ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-০৯

0
1712

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৯

দরজায় কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আছে মিশান। মিশি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরলো। মিশান হেসে কোলে তুলে নিলো বোনকে। মিশি ওভাবেই গলা জড়িয়ে ধরে রাখলো। আদ্রিয়ান প্রথমে রোদের পানি মুছে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো ততক্ষণে বাকিরা মিশানকে ঘিরে ফেললো। আদ্রিয়ানের মা তো বড় নাতীকে ধরে কাঁদলেন এক দফা। জীবনে প্রথম দাদী হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন মিশান থেকে। আরিয়ানের সাথে হাগ করে আলিফকেও আদর করে দিলো মিশান। সাবা আর জারবার সাথে কথা বলে মিশিকে নামিয়ে সামনে এলো। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। মিশান এক দৌড়ে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো এতে করে দুই পা পিছিয়ে গেল আদ্রিয়ান। নিজেকে সামলে ছেলেকে বুকে চেপে নিলো। শান্তি শান্তি লাগছে এখন আদ্রিয়ানের। এক মাস পর এলো মিশান। বেশ কিছু সময় পর মিশান মাথা তুলে ডাকলো,

— বাবা।

ব্যাস সমস্ত কিছু যেন আবেগের চোটে বেরিয়ে আসতে চাইছে আদ্রিয়ানের চোখ দিয়ে। এই “বাবা” ডাকটা হৃদপিণ্ডটাকে কাঁপিয়ে ছাড়ে। বুকের ভেতরে প্রশান্তি নিয়ে আসে। আদ্রিয়ান ছেলের কপালের বড় চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে চুমু খেয়ে বললো,

— বলো বাবা।

— মিস ইউ।

— আই মিসড ইউ ঠু বাবা।

রোদ প্রথমে না বুঝলেও পরে ঠিকই বুঝলো যে এটা মিশান। রোদের মনে হচ্ছে মিশান পুরো রুদ্রর বয়সী। উচ্চতা ও এক মনে হচ্ছে। মিশান এবার দাদার কাছে গেল। আদ্রিয়ান মা তো নাতীকে ধরে বসিয়ে দিলেন টেবিলে। মিশান মিশিকে কোলে নিয়ে একটু হেসে বললো,

— দীদা হাতটা তো ধুয়ে দিবা নাকি?

রোদ আনমনেই খালি একটা কাচের বোল আর এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,

— এখানেই ধুয়ে ফেলো।

হঠাৎ অচেনা আওয়াজ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো মিশান। রোদকে দেখেই ও কি বলে সম্মোধন করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এমনি সময় দেখলে নিশ্চিত মিশান আপু বলে সম্মোধন করতো। কিন্তু এখন? রোদকে দেখতে সিনিয়র আপু বাদে কিছুই মনে হচ্ছে না। তবুও নিজেকে সামলে হাত বাড়িতে গ্লাস নিয়ে ছোট করে ধন্যবাদ দিয়ে হাত ধুয়ে নিলো। রোদ তখন আর কথা বাড়ালো না। আদ্রিয়ান ছেলের পাশে বসে আছে। আদ্রিয়ানের মা এটা ওটা সব এগিয়ে দিচ্ছে নাতীকে। রোদের ড্রেস যেহেতু ভিজে গিয়েছে তাই ও উঠে চলে গেল রুমে। মিশান আড় চোখে একবার তাকিয়ে খাওয়াতে মন দিলো। এতক্ষণ একটু হলেও আনকমফরটেবল লাগছিলো। মিশানের খাওয়া হতেই আদ্রিয়ান ওকে রুমে পাঠিয়ে দিলো রেস্ট নিতে।

___________________

মিশিকে কোলে তুলে রুমে গেল আদ্রিয়ান। রোদ ফোনে কথা বলছিলো। আদ্রিয়ানকে দেখে একটু কথা বলে রেখে দিলো। এগিয়ে এসে আদ্রিয়ান বললো,

— কেমন দেখলা?

— কি দেখব?

— আমার ছেলেকে।

— মাশাআল্লাহ সুন্দর। মিশির সাথে চেহারার অনেক মিল তাই না?

— হুম। আজ না ওয়েটিং এর রেজাল্ট?

— হুম।

বলেই চুপ করে গেল রোদ। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। একটু আগেই রাদ সহ বাকিরা অনেক সাহস দিলো তবুও রোদ নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে রেখেছে। আদ্রিয়ান রোদের এক হাত ধরে সাহস দিলো। রেজাল্ট পাবলিশ হবে ১১ টার দিকে। রোদের মুখ জুরে বিন্দু বিন্দু ঘাম যা হচ্ছে টেনশনের ফলে। মিশি রোদের আঙুল নাড়িয়ে ডাকলো,

— মাম্মা?

রোদ এতক্ষণ খেয়াল ই করে নি মিশি ছিলো আদ্রিয়ানের কোলে। একটু হেসে রোদ ওকে কোলে তুলে বললো,

— বলো মা কি হয়েছে?

মিশি কিছু না বলে টুপ করে একটা চুমু খেল মায়ের গালে। রোদের হাসিটা চওড়া হলো। মিশিকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। ১১টা বাজতেই আদ্রিয়ান দুরুদুরু বুকে রেজাল্ট শিট চেক করলো। এবার যদি না আসে না জানি রোদ কেমন রিএক্ট করে বসে কিন্তু রেজাল্ট পেতেই আদ্রিয়ান জোরে ডাক দিলো রোদকে। ব্যালকনিতে বসে মিশির সাথে খেলতে খেলতে ভুলেই গিয়েছিল রেজাল্টের কথা। আদ্রিয়ানের ডাকে বুক ধক করে উঠলো। মিশিকে নিয়ে তারাতাড়ি রুমে ডুকে বললো,

— কি হয়েছে? বলুন তারাতাড়ি।

— কাছে আসো।

— না না আপনি বলুন। আমার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে প্লিজ।

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই রোদ আবার ঝটপট ল্যাপটপের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। হঠাৎ করে মা’য়ের কান্নায় মিশিও রোদকে ধরে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান বেচারা কাকে ধরবে এটা না ভেবে বদলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। রোদ মে’য়ের কান্না দেখে নিজে কাঁদতে কাঁদতে আবার মিশিকে কোলে তুলে নিলো। মিশি ও মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে গলা ফাটিয়ে কেঁদে উঠলো এবার। রোদ ও মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। আদ্রিয়ান এবার ভ্যাবলার মতো করে এগিয়ে এসে মিশিকে কোলে নিতে চাইলেই রোদ সরে গিয়ে বেডে বসলো। কান্না থামিয়ে রোদ একটু নাক টেনে বললো,

— ওকে নিচ্ছেন কেন?

— কাঁদছে তো।

— আমি দেখছি না?

বলেই রোদ মিশিকে আদর করতে করতে বললো,

— আর কাঁদে না মা।

মিশি একটু মুখ তুলে মাকে দেখলো পরপরই চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে রইলো। রোদ এবার মিশিকে বুকে চেপে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরে জোরে “ইয়া হু” বলে চিৎকার করে উঠলো। মিশি যাতে পরে না যায় তাই মাকে আকড়ে ধরে রাখলো। রোদ এবার থামলো। ততক্ষণে ওর চিৎকারে সাবা পাশের রুম থেকে এসে বললো,

— কি হয়েছে?

আদ্রিয়ান গা এলিয়ে বসে পরলো কাউচে। ইশারায় রোদকে দেখাতেই সাবা এগিয়ে এসে বললো,

— এই ওর না রেজাল্ট আজ? ও আল্লাহ! হয়ে গেছে?

রোদ সাবার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। সাবা হেসে আদর করে দিয়ে সবাই কে জানাতে গেল। মিশিকে নামিয়ে এবার রোদ কাকে ধরবে, কাকে ধরবে ভাবতেই এক ঝাপ দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। চমকে গেল আদ্রিয়ান। একটু হেসে নিজেও জড়িয়ে ধরে চুমু খেল রোদের চুলে। খুশিতে আত্মহারা রোদ মুখ উজ্জ্বল করে তাকিয়ে বললো,

— বাসায় যাব।

আদ্রিয়ানের ঠোঁটের হাসিটা যেন নিমিষেই গায়াব হয়ে গেল।

__________________

বাসায় সবাই অনেক খুশি। দুপুরে খেতে বসে সবাই রোদকে কংগ্রেস জানালো। রোদ নিজেও খুশি হয়ে মিশিকে খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। মিশান একটু অবাক হয়ে তাকালো। রোদ কতটা যত্ন করে খাওয়াচ্ছে মিশিকে। মিশানের মনে পরলো নিজের মায়ের কথা। সে ও এমন করে খাওয়াতো। আজ কত বছর হয়ে গেল মা’য়ের হাতে খাওয়া হয় না মিশানের তবুও আফসোস নেই বাবা তো প্রায় খায়িয়ে দেয় কিন্তু মিশান ই ওতসব বায়না করে না। বাবা কতটা ব্যাস্ত তারমধ্য মিশিটা ছোট এরমধ্যে মিশানের তো এসব আবদার মানায় না। মিশির থাকবে তো এই আদর? ছোট মিশি তো কখনো মায়ের হাতে খায় নি। কতটা তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে ও। চোখ নামিয়ে নিলো মিশান।

মিশির খাওয়া হতেই আদ্রিয়ান রোদের প্লেটে খাবার তুলে দিলো। রোদ খেতে খেতে আবারও বললো,

— কখন যাব বাসায়?

আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— খাওয়ার সময় কথা নেই।

রোদ আবার খেতে মন দিলো। খাওয়া শেষ হতেই মিশিকে কোলে তুলে নিলো। রুমে ডুকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। বাসায় কথা হ’য়েছে সবার সাথে। তবুও মন মানছে না রোদের। দেখা করতে মন চাইছে। রাদ আর রুদ্র আসত কিন্তু রুদ্রর সাথে কথা বলার সময় জানতে পারলো রোদের আব্বু নাকি নিষেধ করেছেন রাদ আর রুদ্রকে এত বেশি বেশি বোনের শশুর বাড়ী না যেতে। দৃষ্টি কটু দেখায় যে দুই দিন হয় নি বিয়ের এর মধ্যেই মেয়ের বাড়ীর লোকজন দুইবার এসে গিয়েছে। রুদ্র না হয় ছোট ততটা বুঝে না তাই বলে রাদ আর ইশান কিভাবে রাজি হয়? এ নিয়ে রোদের আব্বু আর বড় চাচি বকেছে ওদের। আপাতত ঐ বাড়ী থেকে যে কেউ আসবে না এটা সিউর রোদ। ভিডিও কলে কথা বলেও মন মানছে না। মানবে কীভাবে নিজের জীবনে কখনো তাদের ছাড়া একদিন থাকে নি রোদ। প্রতিটা সাফল্য হোক বা ব্যার্থতা এই পরিবার ই তো ছিলো রোদের সব। আজ নিজের সাফল্যতায় পরিবারকে পাশে না পেয়ে কি রোদ আর থাকতে পারে? উহু একটু পারে না।
মিশিকে বুকে নিয়ে বালিশে মুখ গুজে শুয়ে রইলো রোদ। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে কয়েক ফোটা পানি পরলো।

আদ্রিয়ান মিশানের রুমে নক করলো। ভেতর থেকেই কে জিজ্ঞেস করতে আদ্রিয়ান বললো,

— আমি।

তারাতাড়ি দরজা খুলে দিয়ে মিশান বললো,

— তোমাকে কতবার বলেছি বাবা নক করতে না।

বলেই বেডে বসলো। আদ্রিয়ানও ডুকে বেডে হেলান দিয়ে বসে বললো,

— বললেই হলো নাকি? ছেলে আমার বড় হয়েছে প্রাইভেসি বলেও তো কিছু আছে।

মিশান একটু রাগ করে বললো,

— তুমি আবার শুরু করলে বাবা? আমি কতবার বলবো কেউ নেই।

আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে বললো,

— এই বয়সে হয়ই। লুকিয়ে লাভ নেই। আমাকে একবার শুধু হিন্ট দিবা সোজা তুলে নিয়ে আসব।

মিশান এবার অবাক হওয়া কন্ঠে বললো,

— আর ইউ সিরিয়াস বাবা? শশুড় হয়ে ছেলের বউ তুলে নিয়ে আসবা?

— এর মানে আমার ছেলের বউ আছে?

মিশান এইবার নিজেই ফিক করে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ানও হেসে দিলো। প্রতিবারই আদ্রিয়ান মিশানকে এসব বলে রাগায়। মিশানও সে কি রাগ করত আগে কিন্তু এখন রাগে না। বাবা-ছেলের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের থেকে কম না। আদ্রিয়ান এবার কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বললো,

— মা’য়ের সাথে দেখা করো না কেন?

— আমার মা নেই বাবা আর তুমি ই তো বলেছো যাতে অপরিচিত কারো সাথে কথা না বলি।

সোজা হয়ে উত্তর দিলো মিশান। তা দেখে আদ্রিয়ান একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

— সে অপরিচিত নয় মিশান। সি ইজ ইউর মাদার।

— নো সি ইজ নট বাবা। শুধু তুমি আমার বাবা আর এটা আমার পরিবার। আর কেউ নেই আমার।

— মাইশা ভাবছে আমি তোমাকে না করেছি ওর সাথে কথা বলতে।

— উহু উনি ভাবছে মিশির মাম্মা আসাতে আমাকে তুমি অবহেলা করবে তাই ঐ দিন বিয়ে বাড়ীতে যেয়ে ঐসব মেলো ড্রামা করেছিলো যেখানে উনি জানতো আমার কোন সমস্যা ছিলো না তোমার বিয়েতে। সে কোন দিনও তোমার ভালো চায় নি বাবা। তার হয়ে আমাকে কিছু বলবে না আর।

আদ্রিয়ান চিন্তিত মুখ করে বললো,

— তোমাকে এসব কে বলেছে? ও আচ্ছা আই থিংক আমি জানি। ঐ পাগল জারবা?

মিশান থতমত খেয়ে বললো,

— না না বাবা পুত্তি কিছু বলে নি।

— ও ছাড়া আর কে আছে গুপ্তচর কে বাসায়?

মিশান একটু বোকা বোকা হাসি দিলো। আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,

— এসব ভেবো না। রোদকে কেমন লাগলো?

— মাত্র তো দেখলাম। কিন্তু ছোট ছোট লাগলো। মিশিকে অনেক ভালোবাসে বুঝলা। আর অনেক সুন্দর ও। তোমার সাথে পারফেক্ট একদম কিন্তু একটু ভীতু টাইপের।

“ভীতু” শুনেই হেসে উঠলো আদ্রিয়ান। ছেলের নাক টেনে বললো,

— এক দেখায় এতটা অভজার্ভ করে ফেলেছো?ভীতু কীভাবে বুঝলা?

— মিশি তো আমাকে দেখে খুশিতে চিৎকার করেছিলো তাতেই নিজের উপর পানি ফেলে দিয়েছিলো।

বলেই একটু হাসলো। আদ্রিয়ান ও একটু হেসে বললো,

— তুমি আসবে দেখে অনেক একসাইটেট ছিলো। আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো, “মিশান কি খাবে? কি পছন্দ করে? কীভাবে কি করবে?” এসব।

মিশান একটু অবাক হয়ে বললো,

— আমার জন্য জিজ্ঞেস করছিলো? আমাকে নিয়ে তোমাদের মধ্যে ঝামেলা হয় নি?

— একটু ও না। ও খুশি হয়ে বলেছিলো, “ভালোই হলো একসাথে দুই বাচ্চার মা হয়ে গেলাম।” তুমি ওর সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবে।

মিশানের মনে ভালো লাগা কাজ করলো। ও তো আরো মনে করেছিলো হয় তো রোদ ওকে নিয়ে ঝামেলা করেছিলো। আদ্রিয়ান ছেলেকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেল।

রুমে আসতেই দেখলো রোদ মিশিকে বুকে নিয়ে বালিশে মুখ গুজে আছে। আদ্রিয়ান দরজা লাগিয়ে ভেতরে ডুকে পাশে শুয়ে রোদের ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলো,

— রোদ?

কোন উত্তর দিলো না রোদ। আদ্রিয়ান আবারও ডাক দিতেই রোদ সরে গিয়ে শুয়ে রইলো। আদ্রিয়ান বুঝলো বউয়ের রাগ। কিন্তু কি ই বা করার? এই মেয়ে একটু পর পরই রেগে যায় আবার একটু পর পরই কেঁদে দেয় আবার একটু পর পরই অল্পতে খুশি হয়ে আত্নহারা হয়ে যায়। না জানি কি আছে সামনে।

#চলবে…

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৯(বর্ধিতাংশ)

বিকেলে আদ্রিয়ান হাজার ডাকাডাকি করলেও উঠে নি রোদ। এমনিতে সজাগ ই ছিলো তবুও বান্দী সাড়া দেয় নি। ঠ্যাটার মতো শুয়ে ছিলো। আসরের সময় দিয়ে উঠে নামাজ পড়ে নিলো। আদ্রিয়ান তখন মসজিদে চলে গিয়েছে। রোদ কোন কথা বলে নি। নামাজ শেষে রোদ চুল আঁচড়াতে বারান্দায় যায়। তখনই রুমে ডুকে আদ্রিয়ান। রোদকে না দেখে ভ্রু কুচকে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো বারান্দার দরজা খোলা। বিড়াল পায়ে আদ্রিয়ানও বারান্দায় গেল। রোদ তখন চুল আঁচড়াতে ব্যাস্ত। আদ্রিয়ান একবার গলা খ্যাঁকানি দিলো তাতেও বিশেষ লাভ হলো না। রোদ নিজের মতো করে চুল বেঁধে আদ্রিয়ানকে সাইড কেটে রুমে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ান হতাশার শ্বাস ফেললো। আদ্রিয়ান আপাতত চাইছে না রোদ নিজের বাসায় যাক। এখন যদি ঐ বাসায় নিশ্চিত মানুষজন আসবে। দুইজন ভালো বলবে সাথে একজন মন্দও বলবে। মানুষ সর্বদা কথা বলতে পছন্দ করে এতে কার ক্ষতি হলো তা তারা বুঝতে চায় না। মূলত আদ্রিয়ান চাইছে রোদ আরো স্ট্রং হোক। ঠিক যতটা স্ট্রং হলো কারো কথায় ওর এনজাইটি অ্যাটেক না হয়। ঐ বাড়ী গেলেই এমন সমস্যা হতে পারে সিউর আদ্রিয়ান। নতুন বিয়ে হওয়া মেয়ে বাবার বাসায় গেলে লোকজন ভীর করবেই। কিন্তু এসব রোদকে কে বুঝাবে? এই মেয়ে তো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। কোন কথা শুনতেই নারাজ সে।

রুমে ডুকতেই দেখলো রোদ মিশিকে কোলে নিয়ে ফোনে কোন ভিডিও দেখছে। মিশি কখন ঘুম থেকে উঠলো ভেবে পেল না আদ্রিয়ান। আওয়াজ শুনেই বুঝা যাচ্ছে নিশ্চিত দুই জন সিনচেন দেখছে। মিশি তো মায়ের কোলে বসে মজা নিয়ে দেখছে। রোদও দেখছে সাথে মিশির ছোট চুলে ঝুটি করে দিচ্ছে। আদ্রিয়ান ডুকতেই রোদ মিশিকে কোলে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এবার মেজাজ খারাপ লাগছে আদ্রিয়ানের। কতক্ষণ থাকবে এভাবে?

রোদ নিচে নামতেই দেখলো জারবা আর আলিফ বসে টিভি দেখছে। রোদকে দেখেই জারবা খুশিতে গদগদ হয়ে এগিয়ে এসে বললো,

— ছোট ভাবী চল বাইরে যাই।

— এখন কোথায় যাব?

আলিফ উঠে এসে বললো,

— খালামনি চলো বাড়ীর পেছনে যাই। মজা হবে।

রোদ যাবে কি যাবে না ভাবতেই কোল থেকে মিশি বললো,

— মাম্মা মাম্মা চলো না যাই প্লিজ। মিশি আর মাম্মা খেলবে।

রোদ কি আর না যেয়ে পারে? উহু একটুও না। তাই চার জন রওনা দিলো বাড়ীর পেছন দিকে। রোদ এই দিকে তেমন একটা আসে নি। আসলে রোদ এখনও পুরো বাড়ীই দেখে নি। সামনে গ্যারেজ এরপর ডুপ্লেক্স একটা বাড়ী যার এক সাইডে বড় ছাদ আর পেছনে অনেক খানি ফাঁকা জায়গা। এখানে বড় ছোট গাছ ও আছে। সাথে বসার জন্য স্পেস। মাঝে খোলা জায়গা হয়তো বাচ্চাদের খেলার জন্য। মিশি তো মায়ের কোল থেকে নেমেই দৌড়া দৌড়ি শুরু করেছে আলিফের সাথে। রোদ জোরে বললো,

— মা আস্তে দৌড়াও পরে যাবে।

মিশি কি আর শুনে কারো কথা? জারবা একটা ফুটবল নিয়ে এলো। এখন নাকি ওরা ফুটবল খেলবে। এতদিন পর ফুটবল দেখে রোদের চোখ চিলিক দিয়ে উঠলো। রাদ আর রুদ্রর সাথে প্রায়ই খেলতো রোদ। মাঠে খেলা হলে রাদ যেতে দিতো না দেখতে। এ নিয়ে মুখ ফুলালেই রাদ,রুদ্র আর ইশান মিলে খেলতো ওর সাথে। আজকেও ফুটবল দেখে রোদ মন খারাপ ভুলে গেল। চিল্লিয়ে ডাকলো,

— মিশু,আলিফ এখানে আসো।

দুই জনই দৌড়ে এলো। রোদ নিজের উরণা সাইডে চেয়ারে রেখে এলো। পরণে ওভার সাইজ টিশার্ট আর প্যান্ট। জারবাও তাল মিলালো। সবার আগে রোদই কিক মারলো। এরপর শুরু হয়ে গেল চারজনের ক্রীড়াকালাপ। নিমিষেই লেগে গেল হৈ চৈ। মিশান নিজের ব্যালকনিতে বসে ছিলো হঠাৎ চিল্লাচিল্লির আওয়াজে নিচে তাকাতেই ওদের দেখলো। নিজেও এক দৌড়ে নিচে নেমে এলো। হঠাৎ করে মিশানের পায়ের কাছে বল আসতেই মিশান কিক মারলো যার বিপরীতে রোদ কিক করলো৷ রোদ একবার মিশানের দিকে তাকালো সাথে সাথেই চোখা চোখি হলো। রোদ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— যে আগে গোল করবে সেই জিতবে।

মিশানও ঘাড় কাত করে বললো,

— ডান।

লেগে গেল যুদ্ধ। পাঁচ জন মিলে যেন বাড়ী ঘর সহ কাঁপিয়ে ছাড়ছে। আদ্রিয়ান ফোনে কথা বলছিলো হঠাৎ করে এমন আওয়াজে ফোন কেটে দিয়ে বাইরে উঁকি দিলো। তাকাতেই নিজের অজান্তে ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো। চোখে ভর্তি করে নিলো ঐ দৃশ্য। রেলিং এ ভর করে দেখতে লাগলো। কি মনে করে আবার নিচে চলে গেল। বসে বসে আরাম করে দেখবে আদ্রিয়ান। ততক্ষণে সাবাও এসে হাজির। সাবা আর আদ্রিয়ান বসে বসে দেখছে। এমন সময় হুট করে গোল করে দিলো মিশান। মিশি, আলিফ আর জারবা জোরে চিল্লিয়ে উঠলো। রোদ মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো। মিশান বল হাতে এগিয়ে এসে বললো,

— আ’ম দা উইনার।

রোদ মুখ ঝামটা মে’রে বললো,

— জ্বি না। আমি ই আটকাই নি। ছোট মানুষ তাই ছেড়ে দিলাম। নাহলে আমি ই জিততাম।

— হারার পর সবাই এটাই বলে।

রোদ নিচের ঠোঁট বের করে ভেঙিয়ে বললো,

— তুমি জানো আমার ভাইয়া এলাকায় সবসময় ম্যাচ জিতে। পাঁচবার ট্রফি জিতেছে। আর সেই ভাইয়াকে আমি হারিয়ে দেই৷

মিশান এবার হাসতে হাসতে বললো,

— তোমার কথা তোমাকেই ফিরত দিলাম। তুমি ছোট মানুষ তাই তোমার ভাইয়া ছেড়ে দিতো।

রোদ মুখ নিচু করে নিলো। আসলেই তো রোদ তো কোনদিন ভাবে নি। এত বড় দামড়া দামড়া ভাইদের ও কীভাবে হারাতো? নিশ্চিত ভাইরাই সুযোগ করে দিতো।
ঘেমে নেড়ে একাকার হয়ে গিয়েছে সবাই। ফর্সা রোদ চেহারা লাল হয়ে গিয়েছে। মিশিরও একই অবস্থা। মিশি ঠোঁট ফুলিয়ে এসে রোদের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,

— মাম্মা আমরা হেরে গিয়েছি?

রোদ ওকে কোলে তুলে নিয়ে মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— না তো মা তোমার ভাইয়া ছোট মানুষ তাই মাম্মা ছেড়ে দিয়েছি।

বলেই মিশিকে নিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। রোদ জানে এখন আর কথায় পারবে না। তাই কেটে পড়াই শ্রেয়। এদিকে মিশান আর জারবা এতক্ষণ থম ধরে দাঁড়িয়ে থেকে হু হা করে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান আর সাবাও বসে হাসলো রোদের বাচ্চামি দেখে। সাবা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— দেখো রোদই একদিন মিশানের মায়ের চাহিদা পূরণ করবে।

— জানি।

মিশান জারবার দিকে তাকিয়ে বললো,

— পুত্তি চলো ভেতরে যাই।

বলেই আলিফকে কাঁধে তুলে নিলো। আলিফও ভাইয়ের চুল খামচে ধরে রাখলো। জারবা মুখ কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ছোট ভাইয়া তোমার ছেলে আবারও আমাকে পুত্তি ডাকে।কিছু বলবা?

আদ্রিয়ান আর কি বলবে। ছোট বেলায় মিশান ফুপি ডাকতে পারতো না তাই পুত্তি ডাকতো। বড় হওয়ার পরও ও পুত্তি ই ডাকে। এতে করে ক্ষেপে যায় জারবা। মান ইজ্জতের ব্যাপার স্যাপার। পুত্তি কোন ডাক হলো। জারবা আর মিশানের বয়সের পার্থক্যও তেমন একটা না। দুই জন বন্ধুর মতোই।

__________________

রুমে ডুকেই আদ্রিয়ান দেখলো রোদ ভেজা টাওয়াল দিয়ে মিশিকে পুরো মুছিয়ে ড্রেস পাল্টে একটা ছোট বিড়াল প্যান্ট আর পাতলা গেঞ্জি পরিয়ে দিলো। নিজেও অন্য একটা টিশার্ট নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ানের হাতে রোদের ওরনা। বাইরেই ফেলে এসেছিলো এই মেয়ে। আদ্রিয়ানকে দেখতেই মিশি হাত বাড়িতে দিলো যার অর্থ কোলে নাও। আদ্রিয়ান হেসে মেয়েকে কোলে তুলতেই মিশি বাবার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,

— বাবাই বাবাই?

— জ্বি মা, জ্বি মা।

আদ্রিয়ান ও মিশির মতো করে বলায় কুটকুটিয়ে হাসলো মিশি আবার কি মনে করে মন খারাপ করে ফললো। আদ্রিয়ান তা দেখে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে আমার মা’য়ের?

— মাম্মা হেরে গিয়েছে। মাম্মা সেড সেড।

আদ্রিয়ান মেয়ের গালে চুমু দিয়ে বললো,

— উহু। মাম্মা সেড হলে আমরা হ্যাপি করে দিব।

ওদের কথার মাঝেই রোদ বেরিয়ে এলো। এখন শান্তি লাগলো ওর। মাগরিবের আজান দিতেই আদ্রিয়ান চলে গেল মসজিদে আর রোদও মিশিকে বসিয়ে নিজে নামাজ পড়ে নিলো। নামাজ থেকে উঠে মিশিকে কোলে তুলে নিচে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো,

— আমার বাচ্চা আজকে কি খাবে?

মিশি খুশি হয়ে বললো,

— পাসতা।

— আচ্ছা মা বলো তো তোমার ভাইয়া কি পছন্দ করে?

মিশি পরে গেল গভীর ভাবনায়। তার ভাই কি পছন্দ করে কি পছন্দ ভাবতে ভাবতে রোদ ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো,

— হ’য়েছে আম্মাজান আর ভাবতে হবে না।

মিশি যেন খুশি হলো। আসলেই ও জানে না ভাই কি পছন্দ করে। রোদ কিচেনে ডুকতেই দেখলো সাবা চা বানাচ্ছে। রোদকে দেখেই হেসে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু লাগবে?

— হুম। পাসতা রান্না করব। একটু বলবে কোথায় কি আছে?

— তোর কেন রান্না করতে হবে? আমি করে দিচ্ছি। বাচ্চাদের সাথে বোস গিয়ে।

রোদ জেদ ধরে বললো,

— না না আমিই করব।

অগত্যা রাজি হলো সাবা। ততক্ষণে কিচেনে জোগ দিলো জারবা। সাবা চা রান্না করে আবার পাকোড়া বানাতে মনোযোগ দিলো৷ হঠাৎ করেই বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব। তাই চায়ের সাথে পাকোড়া বেস্ট হবে। সব শেষ করে তিনজন হাতে হাতে করে সব ড্রয়িং রুমের টেবিলে নিয়ে এলো। সাবা আদ্রিয়ানের মায়েরটা তুলে রুমে দিয়ে এলো। বিকেল থেকে তার হাটুর ব্যাথা বেড়েছে। আদ্রিয়ান আর মিশান ও মসজিদ থেকে এসে সোফায় বসে মিশি আর আলিফের সঙ্গে খেলছিলো। রোদ আগে এক বাটিতে চামচ দিয়ে সেই পাসতা মিশানকে এগিয়ে দিলো। মিশানও নিয়ে নিলো। আলিফকে দিয়ে নিজে মিশির মুখে তুলে দিলো। আবার কি মনে করে উঠে কিচেন থেকে দুই মিনিট পর হাতে করে দুই কাপ কফি নিয়ে এলো। আদ্রিয়ানকে এই দুই দিনে চা খেতে দেখে নি রোদ। এই লোক একটা কফিখোড়।এক কফি আদ্রিয়ানকে দিয়ে আরেকটা মিশানকে এগিয়ে দিলো। মিশান মিষ্টি করে হাসি দিলো। আসলেই ওর এখন কফি খেতে মন চাইছিলো। মিশিকে খায়িয়ে রোদ নিজেও একটা পাকোড়া মুখে নিয়ে খেতে খেতে সবার সাথে কথায় যোগ দিলো। কারো সাথে মিশতে তেমন একটা সময় লাগে না ওর। মিশান পাসতাটা শেষ করে বললো,

— তুমি রান্নার করেছো?

রোদ মুখে পাকোড়া চিবুতে চিবুতে বললো,

— হুম।

— অনেক মজা হয়েছে।

— এসব বলে লাভ নেই। পরেরবার ছাড় দিব না বাচ্চা মানুষ।

মিশি, আলিফ আর জারবা হু হা করে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান আর সাবাও একটুও হাসলো। মিশান মুখ ছোট করে বললো,

— তুমি তোমার ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে দেখো সে যেটা বলবে সেটাই মেনে নিব।

রোদের হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেল। নিশ্চিত রোদ জানে এখন বিপদ হতে পারে তাই মুখ ভেংচি দিয়ে আরেকটা আলাম পাকোড়া মুখে পুরে নিলো। ওর আচরণে সবাই হেসে উঠলো। আরিয়ানের আজ রাতে অফ থাকায় হসপিটাল থেকে তারাতাড়ি ফিরে এলো। নিজেও সবার সাথে যোগ দিলো।
এভাবেই সন্ধ্যাটা কেটে গেল সবার আনন্দে আনন্দে।

______________

একেবারে এশারের সময় নামাজ পড়েই মিশিকে খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো রোদ। উঠে জারবার রুমে যেতে নিলেই দেখলো মিশানের রুমের দরজা খোলা। কোন ভিডিও দেখছে কেমেস্ট্রির কিন্তু হয়তো বুঝতে পারছে না। রোদ নক করে বললো,

— আসবো মিশান?

মিশান একবার তাকিয়ে বললো,

— কিছু বলবে?

— কোন সমস্যা হচ্ছে?

— আসলে অর্গানিক ক্যামিস্ট্রির বিক্রিয়াটা বুঝতে পারছি না। সমতা করছি তবুও হচ্ছে না। লাস্টে শুধু মিথেন রয়ে যাচ্ছে বারবার। ভিডিও দেখেও বুঝতে পারছি না।

রোদ এগিয়ে এসে বইটা হাতে তুলে নিলো। মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি বলি দেখো বুঝ কি না?

— আচ্ছা।

রোদ খাতায় পুরো বিক্রিয়া ভেঙে ভেঙে লিখে দিয়ে বুঝিয়ে বললো। সাথে এটাও বললো যে, সব বিক্রিয়া সাধারণ নিয়ম মেনে হয় না। কিছু কিছু বিক্রিয়া ব্যাতীক্রম হয়। পুরোটা দেখিয়ে রোদ জিজ্ঞেস করলো,

— বুঝেছো?

মিশান রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— তুমি বেস্ট। আমি এই জীবাশ্মের অধ্যায় অনেকদিন ধরে বুঝার চেষ্টা করছি। স্কুলের স্যারও বুঝিয়েছিলো কিন্তু আমি কিছুই বুঝি নি। থ্যাংক ইউ।

রোদ একটু হেসে মিশানের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,

— মেনশন নট ইউ আর এ গট!

মিশান থতমত খেয়ে বললো,

— আমি ছাগল?

— আরে ধুর আমিতো কথার কথা এমনিতেই বললাম। এখন যাই। পড়া শেষ করে নিচে এসো।

— আচ্ছা।

শুনে চলে গেল রোদ। মিশান একটু হেসে পড়ায় মনোযোগ দিলো৷ আদ্রিয়ান দরজার সামনেই দাঁড়ানো ছিলো মূলত রোদকে খুজতে এসেছিলো। কে জানতো একদিনেই দু’জনের এত বনে যাবে।

আদ্রিয়ান রোদকে পেছন থেকে ডাকলেও পাত্তা দিলো না রোদ। সোজা জারবার রুমে ডুকে পড়লো। বের হলো একেবারে রাত ১০ টায়। ডাইনিং টেবিলে একে একে সবাই এসে বসতে লাগলো। আজ সাবার সাথে রোদও কিচন থেকে একটা একটা করে এনে টেবিলে রাখতে লাগলো। শাশুড়ীর হাটু ব্যাথা তাই বেশি হাটতে পারবেন না। সাবাকে একা একা করতে দেখে রোদ নিজেই এগিয়ে এসে হেল্প করছে এতে সাবা হাজার না করলেও রোদ নড়ে নি। কে বলবে এই রোদ দুই দিনের নতুন বউ? মনে হয় বাড়ীর মেয়ে যেমন জারবা। আজকে আদ্রিয়ানের পাশেও বসলো না রোদ। বদ লোকের আশে পাশে থাকবে না রোদ তাই যেয়ে বসলো সাবার সাথে। আদ্রিয়ানের মেজাজ খারাপ যা ছিলো এখন তা গেলে বেড়ে। দাঁত কটমটি করে রোদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু কাকে চোখ রাঙাবে রোদ তো ফিরেও তাকাচ্ছে না। নিজের মতো করে আজ একটু খেয়ে বাকিটা নেড়েচেড়ে সবার সাথে উঠে পরলো। সাবাকে আবার এগুলো গুছাতে হেল্পও করলো সাবা আর জারবা।

রাত প্রায় ১২ টার কাছাকাছি কিন্তু রোদের কোন পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। যাবে কীভাবে? নিচে রোদ, মিশান, জারবা মিলে মুভি দেখছে। আদ্রিয়ানের রাগ হিরহির করে বেড়ে গেলো। ধুপধাপ পা ফেলে নিচে এসে সোজা টিভি অফ করে দিলো এক ধমক। এত রাতে কীসের টিভি?
জারবা আর মিশান কোন মতে কেটে পরলো রয়ে গেছে রোদ। আদ্রিয়ান দাঁত কটমটি করে বললো,

— সোজা রুমে।

রোদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একদম সোজা হয়েই রুমে ডুকে পরলো। আদ্রিয়ান ও সব লাইট অফ করে রুমে এলো। ওয়াসরুম থেকে রোদ বের হতেই আদ্রিয়ান ওকে টেনে ধরলো। রোদ হাত ছাড়াতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর কোমড় পেচিয়ে ধরে দাঁত চেপে বললো,

— সারাদিন অনেক হ’য়েছে। এখন পালিয়ে দেখাও।

— ছাড়ুন।

আদ্রিয়ান আজ আর ছাড়লো না মুখ এগিয়ে নিলো রোদের গলার দিকে। রোদ তখনও ঠেলতে ঠেলতে বললো,

— কথা নেই আপনার সাথে। ছাড়ুন।

মুহূর্তেই আঁতকে উঠল রোদ। জোরে এক ধাক্কা দিলো আদ্রিয়ানকে। গলায় হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখে পানি টলমল করছে। মাত্রই কি করলো আদ্রিয়ান? রোদ হাত দিয়ে ডলতে লাগলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতে চাইলেই রোদ সরে গেল। আদ্রিয়ান জোর করে ধরে গলা থেকে হাত সরিয়ে বাইট করা যায়গায় গভীর ভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। রোদ মুহূর্তেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান এবার দু-হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— কাল দেখা করাব প্রমিস।

রোদ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,

— ধুর মিয়া। কামড় দিয়ে এখন দরদ দেখাচ্ছে।

— “মিয়া”? কি সব ভাষা বল রোদ?

রোদ ভেংচি কাটলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে রোদের কোমড় জড়িয়ে উঁচু করে ধরে বেডে শুয়িয়ে লাইট অফ করে নিজেও ওর পাশে শুয়ে পরলো। মিশিকে একপাশে আর রোদকে আরেক পাশে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে