ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০১

0
4847

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#সূচনা_পর্ব
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

“আকাশের সাথে তোর বিয়েটা আর হচ্ছে না।আকাশ নাকি গতকাল রাতেই পালিয়েছে।তাই আকাশের ছোট ভাই আয়ানের সাথে তোর বিয়ে হবে।”

বিয়ের জন্য সাজছিল নিরা।তখনি নিরার মা এসে কথাটা বলল।নিরার মার কথা শুনে পার্লার থেকে আসা মেয়ে গুলো নিরার মার দিকে তাকিয়ে আছে।নিরা কিছুসময় চুপ থেকে বলল

“আপনার চুপচাপ দারিয়ে আছেন কেনো?আম্মু কি বলেছে শুনেন নি?বিয়ে তো হচ্ছে।এমন তো না যে বিয়েটা হচ্ছে না তাই না।”

নিরার কথা শুনে পার্লারের মেয়ে গুলো আবার নিজেদের কাজ করতে লাগলো।নিরার মা নিরার কথা শুনে খুশি হয়ে রুম থেকে চলে আসলো।রুমের বাইরে নিরার আব্বু রায়হান শিকদার দারিয়ে ছিল।নিরার মা বাইরে আসতেই তিনি বলল

“তুমি কিভাবে পারলে ওনাদের কথাতে রাজি হতে?একে তো আকাশের ছোট ভাই আয়ানের সাথে নিরার বিয়ে দিচ্ছো।তার মধ্যে আয়ান নিরার থেকে বয়সে ছোট।নিজের মেয়ে হলে কি ওর সাথে তুমি এমনটা করতে পারতে?”

“দেখো নিরার আব্বু, তোমাকে আজ শেষ বারের মত বলে দিচ্ছি।এই কথাটা আর যেনো তোমার মুখ থেকে না শুনি।নিরার যখন দেড় মাস বয়স তখন থেকে আমি ওকে নিজের মেয়ের মত লালনপালন করছি।তাই আমার মেয়ের কিসে ভালো আর কিসে খারাপ হবে সেটা আমার থেকে ভালো কেউ আর বুঝবে না।আর আয়ানের কথা বলছো? নিরার থেকে মাত্র এক বছরের ছোট।তাতে সমস্যা কোথায়?”

রায়হান শিকদার তার স্ত্রীর কথা শুনে চুপ করে থাকলো।কারন এখন তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই সেটা সে বুঝতে পেড়েছে।তাই তিনি বিয়ের আয়োজন করতে চলে গেলেন।বর যে চেঞ্জ হয়েছে সেটা শুধু নিরার আব্বু আম্মু আর নিরা জানে।নিরাদের বাসার বাকিদের এই বিষয়ে এখনো কিছু বলা হয় নি।

আরিফ মাহমুদ তার ছোট ছেলে আয়ানের রুমে গেছে।কারন আয়ানের সাথে একবার কথা বলে নেয়া দরকার।রুমে গিয়ে আয়ানকে বলল

“আয়ান তোর কি এই বিয়েতে কোনো আপত্তি আছে?”

“না আব্বু।তুমি আর আম্মু যখন চাচ্ছো ওনার(নিরার) সাথে আমার বিয়ে দিতে তাহলে সেটাই হবে।”

“আসলে নিরা মেয়েটা অনেক ভালো।তোর আম্মুর অনেক পছন্দ মেয়েটাকে।এখন যদি তুই বিয়েটা না করিস তাহলে নিরা আমাদের বাড়ির বউ হতে পারবে না।”

রুমে বাইরে থেকে এই সব শুনে আয়ানের মামাতো বোন রিয়া খুব খুশি।কারন আকাশের বিয়েটা নিরার সাথে হচ্ছে না।

নিরার ছোট বোন নিলা খুব সুন্দর করে সাজছে।কারন আজ নিলা তার ক্রাশের সাথে দেখা করবে।একটু পরপর নিজেকে আয়নাতে দেখছে আর নিজের মধ্যে কোনো কমতি আছে কি না সেটা দেখছে।
নিরার বিয়েতে আর বেশি সময় বাকি নেই।বারোটা বেজে গেছে।একটু পরেই আয়ানদের বাসা থেকে সবাই এসে পরবে।তাই রায়হান সাহেব আরিফ সাহেবকে কল দিয়ে জেনে নিলো আর কতক্ষণ সময় লাগবে।

আয়ান আর নিরা বিয়ের স্টেজে বসে আছে।নিরার রিলেটিভরা নিরার সাথে আয়ানকে দেখে অনেকটা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে।সবাই নিজেদের মধ্যে কানাকানি করছে।তখন নিলা আয়ানকে দেখে প্রায় পাগল পাগল অবস্থা।নিজের ক্রাশকে বর সেজে দেখে নিলা প্রায় শেষ।সবাইকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিরার মা অন্য একভাবে বুঝিয়ে বলল।নিলা কথাটা শুনে কষ্ট আর দুঃখে বিয়ে থেকে বাসায় চলে গেল।

বিয়েটা হয়ে গেল।আর কিছুসময় পরে নিরা তার নতুন পরিবারে যাবে।বিয়েতে যারা নিরার রিলেটিভ ছিল তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল নিরাকে নিয়ে।

“দেখেছেন কেমন মেয়ে?নিজের বরের ছোট ভাইকে বিয়ে করে নিলো।কেমন নির্লজ্জ মেয়ে।”

“এইটা তো হিসেবে নিরার দেবর হতো।কিন্তু নিরা কিভাবে এই ছেলে বিয়ে করতে পারবো?”

“শুনেছিলাম এই ছেলে নিরার থেকে বয়সে ছোট।আর পরিবারও কেমন?মেয়ের থেকে বয়সে ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিলো।”

“সৎ মা বলেই নিরার থেকে বয়সে ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে।যদি নিজের মেয়ে হত তাহলে নিরার সাথে এমনটা করতে পারতো না।”

নিজের রিলেটিভ থেকে এমন কথা শুনে নিরা ভিতরে ভিতরে অনেকটা আপসেট।কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দিলো না।নিরারও যে বিয়েতে মত ছিল এমনটা না।নিরার আম্মু যেহেতু বিয়েটা ঠিক করেছে তাই সে দ্বিমত করে নি।কিন্তু কোনো দিন ভাবে নি নিজের থেকে বয়সে ছোট ছেলের সাথে বিয়ে হবে।

নিজের বাসর ঘরে বসে আছে নিরা।কিন্তু নিরার আজ এই রুমে থাকার কথা ছিল না।অন্য রুমে থাকার কথা ছিল।নিরা আকাশকে নিয়ে তেমন একটা ভাবছে না।কারন আকাশের সাথে নিরার তেমন একটা কথা হয় নি।আর আকাশকে দেখেছিল মাত্র একদিন।যে দিন নিরাকে ওরা দেখতে এসেছি।

আরিফ মাহমুদ আর তার স্ত্রী এখন আকাশকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।কারন আকাশ কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না।আকাশের আম্মু বলল

“তুমি কি কোনো খোজ পেলে আকাশের?”

“নাহ।গতকাল রাত থেকেই লোক লাগিয়েছি কিন্তু কেউ এখনো খোজ পায় নি।”

“নাকি আকাশের কোনো বড় রকমের বিপদ হয়েছে?”

“আরে এই সব কি বলো?আকাশের কিছু হবে না।আমি ঠিকই আকাশকে খুঁজে নিয়ে আসবো।তুমি এইসব নিয়ে বেশি টেনশন করো না।”

আকাশ মা আর কিছু বললেন না।তার স্বামী যেহেতু বলেছে আকাশকে খুজে নিয়ে আসবে তাহলে আকাশকে সে ঠিকই নিয়ে আসবে।

“নিলা!এই নিলা! সেই এখন থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছিস মা।এবার তো দরজাটা খুল।”

তখন নিরার পাশে আয়ানকে দেখে নিলা বিয়ের স্টেজ থেকে চলে আসে।বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে অনেক কান্না করে।নিলা ভাবে নি নিজের ক্রাশের সাথে ওর আপুর বিয়ে হবে।আয়ানকে নিয়ে কত কি ভেবেছিল নিলা কিন্তু এখন সব শেষ।রাতেও রুমে বসে আয়ানের কথা ভাবছিল আর কান্না করছিল।তখনি নিলার মা এসে কথা গুলো বলল।নিলা চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দিয়ে খাটে এসে আবার শুয়ে পরলো।নিলার মা নিলার পাশে বসে বলল

“কি হয়েছে নিলা?এইভাবে শুয়ে আছিস কেনো?উঠে বস।আমার দিকে তাকা।”

“কি হয়েছে।”

নিলা উঠে বসতেই নিলার মা নিলার চেহারা দেখে বলল
“কিরে নিলা তুই চেহারার এই কি অবস্থা করেছিস কেনো?”কি হয়ে আমাকে বল মা?”

“কিছু হয় নি আম্মু।”

“নিরার কথা মনে পড়ছে?আরে এতে মন খারাপের কি আছে।নিরা কি একেবারের জন্য চলে গেছে নাকি।যখন মন চাইবে আয়ানদের বাসা থেকে ঘুরে আসবি।এই সব নিয়ে মন খারাপ করতে নেই।”

নিলা কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।নিলার মা মনে করছে নিলা ওর বোনের জন্য কান্না করছে কিন্তু এমন না।নিলা আয়ানকে হারিয়ে ফেলার কারনে কান্না করছে।

সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আয়ানের রিলেটিভরা নিরাকে দেখা শেষ হয় নি।আয়ানের মা এসে সব রিলেটিভদের বুঝিয়ে রুম থেকে নিয়ে গেল।
নিরা এখন রুমে একা।কিছুসময় পরে আয়ান রুমে আসলো।খাটের সামনে আসতেই নিরা নিচে এসে আয়ানকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাচ্ছিল তখন আয়ান বলল

“এটা আপনি কি করছেন?আপনি প্লিজ এই সব করবেন না।”

এই প্রথম নিরার সাথে আয়ান কথা বলল।এর আগে আয়ান নিরার সাথে বা নিরা আয়ানের সাথে কথা বলে নি।কথা বলে নি সেটা ভুল হবে।কথা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না।কিন্তু এখন ওরা স্বামী স্ত্রী।আয়ানের কথা শুনে নিরা পা না ছুঁয়ে খাটে গিয়ে আগের মত বসে পড়লো।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে এবার খাটে এসে বসলো।দুই জনের মধ্যে কিছুটা নিরবতা।আয়ান এবার নিজে থেকে বলল

“আমাদের বিয়েতে আপনি খুশি না তাই না?”

“আপনি নিজে কি আমাকে বিয়ে করে খুশি?নিজের থেকে বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করে কোনো ছেলেই খুশি হয় না।আপনারও হয়তো ইচ্ছে ছিল সুন্দর একটা কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করার কিন্তু আমার জন্য সেটা আর হয় নি।”

“আপনি নিজেই বলছেন আমি আপনার ছোট আবার নিজেই আমাকে আপনি করে বলছেন।এটা তো ঠিক না।আমাকে তুমি করে বলবেন।”

নিরা কিছু বলছে না।আয়ানের কথাটা তো ঠিকই।আয়ান আবার বলল

“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।এইসব নিয়ে তো আর ঘুমাতে পারবেন না।”

নিরা আয়ানকে কিছু না বলে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আয়ান ঘুমিয়ে গেছে।আর খাটের মাঝখানে কোলবালিশ দেয়া।আয়ানের দিকে তাকিয়ে নিরা মনে মনে বলছে

“তুমি আমার থেকে বয়সে বড় হলে না কেনো আয়ান?”

আয়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিরা শুয়ে পরলো।কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিরা তা জানে না।
সকালে রুমের বাইরে থেকে কিছুটা চেঁচামেচির শব্দ হচ্ছিল।নিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে আয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে।আয়ানকে ডাক দিয়ে নিরা গোসল করতে চলে গেল।যদিও ওদের মধ্যে কিছুই হয় নি।রুমে এসে দেখে আয়ান আবার আগের মত ঘুমাচ্ছে।তাই এবার আয়ানের কাছে গিয়ে বলল

“আয়ান উঠে পড়ো।বাইরে কিছু মনে হয় হয়েছে।গোসল করে তাড়াতাড়ি বাইরে এসো।”

আয়ান নিরার দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেল।এর মধ্যে নিরা ঘরটা গুছিয়ে নিলো।আয়ান বের হতেই নিরা বলল

“এখন কি বাইরে যাবে?”

“হুম চলেন।সেই কখন থেকে চেঁচামেচি হচ্ছে।গিয়ে দেখি কি হয়েছে।”

আয়ান আর নিরা রুমের বাইরে আসতেই থমকে গেল।কারন ড্রয়িংরুমে আকাশ দারিয়ে আছে।আয়ানের রুম থেকে আয়ান আর নিরাকে একসাথে বের হতে দেখে আকাশ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ বলল

“আয়ান তোর রুমে নিরা কি করছিলো?আর তোরা একসাথে কেনো?”

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে