ভালোবাসার রংধনু পর্ব-০৩

0
1217

#গল্পঃভালোবাসার_রংধনু
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৩

কোনোভাবে গোসল শেষ করে শোভা দরজায় টোকা দিলো।নিহাদ উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলো।বাথরুমের দরজায় টোকা পড়তেই আওয়াজ করে বলল,কি হয়েছে?শোভা কনকনে শীতে বারংবার কেঁপে ওঠে বলল,আমার জামাকাপড় দিন আমার প্রচুর ঠান্ডা লাগছে।নিহাদ উঠে ট্রলি থেকে শোভার জন্য শাড়ী নিতে গিয়ে থেমে গেলো।দাঁত কেলিয়ে বলল,আরেকটু শাস্তি দেওয়া যাক।দাঁড়িয়ে থাকুক ঠান্ডার মধ্যে।জামাকাপড় পরে দেবো।মিনিট দু’য়েক না যেতেই শোভা ভেতর থেকে বলে উঠলো,কি হলো আমার জামাকাপড় দিচ্ছেন না কেনো?আমি শীতে মরে যাচ্ছি।
নিহাদ চুপ করে বসে রইলো খাটে।এদিকে শোভা চেঁচিয়ে চলেছে শেষে দুইবাহু জড়িয়ে নিচে বসে পড়ে।পাক্কা দশমিনিট যাওয়ার পর নিহাদ একটা শাড়ী হাতে নিয়ে দরজা হালকা খুলে শাড়ী বাড়িয়ে দেয়।শোভা ছো মেরে শাড়ীটা নিয়ে পড়ে নেয়।রুমে ঢুকে ট্রলিতে থাকা সব জামাকাপড় এলোমেলো করে সোয়েটার খুঁজছে।এখন যেহেতু শীতকাল তাই বিয়ের সাজসজ্জার সাথে শোভার জন্য সোয়েটারও কেনা হয়েছে।শোয়েটার পড়ে নিয়ে শোভা নিহাদের অপরপাশে শুয়ে পড়লো।একেবারে হাত-পা গুটিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছে।নিহাদ চুপ করে শুয়ে থেকে কিছুক্ষণ পরে মুড়ি দেওয়া অবস্থাতেই শোভার মাথায় একটা থাপ্পড় মারলো।
শোভা মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে নিহাদের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নিহাদ দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।সবেতো শুরু,বলেছিলাম না?তোমার জীবন তেজপাতা বানিয়ে ফেলবো।তারপর সেই তেজপাতা সংরক্ষণ করে রাখবো।ভাবি আর মাকে বলবো প্রতিদিন ওই তেজপাতা দিয়ে খিচুড়ি বানাতে,রং চা বানাতে।যদিও আমি রং চা খাইনা কিন্তু এই তেজপাতার রং চা অবশ্যই খাবো।খুব ট্যাষ করে খাবো আহা!
শোভার ইচ্ছে করছে এটাকে তুলে এক আছাড় মারতে।কিন্তু এই অসম্ভবকে সে সম্ভব করতে পারবেনা।তাই নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে নিহাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে শুয়ে পড়লো।
নিহাদ ও কথা না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে।

গভীর রাত নিহাদ কি আরামে ঘুমাচ্ছে।এদিকে শোভা ছটপট করছে।কোমরের ব্যথায় বারবার গোঙ্গানি দিচ্ছে।খুব ভালোই ব্যথা পেয়েছে।এদিকে গলাটাও কেমন শুষ্ক হয়ে আছে।মনে হচ্ছে গলার সব পানি কিছু দিয়ে শুষে ফেলে দেওয়া হয়েছে।শোভার ঠান্ডার সমস্যা আছে তাই শীতকাল আসলে দুদিন পরপর গোসল করে।নয়তো ঠান্ডা লেগে যায়।আজ একেবারে দুবার গোসল করা হয়েছে।শেষরাতের দিকে শোভার চোখটা ভালো করে লেগে আসে কিন্তু কান সজাগ।আজান দিলেই উঠে পড়তে হবে।নতুন বউ বেশিক্ষণ শুয়ে থাকা শোভা পায়না।
আজান দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই শোভা উঠে পড়ে।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হয়ে দেখে নিহাদ বিছানায় নেই।এত সকাল উঠে কোথায় গেলো ভেবে না পেয়ে একা একাই নামায পড়ে নিলো।রুমের দরজা খুলে উঁকি মেরে দেখলো কাউকে দেখা যায় কিনা?তেমন কাউকেই নজরে এলোনা তাই শোভা রুমেই বসে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর নিচে নেমে এসে দেখলো মিলি রান্নাঘরে চায়ের পানি বসাচ্ছে।শোভাকে রান্নাঘরে দেখে বলল,আরে তুমি এখানে আসতে গেলে কেনো?মা দেখলে খুব বকবে।নতুন বউদের কয়েকদিন রান্নাঘরে আসতে নেই।শোভা মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুই বললোনা।
মিলি একবার শোভার দিকে তাকিয়ে আবার কাজে মন দিলো।

নিহাদ,নিহাদের বাবা,আহাদ তিনজনই কথা বলতে বলতে বাসায় ঢুকলেন।পুরুষের কন্ঠস্বর শুনে মিলি আর শোভা দুজনেই পেছন ঘুরে দেখলো।মিলি তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে বলল,ওদেরকে চা দিতে হবে।সবাই নামায পড়ে এসেই চা খায়।শশুর আর ভাশুরের পাশে নিহাদকে পাঞ্জাবি পড়া দেখে শোভার কিছুটা ভালো লাগলো।কি সুন্দর দৃশ্য তিন বাবা ছেলে একসাথে মসজিদ থেকে ফিরেছে।আহাদ আর ওর বাবা বসে চা খাচ্ছেন নিহাদ ঘরে চলে গেলো।এখন গিয়েই ঘুমিয়ে পড়বে।সকালে নামায না পড়লে এখনো বাবা এসে ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দেয়।নামায পড়েই আাবার ঘুমায়।

আস্তে আস্তে সবাই উঠে পড়ছে।মিসেস সেলিনা রান্নাঘরে এসে শোভাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,তুমি এখন আর রান্নাঘরে আসবেনা।যাও ঘরে যাও।পরে দরকার হলে ডেকে নেবো।শোভা মাথা নেড়ে রুমে চলে এলো।মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ ধরে শোভা এখানে ছিলো অথচ একটা কথাও বলেনি।শুধু কথার উত্তরে একটু মুচকি হেসেছে।হয়তো নতুন বলে জড়তার কারণে ফ্রি হতে পারছেনা।এসব ভেবে মিলি আর ব্যাপারটা ঘাটালোনা।

নিহাদ কম্বল ধরে উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।শোভার শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে।তাই নিজেও বালিশে মাথা ঠেকালো কিন্তু চোখ বুঝলোনা।যদি ঘুম এসে যায় আর কেউ ডাকতে আসে?

পার্লার থেকে মেয়েরা এসে শোভাকে সাজিয়ে দিলো।নিহান শোভার শাড়ির সাথে ম্যাচিং সুট পড়েছে।একেবারে তৈরি হয়ে ঘড়ি নিতে রুমে ঢুকে।মেয়েরা নিহাদকে দেখে শোভাকে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়।নিহাদ ভালো করে একবার শোভাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো।তারপর ওর মনে পড়লো সকাল থেকে শোভা একবার ও ওর সাথে কথা বলেনি।নিহাদ যাই বলেছে চুপ করেছিলো।মেয়েটার হয়েছেটা কি?
নিহাদ শোভার মাথায় টোকা মেরে বলল,এই মেয়ে কথা বলছোনা কেনো?বোবা হয়ে গেলে নাকি কালকে গোসল করে।
শোভা ধৈর্য ধরে আছে।কোমরের ব্যথা নিয়ে এখন লাগতে গেলে ফল ভালো হবেনা সেটা শোভার জানা আছে।
শোভাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিহাদ ভ্রু কুঁচকে বলল,এই শোভা,কোবা,বোবা!বাকশক্তি হারিয়ে গেছে তোমার?
শোভা ক্ষেপে গিয়ে বলল,একদম ফালতু নামে ডাকবেন না।
নিহাদ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে বলল,এটা কার গলা ছিলো?মানে তুমিই কথা বলেছো নাকি অন্যকেউ?
শোভা গলা ঝেড়ে চুপ করে রইলো।আসলে কাল গোসল করার কারণে ঠান্ডা লেগে গলা বসে গেছে।কথা বললেই ফ্যাসফ্যাস আওয়াজ হয়।তাইতো সকাল থেকে কারো সাথে কথা বলেনি।
শোভার ফ্যাসফ্যাস করে কথা বলা দেখে নিহাদ হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।হাসতে হাসতে বলল,দেখেছো?আমার সাথে অন্যায় করেছো বলে আল্লাহ বিচার করে দিলো তোমার।
শোভা ভোতা মুখে বলল,আপনার কারণে কাল গোসল করতে হয়েছে।নয়তো আমার এখন ঠান্ডা লাগতোনা।

আশিক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো,কিরে ঘড়ি নিতে এসে কি হারিয়ে গেলি নাকি?তাড়াতাড়ি আয় সবাই অপেক্ষা করছে।
নিহাদ শোভাকে রেখে বেরিয়ে গেলো।

শোভার বাড়ি থেকে সব আত্মীয় স্বজন এসে গেছে।প্রভা এসে শোভাকে জড়িয়ে ধরে।শোভাও হেসে প্রভাকে জড়িয়ে ধরে।প্রভা বলল,তোমাকে সুন্দর লাগছে আপু,নিচে ভাইয়াকে ও দেখলাম মাশাআল্লাহ।তারপর গালে হাত দিয়ে ঢেকে ভীত চোখে বলল,ভাইয়া বললাম বলে আজ আবার চড় মেরোনা যেনো?শোভা ফিক করে হেসে দিয়ে প্রভার গাল থেকে হাত নামিয়ে দেয়।শোভা গিয়ে বাবা আর আত্মীয়দের সাথে দেখা করে নেয়।শোভার বাবা চিন্তিত গলায় বললেন,একি কথা এরকম শোনাচ্ছে কেনো?শোভা আমতা আমতা করে বলল,ঐ গাড়ির বাতাসে একটু ঠান্ডা লেগেছে।নিহাদ ভদ্র ছেলের মতো জহিরুল ইসলামকে সালাম দিলো।জহিরুল ইসলাম এবার শোভাকে রেখে নিহাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন।শোভা আড়চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,অতিভক্তি চোরের লক্ষণ।মন চায় একটা উষ্ঠা মারি।

নিহাদের বন্ধুরা সবাই শোভাকে দেখতে জড়ো হলো।শোভা রাহুল আর আশিককে দেখে মনে মনে ক্ষোভ প্রকাশ করলো।এরাইতো সেদিন নিহাদের সাথে মিলে ওকে কিডন্যাপ করেছে।তবে কিডন্যাপ করায় বেশ ভালোই হয়েছে।শোভা ভালো মানুষ রূপি বেয়াদব লোকটাকে চিনে গেছে।রিনি তার নিউ বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে।যেহেতু রিনি নিহাদের ফ্রেন্ড ছিলো তাই তাকেও ইনভাইট করেছে।নিহাদের আসল উদ্দেশ্য রিনিকে দেখানো রিনি গেছে তো কি হয়েছে সে ও সুন্দরী একটা বউ পেয়েছে।রিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শোভাকে দেখছে যা শোভার কাছে চরম অস্বস্তিকর মনে হলো।নিহাদ এটা দেখে শোভার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।রিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,তোরা ছেলে মানুষ এখান থেকে যা।ভাবিজানের সাথে আমি একটু
গল্প করবো।
নিহাদ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,কি গল্প করবি আমার বউয়ের সাথে যে আমরা থাকতে পারবোনা?
রিনি বিরক্তকর মুখে বলল,মেয়ে মানুষের অনেক কথাই থাকে।সব কি তোদের বলা যায়?এখন এখান থেকে যা।
শোভা ফুঁসছে,এখন কি দরদ আর রুমের ভেতর নিয়ে ওকে পারেনা আখ মাড়াইয়ের যন্ত্র দ্বারা পিষে ফেলে।নিহাদের এত ঢং সহ্য হলোনা শোভার।তাই রিনিকে বলল,চলুন আমরা ঐ দিকে গিয়ে কথা বলি।
রিনি চোখ বড় করে বলল,ওমা ভাবিজানের দেখি ঠান্ডা ও লেগে গেছে।নিহাদ দাঁত কেলিয়ে বলল,নতুন বিয়ে হলে সবারই একটু আধটু এরকম হয়।ওর কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।লজ্জায় শোভা মাথা নিচু করে ফেলে।প্রচুর রাগ হচ্ছে তার।সব রাগ এখন বয়াম ভরে রাখছে।শুধু নিহাদ রুমে যাক আর সব মেহমান যাক তখন বয়ামের মুখ খুলে সব রাগ নিহাদের উপর আছড়ে ফেলবে।

রিনি আর শোভাকে অন্যকোথাও যেতে হয়নি।নিহাদ সহ ওর বন্ধুরা,রিনির বয়ফ্রেন্ড সবাই সরে গেলো।রিনি শোভার পাশে বসে বলল,আমি যে নিহাদের গার্লফ্রেন্ড ছিলাম সেটা নিহাদ তোমাকে বলেছে?
শোভা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,আপনি উনার গার্লফ্রেন্ড?
রিনি মুখ বেঁকিয়ে বলল,উঁহু,ছিলাম এখন নেই।আমি নিজেই ছেড়ে দিয়েছি।এরকম ছেলের সাথে থাকা যায় নাকি?
শোভা মনে মনে বলল,ঠিকই করেছেন এমন ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে।
শোভাকে চুপ থাকতে দেখে রিনি গলা ঝেড়ে বলল,তুমি জানো নিহাদ আর আমি একে অপরকে কিস করেছি?দেখো তোমার জামাই তোমার আগেই আমাকে কিস করলো।
শোভার এবার প্রচুর রাগ হলো।একটা ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকতেই পারে।২৭/২৮ বছরের ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকবেনা এটা বরং মানা যায়না।কিন্তু তাই বলে কিস কেনো করতে হবে?
যাই হোক শোভা কখনো নিজেকে ছোট হতে দেবেনা।তাই মুচকি হেসে বলল,আপনি কিভাবে নিজের স্বামীর হক অন্যকে দিয়ে দিলেন?
রিনি অপমানিত বোধ করে তেতে উঠে বলল,তুমি কি বলতে চাও?আমি আমার হাজবেন্ডকে ঠকাচ্ছি?
শোভা শান্তভাবে বলল,সেটাতো আপনি জানেন।রিনি রেগে গিয়ে বলল,এমন কালাচাঁদ পেয়ে এরকম দিওয়ানা হয়ে গিয়েছো যদি আমার বয়ফ্রেন্ডের মতো কাউকে পেতে তখন তোমার পা মাটিতে পড়তোনা।

শোভা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো আপু?আমি কি আপনাকে খারাপ কিছু বলেছি?রিনি শোভার কথার উত্তর না দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো অন্যদিকে।নিহাদ এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে নজর রাখছিলো।রিনি চলে যেতেই দ্রুত পা চালিয়ে শোভার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,রিনি কি তোমাকে উল্টোপাল্টা কিছু বলেছে?দেখলাম ও রেগে উঠে গেলো,তুমি কি বলেছিলে?শোভা মুখ ঝামটা মেরে বলল,সেটা আপনার না জানলেও চলবে।তবে আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে সেটা পরে দেখা যাবে।
নিহাদ আঙ্গুল নাড়িয়ে বলল,আমি জানি তুমি কি বলবে।রিনি তোমাকে কি কি বলেছে এখন সেসব আমাকে জিজ্ঞেস করবে তাইনা?

শোভা কথার উত্তর না দিয়ে সরে গেলো।রিনিকে রেগে উঠে যেতে দেখে নিহাদ মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে।মেয়েটা মনে হয় কিছু বলে রিনিকে রাগিয়ে দিয়েছে।এই খুশিতে আজ শোভাকে একটা বিস্কুট দেবো।

অনুষ্ঠানের ঝামেলা চুকে গিয়েছে।শোভাকে আজ তার বাবা বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি বলে শোভার সেকি রাগ।পরে ওর শশুর বলেছে কাল যেতে দিবে শোভা আর নিহানকে।তখন শোভা ক্ষান্ত হয়।এখন রুমে বসে অপেক্ষা করছে কখন নিহাদ আসবে আর তাকে বাঘিনীর মতো ছিঁলে ধরবে।নিহাদ হাতে করে পাঁচ টাকা দামের এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে রুমে ঢুকলো।শোভার দিকে বিস্কুটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,ধরো খুশি হয়ে দিলাম।শোভা সরু চোখে তাকিয়ে থেকে বিস্কুটের প্যাকেট খাটে ছুঁড়ে মেরে বলল,রিনি আপু আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো?
নিহাদ স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলো,হ্যাঁ!
শোভা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,গার্লফ্রেন্ড হলেই কি তাকে কিস করতে হবে?
নিহাদ চোখ বড় করে বলল,কিহ?একথা তোমাকে রিনি বলেছে?
শোভা চুপ করে আছে।নিহাদ মাথায় হাত দিয়ে বলল,ও মাই গড!ও মাই গড।এজন্য তুমি এরকম প্যাঁচার মতো ছিলে সারাদিন?আমি রিনিকে কোনো কিস টিস করিনি।সো প্যারা নিও না চিল!

শোভা আড়চোখে তাকিয়ে বলল,বিশ্বাস করবো কিভাবে?নিহাদ সাথে সাথে এগিয়ে এসে শোভার মাথায় হাত রেখে বলল,এই তোমায় ছুঁয়ে…..
বাকিটা বলার আগেই শোভা চট করে সরে গিয়ে বলল,একদম আমাকে ছুঁয়ে মিথ্যে বলবেননা।নিহাদ মুখটা পানশে করে নিজের মাথায় হাত রেখে বলল,এই নিজেকে ছুঁয়ে বললাম,আমি রিনিকে কিস করিনি।এবার শান্তি?
তারপর ভ্রু কুঁচকে বলল,আচ্ছা আমি যদি কিছু করে ও থাকি তাতে তোমার কি?জ্বলে?হুম?
শোভা মুখ ফিরেয়ে নিয়ে বলল,মোটেও না।আমি এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।আসলে জানতে চাইলাম আরকি রিনি আপুর কথায় কতটুকু সত্যতা আছে?

নিহাদ বিস্কুটের প্যাকেট হাতে নিয়ে শোভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,এটা ধরো।স্বামীরা স্ত্রীর উপর খুশি হয়ে কত কিছুই দেয়।আমি একেবারে ইউনিক মানুষ তাই ইউনিক গিফট হিসেবে বিস্কুট দিলাম।রিনিকে কি বলে রাগিয়েছো আমি জানিনা।তবে আমি খুশি হয়েছি তাই বিস্কুট দিলাম।শোভা ভ্রু কুচকে বলল,বিয়ের রাতে স্বামী স্ত্রীকে গিফট দেয়।তো আপনি কি দিলেন আমাকে?
নিহাদ কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল,ওহ তাইতো?আচ্ছা দিচ্ছি দাঁড়াও।তারপর সুট খুলে ভেতরের শার্ট খুলে শোভার মুখে ছুঁড়ে মেরে বলল,এই নাও গিফট।এটা ভালো করে ধুয়ে দিবে বুঝলা?শোভা চোখমুখ কুঁচকে শার্টটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলল,আপনার জিনিস আপনি ধূয়ে নিন।
নিহাদ কালকের ঝাড়ুটা বের করে নাচাতেই শোভা শার্ট তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আজ আবার গোসল করলে জ্বর উঠে বিছানা থেকে উঠতে পারবেনা।
শোভা ওয়াশরুমে ঢুকতেই নিহাদ হাসতে হাসতে ঝাড়ু নিয়ে রান্নাঘরের একপাশে রেখে আসলো।
#চলবে……..

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে