#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৩(বর্ধিতাংশ)
নিচে নামতেই রোদ কিছু অপরিচিত মুখ দেখলো যা গতকাল রাতেও দেখেছিলো। রোদ আর সোফার দিকে না যেয়ে সোজা কিচেনে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ানের মা ওকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে আম্মু এখন ঠিক আছিস?
— হ্যাঁ একদম ফিট এন্ড ফাইন। কি করছো তুমি? হেল্প করি?
— আরে না। হয়ে গিয়েছে। তুই টেবিলে যা আসছি আমি। মেহমান এসেছে তোকে দেখতে।
রোদ কিছু বলার আগেই জারবা ওকে হিরহির করে টানতে টানতে বাইরে এনে পরিচয় করিয়ে দিলো দুইটা ছেলে-মেয়ের সাথে। জাইফা আর জাইফ। আদ্রিয়ানের মামাতো ভাই বোন। রোদের মনে পরলো জারবা তো পরশুই বলেছিলো এদের কথা। জাইফ আর জাইফা দু’জনই মিশুক আর আমাদের রোদ সে তো মহা মিশুক। জমে গেল ওদের সাথে। মিশান ও এসে জয়েন করলো ওদের। সবাই খাবার টেবিলে বসেই আড্ডা দিচ্ছিলো। জাইফের আর মিশানের আজগুবি সব কথা শুনে বাকিরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। হঠাৎ কারো কর্কশ কন্ঠে শুনা গেল,
— এই মেয়ে এভাবে হাসাহাসি করছো কেন? পুরো বাড়ীতে তোমার গলা শুনা যাচ্ছে। এ নাকি আবার বাড়ীর বউ? কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে একে।
রোদের কান যেন গরম হয়ে গেল। সাবা তারাতাড়ি দৌড়ে এসে বললো,
— মামি ও হলো রোদ। আদ্রিয়ানের..
— আহা সাবা তোমাকে বলি নি ওর হয়ে কথা বলতে। আর এই মেয়ে তুমি কোনদিন ও দেখেছো নতুন বউ এভাবে থাকে? কি সব পোশাক পড়ে আছো? বাড়ীতে শশুড়,ভাসুর, দেবড় আছে তার খেয়াল নেই?
রোদ এবার মাথা একদম নিচু করে নিলো। চুপসে গেল যেন পুরো। লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না। মিশান আর জারবা যেন ফুঁসে উঠলো। জাইফ আর জাইফা নিজের মায়ের আচরণে বরাবরই বিরক্ত বোধ করলো। মিশান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা রেগে বললো,
— দীদা আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন?
— এই ছেলে তুমি চুপ থাকো। তোমাকে বলেছি? বেয়াদবের মতো বড়দের কথার মাঝে কথা বলছো।মায়ের শিক্ষা না থাকলে যা হয় আর কি।
মিশান এবার প্রচন্ড রেগে গেল। এই মহিলা মিশানকে ছোট থেকেই দেখতে পারে না। মাইশা কেও কটু কথা শুনাতো অনেক যার বিরোধীতা মাইশা নিজেই করতো। এক কথায় মাইশা থাকা কালীন সময়ে মামি এ বাড়ী আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাইশাকে একটা শুনালো মাইশা দশটা তো শুনাতোই সাথে পুরোবাড়ী মাথায় তুলে নিতো। আজ এত বছর পর এসেও মহিলা অভ্যাস বদলান নি বরং বয়সের সাথে যেন তেজ আরো বেড়েছে। ওনার সমস্যাটা কি তা আজও কেউ বুঝলো না। আসলে কিছু মানুষ ই আছে যারা অন্যের সংসারে মাতবরি করতে পছন্দ করে। মামিও তাদেরই দলভুক্ত।
মিশান রোদের হাত ধরে টেনে নিতে নিতে বললো,
— চলো বাবার কাছে। এর পর দেখবো কি বলে উনি।
সাবা গেল ভয় পেয়ে। তারাতাড়ি দৌড়ে কিচেনে গেল শাশুড়ীকে খবর দিতে৷ কেয়ামত ঘটাবে আজ আদ্রিয়ান যদি জানে মিশানকে মা নিয়ে কথা শুনিয়েছে আর যদি রোদের ব্যাপারে জানে তাহলে তো আল্লাহ ই আল্লাহ। আদ্রিয়ান মা শুনে হতবাক হয়ে রইলো। তার ভাবী আজও পুরোণো কথা ভুলে নি। ঐ জো ধরেই আজ রোদের সাথে এমন আচরণ, বুঝলেন তিনি।
মিশান রোদকে নিয়ে বাবার রুমে যেতে নিলেও মাঝপথে দিক ঘুরিয়ে রোদ ওকে টেনে নিয়ে এলো মিশানের রুমে। কিন্তু নিজের পথভ্রষ্ট হলো না জারবা। নিচ থেকে এক দৌড়ে আদ্রিয়ানের রুমে এসে থামলো। হাঁপিয়ে উঠলো বেচারী। নক করা দূর একবার আওয়াজও করলো না। সোজা রুমে ডুকে আদ্রিয়ানের বাহু ধরে টানাটানি শুরু করলো। আদ্রিয়ান ছিলো ঘুমে বুকে মিশি। হঠাৎ জারবার আক্রমনে ধরফরিয়ে উঠলো। মিশিও নড়েচড়ে উঠলো। আদ্রিয়ান মিশিকে আস্তে করে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। জারবাকে দেখেই ভ্রু কুচকে আদ্রিয়ান তাকালো। ঘুম ছুটেনি এখনও ওর। কিছুক্ষণ বসে থেকে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ই ছিলো জারবা। গড়গড় করে বলতে লাগলো,
— ছোট ভাইয়া ছোট ভাইয়া। মামি ছোট ভাবীকে অনেক কথা শুনিয়েছে। বলেছে কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে এই মেয়ে। আরো বলেছে অনেক কিছু। সাথে মিশানকেও মা নিয়ে বলেছে। আরো কত কি যে বললো। আমি বলেছি ভাইয়াকে বলে দিব তাতেও দমে নি। উল্টো আমাকে বলে তোমাকে নাকি ভয় পায় না।
একনাগাড়ে রং ঢং মিশিয়ে সব বলে হাঁপিয়ে উঠলো জারবা। আদ্রিয়ান পাশ থেকে একগ্লাস পানি দিতেই ঢকঢক করে গিলে নিলো। আদ্রিয়ান জানে প্রথম টুক সত্যি হলেও পরেরটুক ডাহা মিথ্যা। আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে বললো,
— নিচে যা আসছি আমি।
— আচ্ছা।
জারবা যেতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আদ্রিয়ান। মিশিও ততক্ষণে উঠে বাবার কোলে উঠে বসলো। আদ্রিয়ান ওকে আদর করে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। আদ্রিয়ানের আগেই মিশি নিচে গেল। কিন্তু না মা
আছে না ভাই। তাই আবার উপরে চলে গেল ভাইয়ের রুমে।
মিশান কিছুটা রেগে আছে।রোদ বারবার বুঝাচ্ছে,
— মিশান এখন বাবাকেই বললেই ঝামেলা বাড়বে।কি দরকার বলো বাচ্চা? উনি গেস্ট চলেই যাবে।
— তাই বলে যা খুশি তা বলবে? এই মহিলা কখনোই আমাকে দেখতে পারে না।
–আহ্ মিশান। মহিলা কি? দীদা হয় তোমার।
— কিছু হয় না উনি আমার। আমাকে দেখলেই মিসেস মাইশার নাম ধরে কথা শুনায়।
রোদ মিশানের মুখে মিসেস মাইশা শুনে অবাক হলো। কিছুটা আন্দাজ করলো হয়তো মা ছেলের সম্পর্কটা ভালো নেই কিন্তু ঘাটলো না তেমন। রোদের কোলের উপরে রাখা বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো মিশান। আচমকা এমন হওয়ায় একটু শক্ড হলেও হেসে মিশানের মাথায় হাত দিলো রোদ। মিশি ভাইয়ের রুমে এসেই মা, ভাইকে পেয়ে গেল ওমনি দৌড়ে ঢুকে “আমিও আমিও” করতে করতে এক লাফে মিশানের উপর উঠে বসলো। শুরু হয়ে গেল তিনজনে দুষ্টামী।
_________________
আপাতত নিচে সবাই শান্ত বিশেষ করে মামি। জাইফ, জাইফা এতে মোটেও অসন্তুষ্ট নয় বরং তারা একটু শান্তি পেল যেন। মা কে পরেছে ওরা মহা বিপাকে। জাইফা আবার এমনিতেও মায়ের সাথে কথা বলে। একদম না পারলে দুই একটা কথা আরকি। নীচে শান্ত তান্ডব ঘটিয়ে মিশানের রুমে এলো আদ্রিয়ান। চোখ শান্ত হলো সুন্দর এক দৃশ্য দেখে আর মন শান্ত হলো ঐ দৃশ্যের মধ্যে থাকা তিনটা সম্পর্কের ভিন্ন রং দেখে। কতটা সাচ্ছন্দ্যো মিশান রোদের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, মিশি মিশানের বুকে শুয়ে আছে। যত যাই হোক না কেন এতটা সহজ না এই তিনজনের সম্পর্ক অথচ দিন শেষে তিনজনই যেন একই সুতায় বাঁধা পড়ে যায়। আদ্রিয়ানের ইদানীং মনে হয় কে বলেছে আল্লাহ শুধু নিয়ে নেন? এই যে আল্লাহ আদ্রিয়ানের জীবন পূর্ণ করে দিয়েছে, বেরং জীবনটাকে ভিন্ন একটা রং এ রাঙিয়ে দিয়েছে। আর কি চাই? সুখ গুলো তো দলা পাকিয়ে আদ্রিয়ানের ঘরে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
ভেতরে ডুকলো আদ্রিয়ান। নিজেও মিশানের পাশে শুয়ে পরলো রোদের কোলে মাথা দিয়ে। মিশান মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। আদ্রিয়ান আরেকটু ঘেঁষে শুতেই মিশান একটু সরে গেল। রোদ মিশানের চুলে টান দিয়ে বললো,
— কি হয়েছে আবার?
আদ্রিয়ান মিশানের দিকে চেপে বললো,
— বলেন কি হয়েছে আব্বাজান?
— তোমার মামি….
ওর কথা শেষ করার আগেই রোদ ঝটপট বললো,
— ক্ষুধা লেগেছে। চল তারাতাড়ি মিশিও খায় নি।
আদ্রিয়ান একটু হাসলো। আদ্রিয়ান যে সব অলরেডি জানে তা জানে না রোদ। রোদ ওদের নিচে যেতে বলে নিজে রুমে গেল চেঞ্জ করতে। আসলেই তো এখানে এমন সারাদিন টিশার্ট পড়াটা ঠিক না যদি ও কেউ কিছু বলে না। রোদ একটা হাটু সমান গোল ফ্রক পড়ে নিচে গেল। একদম শান্ত পরিবেশ। সবাইকে এত ঠান্ডা বিশেষ করে মামিকে এত ঠান্ডা দেখে রোদ একটু চমকালো। নিজেও কোন কথা না বলে মিশিকে খাওয়াতে খাওয়াতে মিশানকে ফিসফিস করে বললো,
— সবাই এত চুপ কেন?
মিশান বাঁকা হেসে বললো,
— বাবা টাইট দিয়েছে মনে হচ্ছে।
বলেই খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। আজকেও আদ্রিয়ান ওকে মেডিক্যাল ড্রপ করে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— কিছু হলে কল করবে। ঠিক আছে?
— হুম।
বলে ভেতরে ডুকলো রোদ। রোদ ডুকতেই ইয়াজের সাথে দেখা হলো। মনে হচ্ছে রোদের অপেক্ষায় ই ছিলো। রোদ ওকে দেখেও সম্পূর্ণ এরিয়ে ভেতর ডুকে পড়লো। ইয়াজ পিছু নিলেও লাভ হলো না। একজন ডক্টর হয়ে স্টুডেন্টের পেছনে এভাবে দৌড়ানো নিশ্চিত দৃষ্টি কটু লাগে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের কেবিনের দিকে গেল ইয়াজ।
রোদ ভেবে নিয়েছে এখন আর কাউকে ভয় পাবে না। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন রোদ নিজেকে শান্ত রাখবে। শক্ত রাখবে। এখন রোদ একা না। মিশি আছে, মিশান আছে সাথে আদ্রিয়ান যারা কি না রোদের কিছু হলে নিজেরাই ভেঙে পড়ে। তাদের জন্য নিজের পরিবারের জন্য হলেও রোদ প্যানিক করবে না অল্পতে। কিন্তু যতই ভাবুক না কেন এই অতীত যে পিছু ছাড়তে নারাজ।
এদিকে অফিস টাইমেও এমন বেহুদা কল গুলোতে বিরক্ত হলো রাদ। মনে মনে ভেবে নিলো উচিত শিক্ষা দিবে এই ফোনকারীকে। সেই যে জ্বালানো শুরু করেছে বেহায়া মানুষ এখন লেগেই আছে। রাদ ভেবে নিলো এরপর একদিন উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে। ফাইজলামির একটা লিমিট থাকা উচিত। ওর ভাবনার মাঝেই কেউ নক না করে সোজা কেবিনে ডুকে পড়লো। সামনের ব্যাক্তি সোজা রাদের সামনে এসে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো,
— দেখুন না এই লোকটা আমাকে ডুকতে দিচ্ছিলো না আর আপনি আমার কল ধরেন না কেন হ্যাঁ?
রাদের রাগ যেন আকাশচুম্বী হয়ে গেল। চোখ রাঙিয়ে দারোয়ানকে ইশারায় চলে যেতে বলে কেবিন লক করে এগিয়ে আসতে নিলো সামনের ব্যাক্তির দিকে। সামনের ব্যাক্তিও কম কিসে। দুই পা এগিয়ে এসে বললো,
— এভাবে এগুচ্ছেন কেন হ্যাঁ? এক মিনিট এক মিনিট আর উই গোয়িং টু কিস?
#চলবে..
[ এমন অগোছালো পর্বের জন্য দুঃখীত।]