#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#লেখনী_আলো_ইসলাম
” ৫ ”
–” আসিফ রুহির দিকে এগিয়ে আসে মুচকি হেসে। রুহিও আসিফের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।
পায়েল অনিতা হা হয়ে ওদের কান্ড দেখছে।
–” গতরাতে কিছু বললে না যে? তুমি কি আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারছো না কিউটি? আসিফের কথায় রুহি ব্যস্ত হয়ে বলে না না এমন কোনো কিছু না৷ আসলে কাল হঠাৎ করে কি হলো বুঝলাম না। আমি এফবি লগিন করতে পারছিলাম না শেষের কথাটা মাথা নিচু করে বলে রুহি।
– রুহির কথা শুনে আসিফ যেনো স্বস্তি পায়। মুখের হাসিটা আরো উজ্জ্বল হয়।
-” তার মানে তুমি আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছো। মানে আমি তোমার বন্ধু হতে পারি অতিব্যস্ততার সাথে বলে কথাটা আসিফ। আসিফের এমন উত্তেজনা দেখে রুহি মুচকি হেসে বলে রিলাক্স আসিফ সাহেব।
– আসিফ এবার আর দেরি না করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ফ্রেন্ড। রুহি একবার আসিফের দিকে আরেকবার আসিফের হাতের দিকে তাকায়। তাই দেখে আসিফ ইশারা করে বলে হাত রাখতে। রুহি লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় আসিফের দিকে।
– এটা কি হলো। আমরা কি সিনেমা দেখছি রে অনি নাকি স্বপ্ন কোনটা অবাক হয়ে বলে পায়েল রুহি আসিফের দিকে তাকিয়ে।
– আমিও কিছু বুঝতে পারসি না ইয়ার। সব কেমন ঝাপসা লাগছে। এই ছেলেটা কে। আর রুহির সাথে এমন বিহেভ করছে কেনো?
– তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড হেসে বলে আসিফ। আসিফের কথায় রুহি ভ্রু কুচকে বলে কিন্তু আপনি তো আমার সিনিয়র তাহলে ফ্রেন্ড কি করে হয় আমরা।
– নো নো কিউটি। এখন তো এটা মানবো না। আমরা তো অলরেডি বন্ধুত্ব করে ফেলেছি। আসিফের কথায় রুহি এবার ফিক করে হেসে দিয়ে বলে আমি মজা করছিলাম জাস্ট। আচ্ছা আপনি এখানে কেনো। মানে কলেজে আপনি? ভাবান্তর হয়ে বলে রুহি।।
– সারপ্রাইজ কিউটি আসিফের কথায় রুহি আরো উৎসুক হয়ে বলে বলুন না।
– বলতেই পারি তার আগে আমাকে তুমি করে বলতে হবে৷ বন্ধুকে কেউ আপনি বলে শুনেছো কখনো ।
– আসিফের কথায় রুহি হেসে বলে আমার সময় লাগবে একটু।
– উহু কোনো কথা শুনবো না৷ তুমি বলবে এখন থেকে মানে এখনি প্লিজ কিউটি এটা তোমার বন্ধুর আবদার কিউট ফেস করে বলে আসিফ।
– আচ্ছা আচ্ছা বলছি। রুহি এবার একটু থেমে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে বলে। তুমি এখানে কেনো?
– রুহির মুখে তুমি শুনে আসিফ তো বেজায় খুশি।
– আমি এই কলেজেই পড়াশোনা করছি তাই আমি এখানে হেয়ালি নিয়ে বলে আসিফ।
– আসিফের কথায় রুহি অবাক হয়ে বলে মানে?
– মানে আমি অনার্স লাস্ট ইয়ারে আছি৷ পড়াশোনার সাথে বাবার বিজনেস দেখাশোনা করছি তাই তখন আসা হয়না কলেজে।
– ওহ৷ তা আমাকে কিভাবে চেনো। হঠাৎ করে তো কেউ কাউকে ফ্রেন্ড করতে পারে না। তুমি নিশ্চয় আমাকে আগে থেকে চেনো রাইট। রুহির কথায় আসিফ একটু চুপ থেকে বলে সত্যি বলব?
– এটা আবার কেমন কথা। আমি কি মিথ্যা শুনতে চেয়েছি তোমার থেকে৷ যা বলবে অবশ্যই সত্যিই বলবে।
– না মানে তুমি যদি রাগ করো সত্যিটা জেনে তাই বললাম। আসিফ মন খারাপ করে বলে কথাটা।
– আচ্ছা বলো আমি রাগ করবো না।
– রুহির কথায় ভরসা পায় আসিফ। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে আমি তোমাকে কলেজে দেখেছিলাম অনেক আগে। তখন তোমাকে আমার ভালো লাগে৷ তারপর কাজের ব্যস্ততার জন্য আসা হয়নি কলেজে। কিন্তু তোমার খোঁজ রাখতাম আমি। তারপর তোমার এফবি একাউন্ট খুজে তোমাকে নক দিই৷
– আসিফের কথা শুনে রুহি ভ্রু কুচকে তাকায়। রুহির মনে চলছে অন্য কথা যেটা আসিফ হয়ত বুঝতে পারে। তার জন্য আসিফ বলে আমি শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে চাই তোমার কিউটি। তা বাদে আমার অন্য কোনো ইন্টেনশন নেই৷
— আসিফের কথায় রুহি যেনো স্বস্তি ফিরে পায়। আবারো মুখে হাসি এনে বলে ওহ৷ রুহির এবার অনি পায়েলের কথা মনে আসে৷ রুহি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে ওরা নিরব দর্শক হয়ে সব দেখছে৷ তবে তাদের চোখে বিষ্ময় মনে অনেক প্রশ্ন আছে সেটা রুহি খুব ভালো করে বুঝে যায়।
– চলো আমার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই বলে অনি পায়েলের সামনে নিয়ে আসে আসিফকে।
– ওরা এখনো অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে আছে।
– আমার ফ্রেন্ড অনিতা আর এ পায়েল। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এরা দুজন হাসি মুখে বলে রুহি অনিতা পায়েলকে দেখিয়ে। আসিফ ওদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে হাই আমি আসিফ।
– ওরা যেনো ঘোর থেকে বের হয় এতখনে। তারপর মুখে হাসি নিয়ে এসে বলে নাইচ টু মিট ইউ ভাইয়া।
– ভাইয়া ডাক শুনে আসিফ ভ্রু কুচকে বলে নো ভাইয়া আসিফ অনলি আসিফ ওকে। তোমরা তো রুহির ফ্রেন্ড মানে আমারও ফ্রেন্ড আজ থেকে।
– আসিফের কথা যেনো এদেরও ভালো লাগে ভীষণ। সবার সাথে আলাপ সেরে ওইখানে বসে গল্প শুরু করে চারজন। আসিফ সবার সাথে এমন ভাবে মিশে যায় যেনো অনেক আগের পরিচিত তারা।
– আসুন আসিফের পরিচয় জেনে নেওয়া যাক..
-” আসিফ খান। খান গ্রুপ অফ কোম্পানির একমাত্র উত্তরসূরী। আসিফের দুইটা বোন আছে। একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী সন্তান নিয়ে ইতালি থাকে সে। আর একটা বোন আসিফের ছোট। সবে ইন্টার এক্সাম দিবে। আসিফ পড়াশোনায় অনেক ভালো আবার বিজনেসও সামলায় তার সাথে। রোহানের পরের স্থান আসিফের কোম্পানি।
– আসিফ উচ্চতায় ৬ ফুটের কাছাকাছি। দেখতে সুন্দর তবে বেশি ফর্সা নয়। খাড়া নাক চোখ দুটি মায়া দ্বারা আবদ্ধ এমন ভাব। কলেজে অনেক মেয়ের ক্রাশ। ভালো স্টুডেন্ট আবার দেখতে সুন্দর হলে যা হয়।
-” কেটে যায় দুদিন। এই দুদিন রুহি রোহানের থেকে দূরে দূরে থেকেছে। কলেজ, ফ্রেন্ড, ফোন, নিজ ঘর এই নিয়ে সময় কেটেছে রুহির। তার সাথে সব সময় আছে আসিফ। আরো গভীর হয়ে উঠেছে তাদের বন্ধুত্ব। যদিও আসিফের দিক থেকে অন্য কিছু আছে কিন্তু রুহি অনেক ভালো বন্ধু মনে করে আসিফকে এখনো পর্যন্ত।
– রুহি ছাদে পায়চারি করছে আর হেসে হেসে কথা বলছে ফোনে আসিফের সাথে। বিকেলের আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর লাগছে তার কাছে৷ সাথে আসিফের মজার মজার কথা তো আছে।
– রুহি আসিফের সাথে কথা বলতে বলতে পিছু ঘুরতে গেলে হাত থেকে ফোন পড়ে যায় সামনে থাকা মানুষটা কে দেখে। থমকে দাঁড়ায় রুহি সাথে অনেক ভয় গ্রাস করে তাকে।
– রোহান রুহির ফোনের দিকের তাকিয়ে রুহির দিকে তাকায় এবার। রুহি রোহানকে দেখে শুকনো ঢোক গিলে বারবার।
– রোহান রুহির ফোনটা মাটি থেকে তুলে ধরলে রুহি সেটা খপ করে কেড়ে নেয় হাত থেকে। আর তাতে রোহান বিষ্মিত হয়ে তাকায়।
– রুহি এবার মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে তোতলানো মতো করে বলে তু- তুমি ভাইয়া এখানে।
– রুহির কথায় কোনো জবাব দেয় না রোহান৷ ভ্রু কুচকে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। এতে রুহির ভয়টা আরো বেড়ে যায়। কিছু শুনে ফেলেনি তো ডেভিলটা মনে মনে বলে রুহি।
– তুই এখানে কি করছিস? নিরবতা ভেঙে বলে রোহান। রোহানের কথায় রুহি মাথা নিচু করে বলে কিছু না। এমনি হাঁটতে ছিলাম ছাদে৷ অনেক সুন্দর ওয়েদার এখন।
– কার সাথে কথা বলতে ছিলি তুই? রোহানের হঠাৎ এমন প্রশ্নে চমকে উঠে রুহি। আমতাআমতা করে বলে অনির সাথে । ওই ফোন দিয়েছিলো আমাকে। রোহান সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে তাই দেখে রুহি বলে আমাকে ডাকছে ভাইয়া আমি যায়। রুহি এর একটু দাঁড়ায় না সেখানে ছুটে পালিয়ে যায় সেখান থেকে। রোহান রুহির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে আমাকে বোকা বানানো এতো সোজা নয় রুহি সোনা। এই শেখ রোহান কি জিনিস খুব শীগ্রই বুঝতে পারবে বলে রোহান কাউকে একটা ফোন লাগায়।
– নীল লেহেঙ্গা পড়ে চোখে কাজল নীল চুড়ি খোলা চুল সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে রুহিকে। নীল পরী লাগছে যেনো তাকে। রোহানই এই লেহেঙ্গাটা পছন্দ করে নিয়ে এসেছিলো রুহির জন্য । যদিও কখনো পড়া হয়নি তার। আজ রুহি এটা পড়েছে বিয়ে উপলক্ষে। তাদের কোনো এক রিলেটিভের মেয়ের বিয়ে৷ যার জন্য সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে৷ বাড়ির সবাই অনেক আগেই চলে গেছে। একটা কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিলো রুহিকে। যার জন্য রুহিকে রেখে চলে যায় তারা। মুলত রুহি বলেছিলো তাদের চলে যাওয়ার জন্য। পরে একাই যেতে পারবে রুহি বাড়ির গাড়ি নিয়ে। তাই আর কেউ দ্বিমত করেনি।
– লেহেঙ্গার পেছনের হুক লাগাতে গিয়ে হিমশিম খায় রুহি৷ অনেক চেষ্টা করেও লাগাতে পারে না সে। বিরক্ত নিয়ে বসে পড়ে রুহি। দেরি হয়ে যাচ্ছে তার উপর এই হুক লাগছে না। রুহি এবার গলা ফাটিয়ে নাসিমাকে ডাকতে থাকে। রুহির বাড়ির কাজের মেয়ে। রুহির বয়সি প্রায় মেয়েটা।
– রুহি অনেকখন ডাকার পরও কারো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। রুহি এবার চরম বিরক্ত নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে দেখার জন্য । রুহির ঘর ক্রস করে সিড়ির কাছে এসে দাঁড়ায় তখনই রোহান সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। তাই দেখে রুহি সেখানেই থমকে দাঁড়ায় পিঠের দিকটা আড়াল করে। রোহান সামনে রুহিকে দেখে থেমে যায়। এক অচেনা মায়ায় আবদ্ধ হয়ে যায় যেনো রোহান। রুহিকে অসাধারণ সুন্দর লাগছে নীল লেহেঙ্গাটায়।
– রোহানকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পায় রুহি। মুচকি হেসে মাথা নামিয়ে নেয়। আর রোহান সে যেনো এক অন্য ঘোরের মধ্যে আছে।
– বেশ কিছুখন পর রোহানকে একই ভাবে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে আসে রুহির। হাত দিয়ে বারবার লেহেঙ্গা ঠিক করতে থাকে। সামনে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দেয় বারবার।
– রুহি এবার জোরে করে ভাইয়া বলে ডেকে উঠে। তাতে রোহানের ঘোর কাটে।
– রোহান নিজেলে সামলে নিয়ে বলে এমন সং সেঁজে দাড়িয়ে আছিস কেনো এখানে?
– রোহানের কথায় মন খারাপ হয় রুহির। তারপরও যেনো পাত্তা দেয় না রোহানের কথা। ডেভিলটার মুখ দিয়ে কখনো প্রশংসা আসে না। খারুস কোথাকার। সাঁজের তুই কি বুঝিস রে হুহ। এত সুন্দর সাজকে তার সং মনে হচ্ছে বলে ভেংচি কাটে রুহি মনে মনে। রুহির হঠাৎ মনে আসে তার লেহেঙ্গার হুকের কথা। যেটার জন্য তার বাইরে আসা। রুহি রোহানকে ছেড়ে আবার নাসিমা কে ডাকতে থাকে। তাই দেখে রোহান কানে হাত দিয়ে বলে স্টপ ইডিয়ট। এমন ষাড়ের মতো চিৎকার করছিস কনো।
– রোহানের ধমকে চুপ হয়ে যায় রুহি। নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে আমার একটু দরকার ছিলো নাসিমার সাথে। কিন্তু কোথায় গেছে পাচ্ছি না। সে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি ওকে।
– নাসিমা একটু বাইরে গেছে। আসতে দেরি হবে ওর। কি দরকার আমাকে বল৷ আসলে আমি বলে দেবোনি ওকে। রোহানের কথায় চমকে উঠে রুহি। এহহ বলে থেমে যায় মুখে হাত দিয়ে । তাই দেখে রোহান গম্ভীর হয়ে বলে হোয়াট।
– রুহি মাথা ঝাকিয়ে বলে কিছু না। কিন্তু মনে মনে বলে অন্য কথা।
– একি ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা। এখন আমি বের হবো কি করে। চেঞ্জ করতে গেলেও তো অনেকটা সময় লেগে যাবে। এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। উফফ ঝামেলা শুধু আমাকেই দেখতে পায়।
– রুহিকে এমন অস্থির হতে দেখে রোহান বলে এমন করছিস কেনো। কি সমস্যা। আর তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে কি করিস৷ তোর না বিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা?
– রুহি মুখে হাসি নিয়ে এসে বলে এইতো যাবো এখনই যাবো৷ তুমি যাও না তোমার ঘরে। আমি যাচ্ছি। রোহান আর কথা না বাড়িয়ে সত্যি তার ঘরের দিকে হাঁটা দেয়৷ এর সাথে বকে কাজ নেই তার৷ মাঝে মাঝে পাগল করে দেয় সবাইকে। রুহি তো পড়ে যায় বিশাল ভাবনায়। কি করবে তা নিয়ে। রোহান রুহিকে পার করে একটু গিয়ে থেমে যায়৷ পিছু ঘুরে রুহিকে দেখতেই রোহানে চোখে পড়ে রুহির উন্মুক্ত পিঠ। আর তাতে রোহানের বুঝতে বাকি নেই রুহি কেনো নাসিমাকে এতো খুজতে ছিলো। রোহান কিছু একটা ভেবে রুহির দিকে এগিয়ে যায় । আর রুহি তার ভাবনায় মত্ত হয়ে আছে।
চলবে….
( ❌কপি করা নিষেধ ❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)