ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-১২

0
1722

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১২

এলাকার লোকজন আসবে রোদকে দেখতে আজ। এ নিয়ে বাসায় টুকটাক আয়োজন করা হচ্ছে। রোদের আবার এসবে তেমন একটা মনোযোগ নেই ওর পুরো মনোযোগ হলো মেডিকেলের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে। কি পড়বে না পড়বে এ নিয়ে মহা টেনশনে আছে ও। অবশেষে ভাবলো শাড়ী পরবে। আদ্রিয়ানকে কিছুক্ষণ খোঁচালো শুধু শুধু। শাড়ী নিয়ে ঘুরঘুর করছে আদ্রিয়ানের সামনে আর বলছে,

— শুনুন। আরে দেখুন না। এই শাড়ী পরি হ্যাঁ? আপনি যাবেন আমার সাথে? না গেলেও নো প্যারা। ইয়াজের বাইক আছে। ওর সাথে ঘুরব।

আদ্রিয়ান ল্যাপটপে জরুরি কিছু কাজ করছে। অবশেষে রোদের জ্বালায় না পেরে কাউকে কল করে মেইল চেক করতে বলে ফোন কাটলো। রোদ তখনও নিজে নিজে পেঁচাল পারছিলো। আদ্রিয়ান হুট করে হাত টান দেয়ায় রোদ যেয়ে পরলো ওর উপর। আদ্রিয়ান কাউচেই হেলান দিয়ে নিজের উপর উঠিয়ে নিলো রোদকে। রোদ হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

— উপফু। টানেন কেন সব সময়?

আদ্রিয়ান রোদের ভ্রুতে আঙুল দিয়ে এমন ভাবে নাড়ছে যেন সে ভ্রু গুছিয়ে দিচ্ছে। ঐ ভাবেই বললো,

— আমাকে জ্বালাও না? যেদিন আমি জ্বালানো শুরু করবো না ঐ দিন একেবারে আঙ্গার বানিয়ে ছেড়ে দিব।

আদ্রিয়ানের শান্ত কন্ঠে হুমকিতে নড়েচড়ে উঠলো রোদ। কি করবে বেচারী। ইদানীং মনটা শুধু আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান করে। প্রেম প্রেম লাগে। এক কথায় সে ক্রাস নামক বাশ খেয়ে বসে আছে তাও কি না ছেলে হলো নিজের বর। নিজের বিয়ে করা জামাই থেকে এটেনশন পেতেই তো রোদ এমন ঘুরঘুর করছে আদ্রিয়ানের কাছে কিন্তু ব্যাটা খবিশ তা বুঝে না। মনে মনে ভাবলো রোদ।
ওর ভাবনার মাঝেই চারশত চল্লিশ বোল্টের ঝটকা খেল রোদ। নিজের গলায় অনুভব হলো আদ্রিয়ানের ঘন চাপ দাঁড়ির ছোঁয়া যা মূলত বিঁধছে ওর গলায়। ছটফটিয়ে সরে যেতে চাইলো রোদ কিন্তু আদ্রিয়ান কি আর ছাড়ে? যৌবন সে কাটিয়েছে ধোঁয়াসায় এখন তার জ্বলে যাওয়া যৌবনে নাড়াচাড়া দিচ্ছে এই অষ্টাদশী কন্যা। সে কি আর থেমে থাকার পাত্র? মোটেও নয়। বলিষ্ঠ হাত দিয়ে কোমড় চেপে ধরলো রোদের। রোদের হাত আদ্রিয়ানের বুকে। ছাড়ানোর চেষ্টায় আছে সে কিন্তু আদ্রিয়ান বুঝি থেমে? ছোট ছোট আদর দিচ্ছে সে রোদের গলা ভর্তি করে। চোখ বুজে নিলো রোদ হঠাৎ করেই চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠলো ঘাড়ে। চোখে পানি চলে এলো সাথে গলা দিয়ে বের হলো অল্প আর্তনাদ। ছাড়াতে চাইলেও আবারও আদ্রিয়ান একই কাজ করলো। রোদ আটকে আটকে বললো,

— প্লিজ না। ব্যাথা পাচ্ছি।

আদ্রিয়ান থামলো। কানে এলো রোদের কান্নারত গলার স্বর। তবুও মুখ উঠালো না ব্যাস্ত হয়ে পরলো আদর দিতে। দুইজনের নিশ্বাস ই তখন ঘন হয়ে আসছে। আদ্রিয়ান আস্তে করে মুখ তুলে তাকালো রোদের চেহারার দিকে। মুখ খিঁচে চোখ বুজে আছে মেয়েটা। চেহারাটা লাল আভায় রাঙিয়ে। আদ্রিয়ান আস্তে করে চুমু খেল বন্ধ চোখের পাতায়। মোচড়ে সরে যেতে চাইলো রোদ। আদ্রিয়ান কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

— কি হলো বউ? এটেশন পেতেই তো তোমার এতকিছু। তাহলে এখন চোখে পানি কেন হুম?

রোদ পানি দিয়ে টাইটুম্বুর হওয়া চোখ তুলে তাকালো। ঘাড়ের দিকে ভীষণ ভাবে জ্বলছে ওর। উঠে বসলো আদ্রিয়ানের উপর থেকে। রোদের দিকে তাকিয়ে খারাপ লাগলো আদ্রিয়ানের। রোদ উঠে যেতে নিলেই রোদের হাত ধরে উঠে বসলো আদ্রিয়ান। খোলা চুলগুলো সরিয়ে নজর দিলো ঘাড়ের দিকে। গোল হয়ে লাল দাগ হয়ে আছে। আবারও মুখ বাড়িয়ে নিতেই রোদ বাঁধা দিয়ে ভাঙা গলায় বললো,

— আর কাছে আসবো না সত্যি। ব্যাথা লাগে কামড়ে দিলে।

আদ্রিয়ানের খারাপ লাগাটা বাড়লো। বুকে চাপ অনুভব হলো। ও তো কখনো চায় না রোদ দূরে যাক বরং খুব করে চায় পাশে থাকুক। কাছে থাকুক। মুখ তুলে চুমু খেল রোদের ফোলা ফোলা দুই গালে পরপরই সময় নিয়ে লাল হওয়া দাগে। আদ্রিয়ানের এহেন কান্ডে একদম জমে গেল রোদ যেন বরফের পিন্ডে বসা সে। আদ্রিয়ান মুখ তুলে দুই হাতে রোদের মুখটা তুলে নাকে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে কাপলে কপাল ঠেকিয়ে মোহনীয় কন্ঠে বললো,

— আদর গুলো তোমার পাওনা ছিলো বউ আর কামড় গুলো ছিলো শাস্তি।

— শাস্তি?

— ইয়াজ থেকে দূরে থাকবে।

— সম্ভব না।

— আমি পছন্দ করছি না এসব রোদ।

— কিছু দিন পর তাহলে বলবেন আমার পরিবার ভুলে যেতে?

কিছুটা তেজী শুনা গেল রোদের কন্ঠ। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো। এতটা কেন পসেসিভ ঐ ছেলেকে নিয়ে। শান্ত কন্ঠে বললো,

— কিসের সাথে কি মিলাচ্ছো রোদ?

— ইয়াজ আমার পরিবারের বাইরের কেউ না। হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। ভাইয়াদের মতোই আদর করে আমায় ও। নিজের বোনের মতো যত্ন করে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান তাহলেই আর ওর আমার সম্পর্ক দৃষ্টিকটু লাগবে না। ছেলে মেয়ে কেন স্বাভাবিক বন্ধু হতে পারবে না?

কথা গুলো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে পরলো রোদ। আগে প্রায় সময় ইয়াজ আর ওকে নিয়ে এলাকায় কথা হলো। “একটা ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না” এই লাইনটা রোদের জীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উক্তি মনে হয় ওর কাছে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক সুন্দর যদি নিজেরা ওটাকে আগলাতে জানি।
কিছু মানুষের উপর ভিত্তি করে সবাইকে জাজ করা ঠিক না। আদ্রিয়ান এটা জানে তবুও ঐ যে হিউমান নেচার। আজ রোদের কথাতে কিছুটা শান্ত হলো আদ্রিয়ান। এতটুকু তো বুঝেছে রোদ অনেকটা সিরিয়াস এই বিষয়ে। আদ্রিয়ান এ ও জানে তার রোদটা আলাদা তবুও মনে মনে ভয় পায় আদ্রিয়ান। আজানা আশঙ্কা হানা দেয় মনের গহীনে।

_____________

জামদানী কাপড়ের পিচ কালারের একটা গাউন পরেছে রোদ। মাথায় সাদা উরনা দিয়ে ঘোমটা দেয়া। কোন সাজ গোছ নেই অথচ অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে। আদ্রিয়ানের মা এসে ছোট ছোট কিছু জুলরি পরিয়ে দিলো কিন্তু কানের দুল খুললো না রোদ আসলে এত বছরেও কানে দুল খুললে ব্যাথা পায় ও। সাবা কত চেষ্টা করলো কিন্তু ধরার আগেই রোদ কেঁদে দিবে দিবে এমন ভাব তাই তেমন আর জোর করলো না। মিশিকে কোলে নিয়ে রুমে ডুকতেই চমকে তাকালো আদ্রিয়ান। এ যেন নতুন বিয়ে করা কোন বউ বসা রুমে। হাতে, গলায় স্বর্নের ছোট ছোট জুলরি। মাথায় ঘোমটা তুলে বসে আছে রোদ। বিয়ের পর যেমন নতুন নতুন লাগে ঠিক তেমন। অথচ রোদ নতুন বউ ই কিন্তু এতদিন তার ছিটে ফোটা লাগে নি কারো। লাগবে কিভাবে? রোদ থাকতো বাসার মতো করে। না সে পোশাকে পরিবর্তন এনেছিলো না ই চাল চলনে। এতে কেউ কিছু বলে ও নি আদ্রিয়ান তো না ই। থাক না মেয়েটা নিজের মতো। এই বয়সে আর এত কি। নিজেকে সামলাক আগে পরে নাহয় বাকি সব।
তাই তো রোদ নিজের বাসার মতোই চলতো।

আজ এভাবে দেখেই কিছু একটা হলো আদ্রিয়ানের। বয়সটা যেন হুট করে কমে গেলো। কিছু-মিছু করতে মন চাইলো। হঠাৎ জারবার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আদ্রিয়ানের। জারবা আদ্রিয়ানের পেটে গুতা দিয়ে বললো,

— ও হো ছোট ভাইয়া। এত কি দেখো হু হু?

আদ্রিয়ান চোখ রাঙালো তাতে বিশেষ লাভ হলো না জারবা গলা উঁচিয়ে বললো,

— ছোট ভাবী ছোট ভাবী দেখো ভাইয়া কিভাবে দেখছে তোমাকে?

রোদ তাকাতেই আদ্রিয়ান চোখ সরিয়ে নিলো। মিশি কোল থেকেই বললো,

— বাবাই মাম্মাকে কিভাবে দেখো?

উত্তরে জারবাকেই চোখ রাঙালো আদ্রিয়ান। এমন সময় মিশান ডুকে বললো,

— ওয়াও। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

রোদ একটু হেসে মিশান চুল নেড়ে বললো,

— থাংকু।

মিশিকে নিতেই সাবা এসে বললো,

— রোদ চল। সবাই এসে পরেছে।

নিচে একগাদা মেহমানদের সামনে রোদ বসে আছে। কাউকেই চিনে না এখানে। যে যার যার মতো করে দেখে মতামত দিচ্ছে। কেউ বলছে, “মাশাআল্লাহ মেয়ে তো অনেক সুন্দরী” আবার কেউ কেউ বলছে,”বয়স তো একেবারে কম মনে হচ্ছে” “এত ছোট মেয়ে বিয়ে দিলো তাও আবার বিবাহিত ছেলের কাছে? নিশ্চিত কিছু ঘটনা আছে।” এরকম কতশত গুসুরফুসুর চলছে যার কিছু রোদ শুনেছে তো কিছু শুনে নি। তত একটা গায়ে মাখলো না রোদ এসব। এর থেকে বেশি শুনেছে পূর্বে ও। তবুও মুখটা ছোট করে বসে রইলো। তখনই মিশি আর মিশান এসেও রোদের কাছে বসলো। রোদের সাথে মিশি, মিশানের এতটা সখ্যতা দেখে কেউ আর তেমন একটা মন্তব্য করলো না।
আদ্রিয়ানের মা, সাবা সবাইকে আপ্যায়ন করলেন। যাওয়ার আগে সবাই আবার রোদকে টুকটাক সালামিও দিয়ে গিয়েছেন। রোদ তো ঐ টাকা নিয়েই এখন গোল হয়ে মিটিং করছে। মিটিং এর সদস্যরা হলো মিশি,মিশান,আলিফ আর জারবা। এই টাকা গুলো দিয়ে এখন ওরা পার্টি করবে এই হলো মূল কথা। রোদ যে আস্ত একটা ভাদাইমা এটা ওর মা সবসময় বলতো।এই মেয়ের হাতে টাকা আসলেই নাকি টাকা ওকে কামড়ায় তাই যত দ্রুত সম্ভব রোদ টাকা উড়িয়ে দেয়। এই কারণে ওর মা সহজে বেশি টাকা একবারে দিতো ও না। মিটিং এর মাঝখানে থেকে জারবা বললো,

— ছোট ভাবী কাল তো জাইফা আপু আর জাইফ ভাইয়ারা ও আসবে। পার্টি আমরা কাল করি। বেশি মজা হবে।

— কারা এরা?

প্রশ্ন করলো রোদ। মিশান উত্তর দিয়ে বললো,

— বাবার মামাতো ভাই-বোন।

— ওহ।আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।

বিপত্তি বাঁধলো মিশি আর আলিফ। ওরা এখনই পার্টি চায়। জারবা বিঙ্গদের মতো মতামত দিলো,

— আচ্ছা আজ আমরা আইসক্রিম পার্টি করি। কাল বড় করে পার্টি করব।

রোদ চিন্তিত মুখ করে রাজি হলো কিন্তু মিশি আর মিশানের জন্য চকলেট আনতে বললো যদি আবার ঠান্ডা লেগে যায়।
মিশান যেয়ে নিয়ে আসতেই ওরা ছাঁদে চলে গেল। সবাই খেতে খেতে কথা বলছিলো ওমনি রোদ নিজের আইসক্রিম একটু খেয়ে মিশানের থেকেও একটু খেয়ে বললো,

— আমারটাই বেশি মজা। ট্রাই করো।

মিশানও রোদের থেকে একটু খেলো। আদ্রিয়ান ওদের খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে আসতেই নজরে এলো এই দৃশ্য। কারো সাথে কিছু শেয়ার না করা মিশান কি না আজ রোদের সাথে আইসক্রিম শেয়ার করছে? মিশান বাবাকে দেখতেই ডাক দিলো।আদ্রিয়ান ও ওদের সাথে যোগ দিলো। রোদ আড় চোখ করে একবার তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে রাখলো। এই লোক একটা বদ। তখন কেমন করলো রোদের সাথে।

_______________

— কি সমস্যা তোমার? কাল থেকে এমন করছো কেন?

গম্ভীর সাথে কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো আদ্রিয়ান। রোদ কোন উত্তর দিলো না। নিজের মতো রেডি হচ্ছে ও। আদ্রিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এবার। কাল থেকে এই মেয়ে দূরে দূরে থাকছে। কাছে আসে না। আদুরে ভাবে কাছে ঘেষতে চায় না। রোদের এইসবই তো আদ্রিয়ানের মন ভালো করে দিতো। ভাটা পড়া হৃদয়ের ঘরে জোয়ার বয়ে আনতো। কাল রাত থেকে কি হয়েছে এই মেয়ে এমন করছে। আদ্রিয়ান উঠে বড় বড় পা ফেলে রোদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। সাবা ওকে শাড়ী পড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। রোদ এখন হালকা সাজুগুজু করছে কিন্তু বাগড়া দিচ্ছে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান আয়নার সামনে এসে দাঁড়াতেই রোদ সরে যেতে নিলো ওমনি কোমড়ের দিকে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো আদ্রিয়ান। “উফ” আওয়াজ করলো রোদ। এতেও ছাড়লো না আদ্রিয়ান। রোদের মনে হচ্ছে কোমড়ের দিকে আদ্রিয়ানের নখ ডেবে যাচ্ছে। আস্তে করে হালকা করলো আদ্রিয়ান সেই বন্ধন। আলতো করে জড়িয়ে ধরলো রোদকে। অবাধ্য হাতের বিচরণ চললো রোদের কোমড়ে। শক্ত করে আদ্রিয়ানের পিঠ জড়িয়ে ধরলো রোদ। আদ্রিয়ান রোদের কানে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আমার থেকে দূরে যেতে চেও না রোদ। এইবার আদ্রিয়ান ছাড়বে না প্রয়োজনে জোর খাটাবে। নিষেধ ও মানবে না কারণ ভালোবাসা এইবার আমি কুড়িয়েছি,ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ তোমায় দিব না।

আদ্রিয়ান এসব ভারী কথার মানে বুঝতে পারলো না রোদের ছোট হৃদয়। বুঝলো না কতটা আবেগ মিশ্রিত ছিলো প্রতিটি শব্দ। কতটা গহীন এদের অর্থ। কতটা ভয় লুকিয়ে আছে কথাগুলোর মাঝে।
রোদ সরতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর ঘাড়ে চেপে ধরলো। আস্তে করে মুখ এগিয়ে আনলো। চোখ বুজে নিলো রোদ। আজকাল মনটা কি চায় রোদ নিজেও জানে না। কিন্তু এতটুকু জানে যা চায় তা এই আদ্রিয়ান ঘিরেই। হঠাৎ করে ঠোঁটে অনুভব হলো নরম ছোঁয়া যা ছিলো খুবই অল্প সময়ের জন্য। ধারাম করে উঠলো রোদের বুক। আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। ভাবখানা এমন যে কি হয়েছে? হেব আই ডান এনিথিং?
রোদ ঠোঁটে হাত দিয়ে বিষ্মিত চোখ করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান একটু আওয়াজ করে হাসলো। রোদের হাতে আঙুলের ছোঁয়া দিয়ে বললো,

— বেশি সাজবা না। যতটুকু না দিলেই না ঠিক ততটুকু। আমি আসছি একটু পরই।

বলেই গান গাইতে গাইতে চলে গেল।

* চির দিনিই আমি যে তোমার
যুগে যুগে তুমি আমার ই*

রোদের চোখ টলমল করছে। কি হলো এটা? আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভাবে ও এটা ঠিক তাই বলে হুট করে এমন অপ্রত্যাশিত আদর ভাবে নি রোদ। ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে হুট করে লজ্জায় কালো বাদে সকল রং ধারণ করলো যেন রোদের চেহারা। গা শিরশির করে উঠলো। ফাস্ট কিস। তাও আদ্রিয়ানের থেকে। আবার ভাবলো, ইশ এটা কিস ছিলো? আর যাই হোক না কেন কিস ছিলো না। এক সেকেন্ড ছিলো কি না সন্দেহ।
সব বাদ দিয়ে রোদ রেডি হয়ে হিজাব বেঁধে নিলো। মিশি, মিশান ও যাবে ওর সাথে। জারবার পরিক্ষা নাহলে মেয়েটাও যেতো। রোদ বের হতেই আদ্রিয়ান তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বোকাপাখি কথা শুনেছে বেশি সাজেনি অথচ এতেই বেশি সুন্দর লাগছে ওকে। বিয়ের দিন বাদে আজ প্রথম শাড়ী পড়া দেখলো রোদকে। সব মেয়েদের ই বোধ হয় অন্য রকম সুন্দর লাগে। এই যে কাল অব্দি ছোট মনে করা রোদকে আজ বড় বড় লাগছে আদ্রিয়ানের কাছে। মিশির আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আদ্রিয়ানের। ওদের নিয়ে রওনা দিলো।

____________

মেডিক্যালে ডুকেই ইয়াজের সাথে ধরে বেঁধে পরিচয় করিয়ে দিলো রোদ আদ্রিয়ানকে। ইয়াজ এতদিন কিছুটা চিন্তিত ছিলো আদ্রিয়ানকে নিয়ে। এই লোকের মনোভাব বুঝতো না ও। আজকের সাক্ষাৎ এ কিছুটা নিশ্চিত হলো ইয়াজ। মিশিকে কোলে নিয়ে আদর করলো। মিশানের সাথে ও হ্যান্ডশেক করলো। সবাইকে নিয়ে ভেতরে ডুকার একটু পরই অনুষ্ঠান শুরু হলো। রোদের বারবার মনে হচ্ছে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। গভীর যেন তার নজর কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেল না। তবুও উশখুশ লাগছে। আদ্রিয়ান একবার জিজ্ঞেস করলো,

— রোদ কিছু হয়েছে?

— কই না তো।

আদ্রিয়ান তবুও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। রোদ ভাবলো হয়তো এমনিতেই এমন হচ্ছে তাই আর পাত্তা দিলো না। মিশির জন্য বাসা থেকেই রোদ অল্প খাবার ব্যাগে ভরে এনেছে। সিটে বসেই রোদ বের করে মিশিকে অল্প খাওয়ালো। মিশান না করলেও জোর করে ওর মুখে ঠুসে দিলো।
মিশানের ইদানীং বড্ড লোভী হয়ে যাচ্ছে। রোদের থেকে মিশির মতো আদর চায় এখন। মায়ের অপূর্ণতা পূরণ করে রোদ থেকে। মিশান নিজেও জানে এটা সম্ভব নয় তবুও বেহায়া মন বলে ক্ষতি কি যদি আমিও ভালো থাকি? এই যে ছোট ছোট আদর, কেয়ার এগুলোই তো যথেষ্ট এই লোভী মনকে শান্ত করতে।
আদ্রিয়ান বুঝে ছেলের মন। নিজের কাছে ও শান্তি শান্তি লাগে যখন ভাবে ছেলে-মেয়ে গুলো একা না। আদ্রিয়ান বাদেও কেউ আছে যে ওদের মন থেকে ভালোবাসে।

রোদ উঠতেই আদ্রিয়ান বললো,

— কোথায় যাচ্ছো?

— ওয়াসরুমে মিশিকে নিয়ে।

— আসব।

— আরে না। আসছি আমি।

বলে মিশিকে নিয়ে চলে গেল। মিশি তো মাকে এটা ওটা দুনিয়ায় প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। রোদ একবার পেছনে তাকালো। মনে হচ্ছে কেউ আছে পেছনে তাকাতেই দেখলো না খালি করিডোর। এদিকটায় কেউ নেই। মিশিকে ফ্রেশ করিয়ে রোদ মিশানকে কল দিতেই মিশান এলো। রোদ মিশিকে দিয়ে বললো,

— ওকে নিয়ে বাবার কাছে যাও। আমি আসছি।

— দাঁড়াই? তুমি আস।

— না বাচ্চা। তুমি যাও ওকে নিয়ে বাবা টেনশন করবে তিনজনকেই না দেখলে।

মিশান মিশিকে নিয়ে চলে গেল। রোদের শাড়ীর কুঁচি গুলো একটু ঢিলা হয়ে আছে তাই ব্যাগটা বেসিনের পাশে রেখে কুঁচিতে পিন লাগাতে গেল ওমনিই খট করে কেউ ডুকে পুরো ওয়াসরুমের মেইন ডোর লক করে দিলো। রোদ মুখ তুলে তাকিয়ে কোন পুরুষের পেছন দিক দেখে একটু রেগে বললো,

— লেডিস ওয়াসরুমে কি করছেন? বের হন।

লোকটা বের হলো না বরং এগিয়ে সামনে ঘুরলো। ভয় পেয়ে গেল রোদ। এক পা করে পেছাতে পেছাতে বললো,

— আ..আপনি? কি চাই? যান এ..এখান থেকে।বের হোন।

লোকটা বের হলো না। এগিয়ে আসতে আসতে কিছু বলছে যা শুনতে পেল না রোদ। ঘামতে শুরু করলো রোদ। হা-পা কেঁপে উঠল সমানে। এনজাইটি এট্যাক হতেই হাঁপাতে লাগলো। শ্বাস নিতে পারছে না। লোকটাও এগিয়ে এসে দ্রুত ওকে ধরতে গেলেই ছিটকে সরে গেল রোদ। ভয়ে ভয়ে জোরে কেঁদে ডাকতে লাগলো,

— ভাইয়া? ভাইয়া?

কেউ আসলো না যখন তখন রোদ ভয় পেয়ে যায়। দেয়াল ঘেঁষে বসে পরলো। লোকটা ওর দুই বাহু ধরে নিজের কাছে নিতে চাইলেই রোদ চিৎকার করে ডাকলো,

— আদ্রিয়ান।

লোকটা ঝট করে মুখ চেপে ধরলো রোদের। চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরলো রোদর।চোখের পাতায় ভেসে উঠলো আদ্রিয়ানের আজকের দুষ্ট মুখটা।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে