#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫৪
[পর্বটা একটু রোম্যান্টিক। চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
আদ্রিয়ান রুমে ডুকেই দেখলো রোদ বই পাশে রেখে ছেলে’কে ফিড করাচ্ছে। আদ্রিয়ান এসেছে প্রায় ঘন্টা খানিক আগে। এতক্ষণ নিচে বাবা আর আরিয়ানের সাথে কিছু জরুরি কথা বলছিলো। জারবা’র বিয়ের ব্যাপারে ছিলো মূলত সব আলোচনা। ছেলে ইসট্যাবলিস্ট, মেয়ে ও বয়স থিকথাক। সবচেয়ে বড় কথা আকদ তো হয়েই আছে তাহলে আর দেড়ী কিসের। ইয়াজের ও ছোট্ট একটা পরিবার। তারা অনেক করে চাইছেন জারবা’কে ঘরে তুলতে। এখন যেহেতু সবকিছু ঠিকঠাক আছেই তাহলে আর দেড়ী করেই বা লাভ কি? আরিয়ান আর আদ্রিয়ান দু’জন ই রাজি আছে। ওর মা ও রাজি। ইয়াজ ছেলেটা অনুমতি নিয়ে নিয়ে জারবার সাথে সপ্তাহে একবার দেখা করে। তাও এত সঙ্কোচ তাই বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো। কথাটা মুখে বললেও তার এই আধ বোকা মেয়েটা যে বুক থেকে সরে যাবে ভাবতেই কলিজা কাঁপে তার। সকলের সহমত হলো। সাবা’কে জিজ্ঞেস করলে সেও মত দিলো। এখন বাকি রোদ’কে বলা। জারবা বোকাটাকে বললেও যা না বললেও তাই। আদ্রিয়ানের বাবা আদ্রিয়ানের দিকে চোখ রেখে বললেন,
— রোদ মামনি’কে জিজ্ঞেস করো। দেখো কি বলে? রাজি হলে তারপর ইয়াজের বাসায় কল দিব।
— রোদ আবার রাজি না হবে আব্বু?
— তবুও জিজ্ঞেস করবে। আমাকে জানাবে।
“ঠিক আছে” কথাটা বলেই রুমের দিকে অগ্রসর হয় আদ্রিয়ান। গম্ভীর কণ্ঠে আদ্রিয়ান বললো,
— পড়াশোনা কত দূর?
রোদ হাসি মুখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কখন এলেন? একটু আগেই কল দিলাম। মিশি আপনার কথা বারবার জিজ্ঞেস করছিলো?
— আধ ঘন্টা আগেই এসেছি। কল রিসিভ করি নি কারণ বাসায় ই ছিলাম। আর লাস্ট উত্তর মিশি’র সাথে দেখা করেই এলাম। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
কথাগুলো বলতে বলতেই আবার ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। তার ফিড শেষ। এখন বাবা’কে টুকটুক করে দেখছে আদ্র। আআ উউ শব্দ তুলছে। আদ্রিয়ান যখনই আদুরে গলায় ডাকলো,
— আব্বা? আমার বাবা কোথায়? আমার আব্বা কি পেট ভরে খেয়েছে?
ছোট্ট আদ্র খুশিতে আটখানা তখন। বাবা মা’কে সে ভালো করেই চিনে। গালে গাঢ় টোল ফুটিয়ে হাসছে সে সাথে উঙ্গা বুঙ্গা করছে। বাবা’র প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে মূলত। এভাবে ছেলের সাড়া পেয়ে খুশিতে কিছুক্ষণ বুকে নিয়ে কিছুক্ষণ হাতে দুলালো আদ্রিয়ান। রোদ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আদ্রিয়ানের কথায় টনক নড়লো। আদ্রিয়ান আবারও বলে উঠলো,
— ফ্রেশ হয়ে এসেই পড়া ধরব। শেষ করো ঝটপট। আর হ্যাঁ। জারবা’র বিয়ের অনুষ্ঠান সারতে চাইছে সবাই। আব্বু তোমার মতামত চাইলো।
রোদ লাফিয়ে উঠার আগেই আদ্রিয়ান ওকে থামিয়ে বললো,
— কোন লাফালাফি না।
রোদ মুখটা গম্ভীর করে নিলো। এভাবে বলার কি আছে? এমন কেন করছে আদ্রিয়ান? আজ এসে একটা কপালে চুমু ও দিলো না? কই বাচ্চাদের তো ঠিকই আদর করলো। অভিমানে টাইটুম্বুর হলো রোদের মধ্যে থাকা প্রেমিকার ন্যায় মন। মুখে বললো না কিছুই। চুপচাপ বইতে মনোযোগ দিলো। আদ্রিয়ান ওর বাহুতে ঘুমন্ত আদ্র’কে আদর দিয়ে রোদের পাশে শুয়িয়ে দিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকলো।
রোদ ভেংচি কাটলো সেদিকে তাকিয়ে। সকাল থেকেই এমন ভুজুংভাজুং শুরু করেছে আদ্রিয়ান। বিগত দুই মাস ধরে রোদকে প্যারার মধ্যে রেখেছে। রোদ হাজার বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে ও এখন পড়াশোনা করতে চাইছে না। মন উঠে গিয়েছে। কিছুতেই পড়া হবে না। বাকিটা জীবন সংসার করতে চায় রোদ। আর আদ্রিয়ানের তো টাকাপয়সা আছেই। কি দরকার রোদকে পড়িয়ে?
রোদের এমন সব কথায় আদ্রিয়ান সেদিন ভবের রাগা রেগেছিলো। ধমক কয়েকটা যে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ওর ধমকে রোদ তো কেঁপেছিলোই ঘুমন্ত আদ্র কেঁদেছিলো গলা ফাটিয়ে। আদ্রিয়ানের কথা একটাই ওর সংসার করতে হলে পড়াশোনা করতেই হবে। আবেগ দিয়ে জীবন কাটবে না। সংসার এখন ভালোলাগছে পরবর্তী জীবনে ভালো লাগবে না। একঘেয়ে চলে আসবে। বিরক্ত হয়ে উঠবে। তারচেয়ে বড় কথা স্বামী’র যা আছে তা আজীবন স্ত্রী’র হক থাকবে কিন্তু নিজের বলেও কিছু থাকা দরকার। অন্তত পক্ষে সন্তান পালনের জন্য হলেও একজন মা’কে শিক্ষিত হওয়া উচিত। নিজের জন্য হলেও তার নিজের কিছু থাকা দরকার। নেপনিয়ন বলেছিলেন,”তুমি আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটা শিক্ষিত জাতি দিব”।
মোট কথা আদ্রিয়ান রোদকে পড়াবেই। মেডিক্যাল যখন ছেড়েছিলো তখন পরিস্থিতি মোটেও হাতে ছিলো না। এতসব অনিশ্চিয়তার মাঝে ঠেলে দিতে পারে নি আদ্রিয়ান রোদ’কে কিন্তু এখন রোদকে ছাড় দিবে না ও। ভার্সিটি’তে এক্সাম দেওয়াবে। তাই পড়াশোনা করাচ্ছে এতটা চাপ দিয়ে।
সকালেও রোদ গাল ফুলিয়ে বলেছিলো,
— কোন হাসব্যান্ড কি এমন করে? সকাল সকাল তারা রোম্যান্টিক মুডে থাকে আর আপনি থাকেন টিচারগিরি করার মুডে।
আদ্রিয়ান তখন রোদকে ত্যাড়া ভাবে বলেছিলো,
— সকাল সকাল একেক জনের বেডরুমে উঁকি দাও তুমি?
ব্যাস রোদ চুপ। আদ্রিয়ান আর যাই হোক রোদের পড়ার ব্যাপারে একদম স্ট্রিক্ট। সেই রাগ এখনও কিছুটা আছে যা তার কাজ আর কথায় প্রকাশিত।
.
রাত প্রায় ১২ টা। বাইরে আজকে আবার আবহাওয়া তান্ডব করছে। মিশান রোদের পাশেই পড়ছিলো। রোদ নিজে পড়া নিয়ে গুইসুই করলেও মিশান আর মিশি’কে নিয়ে সিরিয়াস। মিশানের লাস্ট ত্রিকোণমিতির ম্যাথটা করিয়ে ওকে ছুটি দিলো রোদ। এরমধ্যেই আদ্র জাগলো। রোদ মিশানের হাতে দুধের গ্লাসটা দিয়ে বললো,
— আব্বু শেষ করো এটা।
— মা আজকে না খাই?
মিশানের এই নিষ্পাপ দাবিতে শুধু চোখ রাঙায় রোদ। ব্যাস শেষ। মিশান ভদ্র মতো গিলে নিলো। রোদ টিস্যু হাতে ওর মুখটা মুছিয়ে বললো,
— যাও। সোজা ঘুম। ফোন আমার কাছে আছে। এক্সামের আগে আর পাচ্ছেন না আব্বাজান।
— মা শুধু আজকে প্লিজ। এক ঘন্টা। প্রমিস।
রোদ একবার মিশানের দিকে তাকিয়ে নিজের ফোনটা দিয়ে বললো,
— এটা নাও। তাও তোমার টা পাবা না।
মিশান মায়ের ফোন পেয়েই খুশি হলো। মা’য়ের হাতে চুমু খেয়ে বিদায় নিলো জয়ী’র বেশে যেন সে মহা ভারত শুদ্ধ করেছে।
রোদ ও হাসলো। সামনে মিশানের ফাইনাল তাই এতটা চাপে রেখেছে। তবুও সামান্য একটু ছাড় তো দিতেই হয়। ভাবতে ভাবতে জাগন্ত আদ্র’কে কোলে তুললো। ডায়াপার চেঞ্জ করতে হবে। রোদ ওর ডায়াপার চেঞ্জ করতে করতে ছেলের সাথে আলাপ জুড়েছে যার পুরোটাই আদ্র’র বাবা’র বদনাম। আদ্র’র হয়তো তা পছন্দ হচ্ছে না তাই নতুন ডায়াপার টাও নষ্ট করে দিলো৷ রোদ হা-হুতাশ করতে করতে বললো,
— বাহ বাহ। কে বলবে আমার ছেলে? বাবা’র নামে দুটো বদনাম করেছি ওমনিই বদলা নিলি? বাবা’র ছেলে!
আদ্র ছোট্ট ছোট্ট মুখ করে হাসছে। কেমন একটা মিষ্টি শব্দ তাতে। রোদ ছেলের পায়ে চুমু খেয়ে বললো,
— তুমি আজীবন এভাবেই হাসো বাবা। মা’য়ের সবটুকু খুশি তোমাদের চারজনের হোক। আমার হায়াত যেন তোমরা পাও।
আরেকটু ঝুঁকে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো রোদ। ফিড করতে করতে ঘুমালো আদ্র।
আদ্রিয়ান রুমে ডুকেই দেখলো আদ্র ঘুমাচ্ছে। রোদও পাশ ফিরে শুয়ে আছে। পা টিপে টিপে সামনে গেলো আদ্রিয়ান। আস্তে করে আদ্র’কে বুকে তুলে দোলনায় শুয়িয়ে দিলো। রোদ টের পাচ্ছে সবই কিন্তু নড়ছে না। এই আদ্রিয়ান ওকে ইদানীং পড়ার নাম করে অনেক জ্বালায়। বাইরে ঝরো বাতাসের তান্ডব আর ভিতরে আদ্রিয়ানের। দরজা লক করে লাইট অফ করে বেডে উঠলো আদ্রিয়ান। পাশেই বউ কিন্তু আদ্রিয়ান কিছুই করতে পারছে না। একটু দুরত্বে শুয়ে পরলো ও। কিন্তু কতক্ষণ? দুই মিনিট যেতেই আদ্রিয়ান পাশে এলো। রোদের সাথে ঘেঁষে শুয়ে পরলো। না কাজ হলো কই? রোদ নড়ছে না আর না ই পাত্তা দিচ্ছে। নিজের মতো কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান এবার নিজেও কাঁথার ভিতর ডুকে পড়লো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে চুমু খেল। দাঁড়ি ভর্তি মুখ ঘঁষে দিলো। কেঁপে উঠল রোদ। সর্বাঙ্গে দংশিত হলো। মুখে রুষ্ট কন্ঠে বললো,
— সরুন। ঘুমাচ্ছি। সকালে পড়া আছে।
থতমত খেলো আদ্রিয়ান। রোদ তাহলে সজাগ। কিন্তু সাড়া দিচ্ছে না কেন? ইশ কি জ্বালা। বউয়ের জ্বালা। সারাদিন বউকে ধমকে ধামকে পড়ানোর কি না এত বড় শাস্তি! মানা যায় এসব? আদ্রিয়ান ভেবে পেলো না তাহলে টিচার স্টুডেন্ট বিয়ে হলে কি মারাত্মক জ্বালায় ভুগে বেচারা জামাই। আদ্রিয়ান পেছন থেকেই রোদের ঘাড়ে মুখ গুজে হাত রাখলো পেটে। ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো কিন্তু বাঁধা দিচ্ছে রোদ। আদ্রিয়ান জোর করে ওকে নিজের দিকে ঘুরাতেই দেখলো রোদের চোখে পানি। ব্যাস শেষ হলো আদ্রিয়ান। বউ কেন কাঁদে তার? রোদকে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমার বউ কাঁদে কেন? কি হয়েছে সোনা? এই রোদ? বলো?
— বাসায় এসে এমন করলেন ক্যান? একটু আদরও দেন নি। নাই জিজ্ঞেস করেছেন কিছু। চুমুও দেন নি কপালে। অথচ বাচ্চাদের বেলায় সব ঠিক। আমার সাথেই এমন কেন?
— আচ্ছা এই যে কানে ধরলাম। আর হবে না এমন জান। তখন এমন করলে পড়তা তুমিই বলো? প্লিজ পাখি কাঁদে না।
রোদ আদ্রিয়ানের বুকে রইলো। আদ্রিয়ান নিজের মতো বউ’কে আদর দিচ্ছে। যখন দুজন ওষ্ঠ চুম্বনে ব্যাস্ত তখনই বুঝলো রোদ আজ আর আদ্রিয়ান অল্পতে তুষ্ট হওয়ার নয়। হলোই তাই। আদ্র হওয়ার পর এই প্রথম এতটা কাছাকাছি এলো দু’জন। রোদের শারীরিক অবস্থা ভেবে আদ্রিয়ান এতদিন কাছে আসে নি। আসলেও ছিলো খনিকের জন্য। কিন্তু আজ যেন আদ্রিয়ান এতদিনের ভালেবাসা। জমানো প্রেম সব উতলে দিলো। রোদ সহ ভেসে গেলো স্বর্গ সুখে।
.
রাত এখন গভীর। ঝরের বেগ কমেছে। আধো আধো আলোতে তখন আদ্রিয়ান হারিয়েছে রোদের মাঝে। বালিশে মুখ গুজে অল্প স্বরে কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান আদ্র’কে দেখতে উঠেছিলো। স্পর্ট টের পেয়েছে ও রোদের কান্না। তরিঘরি করে এগিয়ে গিয়ে রোদকে ধরে বললো,
— রোদ? রোদ কি হয়েছে? এই কষ্ট হচ্ছে?
রোদ কথা বলতে পারলো না। আদ্রিয়ান ধরে উঠানোর চেষ্টা করলো। রোদকে বুকে চেপে নিতেই কিছুটা শ্বাস কষ্ট হলো রোদের। আদ্রিয়ান ভয় পেয়ে গেলো। কখনো তো এমন হয় নি তাহলে আজ? এমন মুহূর্তে কি করবে আদ্রিয়ান? রোদে’র পিঠে হাত বুলালো। বেশ খানিক পর ও শান্ত হতেই পানি খাওয়ালো আদ্রিয়ান। রোদ খেলো। একটু ভালো লাগছে। আদ্রিয়ান আলতো হাতে রোদের মুখটা তুলে জিজ্ঞেস করলো,
— অনেক কষ্ট হচ্ছে?
— উহু।
— কষ্ট হচ্ছিলো বললে না কেন?
— হচ্ছিলো না কষ্ট। শুধু খারাপ লাগছিলো একটু।
— বলা যেত না।
— উমম।
রোদ মাথা এলিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলেই উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো ওয়াসরুমের দিকে।
ফ্রেশ হয়ে এসেই আদ্রিয়ান বুঝলো রোদের সমস্যা হচ্ছে। একটা পেইন কিলার খায়িয়ে দিলো। রোদকে ঘুম পারাবে তখনই আদ্র জেগে উঠলো। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছেলেকে বুকে তুললো। না থামছে না সে। ক্ষুধা লেগেছে নিশ্চিত। দূর্বল কন্ঠে রোদ বললো,
— দিন আমাকে। খাবে ও।
আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে রোদের পাশে শুয়িয়ে দিলো। রোদ খাওয়াতেই শান্ত আদ্র। আদ্রিয়ান বুকে তুলে নিলো ছেলেকে। এক হাতে টেনে নিলো রোদকে। ওর অর্ধাঙ্গিনী’কে। হাড়ে হাড়ে টের পায় আদ্রিয়ান অর্ধাঙ্গিনী শব্দটা কেন ব্যাবহার করা হয়।
___________________
আজকে রোদের পরিক্ষা। এডমিশন এক্সাম আজ। রোদ যতটা রিল্যাক্স মুডে আছে ঠিক ততটাই টেনশনে আছে আদ্রিয়ান। রোদ রয়ে সয়ে মিশি’কে খাওয়ালো। মিশানের টিফিন বানিয়ে ভরে স্কুলে পাঠালো। আদ্রিয়ান যে এত তাড়া দিলো সেই বেলায় শূন্য। রোদ এখন আস্তে ধীরে নিজের খাবার খাচ্ছে। আদ্রিয়ান ব্যাস্ত হাতে একটা ডিম সেদ্ধ নিয়ে রুমে ডুকলো। পাশে আদ্র’কে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে রোদ খাচ্ছে। আবার ছেলের সাথে আলাপ করছে। আজ সে পরিক্ষা দিতে যাচ্ছে এটা ওটা সবই ছেলেকে জানাচ্ছে। “উঙ্গা বুঙ্গা” করে আদ্র ও মা’র কথার উত্তর দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে পাতলা ঠোঁট জোড়া নেড়ে নেড়ে শব্দ তুলছে। আবার মুখে আঙুল পুরে তা চুষছে। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে রোদের এত অনীহা দেখে কিছুটা রাগ হলো। এত নির্লিপ্ত থাকে কেউ? সিরিয়াসলি! হাতের ডিম সেদ্ধ’টা রোদের মুখে ডুকাতেই “ওক” করে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি পানি দিলো। রোদ গিলে মিষ্টি কন্ঠে বললো,
— মে’রে ফেলবেন নাকি মাস্টার মশাই?
— কি? মাস্টার মশাই! সিরিয়াসলি রোদ?
— নয়তো কি? আমার পার্সোনাল মাস্টার মশাই।
— ফালতু কথা বাদ দাও। রেডি হবা। উঠো।
— প্রায় ৩ ঘন্টা বাকি। এত তারাতাড়ি কি করব রেডি হয়ে?
— এখনই যাবে উঠো।
রোদ উঠতে নিলেই আদ্র ঠোঁট ফুলালো। কাঁদবে কাঁদবে ভাব। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলে নিলো। বাবা’কে পেয়ে আদ্র হাসছে। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ করছে সে। রোদ গেলো রেডি হতে নাহলে আবার এই মাস্টার মশাই তেঁতেঁ যাবে।
আজ প্রায় বছর খানিক পর রোদকে এমন রুপে দেখতে পেলো আদ্রিয়ান। ম্যাট্যার্নিটি ড্রেস ছেড়ে আজ আবার সেই পুরোনো ড্রেস পরেছে। হাটু সমান ফ্রক আর হিজাব। হালকা একটু লিপস্টিক লাগালো। রোদ রেডি হতে আদ্রিয়ান কেমন দৃষ্টি’তে তাকালো। এতদিন পর স্ত্রী’কে এমন রুপে দেখে ঘায়েল হলো বুঝি? হবেই তো। প্রেগ্ন্যাসির সময় শরীরে পানি এসে যেই ভাবে ফুলে ছিলো তা এখন নেই। বিবাহিত হলে যতটুকু স্বাস্থ্য থাকে তাই। আদ্রিয়ানের নাদুসনুদুস বউ।
পুরুষ নাকি বছর গড়ালেই বউয়ের প্রতি অনাসক্ত হয়। বিতৃষ্ণা আসে।কই আদ্রিয়ানের তো আসে না। মোটেও না। বরং মুগ্ধ হয়। চোখ শীতল হয়। বুকে শান্তি লাগে। প্রেম প্রেম অনুভব হয়।
এতদিন যে হয় নি তা নয়। হয়েছিলো আরো বেশি। অগোছালো,ঘর্মাক্ত নারীদের দেখলে নাকি পুরুষ আকর্ষণ অনুভব করে না। স্ত্রী’দের প্রতি আসে অনিহা। অথচ তারা এটা বুঝে না সারাদিন তার সংসার আর বাচ্চা সামলাতেই এই হাল হয়েছে একসময়ের গোছালো সুন্দর রমণীর।
.
আদ্রিয়ান চেয়েছিলো আদ্র’কে রেখে যাবে। তা বোধহয় পছন্দ হয় নি আদ্র’র। গলা ফাটিয়ে সে কাঁদছে। মা ছাড়া তার চলছে না। অবশেষে ওকেও নিয়ে বের হলো। এখন খুশি সে। বাবা’র বুকে ঘেঁষে আছে। হাসিহাসি তার মুখখানা। সবার থেকে বিদাই নিয়ে রওনা হলো ওরা।
গাড়িতে বিভিন্ন ভাবে রোদকে বুঝাচ্ছে আদ্রিয়ান। রোদ বইতে চোখ বুলাচ্ছে। চান্স পেতেই হবে। নিজের জন্য না হোক এই পাগল আদ্রিয়ানের জন্য হলেও। গাড়ি থেকে নামার আগে ছেলেকে একবার ফিড করালো রোদ। পরিক্ষা মাত্র ১ ঘন্টা’র। তবুও দুই’টা ফিডার বানিয়ে এনেছে। ওদের বিদায় জানিয়ে রোদ ডিপার্টমেন্টের ভেতর গেলো। হাজার মানুষের ভীরে হারিয়ে গেলো একসময়। এদিকে আদ্র’কে নিয়ে প্রথম আধ ঘন্টা গাড়িতে থাকলেও এরপরই পাগল হলো আদ্র। মোচরা মোচড়ি করছে। কাঁদছে। আদ্রিয়ান ফিডার মুখে দিলেও খাবে না সে। মা দরকার তার। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো না আধ ঘন্টায় এই অবস্থা হলে রোদ ভার্সিটি আসলে তখন কি হবে?
ছেলের কান্নায় সেসব চিন্তা বাদ দিলো আদ্রিয়ান। না পেরে একসময় বের হলো। আশে পাশে এত এত মানুষ। সবাই ই গার্ডিয়ান। কেমন টুকটুক করে দেখছে আদ্রিয়ানকে। এত গরমের মধ্যে ঘেমে নেয়ে উঠলো আদ্রিয়ান। ছোট্ট আদ্র’কে বুকে নিয়ে হাটছে এদিক ওদিক। কয়েকজন গার্ডিয়ান এগিয়ে এসে কথা বললো। আদ্রিয়ান অল্প সল্প কথা বলে ছেলে নিয়ে ব্যাস্ত। অনেকে আবার প্রশংসা ও করলো। এমন একটা ছেলে বাচ্চা নিয়ে এসেছে বউকে এডমিশন টেস্ট দেয়াতে। সত্যিই প্রশংসনীয়।
রোদ বের হতেই আশে পাশে তাকালো। এত ভীর ঠেলে বের হতেই কিছুটা ছুটে এলো৷ আদ্র কাঁদছে। মুখ থেকে শুধু “আম আম আম” আওয়াজ করছে। নিশ্চিত ক্ষুধা লেগেছে। রোদকে ছুটে আসতে দেখে আদ্রিয়ান ও এগুলো। ওর হাতের ফাইল’টা নিতেই রোদ ছেলেকে বুকে নিলো। আদর আদর কথা বললো,
— আব্বা? কি হয়েছে আমার বাবা’র? মায়ের জান কেন কাঁদছে?
আদ্র’র লেগেছে ক্ষুধা। সে কি না শুনে? গাড়ি এখান থেকে কিছুটা দূরে। অন্য সাইডে কিছুরা ঝোঁপ আছে। ঐ আবার চেয়ার ও রাখা। গার্ডিয়ানদের বসার জন্য। আদ্রিয়ান ওই দিকেই নিয়ে গেলো ওদের। রোদ চেয়ারে বসতেই আদ্রিয়ান নিজের ব্লেজার’টা খুলে রোদের বুক ঢেকে দিলো। রোদ ছেলেকে খাওয়ালো ওভাবেই। এ দিকটা আপাতত নির্জন কারণ সবাই ই ফিরে যাচ্ছে। খেয়েই শান্ত আদ্র। একেবারে ঘুম সে। আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,
— ওর হয়েছে?
— ঘুম।
— কি যে করলো। নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরালো আমাকে।
রোদ হাসলো৷ বললো,
— একদম ঠিক হয়েছে।
বউ বাচ্চা নিয়ে রওনা দিলো আদ্রিয়ান। ছোট্ট ছোট্ট কিছু মুহূর্তও জীবনে বড় বড় শিক্ষা দেয়। তা আজ আদ্রিয়ান ও টের পেল। এই ছোট্ট জানটাকে ঘিরে তার পৃথিবীর আলো নতুন রং এ রঙিন হয়েছে। নতুন ভাবে সেজেছে। নতুন কিছু রং হয়তো যুক্ত হবে আর পুরনো কিছুটা ফিঁকে পরবে।
#চলবে…..
( রাতুল দিশাকে পাবেন আগামী পর্বে।)