ভালোবাসার রং পর্ব-০১ | You are my Life line

0
7742

# ভালোবাসার রং (❣️You are my Life line ❣️)
# Part 1
# Ishita Rahman Sanjida (Simran)

বিয়ের আসরে বসে থাকা অবস্থায় যদি কোন মেয়ে খবর পায় তার হবু বর পালিয়েছে তখন তার মন খারাপ হয়ে যায়,,,,, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে উরাধুরা ড্যান্স করি,,,,,
একটু আগে ফুপি এসে বলল আমার হবু বর নাকি পালিয়েছে,,,,, বাড়ির সবার মন খারাপ শুধু আমার বাদে,,,, আমার তো ইচ্ছে করছে ল্যাহেঙ্গা খুলে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে,,,, বাড়ির সব মিউজিক বক্স বন্ধ,,,,ব্যান্ড পার্টি সবাই হাত পা গুটিয়ে বসে আছে,,,, কিন্তু আমার মনের মধ্যে মিউজিক বক্স আর ব্যান্ড বাজতেছে,,,,,,
আর আমার এতো খুশির কারণ হলো আমার বয়ফ্রেন্ড আছে,,,, একবছরের সম্পর্ক আমাদের,,,,, বাবাকে ওর কথা বলতে পারিনি কারণ ও বেকার,,,, কিছুই করে না,,,, আর প্রেম ভালোবাসা বাবা একটু ও পছন্দ করে না,,,, বাবাকে আমি খুব ভালোবাসি আর ভয়ও করি,,,,তাই তার কথামতোই পছন্দ করা পাত্র কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই,,,,,সব বাবারাই চায় তার মেয়ে বড় ঘরে যাক,,, সুখে শান্তিতে থাকুক,,,, আর যে ছেলেকে আমার বাবা পছন্দ করেছেন সে দেখতে ভালো,,,, বাবার বিজনেস চালাচ্ছে মোটামুটি ভালো পজিশনে আছে তাই বাবা ওই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল,,,, কিন্তু কে জানত যে বর বিয়ের দিন পালাবে,,,,,,

যাই হোক এখন আমি মুখটা একটু কালো করে বসে আছি কারণ এখন আমাকে এই নাটকই করতে হবে,,,, আমি যে খুশি সেটা কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না,,,,, কিন্তু মনে মনে তো আমি খুব খুশি,,,,কাজিনরা আমার পাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে,,,, ওদের শান্তনায় আমার কি হবে,,,,???? আমি আমার খুশি কিছুতেই ধরে রাখতে পারছি না,,,, ইচ্ছে করছে এখনই সোহানকে কল করে সব বলে দেই তাহলে খুশিটা একটু দমে যাবে,,,,,

কিন্তু আমার এই খুশি ছিল ক্ষণস্থায়ীর জন্য,,,,, ঠিক তখনই আমার হবু শ্বশুর মশাই আর আমার বাবা এসে আমার খুশিতে গরম পানি ঢেলে আমার সব খুশি সেদ্ধ করে তারপর খুশিগুলো ভর্তা বানিয়ে দিল,,,,,

আমি যখন কাজিন দের সাথে বসেছিলাম তখন আমার বাবা আর আমার হবু শ্বশুর মশাই এসে সবাইকে বের করে দিল,,,,তার পর আমার হবু শ্বশুর আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে কেঁদে দিল,,,, আমার খুব মায়া হচ্ছে তার কান্নাভরা মুখটা দেখে,,,,, অসহায় ভাবে তিনি আমাকে বললেন,,,,,

শ্বশুর: দেখ মা তুমি তো সব জানো,,,,যে রাকিব পালিয়েছে,,,, এর জন্য আমি খুব লজ্জিত,,,, তোমার জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হতে চলেছে,,,,,( আমি মনে মনে ভাবলাম এও বুঝি আমাকে শান্তনা দিতে এসেছে) কিন্তু আমি সেটা হতে দিব না,,,, তাই আমরা দুই পরিবার মিলে ঠিক করেছি তোমার সাথে আকিবের বিয়ে দিব,,,,,
কথাটা শোনার পর আমার মাথায় সাত আসমান ভেঙে পড়ল,,,, আমি কিছুই বলতে পারছি না,,,, কি বলব মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না,,,,
শ্বশুর: দেখো মা,,,,আমাদের দুই পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য এটা করতে হবে,,,, আর তুমি তো আকিব কে খুব ভালো করেই চেনো,,,,ও খুব ভালো ছেলে,,,,সেটা তুমি জানো,,, এখন আমি তোমার মতামত জানতে চাই,,,, তুমি যদি রাজি না হও তাহলে বিয়েটা হবে না,,,,

আমার তো রিতিমত শরীর কাঁপছে,,,, তার পর ও নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বাবাকে বললাম,,,

__ আব্বু তুমি কি চাও আমি এই বিয়েটা করি,,
বাবা: এই সব কিছু তোর উপরে ডিপেন্ড করছে,,,, তুই যদি আমার সম্মান বাঁচাতে চাস তবে রাজি হয়ে যা,,,,,

এর পর আমার রাজি না হয়ে উপায় নেই,,, আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম ওনারা দুজনে চলে গেল,,,,

এতো কিছুর মধ্যে পরিচয় দিতে ভুলে গেছি,,
আমি আহিয়া তাসনিম আনহা,,,, এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী,,,,,, আর যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার নাম,,,হলো,, রাফসান আদনান রাকিব,,,,,ওনি এবার নিজের বাবার বিজনেস দেখছেন,,,, আর ওনার ছোট ভাইয়ের নাম হলো,,,, আরিয়ান আদনান আকিব,,,,,ও এবার অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র,,,,,পড়ালেখা শেষের পথে,,,,

হ্যা আপনারা ঠিকই ধরেছেন,,,,, আমার বর পালিয়েছে তাই আমাকে হবু দেবরকে বিয়ে করতে হবে,,,, কিন্তু আমি চিন্তা করছি আকিব এই বিয়ে করতে রাজি হলো কেন,,,,মানে আকিবের তো গার্লফ্রেন্ড আছে,,,,রিধি,,,,, তার পর ও আকিব রাজি হলো কিভাবে,,, এভারেস্টের পাহাড় পরিমান চিন্তা আমার মাথায় চাপছে,,,,,,

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আমার বিয়ে ঠিক হয় আজ থেকে দুই মাস আগে,,,,,রাকিবের বাবা মা আমাকে পছন্দ করে,,,, তারপর আমাকে আংটি পরিয়ে রাখে কারণ সেই সময় রাকিব বিদেশে ছিল একটা কাজের জন্য,,,,তাই,,,, আংটি পরানোর দিন আকিব এসেছিল,,,, আকিবের সাথে আমার সেদিন পরিচয় হয়,,,,, খুব ভালো একটা ছেলে ও,,,, আমাকে যথেষ্ট সম্মান করত,,,,, কখনো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি,,,বড় কথা হলো আকিব আর আমি একই ভার্সিটি তে পড়ি,,,,তাই ও প্রতিদিন আমাকে ওর বাইকে করে নিয়ে যেত আর দিয়ে যেত,,,,, এতে আমাদের সম্পর্ক টা আরো ভালো হয়,,,,,আকিব আমাকে ওর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়,,, এমনকি ওর গার্লফ্রেন্ড রিধির সাথে ও পরিচয় করিয়ে দেয়,,,,,

আমার কাজিনরা আকিবকে দেখে পুরাই ফিদা,,, ওরা আমাকে বলত আনহা তুই যেমন সুন্দর বর পেয়েছিস তেমন সুন্দর দেবর পেয়েছিস,,,,, কিন্তু তখন কে জানত এই দেবরই আমার বর হবে,,,,

হাতের মেহেদির দিকে তাকিয়ে আছি,,,,, আকিবের নামটা আমার হাতে চকচক করছে তাহলে কি আকিব ই ছিল আমার ভাগ্যে,,,, মেহেদির অনুষ্ঠান এর দিন আকিব এসে আমার এক হাতে ওর নাম লিখে দিয়ে বলেছিল শুধু ভাইয়ার নাম লিখলে হবে না ওর নামটাও লিখতে হবে,,,, আমি ওর কথায় শুধু মুচকি হেসে ছিলাম,,,,যদিও অপর হাতে রাকিবের নামটা লেখা হয়েছিল,,,,, কিন্তু ওই হাতে মেহেদির রঙ ওঠে নি,,,,কেমন যেন ফ্যাকাসে একটা রঙ হয়েছে,,,,, কিন্তু যে হাতে আকিবের নাম লেখা আছে সেই হাতে মেহেদির রঙটা অনেক গাঢ় হয়েছিল,,,,, এটা দেখে সব কাজিনরা বলেছিল,,,একি আনহা,,তোর দেবরের নামটা চকচক করছে,,, তুই কি দেবরকে বিয়ে করবি নাকি,,,, আরেকজন বলল,,,, হুম তাই হলে ভালো হয় কারণ আনহার নামটাও ওর বরের সাথে ম্যাচ করেনি,,,,আকিবের সাথে ম্যাচ করেছে,,,,, বলেই সবাই হেসে উঠলো,,,, আমি কিছুই বলিনি ওদের,,,,কারণ ওরা মজা করছিল,,,, আমি শুধু বলেছিলাম মেহেদি টা বোধ হয় ডেট ফেল তাই এইরকম রং হয়েছে,,,

হঠাৎ ফুপির ঠেলায় আমি অতিত থেকে বাস্তবে ফিরে আসি,,,,,

ফুপি: কি রে আনহা কবুল বল,,,,,

আমি: হা,,,,???? তার মানে অর্ধেক বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে,,, এখন শুধু আমার কবুল বলার পালা,,,, আর আমি এসবের কিছুই শুনিনি এতক্ষণ ধরে ঘোরের মধ্যে ছিলাম,,,,,, (মনে মনে)

ফুপি: আনহা কি হয়েছে,,,, কবুল বল,,, (আবার ঠেলা মেরে)

কি আর করার,,,, দিলাম কবুল বলে,,,,, সবাই চলে গেলে আমি পাথর হয়ে বসে আছি,,,, কাঁদতে ও পারছি না,,, কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর,,,,, আমি পাথর হয়ে গেছি,,,, কাজিনরা এসে আমার পাশে বসে বকবক করতেছে,,,,এটা কি হলো কিভাবে হলো হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান ইত্যাদি ইত্যাদি,,,,, কিন্তু আমার কানে কোন কথাই যাচ্ছে না,,,,এক প্রকার ধান্দা লেগে আছে আমার,,,,,,

একটু পরে আমাকে বাইরে নিয়ে আসে,,,, কারণ এখন আমার বিদায়ের পালা,,, আমাকে আকিবের কাছে নিয়ে যাওয়া হল,,, আমি আকিবের মুখের দিকে তাকালাম ওর মুখটা কালো করে বসে আছে,,,, মন হচ্ছে পারলে এখনই কেঁদে দিবে,,,, বেচারা,,,,
আমি একটু কান্না করলাম বাবাকে জড়িয়ে ধরি যদিও আমি কান্না করা ভুলে গেছি,,,, তারপরও কান্না করলাম না হলে লোকে কি ভাববে,,,,
আমি আর আকিব গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছি,,,, আকিব মাথায় হাত দিয়ে সামনের দিকে ঝুকে বসে আছে,,,,, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,,, কিছু কি ওকে বলব না থাক এমনিতেই ওর আর আমার দুজনের মন খারাপ,,,,পরে না হয় ওকে জিজ্ঞাসা করব যে ও কেন বিয়েতে রাজি হয়েছে,,,,,,
গাড়ি এসে আকিবের বাড়ির সামনে থামে,,,,আকিবের মা আর বড় বোন এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল,,,,, ওনারা ও সবটা জানে,,,, কিন্তু তারপরও ওনারা সবটা মেনে নিয়েছে,,,,,,

রাকিব পালিয়েছে আর আকিবের সাথে আমার বিয়ে এটা নিয়ে সব আত্মিয়রা অনেক কথাই বলছে তাই আমাকে সবার সামনে না নিয়ে সোজা রিমি (আকিবের বড় বোন) আপুর রুমে নিয়ে গেল,,,, ফ্রেশ হয়ে আমাকে সুন্দর একটা শাড়ি পরিয়ে আবার সাজিয়ে দিল,,,, তারপর বাসর ঘরে বসিয়ে দিল,,,,
আমি সারা ঘরে চোখ বুলালাম অনেক সুন্দর করে রুমটা সাজানো,,,গোলাপের পাপড়ি খাটের উপর বিছানো,,,,,ক্যান্ডেল জ্বালানো,,,,
বাসর ঘরটা অসম্ভব সুন্দর,,,,,,

রাত প্রায় বারোটা বাজে,,,,এমন সময় দরজার বাইরে কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে,,,,, উকি দিয়ে দেখি আকিব কে রিমি আপু আর উনার হাজবেন্ড মিলে ঠেলাঠেলি করতেছে বাসর ঘরে আসতে কিন্তু আকিব তো আসতেই চাচ্ছে না,,,,, কোন মুখ নিয়ে ও আসবে,,,,যাকে ভাবি বানাতে চেয়েছিলো সেই আজকে ওর বউ,,,,, যাই হোক আকিবকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে রুমে পাঠিয়ে দরজা ওনারা বাইরে থেকে আটকিয়ে দিল,,,,,
ওনাদের ধাক্কা খেয়ে আকিব মাটিতে পড়ে যায়,,,, আমি তা দেখে খাট থেকে নেমে আকিবের সামনে গিয়ে ওকে উঠানোর জন্য ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেই,,,,, আকিব হাত ধরতে গিয়ে ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাতটা ধরলো না,,,, নিজেই উঠে দাঁড়ালো,,,,
আকিব আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

আকিব: এটা কি হলো ভাবি,,,, তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলে,,,,, তুমি কি জানো না যে আমি রিধিকে ভালোবাসি,,,, এখন আমি কি করবো,,,,,রিধিকে আমি কি বলবো
(অসহায় হয়ে বলল)

আকিবের কথা শুনে আমি তো পুরাই থ,,,একি বলছে ও,,,,বাসর রাতে বউকে ভাবি বলে ডাকছে,,,,, পৃথিবীতে মনে হয় আমি সেই মেয়ে যাকে তার বর বাসর রাতে ভাবি বলে ডাকতেছে,,,, আর তাছাড়া সেটাই তো স্বাভাবিক কারণ দুইমাস ধরে আকিব আমাকে ভাবি বলেই ডাকতেছে,,,, যেহেতু আমি ওর বড় ভাইয়ের বউ হতে চলেছিলাম তাই আমাকে আকিবের নাম ধরে ডাকার পারমিশন দিয়েছিলেন ওর মা বাবা,,,, কিন্তু
আকিবের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যায়,,,
আমি: কি বললে তুমি,,,, আমি ইচ্ছে করে এই বিয়েটা করেছি,,,,,তা তুমি রাজি হয়েছিলে কেন???হুম বলো,,,,

আকিব: তুমি তো জানো যে আব্বু কে আমি কতটা ভয় পাই,,,, আর তাছাড়া আমার পরিবারের সম্মান আমার হাতে আমি যদি রাজি না হতাম তাহলে আব্বুর সম্মান নষ্ট হয়ে যেত,,,
আমি: আর আমার পরিবারের সম্মান বুঝি অন্য কারো হাতে,,,,,
আকিব: না মানে,,,,,
আমি: মানে,,,,, আমি ও আমার আব্বুর কথা ফেলতে পারি নি আর তাছাড়া আমার ও বয়ফ্রেন্ড আছে,,,, আমি ও তাকে খুব ভালোবাসি,,,, খুব চাপে পড়ে তোমার ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম কিন্তু কে জানত তোমার ভাইয়া পালাবে আর তোমার সাথে আমার বিয়েটা হবে,,,,

আকিব: কি,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে