#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়
মিহু তূর্জয়কে বুঝানোর চেষ্টা করছে ;সে এখানে ইচ্ছা করে থাকেনি৷ কিন্তু তূর্জয় বুঝার চেষ্টা করছে না৷ তূর্জয় রেগে মিহুকে বিছানা থেকে নামায়। নামিয়ে মিহুর গায়ে হাত তুলতে নিলেই মিহু তূর্জয়ের হাত ধরে ফেলে৷
— “আর কোনদিন ভুলেও আমার গায়ে হাত তুলার চেষ্ঠা করবেন না৷” ক্ষেপে বলে উঠে মিহু।
— তূর্জয় জবাবে বলে উঠে, “তোমার এত বড় সাহস! তুমি আমার হাত ধরলে!” রাগে চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে।
— আপনি আমাকে কি ভাবেন? মেয়েরা কি শুধু ভোগের পাত্রী? আমাদের কোনো ক্ষেত্রে কোনো যোগ্যতা নেই? পরে পরে মার খাবো৷ সেই কলি যুগ থেকে মেয়েরা বড় বড় বিপদের সাথে মোকাবেলা করে আসছে৷ আমাকে অবলা নারী ভাববেন না৷ আমি এই দুই দিন আপনাকে সুযোগ দিয়েছিলাম। সেজন্য কিছু বলিনি৷ এখন বলবো না তার কোনো কথা নয়৷
তূর্জয় মিহুর রাগ দেখে আবাক! যে মেয়ে কথা বলতে পারতো না; আজ সেই মেয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে৷
তূর্জয় মিহুর হাত পিছনে চেপে ধরে ” এই মেয়ে আমার সামনে কখনো উঁচু স্বরে কথা বলবে না৷ আমি চাইনা তোমার সাথে ভুল কিছু করে ফেলি৷ কারণ আমি ততটাও খারাপ নয় যতটা তুমি ভাবো৷ আমি চাই তুমি তোমার জীবনে এগিয়ে যাও৷ সেজন্য তোমাকে আমার জীবন থেকে মুক্তি দিতে চাই৷ কিন্তু তুমি বারবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করছো কেন?”
— “আউচ” আমার হাতে লাগছে৷ প্লিজ আমার হাত ছেড়ে দেন! আর হ্যাঁ আমি আপনার কাছে আসিনি৷ এ সামান্য কথাটা বুঝতে পারছেন না৷
–তূর্জয় মিহুর হাত ছেড়ে দিয়ে, ” তুমি বিছানায় কিভাবে আসলে?”
— আপনি রাতে আঁধা শুয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন৷ আপনাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই আপনি ঘুমের মাঝে আমার হাত টান দেন। আমাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেন৷ আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছি। আপনার ঘুম নষ্ট হবে বলে ডাকা হয়নি৷ সেজন্য ক্ষমা করে দিবেন।
— এই সামান্য কথাটা প্রথমে ভালোভাবে জানাতে পারলে না৷ কোন সমস্যা হতো না৷
— আপনি তো বলার সুযোগই দেননি৷ আর হ্যাঁ আমিও চাই না আপমার মতো খবিশের সাথে থাকতে৷
— কি আমি খবিশ!
— হ্যাঁ আপনি খবিশ। আপনি চাইলে আমিই আমাকে মুক্তি দিয়ে দিব৷
— এই মেয়ে তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ আমিও তোমার সাথে থাকতে চাই না৷ শুধু পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে, তোমার মতো উগান্ডাকে নিজের লাইফে জড়িয়ে ফেলেছি৷
— এই যে সাদা বানর। আমারও ঠ্যাঁকা পড়েনি, আপনার মতো সাদা বিলাইকে বিয়ে করতে৷ আর হ্যাঁ আমি কখনো আপনার কাছে নিজে থেকে আসবো না৷ আপনাকে আমার একদম পছন্দ নয়৷
— “এই মেয়ে কি বললে তুমি?” উঁচু স্বরে বলে উঠে।
মিহু তূর্জয়ের কথার কোন জবাব না দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তূর্জয় রাগে ফুসফুস করতে করতে ফোন নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে যায়৷ হঠাৎ করেই ফোনের এলার্ম বেজে উঠে। এলার্ম বন্ধ করার জন্য ফোন বের করে প্যান্টের পকেট থেকে। ফোনের ওয়ালপেপার দেখে চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
ফোনে ওয়ালপেপারে এখনো ছোঁয়ার হাসিমাখা মুখটা রয়েছে। ছোঁয়ার পিক টা দেখে মনে মনে বলতে থাকে, “কি দোষ ছিল আমার ? তুমি কেন আমার কাছ থেকে বার বার দূরে সরে যাও? তুমি কি একটু জানতে চাইলে না আমার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি৷ আমি তোমার ভালোবাসার বন্ধনে আটকে পড়েছি।” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
চোখের জল মুছে পার্কের বেঞ্জে বস পড়ে। ফোন হাতে নিয়ে অল পিক রিমুভ করে দেয়৷ কিন্তু এখনো ওয়ালপেপারে ছোঁয়ার পিক আছে৷ সব পিক রিমুভ করার পরও ওয়ালপেপারে পিক থাকে৷ যদি ওয়ালপেপারে পিক চেঞ্জ না করা হয়৷
— ওয়ালপেপার পিকের দিকে তাকিয়ে আবারও মনে মনে বলতে থাকে, ” তোমার জন্য আমাদের দুইটা জীবন নষ্টের দিকে৷ আমার কথা বাদই দিলাম৷ তুমি একবারও তোমার বোনের কথা ভাবলে না৷ তুমি জানতে না, বিয়ে থেকে পালিয়ে যাওয়া মানে সব কিছু থেকে মুক্তি পাওয়া না৷ তুমি তোমার বাবা মায়ের কথা টুকুও ভাবলে না৷ তারা কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবে? এখন তো তোমাকে আমার ঘৃণা করতে ইচ্ছা করছে৷ কিন্তু কখনোই তোমাকে ঘৃণা করতে পারবো না৷ আমি যে তোমায় খুব ভালোবাসি।”
অন্য কিছু আর না ভেবে ছোঁয়ার ছবি ওয়ালপেপার থেকে মুছে ফেলে। চোখের নুনা জল খরচ না করে চোখের জল মুছে বাসায় চলে আসে৷ বাসায় এসে দেখে প্রায় সব গেস্ট চলে গেছে৷ হাতে গুনা কয়েকজন আছে৷ তারাও আজ চলে যাবে।
— কি রে তূর্জয় ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? (পিসিমনি)
— পিসি আমি বাহির থেকে একটু হেঁটে আসলাম৷ তোমরা গল্প করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি৷
— আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷ তুমি তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসো৷ এক সাথে খাবো৷ (তিহান চৌধুরী)
— ওঁকে বাবা।
তূর্জয় ফ্রেশ হয়ে যথা সময়ে খাবার টেবিলে চলে আসে৷ কিন্তু আজ খাবার টেবিলে আরও দুইজন লোক বসে আছে। তারা হলেন মিহুর মা বাবা। তূর্জয়কে দেখে মিহুর মা মাথা নিচু করে ফেলেন৷
— “কি করছেন টা কি? এখানে সবাই নিজের লোক। কোন সংকোচ নেই, ” তিহান চৌধুরী বলে উঠে। তূর্জয়কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন, ” তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? মিহুকে নিয়ে বসে পড়ে৷”
মিহু তার নাম তার শ্বশুর মশাইয়ের মুখে শুনে অনেকটা খুশি হলো৷ তারা সবাই মিহুকে আপন করে নিয়েছে শুধু খবিশ তূর্জয় ছাড়া৷ তূর্জয় মিহুর দিকে মিহি চোখ তুলে তাকায়। তূর্জয়ের চাহনি দেখে মিহু মাথা নিচু করে ফেলে৷ কোন সাড়া না পেয়ে মিহু মাথা তুলতেই তূর্জয়কে তার সামনে দেখতে পাই৷
— আআআআপনি এখানে.. আপনি খেতে বসেন। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি৷
তূর্জয় মিহুর কোন কথা না শুনে মিহুর হাত ধরে মিহুকে খাবারের টেবিলে নিয়ে চলে আসে৷ ভরা লোকের সামনে মিহুও কিছু বলতে পারছে না৷ মিহুর হাত ধরে নিজের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে৷
— আপনারা খাওয়া শুরু করে। আমি পরে খেয়ে নিবো৷ (মিহু)
— এই মেয়ে তুমি আমাদের সাথে খাবে। আর তুমি পরে খেয়ে নিবে কেন? তুমি আজ থেকে আমাদের সাথেই খাবে। (তিহান চৌধুরী)
— না মানে…
— কোন কথা নয়। (তিহান চৌধুরী)
মিহু কিছু বলতে নিবে তূর্জয় চোখ দিয়ে ইশারা করে কথা বলতে মানা করে। মিহু তূর্জয়ের ইশারা বুঝতে পেয়ে থেমে যায়৷
সকলের খাওয়ার পর মিহুর বাবা তিহান চৌধুরীর হাতে দুইটা টিকেট তুলে দেয়৷
— দেখেন এটা একটা এক্সিডেন। তাই আমি চাই তারা দুইজন নিজেদের কিছু সময় দেখ৷ নিজেদের মাঝে সকল সংশয় দূর করে নিতে পারবে। (মিহুর বাবা)
— হুম আপনি ঠিক বলেছেন। তাদেরকে নিজেদের মতো ছেড়ে দেওয়া উচিত।
তূর্জয় সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যেতে নিলেই তিহান চৌধুরী ডাক দেয় তূর্জয়কে৷ তূর্জয় নিজের বাবার ডাক শুনে তার বাবার কাছে যায়৷ সাথে মিহুকে ডেকে আনে৷
— জ্বি বাবা। কিছু বলবে কি?
— হুম। তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে?
— কি কথা? (তূর্জয়)
— আগে বলো, আমি যা বলবো তা মেনে নিবে৷
— আজ পর্যন্ত তোমার কোন কথায় আমি কোনদিন অবাধ্য হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনদিন হবোও না৷
— তাহলে শুনো। আমরা চাই, তুমি আর মিহু কিছুদিন সুইজারল্যান্ডে কাটিয়ে আসো৷ তোমরা একে অপরকে কিছু সময় দাও৷ একে অপরকে ভালো ভাবে চিনে নাউ৷
— কিন্তু বাবা অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে৷ সব কাজ শেষ করতে হবে৷ তোমার এই কথায় আমি সায় দিতে পারলাম না৷ কাল থেকে আমাকে অফিসে জয়েন্ট করতে হবে৷
— অফিসের সব কাজ আমি দেখে নিবো৷ তুমি মিহুকে নিয়ে আগামী কাল সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছো।
— কি বাবা! আগামী কাল। ( অবাক হয়ে বলে উঠে)
— অবাক হওয়ার কি হলো? আমি চাই তোমরা তারাতাড়ি ঘুরে আসো। আর তোমাদের বিয়ে হয় একটা এক্সিডেনে। তোমাদের নিয়ে অনেকে অনেক বাজে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে৷
— “ওকে বাবা। তুমি যা চাইবে তাই হবে৷” তূর্জয় প্যাঁচার মতো মুখ করে বলে উঠে।
তূর্জয় তাদের কথার মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাচ্ছে না৷ তাই সে নিজের রুমে চলে আসে। পায়েচারী করছে সারারুম৷ কিভাবে এখান থেকে মুক্তি পাবে৷
— মিহু তোমাকে আর নতুন করে কিছু বলতে চাই না৷ আমি যা সিদ্ধান্ত নিছি এতে তোমার কোন দ্বিমত আছে৷ থাকলে বলতে পারো৷ (তিহান চৌধুরী)
— না বাবা। আমি কোন দ্বিমত পোষণ করবো না৷ আপনি যা বলবেন তাই হবে৷ আপনি কোনদিন আমাদের খারাপ চাইতে পারেন না৷
— “এই তো লক্ষী মেয়ের মতো কথা”, পিছন থেকে তূর্জয়ের মা বলে উঠেন।
।
।
।
রাতের বেলা তূর্জয় রুমে বসে বসে অনলাইনে লুডু খেলছে বন্ধুদের সাথে৷ তূর্জয় খুব রেগে আছে গেমস নিয়ে৷ সরকার আর কিছু পাইনি। প্রিয় দুইটি গেমস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ছেলেরা এখন কি করবে? ছেলেদের প্রিয় খেলা ফ্রী ফায়ার আর পাবজি তুলে দিচ্ছে৷
মিহুকে রুমে আসতে দেখে বলে উঠে “এত লেট হলো কেন?”
— আসলে মার সাথে গল্প করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলাম কখন এত রাত হয়ে গেছে।
— হয়েছে আর সাফাই না গেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো৷ মনে আছে তো, আগামীকাল সকাল দশটায় আমাদের ফ্লাইট।
— হুম মনে আছে আগামীকাল দশটায় আমাদের ফ্লাইট। একটা কথা বলবো?
— হ্যাঁ বলে ফেলো? কথা তো বলেই যাচ্ছো! থামার কোন নাম গন্ধ নেই৷
— মিহু তূর্জয়ের কথা গায়ে না মেখে বলে উঠে “আপনি সরাসরি না করে দিতে পারলেন না। বলতে পারতেন আমরা বাড়িতেই একে অপরকে সময় দিতে পারবো৷”
— এত কিছু তোমাকে ভাবতে হবে না৷ এখন ঘুমিয়ে পড়ো৷
মিহু আর কোন কথা না বলে সোফায় শুয়ে পড়ে৷ তূর্জয় মিহুর দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ে৷ কারো চোখে ঘুম নেই৷ একবার মিহু তূর্জয়কে দেখে যাচ্ছে৷ আবার তূর্জয় মিহুকে দেখে যাচ্ছে৷ এমন করতে করতে এক সময় তারা ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে….