ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-১৫

0
1797

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৫

হঠাৎ মিশি দৌড়ে রুমে ডুকলো। রোদ তখনকার ঘটনার পর আদ্রিয়ানের পাশে আর ঘেঁষে নি। রোদের মনটা কেন যেন বিষিয়ে আছে। মিশি মায়ের কোলে উঠে বসলো। রোদ একটু হেসে হাতের বইটা অফ করে পাশে রাখলো। মিশিকে আদর করে দিয়ে বললো,

— আমার মা কোথায় ছিলো এতক্ষণ?

— বাইরে ফুপির কাছে। ভাই আর আলিফ ভাইয়া ও ছিলো।

— তাই? ভাইয়া কোথায়?

হঠাৎ দরজা থেকেই মিশান বললো,

— এখানে।

মিশান হাতে করে অনেকগুলো আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে রুমে ডুকে বেডে রোদের পাশে হেলান দিয়ে শুয়ে পরলো। রোদ কিছু বলার আগেই একে একে জারবা, আলিফ, জাইফা, জাইফ এমনকি সাবা ও এলো। পুরো বেডে সবাই একত্রে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। একটু পর আরিয়ান ও যোগ দিলো। রোদের মন খারাপটা উধাও হয়ে গেল। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে অবাক হলো। নিজের রুমে নিজে বসার জন্য তেমন কোন জায়গা পাচ্ছে না। তবুও মুখ জুরে হাসি ফুটে উঠলো। মিশান, মিশি রোদ তিনজন একসাথে কতটা ভালোবাসা নিয়ে বসে আছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে রোদ আবার মিশানকে ধমকাচ্ছে বেশি আইসক্রিম খাওয়াতে। আদ্রিয়ান নিজেও যোগ দিলো ওদের সাথে। রোদের পাশ ঘেঁষে বসতেই রোদ একটু সরে গেল যা আদ্রিয়ানের মোটেও সহ্য হলো না। দূরে কেন যাবে? রাগ করেছে ভালো কথা তাই বলে দূরে কেন যেতে হবে? আদ্রিয়ান সবার অগচড়ে হাত বাড়িয়ে রোদের কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে আনলো। রোদ চাইলেও সরতে পারলো না কারণ অপরপাশে মিশান বসা আর কোলে মিশি। এদিকে রোদের এমন অনিহা আদ্রিয়ানের প্রতি সহ্য হলো না আদ্রিয়ানের। এই মেয়ে কেন এমন করছে? অথচ আদ্রিয়ান বুঝলো না তার ছোট্ট বউটা ভালোবাসার মানুষ থেকে কষ্ট পেয়ে ই এমন দূরে সরে আছে। মিশি রোদের কোলেই ঘুমিয়ে গেল। বাকিরাও চলে গেল। রোদ মিশিকে আস্তে করে শুয়িয়ে দিলো। নিজে গেল চেঞ্জ করতে। আদ্রিয়ান রুমে এসে রোদকে না দেখে একটু ভ্রু কুচকালো পরক্ষণেই ভাবলো ওয়াসরুমে হয়তো। রোদ বেরিয়ে এসে সোজা আদ্রিয়ানকে এরিয়ে গেল। এবার যেন অধৈর্য হয়ে উঠলো আদ্রিয়ান। হাত ধরে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করালো। রোদ তখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রোদের এমন আচরণ আর নিতে পারলো না আদ্রিয়ান। বুকে যেন চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। অধৈর্য হয়ে রোদের দুই গালে হাত দিয়ে মুখ তুলে পরপর কতগুলো চুমু খেল। রোদের হাত পৌঁছালো আদ্রিয়ানের কোমড়ের দিকে। আদ্রিয়ান আস্তে করে হাত নামিয়ে আনলো রোদের কোমড়ের দিকে। টিশার্ট টা একটু উঁচু করতেই নজরে এলো লাল হওয়া দাগগুলো যা আদ্রিয়ান তখন চেপে ধরাতে হয়েছিলো। অপরাধবোধ জাগ্রত হলো আদ্রিয়ানের। ঠোঁট নামিয়ে চুমু খেল লাল নখের দাগে। রোদ যেন এবার পুরো দম আটকে মারা যাবে এমন অবস্থা। আদ্রিয়ান ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। বুকে চেপে ধরলো রোদকে। অপরাধীর সুরে বললো,

— আ’ম সরি সোনা। আমার বউ কি মাফ করেছে? কথা বলো।

রোদ কথা কি আর বলবে? এই লোক কি আর ওকে কথা বলার অবস্থায় রেখেছে। এই আদ্রিয়ান কি বুঝে হুট হাট এমন চুমু টুমু খেলে যে রোদের কিছুমিছু হয়। পেটে প্রজাপতি উড়তে থাকে। গলায় কিছু আটকে যায়। শরীর কেমন নেতিয়ে যায়। না বুঝে না। বুঝলে বুঝি এমন করতো। আদ্রিয়ান রোদের সাড়া না পেয়ে আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,

— এই বউ? আমার ময়না পাখি কথা বলো।

এমন আদুরে ডাক আর উপেক্ষা করতে পারলো না রোদ। দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। বুকে মুখ গুজে প্রাণ ভরে শ্বাস টেনে নিলো। আদ্রিয়ান শব্দ করে চুমু খেল রোদের মাথায়। কোমড় ধরে উঁচু করে বেডে নিতে নিতে বললো,

— রাগ শেষ হলো তবে?

— হু।

— তুমি আমার সুখ রোদ। তোমার বিরহে যে এবার আমার মরণ হয়ে যাবে।

আদ্রিয়ান রোদকে বুকে নিয়েই শুয়ে পরলো। রোদ আঙুল দিয়ে আদ্রিয়ানের চাপ দাঁড়ি গুলো নাড়ছে তো কখনো টানছে। আদ্রিয়ান কিছুই বলছে না। রোদও মনের সুখে দাঁড়ি নাড়তে নাড়তে জিজ্ঞেস করলো,

— আপনি আমায় বিশ্বাস করেন না। তাই না?

— সবচেয়ে বেশি করি।

— যেখানে ভরসা থাকে সেখানে প্রশ্ন করা হয় না। আর না ই ইন্তু কিন্তু থাকে।

রোদের এহেন কথায় চমকালো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান তো ওর রোদকে অনেক ভরসা করে। কিন্তু কিভাবে যেন রাতুলের সাথে একসাথে দেখে রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই তো তখন তেমন আচরণ করেছিলো। ঝট করে রোদকে পুরো নিজের উপর উঠিয়ে নিলো। হঠাৎ এমন হওয়াতে রোদের চুলের বড় বেণীটা বাড়ি খেল আদ্রিয়ানের মুখ। মুখ কুচকালো আদ্রিয়ান। রোদ আদ্রিয়ানের বুকেই হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান রাগ করার ভান করে বললো,

— স্বামীর ব্যাথায় কোন বউ হাসে?

— এই যে আমি হাসি।

বলে আবারও হেসে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান ওর নাক টেনে দিয়ে বললো,

— দুষ্ট বউ।

— পঁচা জামাই।

— আমি পঁচা?

— বকলো কে আজ?

আদ্রিয়ান মুখ কালো করতেই রোদ টুস করে চুমু খেল আদ্রিয়ানের দাড়ি ভর্তি চোয়ালে। সাথে সাথে আবার মুখ গুজে দিলো আদ্রিয়ানের কাঁধের দিকে। রোদকে এমন হুট হাট লজ্জা পেতে দেখে এবার শব্দ করে হাসলো আদ্রিয়ান। এই কালো অন্ধকার রাতে আদ্রিয়ানের হাসিটা যেন ঝমঝম অনুভূতি সৃষ্টি করলো রোদের মনে।

_______________

জীবনে দুই বার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে জাইফা। এক ছোট বেলায় ভীতু জাইফা জীবনে প্রথমবার স্কুল পালিয়েছিলো বান্ধবীদের সাথে আর দুই হলো রাদ নামক লোকটাকে ভালোবেসে। ভাবতেই দুঃখ লাগে জাইফার। এ কাকে ভালোবেসে কলিজা,ফেপসা,গুরদা, হাড্ডি সব দিলো? ঐ লোক তো মনের ভুলেও জাইফাকে একটা মিষ্টি কথা বলে না। সারাদিন উল্টো মুড বানিয়ে রাখে। মন চাইলে কল রিসিভ করে নাহলে নাই। আদ্রিয়ানের বিয়ের দিনই জাইফা জীবনের প্রথম অগ্নি পরিক্ষা দিয়েছিলো রাদকে চোখ টিপ দিয়ে। সে কি কান্ড!জাইফাকে ধরে সাইডে নিয়ে কত হুমকি ধামকি ই না দিলো। ভয়ে ভয়ে জাইফা কেঁদে দিয়ে মাফ চেয়েছিলো কয়েকবার। অবশেষে রাদ নামক পাথরের একটু মায়া হয়। ছেড়ে দেয় জাইফা কে। তবে তেমন পাত্তা দিতো না। জাইফা ই প্রথম এগিয়ে গিয়ে কথা বলেছে।রাদ অহেতুক মেয়েদের সাথে কথা বলা পছন্দ করে না তবুও কেন যেন জাইফার সাথে বলেছিলো। এরপর আর কি শুরু হলো টুকটাক কথা। টুকটাক মানে একদমই টুকটাক। জনাব খুবই ব্যাস্ত থাকেন তাই সময় হয় না। “ভালোবাসি” কথাটা এ পর্যন্ত কেউ কাউকে বলে নি। তাতে কি দুই জনই নিজেদের মনের খবর জানে। রাদ আবার অন্য সবার মতো জাইফাকে নিয়ে ডেসপারেট না। জাইফার একটু একটু ভয় হয়। রাদ কি আদোও পছন্দ করে কি না সিউর না জাইফা। আবার ভাবে পছন্দ না করলেই বুঝি কথা বলতো? নিজেকেই শান্তনা দেয় জাইফা এসব ভেবে।

ঐদিন অফিসে গিয়েছিলো জাইফা রাদের অনুমতি নিয়েই। দেখা করবে এ কথাটা অনেক সাহস যুগিয়ে বলেছিলো। রাদ গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলো,

— ফাস্ট এন্ড লাস্ট লাইম।

ব্যাস ভয়ে জাইফা শেষ। রাদও আর কিছু না বলে কল কেটে দিয়েছিলো। ভিন্ন রং এর ভালোবাসা ওদের। একদমই ভিন্ন।

________________

— সব রেখে একটা বাজা মেয়েকেই কেন আনলে বুঝলাম না আমি। দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছিলো?

কিচেনে ডুকতে গিয়ে কথাটা কানে এলো রোদ আর জারবার। “বাজা” শব্দটা যেন কান ভেদ করে চলে গেল রোদের। মনে মনে বারকয়েক উচ্চারণ করলো শব্দটা উচ্চারণ করলো রোদ “বাজা”। কোল থেকে মিশিকে জারবার কাছে দিয়ে সরে গেল রোদ। মিশি মায়ের চোখের টলমল করা পানি খেয়াল করেছে। জারবার দিকে কালো মুখ করে তাকিয়ে বললো,

— ফুপ্পি মাম্মা সেড কেন?

জারবা একটু হেসে বললো,

— না তো মা। তোমার মাম্মা সেড কেন হবে? ছোট্ট মিশি থাকতে কি কেউ সেড হয়।

জারবা বুঝ দিলেও মিশি তেমন একটা মানলো না। মায়ের চোখে পানি দেখেছে সে। আস্তে করে নেমে গেল জারবার কোল থেকে। মিশি নামতেই জারবা দিলো ভো দৌড়। এই দুই মিনিট বহু কষ্টে পেটে চেপে রেখেছিলো জারবা। এক দৌড়ে আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বললো,

— ছোট ভাইয়া? ছোট ভাইয়া? জানো মামি কি বলেছে? বলেছে দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছিলো যে বাজা মেয়ে আনতে হলো। ছোট ভাবী ও শুনে নিয়েছে।

আদ্রিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। আজকে কিছু একটা করেই ছাড়বে ও। ফোন তুলে মামাকে কল করলো। নরম কন্ঠে কিছু শক্ত কথা শুনিয়ে দিলো। জারবা তো নিজের কাজ শেষ করেই খালাস। এই মামিকে মোটেও সহ্য করতে পারে না ও। তখনই কল এলো ইয়াজের। চঞ্চল জারবার হৃদপিণ্ড আরো চঞ্চল হয়ে উঠলো। কল রিসিভ করেই দীন দুনিয়ার কথা শুরু করলো। ইয়াজ কেন কল করেছে তা ওর দেখার বিষয় না। নিজের পেটের সব কথা উগ্রে দিয়ে দম নিলো জারবা। নিঃশব্দে হাসলো ইয়াজ। মেয়েটা দুর্দান্ত কিন্তু বোকা স্বভাবের। এক কথায় সাদা মনে নেই কোন কাঁদা।
.
— ভাইয়া “বাজা” কি?

মিশির এহেন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল মিশান। এই কথা ছোট্ট মিশি কোথা থেকে জানলো?কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারলো মিশান। কোলে তুলে বোনকে বোঝালো এসব কথা ভালো না। জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলো মামি বলেছে আর এটা শুনে রোদের মন খারাপ ও হ’য়েছে। মিশিকে নিজের রুমে রেখে রোদকে খুঁজতে গেল মিশান। ছোট্ট মিশির ছোট্ট মন প্রশ্নের উত্তর ভালো করে না পেয়ে নিচে চলে গেল। গেটে আসতেই দারোয়ান আটকে দিলো। মিশি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— বাইরে যাব দাদু। গেত খুলে দাও।

দারোয়ান চাচা হেসে বললেন,

— ছোট মামুনি এখন তো যাওয়া যাবে না। আপনি তো একা।

— আচ্ছা আগে বলো “বাজা” মানে কি তাহলে যাব না।

_______________

মিশান রোদকে বাবার রুমে না পেয়ে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

— বাবা রোদ মা কোথায়?

আদ্রিয়ান “রোদ মা” শব্দটা শুনে ভয়ংকর ভাবে চমকালো। মিশানের কন্ঠে শব্দ দুটো চমৎকার লাগলো। একটু হেসে আদ্রিয়ান বললো,

— নিচে হয়তো।

আদ্রিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মিশান চলে গেল। আদ্রিয়ান বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলো। যতটুকু দূরত্বও ছিলো রোদ আর মিশানের মধ্যে আজ হয়তো তাও শেষ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো আদ্রিয়ান। পুরো ভরা একটা পরিবার এখন ওর। আর কি চাই?

মিশান যেয়ে রোদকে পেল দুই তলার শেষ দিকে জয়েন্ট বারান্দায়। মিশান ধীরে এগিয়ে এসে আস্তে করে ডাকলো,

— রোদ মা।

বিষন্ন রোদ যেন এহেন ডাকে ভীমড়ি খেয়ে পরলো। তারাতাড়ি পেছনে ঘুরে তাকালো। মিশান দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখ করে। রোদ চোখ ভর্তি পানি নিয়েই তাকালো। মিশান এগিয়ে এসে রোদের হাত ধরে বললো,

— তোমার তো একটা এত্তো বড় ছেলে আর একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। তাহলে কেউ কিছু বললে চুপ করে থাকো কেন?

রোদ মুহূর্তেই আবেগ আপ্লূত হয়ে পরলো। হাত বাড়িয়ে দিতেই মিশান জড়িয়ে ধরলো। ছোট রোদ এতদিন মিশির মা ছিলো আজ মিশানের ও মা হয়ে গেল। হোক না রোদ ছোট তাতে কি? মায়েদের কোন বয়স নেই। সব বয়সেই মা হওয়া যায়। যখন কোন ছোট মেয়েরও ভাই হয় তখন ভাইকে মায়ের পর আগলে রাখে সেই ছোট বোন। তাতে কি? হোক সে নিজে ছোট তবুও ছোট ভাইয়ে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে বোন।
কি হলো কে জানে মিশান ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রোদ মিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

— আমার বুড়ো ছেলে কাঁদে কেন?

………..

মিশানের উত্তর না পেয়ে রোদ বুঝলো ছেলেটা আজ কত বছর মায়ের আদর, ভালোবাসা, স্নেহ থেকে বঞ্চিত। থাক না একটু। কাঁদুক একটু। সময় দিলো রোদ। দূরে আদ্রিয়ান তাকিয়েই রইলো। এতো সুখ ও বুঝি ছিলো এই চোখে দেখার? চেয়ে ও এগুলো না আদ্রিয়ান। আস্তে করে পা ঘুরিয়ে চলে গেল।

হঠাৎ নিচে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মিশানকে নিয়ে নিচে এলো রোদ। মধ্য বয়স্ক একজন ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে। মামি মাথা নিচু করে আছেন। মামা আবারও ধামকিয়ে বললেন,

— কি সমস্যা তোমার? এক কথা নিয়ে আর কত ঝামেলা করতে চাও?

মামি ও এবার উত্তর দিলেন,

— আপনার মায়ের কথা শুনেই রাজি হয়েছিলাম। শেষে কি হলো?

— জাইফা ছোট ছিলো তখন।

— ও আচ্ছা আর এই মেয়ে যাকে বিয়ে করেছে ১৮ বছর তো এর ও।

বড় মামা চুপ হলেন খানিক সময়ের জন্য। আসলে ওনার বৃদ্ধ মা মৃত্যুর আগে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন আদ্রিয়ানের সাথে জাইফার বিয়ের জন্য। কিন্তু আদ্রিয়ান রাজি হয় নি। মাইশা চলে যাওয়ার পরও মামি বলেছিলেন জাইফার সাথে বিয়ের কথা কিন্তু আদ্রিয়ান রাজি হয় নি। মামির ও অনেক ইচ্ছে ছিলো মেয়েকে এত বড় বাড়ী বিয়ে দিবেন যা সম্ভব হয় নি। এ নিয়েই ওনার যত সমস্যা। আজও তিনি এ কথা ছাড়েন নি।
মামা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

— চলো বাসায়। অনেক হয়েছে তোমার ঘাড়ত্যাড়ামি।

— এই বাজা মেয়ের জন্য আপনি আমায় অপমান করছেন?

মিশান এগুতে নিলেই রোদ ওর হাত চেপে ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই ছোট্ট মিশি মামির কাপড় ধরে টানতে টানতে বললো,

— দীদা আমার মাম্মাকে বাজা কেন বলো? এই যে আমি ঐ যে ভাই তাহলে কেন বাজা বলো? ফুপি বলেছে এটা পঁচা কথা। তুমি কেন বারবার বলো? তুমি কি পঁচা?

উপস্থিত সবাই যেন ধাক্কা খেল একটা৷ মিশি কিভাবে জানলো সব। আদ্রিয়ান জারবার দিকে তাকাতেই জারবা ইশারায় বললো,

— আমি কিছু জানি না। না আগা না গোরা কিছুই জানি না।

মামা একটু হেসে মিশিকে কোলে তুলে বললেন,

— এখন ঠিক আছে? ছোট্ট বাচ্চা থেকে কিছু শিখো। আর কি চাইছো এখন?

সবাইকে অবাক করে দিয়ে মামি বললেন,

— সব বাদ দিলাম। সব ভুলে যাব। জারবার সাথে আমার জাইফের বিয়ে দিন।

এই প্রস্তাবে বাকি সবাই অবাক হলেও জারবা আর রোদ টাস্কি খেয়ে গেল। আদ্রিয়ানের মা চিন্তত ভঙ্গিতে বললেন,

— জারবাকে নিয়ে এখনও ভাবি নি আমরা।

মামি ফট করে বললো,

— তাতে কি? ভাবো নি ভাববা এখন। আমার জাইফ কোন দিক থেকে খারাপ?

— খারাপ কেন হবে ভাবী?

আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— আব্বু আর আরিয়ান আসুক এ বিষয়ে পরে কথা হবে।

কেউ আর তেমন কিছু একটা বললো না। জারবা ভেবেছিলো ছোট ভাই হয়তো সোজা না করে দিবে কিন্তু এখন? দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল জারবা। রোদ যাবে তখনই মামা ডেকে উঠলো অগত্যা রোদ একটু হেসে মামকে সালাম দিয়ে টুকটাক কথা বলে মিশিকে সাবার কাছে দিয়ে জারবার রুমে ডুকলো।

_________________

উল্টো হয়ে শুয়ে আছে জারবা। রোদ ডাকলেও সাড়া দেয় নি। অবশেষে রোদ জারবাকে কুতুকুতু দিতেই কিছুক্ষণ মোচরা মোচরী করে উঠলো জারবা। দুই মিনিটেই মেয়ে নাক লাল করে ফেলেছে। রোদ ওকে পানি খায়িয়ে মুখ মুছে দিয়ে বললো,

— আহা বাবা এত কাঁদছো কার জন্য ঐ ইয়াজ পিয়াজের জন্য। গাধাটা এত দিনেও আমাকে কিছু বলে নি।

— ছোট ভাবী?

— হু শুনছি।

— জাইফ ভাইকে বিয়ে করব না আমি।

— তোমার ভাইকে বলো।

— ভয় পাই এসব বলতে।

— জারবা আবার ভয় ও পায়?

— তুমি বলবে প্লিজ।

— আচ্ছা। আর কাঁদে না। আমি যাই দেখি যদি কিছু করা যায়।

রোদ বেরিয়ে যেতেই হঠাৎ কারো কল আসলো। আননোন নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ভারী আওয়াজে কেউ বললো,

— কেমন আছো রুদ্রিতা?

ধক করে উঠলো রোদের বুক। এটা তো রাতুল। কিন্তু কন্ঠ কেমন জানো লাগলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে রোদ বললো,

— আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। আপনি?

— আ..আমি ভালো নেই রুদ্রিতা। আম্মু দিলো না ভালো থাকতে। আমার কাছে আসবে প্লিজ। ক..কষ্ট হচ্ছে আ..আমার।

— হ্যালো ভাইয়া। আপনি ঠিক আছেন? এক মিনিট আপনার আওয়াজ? আর ইউ ড্রাংক?

রাতুল একটু হেসে উঠলো পরক্ষণেই কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— আম্মুকে শাস্তি দিচ্ছি রুদ্রিতা। আমাকে এভাবে দেখলে নিশ্চিত কষ্ট পাবে। তুমি আমার হলে না কেন রুদ্রিতা? আ..আমি কি দোষ করেছি? রাদ ও কথা বলে না। আমি কাকে বলব আমার মনের কথা। প্লিজ আসো না। আমি তোমাকে ন..নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।য.. যাবে আমার সাথে?

ভয়ে ঘামতে শুরু করলো রোদ। গাড়ীর আওয়াজ আসছে। নিশ্চিত ড্রিংক করে গাড়ী চালাচ্ছে। কোন দূর্ঘটনা না হয়ে যায়? মানবিকতা বলে ও কিছু আছে। রোদ বললো,

— আপনি কোথায় এখন?

— ত..তুমি আসবে?

— আগে বলুন কোথায় আপনি?

রাতুল বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বললো,

— না না না আগে বলো আসবে?

— হু হু আসব তো। কোথায় আসব বলুন?

— উমমম। এটা কোথায়? এক মিনিট। সামনে সাগর দেখা যাচ্ছে। আমি একটু উঁচুতে আছি। মনে হচ্ছে প্লেনে আমি। তুমি আসবে?

রোদের মাথা ঘুরে উঠলো। এই ঢাকা শহরে সাগর নিয়ে এসেছে রাতুল তাও কিনা ও প্লেনে। পরক্ষণেই ভাবলো নেশার ঘোরে মানুষ কত কিছুই তো বলে। তাও নিজের বুদ্ধি খাটালো রোদ। জিজ্ঞেস করলো,

— আশে পাশে কি আরো প্লেন আছে?

— হু হু অনেক প্লেন।

রোদ এবার সিউর হলো নিশ্চিত রাতুল হাতির ঝিলের দিকে। ঝিলকেই সাগর আর গাড়িকেই প্লেন বানিয়েছে। রোদ শান্ত কন্ঠে বললো,

— আপনি প্লেন থেকে নামবেন না। ঠিক আছে?

— তুমি আসছো?

— হু।

— তারাতাড়ি আসো। তুমি আসলেই আমরা চলে যাব প্লেনে উড়ে। কেউ ধরতে পারবে না। আই লাভ…

কল কেটে দিলো রোদ। আর শুনতে চাইলো না। বুল ফেটে দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে ওর। মানুষটা এতটা ভালো না বাসলেও পারতো। এতটা কষ্ট না পেলেও পারতো।

#চলবে…..

[ লেট হওয়ার দুঃখীত]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে