#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৭
#অধির_রায়
তূর্জয় আর মিহু রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় অঘটন। ছোঁয়া হাত কেটে রুমে জ্ঞান হারিয়ে আছে৷ মিহু ছোঁয়াকে দেখে দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে যায়৷
— ছোঁয়ার মাথা নিজের কোলে নিয়ে ডাকতে শুরু করে, “দিদি তোমার কি হয়েছে? প্লিজ চোখ মেলে তাকাও!” কান্না করতে করতে বলে উঠে।
তূর্জয় এক দৃষ্টিতে মিহু আর ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তূর্জয় ছোঁয়াকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না?
— মিহু বলে উঠে, “দাঁড়িয়ে আছেন কেন? জল নিয়ে আসেন৷ জ্ঞান না ফিরলে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
হিহুর কথা শুনে তূর্জয় বাস্তবে ফিরে আসে। তূর্জয় জল নিয়ে এসে ছোঁয়ার চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়৷ জলের ছিঁটা পেয়ে ছোঁয়া ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়৷
— আমাকে ক্ষমা করে দাও তূর্জয়। আমি বড় ভুল করে ফেলেছি৷ (ছোঁয়া)
মিহু কি বলবে, বুঝে উঠতে পারছে না? মিহু চোখের জল মুছে রুম থেকে চলে যায়। তাদের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ করে দেয়৷ কান্না করতে করতে মিহু নিচে নেমে আসে৷ মিহুকে কান্না করতে দেখে তূর্জয়ের মা মিহুর দিকে এগিয়ে আসে৷
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কি হয়েছে মা? এভাবে কান্না করছো কেন?
— মিহু নিজেকে শক্ত করে বলে উঠে, ” মা দিদি ফিরে এসেছে। আর দিদি এখন রুমে আছে। দিদি তার ভুল বুঝতে পরেছে।”
মিহু কথা শুনে তূর্জয়ের মায়ের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় যেন৷ তিনি এক কদম পিছিয়ে বলে উঠেন, “সে এখানে কেন এসেছে?”
— দিদি খুব অসুস্থ। দিদির হাত কেটে গেছে। দিদি রুমে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিল৷ আমরা রুমে ঢুকে দিদিকে এই অবস্থায় দেখতে পায়৷ প্লিজ তাদের কিছু একটু সময় দেন৷ অনেক রাগ জমে আছে তাদের মাঝে।
তূর্জয়ের মা কি করবে, বুঝে উঠতে পারছেন না? তিনি এই দিকেও যেতে পারছেন না ওইদিকেও যেতে পারছেন না৷ তিনি মিহুকে শান্তনা দেওয়ার জন্য নিজের রুমে নিয়ে যান৷
।
।
।
মিহু চলে যেতেই ছোঁয়া তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে৷ আজ তূর্জয় নিজ থেকে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরেনি। আজ কেন জানি, ছোঁয়াকে অসহ্য লাগছে তূর্জয়ের কাছে?
— তূর্জয় ছোঁয়াকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে কোমলভাবে বলে উঠে, ” আমি এখন একজন বিবাহিত পুরুষ। এমনভাবে কাছে আসার চেষ্টা করবে না৷ ”
— ছোঁয়া মনে মনে বলে উঠে, “আমি তো তোমাকে নিজের করেই নিবো৷ “আমি তোমাকে কিছুতেই মিহুর হতে দিবো না৷ আমাকে তূর্ণ মেনে নেয়নি৷ তূর্ণ আমাকে ঠকিয়েছেন। তূর্ণ আমাকে ভালোবাসে না৷ আমি কি করে এখন তোমাকে ছেড়ে দেয়৷”
— কি হলো? তুমি এখানে কেন ফিরে এসেছো? তুমি তোমার বাড়িতে ফিরে যাও।
— “না আমি আমার বাড়িতে ফিরে যাবো না৷ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তূর্জয়। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না৷ প্লিজ তূর্জয় আমাকে ফিরিয়ে দিও না৷ আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি৷ তোমার ভালোবাসার বন্ধনে আমি আটকা পড়তে চাই।” ন্যাকা কান্না করতে করতে বলে উঠে।
— আমাকে ভালোবাসলে আমাকে ফেলে চলে যেতে পারতে না৷ একবারও ভাবলে না আমার কি হবে৷ বিয়ে বাড়িতে কেমন অবস্থা হয়েছিল! কিভাবে আমি এই ধাক্কা নিতে পারবো?
— তূর্জয়ের পা ধরে বলে উঠে, ” আমি তখন বুঝতে পারিনি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিজের ভালোবাসা নিজের কাছে টেনে নাও৷ আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসা এত ভঙ্গুর নয় যে শুকনো ঝড়ে ভেঙে যাবে৷”
— এক সময় আমি তূর্জয় তোমার ভালোবাসায় পাগল ছিলাম৷ তোমাকে ছাড়া আমার অবুঝ মন কিছু বুঝতো না৷ আজ সে মন তোমাকে ভালোবাসে না৷
— কাকে তুমি ভালোবাসো? তুমি তো বলেছিলে আমার জায়গা কাউকে দিবে না৷ আমিই তোমার মনে সব সময় থাকবো৷
— হ্যাঁ। তুমি আমার মনে সব সময় থাকবে৷ কিন্তু আমার জীবনে থাকতে পারবে না৷ আমার জীবন এখন অন্যের সাথে বাঁধা পড়েছে৷ আমি কিছুতেই মিগুকে দূরে সরিয়ে দিতে চাই না৷
— আমি মিহুর সাথে কথা বলবো৷ আমি যা বলবো মিহু তাই করবে৷ আমার কথার অমান্য করবে না মিহু৷ মিহু আমাকে খুব ভালোবেসে। আমার ভালোবাসার জন্য মিহু সব কিছু করতে পারে।
— হ্যাঁ, মিহু সব কিছুই করতে পারে৷ মিহু তোমার মতো স্বার্থপর নয়৷ তুমি তোমার মা বাবার সম্মান মাটি করতে পারো। কিন্তু মিহু নয়৷ মিহু সেই মাটিকে চাষযোগ্য করে ফসল ফলিয়েছে৷ মাটিতে হাসি ফিরিয়ে এনেছে৷ মিহু তোমার মা বাবার সম্মান বজায় রেখেছে সেই দিন৷ মিহুর জন্য আজ তোমার মা বাবা সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পেরেছে৷
— জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি৷ আমার ভুলের কোন ক্ষমা হয় না৷ তবু্ও আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি৷ আমি আবার এই চৌধুরী বাড়ির সম্মান ফিরিয়ে নিয়ে আসবো । তার বিনিময়ে তুমি কি পারবে না মিহুকে ডিভোর্স দিতে?
ডিভোর্সের কথা শুনে তূর্জয়ের বুকটা কষ্টে মোচড় দিয়ে উঠে৷ অল্প দিনে মিহু তার মনে এতটা জায়গা করে নিবে তূর্জয় বুঝতে পারেনি৷ তূর্জয় মিহুকে ভালোবাসে ফেলে৷ তূর্জয়ের বুকে এখন শুধু মিহুর বসবাস। ডিভোর্সের কথাটা হজম করতে না পেরে তূর্জয় ছোঁয়ার গালে পর পর দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— লজ্জা করে না, নিজের বোনের জীবন নষ্ট করতে৷ তুমিই বলছো তোমার বোন তোমার জন্য সব কিছু করতে পারে৷ আর তুমি তারই ঘর ভাঙতে এসেছো। তোমাকে এই বাড়িতে আসতে কে বলেছে? তোমার থেকে মিহু খুব ভালো৷ তুমি তো তোমার স্বার্থ বুঝ। আর মিহু নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে পরিবারের স্বার্থের কথা ভাবে৷ এইজন্য মিহু আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।
— প্লিজ তূর্জয় আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো৷ আমি এমনটা বলতে চাইনি৷ মিহুর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি এমনটা করেছি৷
— “স্টপ” আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না৷ বের হও আমার রুম থেকে।
— না আমি কোথাও যাবো না৷ আমি এখানেই থাকবো৷
— ওঁকে তোমার যেতে হবে না৷ আমিই তোমাকে তোমার জায়গা বুঝিয়ে দিচ্ছি৷
ছোঁয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসে৷ ছোঁয়ার চিৎকারে সবাই ডাইনিং রুমে চলে আসে। তূর্জয় ছোঁয়াকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসে ফ্লোরে ফেলে দেয়৷
মিহু এগিয়ে আসতে নিলে তূর্জয়ের মা মিহুর হাত ধরে ফেলেন৷ তিনি মিহুকে চোখের ইশারায় এখানে আসতে মানা করেন৷
— কি হয়েছে তূর্জয়? (তিহান চৌধুরী)
— বাবা এই মেয়ে আমাদের বাড়িতে আসলো কিভাবে? এই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। আমি এই মেয়েকে একদম সহ্য করতে পারছি না৷
— ছোঁয়া কি করেছে? সে অনেকদিন পর ফিরে এসেছে৷ দেখা যাচ্ছে তার হাত কাটা। হাত থেকে রক্ত ঝড়ে শুকিয়ে গেছে। (বাবা)
— বাবা তুমিও মিহুর মতো বোকা হলে, সে নিজে ইচ্ছা করে হাত থেকে চামড়া তুলে ফেলেছে। আর আমাদের রুমে জ্ঞান হারানোর নাটক করছিল। সে আমাদের ক্ষতি করার জন্য এখানে এসেছে৷ তাকে আমি দেখতে চাই না৷
— ছোঁয়া তিহান চৌধুরীর পা ধরে বলে উঠে, ” আঙ্কেল প্লিজ আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবেন না৷ আমি আপনার মেয়ের মতোন৷ আমি না হয় দূর থেকে তূর্জয়কে ভালোবেসে যাবো৷
তিহান চৌধুরী কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর্জয় ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যায়৷ তূর্জয় কারো কোন কথা শুনে না৷ টানতে টানতে গেটের বাহিরে নিয়ে আসে। তূর্জয়ের পিছু পিছু সবাই চলে এসেছে৷ তূর্জয়কে এমন কঠোর না হতে সবাই বলছে। কিন্তু তূর্জয় কারো কোন কথা কানে তুলছে না৷
— তূর্জয় ক্ষেপে বলে উঠে, ” তোকে যেন আমাদের বাড়ির আশেপাশে না দেখি৷ ” আমার মিহুর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না৷ ”
— ছোঁয়া মাটি থেকে উঠে বলে উঠে, ” আমি ছোঁয়া মহেশ্বরী। আমি কথা দিচ্ছি, আমি এই বাড়িতে বউ হয়ে প্রবেশ করবো৷ এই বাড়িতে কোন মিহুর ছায়া থাকবে না৷
।
।
মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়৷ মিহু ভাবতেও পারেনি তূর্জয় তাকে এত আপন করে নিবে।
চলবে…