ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-১৬

0
1736

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৬

হাতির ঝিলে এসে একটা গাড়ী থামলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে রাদের। এই রাত ১২ টা বাজে এখানে আসার কোন নিয়তই ওর ছিলো না। রোদ তখন কল করে সব বলতেই ছুটে এসেছে রাদ। হাজার হোক আজ ও মন থেকে বন্ধুত্ব মুছে দিতে পারে নি রাদ। রোদ থেকে সব জেনে রাগ কিছুটা কমেছে রাদের তবুও ভুলে নি কিছু রাদ। নিজের ছোট্ট আদুরে বোনটার করুন অবস্থার সাক্ষী রাদ। সামনে হেটে যেতেই দেখলো রাতুলের গাড়ী। রাত ১২ টা হলেও এই জায়গা ঝলমলে পরিবেশ। কিছু অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখে মাথা গেল গরম হয়ে। বেহায়া মানুষ জন দিয়ে আজকাল দুনিয়া ভরে গিয়েছে আর এই জায়গায় কি না রাতুল ওর বোনকে ডাকে? ভাবতেই রাগ চটা রাদের রাগ আকাশচুম্বী হলো। রাতুলের গাড়ীর থাই তে জোরে জোরে বাড়ি মেরে ডাকলো,

— ওই শ্যালা বাইর হ তোর প্লেন থেকে।

রাতুল ঢুলু মুলু চোখ খুলে বেরিয়ে রাদকে ধরে বললো,

— রুদ্রিতা ত..তুমি এসেছো?

হাত মুঠ করে এক ঘুষি মারলো রাদ রাতুলকে। নেশার ঘোরে নিজেকে সামলাতে ব্যার্থ হলো রাতুল। হুমরি খেয়ে পরলো গাড়ীর উপর। কপালে লেগে কিছুটা কেটে ও গেল। চোখ কুচকে মাথা ঝাকালো রাতুল৷ কয়েকবার পলক ঝাপটা মেরে বুঝলো এটা তার রুদ্রিতা বরং আজরাইল এসেছে রাদের বেশে। অসময়ে আজরাইল পছন্দ হলো না রাতুলের। হাত মুঠ করে দিলো এক ঘুষি রাদের মুখ বরাবর। দুই কদম পিছিয়ে গেল রাদ। মুখে নোনতা স্বাদ লাগতেই হাত দিয়ে দেখলো ঠোঁট কেঁটে গিয়েছে। গেল এবার মেজাজ খারাপ হয়ে। রাতুলের কলার ধরে মুখ চেপে ধরলো গাড়ীতে। পরপর দুটো ঘুষি মারতেই রাতুল শরীর ছেড়ে রাস্তায় পড়ে গেল। হাত ঝেড়ে মুখ কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করলো রাদ। বিরক্ত হওয়া কন্ঠেই বললো,

— শ্যালা উঠ।

— এই রাদ?

— কি?

— সত্যি তোর শ্যালা বানাবি?

রাদ হাটু গেড়ে বসলো রাতুলের সামনে পিঠে ধারাম করে মে’রে বললো,

— শ্যালা হওয়ার সখ মিটিয়ে দিব এখন তোর সাগরের পানিতে ফেলে।

বাচ্চাদের মতো করে কেঁদে উঠলো রাতুল। ওভাবেই বললো,

— মে’রে দে আমায়।

রাদ উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

— আয় এবার। উঠ।

— তুই ও চলে গেয়িছিলি।

— হু তোরে কোলে নিয়ে তো ফিডার খাওয়ানোর কথা ছিলো আমার। আল্লাহ বাঁচাইসে নাহলে তুই যে নেশাখোর তা তো জানতাই না।

— উঠাবি না?

— হাত দে।

রাতুলকে টেনে উঠালো রাদ। দুই বন্ধু এতদিন পর একসাথে বসলো ঝিলের উপর পা ঝুলিয়ে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রাদ বললো,

— আর কত এভাবে?

— আমার ভাগ্যে ও কেন আসলো না? কি হতো আমার কাছে থাকলে?

— বাড়ী যাবি এই অবস্থায়?

— কথা ঘুরাস ক্যান?

— কথা যে বলছি তাই তো তোর ভাগ্য।

— বাসায় যাব না।

— উঠ। চল আমার সাথে।

— কোথায় যাব?

— তোর না হওয়া শশুর বাড়ী

_________________

আদ্রিয়ান এত রাতেও ল্যাপটপে কিছু করছে। রাতে খাওয়ার সময় কথা উঠেছিলো জাইফা আর জারবাকে নিয়ে। আদ্রিয়ানের বাবা আর আরিয়ান হাঁ না কিছু বলে নি কিন্তু কথার ধাঁচে মনে হচ্ছে রাজি রাজি ভাব। জারবা না খেয়েই ঐ যে গেল আর নামলো না। রোদ শেষ মেষ রুমে ডুকে খাবার দিয়ে আসলো। সাবা জিজ্ঞেস করতেই রোদ সব জানালো। চিন্তিত হলো সাবা। বোকাসোকা জারবা না আবার কিছু করে বসে। রোদ সাবাকে বললো যাতে আরিয়ানের সাথে কথা বলে। সাবা বললো,

— তা না হয় বুঝলাম। তুই আদ্রিয়ানকে বলিস। বেশি কাজে দিবে।

রোদ এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো আদ্রিয়ানকে বলবে। আস্তে করে মিশিকে বুক থেকে নামিয়ে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। এসে বসলো কাউচে আদ্রিয়ানের কোল ঘেঁষে। আদ্রিয়ান একবার তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসি দিয়ে আবারও কাজে মন দিলো। দেখেই মনে হচ্ছে কোন জরুরি কাজ করছে। রোদের এখন বসে থাকতে থাকতে ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমালে তো চলবে না। নিজের একমাত্র বন্ধু ইয়াজের প্রেম বাঁচতে হবে। আদ্রিয়ানের সাথে খাতির লাগাতে মাথা রাখলো আদ্রিয়ানের বাহুতে। আদ্রিয়ান আবারও হেসে চুমু খেলো রোদের মাথায়। রোদের এবার ঘুম আসছে। ঢুলুমুলু করতেই আদ্রিয়ান বললো,

— ঘুম আসলে ঘুমিয়ে যাও।

রোদ একটা হামি দিয়ে বললো,

— আপনার এই ছাতা মাথা…

বলেই আবার জিভ কেটে বললো,

— মানে আপনার কাজ কখন শেষ হবে?

আদ্রিয়ান হাসলো শব্দহীন। টেনে বুকে নিলো রোদকে। ওভাবে রেখে বললো,

— আমার বউয়ের বুঝি আমাকে ছাড়া ঘুম হচ্ছিলো না?

— হু।

বলেই রোদ মাথা এলিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের কোলে। আদ্রিয়ান এক হাত রোদের মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে অন্য হাতে কিছু টাইপ করছে। রোদ আরামে এবার ঘুম ডুব দিবে দিবে কিন্তু ঘুমালে তো চলবে না জারবা আর ইয়াজের সংসার বানাতে হবে। বাচ্চা আসার রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবে। তাই আদ্রিয়ানের হাত মাথা থেকে নামিয়ে নিজের কাছে আনলো। এই লোকের হাত ও সুন্দর কিন্তু শক্ত। রোদ আদ্রিয়ানের আঙুল গুলো টানাটানি করছে। কি মনে করে হুট করে একটা চুমু খেয়ে বসলো আদ্রিয়ানের হাতের তালুতে। চমকালো আদ্রিয়ান চমকালো রোদ নিজেও। ইশ কি লজ্জা! কি লজ্জা! লজ্জায় লাল হয়ে রোদ মুখ ঘুরিয়ে আদ্রিয়ানের কোলে গুজে দিলো। চমকানো আদ্রিয়ান এবার ভয়ংকর ভাবে চমকালো। এই মেয়ে ওকে জ্বালিয়ে মারবে একদিন। কবে না জানি এই ছোট বউয়ের আহ্লাদে আহ্লাদে ওর মরণ হয়। ভাবলো আদ্রিয়ান। বহু কষ্টে হাতের কাজ শেষ করলো। রোদ তখনও মরার মতো পড়ে আছে। আদ্রিয়ানের রোদের পিঠে হাত বুলিয়ে ডাকলো,

— রোদ?

— হু।

আদ্রিয়ান ভেবেছিলো মহারাণী ঘুমিয়েছে কিন্তু এই মেয়ে ঘুমায় নি। আদ্রিয়ানের ঘুম হারাম করতে সর্বদা সজাগ থাকে এই মেয়ে। আদ্রিয়ান ধরে সোজা করলো রোদকে। মাথা তখনও আদ্রিয়ানের কোলে। চুলের ভাজে হাত বুলাচ্ছে আদ্রিয়ান তখনই হুট করে রোদ বললো,

— আচ্ছা আমি যদি বাজা না হতাম তাহলে ও কি এমন ভাবে ভালোবাসতেন আমায়?

রোদের মাথায় বুলানো হাতটা থেমে গেল আদ্রিয়ানের। এতক্ষণের হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই গম্ভীর হলো। কিছুটা রাগ হলো। বললো,

— ছোট্ট মিশি ও বুঝে এগুলো পঁচা কথা তুমি বুঝ না? এই ওয়ার্ড যাতে আর মুখে না শুনি।

— এটা পঁচা কথা হলে এই পুরো আমিটাই তাহলে পঁচা।

— রোদ!

— কি? বাজা না হলে বিয়ে করতেন আমায়?

— কি শুরু করলা? কেন রাগাচ্ছো আমায়?

— আপনি কেন রেগে যাচ্ছেন?

আদ্রিয়ান নিজেকে শান্ত করলো। রোদের গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

— বাজা তাদের বলে যারা অক্ষম হয় সন্তান জন্ম দিতে। তোমার সমস্যা আছে, চান্স একটু কম। মেবি ছোট বেলায় তোমার মিন্সট্রেশনে সমস্যা হতো। তার ই কিছুটা প্রভাব পড়েছে গর্ভাশয়ে। রাদ রিপোর্ট চেক করিয়েছিলো পড়ে। সমস্যা তেমন একটা না। বলা যায় ফিফটি ফিফটি। ঐ ডক্টর জাস্ট বলেছিলো তোমার মা হওয়ার সম্ভবনা কম এতেই সবাই ভুল বুঝে নেয়। তাহলে এবার বলো কে বাজা?

রোদ আদ্রিয়ানের পেটের দিকে চেহারা লুকিয়ে রাখলো। আদ্রিয়ান সরিয়ে দিতে দিতে বললো,

— এখন বলো?লুকাও কেন? জ্বালও আমাকে? আর যদি শুনি এসব কথা মাইর খাবা ঐদিন।

রোদ মুখ তুলে বললো,

— বারান্দায় যাই?

আদ্রিয়ান ওভাবেই কোলে তুলে নিলো রোদকে। বড় চেয়ারে ওভাবেই কোলে নিয়ে বসলো। কুচকুচে কালো অন্ধকার রাতে আকাশে চিকন চাঁদের রেখা। ভয় লাগে রোদের এমন রাত। কিন্তু আজ লাগে না। কেন লাগবে? আদ্রিয়ান আছে তার। রোদের উন্মুক্ত কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ালো আদ্রিয়ান। রোদ মুখ ঘুরিয়ে নিলো সাথে সাথে। আদ্রিয়ান ভ্রুকুঞ্চন করে বললো,

— আদরের জন্য সারাক্ষণ ঘুরঘুর করো আদর করলেই আবার পালাই পালাই করো।

— জরুরি কথা আছে আমার।

আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

— বলেন ম্যাডাম।

— ইয়াজ আছে না…

আর কিছু শুনার আগেই শক্ত হলো আদ্রিয়ান। কথার মাঝেই বললো,

— আর কোন কথা নেই?

— এমন করেন ক্যান হ্যাঁ? কথা বলছি না?

আদ্রিয়ান চুপ করলো। রোদ কোলে আরেকটু চেপে বসে আদ্রিয়ানের মুখোমুখি হয়ে মুখটা অতিরিক্ত সিরিয়াস করে বললো,

— শুনেন জারবা আর ইয়াজ একজন আরেকজনকে ইয়ে করে। মানে ভালোবাসে।

প্রচন্ড ভাবে শক খেল আদ্রিয়ান। রোদ তো মিথ্যা বলবে না এটা সিউর। জারবা আর ইয়াজ? আদ্রিয়ান নেড়চড়ে বসতেই রোদ একটু চিল্লিয়ে আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,

— ওই নড়েন ক্যান হ্যাঁ? পরে যেতাম এখনই।

— সরি সরি। কি বললা তখন?

— যা শুনেছেন ঠিক শুনেছেন। এখন আপনি আবার বাংলা ছবির ভাই মিশা সওদাগর হয়ে যাবেন না কিন্তু। আর ছেলের গ্যারান্টি আমার বুঝলেন? নুন থেকে চুন খসলেই ইয়াজকে তক্তা বানানো আমি। বুঝেন এবার এতো গ্যারান্টি দিবে কেউ? বলেন রাজি? আমার বন্ধু ইয়াজের জন্য আপানার ছোট বোন জারবার হাত, পা সব চাইছি দিবেন?

রোদের বাচন ভঙ্গি আর এমন হাত নেড়ে নেড়ে বলা কথা শুনে হেসে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদ মুখ চোখা করে নাক কুচকে বললো,

— হাসেন ক্যান হ্যাঁ?

আদ্রিয়ান বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে রোদের দুই গালে হাত রেখে কপালে, গালে চুমু খেয়ে বললো,

— কে বলেছে এতো কিউট হতে হু?

— রাজি কি না বলেন? নাহলে অন্য উপায় বের করব?

— ভাগিয়ে দিবে নাকি আমার বোনকে?

— উহু। জাইফ ভাইয়াকে কান পড়া দিব।

এবার যেন পুরো ব্যালকনিতে ধ্বনিত হলো আদ্রিয়ানের হাসি। ইদানীং এই মেয়ের সান্নিধ্যে পেয়ে এমন মন প্রাণ উজার করে হাসে ও। মন ভালো করার একটা মাধ্যম এই রোদ। বুকের ব্যাথা উপশম করার ঔষধ ও। ভালো লাগার, ভালো থাকার কারণ ও। আদ্রিয়ানের ভালোবাসা ও।

আদ্রিয়ানের ঠোঁট ভর্তি উপচে পড়া হাসি, গভীর চোখের চাহনি, অবাধ্য হাতের বিচরণ, ভারী নিঃশ্বাস, পাগল করা চেহারার ভঙ্গি যেন মুহূর্তেই রোদের মনের গহীনে লুক্কায়িত অনুভূতিকে নাড়া দিলো। কেমন একটা ঘোরে চলে গেল রোদ। হয়তো আদ্রিয়ান ও। হাত বাড়িয়ে আদ্রিয়ানকে ছুঁয়ে দিলো রোদ। রোদের খোলা চুলগুলো সরিয়ে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো আদ্রিয়ান। নড়লো রোদ। ভীষণ ভাবে কাঁপছে সে। এই আদ্রিয়ান ওকে মে’রেই ফলবে। আস্তে আস্তে গভীর ভাবে স্পর্শ দিলো আদ্রিয়ান। মাথা তুলে আদর দিলো সারা মুখে। নতুন সকল অনুভূতিতে জর্জরিত হয়ে রোদ মোচড়ে সরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর কানে মুখ লাগিয়ে চুমু খেয়ে বললো,

— আর মাত্র কয়েকটা দিন। এরপর আর ছাড়ব না।

রোদের অন্তর আত্মায় যেন ধাক্কা খেলো এই কথা। চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান জড়িয়ে ধরলো। মিশে রইলো রোদ তাতেই। অনুভব করলো এই নতুন সব অনুভূতি যার নাম “ভালোবাসা”।

________________

বড়রা সকালে সবাই বসলো নাস্তার পর। মামি তুললো আবারও বিয়ের কথা। ছোটরা কেউ খায় নি। রোদ আর সাবা সার্ভ করছে। মিশান সাবাকে জিজ্ঞেস করলো,

— খালামনি পুত্তি কোথায়?

সাবা কি আর বলবে? কোনমতে বানিয়ে ছানিয়ে কিছু একটা বললো। মিশিকে খাওয়ানো শেষ। রোদ গরম গরম পরটা আর ডিম ভাজা এনে আদ্রিয়ানের সামনে রাখলো। আবার এক প্লেটে দুটো পরটাতে বাটার লাগিয়ে ডিম দিয়ে মিশানের সামনে দিলো। ছোট রোদের এই ছোট ছোট কাজগুলো ভিষণ ভাবে চমকায় সবাইকে। এ যেন কোন পাক্কা গৃহিণী রোদ। স্বামী, সন্তানদের গুছিয়ে গুছিয়ে খাওয়াবে। আদ্রিয়ান রোদকেও বসতে বললো। রোদ একটু তাকিয়ে বললো,

— চা নিয়ে আসছি।

বলেই নিজের জন্য চা আর বারকখানি নিয়ে এসে বসলো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

— এটা খেলে পেট ভরবে?

— কেন ভরবে না? খাবার খেলেই পেট ভরবে।

বলে বারকখানি চায়ে ডুবিয়ে মুখে পুরে নিলো। পুরাণ ঢাকার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে একটা হলো এই বারকখানি। কাল শাশুড়ীকে বলে আনিয়েছে রোদ। বাসায় প্রায় সময় খেতো রোদ। বিশেষ করে বিকেলে। মিশান রোদকে এত মজা করে খেতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

— এটা কি অনেক মজা লাগে?

— হু ট্রাই করে দেখো।

বলেই চায়ে ডুবিয়ে একটু মিশানের মুখের সামনে ধরলো। মিশান খেয়েও মজা পেল৷ আমিও খাব বলতেই রোদ আরেকটু ওর মুখে দিয়ে বললো,

— সকালে এটা খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হবে। বিকেলে দিব বেশি।

আদ্রিয়ান এতক্ষণ দেখে এবার কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো,

— আপনার পেটে গ্যাস্টিক হবে না তাই না?

— এমন করেন ক্যান? আপনার খেতে মন চাইলে বলুন। দেই একটু।

— ওটা রাখ। বিকেলে খেও।

— আম..

— রাখো।

রোদ সরিয়ে রাখতেই আদ্রিয়ান পরটা আর ডিম দিলো রোদকে। রোদ খেতে খেতে মিশানকে বললো,

— জানো বাকরখানি মিষ্টি ও আছে। আবার একেবারে ছোট বিস্কুটের সাইজের ও আছে। পুনিরের ও হয়। মাংসেরও হয়।

মিশানও বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আরিয়ান খেতে খেতে বললো,

— মিষ্টি হয় শুনেছি পুনির আর মাংসেরও হয়?

রোদ খেতে খেতে বললো,

— জ্বি ভাইয়া। কিন্তু এগুলো অর্ডার করতে হয়। কোরবানির পর তো ঝুরা মাংস তাদের দিয়ে চাচ্চু এতো গুলো করে বানিয়ে আনতো।গরম গরম এত মজা।

সবারই যেন লোভ লাগলো। জাইফ একটু “উমম” আওয়াজ করে বললো,

— ভাবী বিয়ে আমি পুরান ঢাকায় ই করব। আই এম এ কাচ্চি লাভার।

রোদ হেসে বললো,

— এবার কুরবানির ঈদের পর সবাইকে খাওয়াবো মাংসের বাকরখানি।

আরিয়ান আর মিশান যেন একটু বেশি খুশি হলো। জাইফা পাশ থেকে বললো,

— ভাই তোর কপালে পুরান ঢাকার বউ নেই।

উত্তরে শয়তানি হাসি দিলো জাইফ।

______________

— আপনি আমায় বাসায় যেতে দেন না কেন?

রোদ রেডি হতে হতে বললো কথাটা। আদ্রিয়ান ও গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— পরে যেও।

— সবাই পর দিনই যায়। আর আমি? সপ্তাহের উপর হয়ে গেল।

— এখানে কি সমস্যা তোমার?

রোদের কাঁদতে মন চাইলো। এখানে কোন সমস্যা নেই আছে ভালোলাগা তাই বলে কি ভিডিও কলে কথা বলে মন ভরে?নিজের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নেমে গেল কিছু না বলে। আদ্রিয়ান দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইলো।
.
মিশানের হোস্টেলে যেতে হবে। একথা শুনেই রোদের চোখ টলমল করে উঠলো। আদ্রিয়ান ও চুপ করে আছে। মিশান হাটু গেড়ে বসলো রোদের পায়ের কাছে। হাত ধরে বললো,

— এটা ফরমালিটি। এই মাসের বাকি কয়দিন থেকেই আসতে হবে। এরপর একেবারে এসে পরব তোমাদের কাছে।

— তোমার বাবা চাইলেই নাম কাটিয়ে আনতে পারবে।

— এতে ঝামেলা অনেক। প্লিজ। তুমি এমন করলে কিভাবে যাব?

— যেও না।

— বেশি দিন না তো।

— জানি না কিছু।

মিশান অসহায় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। রোদ উঠে চলে যেতে নিলেই মিশান উরনা টেনে ধরলো। বাচ্চাদের মতো করে বললো,

— রেগে?

— না।

— সত্যি?

— না।

— শুনো।

— হু।

— আই লাভ ইউ।

রোদ এসে জড়িয়ে ধরলো মিশানকে।

— লাভ ইউ ঠু বাবা। তারাতাড়ি এসো রোদ মা অপেক্ষা করবো।

— হুম।

মিশানকে বিদাই দিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে মেডিকেলে চলে গেল রোদ।
.
রাদের কেবিনে নক হতেই রাদ কাম বলে কাজে মন দিলো। ইশান এসেছে। রাদ ভ্রু কুচকে বললো,

— ভাইয়া তুমি? কোন কাজ আছে?

ইশান চেয়ারে আরাম করে বসতে বসতে বললো,

— চাচাতো হলেও বড় ভাই তোর। আসছি চা খাওয়াবি, বসতে বলবি তা না…

— হু হু জানি জানি। এই ভর দুপুরে চা খাবা তুমি?

কেঁশে উঠলো ইশান। সোজা হয়ে বসে বললো,

— দিশার কথা বলতে এসেছি।

— এই ব্যাপারে কোন কিছু শুনতে চাইছি না। বোন হয় আমার।

— বোন আমার। তোর চাচাতো বোন।

— রুচিতে বাঁধে।

— তুই বাবার জন্য ই এমন করছিস?

— নিজের বোন হলে বুঝতা।

— রোদ আমারও বোন।

— কিছু শুনতে চাই না। দিশাকে বুঝাও। প্রয়োজনে ধরে বেঁধে বিয়ে দাও। আমার সামনে নেক্সট টাইম আসলে ধরে ওর বাবার কাছে দিয়ে আসব।

রাগী কন্ঠে বলেই উঠে চলে গেল রাদ। ইশান জানত এমনই হবে তাও বোনের জন্য চেষ্টা করলো একবার। রাদ আবার ফিরে এসে বললো,

— ভাইয়া লাঞ্চ করব চলো।

ইশান উঠে গেল রাদের সাথে। ক্ষুধা লেগেছে প্রচুর।
জাইফা কল করেছে রাদকে কিন্তু ধরে না রাদ। কেটে দিচ্ছে বারবার। একে সারারাত রাতুলকে ভুগেছে এরপর সকালে বাড়ী দিয়ে এসেছে। দুপুরে আবার দিশার ঝামেলা। পাগল হয়ে যাবে রাদ।
.

রোদ মেডিক্যাল থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ওমনি পেছন থেকে কেউ ডাকলো,

— রুদ্রিতা।

রাতুলকে দেখে কি বলবে ভেবে পেল না রোদ। কাল রাতের জন্য রাতুল ও লজ্জিত। রাদ না বললে তো জানতোই না এসব। তাও ভালোই হলো রাদকে তো ফিরে পেল।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে