#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৭(বর্ধিতাংশ)
কলিং বেল বাজতেই ইয়াজের মা খুলে দিলেন। খুলতেই রোদকে দেখে জানপরাণ অবাক হয়ে বললেন,
— কিরে তুই এখানে? একা এসেছিস? হায় আল্লাহ! এই অবস্থায় এখানে কি করিস?
সামনের জনকে বলতে না দিয়েই একনাগারে কথা গুলো বলেই আবার গলা ফাটিয়ে ডাকতে লাগলেন,
— ইয়াজের আব্বু! ইয়াজের আব্বু! কই মরলা তুমি? তারাতাড়ি এসো।
ভদ্রলোক বউয়ের ডাকে একপ্রকার দৌড়ে এসে নিজেও হতবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছেন। এই অবস্থায় রোদকে আশা করে নি দু’জনের একজনও। রোদ কিছু বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তখনই পেছনে আদ্রিয়ান আর ড্রাইভার এলো। ড্রাইভার হাতের সবকিছু ভেতরে নিয়ে ডুকতেই ইয়াজের বাবা ওর মা’কে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললেন,
— নতুন জামাই এসেছে। সরো সরো। আসুন জামাই ভেতরে আসুন।
বছর গড়িয়ে গেলেও আদ্রিয়ানকে এখনো শশুড় বাড়ীর লোকজন নতুন জামাই আদর দেয়। এতে বেশ লজ্জা ও পায় আদ্রিয়ান। ইয়াজের মা ও রোদকে ধরে ভেতরে নিলেন। সবাই সব জানে। রোদ কতক্ষণ ইয়াজের মা’কে ধরে কেঁদেছে। অস্থির লাগাতে রোদের বোরকাটা খুলতে সাহায্য করলো আদ্রিয়ান। ইয়াজের মা-বাবা ততক্ষণে আপ্যায়নে কমতি রাখলেন না। ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা খুবই নরম এবং উৎফুল্ল স্বভাবের। তাদের যে প্রেমের বিয়ে তা এতবছরে তাদের আচরণেই বোঝা যায়। টোনাটুনির সংসার তাদের। এক ইয়াজ আছে যে সারাদিন থাকে না। এদের মধ্যেই আবার যোগ দিবে জারবা। ভাবতেই আদ্রিয়ানের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। তার ছোট্ট বোনটার জন্য একদম পারফেক্ট একটা ফ্যামিলি।
অল্প খাওয়া দাওয়া’র পরই আদ্রিয়ান বললো,
— ইয়াজ আসবে কখন? রোদের শরীরটা একটু খারাপ তাই।
ভদ্রলোক সাথে সাথেই কল করলেন ছেলেকে। ইয়াজ জানালো আধ ঘন্টা লাগবে আসবে। রোদ সোফাতেই ইয়াজের মা’য়ের কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছে। গল্প করছে বললে ভুল ইয়াজের বদনাম করছে ও। ইয়াজের মা হাসছেন শুধু। এখন যদি উনি রোদের সাথে তাল মিলিয়ে ইয়াজের বদনাম করে তাইলেই ফুঁসে উঠবে রোদ। ছোট থেকেই এমন রোদ। নিজে ইয়াজ’কে বকে উদ্ধার করবে অথচ অন্য কেউ কিছু বললেই চড়ে উঠে একদম। এলাকায় এ নিয়েও নানা কথা বলেছিলো মানুষ। একটা ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব’কে কখনো কেউ স্বাভাবিক ভাবে দেখে না তাও যদি হয় বয়সের এত পার্থক্য।
.
ইয়াজ বাসায় এসেই রোদ আর আদ্রিয়ান’কে দেখে চমকালো। আদ্রিয়ানের সামনে এসে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনারা এখানে? কোন সমস্যা ভাই?
— আরে না।
পেছন থেকে রোদ ডেকে উঠলো,
— ইয়াজ?
ইয়াজ হনহনিয়ে রুমে চলে গেল। ইয়াজের মা গলা উঁচিয়ে ছেলেকে ধমকে ডাকলেন। লাভ হলো না। রোদই উঠে দাঁড়িয়ে গেল। একহাত পেটে রেখে শ্বাস টেনে হাটা দিলো। আদ্রিয়ান উঠলো না। রোদ-ইয়াজের সরাসরি কথা বলা দরকার। রোদ নক না করেই রুমে ডুকলো। ইয়াজ তখন আলমারি থেকে কাপড় বের করছে। রোদ ডাকলো,
— ইয়াজ?
………..
— কথা বলবি না?
…………
— এই ইয়াজ পিয়াজ? তাকা না একবার।
এবারও নিশ্চুপ ইয়াজ। রোদের কান্না এলো। ধরা গলায় দেয়ালে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— অনেকক্ষণ ধরে এসেছি আমি। অস্থির লাগছে। একবার কথা বল। চলে যাই। বাচ্চারাও বাসায়। মিশি কাঁদবে একটু পর।
ইয়াজ কথা বললো না। রোদ আবারও বললো,
— আমার ভুল ছিল। মাফ করে দে। প্লিজ। কথা বল। আমি কি করতাম তুই বল। ঐ সময় আমার মাথায় এতকিছু ছিলো না। টেনশনে ছিলাম। সব তো জানিস। তাহলে কেন এমন করছিস? এই ইয়াজ?
ইয়াজ ঘুরে তাকালো না। ঐ দিনের কথা কিভাবে ভুলবে ও? আড়াই মাস আগে রোদের অবস্থা যখন খারাপ তখন শুনেই ছুটে গিয়েছিলো ইয়াজ৷ ইয়াজকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিলো রোদ। ইয়াজ কথা বলতে নিলেই রোদ বলেছিলো,
— তুই চলে যা। তোর সাথে সব সম্পর্ক শেষ। আর আসবি না। যা এখান থেকে।
কারণ জানতে চাইলেই রোদ মুখ ঘুরিয়ে বলেছিলো,
— আমি আমার সন্তানের ছুঁয়ে ওনার কাছে ওয়াদা করেছি কোন ছেলে বন্ধু রাখব না এমনকি তুই ও না।
বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো ইয়াজ। তবুও হাসিমুখে এসে বলেছিলো,
— গাধা। কসম কাটা কবিরা গুনাহ জেনেও কেন করেছিস? বাদ দে ওসব। এদিক তাকা। রোদ? এই। কথা বল?
রোদ বলে নি। এমনকি ইয়াজকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলো৷ ইয়াজের চোখ ঝরা পানির সাক্ষী ছিলো ওর মা-বাবা।
আদ্রিয়ান রোদকে অনেক বুঝায়। এসব ভিত্তিহীন। আদ্রিয়ান তো কোন কসমের জোরে না বরং সম্পূর্ণ তাওয়াককুল আল্লাহর উপর রেখেই নিজের সন্তানদের মারার মতো জঘন্য কাজ করে নি। সেই থেকে ইয়াজের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে রোদ অথচ ইয়াজ কথা বলতে নারাজ।
রোদের হঠাৎ করেই বমি বমি পাচ্ছে। ওর মুখ থেকে শব্দ বের হতেই ইয়াজ ঘুরে তাকিয়ে অস্থির রোদকে দেখে তারাতাড়ি ধরে। ওয়াসরুমে ডুকেই বমি করে দিলো রোদ। পেটের সবটুকু ফেলে দম নিলো। ইয়াজ ওখান থেকেই নিজের মা আর আদ্রিয়ানকে ডাকতেই তারা এলো তারাতাড়ি। আদ্রিয়ান রোদকে ধরে মুখ ধুয়িয়ে বের হলো। এদিকে ইয়াজ বমি পরিস্কার করে বের হলো। আশ্চর্য ইয়াজের একটুও ঘৃণা লাগছে না। রোদ’কে কখনো পর ভাবে নি ইয়াজ। তাই হয়তো ঐ দিন ইয়াজ’কে পর ভেবে ওভাবে বলাটা হজম হয় নি। ইয়াজ বের হতেই দেখলো আদ্রিয়ান রোদ’কে ধরে বোরকা পড়িয়ে দিচ্ছে। ইয়াজের মা হাতে লেবুর শরবত এনে রোদ’কে বোরকা পড়াতে দেখেই বলে উঠলেন,
— আরে জামাই ওকে বোরকা পড়াচ্ছেন কেন? রাতে খেয়ে যাবেন।
— দুঃখীত আমি। ওর শরীরটা আসলে ভালো না। ও জোর না করলে আমি আনতাম ও না। এখন যেতে হবে।
বলে রোদের হিজাব বেঁধে দিচ্ছে আদ্রিয়ান। ইয়াজের মা এসে শরবতটা ধরে রোদকে খায়িয়ে দিয়ে আবদারের স্বরে বললো,
— রোদ মা আমার। একটু খেয়ে যাবি। তোর আঙ্কেল এখনো কিচেনে। তোর পছন্দের কাচ্চি বানাচ্ছি দুজন মিলে সাথে রায়তা ও আছে। প্লিজ মা একটু খেয়ে যাবি।
রোদ কিছু বলার আগেই ইয়াজ বলে উঠলো,
— ও খাবে ওর ঘাড়েও খাবে। তুমি খাবার দাও টেবিলে।
ইয়াজের মা হেসে বেরিয়ে গেলেন। রোদ ইয়াজের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান রোদ’কে বললো,
— উঠবে?
— হুম।
রোদ উঠতে নিলেই ইয়াজ বলে উঠলো,
— ও এখানেই থাকুক। খাবার রুমে নিয়ে আসছি।
বলেই ইয়াজ চলে গেল। হাতে খাবার নিয়ে ডুকতেই রোদ বললো,
— তুই কথা বলবি না?
— খেয়ে নে আগে।
ইয়াজের মা আদ্রিয়ান’কে নিয়ে টেবিলে বসাতে চাইলে আদ্রিয়ান না করে নিজেই রোদকে খায়িয়ে দিলো। ওই প্লেটে নিজেও খেয়ে নিলো। ইয়াজ রোদের সামনে এসে বসতেই রোদ ওর হাত চেপে ধরে বললো,
— প্লিজ মাফ করে দে।
— দিলাম।
— সত্যি?
— একদম।
— কু*ত্তা এতদিন জ্বালালি ক্যান?
— এই কু*ত্তা বলবি না। আমার বউ রেগে যাবে। শুন একবক্স তোর ব্যাগে ভরে দেই। জারবা’কে দিস। বোকারাণী রেগে আছে মনে হচ্ছে।
–আচ্ছা।
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আদ্রিয়ান রওনা দিলো। বাসায় পৌছালো প্রায় নয়টার দিকে।
________________
প্রায় মধ্যরাত। হঠাৎ করে চিনচিন ব্যাথা করছে রোদের। ঘুমের মধ্যে থাকায় ব্যাথাটা প্রথমে না বুঝলেও আস্তে আস্তে তা তীব্র আকাড় ধারণ করছে। ঘুমের মধ্যেই গুঙিয়ে কাঁদছে রোদ। হঠাৎ চোখ খুলে গেলো। নিজের উপর কারো হাত অনুভব করতেই পাশ ফিরে তাকালো। আদ্রিয়ান আলত হাতে ওকে ধরে ঘুমাচ্ছে। হয়তো গভীর ঘুমে আছে তাই টের পায় নি। রোদ আদ্রিয়ানের হাতটা ধরে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। পেট ব্যাথায় টিকা যাচ্ছে না এখন। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো রাত ২:৪৫। আস্তে করে উঠলো রোদ। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে পেট ধরে রুম থেকে বের হয়ে জারবার রুমে নক করলো। একটু পরই জারবা খুলে রোদকে দেখেই চমকে জিজ্ঞেস করলো,
— ছোট ভাবী তুমি এখানে? এত রাতে?
— একটু ধরতো জারবা।
জারবা রোদকে ঝটপট ধরে ভেতরে আনলো। রোদ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে হাঁপাচ্ছে। ব্যাথায় মুখ নীল হয়ে যাচ্ছে যেন। বহু কষ্টে বললো,
— জারবা বোন আমার মামনি’কে একটু ডেকে দাও না। তোমার ভাইয়া’কে ডেকো না কিন্তু।
জারবা দৌড়ে বেরিয়ে গেল। রোদ আদ্রিয়ান’কে জাগাতে চাইছে না। লোকটা তো ঘুমালোই কিছুক্ষণ আগে। রোদ নিজের ব্যাথা লুকাতে চায় আদ্রিয়ান থেকে। কেন জানি ওর ভয়গুলো শুধু বাড়ছে। যতদিন যাচ্ছে ততই বেড়ে যাচ্ছে ভয়গুলো। আদ্রিয়ান এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ভয় ওর। রোদের ব্যাথায় আদ্রিয়ান নিজেই পাগল হয়ে যায়। এরমধ্যেই তো দুই বার বুকে ব্যাথা উঠেছিলো যার কারণ যে অতিচিন্তা তা বুঝতে বাকি ছিলো না রোদের।
আদ্রিয়ান মা এসেই দেখলো রোদ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। তারাতাড়ি ওকে ধরতেই রোদ এবার জোরেই কেঁদে উঠলো। ওর পেইন হচ্ছে প্রচুর। হঠাৎ জ্ঞান হারায় রোদ। আদ্রিয়ানের মা ভয় পেয়ে বললেন,
— আদ্রিয়ানকে ডাক তারাতাড়ি।
বোকা হলেও গাধা না জারবা। ছোট ভাইকে না ডেকে বড় ভাইকে ডেকে এনেছে। আরিয়ান রোদকে চেক করেই বললো,
— আম্মু মনে হচ্ছে ব্যাথায় জ্ঞান হারিয়েছে। মুখে পানি দাও।
অনেকক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো রোদের। এবার আরিয়ান ও ভয় পেয়ে যায় কিছুটা। যেই মেয়ে এমন ব্যাথায় জ্ঞান হারায় সে লেবার পেইন কিভাবে সহ্য করবে?
.
আদ্রিয়ান মাঝরাতে উঠতে এখন অভ্যস্ত। রোদ এই সময় খায় সাথে তাহাজ্জুদ আছে। কিন্তু আজকে উঠে পাশে খালি পেয়েই গলা চিপে গেলো আদ্রিয়ানের। এক লাফে উঠে ওয়াসরুমে চেক করলো। অস্থির হয়ে দৌড়ে আগেই জারবার রুমে ডুকলো। প্রাণ ফিরে দম নিলো আদ্রিয়ান। ও ইদানীং খেয়াল করেছে রোদ নিজের ব্যাথা, কষ্ট লুকায় আদ্রিয়ান থেকে। আদ্রিয়ান সবই বুঝে কিন্তু কিছু বলে না। তাই বলে রোদ ব্যাথায় এমন চলে আসবে? এগিয়ে গিয়ে দেখলো বেভুর ঘুম রোদ। জারবাকে জিজ্ঞেস করতেই জারবা জানালো একটু আগেই কি হয়েছিলো। আদ্রিয়ান অশ্রু সিক্ত চোখে তাকিয়ে রোদের গালে হাত বুলিয়ে দিলো। আলত হাতে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল। রোদকে শুয়াতেই কিছুটা সজাগ হয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান ওকে শুয়িয়ে দিয়ে রোদের হাত দুটি ধরে ধরা গলায় অসহায়ের ন্যায় বলে উঠলো,
— এই জান তোর কি অনেক কষ্ট হয়?
–উহু।
কান্না ভেজা গলা রোদের। আদ্রিয়ান ঝুঁকে জড়িয়ে ধরলো রোদকে। ওভাবেই বললো,
— আমার থেকে কিছু লুকিয়ো না রোদ। আমার ভালোর জন্য করলেও এতে অতি চিন্তায় খারাপ হবে। তোমার সব কিছু আমাকে জানাবে রোদ। সব কিছু।
— শুনুন।
— বলো।
— রাগ করবেন না তো?
— উহু।
— আমি আমার ওয়াদা রাখতে আবারও ব্যার্থ। বলেছিলাম পড়াশোনায় কোন ক্ষতি হতে দিব না। বিশ্বাস করুন আমি চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। পড়াতে মন বসে না। লেকচারগুলো শুনতে ও মন চায় না। আমি পারছি না। আপনি দয়াকরে আপনার ওয়াদা তুলে নিন। আমাকে মুক্তি দিন। আমি পারছি না। সম্ভব না আমার দ্বারা। এই সেমিস্টার হবে না আমার দ্বারা। ওরা আসুক আমি অন্য কিছু করব। সত্যি বলছি। আপনাকে নিরাশ করব না।
“মুক্তি দিন” কথাটা কানে বিধলো। আদ্রিয়ান নিজেও জানে রোদের পড়াশোনা হচ্ছে না। সামনে যে আরো হবে না তাও জানা। ল্যাব গুলো রোদ দাঁড়িয়ে থেকে করতে পারবে না। এতো এতো চিন্তায় দিকবিদিকশুন্য হয়ে গেল আদ্রিয়ান। কি করবে ও? এদিকে রোদ কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আবারও বুকে জড়িয়ে ধরলো। রোদ কাঁদছে। আচ্ছা এতবড় আত্নত্যাগ আদোও কি কোন মা ছাড়া কেউ করতে পারবে? রোদ কিভাবে এতদূর এসেছে তা জানা আদ্রিয়ানের। মাঝ পথে কতবার ই তো বাঁধা এলো কিন্তু আদ্রিয়ান সাহস জুগিয়েছিলো কিন্তু এখন সাহস দিয়ে কি হবে? রোদের বডি এত লোড নিতে পারবে না। আদ্রিয়ান নিজে দেখেছে রোদ কতটা ডেডিকেটেড ছিলো অথচ আজ সন্তানদের জন্য নিজের ভবিষ্যত,স্বপ্ন ত্যাগ করতে রাজি সে।
রোদকে শান্ত করলো আদ্রিয়ান। দুই গালে চুমু খেল। রোদ হঠাৎ করে দু’জনের ওষ্ঠ মিলাতেই এতদিন পর আদ্রিয়ান ও বেশ এগিয়ে এলো। এতো এতো চিন্তা, অসহায়াত্ব,দ্বিধা সব যেন ভুলে গেল দু’জন। ভালোবাসায় ব্যাস্ত হলো। গভীর থেকেও গভীর আলিঙ্গনে আপ্লুত হয়ে পরলো রোদ-আদ্রিয়ান।
.
সাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই আদ্রিয়ান দেখলো রোদ খাচ্ছে। ডায়াবেটিস এর জন্যই একটু পর পরই ক্ষুধা লাগে ওর। সাথে আবার টুইন তাই একটু বেশি। আদ্রিয়ান এসে রোদের ভেজা চুল গুলো নেড়ে দিয়ে বললো,
— আসো তাহাজ্জুদ পড়ে নেই।
রোদ মুখে বাকিটুকু পুরে উঠে দাঁড়িয়ে হিজাবটা পড়ে নিলো। আদ্রিয়ান নিজের জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে রোদের চেয়ারটা ঠিক তার পেছনে দিলো। এক জোড়া দম্পতি এখন নামাজে দাঁড়িয়ে। দু’জনের চাওয়া একই। তাদের সুস্থ দুটো ছানা যাতে পৃথিবীর আলো দেখে তার মা-বাবার কোলে।
_______________
অস্থির হয়ে রুমে পাইচারি করছে রাতুল। একবার বেডে যাচ্ছে তো একবার উঠে বসছে। মূলত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ও। মেজাজ খিটমিট করছে। দিশার উপর গিয়ে পরছে ওর সকল অভিযোগ। একটা বার কল রিসিভ করছে না এই মেয়ে। জ্বালিয়ে মারবে রাতুল’কে। বিরক্তি’তে মুখ তেঁতো হয়ে গেল রাতুলের। গটগট পায়ে রুম ত্যাগ করলো। এখন যে মাঝরাত তা ভুলে নক করলো অনবরত মা-বাবা’র রুমে। এতরাতে এমন হওয়াতে দুজনই ভয় পেয়ে গেলেন। দরজা খুলতেই রাতুল এক শ্বাসে বলে উঠলো,
— দিশা গেলো একবার ও বললো না। কাল হসপিটাল থেকে রাদ’রা এসে যাবে। কালই গিয়ে দিশা’কে নিয়ে আসবা। না আসতে চাইলে জোর করবা। বাবা’র বাড়ী কাছে বলে হুট হাট করে চলে যাবে এটা হবে না আব্বু। ওকে বুঝাবা এটা। মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। অসহ্যকর।
বলেই আবার চলে গেল রাতুল। এদিকে এতরাতে ছেলের পাগলামি’তে রাতুলের বাবা অবাক হয়ে বললেন,
— কি গো রাতুলের মা দেখলে তোমার ছেলে কেমন বউ পাগলা।
— হুম দেখলাম তো। এখন দিশা আসলেই হলো।
বেশ চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলেন রাতুলের মা।
.
এদিকে হসপিটালের করিডোরে দুই দিনের বাচ্চা হাতে হাটছে দিশা। জাইফাকে এই দুই দিনেই ভাজাভাজা করে দিয়েছে এই পুচকু। বেচারী ঘুমাতেও পারছে না। আপাতত খেয়েছে পুচকু’টা। পেট ভরা তার তবুও মুখে আঙুল পুরে গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে আছে। রাদ জাইফার পাশেই আছে তাই দিশা ওদের একটু স্পেস দিয়ে পুচকোটাকে নিয়ে বেরিয়েছে। হাটতে হাটতে দিন দুনিয়ায় গল্প করছে দিশা। কি বুঝে এই ছানা কে জানে দিশার কথা শুনে “উউ” শব্দ করে। দিশা হাসে। যাক কেউ তো আছে দিশার যে কিনা দিশাকে বুঝলো। কাছের কেউ তো বুঝলো না। একসময় দিশা যাকে পাগল হয়ে ভালোবেসেছিলো তারই ভালোবাসার ফল দিশার হাতে। কোলে। কি অদ্ভুত। ভাবলো দিশা। দিশার তো হিংসে হওয়ার কথা। কষ্ট পাওয়ার কথা অথচ তেমন হচ্ছে না। ওর তো শুধু আদর পাচ্ছে এই পুচকে দেখে।
হঠাৎ রাদ এসে বললো,
— দিশা ওকে দে। তুই ঘুমা এবার। ভোর হয়ে এলো।
বলেই দিশার সামনে এসে ছেলের মুখ থেকে আঙুলটা নামিয়ে দিলো। দিশা রাদের দিকে না তাকিয়েই বললো,
— ভাইয়া আমার কাছে থাকুক। আপনি নাহয় ঘুমান।
“ভাইয়া” শব্দে বুক কাঁপে রাদের। কষ্ট হয়। দিশার মুখের “রাদ ভাই” শব্দ দুটো বেশ মানাতো। দিশা কাল থেকেই ওকে ভাইয়া ডাকে। কেউ না ধরতে পারলেও রাদ ধরতে পেরেছে। আন্দাজ করেছে দিশা ভালো নেই। একটু ও না। পুচকো ততক্ষণে ঘুম। রাদ ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
— যা ঘুমা। আমি আছি এদিকে।
দিশা আর কিছু বললো না। বাবু’কে রাদের কাছে দিয়ে পাশের কেবিনে চলে গেল। চোখের পানি টুকু নাহয় সবার আড়ালেই থাকুক। পৃথিবী’তে দিশাকে এখন প্রয়োজনহীন মনে হয় নিজের কাছে। কারো কাছেই যার মূল্য নেই। হসপিটালের জানালা’টা ধরে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়ার আগের দৃশ্যটুকু উপভোগ করলো দিশা। আচ্ছা রাতুল কি একবারও উপলব্ধি করতে পেরেছে ঐ দিন যে সে৷ দিশার সাথে অবিচার করেছে।
#চলবে……..
( দুটো টুইস্ট আছে সামনে। একটা রোদ-আদ্রিয়ানের জন্য আর দুইটা আপনাদের জন্য)
[ একটা কথা ক্লিয়ার করে দেই। বর্ধিতাংশ মানে নতুন কোন পর্ব না। ধরুন ৪৬ পর্ব। সেটা আমি বড় লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় না থাকাতে বা অন্য কারণে লিখতে পারলাম না তখন সেই পর্বকেই দুই ভাগে ভাগ করে লিখি। সেটাই হলো বর্ধিতাংশ। মানে বর্ধিত করা অংশ। নট এ পর্ব। তাই বর্ধিতাংশ ছোট হবে এটাই স্বাভাবিক। ]