ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-১০

0
1706

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১০

আজকে মেডিক্যালে ফাস্ট ডে রোদের। এক্সাইটেডমেন্টে ঠিক মতো খাচ্ছে ও না এই মেয়ে। মিশিকে খায়িয়েই নিজে উঠে পরতে নিচ্ছিলো ওমনি খপ করে হাত ধরলো আদ্রিয়ান। রোদ একটা হ্যাবলা মার্কা হাসি দিলো বিনিময়ে আদ্রিয়ান দিলো চোখ গরম। রোদ বসতেই আদ্রিয়ান নিজের প্লেট থেকে আধ খাওয়া খাবার রোদকে দিলো। রোদও কোন মতে খেয়ে উঠলো। আসলে অতিরিক্ত টেনশন বা উত্তেজনায় রোদ খেতে পারে না। কেমন জানি পেট মোচড়ায়। আদ্রিয়ানের পাল্লায় পড়ে আজ কোন মতে একটু খেলো। সবাই রোদকে কংগ্রেসও জানালো। রুমে ডুকে লং একটা গাউনের উপর হিজাব পড়ে নিলো রোদ। আদ্রিয়ান ও রেডি হয়ে গিয়েছে। পেছন থেকে সাদা এপ্রোন রোদের গায়ে দিতে রোদ হাত বাড়িয়ে পড়ে নিলো। দুই জনের ঠোঁটেই হাসি। রোদ হালকা করে ম্যাট লিপস্টিক লাগিয়ে নিকাব পড়ে নিলো। ব্যাগ কাঁধে তুলতেই কোথা থেকে মিশি দৌড়ে এসে মা’য়ের হাটু জড়িয়ে ধরলো। রোদ হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো মে’য়েকে। মিশি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে রাখলো। রোদ ও জড়িয়ে ধরে আদর করে বললো,

— কি হয়েছে আমার বাচ্চার?

— আমি ও যাব।

রোদ একটু হেসে বললো,

— ঠিক আছে আমার মা ও যাবে। কিন্তু তার জন্য তো বড় হতে হবে। ছোট বাচ্চারা তো এলাউ না মা।

মিশি ঘাড় থেকে মুখ তুলে অসহায় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ানও অসহায় চাহনি দিলো। হঠাৎ মিশান এসে ডুকলো রুমে। রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— তোমরা কি এখনই বের হবে?

আদ্রিয়ান উত্তর দিলো,

— হুম।

— আমি মিশি আর আলিফকে নিয়ে নানুর বাসায় যাই? নানু কল করছিলো অনেকদিন ধরে। যদি তুমি বল তাহলে।

— আচ্ছা যাও। দুপুরের আগে এসে পরবে ঠিক আছে? ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি আর জারবা আর আলিফকেও সাথে নিও।

— আচ্ছা।

মিশান মিশিকে কোলে তুলে নিলো। মিশি তখনও মুখ গোমড়া করে রেখেছে। মিশান হেসে ওকে সুরসুরি দিতেই হেসে উঠলো মিশি। মিশান রোদকে বেস্ট অব লাক বলে চলে গেল। আদ্রিয়ান রোদকে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতেই রোদ বললো,

— এতো তাড়াতাড়ি যেয়ে কি করব। এখনও তো অনেক টাইম আছে।

আদ্রিয়ান হাত ঘড়িটা পরতে পরতে বললো,

— কাজ আছে। চলো।

রোদ নিজের সু পড়ে এখন ফিতা বাঁধতে পারছে না। স্কুল থেকে শুরু করে সবসময়ই ওর মা, বাবা অথবা রাদ বেঁধে দিতো এমনকি মাঝে মধ্যে তো রুদ্র ও বেঁধে দিতো। কিন্তু এখন? রোদ সু খুলে অন্য জুতা পরবে তাই উঠতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে বসিয়ে দিলো। রোদ কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান সু আবার ওর পায়ে পরিয়ে দিতে দিতে বললো,

— আচ্ছা নিজের সমস্যা কি আমাকে বলা যায় না? না বললে কীভাবে বুঝব।

— তেমন কিছু না।

— হুম।

বলে উঠে রোদের হাত ধরে নিচে গেল। সবার সাথে আরেক দফা বিদায় নিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে গাড়ীতে উঠলো। গাড়ীতে এসি চলছে অথচ রোদের অসস্তি হয় বলে জানালা খুলে রাখা। একটু পরই আদ্রিয়ান গাড়ী থামালো একটা ক্যাফের সামনে। রোদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

— এখানে কেন?

— বের হও।

রোদ কিছু না বলে বের হতেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে ভিতরে গেল। সাইডের এক টেবিলে বসে আছে রাদ আর রুদ্র। রোদ প্রথমে খেয়াল করে নি। রুদ্র তো বোনকে দেখে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলো। রোদ তখনও বুঝতে পারে নি কি হয়েছে। রাদও এসে দুই ভাই বোনকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। রোদ প্রায় ভর্তা হতে হতে বেঁচে গেল। খুশিতে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ানের একটু খারাপ লাগলো। চাইলেই রোদকে বাসায় নিয়ে যেতে পারছে না ও। রাদ নিজেকে সামলে নিলো। আশে পাশে অনেকজন তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। রুদ্রকেও টেনে ধরে ছাড়ালো। রোদ তখনও রুদ্রর হাত ধরে আছে। বয়সের পার্থক্য বেশি হলেও একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারে না তাও যদি হয় রোদের মতো আহ্লাদী বোন।

_________________

ক্যাফেতেই বসে আছে চারজন। রোদ দুই ভাইয়ের মাঝখানে বসা। কতক্ষণ রুদ্রকে খোঁচাচ্ছে তো কতক্ষণ রাদকে। এমনি সময় দুই ভাই রিএক্ট করে কিন্তু আজকে কিছুই বলছে না। রোদ বুঝতে পারলো না এর কারণ। অথচ আদ্রিয়ান ঠিকই বুঝলো বোনকে এতদিন পর পেয়ে দুই ভাইকে আজকে যদি নাচায় ও তবুও দুই ভাই কিছু বলবে না। চারজন কফি খেয়ে অনেকক্ষণ কথা বলে উঠলো। এতক্ষণ খুশি খুশি রোদ এখন কেঁদে দিবে দিবে ভাব। রাদ তা আগে থেকেই জানে। রোদের নিকাবটা রাদ ওকে পরিয়ে দিতে দিতে বললো,

— শোন কারো সাথে ভেজাল করবি না।

রোদ মুখ ঝামটা মে’রে বললো,

— আমি কবে ভেজাল করি?

রুদ্র মাঝখান থেকে বললো,

— হু তা তো দেখাই যাবে। তবুও ইয়াজ ভাই আছে টেনশন নেই।

রোদ মুখ লটকিয়ে বললো,

— ইয়াজ পিয়াজ একবারও কল দিলো না।

রাদ আর রুদ্র বহু কষ্টে বোনকে বিদায় দিলো। সবার আগচড়ে রাদ বোনের ব্যাগে বেশ কিছু টাকা ভরে দিলো। রোদের গাড়ী ঘুরতেই রুদ্র কেঁদে উঠলো। এত বড় রুদ্র অথচ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। রাদ কোন মতে ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ওর নিজের চোখ ও ভেজা কিন্তু বড় বিধায় কাঁদতে পারছে না।

______________

গাড়ি থামলো ঢাকা মেডিক্যালের সামনে। অনেকেই ভেতরে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদের সিট বেল্ট খুলেই টেনে নিজের কাছে আনলো। রোদ হকচকিয়ে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর চোখে চুমু খেয়ে বললো,

— বেস্ট অব লাক সোনা। আল্লাহ তোমার জন্য সব সহজ করুক। নিতে আসবো আমি। একা বাইর হবে না।

রোদ হাসলো। আদ্রিয়ান থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ী থেকে নেমে ভেতরে যেতে যেতে আবার একপলক পিছনে তাকালো। আদ্রিয়ানকে হাত দিয়ে টাটা দিয়ে আবার সামনে পা বাড়ালো। আদ্রিয়ান গাড়ী ঘুরাবে ঠিক ঐ সময় নজরে এলো সার্জনের এপ্রন পরা ইয়াং এক ছেলের হাত জড়িয়ে ধরলো রোদ। হাতে ছিলো একটা ছোট ফুলের তোরা। ছেলেটাও রোদর হাত ধরে ভেতরে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ান বাইরে যাবার আগেই পেছন থেকে হর্ণ বাজতে লাগলো অগত্যা সামনে গাড়ি নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। মনে মনে ভাবলো কে এই ছেলে? রোদের ই বা এর সাথে এত কি? হাত কেন ধরলো?

______________

প্রথম দিন ছিলো অরিয়েন্টেশন ক্লাস। সিনিয়র ডক্টররা এসে এসে কথা বলে গিয়েছেন। রোদের তেমন কোন সমস্যাও হয় নি কারণ ইয়াজ ছিলো। রোদ তো ভেবেছিলো ইয়াজের সাথে নো কথা। শালা রেজাল্ট জানার পর কোন কল দেয় নি। রোদ নিজেও সেধে কল করে নি। কিন্তু মেডিকেলে ডুকার পরই দেখলো ইয়াজ একটা ফুলের তোরা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। বেচারা মাত্রই সার্জারী থেকে বেরিয়েছিলো। রোদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলো গেটের কাছে। রোদ প্রথমে রাগ ভুলে গেলেও পরে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলো ইয়াজ নিজের ফোন বের করে দেখিয়েছিলো সে রোজ কতবার করে কল করেছিলো।রোদ নিজের ফোন বের করে চেক করতেই দেখলো ইয়াজের নাম্বার ব্লক করা। ভেবে পেল না রোদ কখন হলো এটা। ইয়াজ ওকে এসব বাদ দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। ক্লাস শেষে নিজের কেবিনেও ঘুরিয়েছে। রাদ আর রুদ্রর মতোই ইয়াজ। বয়সে বড় হলেও রোদের বেস্ট ফ্রেন্ড।

আজ দুপুরেই ক্লাস শেষ। রোদ ইয়াজকে ধরে বেঁধে ফুচকার স্টলের দিকে নিয়ে যায়। ইয়াজ বেচারা এদিক ওদিক তাকালো। কেমন দেখা যায় হসপিটালের ডক্টর নিজে আনহেলদি খাবার খাচ্ছে। তবুও রোদের জন্য সব মাফ। রোদ ঝাল আরো নিতেই ইয়াজ ওর হাত ধরে আটকে দিলো। এতে রোদ গেল ভয়ানক ভাবে রেগে। ধুম করে মারলো ওর পিঠে। ঠিক তখনই আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নামলো। নজরে এলো অপ্রিয় দৃশ্য। ছেলেটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। রোদ নিজেরটা শেষ করে ইয়াজের প্লেট থেকেও দুইটা মুখে ভরে টাকা বের করে ফুচকা ওয়ালাকে দিয়ে ইয়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,

— পরেরবার তুই বিল দিবি।

ইয়াজ মাথা নেড়ে বললো,

— আচ্ছা।

— বাহ বাহ কিপ্টে ইয়াজ এতো ভালো হলো কিভাবে?

— রুদ্রির জন্য ইয়াজ আজীবন কিপ্টেই থাকবে।

— হুহ। আসছে।

ইয়াজ নিজের রুমাল বের করে রোদের হাতে দিয়ে বললো,

— মুখ মুছ গাধা। এখনও মুখে খাবার লেগে থাকে? শশুড় বাড়ী থেকে পরে দেখবি বের করে দিয়েছে।

— তোর মতো শয়তান না তারা।

বলেই ফট করে রুমাল নিয়ে মুখ মুছে তা আবার ইয়াজের পকেটে ভরে দিলো। এর বেশি আর সহ্য হলো না আদ্রিয়ানের। সটান সটান পা ফেলে হাত মুঠ করে রোদের সামনে এসে শক্ত করে হাত ধরে বললো,

— এখানে কি?

রোদ প্রথমে চমকালেও আদ্রিয়ানকে দেখে হেসে বললো,

— দেখুন ও হলো ইয়া…

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ডুকিয়ে দিলো। ইয়াজ আর রোদ দু’জনই এই পরিস্থিতিতে হতবিহ্বল হয়ে গেল। কি হলো কেউ ই বুঝলো না। রোদ দরজা খুলে আবার বের হওয়ার আগেই আদ্রিয়ান ডুকে ডোর লক করে দিলো। রোদ বিরক্ত হয়ে একটু জোরেই বললো,

— কি সমস্যা আপনার? কি শুরু করলেন? ডোর আনলক করুন। নামবো আমি।

আদ্রিয়ান স্ট্রেরিং এ দুই হাত শক্ত করে রেখে নিজেকে যাথাসম্ভব শান্ত করে বললো,

— সিট বেল্ট বাঁধো।

— আপনি দরজা খুলুন।

এবার বেশ বিরক্ত হয়ে কথাটা বললো রোদ। এটা কেমন ব্যাবহার? আশ্চর্য হলো রোদ। আদ্রিয়ানের কোন সাড়া না পেয়ে রোদ ঝুঁকে আনলক করতে গেলেই আদ্রিয়ান ঝামটা মে’রে ওকে সরিয়ে দিয়ে দাঁত চেপে বললো,

— সিট বেল্ট বাঁধো।

রোদের মেজাজ গেল তুঙ্গে উঠে। এই লোক এমন কেন করছে। রোদ সিট বেল্ট বাঁধলো না। আদ্রিয়ান ঐ ভাবেই গাড়ী স্টার্ট দিলো। হঠাৎ করে গাড়ী ব্রেক করায় ঝুঁকে পরলো রোদ। সামনে বারি না খেয়ে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো বুকের উপর আদ্রিয়ানের হাত। একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে নাহলে মাথা আজ ফুটুস হয়ে যেত। আদ্রিয়ান জোর করে সিট বেল্ট বেঁধে দিলো। রোদ এবার আদ্রিয়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে বের হতে নিলেই আদ্রিয়ান রোদের দুই বাহু শক্ত করে ধরে একটানে নিজের কোলের উপরে উঠিয়ে আনলো। ভয়ে চমকে গেল রোদ। টলমলে চোখ করে তাকাতেই আদ্রিয়ান আরেকটু শক্ত করে ধরে বললো,

— ঐ ছেলের সাথে এত কি?

রোদ মুখ ফুটে উত্তর দিতে পারলো না। হঠাৎ করে আদ্রিয়ানের রেগে গিয়ে স্ট্রেরিং এ বারি মারলো যাতে করে ভীষণ করে ভয় পেয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান থেমে নেই। আবারও রোদের হাত চেপে ধরে জোরে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— বল কে ঐ ছেলে? তুই হাত কেন ধরলি? ওর রুমাল দিয়ে মুখ কেন মুছলি? বল?

রোদের পা অলরেডি কাঁপা শুরু হয়ে গিয়েছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আদ্রিয়ান জোর করায় বহু কষ্টে উচ্চারণ করলো,

— ইইয়াজ।

আদ্রিয়ানের রাগ থামে নি। রোদের দিকে তাকাতেই দেখলো রোদের হাতও কাঁপা শুরু হয়ে গিয়েছে। নরমালি কাঁপা না। একজন এনজাইটির রুগী এট্যাক হলে যেভাবে কাঁপে ঠিক সেভাবে। কাঁপা শরীর নিয়েই আদ্রিয়ানের কোল থেকে নামতে চাইলো রোদ কিন্তু পারলো না। আদ্রিয়ানের যেন রোদের দিকে তাকিয়েই দুনিয়া ঘুরে গেল। ভয়ংকর ভাবে কাঁপছে রোদ। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি নিজেকে স্বাভাবিক অস্থির কন্ঠে করে ডাকলো,

— রোদ? রোদ? এই।

রোদ উত্তর দিলো না। আতঙ্কিত গলায় ডাকতে লাগলো,

— আআম্মু! ভাইয়া! আআব্বু!

আদ্রিয়ান গেল এবার ভয় পেয়ে। কম্পমান রোদকে বুকে চেপে ধরলো। রোদের হাত নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে পা দিয়ে পা চেপে ধরার চেষ্টা করলো নাহলে হাতে, পায়ে ব্যাথা পেয়ে যায়। রোদের মুখ আদ্রিয়ানের বুকে চেপে ধরে রাখলো। পুরো ঘেমে উঠলো রোদ। ছটফটানি একটু কমেছে তবুও কেঁপে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আরো আধ ঘন্টা ধরে বসে রইলো। রোদ এখন স্বাভাবিক কিছুটা। কিন্তু কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। আদ্রিয়ান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে আদুরে গলায় ডাকলো,

— রোদ?

— হু।

— ঠিক?

— হু।

আদ্রিয়ান আস্তে করে রোদের মাথাটা বুক থেকে উঠালো। ঘামাক্ত চেহারায় অসংখ্য চুমু খেতে খেতে বললো,

— আ’ম সরি রোদ। আমি কীভাবে যেন রেগে গেলাম বুঝতে পারছি না। প্লিজ মাফ করে দাও সোনা।

রোদ দুর্বল শরীর নিয়ে ঐ ভাবেই বসে বললো,

— বাসায় চলুন।

আদ্রিয়ান ওকে ছাড়লো না। বুকে নিয়েই ড্রাইভ করে বাসায় এলো। নিজেও জানে না আজ কেন এমন হলো?আসলে মানুষ যতই ভালো হোক না কেন হিউমান নেচার বলেও কিছু আছে। যেমনটা হচ্ছে আদ্রিয়ানের সাথে। মাইশা নিজের ফ্রেন্ডের সাথেই চলে গিয়েছিলো। আজ রোদকে ওভাবে দেখে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলো আদ্রিয়ান। না চাইতেও মনে হয়েছিলো রোদ যদি চলে যায়? এই ভয়েই নিজের ভিতরের হিংস্রতা কিছুটা বেরিয়ে এসেছিলো যা এত জীবন চাপা দিয়ে রেখেছিলো আদ্রিয়ান। মাইশা চলে যাওয়ার আফসোস নেই কিন্তু রোদ? ওকে কখনও ছাড়বে না আদ্রিয়ান। ইহকালেও না।
হারানোর ভয়ে আদ্রিয়ান এমন ব্যবহার করে ফেললো। নয়তো আদ্রিয়ানের মনমানুষিকতা এতটাও নিচু না যে সাধারণ ছেলে বন্ধু বলে এমন রিএক্ট করবে।

এনজাইটি এট্যাক বা প্যানিক এট্যাক এসব রোগের কোন ঔষধ নেই। সাপোর্ট আর মানষিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারলেই এটা ঠিক থাকে। রোদের আজ অনেক দিন পরই এই এট্যাক এসেছে। এখন ঠিক থাকলেও শরীর ভীষণ দূর্বল মনে হচ্ছে ওর। দুপুর বিধায় ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। আদ্রিয়ান রোদকে কোলে নিয়েই রুমে ডুকলো। আস্তে করে বেডে শুয়িয়ে দিতেই রোদ উঠে বসে বললো,

— শাওয়ার নিব।

— পরে যাও।

— ঘেমে গিয়েছি তো।

আদ্রিয়ান ই রোদের ড্রেস বের করে ওয়াসরুমে রেখে এসে বললো,

— যাও।

রোদ বের হতেই আদ্রিয়ান ও গোসল করে নিলো। বাচ্চারা এখনও আসে নি। নানী বাড়ী বলে কথা। দুপুরে না খায়িয়ে ছাড়বে না। মাইশার সাথে সম্পর্ক খারাপ হলেও মাইশার পরিবারের সাথে আদ্রিয়ানদের সম্পর্ক ভালো। তাই মাঝে মধ্যে ঐ বাড়ী যায় বাচ্চারা। আদ্রিয়ান বের হতেই দেখলো রোদ হেলান দিয়ে বসে আছে। টাওয়াল বারান্দায় রেখে খাবার রুমেই নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। রোদকে খায়িয়ে দিতেই রোদ ও কিছু না বলে খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ান সব রেখে রোদের সামনে এসে বসলো। আস্তে করে রোদের হাত দুটো নিজের শক্ত হাতে বন্দী করে চুমু খেল তাতে। রোদ তাকাতেই আদ্রিয়ান আপরাধী শুরে বললো,

— আ’ম সরি সোনা।

— ইয়াজের নাম্বার আপনি ব্লক করেছেন?

আদ্রিয়ান চোয়াল শক্ত করে বললো,

— হুম।

— কারণ?

— জানা নেই।

দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রোদ। আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে কানে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,

— সরি একসেপ্টেড?

কেঁপে উঠল রোদ। তবুও বললো,

— বিনিময়ে কিছু চাই।

— এনি থিং ফর ইউ।

— পরে চেয়ে নিব। আর এরপর এমন করলে দেখিয়েন কি করি।

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে নিলো। রোদ একটু হেসে আদ্রিয়ানের বুকে চেপে বসলো। আদ্রিয়ান হেসে ওর নাক টেনে দিলো।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে