Sunday, October 5, 2025







ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-৩+৪

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩

ঘুমন্ত রোদের বুকে হঠাৎ মিশি ঝাঁপিয়ে পড়ায় ঘাবড়ে গিয়ে ধরফরিয়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি এগিয়ে এসে একহাত ধরে বললো,

— রোদ? ভয় পেয়েছো?

মিশি ততক্ষণে রোদের বুকে লেগে আছে। জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিলো রোদ। ভয় গুলো এখনও ছাড়ছে না ওকে। আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রোদ মিশিকে বুকে চেপে ধরলো মাথায় চুমু খেয়ে একটু শুকনো হেসে ডাকলো,

— আমার বাচ্চার কি হয়েছে?

মিশি একটু মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো তার মাকে। দেখে আবারও বুকে মুখ লুকিয়ে রাখলো। রোদ মিশিকে এবার সুরসুরি দিয়ে বললো,

— বলো কি হয়েছে?

মিশি খিলখিল করে হেসে উঠলো। রোদের কোলে লুটোপুটি খেতে লাগলো। আদ্রিয়ান শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার নিশ্চুপ মেয়েটা শুধু মাত্র রোদ নামক মায়ের কাছেই এমন হাসি খুশি হয়ে থাকে। রোদ হাত থামিয়ে দিতেই মিশি একটু হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

— আমি ভেবেছিলাম আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তাই তোমাকে কেউ নিয়ে আসে নি।

রোদ একটু হাসলো। কোলে তুলে নিলো মিশিকে। ওকে নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে ব্রাশ করিয়ে মুখ ধুয়ে কোলে নিয়েই বের হলো। আদ্রিয়ান মিশিকে নিজের কোলে নিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো। রোদ এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের ব্যাগ খুজতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওর দিকে এসে বললো,

— কি খুঁজছ?

— আমার ব্যাগ।

— কি লাগবে?

— ব্রাশ।

— ওয়াসরুমের কেবিনেটে রাখা আছে। পিঙ্ক কালারের।

— পিঙ্ক? আমি কি বাচ্চা?

— তাই তো।

রোদ একটু রাগ করলো বাচ্চা বলাতে। কিছু না বলে ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ান আর মিশি তখন বিছানায় ফুল দিয়ে ছরিয়ে ছিটিয়ে অস্থির। মিশি হঠাৎ রোদকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

— মাম্মা এখানে এত ফুল কেন?

রোদ ভরকে গিয়ে বললো,

— আমি তো জানি না মা।

— বাবাই তো বললো তুমি জানো।

রোদ মুখ কুচকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একটা চোরা হাসি দিয়ে পাশ কাটিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। মিশি আবারও রোদকে জিজ্ঞেস করতেই রোদ একটু অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বললো,

— এটা তোমার বাবাই ই জানে মা কিন্তু বলতে চাইছে না। পরে জিজ্ঞেস করো বাবাইকে। ঠিক আছে?

মিশি ঘাড় দুলিয়ে সাই দিলো। আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রোদকে এখনও বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে নিচে যাওয়ার জন্য বললো। রোদ উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— আমার ব্যাগ কোথায়?

— আলমারিতে সব ড্রেস রাখা আছে তোমার।

একটু অবাক হলেও রোদ কিছু বললো না। আলমারি থেকে একটা গোল ফ্রক আর প্যান্ট বের করে ওয়াসরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে বের হলো। চুল আঁচড়ে খোঁপা করতে চাইলো কিন্তু এতো বড় চুলে বেচারী কখনো খোঁপা করতে পারে না। মা ই করে দিতো। তাই কোন মতে পেচিয়ে একটা স্টিক দিয়ে বেঁধে নিলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে একটা ওরণা বের করে রোদের মাথায় দিয়ে বললো,

— বাইরে ভাইয়া আর বাবা আছে।

রোদের এবার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করলো। কাল রাত থেকে কি না ও আদ্রিয়ানের সামনে শুধু টিশার্ট আর প্যান্ট পরা ছিলো? অথচ ওর খেয়াল ই ছিলো না। আদ্রিয়ান ওর হাব ভাব বুঝতে পারলো। মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

— এত লজ্জা পেও না বউ। আমি ই তো।

আদ্রিয়ান লজ্জা পেতে না বললেও বউ ডাকাতে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়লো রোদের লজ্জা। আদ্রিয়ান একটু দুষ্ট হেসে বললো,

— এই এক গাল আর কত লজ্জায় লাল করবা?চলো এবার। রাতে এমনিতেই কিছু খাও নি। কিছু হলে রাদ এসে সোজা আমাকে হামলা করবে।

রোদ একটু মিনমিন করে বললো,

— আমার ভাইয়া এমন না।

— জানি চলো।

বলে রোদের হাত ধরে নিতে নিলেই রোদ মাথা নিচু করে বললো,

— আচ্ছা সবাই কি সব জানে?

আদ্রিয়ান জানে রোদ কিসের কথা বলছে। আর কেন ই বা নিচে যেতে এত গুইসুই করছে। আদ্রিয়ান ওকে ভরসা দেওয়ার জন্য বললো,

— তুমি যেমনই হও না কেন রোদ পুরো তুমিটা এখন আমার। কারো এত সাহস নেই তোমাকে ঐ সব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কিছু বলার। আর বললেই কি আমার রোদ তো স্ট্রং। হু?

ভরসা পেল রোদ। “আমার রোদ” বলে সমোদ্ধোন করায় আবার একটু লজ্জা পেল। ইস লজ্জা আজ যেন জেঁকে ধরেছে রোদকে। আদ্রিয়ানের সাথেই নিচে গেল রোদ। কেন যেন আদ্রিয়ানের সবকিছুই ওর ভালো লাগে। ভরসার একজন মনে হয়। নিজের পরিবারের পর যদি কেউ থেকে থাকে তা হলো আদ্রিয়ান।
___________________

নিচে নামতেই সবাই ঘিরে ধরলো রোদকে। জারবা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। হাসলো একটু রোদ। রোদের থেকে দুই বছরের ছোট হবে জারবা। এইবার কলেজে ভর্তি হলো। রোদকে ভীষন ভালোবাসে। জারবা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,

— কেমন আছো ছোট ভাবী? তোমার শরীর ভালো তো?

— ঠিক আছি আমি জারবা।

সাবা সহ আদ্রিয়ানের মা এগিয়ে এলো। রোদকে নিয়ে ডায়নিং ডেবিলে বসালো। একে একে আদ্রিয়ানের বড় ভাই আরিয়ান আর বাবা ও এলো। রোদের সাথে টুকটাক কথা বললো। রোদ ও ছোট ছোট করে উত্তর দিলো। হঠাৎ করে ৫/৬ বছরের একটা ছেলে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরে ডাকলো,

— খালামনি।

রোদ জানে এটা আলিফ। আরিয়ান আর সাবার ছেলে। চাচি না ডেকে খালামনি ডাকাতে প্রথমে বলতে যেয়েও চুপ করে গেল রোদ। ডাকুক না খালামনি এতে যদি ছেলেটা চাচির সাথে খালার আদর পায় তাতে মন্দ কি? মাইশা যে সাবারই বোন এটা জানে রোদ। তাই হয়তো আলিফ খালামনি ডাকলো। রোদ ওকে আদর করে বললো,

— কোথায় ছিলে তুমি?

— বাইরে। দেখ এটা তোমার জন্য।

বলে কয়েকটা নয়নতাঁরা ফুল দিলো। রোদ হেসে তা হাতে নিয়ে একটা মিশির কানে আর একটা আলিফের কানে গুজে দিলো। মিশি তো বেজায় খুশি হয়ে গেল। রোদ হাসলো ছোট বাচ্চারা কতটা লোভহীন থাকে। একটু আদর পেলেই খুশি হয়ে যায়। সবাই টেবিলে বসতেই আদ্রিয়ানের মা আর সাবা বেরে বেরে দিলো। রোদ নিজেই মিশিকে পরটা দিয়ে ডিম খাওয়াতে লাগলো। সবাই একটু অবাক হলেও আদ্রিয়ান হলো না। মিশিকে ডিম কখনোই খাওয়ানো যেত না কিন্তু রোদের হাতে কি সুন্দর খাচ্ছে। আদ্রিয়ান এর আগেও মিশিকে রোদের হাতে ডিম খেতে দেখেছে তাই ও তেমন অবাক হয় নি। মায়ের হাতে সন্তানেরা সবই খায়। এই যে মা থেকেও মিশির জন্মের পর থেকে মা নেই। এখন মা পেয়ে সে মায়ের কাছেই লেগে থাকে। এই যে ওর মা ওকে ডিম না কি খাওয়াচ্ছে তাতে ওর আসে যায় না শুধু মা খাওয়াচ্ছে, আবার ঠোঁটে লাগলে মুছে দিচ্ছে, একটু পরপরই পানি খায়িয়ে দিচ্ছে এটাই ওর কাছে অনেক। এভাবে বাবার পর আর কে ই বা আদর করতে পেরেছে মিশিকে? চাইলেও মায়ের মা বাবার আদর কি কেউ দিতে পারে? উহু সম্ভব নয় কিন্তু রোদ দিচ্ছে। মন থেকে মিশিকে নিজের সন্তানের মতো আদর করে ও । হোক না রোদ ছোট তাতে কি? মায়েরা তো আর ছোট হয় না।

মিশিকে খাওয়ানো শেষ হতেই আদ্রিয়ান রোদের প্লেটে পরটা আর ডিম তুলে দিলো। ততক্ষণে বাবা আর আরিয়ানের খাবার শেষ। বাকিরাও উঠে যাচ্ছে। শুধু জারবা, সাবা আর রোদ -আদ্রিয়ান আছে। রোদ অর্ধেক খেয়েই উঠে যেতে নিচ্ছিলো ওমনি আদ্রিয়ান খপ করে হাত ধরে চোখ রাঙিয়ে বললো,

— পুরোটা খাবে এরপর আরেকটা পরটা খাবে তারপর উঠবে।

— আর খাব না তো।

— নো মোর ওয়ার্ডস।

রোদ একটু একটু খেতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ে যখন খাবার চিবায় তখন থুতনিতে গর্ত হয় সাথে ঠোঁটের দুপাশে টোলের মতো হয়। এমন আদোও কখনো আদ্রিয়ান কারো দেখেছে কি না সন্দেহ। এমনিতে আবার যখন কথা বলে তখন ফোলা ফোলা গালে গভীর টোল পরে যা হাসলো আরো বেশি হয়। কিন্তু সচরাচর তেমন হাসে না রোদ। হয়তো আগে হাসতো। এখন শুধু মিশির সাথেই ওর যত হাসাহাসি। জারবা আর সাবা মিটমিট করে হাসতে লাগলো। রোদ কোন মতে একটা খেয়েই আর খেতে পারলো না। আদ্রিয়ানও আর জোর করে নি। খেয়ে উঠতেই সাবা কফি নিয়ে এলো। রোদকে একটা দিয়ে আরেকটা আদ্রিয়ানকে দিতে উপরে যাচ্ছিলো ওমনি রোদ বললো,

— আপু আমি তো উপরে যাচ্ছি আমি নিয়ে যাই?

সাবা হেসে কাপটা রোদের হাতে দিলো। রোদও কাপ নিয়ে উপরে গেল। আদ্রিয়ান রেডি হচ্ছিলো অফিসে যাওয়ার জন্য। রোদ ডুকতে নিলেই নজর নামিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান তখন শার্ট পরছিলো। রোদকে দেখে বাটন লাগিয়ে বললো,

— বাইরে কি? ভেতরে এসো।

রোদ ভিতরে ডুকে কফি এগিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেল কফি রোদকে আনতে দেখে। একটু হেসে বললো,

— তুমি কেন আনতে গেলে?

— এমনিই।

আদ্রিয়ান কিছু না বলে কফিটা হাতে নিয়ে নিলো। রোদ ব্যালকনির দিকে গেল। বেশ বড় এই ব্যালকনিটা। কিন্তু কিছু গাছ থাকলে হয়তো বেশি ভালো লাগতো। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল রোদের। বাসার নিজের ব্যালকনির কথা মনে পরলো। ব্যালকনি মনে করতে গিয়েই মা,বাবা, বড় ভাই রাদ আর ছোট ভাই রুদ্রর কথাও মনে পরে গেল। এতসবে এটাও মনে পরলো কেন রোদ আজ এখানে। কেন বিয়েটা হলো আদ্রিয়ানের সাথে। সাথে সাথেই নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু তিক্ত ঘটনার কথা মনে পরলো। এমনটাতো না হলেও পারতো। হঠাৎ রোদের বা পা আর হাতটা কাঁপতে লাগলো। এমন সময় আদ্রিয়ান পেছনে ওর কাঁধে হাত রাখতেই রোদ চমকে ভয় পেয়ে গেল। ডান হাতে থাকা কফিটা কম্পমান বা হাতে পরে গেল। রোদের ঐ দিকে খেয়াল নেই। অস্থির লাগছে ওর ভেতরে। আদ্রিয়ান বুঝতে পেরে তারাতাড়ি ওকে ধরার চেষ্টা করতেই আচমকা রোদ ওকে জোরে ধাক্কা মে’রে নিজে মাথা চেপে ধরে বসে পরলো। আদ্রিয়ান একটু রেলিং এর সাথে ধাক্কা খেলেও নিজেকে সামলে জোর করে রোদকে জড়িয়ে ধরলো। রোদের বা হাত অসম্ভব ভাবে কেঁপেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান নিজের এক হাতের মুঠোয় তা শক্ত করে চেপে রাখলো। রোদের মাথাটা বুকে চেপে ধরলো। অন্য হাত মাথায় বুলিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করতে করতে বললো,

— রোদ। দেখ সোনা তাকাও। এখানে আমি আর তুমি। আচ্ছা বাসায় কল করো। সবার সাথে কথা বলবে না?

রোদ আদ্রিয়ানের টিশার্ট খামচে ধরে অনবরত কেঁপেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ওকে শান্ত করতে বুকে চেপে ধরে বসেই রইলো। বেশ কিছু সময় পর শান্ত হলো রোদ। ওকে কোলে নিয়েই রুমে এলো আদ্রিয়ান। ঘরের ফুলগুলো সকালেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। রোদকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তারাতাড়ি পাশের ড্রয়ার থেকে রোদের মেডিসিন নিলো। কাল থেকেই মেডিসিন দেওয়া হয় নি ওকে। রাদ বলে দিয়েছিলো কিন্তু এতো সবে মনেই ছিলো না ভাবতেই নিজের উপর মেজাজ খারাপ হলো আদ্রিয়ানের। রোদের মুখে মেডিসিন দিয়ে পানি দিয়ে খায়িয়ে দিলো৷ হঠাৎ রোদের বা হাতে নজর যেতেই ঘাবড়ে গেল আদ্রিয়ান। প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। তারাতাড়ি একটা বার্ণ ক্রিম নিয়ে লাগিয়ে দিলো। রোদের কপালে চুমু খেল।

একটু পরই চোখ খুললো রোদ। চোখ দিয়ে পানি পরতেই আদ্রিয়ান তা মুছে দিলো। গলা থেকে ওরণা সরিয়ে একটু স্পেস দিলো রোদকে। রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— সরি।

— কেন?

— আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই নি।

— আমি জানি তো সোনা। সব ঠিক আছে রোদ শুধু তুমি নরমাল হও।

— হুম।

আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো বাসায় কথা বলতে। রোদ জানালো পরে বলবে। কারণ এখন কল দিলেই সবাই বুঝে যাবে কিছু একটা হ’য়েছে। আদ্রিয়ান রোদের একটা হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,

— আচ্ছা তুমি কি মিশানকেও মিশির মতো মেনে নিতে পারবে রোদ?

— মিশান?

— আমার ছেলে যার কথা কাল জানলে।

রোদ একটু হাসলো। ওভাবেই বললো,

— ভালোই হলো একবারে দুই বাচ্চার মা হয়ে গেলাম। বলুন?

আদ্রিয়ান ও হাসলো তৃপ্তির হাসি। ও জানতো রোদ কোন দিনও মিশানকে অবহেলা করবে না। রোদের একগালে হাত দিয়ে বললো,

— মিশান আমার আপন ছেলে না রোদ কিন্তু ও আমার ছেলেই থাকবে। বাবা ডাকে আমাকে। আমার প্রথম সন্তান ও রোদ। ওর মাধ্যমেই প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি জেগেছিলো আমার। এতটুকু হয়েছিলো জানো? একদম গোলাপি গোলাপি ছিলো।

রোদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কেমন ছলছল চোখ করে আর খুশি হয়ে বলছে কথাগুলো। বাবারা হয়তো এমনিই হয়৷ সন্তানদের প্রতি তাদের ভালোবাসা কিছুটা নীরব থাকে তবে তার প্রখরতা খুবই গভীর।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪

(কত বছরই বা ছিলো তখন রোদের? এই তো ১৭ বছর। কলেজের প্রথম বর্ষের শেষ দিক তখন। পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে হলো রোদ। পুরো নাম রুদ্রিতা খান রোদ। বড় ভাই রাদ আর ছোট ভাই রুদ্র, বাবা- মা এই তো ছোট সুখী পরিবার। বাবারা দুই ভাই। রোদের বাবা হলো ছোট। বড় ভাইকে অনেক সম্মান করেন ভদ্রলোক সাথে বিশ্বাস ও। যদিও রোদদের বাসা আর চাচাদের বাসা আলাদা তবুও বড় চাচার কথা ওর বাবা পইপই করে পালন করতেন। আসলে একই ছাদ কিন্তু দুটো ডুপ্লেক্স বাড়ী আলাদা। রোদের দাদাই এমন বাড়ী বানিয়েছিলেন। পুরাণ ঢাকায় এক নামে খান বাড়ী বলে পরিচিত ছিলো। এলাকায় নাম ডাক ও কম ছিলো না। ভদ্র, সভ্য, দানশীল, গোছানো এক পরিবার। বড় চাচারও দুই মেয়ে দিশা, তিশা আর বড় ছেলে ইশান যে বিবাহিত। রুদ্র পরিবারের সবচেয়ে ছোট হলেও আদর যেন রোদের প্রতি সবারই বেশি। হবেই বা না কেন? সবসময় দুষ্টামি, আদর আদর কথা বলা, হাসি খুশি চঞ্চল নাদুসনুদুস রোদ। রাদ আর রুদ্র যেন বোন বলতেই পাগল। বয়সের ব্যবধান যদি বেশি। রাদ ৬ বছরের বড় আর রুদ্র রোদ থেকে ৬ বছরের ছোট। এবার ক্লাস ৯ এ উঠলো মাত্র।

রোদের এত সুন্দর গোছালে জীবনটা অগোছালো করতেই হয় তো খুশি মনে বড় চাচা একদিন রোদের বাবাকে বললেন,

— আমাদের রোদ তো বড় হয়ে যাচ্ছে আ.রহমান।

— জ্বি ভাই। দেখতে দেখতেই কেমন করে বড় হয়ে গেল।

— হুম। আমার বন্ধু সিকদার চাচার ছেলে চিনিস ই তো?

— চিনবোনা কেন রিফাত ভাই?

— হু তার ছেলে রাতুলের জন্য রোদকে চাইছে। ছেলে ভালো ডাক্তার। এছাড়াও চরিত্র, আদব – কায়দাও প্রশংসনীয়। চোখের সামনেই তো দেখেছিস।

হঠাৎ এহেন কথায় চিন্তিত হলেন মি.রহমান। এত ছোট মেয়ে তার। এইচ এস সি ও দেয় নি আর সেই ছোট মেয়েটাকে কি না বিয়ে দেয়ার কথা বলছে। উনি তো এসব বিষয়ে এই পর্যন্ত কিছু ভাবেন নি। বড় ভাই বুঝলেন ছোট ভাইয়ের মনের কথা তাই একটু হেসে বললেন,

— এখন তো বিয়ে দিব না মাকে। শুধু কথা বলে আংটি পরিয়ে যাক। দিশা, তিশা যেহেতু বড় তাই ওদের বিয়ের পরই রোদের বিয়ের কথা হবে। এর আগে না।

মি.রহমান না ও করতে পারাচ্ছেন না আবার হ্যাঁ ও না। বড় ভাইকে অনেক সম্মান করেন বলে কথা। তবুও জানালেন স্ত্রী আর ছেলের সাথে কথা বলে নিক আগে। তার চেয়ে বড় কথা রোদ নিজে কতটা প্রস্তুত এসবের জন্য। ওনার এতসব কথার প্রেক্ষিতে বড় ভাই শুধু গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— রোদ তোর একার না আমারও মেয়ে। ওর ভালো চাই খারাপ না। তুই ও জানিস নিজের সন্তানদের থেকে ওকে বেশি ভালোবাসি আমি।

মি.রহমান জানেন তার ভাই কখনো রোদের খারাপ চাইবেন না৷ তবুও যে মন মানতে নারাজ। বাসায় স্ত্রী আর রাদকে জানাতেই রেগে মেগে ফায়ার রাদ। সবাই বড় চাচাকে ভয় পেলেও রাদ বরাবরই অবাধ্য। কাউকে পরয়া সে কোন কালেই করে না। আর তা যদি নিজের বোন তাহলে তো কথাই নেই। রোদের মা ও তেমন একটা রাজি না। মেয়ের শখ ডাক্তার হবে এখন এসবে ঠেলে দিলে পড়ায় মন নষ্ট হবে। মি.রহমান সব ভাইকে জানাতেই তিনি জানান, ছেলে নিজেই ডাক্তার আর রোদের পড়ার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিবে ছেলে। আসলে এতো ভালো পাত্র ওর চাচা হাত ছাড়া করতে চাইছিলেন না। নিজের জায়গায় তিনি ঠিক ছিলেন। রাদ পরে জানতে পারলো ছেলে আর কেউ না রাতুল। রাদেরই বন্ধু। নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে। আজ কাল এমন ছেলে পাওয়া টাফ।তবুও ও তেমন একটা রাজি না ও। একসময় কিছুটা অমত কিছুটা মত নিয়েই আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠানের কথা উঠে। রোদ এসবে কি বলবে নিজেও বুঝতে পারছিলো না। রাতুল ভাইকে ও চিনে। মাঝে মধ্যে বাসায় আসতো। রাদের ভালো বন্ধু। তবুও কেমন যেন লাগলো ওর। কি ই বা বলবে। বড় চাচা যে ওর খারাপ চাইবে না এটা রোদ জানে।

আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠান হলেও তার আয়োজন করা হয়েছিলো বড় কমিউনিটি সেন্টারে। এলাকায় কাউকে বাদ রাখেন নি ওর বড় চাচা দাওয়াত দিতে। বিশাল বড় আয়োজন করা হয়েছিলো। এরমধ্যে শুধু একবার রাতুল ওর মা-বাবা নিয়ে এসে দেখে গিয়েছিলো রোদকে৷ হঠাৎ এনগেজমেন্টের দিন সকালের দিকে রোদের ভয়ানক পেট ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। রাদ রুমে এসে রোদকে পেট চেপে শুয়ে থাকতে দেখেই তারাতাড়ি ওকে ধরে চিৎকার করে মা- বাবাকে ডাকে। ব্যাথাতেই ঙ্গান হারিয়েছিলো রোদ। রাদ সহ ওর মা, ইশান আর বড় চাচি হসপিটালে ছুটেছিলো। সেই সময় রাতুলও হসপিটালেই ছিলো। রোদকে এমন ভাবে দেখেই চমকে যায় ও। পরবর্তীতে রোদের ঙ্গান ফিরে। কিছু টেস্ট করানো হয়। যার রিপোর্ট দিবে সন্ধ্যায়। রোদকে বাসায় আনা হলো। বিকেল দিকে পার্লারে সাজানো হলো। কত বড় আয়োজন, কত সব কিছু কিন্তু শেষে কি হলো?

রাতে রাতুলের পরিবার থেকে কেউ আসলো না। না আসলো রাতুল। শুধু একটা কল এলো। যাতে রাতুলের বাবা নিচু স্বরে জানালেন,

— দুঃখীত এই এনগেজমেন্ট হবে না। রোদের এই সমস্যা জানলে আমরা কথা এগুতাম না। এই সময়ে এসে জানতে পেরে আমরা আর এ নিয়ে এগুতে চাইছি না।

— কি সমস্যা? কি হয়েছে? ( বড় চাচা)

— রোদ কোন দিন মা হতে পারবে না। আমার একটাই ছেলে নাতি – নাতনির মুখ আমিও দেখতে চাই। পারলে মাফ করে দিস।

এরপর সব শেষ। রিপোর্ট হাতে রাদ ফিরে এলো। কি আছে রিপোর্টে আর কেন ই বা রাতুলরা এলো না? এসব জিজ্ঞেস করতেই রাদ রেগে চোখ লাল করে তাকালো বড় চাচার দিকে। বড় চাচা কিছুটা ভরকে গেলেন। রাদ চিৎকার করে বললো,

— বলেছিলাম আমার বোন ছোট। শুধু মাত্র আপনার জন্য সব হলো।

আত্মীয়, এলাকাবাসী অনেকেই উপস্থিত ছিলো সেখানে। সবাই ফিসফিস করা শুরু করে দিলো। রোদ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। কত জন কত কি সব বলছিলো। কিছু কিছু রোদের কানেও এলো। ও শুধু হা হয়ে গেল। রাদ তারাতাড়ি বোনের হাত ধরে টেনে ওখান থেকে বাসায় নিয়ে এলো। এরপরের জীবনটা কেমন ছিলো?)

হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রোদের। বছর আগের স্মৃতি মনে করছিলো এতক্ষণ। তখন আদ্রিয়ান ওকে আদর করে রেখে কোথায় যেন গিয়েছে হয়তো কোন জরুরি কাজ ছিলো। ফোন রিসিভ করলো রোদ। রাদ কল করেছে। রিসিভ করতেই রাদ সহ রুদ্র আর মা, বাবার কন্ঠ শুনতে পেল। একটু হাসলো রোদ এতো এতো ভালোবাসা কোথায় রাখবে রোদ। রাদের চিন্তিত কন্ঠ কানে এলো রোদের,

— হ্যালো হ্যালো রোদ। শুনছিস?

— শুনছি ভাইয়া। শান্ত হও।

— সকাল থেকে কল রিসিভ কেন করছিলি না?

— ফোন ওনার কাছে ছিলো। একটু আগে আমাকে দিলো।

রাদ একটু নিজেকে ঠান্ডা করে বললো,

— ঠিক আছে আমার বোন? কেউ কি কিছু বলেছে? কোন ঝামেলা বা কিছু?

— আলহামদুলিল্লাহ সব ঠিক আছে সাথে আমিও। এখানে সবাই অনেক ভালো।

এমন সময় রুদ্রর চেচামেচি শুনা গেল। রাদ ওকে ধমক দিলেও থামলো না। রোদ একটু হেসে বললো,

— আমার আলুর দম কি বলছে? তুমি ওকে ধমকাও কেন?

ওপর পাশ থেকে রুদ্র “আপি” “আপি” ডেকেই যাচ্ছে। রাদ ওকে ধমক দিয়ে আবারও বললো,

— তোর আলুর দম রুদ্র আমার মাথা কাল রাত থেকে খেয়ে দিচ্ছে। আজ তো ঐ বাড়ী নাস্তা দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু বাবা বলেছে দুপুরের খাবার দিবে। এই নিয়ে রুদ্র ঝামেলা করছে। ও সকাল থেকে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে।

রোদ সব শুনে ছোট করে বললো,

— ওহ।

এরমধ্যেই রুদ্র ফোন কেড়ে নিয়ে নিজেই কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— হ্যালো আপি। শুনছো। আসো তুমি এখন। ভাইয়া তো আমাকে তোমার কাছে যেতে দিচ্ছে না।

রোদের চোখ টলমল করে উঠলো। দুই ভাই ই ওর জান। রুদ্রটা ছোট বলে হয়তো একটু বেশি। বোন ছাড়া এই ছেলের চলে না। অথচ ১২ বছরের বড় ভাই রাদের সাথে সারাদিন যুদ্ধ লাগিয়ে রাখবে। আদুরে গলায় রোদ বললো,

— আমার আলুর চিপসের প্যাকেট কি কেঁদে দিবে নাকি? দুপুরেই তো আসবি। আপি ঠিক আছি তো।

রুদ্রর এখন আরো বেশি কান্না আসছে। কিন্তু সবার সামনে তো কান্না করা যাবে না। তাই ফোন ভাইয়ের হাতে দিয়ে চলে গেল। রোদ ওর মা আর বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দিলো। ফোন কাটতেই চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো। আদরে আদরে বড় হওয়া রোদ কখনো মা- বাবা ছাড়া থাকে নি। এখন কি না একা একা এই বাসায়। চোখ মুছলেও আবারও পানি গড়িয়ে পরলো। হঠাৎ দরজায় তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে। সব কিছুই শুনেছে ও। আস্তে করে এসে রোদের পাশে বসলো। রোদ তখনও মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান ওর চোখ মুছে দিয়ে কাটা চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিলো। রোদ তখনও মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান ধীর কন্ঠে বললো,

— তাকাও।

রোদ তাকালো না। তাই আদ্রিয়ান ওর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করলো। চোখ বেয়ে পানি পরছেই মেয়েটার। আদ্রিয়ানের মন চাইলো মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে,”এই মেয়ে এত কাঁদো কেন? তুমি কি জানো তোমার এই কান্নায় কারো বুক জ্বলে? কারো শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়? কারো দুনিয়া উজার করে তোমার কান্না থামাতে মন চায়?” কিন্তু বলতে পারলো না আদ্রিয়ান আর না পারলো জড়িয়ে ধরতে। যদিও আগে পরে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন রোদ ছিলো হয়তো ঘুমে নয়তো অসুস্থ। এখন ধরলে হয় তো বা রোদের অকওয়ার্ড ফিল হতে পারে তাই আদ্রিয়ান ধরলো না। শুধু রোদের দুই হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,

— কেঁদো না রোদ। দুপুরেই আসবে ওরা। হয়তো একটু পরই।

মাথা দুলালো রোদ মানে সে কাঁদবে না অথচ চোখ বেয়ে তার পানি পরছেই। আদ্রিয়ান তা নিজ দায়িত্বে মুছে মুছে দিচ্ছে।

____________________

হঠাৎ করে মিশি দৌড়ে এলো রুমে। আদ্রিয়ান তখন ফাইল চেক করছিলো আর রোদ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। মিশি এসেই বাবার কালো লাফিয়ে চড়ে ডাকলো,

— বাবাই?

— জ্বি মা।

— মাম্মা কোথায়?

— বারান্দায় আছে তোমার মাম্মা।

বলেই মেয়ের গালে চুমু খেল। মিশি আবার নেমে গিয়েও ফেরত এসে বাবাকে চুমু খেয়ে বারান্দায় গেল। আদ্রিয়ান দিন কে দিন শুধু আশ্চর্যই হয়। হয় তো শুধু মায়েরাই পারে সন্তানদের এতটা প্রাণচাঞ্চল্য বানাতে। রোদকে যখন থেকে পেয়েছে ঠিক তখন থেকেই মিশি এতটা একটিভ থাকে। আগে ছিলো একদম নিশ্চুপ। শুধু মাত্র আদ্রিয়ান আর মিশানের সাথেই কথা বলতো ঠিক করে। এখন সবার সাথেই ওর যত সব কথা। বিশেষ করে রোদের সাথে।
ব্যালকনিতে গিয়ে মিশি পেছন থেকে রোদের পা জড়িয়ে ধরলো। রোদ প্রথমে চমকালেও পরে বুঝলো এটা মিশি। দুষ্টামি করতে রোদ বললো,

— কে পা ধরলো আমার?

মিশি ডেকে উঠলো,

— মাম্মা।

— কোথায় মিশি?

— নিচে তো মিশি।

রোদ এবার হেসে পেছনে ঘুরে কোলে তুলে নিলো মিশিকে। নাক টেনে দিয়ে বললো,

— এই তো পেয়েছি আমার মাকে। আমার বাচ্চা কোথায় ছিলো এতক্ষণ?

— ভাইয়ার কাছে।

— এখন গোসল করবে চল।

বলে মিশিকে নিয়ে রুমে এসে ওয়াসরুমে ডুকলো। ওয়াসরুম থেকে মিশি আর রোদের খিলখিল হাসির ঝংকার যেন ঘরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আদ্রিয়ান হাতের ফাইল রেখে আড়মোড়া ভেঙে ওয়াসরুমে উঁকি দিলো তখনই নজরে এলো নজর কারা এক দৃশ্য যা এই অবদি দেখার ভাগ্য হয়নি আদ্রিয়ানের। রোদ মিশিকে বোলে বসিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে সেফ করতে মিশিও সমান তালে মাকে পানি ছিটা দিচ্ছে আর খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। হঠাৎ নিজের মুখে পানির ঝামটা পরতেই আদ্রিয়ান ভরকে গেল। সামনে তাকাতেই দেখলো মুখ চেপে ধরে হাসছে মিশি যার হাতে মগ। অপর দিকে রোদও হেসে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান যেন আর নজর ফেরাতে পারলো না। হাসলেই গালে গভীর টোল পরে এই মেয়ের সাথে চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে যায়। মারাত্মক লাগলো আদ্রিয়ানের এই হাসি। নিজেকে সামলে ওয়াসরুমে ডুকে পানি দিয়ে মিশিকে ভিজিয়ে দিলো। হঠাৎ রোদকে ভেজাতেই রোদ রেগে গিয়ে বললো,

— এই আমি কি আপনাকে ভিজিয়েছি যে আপনি আমাকে ভেজালেন।

বলেই বালতি ভর্তি পানি আদ্রিয়ানের মাথায় ঢেলে দিলো। মিশি সহ রোদও জোরে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো। মিশিকে এতো ভেজানো যাবে না যদি ঠান্ডা লেগে যায় তাই রোদ ওর গোসল শেষ করিয়ে টাওয়াল পেচিয়ে কোলে তুলে নিলো। রুমে ডুকে বেবি লোশন লাগিয়ে আলমারি থেকে একটা ছোট ফ্রক পড়িয়ে মাথা মুছে দিলো। ততক্ষণে আদ্রিয়ানের গোসল শেষ। কিন্তু কাপড় না নিয়ে ডুকায় টাওয়াল পেচিয়ে বের হলো। মিশি তখন বাইরে চলে গিয়েছে। রোদ নিজের ড্রেস বের করে যেই না পেছনে ঘুরলো ওমনি কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে কাপড় পরে গেল। রোদের দুই হাত গিয়ে ঠেকলো আদ্রিয়ানের ভেজা লোমশ বুকে। চোখ খুলে তাকাতেই নজরে এলো টাওয়াল পরিহিত আদ্রিয়ানকে। লজ্জা পেয়ে এখন ভাগ মিলকা বলে দৌড় দিবে নাকি জানালা দিয়ে লাফ দিবে ভেবে পেল না। আপাতত এসব কিছুই করা যাবে না জানে রোদ। আদ্রিয়ানের বুক থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান নিজেও অপ্রস্তুত হলো। একটু সরে দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই রোদ দিলো এক দৌড়। এক দৌড়ে সোজা ওয়াসরুম।
আদ্রিয়ান ও যেতেই ফিক করে হেসে উঠলো। মাথা চুলকে ড্রেস পরে নিলো। গোসল শেষে রোদের মনে পরলো ও তো ড্রেস সব ফেলে এসেছে কি আর করার ডাক দিলো উঁকি দিয়ে,

— শুনছেন?

হঠাৎ করে দেখলো আদ্রিয়ান সামনেই দাঁড়ানো হাতে রোদের সব কাপড়। রোদ এক ঝটকায় সব নিয়ে ধারাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। এই আদ্রিয়ান ওর সব কাপড় দিয়েছে প্রয়োজনীয়। লজ্জায় রোদের চেহারা কালো বাদে সব কালারের রং ধারণ করলো যেন। সব বাদ দিয়ে একেবারে ওজু করে বের হলো। মাথায় পেচানো টাওয়াল খুলে বারান্দায় মেলে দিলো। হিজাব পড়তেই দেখলো আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। রোদকে নামাজ পড়ে রুমেই থাকতে বলে নিজের টুপি নিয়ে নামাজে গেল আদ্রিয়ান।

#চলবে……

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ