ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-৭+৮

0
1755

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৭

ঘুম ভাঙতেই আদ্রিয়ান অনুভব করলো পায়ের আর পেটের দিকে ভার হয়ে আছে। মাথা উঁচু করতেই নিজের অজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। মিশি বাবার পেটের উপর ঘুমিয়ে আছে আর রোদ আদ্রিয়ানের পায়ের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দুই মা-মায়ের ঘুমের অবস্থা বেহাল। আদ্রিয়ান আস্তে করে টেনে মিশিকে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। রোদকেও ধরে এনে পাশে শুয়িয়ে দিলো। একটু পরই মিশি হাই তুলে চোখ খুললো পাশে বাবাকে দেখে একটু নিচু হয়ে বাবার বুকে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ান হেসে ওকে চুমু খেয়ে বললো,

— আমার মায়ের কি ঘুম শেষ?

মিশি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,

— হু।

আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। রুমে এনে মুখ মুছিয়ে দিলো। এখন বাজে সকাল ৯ টা। আদ্রিয়ান আস্তে করে রোদকে ডাকতে লাগলো কিন্তু রোদের কোন হেলদুল নেই। মিশিও মায়ের কাছে গিয়ে বাবার সাথে ঘেঁষে বসে একনাগাড়ে “মাম্মা” “মাম্মা” ডাকতে লাগলো কিন্তু তাতে রোদ শুধু একটু নড়েচড়ে ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ান এবার রোদের গালে আলত করে চাপড় দিয়ে ডাক দিতেই টেনে টুনে চোখ খুললো রোদ। বিরক্ত হওয়া কন্ঠে জিনিস করলো,

— কি হয়েছে?

— উঠো এবার সোনা।

রোদ আদ্রিয়ানের পাশে মিশিকে দেখে টেনে নিজের কাছে নিয়ে বললো,

— ঘুমাও মা সকাল হয় নি। তোমার বাবাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।

মিশি মায়ের বুক থেকে বাবার দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো কারণ তার তো এখন মোটেও ঘুম আসছে না। আদ্রিয়ান রোদকে টেনে ধরে উঠালো। রোদ মুখ কুচকে তাকালো যা আদ্রিয়ান সম্পূর্ণভাবে ইগনোর করে বললো,

— ফ্রেশ হয়ে আসো। গো।

রোদ উঠে মিনমিন করতে করতে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ান বেড গুছিয়ে নিলো। রোদ বের হতেই দেখলো ফোন বাজছে। রাদ কল করেছে। রিসিভ করতেই রাদ বললো,

— রোদ বোন আমার কোন চিন্তা করবি না। আল্লাহ যা করে তা ভালোর জন্যই করে।

ও পাশ থেকে রুদ্র আর মা-বাবার গলার আওয়াজও শুনতে পেল রোদ। অবুঝ গলায় প্রশ্ন করলো,

— কিসের চিন্তা ভাইয়া?

— আজ না মেডিক্যালের রেজাল্ট দিবে।

মুহূর্তেই যেন মাথা ঘুরে গেল রোদের। আজ না রেজাল্ট? রোদকে চুপ থাকতে দেখে রাদ কিছু একটা বুঝলো। ঠান্ডা স্বরে বললো,

— যা হবার হবে। প্রয়োজনে সেকেন্ড টাইম দিবি। কোন ব্যাপার না। তাছাড়াও ভার্সিটি এক্সাম ও আছে। বুঝেছিস?

— হু।

— আচ্ছা রাখি।

— হু।

বলে কল কাটলো রোদ। সাথে সাথেই আদ্রিয়ানের ফোন বেজে উঠলো। রাদই কল করেছে। রিসিভ করতেই রাদ বললো,

— রোদকে আজ নিয়ে আসি নাহয়। জানেন ই তো সব।

আদ্রিয়ান আড় চোখে একবার রোদকে দেখলো যে কি না গোলগাল ফুলা গাল দুটো আরেকটু ফুলিয়ে রেখেছে। কেঁদে দিবে দিবে ভাব। ব্যালকনিতে চলে গেল আদ্রিয়ান। রাদকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আমার কাছে থাক। আমি সামলে নিব রাদ। ওখানে হয়তো আরো ভেঙে পরবে যদি রেজাল্ট ভালো না হয়। ভরসা রাখ।

— ভরসা আছে বলেই রোদ আজ আপনার কাছে আদ্রিয়ান। কিছু হলে জানিয়েন।

— হুম। আল্লাহ হাফেজ।

ফোন কাটলো আদ্রিয়ান। ভেতরে যেতেই রোদের ভোতা মুখটা নজরে এলো। আদ্রিয়ান ওর সামনে বসে নিজের লম্বা লম্বা আঙুলগুলো রোদের তুলতুলে নরম আঙুলের ফাঁকে ডুকিয়ে শক্ত করে ধরলো। রোদ একটু তাকালো। আদ্রিয়ান একহাত দিয়ে রোদের কানের পরিহিত রিংটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

— বেশি টেনশন হচ্ছে?

— হু।

— প্রয়োজনে আমি তোমাকে প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়াব রোদ। কোন টেনশন নেই। তুমি তো জানো, “নিশ্চিই আল্লাহ উত্তর পরিকল্পনাকারী”।

— হুম।

আদ্রিয়ান এবার মিশিকে কোলে তুলে নিলো। রোদ একটা ওভার সাইজ টিশার্ট পরা। আদ্রিয়ান শুধু একটা ওরণা ওর মাথায় দিয়ে বললো,

— চল।

খেতে বসেও সবাই রোদকে সাহস দিলো। টেনশন করতে নিষেধ করলো। কিন্তু হায় টেনশন বুঝি আটকানো যায় এটা তো জোঁকের মতো জেঁকে ধরে আছে। রীতিমতো এখন টেনশনে রোদের পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। মাথা ঘুরাতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওর মুখে তবুও জোর করে নিজের খাওয়া ব্রেড ঠুকিয়ে দিল। রোদ মিশিকে খায়িয়ে রুমে ঘাপটি মেরে বসে রইলো। আদ্রিয়ান ঢুকতেই রোদ একপলক তাকিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে বমি করে দিলো। আদ্রিয়ান ওকে তারাতাড়ি ধরে মুখে পানি দিয়ে ধুয়িয়ে কোলে করে বেডে বসিয়ে দিলো। রোদ একটু একটু কান্না করে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ওর মুখ মুছিয়ে দুই গালে হাত বুলিয়ে বললো,

— এমন করছো কেন সোনা? সব ঠিক হবে। ভরসা রাখ।

রোদ এবার আদ্রিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। এস এস সি তে এ প্লাস থাকলেও ঐ ঘটনার পর রোদের পড়াশোনায় ক্ষতি হয়েছিলো ফলস্বরূপ এইচ এস সি তে এসেছিলো ৪.৮৫। রোদের টেনশন হচ্ছে এখন আদও ও চান্স পাবে কি না। সাদা এপ্রোন যে ওর স্বপ্ন যেটার বাঁধা স্বরুপ আছে দুটো জিনিস এক এই রেজাল্ট আর দুই ব্লাড ফোবিয়া।
আদ্রিয়ান রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করলো। আসস্ত করলো আজ সে অফিস যাবে না রোদের কাছেই থাকবে। অথচ আদ্রিয়ান নিজেই টেনশনে ঘামছে যে মেয়ে রেজাল্টের আগেই এই অবস্থা সে রেজাল্টের পর কি করবে?

____________________

কাউচে বসে এক নাগাড়ে নখ কাটছে রোদ দাঁত দিয়ে। আদ্রিয়ান বারকয়েক হাত নামিয়ে দিয়েছে মুখ থেকে। রোদের তবুও তেমন পাত্তা নেই। ও টেনশনে নখ কেটে নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে যেটা এই বাবাই মার্কা আদ্রিয়ান বুঝছে না। আদ্রিয়ান এবার দিলো এক ধমক। ধমক খেয়ে চুপ করে হাত নামিয়ে রাখলো রোদ। তবুও থেমে নেই পা দিয়ে ফ্লোর খুরতে লাগলো। ১১ টা বেজে গিয়েছে। তখনই আদ্রিয়ান ল্যাপটপে রোদের রোল নম্বর টাইপ করলো। রোদ আদ্রিয়ানের ঘাড়ের পেছন থেকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে ল্যাপটপে। রেজাল্ট শিট আসতেই আদ্রিয়ান দেখলো রোদের হয় নি ঢাকা মেডিক্যালে কিন্তু ওয়েটিং লিস্টে নাম আছে। আদ্রিয়ান ঘুরার আগেই ধাম করেই পরে গেল রোদ। ভয় পেয়ে গেল আদ্রিয়ান। তারাতাড়ি ওকে ধরে চেপে ধরলো বুকে। মিশি রুমে ডুকে মা’কে এভাবে দেখে ভয়ে কেঁদে উঠলো। ওর কান্নার আওয়াজে সাবা,জারবা আর আদ্রিয়ানের মা ও ছুটে এলো। এদিকে আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে গেল। এতটা যে রোদ কনসার্ন তা বুঝতে পারে নি আদ্রিয়ান। রোদকে বেডে শুয়িয়ে অস্থির হয়ে ডাকতে লাগলো,

— রোদ? রোদ উঠো। এই রোদ তাকাও না সোনাপাখি।

জারবা কোলে তুলে নিলো মিশিকে। সাবা পানি এনে ছিটিয়ে দিলো রোদের চেহারায়। এদিকে রাদ কল করতে করতে অস্থির। রেজাল্ট দেখেছে ও। না জানি বোনটার কিছু হলো নাকি? কল রিসিভ না হওয়াতে বাসার সবাই যেন আরো বেশি টেনশনে পরে গেল কারণ এখন আদ্রিয়ানের বাসার কেউ ই কল ধরছে না। রীতিমতো ঘাম ছুটে গেল রোদের বাড়ীর সবার।
এদিকে রোদ অনেকক্ষণ পরে চোখ খুললো। সামনে তাকাতেই নজরে এলো চিন্তিত আদ্রিয়ানের মুখ যে আপাতত রোদের একহাত নিজের শক্ত হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছে। রোদ তাকাতেই জারবা ” ছোট ভাবী ” বলে ডেকে উঠলো। সবাই এবার তাকালো ওর দিকে। আদ্রিয়ান রোদের গালে হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,

— ঠিক আছো?

— হু।

রোদের অবস্থা বুঝে বাকিরা আস্তে আস্তে বের হয়ে গেল। মিশি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে বাবার কোলে বসে। ওর ফুঁপানোর শব্দ শুনে রোদ হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো,

— আমার বাচ্চা কাঁদে কেন?

আদ্রিয়ান মিশির মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— ভয় পেয়েছে।

মিশিকে রোদ ডাকতেই মিশি আস্তে করে মায়ের বুকে মুখ গুজে দিলো। রোদ নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো। এমন সময় ফোন বাজতেই আদ্রিয়ান রিসিভ করলো ওমনিই রোদের বাবার চিন্তিত কন্ঠ কানে এলো। আদ্রিয়ান শতকরে বুঝালেও শেষ মেষ রোদের সাথে কথা বলে শান্ত হলো তারা।

________________

রোদ ঐ যে মুখ গুমরে রেখেছে এখনও ঠিক হয় নি। আসলে ও নিজের মধ্যে চেপে রাখতে চাইছে। বারবার মনে হচ্ছে এইচ এস সি র মার্ক ফুল থাকলে তো এমন হতো না। এটা ভাবতেই আবার অতীতের কথা মনে পরে যাচ্ছে। মাথা চেপে ধরলো রোদ। এনজাইটির প্রবলেমটা আবারও শুরু হয়ে গেল। অতিরিক্ত চিন্তায় ঘাম ছুটে গেল ওর। গলা শুকিয়ে গেল। হাত-পা কাঁপতে লাগলো। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো কেউ নেই। তখনই যেন ভয় বেড়ে গেল। জোরে কেঁদে ডেকে উঠলো “ভাইয়া” “আম্মু” “আম্মু”। আদ্রিয়ান রোদের খাবার নিয়ে রুমে আসছিলো ওর চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে ডুকলো। হাতের খাবার পাশে রেখে তারাতাড়ি লাইট অন করে বললো,

— রোদ? এই যে তাকাও। দেখ। কিছু হয় নি।

রোদ এক কোণায় গুটিয়ে ছিলো। আদ্রিয়ানকে দেখতেই দৌড়ে বিছানা থেকে নেমে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান খেয়াল করলো রোদের কাঁপুনি। এনজাইটির রুগীরা কিছুটা এমনই। হঠাৎ করেই এরা ভাবতে শুরু করে আবার হঠাৎ করেই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠে। আদ্রিয়ান রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— আমি আছি। সব ঠিক আছে। কোন চিন্তা নেই সোনা। দেখ এই যে।

রোদ আদ্রিয়ানের বুকে মুখ চেপে শক্ত করে ধরে রাখলো। আদ্রিয়ান সময় দিলো শান্ত হতে। ওভাবেই রোদকে উঁচু করে বেডে বসলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর শান্ত হলো রোদ। আদ্রিয়ান আস্তে করে ডাকলো,

— রোদ?

— হুম।

— সব ঠিক?

— হুম।

— খাবে?

— হুম।

— আচ্ছা।

বলে রোদকে বুক থেকে তুললো। নিজের হাতে খায়িয়ে দিলো। রোদ খেতে খেতে বললো,

— মিশি?

— খায়িয়েছি।

— কোথায়?

— ঘুম জারবার রুমে।

আদ্রিয়ান ওকে খায়িয়ে পানি খাওয়ালো। রোদ বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আদ্রিয়ান আসতেই হঠাৎ করে আদ্রিয়ানের কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুজে কেঁদে উঠলো। মুহূর্তেই যেন আদ্রিয়ানের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। বহু কষ্টে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইলো কিন্তু থামলো না রোদ। একাধারে কেঁদেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ানও ওকে জড়িয়ে নিলো। মন চাইলো একটু আদর করে দিতে। ফুলা ফুাল গালে একটু ঠোঁট ছুয়ে দিলে কি ক্ষতি হয়ে যাবে? দিবে দিবে করেও দিলো না। কি না ভাবে আবার রোদ?
কি হতো মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হলে? রোদের মুখটা তুলে উঁচু করলো আদ্রিয়ান। ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে আছে। আদ্রিয়ান ওর চোখ মুখ হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বললো,

— কাঁদে না পাখি। বলেছিনা প্রাইভেটে পড়াব।

— ডিএমসি ছাড়া পড়ব না।

হিচকি তুলতে তুলতে বললো রোদ। আদ্রিয়ান জানে বয়সটাই আবেগের। স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তাই রোদের দু গালে হাত দিয়ে বললো,

— ওয়েটিং এ তো আছ। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।

–ইনশাআল্লাহ।

আদ্রিয়ান তেল আর চিরুনি নিয়ে রোদের কাছে আসতেই রোদ দুই লাফে সরে গিয়ে বললো,

— আমি তেল দিব না এখন।

— কারণ?

— মাথা কুটকুট করে তেল দিলে।

— মাথা আবার কীভাবে কুটকুট করে রোদ? কিসব ভাষা বল?

বলে আদ্রিয়ান জোর করে রোদকে ধরে বসালো কাউচে। রোদ দিবে না তো নাই। আদ্রিয়ান ওর চুল খুলে দিয়ে বললো,

— মিশিকে তো তেল দিয়ে দাও। তাহলে নিজে দাও না কেন?

— আমার ভালো লাগে না তেল দিতে আগে তো আম্মু আর চাচি জোর করে দিয়ে দিত।

— এখন থেকে এই দায়িত্ব আমার।

বলে সুন্দর করে তেল লাগিয়ে মাথা আঁচড়ে বেনী করে দিলো লম্বা চুলে। সাইড থেকে টিস্যু নিয়ে রোদের কপালের তেল মুছে হাত ধুয়ে এসে বললো,

— আস ঘুমাবে।

— এখন ঘুম আসছে না।

আদ্রিয়ান জোর করে রোদকে ধরে নিজের বুকে শুয়িয়ে দিলো। এই প্রথম জাগ্রত রোদকে বুকে নিয়ে যেন হৃদপিণ্ডটা লাফাতে লাগলো। রোদ মাথা তুলে বললো,

— আপনার বুক এমন ধুকপুক ধুকপুক করছে কেন?

— তুমি বুঝবে না।

— বুঝান।

–সব যদি বুঝানো যেত তাহলে তো হতোই কাজ। ঘুমাও।

— আসছে না তো।

— চোখ বন্ধ করো।

— হচ্ছে না তো।

— দুষ্ট হয়ে যাচ্ছো।

— কই?

— অনেক হ’য়েছে।

রোদ মুখ ভোতা করে ধুম করে বুকে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান “উফ” করে শব্দ করে বললো,

— পাঁজরের হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে গেল বোধহয়।

রোদ চুপ করে আদ্রিয়ানের বুকের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেল।

#চলবে…

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৮

মাগরিবের আজান দেয়ার আগেই ঘুম ছুটে গেল আদ্রিয়ানের। বুকের উপর আবিষ্কার করলো ঘুমন্ত রোদকে। একদম বাচ্চা বাচ্চা ভাব। বিড়ালের মতো আদুরে আদুরে। মন চায় আদর করে দিতে। রোদ যেহেতু ঘুম তাই সুযোগের অসৎ ব্যাবহার করবে আদ্রিয়ান কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো অসৎ কেন হতে যাবে? এতো একদম সুযোগের সৎ ব্যাবহার। বিয়ে করা বউ আদ্রিয়ানের। মোহরানার টাকাও সোধ করেছে ভাবতেই টুপ টাপ করে রোদের গালের উঁচু হওয়া অংশে চুমু খেল। এতে করে রোদ একটু নড়েচড়ে উঠলো। আদ্রিয়ান চোরের মতো চোখ বন্ধ করে নিলো। একটু পরই আবার চুমু খেল নাকে। এইবার রোদ নড়েচড়ে আদ্রিয়ানের বুকে নাক,মুখ ঘঁষতে ঘঁষতে ভিতরে ডুকতে চাইলো কিন্তু বেচারী অনেক চেষ্টার পরও ডুকতে পারলো না তাই ঠোঁট উল্টে আদ্রিয়ানের গলায় মুখ গুজে শুয়ে রইলো। আদ্রিয়ান একটু চোরা হাসি দিলো। ধরা পরে নি ভেবেই মনে শয়তানি শয়তানি একটা আনন্দ পেল। এমন সময় জারবা গলা ফাটিয়ে দরজায় ধুম ধাম আওয়াজ করতে করতে ডেকে উঠলো,

— ছোট ভাইয়া! ছোট ভাইয়া!

জারবার এই আওয়াজ নিশ্চিত পাশের দুই তিন বাড়ীর লোকজনও শুনে মনে হয় বুকে হাত দিয়েছে কিন্তু রুমের ভেতরের রোদের কোন হেলদুল নেই। নিজের মতো ঘুমে কাদা হয়ে আছে। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে রোদকে আস্তে করে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো। দরজা খুলতেই হামলে পরলো জারবা ভাইয়ের উপর। আদ্রিয়ান ভরকে গেলও নিজেকে সামলে বললো,

— এখন ই তো পরে যেতি। বল কি হয়েছে? আর এমন চিল্লাতে না তোকে না করেছি?

জারবা ভাইয়ের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,

— তোমার শশুড় বাড়ীর লোক এসেছে। জানো এবারও এত্তো এত্তো কিছু এনেছে। আম্মু ডাকে তোমাকে আর ছোট ভাবীকে।

আদ্রিয়ান একটু চমকালো হঠাৎ শশুড় বাড়ীর লোক এলো বলে তবুও তা প্রকাশ না করে জারবাকে বললো,

— তুই যা আসছি আমি।

আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হলো। রোদের সামনে এসে বারকয়েক ডাক দিলেও রোদ নড়লো না উল্টো আদ্রিয়ানের বাহু ধরে ঘুমিয়ে রইলো। আদ্রিয়ান এবার জোরেই ডাক দিয়ে ধরে বসিয়ে দিলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় রোদ উঠলো ঠিকই কিন্তু বেচারী চোখ খুলতে পারছে না। আদ্রিয়ান হেসে রোদকে বুকে চেপে ধরে বললো,

— এত ঘুমকাতুরে বউ আমার। আল্লাহ একে নিয়ে কই যাব আমি?

রোদ আবার বুকেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতেই আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ওকে ধরে বললো,

— উঠুন ম্যাডাম। আপনার বাসার লোকজন এসেছে।

রোদ বহু কষ্টে চোখ খুললো। ঘুম হয় নি ওর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। লাল হয়ে আছে। আদ্রিয়ান ওর গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

— আস্তে আস্তে উঠো।

রোদ কতক্ষণ থম ধরে বসে রইলো এরপর উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো। মাথায় উরণা দিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে নিচে গেল। রাদ,রুদ্র, দিশা, তিশা আর ইশান এসেছে। আসার কারণ হলো রোদকে দেখা। না জানি বোনটার কি অবস্থা? রাদের কোলে মিশি বসে আছে। কি জানি বলাবলি করছে মামা-ভাগনি।রুদ্র তো বোনকে দেখেই ঝাপটে ধরলো। রোদও আদর করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। রাদ মিশিকে কোলে নিয়েই বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো। রোদকে তারা আসলে যতটা ভেবেছিলো ততটা ভেঙে পরে নি। অথচ তারা জানলোই না আদ্রিয়ান কিভাবে সামলেছে সব।

_____________________

রাদ আজও রোদ কে নিয়ে যেতে চাইলো। রোদ ও যাবে যাবে বলে বুঁগিজুঁকি করছে যা আদ্রিয়ান খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে কিন্তু ও তো কিছুতেই যেতে দিবে না। অবশেষে ইশান রাদকে বুঝায়। আজও যেতে নিলে রুদ্র আর রাদ বোনকে জড়িয়ে ধরে রাখলো বেশ কিছুক্ষণ। হাজার বলেও রাতের খাবার খেতে রাজি করানো গেল না তাদের। ওরা যেতেই রোদ মিশিকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে পরলো। কান্না আসছে এখন ওর। আদ্রিয়ানের মা এগিয়ে এলো। রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মিশিকে বললো,

— দাদু ভাই দেখ তো তোমার আলিফ ভাইয়া কোথায় গেল।

মিশি মায়ের কোল থেকে নেমে আলিফকে খুঁজতে গেলে আদ্রিয়ানের মা রোদের একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

— মন খারাপ আম্মু?

রোদ একটু ইতস্তত করে বললো,

— না আন্টি।

— আন্টি হলেও কিন্তু আমি মা। সব বুঝি।

রোদ মুখ নামিয়ে বললো,

— আসলে তেমন কিছু না।

আদ্রিয়ানের মা রোদের হাত দুটো আরেকটু ধরে বললেন,

— রোদ আম্মু আমার মন খারাপ করিস না। আদ্রিয়ান তোর ভালো চায়। আমার ছেলেটাকে একটু সুখ এনে দে রোদ। গত কয়েকদিন ধরে কেমন আগের মতো স্বাভাবিক আচরণ করে। বিগত চার বছরে আমাদের কারো সাথে তেমন একটা কথা বলত না ও। কেমন একা একা বাচ্চাদের নিয়ে থাকত। তুই আমার ছেলের কাছে থেকে যা আম্মু। তোকে অনেক ভালোবাসবে ও দেখিস।

রোদ একমনে সব শুনে গেল। আদ্রিয়ানের মা ই আবার বললেন,

— প্রতিদিন সকালে আমি দেখেছি ও মিশির পা ধরে ঘুমিয়ে থাকতো। নিজেকে মিশির অপরাধী মনে করে ও। মা ছাড়া নাতনীটা আমার তোকে মা ভাবে আম্মু।

আর কিছু বলার আগেই রোদ আদ্রিয়ানের মাকে জড়িয়ে ধরলো। উনিও জড়িয়ে ধরলেন। রোদ এমনিতেই ইমোশনাল টাইপের মেয়ে। নাক টেনে টেনে বললো,

— আমি ছেড়ে কেন যাব? মিশি তো আমার মেয়ে।

আদ্রিয়ানের মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি জানেন রোদ পারবে সব সামলে নিতে।

এশারের আজান দিতেই রোদ নামাজ পড়ে মিশিকে খায়িয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ঐ যে বের হ’য়েছে এখনও আসে নি। রোদ একবার ভাবলো কল দিক পরে কি ভেবে আর কল দিলো না। সাবা আর জারবা রুমে আসতেই তিনজন মিলে আড্ডা দিলো। রাত প্রায় ১০ টার দিকে আদ্রিয়ান বাসায় আসলো। টেবিলে খেতে বসতেই রোদ খাবার খাচ্ছে কম নাড়ছে বেশি। এই মেয়ে খাওয়া নিয়ে যতসব ত্যারাব্যারা করে। আদ্রিয়ান কয়েকবার চাপা ধমক দিয়ে বললো,

— খাচ্ছ না কেন?

— খাচ্ছিই তো।

বলে রোদ নিজের কাজ করতে লাগলো। টেবিলে বলাবলি করলো আদ্রিয়ানের মা যে, কাল এলাকার লোকজন আসবে রোদকে দেখতে। আদ্রিয়ানের মতামত চাইতেই আদ্রিয়ান বললো,

— কি দরকার এসবের?

আদ্রিয়ানের মা উৎসাহ নিয়ে বললেন,

— কি দরকার মানে? সবাই নতুন বউ দেখতে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক নাকি?

আদ্রিয়ান আর তেমন একটা কিছু বলে নি। সবাই যে যে খেয়ে উঠে গেল। সাবা আর জারবা বসে আছে শুধু। রোদ উঠতে নিলেই আদ্রিয়ান ওকে ধরে বসিয়ে ভাত মাখতে মাখতে দাঁত চেপে বললো,

— কোন কথা ছাড়া হা করো।

রোদ মুখ চোখা করতে নিলেই আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকালো। রোদ মুখ খুলে খেয়ে নিলো। রোদ আর খাবে না দেখে আদ্রিয়ান এবার দিলো এক ধমক। কেঁপে উঠল রোদ সহ সাবা, জারবা। সাবা এগিয়ে এসে বললো,

— কি হয়েছে?

রোদ উঠে দৌড়ে উপরে রুমে চলে গেল। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

— ওর খাদ্য নালীর সংকোচনের সমস্যা ছিলো ছোট বেলায়। এর কারণে এখনও মাঝে মধ্যে খেতে পারে না ঠিক মতো। জোর করে খাওয়াতে হয় নাহলে সমস্যা এটা আবারও দেখা দিবে। রোদের আম্মু আগেই জানিয়েছিলো কিন্তু এই মেয়ে শুনলে তো।

— আমার একবার সন্দেহ হয়েছিলো যে স্বাস্থ্য অনুযায়ী তো রোদের খাবার কম।

— হুম বাসায় জোর করে সবাই খাওয়াতো। রাদ এসব কারণেই ভয় বেশি পায়।

আদ্রিয়ান হাত ধুয়ে উঠে গেল। রুমে ডুকতেই দেখলো রুমে শুধু মিশি ঘুম যার দুই দিকে বালিশ দিয়ে আটকে রাখা অথচ রোদ নিজেই জানে না ঘুমালে ও নিজেই কতটা অগোছালো হয়ে থাকে। ওয়াসরুমে উঁকি দিতেই দেখলো খালি তাই ব্যালকনির দিকে এগিয়ে এলো। রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। ওভার সাইজ টিশার্টটা বাতাসে একটু দুলছে সাথে কপালের দিকে কিছুটা ছাড়া ছাড়া চুল উঁকিঝুকি দিচ্ছে। আদ্রিয়ানের ভারিক্কি মনটা নিমিষেই যেন যুবক প্রমিকের মতো হয়ে উঠলো। মন চাইলো রোদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবাতে একটু দুষ্ট দুষ্ট আদর করতে। যেই ভাবা সেই কাজ। আদ্রিয়ান ধীর পায়ে এগিয়েও গেল কিন্তু সকল দুষ্ট আদর আর দেওয়া হলো না রোদের নাক টানার আওয়াজে। নিশ্চিত এই মেয়ে কাঁদছে ভাবতেই অস্থির হয়ে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরাতেই দেখলো গাল,নাক লাল করে ফেলেছে এই মেয়ে। আদ্রিয়ান হাত দিয়ে মুছতে নিলেই রোদ ঝামটা মে’রে হাত সরিয়ে দিলো। রোদের মেজাজ এখন ভয়াবহ খারাপ। “ক্যান রে শালা তুই ক্যান ধমকালি?” কথাটা আদ্রিয়ানকে উৎসর্গ করে মনে মনে বললো রোদ। আবার ভাবলো ইশ শালা কেন হবে এই আদ্রিয়ান তো রোদের জামাই ভাবতেই কান্না বেড়ে গেলো রোদের।
আদ্রিয়ান জোর করে চোখ মুখ মুছে দিয়ে বুকে চেপে ধরলো। মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— আ’ম সরি রোদ।

রোদ বুঝি আর থামে। বাচ্চাদের যেমন বকা দিয়ে আদর করলে বেশি কান্না করে রোদও তেমনই আদ্রিয়ানের আদরে লাই পেয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদের কোমড় জড়িয়ে ধরে উঁচু করে বারান্দায় রাখা কাউচের উপর হেলান দিয়ে বসে রইলো ওর উপর উবুর হয়ে বুকে মুখ গুজে শুয়ে আছে রোদ। আদ্রিয়ান বেশ কিছু সময় রোদকে আদর দিলো তো একপর্যায়ে যেয়ে রোদ একটু থামলো।

আপাতত রোদ আদ্রিয়ানের বুকের উপর হেলে ঢুলে শুয়ে আছে। একটু পর পরই নাক মুখ ঘঁষে ঘঁষে মুছে দিচ্ছে আদ্রিয়ানের বাহুর দিকের টিশার্টে। আদ্রিয়ান ও কিছু বললো না। থাক না একটু ভালোই তো লাগছে আদ্রিয়ানের। অন্য সময় হলে নিশ্চিত আদ্রিয়ানের একটু খুঁত খুত লাগতো কিন্তু অবাক করার বিষয় আজ তেমন কিছুই লাগলো না আদ্রিয়ানের। হয়তো ভালোবাসার মানুষের সব কিছুই ভালোলাগে। পরক্ষণেই ভাবলো আদ্রিয়ান, সে কি সত্যি ভালোবেসে ফললো এই রোদকে? আচ্ছা আদ্রিয়ান বুঝি শুধু মাত্র মিশির জন্য বিয়ে করেছে নিজের জন্য বুঝি নয়? আদ্রিয়ানের ভাবনার মাঝে রোদের ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই দেখলো ওর মা। রোদ বেশকিছুক্ষণ কথা বললো। কথা শেষ হতেই আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,

— বিচার দিলে না আমার নামে?

— বিচার কেন দিব?

— ধমকালাম যে?

রোদ আসলে একজায়গায় কথা আরেক জায়গায় লাগানো পছন্দ করে না কারণ এতে সমস্যা বাড়ে। তাই কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ওকে টেনে থুতনিতে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

— কাল মিশান আসবে।

রোদ একটু নড়েচড়ে উঠলো। আসন পেতে বসে জিজ্ঞেস করলো,

— আচ্ছা ও কি পছন্দ করে? আমি কি করব ওর জন্য? আচ্ছা ও কি জানে? মানে কিভাবে?

আদ্রিয়ান আস্তে করে রোদের ঠোঁটের উপর আঙুলের ছোঁয়া দিলো। রোদ যেন মুহূর্তেই চুপ করে গেল। আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে বললো,

— তুমি তোমার মতো ওর সাথে মানিয়ে নিও৷ আমি জানি আমার রোদ পারবে।

“আমার রোদ” কথাটা ভালো লাগলো রোদের। আদ্রিয়ান রোদের হাত ধরে বললো,

— আসো ঘুমাব।

— আমি না সন্ধ্যায় উঠলাম এখন ঘুম আসবে না।

— আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিব। চলো।

অগত্যা রোদ বিছানায় গেল। আদ্রিয়ান এক পাশে মিশিকে আরেক পাশে রোদকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো৷ আদ্রিয়ানের বুকের রোদ আঁকিবুঁকি করতে লাগলো। এ যেন অন্য রকম এক ভালোলাগা। ভিন্ন এক রং এর আগমন আদ্রিয়ানের জীবনে। রং টা ভালোলাগার। ভালোবাসার। ভালোবাসার ভিন্ন এক রং।

______________

ঘুম থেকে আজ মিশি আগে উঠে বাবার বুকে চড়ে বসলো। পেটের উপর গোল হয়ে বসে বাবার চোখ আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করলো। আদ্রিয়ান চোখ খুলে মিষ্টি করে হাসলো। মেয়েকে বুকে চেপে ধরে চুমু খেল। ওকে নিয়ে দরজা খুলতেই মিশি মুখ না ধুয়েই দৌড়ে গেল বাইরে। আদ্রিয়ান বিছানায় তাকাতেই চোখ যেন আটকে গেল। এলোমেলো করে ঘুমিয়ে আছে রোদ। ঢোলা টিশার্ট উপর দিকে উঠে ফর্সা পেট দৃশ্যমান হচ্ছে। চেয়েও নজর ঘুরাতে পারলো না আদ্রিয়ান। বহু কষ্টে ঢোক গিলে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো।

টেবিলে বসে মিশিকে খাওয়াচ্ছে রোদ। পাশেই আদ্রিয়ান বসা। নিজের ব্রেডের ভিতর ডিম ডুকিয়ে স্যান্ডউইচ এর মতো বানিয়ে দুই কামড় খেয়ে আবার ওটা রোদের মুখের সামনে দিলো। রোদ ও খেয়ে নিলো। মিশির খাওয়া হতেই আদ্রিয়ান রোদকে পরটা ডিম দিলো। হঠাৎ করেই মিশি চিৎকার করে উঠলো যার ফলে কেঁপে উঠে নিজের উপর পানি ফেলে দিলো রোদ।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে