দেখেও তো মনে হচ্ছে না তোর কিডন্যাপ হয়েছিল।”

সবাই এবার ভালো করে আকাশের দিকে খেয়াল করলো।আকাশকে দেখে মনে হচ্ছিল না।কিন্তু আকাশ যে মিথ্যা বলবে এমনটাও না।আকাশের মার বিশ্বাস তার ছেলে মিথ্যা বলছে না।তাই তিনি বললেন

“আমার মনে হচ্ছে আকাশ মিথ্যা বলছে না।আর মিথ্যা বলে আকাশের কি লাভ হবে?”

আকাশের আব্বু বলল
“ওর কি লাভ হবে সেটা জানি না কিন্তু আকাশ নিরাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল না সেটা আমি বুঝতে পেড়েছি।”

আকাশ বলল
“যদি আমি বিয়েটা নাই করতাম তাহলে সেটা আগেই বলে দিলাম।আমি নিরার সাথে বাকিটা জীবন একসাথে কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা আর সম্ভব হল না।”

আকাশের কথা শুনে নিরা অনেকটা আশ্চর্য হলো।কারন নিরা ভাবে নি ওকে নিয়েও কেউ এইভাবে ভাবে।নিরা আর ওইখানে না দারিয়ে রুমে ভিতরে চলে আসলো।এতক্ষণ আকাশের মামা কিছু বলে নি কিন্তু এই সব শুনে বলল

“আকাশ তুই এখন তোর রুমে যা।আমরা এইটা নিয়ে পরে কথা বলল।আর দুলাভাই এখন এইসব নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই।বাসায় অনেক মেহমান আছে।”

আরিফ সাহেব তার শ্যালকের কথা শুনে আর কিছু না বলে সবাইকে রুমে যেতে বলে।আয়ান কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু মামা ইশারাতে বলল এখন কিছু না বলতে।আকাশকে বাসায় আসতে দেখে একজন খুব খুশি।সেটা হলো আকাশের মামাতো বোন রিয়া।কারন রিয়া আকাশকে ভালোবাসে।

নিরা রুমে এসে ভাবছে
“যাকে নিয়ে মনে অনুভূতি ছিল সে আমাকে গ্রহণ করে নি।সেই খানে আকাশের থেকে কিছু আশা করাটা বোকামো ছাড়া আর কিছু না।”
এর মধ্যে আয়ান রুমে এসে পড়েছে।কিন্তু নিরার সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।আয়ান নিরাকে কিছু ভাবতে দেখে বলল

“আপনি কি ভাইয়ার কথা নিয়ে ভাবছেন?”

আয়ানের কথাতে নিরা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো আয়ান কিছু বলছে।তাই বলল

“তোমার কথাটা ঠিক বুঝলাম না।”

“বলেছি আপনি কি আকাশ ভাইয়ার কথা ভাবছেন?”

“নাহ তেমন কিছু না।”

দুজন চুপ করে বসে আছে।কিছুসময় পরে নিরা বলল

“আচ্ছা তোমার ভাই তো চেয়েছিল আমাকে বিয়ে করতে কিন্তু বিয়ে হয়ে গেল তোমার সাথে।এখন তোমার ভাইয়ের সামনে আমি কিভাবে যাবো।আমাকে দেখে হয়তো তোমার ভাইয়ের মন খারাপ হতে পারে।”

“আসলে ভাইয়ার বিষয়টা আমি ঠিক বলতে পারলাম না।আচ্ছা আমি আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে দেখি।”

আরিফ মাহমুদ রুমে বসে অনেকটা টেনশনে আছে।কারন আকাশ যাকে পছন্দ করে তার আয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে।আকাশ আর আয়ান যেহেতু একই বাসাতে থাকবে তাহলে নিরার সাথে আকাশের দেখা হবেই।এটাই আরিফ মাহমুদকে ভাবাচ্ছে।

রিয়া নাস্তা নিয়ে ফুপির কাছে গেল।রিয়াকে দেখে ওর ফুপি বলল
“রিয়া কিছু কি বলবি?আর নাস্তা কার জন্য নিয়ে এসেছিস?”

“আসলে ফুপি নাস্তাটা আকাশ ভাইয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।তুমি কি একটু দিয়ে আসবে?ওনি হয়তো এখনো নাস্তা করে নি।”

“তুই যখন নিয়ে এসেছিস তাহলে তুই নিজেই আকাশকে নাস্তাটা দিয়ে আয়।আমার এই দিকে একটু কাজ আছে।”

রিয়া মুচকি হেসে আকাশের রুমে দিকে গেল।রিয়া এটাই চেয়েছিল।রিয়া রুমের ভিতরে গিয়ে দেখলো আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।রিয়া কিছু না ভেবেই আকাশের সামনে গিয়ে বলল

“এই নিন আপনার নাস্তা।”

আকাশ মাথা তুলে দেখে রিয়া।কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল
“রিয়া তুই এখন এই সব নিয়ে যা।আমার ভালো লাগছে না।”

রিয়া আকাশের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল
“ফুপি আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে নাস্তাটা দিয়ে যেতে।আমার কোনো ঠেকা পড়েনি যে আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসবো।”

রিয়া নাস্তাটা টেবিলের উপরে রেখে চলে গেল।রিয়ার কাজ হয়ে গেছে।রিয়া আকাশকে দেখতে মন চাচ্ছিল তাই রুমে এসে নাস্তা দেয়ার নাম করে দেখে নিলো।

রুমে আনমনা হয়ে বসে আছে নিলা।গতকাল রাত থেকে কিছুই খাওয়া হয় নি।হঠাৎ নিলা মা এসে বলল

“নিলা তোর আপু আসবে আজ।চল আমার সাথে।নাস্তা করে আমাকে রান্না করতে সাহায্য করবি।”

“আপু কি একা আসবে?”

“একা কেনো আসবে।আয়ানও সাথে আসছে।”

“তুমি যাও আম্মু।আমার ভালো লাগছে না।তুমি খালাকে নিয়ে আজ রান্নাটা করো।আমাকে কেউ আর এখন ডেকো না।আমি কিছুসময় একা থাকতে চাচ্ছি।”

“জানি না তোর কি হয়েছে কিন্তু তোর আপু আসলে ওর সামনে এমন করিস না।তাহলে কিন্তু নিরার মন খারাপ হয়ে যাবে।”

কথাটা বলেই নিলার মা চলে গেল।কিভাবে এখন আয়ানের সামনে যাবে এইটা নিয়ে অনেকটা ভাবনায় পড়ে গেছে নিলা।
আয়ান ওর আব্বুর সাথে কথা শেষ করে রুমে এসে নিরাকে বলল

“আপনি রেডি হয়ে নিন।আমরা নাস্তা করার পরেই বের হচ্ছি।”

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“আপনাদের বাসায়।আব্বু বলেছে যেতে।”

“আয়ান তুমি কি মন থেকে যেতে চাচ্ছো?”

“না যাওয়ার কোনো কারন তো নেই।”

দুপুরে আকাশ বাসার সবার সাথে টেবিলে খেতে বসলো।খাবার টেবিলে আকাশের আব্বু আম্মু মামা মামি আর রিয়া আছে।কিন্তু আকাশ, আয়ান আর নিরাকে টেবিলে দেখতে পেলো না।আরিফ মাহমুদ তার ছেলে আকাশকে বলল

“তুই যাদের খুঁজছিস ওরা বাসায় নেই।”

সবাই খাবার খাওয়া বন্ধ করে আকাশের আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ বলল

“আব্বু আয়ান কোথায় গেছে?”

“আমি ওদের নিরাদের বাসায় যেতে বলেছি।যাতে তোর সাথে কথা বলতে পারি।”

“আব্বু তুমি কি বলবে সেটা আমি জানি।আমি এমন কিছু করবো না যাতে বাসায় কোনো সমস্যা হয়।আর নিরার থেকে আমি এখন থেকে দূরেই থাকবো।”

এবার রিয়া বলল
“আকাশ ভাইয়া যেহেতু বলেছে ভাবির থেকে দূরে থাকবে তাহলে এই সব নিয়ে আর কথা না বললেই ভালো।”

আকাশের মামা বলল
“দুলাভাই আকাশ যেহেতু বলে তাহলে এই সব নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো।যা হয়ে গেছে সেটা তো আর বদলানো যাবে না তাই না।”

আরিফ মাহমুদ তার শ্যালকের কথা শুনে কিছুটা গভীরভাবে বলল
“সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আকাশের কথাটা।সেটা তো ঠিক বুঝতে পারছি না।আকাশ তো বলছে ও নিরাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল তাহলে বিয়ের আগে পালিয়ে গেল কেনো?”

রিয়া বলল
“মামা ভাইয়া তো বলল ওনাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।আর আমারো তাই মনে হচ্ছে।”

রিয়ার কথাতে আকাশের আব্বু বাদে বাকিরা সহমত দেয়।এবার আকাশের আব্বু বলল
“যদি আকাশের কথা সত্যি হয় তাহলে ওকে কিডন্যাপ করেছিল কে?আর কিডন্যাপ করে কার লাভ হয়েছে?”

একটু আগেই আয়ান আর নিরা বাসায় এসেছে।নিরার আব্বু জামাই আসবে বলে অনেক কিছু বাজার করে নিয়ে এসেছে।বাসায় আসার পর থেকেই আয়ানের জামাই আদর দেখে নিরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে রুমে চলে গেল।নিরার হঠাৎ নিলার কথা মনে পড়লো।তাই নিলার রুমে গেল।কিন্তু রুম ভিতর থেকে লক করা।নিরা কিছুটা আশ্চর্য হল।কারন নিলার রুম কখনোই লক থাকে না।নিরা এবার নিলার দরজাতে ধাক্কা দিয়ে বলল

“নিলা এই নিলা।দরজাটা খুল।”

নিরার কন্ঠ শুনে না চাইতেও নিলা দরজাটা খুলে দিলো।নিরা ভিতরে গিয়ে বলল

“কিরে নিলা তুই তো কখনো দরজা লক করে রাখিস না।তাহলে আজ কি হয়েছে তোর?কিরে কিছু বলছিস না কেনো?”

“কি বলবো আপু?কি শুনতে চাও তুমি।যাকে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন ছিল তাকে তো তুমি বিয়ে করে নিলে।”

#চলবে…

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৩
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

নিরার কন্ঠ শুনে না চাইতেও নিলা দরজাটা খুলে দিলো।নিরা ভিতরে গিয়ে বলল

“কিরে নিলা তুই তো কখনো দরজা লক করে রাখিস না।তাহলে আজ কি হয়েছে তোর?কিরে কিছু বলছিস না কেনো?”

“কি বলবো আপু?কি শুনতে চাও তুমি।যাকে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন ছিল তাকে তো তুমি বিয়ে করে নিলে।”

কিন্তু নিলা এই সব কিছুই বলতে পারলো না।শুধু বলল
“নাহ আপু তেমন কিছু না।তুমি ছিলে না তো তাই একটু মন খারাপ ছিল।চেয়েছিলাম তোমার সাথে রাগ করে আর কথা বলল না কিন্তু তোমার সাথে রাগ করে থাকতে পারলাম না।”

“আমার ছোট বোনটা অনেক ভালো।সে কি আমার সাথে রাগ করে থাকতে পারে।”

কথাটা বলে নিলাকে জড়িয়ে ধরলো নিরা।নিলা মনে মনে বলছে
“আপু তোমাকে কোনো দিন সত্যি কথাটা বলতে পারবো না।ক্ষমা করে দিস আপু।”

আয়ান ড্রয়িংরুমে বসে আছে।পাশে আয়ানের শ্বশুর মানে রায়হান শিকদার।জামাই আর শ্বশুর মিলে পারিবারিক কথা বলছে নিজেদের মধ্যে।এর মধ্যে নিরার মা মানে আয়ানের শাশুড়ি ওদের গল্প করতে দেখে বলল

“নিরার আব্বু তুমি এখন কি শুরু করে দিলে।আয়ানকে এখন একটু রেস্ট করতে দেও।বাবা আয়ান তুমি নিরার রুমে গিয়ে রেস্ট নেও।কিছুসময় পরে সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।”

নিরার মা ভিতরে চলে গেল।আয়ানের শ্বশুর কিছু না বলে কোথায় যেনো গেল।কিন্তু আয়ান তো জানে না নিরার রুম কোনটা।এখন কি করবে আয়ান সেটাই ভাবছে।

রিয়া গুনগুন করে গান গাইছে।এখন আকাশকে নিয়ে রিয়ার আর তেমন একটা টেনশন নেই।হঠাৎ রিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওর ছোট ভাই রিয়াদ কল দিয়েছে।রিয়া কলটা ধরবে কি ধরবে না সেটাই ভাবছে।আসলে রিয়াদ রিয়াকে একটা কাজ দিয়েছিল কিন্তু রিয়া সেটার কথা ভুলেই গেছে।ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেল।রিয়াদ আবার কল দিলো এইবার কল রিসিভ করেই বলল

“ভাই তুই যে কাজটা করতে দিয়েছিলি সেটার কথা সত্যি ভুলে গেছি।প্লিজ রিয়াদ রাগ করিস না ভাই।”

“আমি জানতাম আপু তুই এমনি করবি।তোকে শুধু একটা মেয়ের খোজ নিতে বলেছিলাম কিন্তু তুই সেটাও পারলি না আপু।তুই শুধু আকাশ ভাইয়ের কথাই ভাবতে থাক।ছোট ভাইয়ের কথা তোর আর ভাবা লাগবে না।”

রিয়াদ কলটা কেটে দিলো।রিয়া আর কল দিলো না।কারন ভুলটা রিয়ার ছিল।বিয়ের দিন রিয়াদ একটা মেয়েকে দেখেছিল।মেয়েটাকে রিয়াদের অনেক পছন্দ হয়েছিল কিন্তু একটা জরুরি কাজ আসায় কারনে তখন বিয়ে থেকে চলে আসে।চলে আসার আগে ওর বড় বোনকে মেয়েটার ড্রেসের কালার আর গঠনরূপ বলে মেয়েটাকে খুজে বের করতে বলেছিল কিন্তু সেটা রিয়া পরে ভুলে যায়।তার জন্যই রিয়াদ কিছুটা রাগ করে কলটা কেটে দিলো।

আয়ান নিরার রুমটা খুজে পাচ্ছে না।তাই কিছু না ভাবেই ভিতরে চলে গেল।প্রথমে একটা রুম দেখলো কিন্তু এইটা তো নিরার রুম হবে না কারন রুমে প্যান্ট আর লুঙ্গি দেখতে পেয়েছে।হয়তো এইটা নিরার আব্বু আম্মুর রুম।পরের রুমে সামনে গিয়েই দেখলো নিরা ওর বোন নিলার সাথে কথা বলছে।

নিলার ইচ্ছে ছিল না নিরার সাথে কথা বলার কিন্তু নিরা যেহেতু নিজেই এসেছে তাই আর কথা না বলে থাকতে পারলো না।নিলা হঠাৎ খেয়াল করলো দরজায় আয়ান দারিয়ে আছে।আয়ানকে দেখে নিলার মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল।নিলা চাচ্ছিল না আয়ানের সাথে ওর দেখা হোক।কিন্তু ইচ্ছে না থাকার সত্তেও দেখা হয়ে গেল।নিলা আয়ানের সাথে কথা বলবে না ঠিক করে নিয়েছে।কারন নিলা আর চাচ্ছে না কষ্টটা বাড়াতে।তাই নিরাকে বলল

“আপু আয়ান ভাইয়া এসেছে।তোমায় হয়তো খুঁজছে।”

নিলার কথা শুনে নিরা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান দারিয়ে আছে।নিরা আয়ানের কাছে গিয়ে বলল

“তুমি কি কিছু বলবে?”

“আসলে আম্মু বলল আপনার রুমে গিয়ে রেস্ট করতে কিন্তু আমি তো আপনার রুম কোনটা সেটা জানি না।”

“সামনে গিয়ে ডানদিকের রুমটা আমার।তুমি রুমে যাও আমি একটু পরে আসছি।”

আয়ান আর কিছু না বলে নিরার কথা মত সেই রুমে গেল।নিরা নিলার কাছে গিয়ে বলল

“আসলে আয়ান আমার রুমটা খুজে পাচ্ছিল না।তাই আমাকে খুজছিল।”

“ওহ।তাহলে আপু তুমি এখন যাও।ভাইয়াকে গিয়ে সময় দেও।ওনি তো আর জানে না কোথায় কি রাখা আছে তাই না।নাহলে পরে আবার কিছুই খুজে পাবে না।”

“আসলেই ঠিক বলেছিস।আচ্ছা তুই থাক আমি ওকে সব দেখিয়ে দিয়ে আসি।”

“হুম।”

নিরা চলে গেল।নিলা মনে মনে বলছে
“একদিনের মধ্যেই তোমাদের মিল হয়ে গেল।আয়ানের কত খেয়াল রাখছো।আমি না হয় আয়ানকে নাই পেলাম কিন্তু তুমি ওনাকে নিয়ে সুখে থেকো আপু।তোমাদের মধ্যে আমি কখনো আসবো না”

দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে রুমে বসে আছে আকাশ।নিরার বিষয় নিয়ে ভাবছে।আকাশ তো এমনটা চায় নি।তাহলে কেনো ওর সাথে এমন হল।আর এই সব কেই বা করলো?কেনো করলো? এই সব অনেকটা ভাবাচ্ছে আকাশকে।

“আকাশ আসবো?”

হঠাৎ কারো কথা শুনে আকাশ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশের মা দারিয়ে আছে।

“ভিতরে এসে আম্মু।আর এইভাবে অনুমতি নেয়ার কি আছে?”

“তুই হয়তো কিছু ভাবছিস মনে হয়।সেটা কি আমাকে বলবি?”

“তেমন কিছু না আম্মু।আচ্ছা আম্মু তোমার কাছে কি মনে হয় এই কাজটা কে করতে পারে?”

“আমি ঠিক জানি না আকাশ।আচ্ছা আমি তোকে যেটা বলতে এসেছি।সেটা বলি আগে।”

“হুম বলো আম্মু।”

“তুই নিরাকে নিয়ে আর ভাবিস না বাবা।নিরা কিন্তু এখন তোর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।”

আকাশ কিছু বলছে না।শুধু এক ধ্যানে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশের আম্মু আবার বলল

“আগামীকাল থেকে আবার তোর আব্বুর সাথে অফিসে যাবি।অফিসের কাজ করলে দেখি কিছুটা ভালো লাগবে।”

“আচ্ছা আম্মু।”

“এখন একটু রেস্ট নে।”

আকাশের আম্মু চলে গেল।কিন্তু আকাশের চিন্তার এখনো ঠিক আগেই জায়গায় আছে।কে করতে পারে এই কাজ।আর কারই বা এতে লাভ হবে?

নিরা রুমের ভিতরে যাচ্ছিল তখনি কারো সাথে হঠাৎ ধাক্কা লেগে পরে যাবে কিন্তু কেউ নিরাকে ধরে ফেলে।নিরা খেয়াল করে দেখে আয়ান নিরার কোমর ধরে দারিয়ে আছে।যার কারনে নিরা পরে যায় নি।আয়ান নিরাকে ঠিকভাবে দাড় করিয়ে বলল

“আসলে আমার একটু তাড়া ছিল তাই খেয়াল করি নি আপনাকে।আর এইটার জন্য সরি।”

“হুম।”

নিরা অনেকটা লজ্জায় পরে গেছে।আগে কখনো এমনটা হয় নি।কিন্তু আজ হঠাৎ কি থেকে কি হলো নিরা বুঝতে পারে নি।লজ্জায় আয়ানের দিকে তাকাতে পারছে না নিরা।তাই মাথা নিচু করে শুধু হুম বলল।আয়ান নিরার অবস্থা বুঝতে পেরে বলল

“আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।কিছু প্রয়োজন হলে কল দিয়েন।”

নিরা মাথা নিচু করেই মাথা নাড়ালো।আয়ান বেড়িয়ে গেল।নিরা ভিতরে গিয়ে একা একা ভাবছে
“ইস কি হলো এটা।আয়ান কি ভাবছে আমার বিষয়ে।এখন ওর সামনে কিভাবে যাবো।কিন্তু আয়ানের ছোঁয়াতে আমার এমন লাগছিল কেনো?মন চাচ্ছিল এইভাবেই থেকে যাই।ছিঃ ছিঃ আমি এইসব কি ভাবছি।আয়ান তো আমার থেকে বয়সে ছোট ওকে নিয়ে আমি এইসব কি ভাবছি।”

রিয়াদ অনেকটা বিরক্ত নিজের উপর।কেনো যে বিয়ের দিন ওর জরুরি কাজটা পড়লো।যদি ওই দিন জরুরি কাজটা না থাকতো তাহলে অন্তত সেই মেয়েটার খোজ পেতে পারতো।কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না রিয়াদের।

রেস্টুরেন্ট এ আয়ান ওর ফ্রেন্ড রানার সাথে দেখা করতে এসেছে।রানা এখনো আসে নি।আয়ান কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা নিয়ে ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

“কিরে আয়ান তুই এইভাবে একা একা হাসছিস কেনো?তোর ভালোবাসার মানুষ কি তোর প্রেমে পড়ে গেছে নাকি?যে এমন ভাবে হাসছিস।”

চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বলল রানা।আয়ান বলল

“নাহ তেমন কিছু না।এখন বল কি জন্য আমাকে ডেকেছিস?”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে